Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আন্তর্জাতিক ফুটবলে ব্যক্তিগত প্রতিদ্বন্দ্বিতার গল্প

প্রতিযোগিতা মানেই তুলনা, সেরা হওয়ার লড়াই; আরেকজনকে ছাপিয়ে গিয়ে নিজেকে সেরা প্রমাণ করার চেষ্টা। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই চোখে পড়ে প্রতিযোগিতার মহড়া। আর এভাবেই প্রতিযোগিতা একসময় রূপ নেয় প্রতিদ্বন্দ্বিতাতে। ঠিক তেমনিভাবে ফুটবলও এর ব্যতিক্রম নয়। ‘দ্য বিউটিফুল গেম’ নামে পৃথিবীখ্যাত এই খেলায় খেলোয়াড়দের মধ্যেও বিভিন্নভাবে সৃষ্টি হয়েছে নানা ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সেরা তিন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোই তুলে ধরা হলো আজকে।

পেলে – ইউসেবিও

পঞ্চাশের দশকের শেষ থেকে সত্তর দশক পর্যন্ত এক যুগ ধরে বিশ্ব ফুটবলে নিজেদের রাজত্ব চালিয়েছিলেন ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড’ পেলে এবং ‘দ্য ব্ল্যাক প্যান্থার’ ইউসেবিও। দুই মহাদেশের ফুটবলকে আগেই নিজেদের পায়ের নিচে রাখলেও নিজেদের মধ্যকার প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা শুরুটা হয়েছিল ১৯৬২ ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে। সাম্বা নাচের প্রতিটি পদক্ষেপ নতুনভাবে চেনানো পেলের সান্তোসের মুখোমুখি হয়েছিল গতির অধীশ্বর ইউসেবিওর বেনফিকা। দুজনই ফাইনালে জোড়া গোল করে নিজ ক্লাবকে মহাদেশের সেরা ক্লাবের মুকুট পরিয়েছিলেন।

ব্রাজিলের মাটিতে হওয়া প্রথম লেগে পেলের জোড়া গোল সান্তোসকে ৩-২ গোলে এগিয়ে রেখেছিলো। ইউরোপের মাটিতে ইউসেবিওর ঝলক দেখার অপেক্ষায় ছিল পুরো বিশ্ব। কিন্তু বিধি বাম, ইউসেবিওর দুর্দান্ত গোল ঢাকা পড়ে যায় পেলের হ্যাটট্রিকে। বেনফিকাকে দুই লেগ মিলিয়ে ৮-৪ গোলে হারিয়ে বিজয়ীর বেশেই দেশে ফেরেন পেলে।

কালো মানিকের সান্তোসের মুখোমুখি কালো প্যান্থারের বেনফিকা; Image Source: YouTube

১৯৬৬ সালে আবারও মুখোমুখি হন দুই কিংবদন্তী, এবার নিজেদের দেশের রঙিন জার্সিতে। গ্রুপপর্বেই পর্তুগালের মুখোমুখি ক্যানারিনহোরা। তবে এবার ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়, গত দুবারের বিশ্বকাপজয়ী সেলেসাওরা ইউসেবিওর পর্তুগালের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ে। ইনজুরিতে থাকা পেলের অভাবে জোড়া গোল করে ব্রাজিলকে গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় করে দেন পর্তুগালের ‘দ্য কিং’। পেলের বিদায় হলেও ইউসেবিও থেমে থাকেননি, কোয়ার্টার ফাইনালে কোরিয়ার বিপক্ষে ৩-০ গোলে পিছিয়ে থেকেও ৪ গোল করে নিজের স্বরূপ দেখালেন তিনি। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিতর্কিত ম্যাচে হেরে গেলেও ৯ গোল করে গোল্ডেন বুট নিজের করে নেন।

দুই মহাদেশের এই দুই মহারথী খুব বেশি মুখোমুখি না হলেও ফুটবলে নিজেদের সেরাটা দিতে কার্পণ্য করেননি। দুর্দান্ত স্কিলের কারিগরদের অসংখ্য রেকর্ডের কীর্তিগুলো আজও ফুটবলপ্রেমীরা দু’চোখ ভরে উপভোগ করে।

