Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বার্সেলোনা বনাম রিয়াল মাদ্রিদ: ভাগ্য গড়ার এল ক্লাসিকো

এ মৌসুমের এল ক্লাসিকো আগামী বুধবার হবার কথা ছিল না। কিন্তু কাতালোনিয়ার রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এ ম্যাচ পিছিয়ে ডিসেম্বর মাসের ১৮ তারিখে আনা হয়। ম্যাচ যদি আগের দিনক্ষণ অনুযায়ী হতো, তবে সে ম্যাচের ফলাফল আর আজকের ম্যাচের ফলাফল এক হবে না। হবার কথাও না। কারণ সে সময়ে রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনায় উভয় দলের অবস্থা ছিলো নড়বড়ে। বার্সেলোনা সেই নড়বড়ে স্তরে থাকলেও এইদিকে বেশ উন্নতি করেছে জিদানের দল। তবুও লিগে উভয় দল রয়েছে একই রেখায়।

অ্যানোয়েতায় আতিথ্য নিয়ে গত সপ্তাহে যখন বার্সেলোনা ড্র করে দুই পয়েন্ট হারিয়ে বসলো, তখন রিয়াল মাদ্রিদের সামনে বড় সুযোগ ছিলো তাদেরকে এগিয়ে নেওয়ার। কিন্তু তারাও হাঁটলো বার্সেলোনার দেখানো পথে। ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে ড্র করে রিয়াল মাদ্রিদ যখন আবারও বার্সেলোনার সাথে একই পয়েন্টে সেঁটে থাকলো, তখনই নির্ধারিত হয়ে গেছে এই এল ক্লাসিকোর পরই নির্ধারিত হবে যে কোন একদলের জয়। যদি না ম্যাচটি আবার ড্র হয়ে বসে! তাই মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকো উভয় দলের জন্য ভাগ্য গড়ে দেবার ম্যাচ।

এল ক্লাসিকোর বার্সা-রিয়ালের চিরায়ত দ্বন্দ্ব © TF-Images/Getty Images

বার্সেলোনা

গত মৌসুমে বার্সেলোনা ছিলো দুর্দান্ত ফর্মে, ছুটছিল ট্রেবল জেতার পথে। এই যাত্রার মাঝে এক মাসের ব্যবধানে রিয়াল মাদ্রিদের সাথে তিন তিনবার দেখা হবার পরও কাতালানরা তাদের পাত্তা দেয়নি। কিন্তু অ্যানফিল্ডে বিধ্বস্ত হবার পর সেই যে বার্সেলোনা নিভে গেলো, এখন পর্যন্ত তারা স্বরূপে ফেরেনি। অ্যাটলেটিক ক্লাবের বিপক্ষে হেরে মৌসুম শুরু করা বার্সা এ মৌসুমে খুবই অগোছালো ফুটবল খেলে যাচ্ছে। আর কোনোমতেই দাঁড়াতে পারছে না প্রতিপক্ষের মাঠে। রক্ষণ নড়বড়ে, মধ্যমাঠের বেহাল দশা, গ্রিজমানের অফ-ফর্ম এবং ডেমবেলের টানা ইনজুরির মাঝে বার্সেলোনা যাদের নিয়ে লিগের লড়াইতে টিকে আছে তাদের একজন হলেন টের স্টেগান। কাতালানদের গোলবারের অতন্দ্র প্রহরী স্টেগানের জন্য বেশ কিছু ম্যাচ বার্সেলোনা কোনমতে জিতে ফিরেছে। যদিও বার্সেলোনাকে পথ দেখানোর মাঝে স্টেগান নিজেও কয়েকবার ভুল করে বসেছেন। তাও এল ক্লাসিকোকে সামনে রেখে তিনিই দলের অন্যতম ভরসাদের একজন। 

