Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ফুটবলে বিগত দশকের বিভিন্ন সময়ে সেরা দলগুলো

একটি প্রজন্ম যখন এক ঝাঁক প্রতিভায় পরিপূর্ণ থাকে তখন সাফল্য থাকে প্রায় হাতের মুঠোয়। কিন্তু সেই প্রজন্মই যখন হুট করে বিদায় নিয়ে নেয়, তখন উল্টে দল পৌঁছে যায় খাদের কিনারায়। ২০০৬ বিশ্বকাপের পর এই বিষয়টা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে ইতালি। এই বেদনার পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে স্পেন, হল্যান্ড, জার্মানির মতো দেশগুলো। আর পর্তুগালের ধারণা হয়েছে শুধু মুদ্রার এক পিঠ। কারণ, ইউরো ও নেশনস কাপ জেতার পর বর্তমানে তারা তাদের সেরা খেলোয়াড়দের নিয়ে সব থেকে সাফল্যময় সময় পার করছে। দেশের পাশাপাশি এইরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় ক্লাবগুলোকেও। এসি মিলান ও ইন্টার মিলান যার সব থেকে উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

তবে আজকের লেখার বিষয় এই প্রকৃতির অমোঘ নিয়মের প্রজন্ম পরিবর্তনের নয়। শুধুমাত্র বিগত দশকের বিভিন্ন সময়ে সেরা দলগুলো নিয়ে।

স্পেন (২০১০)

২০১০ বিশ্বকাপ। ভিসেন্তে দেল বস্কের স্পেন দল তারকাতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ। গোলরক্ষক থেকে ডিফেন্ডার-মিডফিল্ডার কিংবা ফরোয়ার্ড, সবখানেই তারকা ও তরুণ প্রতিভাতে ভর্তি। কাকে রেখে কাকে নামাবেন, এমন চিন্তায় দেল বস্কের ঘুম হারাম হয়ে যাবার কথা। তবে স্পেনের ইতিহাসের সব থেকে দুর্দান্ত দল হাতে পেয়ে তিনি বোকামি করেননি, সামলেছেন খুব সুক্ষ্মভাবে।

গোলরক্ষক পজিশনে পেপে রেইনা, ভিক্টর ভালদেস ও ইকার ক্যাসিয়াস। ক্যাসিয়াস তখন বিশ্বের সেরা গোলরক্ষকদের একজন। তাই প্রথম পছন্দে তিনিই থাকলেন। মোটামুটি আনকোরা খেলোয়াড় রামোস তখন খেলেন লেফটব্যাক পজিশনে। তাই রামোস, পুয়োল, পিকে ও ক্যাপদেভিয়াকে নিয়ে দেল বস্ক গড়লেন স্প্যানিশ দুর্গ।

বিশ্বকাপ হাতে স্পেনের তারকাখচিত দল ©FIFA

বিশ্বকাপে দেল বস্ক প্রায় একই খেলোয়াড়দের নিয়ে একই ফর্মেশন ব্যবহার করে গেছেন। ৪-২-৩-১ ফর্মেশনের মধ্যমাঠের ডাবল পিভটে রাখলেন জাবি আলোনসো ও সার্জিও বুসকেটসকে। লেফট-মিডে ইনিয়েস্তা, মাঝে জাভি এবং রাইট-মিডে পেদ্রোকে রেখে স্ট্রাইকার পজিশনে ডেভিড ভিয়া। তবে এই দল মাঠে নামার পর আর এমন ফর্মেশন থাকত না। জাভি চলে যেতেন একদম মাঝমাঠে, তার নিজের ক্যানভাসে যেখানে তিনি একজন ‘কমপ্লিট’ মিডফিল্ডার রূপে। ইনিয়েস্তা তখন আরও ভয়ংকর। জাভির সাথে তার টেলিপ্যাথিক যোগাযোগ, দুর্দান্ত সলো রান, ড্রিবলিং করছেন সমানে, আর মাঝ মাঠ থেকে বলের যোগান আসছে জাভির পা থেকে। মাঝমাঠ থেকে আক্রমণ অঞ্চল পুরো চষে ফেলছেন তিনি। জাভিরও তেমন চিন্তা নেই, তার পেছনে আক্রমণ গুড়িয়ে দেবার জন্য প্রস্তুত আছেন বুসকেটস ও আলোনসো। একপাশে ইনিয়েস্তা, তো অন্য পাশে বুলেট গতির পেদ্রো; মাঝে আরেক ‘যন্ত্রণা’ ডেভিড ভিয়া। স্ট্রাইকার ভূমিকায় নামলেও তিনি স্ট্রাইকার নন, কারণ ভিসেন্তে দেল বস্ক ব্যবহার করছেন সেই বিখ্যাত ‘ফলস নাইন’ ট্যাকটিক্স। যেখানে কোনো স্ট্রাইকার নেই। আর এই ট্যাকটিক্সের শুরু যেখানে, সেই বার্সাতে খেলে এসেছেন ইনিয়েস্তা, ভিয়া আর পেদ্রো। 

