Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসের সেরা ৫ স্প্যানিশ ফুটবলার

স্প্যানিশ দলগুলোর কাছে ইংলিশ দলগুলো তাদের পুরনো আধিপত্য হারালেও সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার দিক দিয়ে কোনো ইউরোপিয়ান লিগ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ধারে কাছেও নেই। আর এই টাকার ঝনঝনানিতেই বিশ্বায়নের এই যুগে ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন ফুটবল প্রধান দেশের একাধিক ফুটবলার নিজ দেশের ফুটবল লিগ ছেড়ে পাড়ি জমাচ্ছেন ইংল্যান্ডে।

প্রিমিয়ার লিগের দলগুলোর জার্সি গায়ে জড়িয়ে সফলতা অর্জনে অন্যান্য দেশের ফুটবলারদের তুলনায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন স্প্যানিশ খেলোয়াড়রা। বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ বাদে অন্যান্য স্প্যানিশ দলগুলোর অর্থনৈতিক মন্দাবস্থার কারণে অনেক স্প্যানিশ ফুটবলার এখন আসছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলতে। ফলে সময়ের সাথে সাথে বেড়েই চলেছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে স্প্যানিশ ফুটবলারদের সংখ্যা। ইংলিশ লিগের ইতিহাসে এই পর্যন্ত মোট ১৩৩ জন স্প্যানিশ ফুটবলার খেলেছেন।

বিবিসি ফুটবল সেপ্টেম্বরে প্রিমিয়ার লিগে খেলা সেরা স্প্যানিশ ফুটবলার নির্বাচন করার জন্য তাদের পাঠকদের মধ্যে এক জরিপের আয়োজন করে। চলুন, দেখে আসা যাক এই তালিকায় নির্বাচিত সেরা ৫ স্প্যানিশ ফুটবলার কারা।

৫. ডেভিড ডি গিয়া (১২% ভোট)

অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে থাকাবস্থায় ডেভিড ডি গিয়া জানান দিয়েছিলেন তার নিজ প্রতিভার কথা। এতে মুগ্ধ হয়ে কিংবদন্তি ফুটবল ম্যানেজার স্যার অ্যালেক্স ফারগুসন ২০১১ সালে ১৮.৯ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ থেকে তাকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে নিয়ে আসেন।

শুরুটা ছিল খুবই হতাশাজনক। এত বড় ক্লাবে কিংবদন্তি ডাচ গোলকিপার এডউইন ভ্যান ডার সারের জায়গা পূরণ করা মোটেও সহজ কাজ ছিল না। প্রত্যাশার চাপে ডি গিয়া একের পর এক শিশুতোষ ভুল করতে থাকেন বিভিন্ন ম্যাচে। ফলে একসময় তিনি ক্লাবের প্রথম পছন্দের গোলকিপার হিসেবে জায়গাও হারিয়ে বসেন।

কিন্তু ডি গিয়া ভেঙে পড়েননি। নিজের অসাধারণ রিফ্লেক্স ক্ষমতাকে আরও শাণিত করতে থাকেন তিনি। ইংলিশ লিগের শক্তিশালী স্ট্রাইকারদের মোকাবেলা করার জন্য নিজের ওজন বাড়ান, ক্রসে ও কর্নারে দুর্বলতা কাটানো, বল সামলানোর ক্ষমতা আরও শক্তিশালী করেন।

ডেভিড ডি গিয়া; Image Source: Eurosport

বাকিটা ইতিহাস। অসংবাদিতভাবে এখন তিনি বর্তমান প্রিমিয়ার লিগের সেরা গোলকিপার। টানা ৪ মৌসুম ধরে তিনি ‘পিএফএ টিম অফ দ্য ইয়ার’ এর একমাত্র গোলকিপার হিসেবে আছেন। গত মৌসুমে (২০১৭-১৮) তিনি মোট ১৮টি ক্লিন শিট রেখেছেন, যা তাকে এনে দিয়েছ ‘প্রিমিয়ার লিগ গোল্ডেন গ্লোভের’ খেতাব। এমন অসাধারণ পারফর্মেন্সের কারণে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো তিনি ২০১৮ সালে ফিফাপ্রো সেরা একাদশে স্থান পেয়েছেন।

৪. ফার্নান্দো তোরেস (১২% ভোট)

