Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বার্সেলোনার লিগ জয়ের নেপথ্যে: শেষ পর্ব

ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় অব্যাহত ব্যর্থতার পাশাপাশি ঘরোয়া শিরোপার স্বাদটাও ভুলতে বসেছিল বার্সেলোনা। গত গ্রীষ্ম থেকে এই গ্রীষ্ম, এই বছরে মাঠে আর মাঠের বাইরে অজস্র চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার পর অবশেষে লা লিগা ট্রফিটা ঘরে তুললো তারা, চার বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো।দ্য অ্যাথলেটিক এর পল বালুস, লাইয়া সেরভেলো হেরেরো এবং ডেরমট করিগান বলেছেন সেই গল্পটাই। তারই শেষ পর্বে থাকছে জাভির ট্যাকটিকাল পরিবর্তন ও মাঠের বাইরের গল্পগুলো।

দ্বিতীয় অধ্যায়: প্রেসিংয়ে পরিবর্তন, পরিকল্পনায় পরিবর্তন

শুধু শিরোপা জিতে বার্সেলোনা সমর্থকদের মন ভরানো সম্ভব নয়, বার্সা সমর্থকেরা চান সুন্দর ফুটবলও। তবে মৌসুমের বিভিন্ন সময়ে এই বার্সেলোনা দল যে ফুটবলটা খেলেছে, তাকে চোখের জন্য খুব আরামদায়ক বলা যায় না। তবে যেমন ফুটবলই খেলুক, সাফল্যের তৃষ্ণাটা ছিল পুরোদমেই।

লিগ শিরোপা জিতলেও পুরো মৌসুমেই স্কোয়াড ডেপথ ছিল বার্সেলোনার চিন্তার কারণ। আক্রমণভাগে আরো রসদ প্রয়োজন, বার্সা বোর্ডও তা জানে।

কিন্তু তবুও, এ কথা অস্বীকারের উপায় নেই, একটা দল হিসেবে খেলেই শিরোপাটা জিতে নিয়েছে বার্সেলোনা। আক্রমণভাগের দুর্বলতাটা জাভির শিষ্যরা পুষিয়ে দেয়েছে দলীয় সমন্বয়ের মাধ্যমে।

লা লিগার এই মৌসুমে বার্সেলোনা ১১টা ম্যাচে জিতেছে ১-০ ব্যবধানে, যা যৌথভাবে সর্বোচ্চ। আর এই মৌসুমে কতটুকু দৃষ্টিসুখকর ফুটবল খেলেছে বার্সা, তার উত্তর হয়তো লুকিয়ে আছে এই পরিসংখ্যানেই। তবে বার্সা তাদের ডিএনএর একটা বিষয় ঠিকই পুনরোদ্ধার করেছে, বল হারানো মাত্রই প্রেস করে পজেশন ফিরে পাওয়া। এবং অনেকগুলো জয়ের পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছিল জাভির এই প্রেসিং সিস্টেমটাই। পেদ্রি বা গাভি যখন কোনো রক্ষণচেরা পাস দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, যখন লেভানডফস্কি বা দেম্বেলে ব্যর্থ হয়েছেন গোলমুখের দরজা খুলতে, তখনই ত্রাতা হয়ে এসেছে বার্সার প্রেস করে বল ফিরে পাওয়ার সক্ষমতা, এবং অবশ্যই সেটা মাঠের উপরের দিকে।

Image Source: The Athletic

টার্নওভারের (টার্নওভার হলো প্রতিপক্ষের গোলপোস্টের ৪০ মিটারের মধ্যে বল পুনরুদ্ধার করা) দিক দিয়ে বার্সার চেয়ে এগিয়ে নেই লা লিগার অন্য কোন দল। বার্সার পিপিডিএ (পাসেস পার ডিফেন্সিভ অ্যাকশন) লা লিগার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, এক্ষেত্রে শুধু এগিয়ে রয়েছে রিয়াল সোসিয়েদাদ। পিপিডিএ দিয়ে মূলত কোন দলের প্রেসিংয়ের ইন্টেন্সিটি বুঝানো হয়। ডিফেন্ডিং দল কোন ট্যাকল, ইন্টারসেপশন বা চ্যালেঞ্জ করার আগে আক্রমণকারী দল গড়ে কতগুলো পাস দিতে পারে, সেটিই হচ্ছে আক্রমণকারী দলের পিপিডিএ। বিভিন্ন সময়ে জাভি তাঁর দলকে বিভিন্নভাবে খেলিয়েছেন, কিন্তু একটা বিষয় সবসময়ে ধ্রুবক ছিল, সেটা হলো এই কাউন্টার প্রেসিং করে বল পুনরুদ্ধার করা।