এক যুগ ধরে ফুটবল জগতে রাজত্ব করেছিলেন এই দুই কিংবদন্তী; Image Source: TheseFootballTimes.co

ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার – ইয়োহান ক্রুয়েফ

সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ইউরোপিয়ান ফুটবলে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে চলছিলেন ডাচ ‘টোটাল ফুটবল’-এর সবচেয়ে প্রতিভাধর খেলোয়াড় ইয়োহান ক্রুয়েফ আর জার্মান ‘পাওয়ার ফুটবল’-এর নেতা ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুধু আয়াক্স ও বায়ার্ন মিউনিখের নয়, এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুধু নেদারল্যান্ডস আর জার্মানির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা দুই দেশে জন্ম নেয়া দুই সেরা খেলোয়াড়ের।

১৯৭৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি তৎকালীন সময়ের অন্যতম প্রভাবশালী দুই অধিনায়ক ব্যাকেনবাওয়ের এবং ক্রুইফ; Image Source: EFE

একজনের রয়েছে ‘ক্রুয়েফ টার্ন’-এর মতো স্পেশাল স্কিল আবিষ্কার করার ক্ষমতা, আর আরেকজনের রয়েছে ‘সুইপার পজিশন’কে বিশ্বের কাছে নতুনভাবে তুলে ধরার ক্ষমতা। একজনের রয়েছে মাঠের যেকোনো পজিশনে খেলতে পারার যোগ্যতা, আর আরেকজনের রয়েছে দলকে শেষ সময় পর্যন্ত হাল ছেড়ে না দিয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার অমানুষিক ক্ষমতা।

১৯৭৪ বিশ্বকাপ ফাইনাল ছিল এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর শ্রেষ্ঠ লড়াই, যদিও শেষপর্যন্ত বিজয়ীর হাসিটা হেসেছিলেন ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারই। দুজনেরই রয়েছে একাধিকবার বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার রেকর্ড। তবে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুধু তাদের খেলোয়াড় ক্যারিয়ারে আটকে ছিল না, যা তাদের দুজনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। দুজনেরই রয়েছে ম্যানেজার হিসেবেও অসাধারণ কিছু মুহূর্ত। একজনের রয়েছে বিশ্বকাপ জেতার গৌরব, আরেকজনের রয়েছে দল নিয়ে টানা ৪ বার লিগ শিরোপা জেতার রেকর্ড। একজনের রয়েছে মাত্র ২ মাসেই উয়েফা কাপ জেতার রেকর্ড, আরেকজনের রয়েছে ইউরোপিয়ান কাপ অর্জনের সাফল্য। তবে তাদের এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা তাদের সম্পর্কে কখনো চিড় ধরাতে পারেনি। দুজনেরই একে অপরের প্রতি রয়েছে গভীর শ্রদ্ধাবোধ ও সম্মান।

শুধু খেলোয়াড় হিসেবে নয়, বরং কোচ হিসেবেও নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা অব্যাহত রেখেছিলেন ক্রুয়েফ-বেকেনবাওয়ার; Image Source: Marca

লোথার ম্যাথাউস – ডিয়েগো ম্যারাডোনা

ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা প্লেয়ার যখন বলেন, “আমি অনেক খেলোয়াড়েরই মুখোমুখি হয়েছি, কিন্তু ম্যাথাউস ছিল সবচেয়ে কঠিন”, তখন নিশ্চয়ই বলে দিতে হয় না এই দুই খেলোয়াড়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতা কোন পর্যায়ে ছিল। এই সমবয়সী দুই কিংবদন্তি জার্মানি-আর্জেন্টিনার ম্যাচকে এতটাই জমজমাট করে তুলেছিলেন যে, ম্যাচটিকে এখন বলা হয় ‘আল্টিমেট ডার্বি অফ ডেস্ট্রাকশন’ হিসেবে।