দেল বস্কের এই প্রথম একাদশ বাদেও বেঞ্চে ছিলেন তোরেস, মাতা, ডেভিড সিলভা, সেস্ক ফ্যাব্রেগাস, জেসুস নাভাস, জাভি মার্টিনেজের মতো খেলোয়াড়রা। চিলি, পর্তুগাল, প্যারাগুয়ে, জার্মানি, হল্যান্ডের মত দলের বিপক্ষে সর্বকালের সেরা পারফরম্যান্স দিয়ে সে বছর তারা হয়েছিল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। দুই বছর পর ইউরোতেও একই ধারা বজায় রেখেছিল এই দলটি। কিন্তু এক ঝাঁক তারকা নিয়ে শুরু করা স্পেন ব্রাজিল বিশ্বকাপের সময় থেকে খুব দ্রুত তাদের তারকাদের হারিয়েছে। তাই এই দশক দুর্দান্ত শুরু করেও স্প্যানিশদের জন্য শেষটা সুন্দর হয়নি। তবে ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত স্পেনের যে দল ও পারফরম্যান্স ছিল, তা গোটা দশকে একবারই দেখা যায়।

জার্মানি (২০১৪)

দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলে সেমিফাইনাল পর্যন্ত গেলেও স্পেনের বিপক্ষে লড়াই করে টিকে থাকার মতো অবস্থায় জার্মানরা ছিল না। তবুও আপ্রাণ চেষ্টার সে লড়াই জমে উঠেছিল। কিন্তু ‘১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপের সময় দেখা গেল জার্মান দলের ভারসাম্যতা ও জোয়াকিম লো’য়ের ফুটবল দর্শনের জাদু।

জোয়াকিম লো’য়ের হাতে দুর্দান্ত একটি দল ছিল। শুধুমাত্র ১১ জনকে নিয়মিত মাঠে নামানোর মধ্যেই তিনি সীমাবদ্ধ থাকেননি। ম্যাচ ও খেলোয়াড়দের অবস্থা বুঝে তিনি ফর্মেশন ও একাদশে বদল এনেছেন। গ্রুপপর্ব থেকে কোয়ার্টার ফাইনালের আগ পর্যন্ত লো ব্যবহার করেছেন ৪-৫-১ বা ৪-৩-৩ এর মতো ফর্মেশন। আবার কোয়ার্টার-ফাইনাল থেকে ফাইনালের ম্যাচ পর্যন্ত দেখা গেছে ৪-২-৩-১ ফর্মেশন, যেখানে ডাবল-পিভট রোলে ছিলেন স্যামি খেদিরা ও বাস্তিয়ান শোয়েনস্টাইগার। তবে লো’য়ের শক্তিমত্তা ছিল মূলত আক্রমণভাগ। টনি ক্রুস, টমাস মুলার, মিরোস্লাভ ক্লোসা ও মেসুত অজিলকে নিয়ে গড়া তার আক্রমণভাগ ছিল ঈর্ষণীয়। এই ভয়ংকর আক্রমণভাগের সামনে সেমিফাইনালে মনোবল হারানো ব্রাজিলকে পেয়ে তাদের জালে গোল উৎসব শুরু করেছিল জার্মানরা।