২০২১ সালে জাভির দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বার্সার খেলায় আরো একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়, দুটো টাচলাইন উইঙ্গারের ব্যবহার। এই কারণেই, দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম ট্রান্সফার উইন্ডোতে আদামা ত্রাওরে এবং ফেরান তোরেসকে দলে ভেড়ান জাভি। একই কারণে গত গ্রীষ্মে দেম্বেলের সাথে নতুন চুক্তি করে বার্সেলোনা, একই কারণে আরো একজন উইঙ্গার হিসেবে রাফিনহাকে দলে টানে তারা। পারফেক্ট টার্গেট ম্যান হিসেবে রবার্ট লেভানডফস্কি তো থাকবেনই, তার দুই পাশে দুইজন টাচলাইন উইঙ্গার থাকবেন, মোটামুটি এমনটাই ছিল জাভির চাওয়া।

Image Source: Getty Images

তবে এই মৌসুমের দুই মাস যেতে না যেতেই এই পরিকল্পনার গলদ ধরা পড়ে। অক্টোবরে ইন্টার মিলানের সাথে দুটো ম্যাচই হাতে-কলমে জাভিকে বুঝিয়ে দেয়, ঠিক কী কারণে এই পরিকল্পনায় তিনি সফল হতে পারবেন না। দেম্বেলে-রাফিনহা দু’জনেই ছিলেন মোটা দাগে ব্যর্থ, বার্সাকেও বিদায় নিতে হয় গ্রুপপর্ব থেকে।

পরের সপ্তাহের এল ক্লাসিকোতেও দুই উইঙ্গার নিয়ে খেলেন জাভি, তবে এবার দু’জনের জায়গা বদলে দেন। তাতেও কাজের কাজ হয়নি, রিয়াল মাদ্রিদের কাছে ৩-১ গোলে হেরে যায় বার্সেলোনা। লিগে বার্সার প্রথম পরাজয়ও ছিল সেটা। এরপর বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত কোনো ম্যাচের শুরুর একাদশে ছিলেন না রাফিনহা। বরং তার পরিবর্তে ফেরান তোরেস এবং আনসু ফাতিকে সুযোগ দেন জাভি। তাতেও আহামরি কোনো পরিবর্তন আসেনি।

বার্সা সমর্থকদের মধ্যে তখন একটা প্রশ্ন জেগে ওঠে, তর্কসাপেক্ষে বার্সেলোনার সিস্টেমের সেরা প্রতিনিধি হয়েও জাভি ঠিক কোন কারণে মিডফিল্ড-নির্ভর ফুটবলের বদলে খেলছেন উইংনির্ভর ফুটবল? তবে কি পেপ গার্দিওলার মিডফিল্ড-ত্রয়ী নির্ভর ফুটবলের বদলে জাভি মানছেন লুইস এনরিকের মেসি-সুয়ারেজ-নেইমার নির্ভর ফুটবলকে?

একই সাথে দু’জন উইঙ্গার খেলানোর অর্থ একটাই, বুসকেটস-ফ্রেঙ্কি-পেদ্রি-গাভির মধ্যে একজন থাকবেন বেঞ্চে।

জাভি তার পরিকল্পনা বদলালেন। ঠিক করলেন, চার মিডফিল্ডারকে একসাথে ব্যবহার করবেন তিনি। এই চার মিডফিল্ডার একত্রে প্রথমবারের মতো মাঠে নামলেন অক্টোবরের ২৩ তারিখে, অ্যাটলেটিক বিলবাওর বিপক্ষে ঐ ম্যাচে ৪-০ গোলে জেতে বার্সেলোনা। এরপর বিশ্বকাপ শুরু হয়, কিন্তু নিশ্চিত হয়ে যায়, জাভির মূল পরিকল্পনায় থাকবেন এই চার মিডফিল্ডারই।

