Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

এশিয়া কাপের ইতিহাসে সেরা পাঁচ বোলিং পারফরম্যান্স

দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে এশিয়ার ‘বিগেস্ট ক্রিকেট শো’ এশিয়া কাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। এবারের আয়োজক সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। ১৯৯৫ সালের পর এবারই প্রথম ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে সব মিলিয়ে তৃতীয়বার এই টুর্নামেন্টের আয়োজন হচ্ছে।

এশিয়ার পাঁচটি টেস্ট খেলুড়ে দেশ- বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের সঙ্গে বাছাইপর্ব পার করে মূল টুর্নামেন্টে সুযোগ পেয়েছে হংকং। চলতি সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখ, শনিবার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে এশিয়া কাপ। শেষ হবে চলতি মাসের ২৮ তারিখে, একই ভেন্যুতে।

ছয় দলকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ‘এ’ গ্রুপে আছে পাকিস্তান, হংকং ও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত। ‘বি’ গ্রুপে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান।

এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ছয়বার শিরোপা জিতেছে ভারত। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ প্রাপ্তি রানার্সআপ হওয়া।

টুর্নামেন্টে চলবে ব্যাট-বল আর স্নায়ুর লড়াই। কে কাকে কতটা ছাড়িয়ে যেতে পারে, সেটার রোমাঞ্চ উপভোগ করতে মুখিয়ে আছে সমর্থকরাও। টুর্নামেন্টের আগে থেকেই চলছে সাম্ভাব্য সেরাদের নিয়ে বিচার ও বিবেচনা। কদিন আগে যেমন শ্রীলঙ্কান কোচ জানিয়েছেন, এবারের চ্যাম্পিয়ন হতে পারে পাকিস্তান ক্রিকেট দল। অন্যদিকে, বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল বাংলাদেশ দলকে দেখছেন শক্ত অবস্থানে। ভারত তাদের মূল অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে এশিয়া কাপে বিশ্রামে রেখেছে।

ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়েও চলছে আলোচনা। কেবলমাত্র এশিয়া কাপের কারণে  বাংলাদেশের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের অস্ত্রোপচার পিছিয়েছে। ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ দলের ভরসা মানা হচ্ছে ওপেনার তামিম ইকবালকে। বোলিংয়ে বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান কতটা দলের জন্য সুবিধা দিতে পারেন, তা নিয়েও চলছে জল্পনা।

এতসবের মধ্যেই সামনে চলে আসে সাবেক কিংবদন্তিদের পারফরম্যান্স। এশিয়া কাপে কেমন ছিল ওয়াসিম আকরাম, শচীন টেন্ডুলকার, জয়সুরিয়া কিংবা মুরালিধরনদের পারফরম্যান্স? পরিসংখ্যানে এই আসরে এখনও সবার উপরে আছে কে?

তারই ধারাবাহিকতায় এবারের এশিয়া কাপকে সামনে রেখে চলুন জেনে নেওয়া যাক এখন পর্যন্ত এশিয়া কাপের এক ইনিংসে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির সেরা পাঁচের গল্প।

অজন্তা মেন্ডিস (৬/১৩, প্রতিপক্ষ ভারত)

উদযাপনে অজন্তা মেন্ডিস; Image Source: SB Nation

লাসিথ মালিঙ্গার পর অজন্তা মেন্ডিসই একমাত্র বোলার যিনি কি না এশিয়া কাপে একাধিকবার পাঁচ উইকেট কিংবা তার চেয়ে  বেশি উইকেট নিয়েছেন। ২০০৮ সালে ভারতের বিপক্ষে এশিয়া কাপের ম্যাচে মাত্র ১৩ রান খরচ করে তুলে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। মেন্ডিসের ওই বোলিং ফিগার এখন পর্যন্ত এশিয়া কাপের এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত উইকেট শিকার।