পরপর দুই বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হওয়ার পেছনে এই দুই কিংবদন্তীর অবদান কম ছিল না। কেন থাকবে না? দুজনেরই ছিল হার না মানা মনোভাব, দলের প্রয়োজনে সবকিছুই উজাড় করে দেওয়ার মতো দক্ষতা। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের কথাই ধরা যাক। প্রায় একক নৈপুণ্যে দলকে ফাইনালে উঠিয়েছিলেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার সেই ‘গোল অফ দ্য সেঞ্চুরি’ নিশ্চয়ই এখনো চোখে ভাসে। একইভাবে জার্মানির ফাইনালে ওঠার পিছনেও ছিল লোথার ম্যাথাউসের দুর্বার প্লেমেকিং অ্যাবিলিটি, সাথে নকআউট রাউন্ডে তার উইনিং গোল তো ইতিহাসের পাতায় লেখাই আছে।

‘৯০ বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি ম্যারাডোনা-ম্যাথাউস; Image Source: Scoopnest

প্লে-মেকার হিসেবে খেললেও ফাইনালে কোচ বেকেনবাওয়ার তাকে দায়িত্ব দিলেন ম্যারাডোনাকে মার্ক করার। আর সেই দায়িত্ব তিনি এতটাই সূক্ষ্মভাবে পালন করেছিলেন যে ম্যারাডোনা বলেই ফেলেছিলেন,

“সে মনে হয় আমার সব মুভই জানতো।”

কিন্তু বিধি বাম, ম্যারাডোনাকে গোল করতে না দিলেও তার দেওয়া অসাধারণ পাস থেকেই বুরুশাগার গোলে ৩-২ গোলে জয় পায় আলবিসেলেস্তারা।

দুজনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা তুঙ্গে ওঠে, যখন ম্যারাডোনার নাপোলির বিপক্ষে গোল করে ইন্টার মিলানকে ‘স্কুদেত্তো’ জেতান ম্যাথাউস। ১৯৯০ বিশ্বকাপের ফাইনালে আবারও পরস্পরের মুখোমুখি ম্যারাডোনা। গতবারের ভুলগুলো শুধরে এবার প্রতিশোধ নেওয়ার পালা জার্মানির। লোথার ম্যাথাউসের জার্মানি ছিল বেশ ভাল ফর্মেই। লোথার ম্যাথাউসের জয়ের আকাঙ্ক্ষা, আগ্রাসী মনোভাব আর সেই উক্তি- “দরকার হলে ডিফেন্স করেই বিশ্বকাপ জিতবো”, এগুলোই ছিল জার্মানির জন্য আলাদা প্রেরণা। সেই ম্যাচে ম্যাথাউস খেললেন সুইপার হিসেবে, অসাধারণ পারফরম্যান্সে পুরো ম্যাচ রাখলেন গোলশূন্য অবস্থায়। নিজের অসাধারণ পেনাল্টি নেওয়ার ক্ষমতা থাকলেও ম্যাচের শেষ মুহুর্তে বলটা তুলে দিলেন ব্রেহমের হাতে। ফলাফল: ম্যারাডোনা ১-১ ম্যাথাউস।

বিশ্বকাপের দুই ফাইনালের সাথে ক্লাব ক্যারিয়ারের চার বছর দুজনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে দিয়েছিলো নতুন মাত্রা। তবে এত কিছুর মধ্যেও দুজনের মধ্যে ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। তাই ম্যথাউসের শেষ ম্যাচে বায়ার্ন মিউনিখের জার্সি চাপিয়ে আবারও ম্যাথাউসের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিলেন ফুটবলের ‘ব্যারিলেতে কসমিকো’!

ছিল মধুর প্রতিদ্বন্দ্বিতা, তাই ম্যাথাউসের ফেয়ারওয়েল ম্যাচে বায়ার্ন মিউনিখের জার্সি গায়ে চাপিয়ে মাঠে নেমেছিলেন ম্যারাডোনা; Image Source: Maradona Retro Pics

This article is in Bangla language. It is about the best three rivalries in international football.

Featured Image: EFE

Related Articles