ফাইনালে অন্তিম সময়ে গোৎজের গোল ©TASS via Getty Images

ব্রাজিল বিশ্বকাপে জার্মানদের রক্ষণভাগে ছিলেন ফিলিপ লাম, ম্যাট হামেলস, জেরোম বোয়েটেং ও বেনেদিক্ত হোডেসের মতো খেলোয়াড়ররা। রক্ষণ খুব শক্তপোক্ত না হলেও নড়বড়ে ছিল না। তবে দুর্দান্ত এই দলে আরও দুর্দান্ত ছিলেন ফিলিপ লাম, আর প্রধান ট্রাম্পকার্ড থমাস মুলার। যিনি পুরো টুর্নামেন্টে জার্মানদের হয়ে করেছিলেন ৫ গোল। এছাড়াও সে সময়ে জার্মান দলে থাকা পোডলস্কি, ইউলিয়ান ড্রাক্সলার, আন্দ্রে শ্যুরলের কথাও ভোলা সম্ভব নয়। আর তরুণ মারিও গোৎজেকে তো আজীবন মনে রাখবে তাদের সমর্থকেরা। অতিরিক্ত সময়ে শেষ মুহূর্তে তার সেই দুর্দান্ত গোলেই না বিশ্বকাপ ঘরে তুলেছিল জোয়াকিম লো’য়ের সেই ঐতিহাসিক দল!

আর্জেন্টিনা (২০১৪-২০১৭)

২৫ বছর পর শিরোপা খরা ঘোচানোর সুযোগ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। ৮ বছর পর শিরোপা ঘোচানোর মত একটি দলও ছিল তাদের। কিন্তু ব্রাজিল বিশ্বকাপে শুরু থেকে ভাগ্যদেবী আর্জেন্টিনার সাথে থাকলেও মারাকানার ফাইনালে তার আর্শীবাদ পেয়েছিল জার্মানরা, বিশেষ করে মারিও গোৎজে।

২০১৪ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার কোচ ছিলেন আলেহান্দ্রো গঞ্জালেস সাবেয়া। মনে করা হয়, ২০০৬ বিশ্বকাপের পর আজ পর্যন্ত আর্জেন্টিনার সব থেকে উপযুক্ত কোচ ছিলেন তিনি। আর্জেন্টিনার চিরজীবনের আক্ষেপ ঘুচিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তার অধীনে আর্জেন্টিনার ভঙ্গুর রক্ষণ হয়ে উঠেছিল দুর্ভেদ্য। দুই ফুলব্যাক জাবালেতা ও মার্কাস রোহো ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। আর্জেন্টিনার ফুলব্যাক সমস্যা সমাধান হয়ে গিয়েছিল এক নিমিষে। সেন্টারব্যাক হিসেবে দেমিচেলিস, ফ্রেদ্রিকো ফার্নান্দেজ ও এজেকিয়েল গ্যারে’দের রক্ষণ হয়ে উঠেছিল বিশ্বসেরা।

মিডফিল্ডে হাভিয়ের মাশ্চেরানো ও লুকাস বিলিয়ার সাথে লাভেজ্জি ও ডি মারিয়ার জুটি, আর আক্রমণে মেসি-আগুয়েরো-হিগুয়াইনের আর্জেন্টিনা সেবার জার্মানির সাথে পাল্লা দিয়ে খেলেছিল মুগ্ধতা ছড়ানো ফুটবল। কিন্তু ভাগ্যদেবী শেষ মুহূর্তে মুখ ফিরিয়ে নেবার কারণে এই ঐতিহাসিক দল বিশ্বকাপ শেষ করেছিল খালি হাতেই।

টানা তিন ফাইনালে এমন হতাশ, বিদ্ধস্ত মেসির দেখা মিলেছে দশকজুড়ে ©AFP/Getty Image

বিশ্বকাপ শেষ হবার পর স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়েন সাবেয়া। তার স্থলে আসেন প্রাক্তন বার্সেলোনা কোচ জেরার্দো মার্টিনো। তার অধীনে টানা দুই বছর দুই কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠেছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু ফাইনালে উঠলেই প্রতিবার হারিয়ে যেতেন মেসি-আগুয়েরোরা। তিনটি ফাইনালে আর্জেন্টিনার রক্ষণই বিস্ময়করভাবে কোনো ভুল করেনি, যেখানে আক্রমণভাগ ছিল চূড়ান্তরকমের ব্যর্থ।

সাবেয়ার পরবর্তী সময়ে জেরার্দোর আমলে আর্জেন্টিনার একাদশে বিশেষ কোনো পরিবর্তন হয়নি। রক্ষণে যোগ হয়েছিলেন ওটামেন্ডি, আর ‘১৫ কোপায় ছিলেন হাভিয়ের পাস্তোরে। ‘১৬ এর কোপায় জাবালেতার বদলে খেলেন মেকার্দ ও রক্ষণে ফুনেস মরি। প্রত্যেকে প্রত্যেকবার নিজ নিজ স্থানে তাদের সেরাটা খেলেছেন। কিন্তু হতাশা একটাই, আর্জেন্টিনা টানা তিনবার ফাইনাল খেলেও ট্রফিশূন্য।