২০০৮ এশিয়া কাপের ফাইনাল ম্যাচ ছিল সেটি। সনাৎ জয়সুরিয়ার ১২৫ রানের ইনিংসে চড়ে সবমিলিয়ে ২৭৩ রান তুলেছিল শ্রীলঙ্কা। জবাবে রান তোলা তো দূরে থাক, মেন্ডিসের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি ভারত। ফলাফল, হার মানতে হয় তাদের। অন্যদিকে, চতুর্থবারের মতো এশিয়া কাপের শিরোপা কব্জা করে  শ্রীলঙ্কা।

স্মরণীয় সেই ম্যাচে সমর্থকরা কেবল জয়সুরিয়ার সেই ইনিংসকেই মনে রাখেনি, মনে রেখেছে অজন্তা মেন্ডিসের অনবদ্য সেই ঘূর্ণি বোলিংকেও। 

আকিব জাভেদ (৫/২১, প্রতিপক্ষ ভারত)

আকিব জাভেদ; Image Source: ESPN

নিজের সময়ের অন্যতম সেরা বোলার হয়েও পাকিস্তানি সাবেক পেসার আকিব জাভেদকে ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ থাকতে হয়েছে ওয়াসিম  আকরাম ও ওয়াকার ইউনিসের ছায়া হয়ে। তারপরও, এশিয়া কাপের ইতিহাসে এক  ম্যাচে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারের তালিকায় তিনি অমর হয়ে আছেন।

১৯৯৫ এশিয়া কাপে ভারতকে বিপাকে ফেলেছিলেন আকিব। আগে ব্যাট করতে নেমে ২৬৬ রান তোলে পাকিস্তান। জবাবে ৪২.৪ ওভারে মাত্র ১৬৯ রানে গুটিয়ে যায় ভারত।

এই  গুটিয়ে দেওয়ার উৎসব শুরু হয়েছিল আকিবের বরাত দিয়ে। ভারতের দলীয় রান যখন কেবল ১১, ততক্ষণেই দলের দুই ওপেনারকে সাজঘরে ফিরিয়েছেন পাকিস্তানের হয়ে ১৬৩ ওয়ানডে খেলা এই পেসার। শুরুর এই ধাক্কা আর পরে কাটিয়ে উঠতে পারেনি ভারত। সব মিলিয়ে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট।

ক্যারিয়ারের শেষ পর্যন্ত, এশিয়া কাপের এই ম্যাচটি আকিব জাভেদের দ্বিতীয় সেরা বোলিং ফিগার।

সেরাটাও এই ভারতেরই বিপক্ষে। ১৯৯১ সালে উইলস ট্রফিতে ৩৭ রান খরচ করে তুলে নিয়েছিলেন ৭ উইকেট।

আরশাদ আইয়ুব (৫/২১, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান)

সেই আরশাদ আইয়ুব এখন রাজ্য দলের কোচ; Image Source: ESPN

১৯৯০ সালে শেষবার জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন আরশাদ আইয়ুব। সে কারণে ভারতের এই বোলারের নাম স্মৃতিতে প্রায় বিলীন হতে বসেছে। ডানহাতি এই অফস্পিনার এখন পর্যন্ত এশিয়া কাপের এক ইনিংসে তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড ধরে রেখেছেন।

১৯৮৮ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২১ রান খরচ করে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।

এখন পর্যন্ত ছয়বার এশিয়া কাপের শিরোপাজয়ী ভারত সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে হারায় ৪ উইকেটের ব্যবধানে। আগে ব্যাট করতে নামা পাকিস্তানী ব্যাটসম্যানরা ১৪২ রানের মধ্যে গুটিয়ে যায়। ম্যাচে আরশাদ ভারতের পক্ষে  সেরা বোলার ছিলেন। হায়দরাবাদে জন্ম নেওয়া  এই বোলারের রহস্য যেন কোনভাবেই  বুঝে উঠতে পারছিলেন না পাকিস্তানিরা। 