“ফার্নান্দো তোরেস কোন টিপিক্যাল স্প্যানিশ ফুটবলারদের মতো ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন ইংলিশ স্ট্রাইকারদের মতো আগ্রাসী ও শক্তিশালী। তার ফিনিশিং ক্ষমতা নির্মম ধরণের”- এমন মত ব্যক্ত করেছিলেন লিভারপুলের সাবেক স্ট্রাইকার পিটার ক্রাউচ।

ফার্নান্দো তোরেস; Image Source: Wallpaper Abyss

নিজের দিনে ফার্নান্দো তোরেসকে থামাতে পারবে এমন ডিফেন্ডার খুঁজে পাওয়া মুশকিল ছিল। নেমানিয়া ভিদিচের মতো বিশ্বমানের ডিফেন্ডারকেও তিনি নাকানি চুবানি খাইয়েছেন। লিভারপুলের হয়ে ১০২টি লিগ ম্যাচ খেলে গোল করেছেন ৬৫টি ও অ্যাসিস্ট করেছেন ১৪টি।

লিভারপুলের হয়ে অসাধারণ পারফর্মেন্সের জোরে ৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে প্রতিদ্বন্দ্বী চেলসিতে ২০১১ সালে পাড়ি জমান তোরেস। তবে চেলসির হয়ে তোরেসের পারফর্মেন্স ছিল বেশ হতাশাজনক। চেলসির হয়ে প্রথম গোলের দেখা পেতে তার অপেক্ষা করতে হয়েছিল ৯০৩ মিনিট, যা তার মানের স্ট্রাইকারের জন্য ছিল বেশ বেমানান। ৪ মৌসুমে চেলসির জার্সি গায়ে তোরেস খেলেছেন সর্বমোট ১১০টি ম্যাচ, গোল করেছেন ২০টি ও অ্যাসিস্ট করেছেন ১৫টি।

লিভারপুলের পারফর্মেন্স চেলসির হয়ে বজায় রাখতে পারলে তালিকার আরও উপরেই তোরেসের স্থান হতো। বর্তমানে ৩৪ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার খেলছেন জাপানের সাগান তোসু ক্লাবের হয়ে।

৩. সেস্ক ফ্যাব্রিগাস (১৩% ভোট)

মাত্র ১৬ বছর বয়সেই লা মাসিয়া ছেড়ে আর্সেনালে যোগ দিয়েছিলেন সেস্ক ফ্যাব্রিগাস। প্রথমে যুব দলের হয়ে খেলা শুরু করলেও খুব দ্রুতই আর্সেনালের মূল দলে জায়গা করে নেন তিনি। শেষপর্যন্ত তিনি যখন আর্সেনাল ছেড়ে বার্সেলোনায় যোগ দেন, ততদিনে তিনি আর্সেনালের হয়ে খেলে ফেলেছেন ৩০৩টি ম্যাচ।

সেস্ক ফ্যাব্রিগাস; Image Source: Eurosport

পেপ গার্দিওলাকে নিজের আদর্শ মনে করা এই ফুটবলার আর্সেনাল থেকে ৩৪ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ২০১১ সালে পাড়ি জমান তার স্বপ্নের ক্লাব বার্সেলোনাতে। সেখানে তিন মৌসুম কাটানোর পর ২০১৪ সালে তিনি ফিরে আসেন প্রিমিয়ার লিগে। আর্সেনাল ফ্যানদের চক্ষুশূল হয়ে ৩৩ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে যোগ দেন শহর প্রতিদ্বন্দ্বী চেলসিতে। চেলসিতেও তিনি তার ধারাবাহিক পারফর্মেন্স ধরে রেখেছেন।

বর্তমানে তিনি প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসের ২য় সেরা অ্যাসিস্টদাতা। মোট ৩৪৪টি লিগ ম্যাচ খেলে ১১১টি অ্যাসিস্ট করেছেন তিনি। একমাত্র ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিংবদন্তি রায়ান গিগস প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে সেস্ক ফ্যাব্রিগাসের থেকে বেশি (১৬২টি) অ্যাসিস্ট করেছেন। ফ্যাব্রিগাস সম্পর্কে গ্যারি লিনেকার বলেন, “সেস্ক ফ্যাব্রিগাস প্রিমিয়ায় লিগে আমার দেখা অন্যতম সেরা পাসদাতা। তার মতো খেলোয়াড় দেখতে আমি খুব ভালোবাসি।”