বার্সেলোনার প্রাথমিক একাদশে জুনিয়র ফিরপো ও মুসা ওয়াগে নেই। নেলসন সেমেদো সদ্য ইনজুরি থেকে ফিরেছেন। তাই বার্সেলোনার দুই ফুল-ব্যাক পজিশন থাকবে সার্জি রবার্তো ও জর্দি আলবার দখলে। সেন্টার-ব্যাক জুটি আগের মতই, জেরার্ড পিকে ও ক্লেমেন্ত লংলে। কিন্তু এ মৌসুমে তাদের রক্ষণ নিয়ে কাতালান পাঁড় ভক্তও স্বস্তিতে নেই। আলবা মাত্রই ইনজুরি থেকে ফিরেছেন। আর পিকে ও লংলে জুটিকে মাঝে রেখে গোটা বার্সা রক্ষণ গোল হজম করেছে ২০টি। তাই দুর্দান্ত ফর্মে থাকা বেনজেমা ও রদ্রিগো বা বেলদের গতির ঝড় তোলা আক্রমণের তোপে আবারও পড়তে হবে বার্সার ভঙ্গুর রক্ষণকে। 

বার্সেলোনার অন্যতম ভরসা গোলকিপার টের স্টেগান © SportsKeeda

রক্ষণের এই বেহাল অবস্থার পেছনে অন্যতম কারণ বার্সেলোনার ডিফেন্সিফ মিডফিল্ডার সার্জিও বুসকেটসের বাজে ফর্ম। এ মৌসুমের শুরু থেকে তিনি তার চিরচেনা ফর্মে নেই। ফলে রক্ষণের ব্যর্থতার পাশাপাশি তার ডিপ লাইন মিডফিল্ডের সহায়তার অভাবও বোধ করছে পিকে, লংলেরা। মধ্যমাঠে এবার যিনি একাই লড়ে যাচ্ছেন, সেই ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংকে আবারও আজ স্বরূপে থাকতে হবে। আর্থুরের ইনজুরিতে নতুন করে সুযোগ পাওয়া রাকিটিচকেও খেলতে হবে তার স্বাভাবিক খেলা। নয়ত ছন্দে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের সামনে বার্সেলোনার মিডফিল্ড তুরুপের তাসের মত ভেঙে পড়বে।

আক্রমণভাগে ডেমবেলে নেই। ভালভার্দের মুখস্থ ট্যাকটিক্স অনুযায়ী রাইট উইংয়ে থাকবেন আঁতোয়া গ্রিজমান। যিনি এখনও বার্সেলোনার সাথে মানিয়ে নেবার চেষ্টায় ব্যস্ত আছেন তিনি। নিজের স্বাভাবিক খেলার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলা লুইস সুয়ারেজও থাকবেন কাতালানদের আক্রমণভাগে, স্ট্রাইকার পজিশনে। তবে সর্বশেষ কয়েক ম্যাচে সুয়ারেজের পরিসংখ্যান ভিন্ন কথা বলে। কারণ লা লিগায় বেশ নিয়মিত গোল পাচ্ছেন তিনি। আর সর্বশেষ দেখায় দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিক করা সুয়ারেজের রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ফর্ম সবসময়ই আকর্ষণীয়।

স্টেগান বা ডি ইয়ং দুর্দান্ত খেললেও এ মৌসুমে ম্যাচের ভাগ্য ঘুরিয়ে দেবার নায়ক সেই পুরনো সৈনিক; লিওনেল মেসি। অধিকাংশ ম্যাচে খাদের কিনারা থেকে বার্সাকে টেনে তুলছেন তিনি। কোন ম্যাচে গোল না পেলেও মেসিই পাল্টে দিচ্ছেন ম্যাচের ভাগ্য। তাই ১১ ম্যাচে ১২ গোল ও ৬ অ্যাসিস্ট করা মেসিকেই আলোর পথ দেখাতে হবে। আর এলোমেলো এ বার্সার বিপক্ষে একমাত্র মেসির জন্য জিদানকে ভাবতেই হবে নতুন কোন পন্থা।