আরশাদ আইয়ুব ভারতের হয়ে সবমিলিয়ে ৩২টি ওয়ানডে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। এশিয়া কাপের ওই ম্যাচে পাওয়া পাঁচ উইকেট ছিল তার প্রথম পাঁচ উইকেট নেওয়া ওয়ানডে ম্যাচ। অর্থাৎ, সেটাই তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং।  

অজন্তা মেন্ডিস (৫/২২, প্রতিপক্ষ সংযুক্ত আরব আমিরাত)

মেন্ডিসের ব্যতিক্রমী বোলিং ডেলিভারির একটি মুহূর্ত; Image Source: ICC Cricket

অজন্তা মেন্ডিসের শুরুটা দারুণ ছিল। জাতীয় দলে এসেই লঙ্কান এই ক্রিকেটার তার আঙুলের বিশেষ ডেলিভারিতে ব্যাটসম্যানদের  খুব সহজে কাবু করে ফেলতেন।

সেই বোলিংয়ের ধারাবাহিকতাতেই ২০০৮ এশিয়া কাপে  সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) বিপক্ষে মাত্র ২২ রান খরচ করে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।

মাত্র ৬.৩ ওভারে আরব আমিরাতের ব্যাটিং লাইনআপ প্রায় গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন মেন্ডিস। লাহোরে সেবার আগে ব্যাট করতে নামে শ্রীলঙ্কা। নির্ধারিত ৫০ ওভারে তোলে ২৯০ রান। জবাবে অজন্তা মেন্ডিসের তোপে সব কয়টি উইকেট হারিয়ে ১৪৮ রান তুলতে সমর্থ হয় আরব অঞ্চলের দলটি। ব্যাটিংয়ে অজন্তা মেন্ডিসের সামনে বারবার দিকভ্রান্ত হয়ে পড়ে তারা।

মাত্র ৮৭ ওয়ানডেতে ১৫২ উইকেট নেওয়া অজন্তা মেন্ডিসের ক্যারিয়ার থেমে যায় ২০১৫ সালে। শেষবার ওই বছর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্রাইস্টচার্চে ওয়ানডে খেলতে নেমেছিলেন তিনি।

মুত্তিয়া মুরালিধরন (৫/৩১, প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ)

কিংবদন্তি মুত্তিয়া মুরালিধরন; Image Source: Cricinfo

শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি সাবেক স্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরন এখন পর্যন্ত ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। ক্যারিয়ারের শেষ অবধি ৩৫০ ওয়ানডে ম্যাচ খেলে সাফল্যের ঝুলিতে ভরেছেন ৫৩৪ উইকেট। সেই ধারাবাহিকতায়, এশিয়ার সবচেয়ে বড় ক্রিকেট আয়োজন এশিয়া কাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে তার বড়সড় অর্জন থাকবে না, এটা ভাবা নেহাত বোকামী।

এশিয়া কাপে মুরালিধরনের সেরা বোলিং ফিগার ৩১ রান খরচে  ৫ উইকেট। ২০০৮ সালে পাকিস্তানের করাচিতে সেই ম্যাচটি ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে। শুধু অল্প রানে পাঁচটি উইকেটই নয়, নামের পাশে লিখে রেখেছিলেন একটি মেইডেন ওভারও।

করাচির সেই ম্যাচে আগে ব্যাট করেছিল শ্রীলঙ্কা। সনাৎ জয়সুরিয়া ও কুমার সাঙ্গাকারার ২০১ রানের ওপেনিং জুটি ঝড় তুলেছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে। নির্ধারিত ৫০ ওভারে শ্রীলঙ্কার মোট রান দাঁড়ায় ৩২৮।

জবাবে বাংলাদেশ উইকেটে দাঁড়াতে পেরেছিল মাত্র ৩৮.৩ ওভার পর্যন্ত। রান উঠেছিল মোট ১৭৪। ১৫৮ রানের বিশাল ব্যবধানে হারে তারা। ইনিংসের অর্ধেক ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরেছিল মুত্তিয়া মুরালিধরনের তোপে।

ফিচার ইমেজ- ESPN Cricinfo

Related Articles