জানুয়ারিতে সুপারকোপার ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদকে ৩-১ ব্যবধানে পরাজিত করে বার্সেলোনা। শুধু একটা ক্লাসিকো বা একটা ট্রফিই নয়, পুরো ম্যাচে বার্সেলোনা যেমন কর্তৃত্বের সাথে খেলেছিলো, পজেশন ধরে রেখে নাস্তানাবুদ করেছিলো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের, তাতে জাভির এই দলের সামর্থ্য পরিষ্কার হয়ে যায়। তখন সমস্যা বলতে একটাই, এই সাফল্যকে ধরে রাখা।

Image Source: Getty Images

ইনজুরির কারণে এই দলটাকে একত্রে খুব বেশি পাননি জাভি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাজ চালাতে হয়েছে বিকল্প খেলোয়াড়দের দিয়ে। কোপা দেল রে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে যখন নিজেদের ঘরের মাঠে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ৪-০ ব্যবধানে লজ্জার পরাজয় বরণ করতে হলো, বোঝা গেল, কাজ করার আছে অনেক কিছু নিয়ে।

বুসকেটসের রিপ্লেসমেন্ট প্রয়োজন। মাঝমাঠে পেদ্রির মতো আরেকজন সৃজনশীল ফুটবলার প্রয়োজন। একটা রাইটব্যাক হলে মন্দ হয় না, যেহেতু সেন্টারব্যাক জুলস ক্যুন্দেকে দিয়েই আপাতত কাজ চালানো হচ্ছে।

তবে আপাতত এই মুহূর্তে জাভির এই চার মিডফিল্ডার খেলানো নিয়ে বার্সাভক্তরা উচ্ছ্বসিত হতেই পারেন। প্রথমত, চার মিডফিল্ডার খেললে ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং তার জন্য পারফেক্ট পজিশনে খেলার সুযোগ পান। এই ছাব্বিশ বছর বয়সী ডাচ মিডফিল্ডার তার বার্সা ক্যারিয়ারের প্রথম তিন মৌসুম কাটিয়েছেন মাঝমাঠে নিজের সেরা জায়গাটা খুঁজতে খুঁজতে। সিঙ্গেল পিভটে তার দুর্বলতা লক্ষণীয়, নাম্বার টেনের ভূমিকাতেও তিনি স্বচ্ছন্দ নন। চার মিডফিল্ডার সিস্টেমে জাভি তাকে খেলাচ্ছেন ডাবল পিভটে, সার্জিও বুসকেটসের সাথে জুটি বেঁধে, এবং এটা কাজেও দিচ্ছে। ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং নিজেদের অর্ধে বল রিসিভ করছেন, এরপর বল ক্যারি করে এগিয়ে যাচ্ছেন প্রতিপক্ষের অর্ধে। এ সময়ে তিনি ড্রিবল করছেন, প্রতিপক্ষের লাইন ভেঙে এগিয়ে যাচ্ছেন, আবার পেছনে সার্জিও বুসকেটস থাকায় তাকে রক্ষণ নিয়েও চিন্তা করতে হচ্ছে না। ফ্রেঙ্কি তার এই সাফল্যটা ধরে রাখতে পারবেন কি না, সেটা নির্ভর করছে আগামী মৌসুমে বুসকেটসের রিপ্লেসমেন্টের ওপর।

দ্বিতীয়ত, আলেহান্দ্রো বালদে। এই মৌসুমে বার্সার নতুন জ্বলে ওঠা তারাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় নাম। উনিশ বছর বয়সী এই লেফটব্যাক এখন নিয়মিত থাকছেন শুরুর একাদশে। চার মিডফিল্ডার সিস্টেমে লেফট উইংটা ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে বালদের জন্য, গাভি কাট করে ভেতরে ঢুকছেন।

Image Source: FC Barcelona

চার মিডফিল্ডারের এই সিস্টেমে গাভির ভূমিকার নাম ‘ফলস উইঙ্গার’। লেফট উইংয়ে শুরু করলেও গাভি সময়ের সাথে সাথে চলে আসেন একটু ভেতরের দিকে, বাম পাশে বালদেকে জায়গা করে দেন রান নেওয়া বা ক্রস করার জন্য। একই সাথে ম্যাচের মধ্যে প্রয়োজনমতো প্রেস করার স্বাধীনতাও দেওয়া হয় গাভিকে।