তার পাসিং ক্ষমতা বিশ্বের যেকোনো মিডফিল্ডারের জন্যই ঈর্ষণীয়। ২০০৬-০৭ থেকে ২০১০-১১, এই চার মৌসুমে ইউরোপের পাঁচ সেরা লিগের কোনো ফুটবলার সেস্ক ফ্যাব্রিগাসের থেকে বেশি সুযোগ প্রস্তুত করতে পারেননি।

২. জাবি আলোনসো (১৪% ভোট)

স্প্যানিশ সোনালি প্রজন্মের অন্যতম সদস্য সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ ও বায়ার্ন মিউনিখ তারকা জাবি আলোনসো। ক্যারিয়ারের মাত্র পাঁচ মৌসুম প্রিমিয়ার লিগে কাটালেও এই সীমিত সময়েই তিনি প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। লিভারপুলের হয়ে প্রথম মৌসুমেই তিনি জেতেন উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ।

লিভারপুলের হয়ে তিনি মোট খেলেছেন ১৪৩টি লিগ ম্যাচ, গোল করেছেন ১৪টি ও অ্যাসিস্ট করেছেন ১৭টি। পরিসংখ্যান অনুসারে তার পারফর্মেন্স খুব আহামরি মনে না হলেও দুর্দান্ত পাসিং এর জন্য তিনি প্রতিপক্ষের কাছে ছিলেন মূর্তিমান আতংক। শুধু প্লেমেকারের কাজ নয়, ওরক্ষণভাগে গিয়ে বল কেড়ে নেওয়ার কাজেও তিনি ছিলেন ভয়াবহভাবে দক্ষ। একজন ‘পূর্ণাঙ্গ মিডফিল্ডার’ বলতে যা বোঝায়, তারই আদর্শ উদাহরণ ছিলেন জাবি আলোনসো।

স্টিভেন জেরার্ডের সাথে জাবি আলোনসো; Image Source: Liverpoolfc.com

লিভারপুল ছেড়েছেন ১০ বছরেরও বেশি সময় হয়ে গিয়েছে, কিন্তু তার স্থান পূরণ লিভারপুল এখনো করতে পারেনি। তারই পুরনো সতীর্থ স্টিভেন জেরার্ড বলেন, “লিভারপুলের হয়ে প্রথম দিন থেকেই আমরা বুঝতে পেরেছিলাম জাবি আলোনসোর প্রতিভা। আমি তার থেকে ভালো কোনো মিডফিল্ডারকে সতীর্থ হিসেবে পাইনি”।

১. ডেভিড সিলভা (৩৭% ভোট)

ইতোমধ্যে ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে নয় মৌসুম কাটিয়ে ফেলেছেন পাসিং জাদুর জন্য ‘মার্লিন’ নামে পরিচিত ডেভিড সিলভা। প্রথমদিকে লাইমলাইটের আলোর বাইরে থাকলেও ধীরে ধীরে নিজের বাম পায়ের নৈপুণ্যে তিনি জয় করেছেন পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে থাকা অগণিত প্রিমিয়ার লিগ সমর্থকদের মন। আর তাই ৩৭% ভোট পেয়ে বিবিসি পাঠকদের মতে প্রিমিয়ার লিগে খেলা সেরা স্প্যানিশ ফুটবলার এই ডেভিড সিলভা।

ডেভিড সিলভা; Image Source: BBC

ম্যানচেস্টার সিটির এই কিংবদন্তি মিডফিল্ডার জিতেছেন তিনটি প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা, তিনটি ইএফএল কাপ শিরোপা ও একটি এফএ কাপ। সদ্য স্পেন জাতীয় দল থেকে অবসর নেয়া সিলভার সুবিশাল অবদান রয়েছে ম্যানচেস্টার সিটিকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ছায়া থেকে বের করে নিয়ে আসার জন্য। দলটির সুসময় ও দুঃসময়ে বিশেষভাবে অবদান রাখা এ স্প্যানিশ কিংবদন্তি প্রিমিয়ার লিগে ২৫৪ ম্যাচ খেলে করেছেন ৫০টি গোল ও ৭৫টি অ্যাসিস্ট।

লিভারপুলের সাবেক ডিফেন্ডার জেমি ক্যারাঘার মনে করেন, ডেভিড সিলভা প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ফুটবলার। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “প্রিমিয়ার লিগে সেরা খেলোয়াড়দের মাঝে ডেভিড সিলভার স্থান থিয়েরি অরি, ডেনিস বার্গক্যাম্প ও এরিক ক্যানটোনাদের পাশেই থাকবে”।

ফিচারড ইমেজ: Wallpaper Abyss

Related Articles