হল্যান্ড (২০১৪)

আরিয়েন রোবেনের সেই ক্ষিপ্রতা মেশানো দৌঁড় আর মাশ্চেরানোর ঠাণ্ডা মাথায় মোক্ষম ট্যাকল। রোবেনের এই নিশ্চিত গোল সুযোগ ব্যর্থ হবার পর টাইব্রেকারে হেরে বাদ পরে তারা। এরপরই কয়েক বছরের জন্য দৃশ্যপট থেকে উধাও হয়ে যায় ডাচরা। রাশিয়া বিশ্বকাপেও খেলার টিকেট মেলেনি তাদের। কিন্তু ব্রাজিল বিশ্বকাপে এই দলটি ছিল দুর্দান্ত।

ইয়াসপার সিলেসেন বা রক্ষণভাগের রন ভ্লার, স্টিফেন ডি ভ্রাই বা ব্রুনো মার্টিনস ইন্ডি খুব নামকরা ডিফেন্ডার ছিলেন না। কিন্তু বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচে তারা ছিলেন নির্ভরযোগ্য। ৩-৪-১-২ ফর্মেশনে খেলা হল্যান্ড দলের প্রধান শক্তি ছিল আক্রমণভাগ। ওয়েসলি স্নাইডারকে মধ্যমাঠের আক্রমণ অঞ্চলে রেখে উপরের অংশে আগুন ঝড়াতেন রবিন ভন পার্সি আর আরিয়েন রোবেন। এছাড়াও ডার্ক কাইট ও ক্লাস-ইয়ান হান্টেলার তখনও ফর্মে। উঠতি তারকা হিসেবে মেম্ফিস ডিপাই ও জর্জিনিও ভাইনালদুমও ছিলেন ডাচ একাদশে।

রোবেন ও ভন পার্সি ©TASS via Getty Images

২০১০ বিশ্বকাপের মতো ব্রাজিলেও দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দিলেও কিছু জেতা হয়নি ডাচদের। আর ডাচরাই একমাত্র দেশ, যারা তিনবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেও শিরোপা জিততে পারেনি। 

ফ্রান্স (২০১৮)

২০১০ বিশ্বকাপে ভিসেন্তে দেল বস্ককে চিন্তা করতে হয়েছিল একাদশ সাজানো নিয়ে। কারণ, দলের প্রত্যেকটা খেলোয়াড় একাদশে থাকার যোগ্য। ‘১৮ এর রাশিয়া বিশ্বকাপে দিদিয়ে দেশঁকে ঐ ২৩ জনের প্রাথমিক দল সাজিয়ে হয়েছিলেন সমালোচিত। কারণ, বর্তমান ফ্রান্সে এত তারকাখচিত ফুটবলারের ভীড়ে কে উপযুক্ত আর কে নয়, এটা ভেবেই রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাবার কথা। ‘১৮ এর বিশ্বকাপ দলে সুযোগ হয়নি মার্শিয়েল, রাবিও, লাপোর্ত, ল্যাকাজেত্তের মতো খেলোয়াড়দের। তারপরও এই দলটি ছিল বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট।

বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে মত্ত © AP

বিশ্বকাপে রক্ষণের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে ছিলেন ভারান ও উমতিতি। দুই ফুলব্যাক হিসেবে প্রথমে সিদিবে ও মেন্ডিকে ধারণা করা হলেও দু’জনই বিশ্বকাপের শুরু থেকে ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে পরেন। তাদের শূন্যস্থান পূরণ করেন লুকাস হার্নান্দেজ ও বেঞ্জামিন পাভার। সুযোগ পেয়ে তারা এতটাই দুর্দান্ত ছিলেন যে, সিদিবে ও মেন্ডি পরবর্তীতে খেলার জন্য প্রস্তুত হলেও তারা আর সুযোগ পাননি।