গাভিকে এই পজিশনে খেলানোর অর্থ, অপর মিডফিল্ডার পেদ্রিকে ঘিরেই শাণানো হচ্ছে আক্রমণের পরিকল্পনা। বার্সার সিস্টেমে এই বিশ বছর বয়সীর ভূমিকা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা বোঝা গেছে এই মৌসুমেই। ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলে যখন পেদ্রি ইনজুরিতে ছিলেন, তার অভাবটা খুব ভালোভাবে বুঝেছে বার্সেলোনা। রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ৪-০ ব্যবধানে পরাজয়ের ম্যাচেও ছিলেন না পেদ্রি।

চার মিডফিল্ডার খেলানোতে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে রক্ষণও। রাইটব্যাকে খেলা জুলস ক্যুন্দের শক্তির জায়গা ওভারল্যাপিং নয়, বরং ডিফেন্ডিং। সেই কাজটাই তিনি করছেন। ওভারল্যাপিংয়ের কাজটা করছেন লেফটব্যাক আলেহান্দ্রো বালদে। কাগজে-কলমে ৪-৩-৩ ফরমেশনে ম্যাচ শুরু করা বার্সেলোনা খেলা শুরু হতেই বদলে যাচ্ছে ৩-২-২-৩ এ, ক্যুন্দে চলে আসছেন সেন্টারব্যাকে, আরাউহো-ক্রিস্টেনসেনের পাশে।

তবে জাভির এই পরিকল্পনায়ও গলদ খুঁজে বের করা সম্ভব, আর তিনিও জানেন যে তার কাজ এখনো অসমাপ্ত। সেই অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য সামনের গ্রীষ্মকালীন দলবদলটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তৃতীয় অধ্যায়: ইকোনোমিক লেভার ও মাঠের বাইরের ঘটনা

গত গ্রীষ্মের ঘটনা।

বার্সেলোনা সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা এবং তার আশেপাশের মানুষজন জানতেন, বড়সড় নাটকীয় কোনো চমক না থাকলে পর্যুদস্ত বার্সেলোনাকে পুনরায় ট্র্যাকে ফেরানো অসম্ভব। এর আগের বারো মাসের হিসাব বলছিল, বার্সার মোট ক্ষতির পরিমান ১৬১ মিলিয়ন ইউরো। এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা এবং ঋণ পরিশোধ করার জন্য ‘ইকোনোমিক্যাল লেভার’ নামক একটা পদ্ধতির আশ্রয় নেন তারা।

জুন ও জুলাই মাসে বার্সেলোনা তাদের ফিউচার টিভি রাইটসের পঁচিশ শতাংশ বিক্রি করে সিক্সথ স্ট্রিট নামক একটি বৈশ্বিক ইনভেস্টমেন্ট ফার্মের নিকট। এছাড়াও বার্সা স্টুডিওর ২৪.৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করা হয় সোশিওস ডট কমের কাছে। এভাবে উঠে আসে মোট ৭৬৭ মিলিয়ন ইউরো।

Image Source: Getty Images

এরই মাধ্যমে বার্সা মোট ১০ জন খেলোয়াড়কে রেজিস্টার করার পরিকল্পনা ছিল বার্সেলোনার, যার মধ্যে আছেন রবার্ট লেভানডফস্কি, রাফিনহা, ক্যুন্দে প্রমুখ। তবে ক্লাবের এই সমস্যার মধ্যেও পরবর্তী মৌসুম অর্থাৎ ২০২২-২৩ এর মোট ওয়েজ বিল ২৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৬৫৬ মিলিয়নে।

লাপোর্তা এবং তার বোর্ড জানতেন, এই সমাধান সাময়িক সময়ের জন্য। কিন্তু সমস্যাটা তখনো পুরো কাটেনি। লেভানডফস্কি ও রাফিনহাকে রেজিস্টার করার জন্য চতুর্থ লেভার অ্যাক্টিভেট করতে হয় বার্সেলোনাকে। মৌসুমের প্রথম ম্যাচের তখন মাত্র ২৪ ঘণ্টা বাকি। মৌসুমের শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি বার্সেলোনার। ভরা ক্যাম্প ন্যুয়ের সামনে রায়ো ভায়োকানোর সাথে গোলশূন্য ড্র করে ব্লাউগ্রানারা। ক্যুন্দেকে রেজিস্টার করা হয় আরো পরে, ততদিনে লা লিগা শুরু হয়ে গেছে পুরোদমে।