মেসিই হতে পারেন ভাগ্য ঘুরিয়ে দেওয়ার নায়ক © Quality Sport Images/Getty Images

রিয়াল মাদ্রিদ

মৌসুমের শুরুতে খেই হারিয়ে ফেলা রিয়াল মাদ্রিদ আর বর্তমান রিয়াল মাদ্রিদের বিস্তর পার্থক্য। আস্তে আস্তে জিদান আবারও যেমন দল গুছিয়ে ফেলেছে, তেমনই বার্নাব্যুতেও ছন্দ ফেরত এসেছে। কিন্তু এল ক্লাসিকোকে সামনে রেখে জিদানের সামনে দুটো বড় সমস্যা এসে হাজির। প্রথম সমস্যা ইনজুরি। মার্সেলো, লুকাস ভাজকেস, জেমস রদ্রিগেজরা থাকছেন না আগামীকালের ম্যাচে। তেমনই দলের সবথেকে বড় তারকা এডেন হ্যাজার্ড ছাড়াই দল সাজাতে হবে জিদানকে। লস ব্লাঙ্কোসদের কোচে দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে, ভিনিসিয়ুস ও বেলের অফ-ফর্ম এবং হ্যাজার্ড ও জেমস রদ্রিগেজের ইনজুরির ফলে কীভাবে তিনি তার আক্রমণভাগ সাজাবেন!

এডেন হ্যাজার্ড ছাড়াই দল সাজাতে হচ্ছে জিদানকে © As.com

আক্রমণভাগে নিশ্চিত দেখা যাবে করিম বেনজেমাকে। দুর্দান্ত ফর্মে আছেন তিনি। নিয়মিত শুধু গোল পাচ্ছেন তা নয়, দলকে একাই টানছেন। লেফট-উইং পজিশনে ইসকোর থাকার সম্ভাবনা বেশি। কারণ দুর্বল ফিনিশিং সমস্যায় ভোগা ভিনিসিয়ুসকে এমন বড় ম্যাচে খেলানোর ঝুঁকি নেওয়ার মানুষ জিদান নন। রাইট- উইং পজিশনে বেল বা রদ্রিগো গোয়েস থেকে একজন থাকবেন। জিদানের অধীনে এ মৌসুমে বেল খুব বেশি ম্যাচ খেলেননি, ফর্মটাও আশাব্যঞ্জক নয়। সে তুলনায় রদ্রিগো খেলেছেন বেশি। ভালো ফর্মের পাশাপাশি বড় কথা গোল আসছে তার পা থেকে। তাই তিনজনের আক্রমণভাগ সাজালে বেনজেমার পাশাপাশি ইসকো ও রদ্রিগোর থাকার সম্ভাবনা বেশি। আর ৪-৪-২ বা দুই জনের আক্রমণভাগ গড়ে তুললে বেনজেমার সঙ্গী হবেন গ্যারেথ বেল।

বার্সেলোনার সাথে তুলনায় গেলে রিয়াল মাদ্রিদের বর্তমান মধ্যমাঠের অবস্থা ঢের ভালো। ক্রুস এ মৌসুমে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে ফিরে পেয়েছেন। আর মধ্যমাঠের একটু নিচে ক্যাসেমিরো তো আছেনই। কিন্তু আজ বলা উচিত জিদানের নতুন আবিষ্কার ফেদ্রিকো ভালভার্দেকে নিয়ে, যিনি বর্ষীয়ান মিডফিল্ডার লুকা মদ্রিচকে একদম বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছেন। ভালভার্দের অধীনে রক্ষণাত্মক ঘরানার মিডফিল্ডার হলেও খেলেন ‘বক্স টু বক্স’ মিডফিল্ডারের ভূমিকায়। ম্যান মার্কিংয়ে দারুণ পটু তিনি। পিএসজির বিপক্ষে কিলিয়ান এমবাপেকে রুখে দেবার দায়িত্ব ছিল তার, তা পালনও করেছেন দারুণভাবে। কিছুদিন আগে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের তরুণ তুর্কি জোয়াও ফেলিক্সকে আটকানোর দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সে ম্যাচে পুরো সময়জুড়ে ফেলিক্স ছিলো তার পকেটে। তাই বার্সেলোনার সব থেকে ভয়ংকর অস্ত্র মেসিকে মার্ক করে রাখার দায়িত্ব আজ তিনি পেতে পারেন। যদিও এর আগে কোভাসিচকে দিয়ে একই পন্থা অবলম্বন করেছিলেন জিদান। তার ফলাফল এসেছিল তাদের বিপক্ষে। যদিও ম্যান মার্কিংয়ের জন্য কোভাসিচের তুলনায় ভালভার্দে বেশি দক্ষ।