তবে সাময়িক সমাধান হলেও লেভার অ্যাক্টিভেট করার ব্যাপারটা ছিল খুবই কার্যকরী। মেসির বিদায়ের পর প্রথমবারের মতো বার্সা সমর্থকেরা তাদের হারানো উৎসাহ ফিরে পায়। ২০২১-২২ এ ক্যাম্প ন্যুতে গড় উপস্থিতি যেখানে ছিল ৫৫,০২৬, নতুন মৌসুমের প্রথম ম্যাচেই সেখানে উপস্থিত হয় ৮১,১০৪। ক্রমবর্ধমান সংখ্যাটা আলমেরিয়ার বিপক্ষের ম্যাচে দাঁড়ায় ৯২,৬০৫-এ। সিজন টিকেটধারীরা মাঠে খেলা দেখতে শুরু করেন আবার, কাতালুনিয়ার বাইরের সমর্থকেরাও বার্সার খেলা দেখতে ন্যু ক্যাম্পে জমায়েত হতে থাকেন। টিকেট আর মার্চেন্ডাইজ বিক্রি করে ভালোই অর্থ আসতে থাকে বার্সার পকেটে।

জাভির দলটা ধীরে ধীরে ভালো করা শুরু করে। সেপ্টেম্বরে সেভিয়াকে ৩-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দেওয়ার ম্যাচে দেখা মেলে এক নতুন বার্সার। লেভানডফস্কি, দেম্বেলে আর রাফিনহার এমন গতিময় প্রতিআক্রমণ অনেকদিন দেখেননি দর্শকেরা।

Image Source: Reuters

তবে যত যা-ই হোক, বার্সার ড্রেসিংরুম জানত, অন্তত এই মৌসুমে ইউরোপীয় ট্রফির চেয়ে ঘরোয়া ট্রফি জয়ের স্বপ্ন দেখাই বেশি বাস্তবসম্মত। লা লিগাকেই তাই পাখির চোখ করেছিল বার্সার টিম ম্যানেজমেন্ট।

টানা সাত ম্যাচে জয় নিয়ে অক্টোবরের শুরুতে লিগ টেবিলের শীর্ষে উঠে যায় বার্সেলোনা, অবশ্যই গোল ব্যবধানে রিয়াল মাদ্রিদকে পেছনে ফেলে। লেভানডফস্কিও তখন আগুনে ফর্মে। স্বাভাবিকভাবেই খেলোয়াড়, ম্যানেজমেন্ট, দর্শক – সবাই খুশি। নভেম্বরের অনুষ্ঠিত ক্লাবের এজিএমে তাই লাপোর্তার এই ‘লেভার’ পলিসির বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।

বিশ্বকাপের পর সুপারকোপায় রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে পারফরম্যান্সটা বার্সার খেলোয়াড়দের জন্য এসেছিল অনেক বড় উৎসাহ হয়ে। নিজেদের সামর্থ্যের ওপর বিশ্বাস রাখা শুরু হয় তখনই।

কিন্তু জানুয়ারির ঐ মোমেন্টামটা বেশিদিন থাকেনি। দেম্বেলে-পেদ্রি ইনজুরিতে পড়েন, দলের পারফরম্যান্সেও তার ছাপ পড়ে। তবে খেলার সৌন্দর্য কমে গেলেও ফলাফল আসতে থাকে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে টানা সাতটা ম্যাচে জয়লাভ করে কাতালানরা। বলা বাহুল্য, তার চারটাই ১-০ ব্যবধানে। টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে তখন বারবার বলা হয়েছিল বাস্তবতাকে মেনে নিতে। ইনজুরি-জর্জরিত বার্সাকে তখন ফলাফল-নির্ভর ফুটবলটা খেলতে হতো, সুন্দর ফুটবল খেলা ছিল বিলাসিতার অপর নাম!

মাঠের বাইরেও তখন বার্সেলোনার কঠিন সময় চলছে। নেগ্রেইরা কেস নিয়ে বার্সা তখন জেরবার। রেফারিং বিষয়ক বিতর্ক, অ্যাওয়ে ম্যাচে দর্শকদের ভর্ৎসনা, লা লিগা আর উয়েফার চলমান তদন্ত, সব মিলিয়ে দৃষ্টিসীমায় কোনো সমাধান মিলছিল না মেরুন-নীলদের। এরই মধ্যে চলে আসে লিগের দ্বিতীয় এল ক্লাসিকো।