মেসিকে আটকে রাখার কাজ পেতে পারেন ভালভার্দে; ©Getty Images

রক্ষণে লেফট-ব্যাক পজিশনে মার্সেলো ইনজুরড। বদলি খেলোয়াড় হিসেবে ফারলান্ড মেন্ডি থাকলেও জিদান সম্ভবত ব্যবহার করবেন নাচোকে। বাকি সব থাকবে অপরিবর্তিত। রাইট-ব্যাকে কারভার্হাল ও রক্ষণ জুটি রামোস ও ভারান ব্যস্ত থাকবেন সুয়ারেজ, মেসি গ্রিজমানদের বিপক্ষে দুর্গ তুলে দাঁড়াতে যাতে তাদের সদ্য ফর্ম ফিরে পাওয়া গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়াকে অতিরিক্ত পরীক্ষার সম্মুখীন না হতে হয়। তবে কর্তোয়াকে গোলবারের নিচে রেখে লস ব্লাঙ্কোসদের রক্ষণ বার্সেলোনা থেকে তুলনামূলক ভালো। লিগে এ পর্যন্ত মাত্র ১২ গোল হজম করেছে তারা, যা বার্সেলোনা থেকে ৮ গোল কম।

হেড টু হেড

২০১৭ সালের আগস্টের পর থেকে বার্সেলোনার সাথে কোন জয় পায়নি রিয়াল মাদ্রিদ। ২০১৭ থেকে ২০১৯ এর মাঝে ৬ বারের দেখায় ৪ বার জিতেছে ভালভার্দের শিষ্যরা, বাকি ২টি ড্র। ৪ বারের হারের হতাশার কাব্যের মাঝে গতবার কাতালানদের কাছে হেরে কোপা দেল রে থেকে বাদ পড়তে হয়েছিল তাদের। যদিও এবার উভয় দলই হাঁটছে একই রাস্তায়। লিগে তাদের পয়েন্ট সমান। তবে গোল ব্যবধানে এগিয়ে আছে বার্সেলোনা। কারণ বার্সেলোনার আক্রমণ-ভাগ এ পর্যন্ত লিগে করেছে ৪৩টি গোল যেখানে রিয়াল মাদ্রিদের গোলসংখ্যা ৩৩টি। বার্সা এলোমেলো ফুটবল খেললেও ক্যাম্প ন্যুতে এবার তাদের ফর্ম ভালো। আবার কোন এক বিশেষ কারণে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ভালভার্দে সবসময় ভালো করেন। তাই এবারের ম্যাচে তার দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় যেমন মেসি, ডি ইয়ং, রবার্তো ও স্টেগান স্বরূপে থাকলে ম্যাচের ফলাফল বার্সেলোনার দিকেই যাবে। বিপরীতে, রিয়াল মাদ্রিদ এবার হোম অথবা অ্যাওয়ে সব মাঠেই জয় ধারা অব্যাহত রেখেছে। তাই আরও একবার বড় ম্যাচে বার্নাব্যু সমর্থকরা ভরসা রাখবেন বেনজেমা ও রামোসদের উপর।

জিদান-ভালভার্দের এই দ্বৈরথের খাতায় নতুন কী যোগ হবে?; ©AFP via Getty Images

পরিশেষে, এই দশকের শেষ এল ক্লাসিকোর ভাগ্য একটি সরল দোলকের মত, যা উভয়দিকে দোদুল্যমান। ঘরের মাঠ ও মেসি, স্টেগান, ডি ইয়ংদের ফর্মের জন্য কখনও বার্সেলোনা ফেভারিট, তো অপর মুহূর্তে সাম্প্রতিক দলগত ফর্ম ও আত্মবিশ্বাসী একাদশের জন্য রিয়াল মাদ্রিদ ফেভারিট। তাই এ ম্যাচকে সামনে রেখে এক তরফা মন্তব্য বা সমালোচনা ঠিক সময়োপযোগী হবে না। যে কোন সময়, যে কোন দলের দিকে ভাগ্যদেবীর সুনজর পড়তে পারে। তাই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ঐ মাতাল করা ৯০ মিনিট, যে সময়ই দুই দলের ভাগ্য গড়ে দেবে।

খেলাধুলার চমৎকার, জানা-অজানা সব বিষয় নিয়ে আমাদের সাথে লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: https://roar.media/contribute/

This article is in bangla language. It is a match post match review right before a high-voltage match of La Liga between Barcelona vs Real Madrid.

Feature Image Source: Getty Images

Related Articles