ক্যাম্প ন্যুতে মার্চে রিয়াল মাদ্রিদকে আতিথ্য দেয় বার্সেলোনা। আতিথ্য বলাটা হয়তো ভুল হলো, ভরা ক্যাম্প ন্যুতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য আবার আতিথ্য হয় নাকি! এই ম্যাচের আগেই নয় পয়েন্টের লিডে ছিল বার্সেলোনা, তবুও এই ম্যাচটাকেই ধরা হচ্ছিল শিরোপানির্ধারণী হিসেবে। মাদ্রিদ জিতলে সামান্য সুযোগ থাকবে তাদের, বার্সা জিতলে এক হাত ছুঁয়ে ফেলবে শিরোপায়।

এমন এক টানটান উত্তেজনার ম্যাচের প্রথমার্ধেই দুই দলের ‘গোলবিনিময়’ হয়ে গেল। এরপর ম্যাচ শেষ হওয়ার কয়েক মিনিট আগে মার্কো অ্যাসেনসিওর শট টের স্টেগানকে ফাঁকি দিয়ে বার্সার জালে জড়াল। হতাশ দর্শকদের একাংশ তো মাঠ থেকে বেরিয়েই যাচ্ছিলেন, ভিডিও অ্যাসিস্টেন্ট রেফারি তখনই জানালো, ‘অফসাইড’। এর কিছুক্ষণের মধ্যে, ম্যাচের ৯২তম মিনিটে পরিবর্তিত মিডফিল্ডার ফ্রাঙ্ক কেসির গোলে ম্যাচ জয় নিশ্চিত করে বার্সেলোনা। লিগ শিরোপাটা তখন দৃষ্টিসীমায়, যেন শিরোপার সুঘ্রাণ পেতে শুরু করলেন বার্সা সমর্থকেরা!

Image Source: Getty Images

এই ফ্রাঙ্ক কেসিও বার্সার জন্য ছিল ‘মার্কেট অপরচুনিটি’। “মুফতে পাওয়া যাচ্ছে, মিডফিল্ডে কার্যকর হতে পারেন, এই সুযোগটা কেন নেব না?” হয়তো ক্রীড়া পরিচালক মাতেও আলেমানি এমনটাই ভেবেছিলেন।

এরপর আবারও একটু ছন্দপতন। কোপা দেল রে থেকে বিদায়, জিরোনা আর গেটাফের সাথে গোলশূন্য ড্র, বার্সার ফরোয়ার্ডরা যেন গোল করতেই ভুলে গেলেন। এরই মধ্যে ফেরান তোরেস ও জর্দি আলবার গোলে যথাক্রমে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ আর ওসাসুনার বিপক্ষে ১-০ গোলের দুটো জয় যেন এলো ঊষর মরুভূমিতে একটু জলের ঝাপটা হয়ে। সেই ফেরান আর আলবা, এই মৌসুমে যাদের কদাচিৎ দেখা গেছে প্রথম একাদশে। আগামী মৌসুমে তারা আদৌ দলে থাকবেন কি না, সেটা নিয়েও চলছে নানা রকমের গুঞ্জন।

অ্যাটলেটিকো আর ওসাসুনার বিপক্ষে ম্যাচ দুটোর মাঝে রায়ো ভায়োকানো আর রিয়াল বেটিসের মুখোমুখি হয়েছিল বার্সা। বেটিসকে স্বচ্ছন্দে হারালেও পরাজয় বরণ করতে হয় রায়ো ভায়োকানোর বিরুদ্ধে। অবশ্য তার আগেই বিশাল লিড থাকায় এ নিয়ে হয়তো কোচ জাভিও তেমন চিন্তিত ছিলেন না।

Image Source: AFP

শিরোপা নিশ্চিত করার জন্য বার্সা বেছে নেয় নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী এসপানিওলের মাঠকেই। রোববার লেভানডফস্কির জোড়া গোল আর বালদে-ক্যুন্দের গোলে এসপানিওলকে ৪-২ গোলে পরাজিত করে বার্সা। সেই সাথে নিশ্চিত হয়, তিন মৌসুম পরে লা লিগার শিরোপাটা আসছে বার্সার ঘরে, জাভি-যুগের প্রথম বড় ট্রফিও হয়ে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, এই ট্রফিটার খুব বেশি প্রয়োজন ছিল বার্সেলোনার। কিংবা, নতুন যুগের বার্সেলোনার!

This Article is in Bengali language. It is about the background story of the la liga title won by FC Barcelona in 2022-23 season. It is translated from an English article, published in the Athletic.

Necessary Source: The Athletic
Featured Image: AFP

Related Articles