২০১৮ বিশ্বকাপে ফ্রান্স দল শক্তিমত্তায় পেছনে ফেলেছিল সব দলকে। এ দশকে ২০১৮ এর ফ্রান্স দল সেরা, নাকি ২০১০ এর স্পেন, তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা থাকলেও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো কঠিন। রাশিয়াতে দিদিয়ে দেশঁ ৪-৩-৩, ৪-৪-২ ও ৪-২-৩-১ এর মতো ফর্মেশন ব্যবহার করেছেন। ফর্মেশনের বদলের সাথে কিছু খেলোয়াড়ের অদল-বদল ঘটলেও মধ্যমাঠে পাকাপাকি ছিলেন কান্তে ও পগবা। তাদের সঙ্গ দিয়েছেন তোলিসো বা মাতুইদি। আক্রমণে প্রথমে ফেকির, দেমবেলে, লেমার থাকলেও পরে পাকাপাকি হয়ে গিয়েছিলেন জিরু। সাথে গ্রিজমান ও এমবাপ্পে তো ছিলেনই। 

রাশিয়াতে ফরাসিরা কোনো চমক দেখায়নি। বাকি সব দল থেকে শক্তি ও পারফরম্যান্সে এগিয়ে থেকেই তারা তাদের স্বাভাবিক ফুটবল খেলেছে। ৯০ মিনিট ভালো ফুটবল খেলার কৌশলে তারা হারিয়েছে আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে, বেলজিয়াম ও দুর্দান্ত ক্রোয়েশিয়া দলকে। বেঞ্চ থেকেও কোনো চমক দেখা যায়নি। কারণ, ৯০ মিনিটে শুরুর একাদশে থাকা এমবাপ্পে, গ্রিজমান ও পগবারাই তাদের জয়ের পথ সহজ করে রাখতেন। ক্রোয়েশিয়া পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছে ঠিকই, তবে এই ফরাসি দল বিশ্বকাপের ছোঁয়া না পেলে তা হতো চরম মাত্রার দুর্ভাগ্য।

বেলজিয়াম (২০১৬ – ২০১৮)

ইউরো বা বিশ্বকাপ জেতা অথবা পূর্ণশক্তিতে শেষ সময় পর্যন্ত লড়াই করার সক্ষমতা বেলজিয়ামের কখনোই ছিল না। কিন্তু ২০১৬ সালের পর থেকে রাশিয়া বিশ্বকাপ পর্যন্ত তাদের দল ও খেলোয়াড়দের ভেতর যে রসায়ন তৈরি হয়েছিল, তা যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো বড় দলের বুক কাঁপিয়ে দিত।

২০১৬ সালের মার্ক উইলমর্টসের বেলজিয়ামের কথাই ধরা যাক। স্ট্রাইকার লুকাকু, ডাবল পিভটে নাইনগোলান ও উইটসেলকে রেখে আক্রমণভাগে কেভিন ডি ব্রুইন, হ্যাজার্ড ও মার্টেন্স। রক্ষণে ভারমায়লেন, ভেইরাল্ডওয়াইল্ড ও ভার্তোঙ্গেনরা যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য। কিন্তু দুর্দান্ত খেলা এই দল ইউরোতে পথ হারালো ওয়েলসের কাছে। 

রাশিয়া বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের সেই দুর্দান্ত দল © FIFA

বিশ্বকাপে রবার্তো মার্টিনেজ এই দলেই কিছুটা পরিবর্তন এনেছিলেন শুধু, আর বদলে দিয়েছিলেন খেলার ধরন। লুকাকু, হ্যাজার্ড ও ডি ব্রুইনের আক্রমণভাগের নিচে ছিলেন রবার্তো মার্টিনেজের ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া ফেলাইনি ও উইটসেল। রক্ষণভাগ আগের মতোই।

পুরো বিশ্বকাপে প্রতি-আক্রমণের পসরা বসিয়েছিল তারা। জাপানের বিপক্ষে পিছিয়ে পরে পরবর্তীতে ঘুরে দাঁড়িয়ে টিটের ব্রাজিলকে হারিয়েছিল আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে। কিন্তু সেমিফাইনালে অদম্য ফ্রান্সের সাথে লড়াই করে গেলেও জেতা হয়নি।

বিগত দশকে বেলজিয়ামই একমাত্র দল, যারা পারফরম্যান্সের বিচারের সব সময় সেরা পাঁচের ভেতর থেকেছে। প্রতিটা টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল বা কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের দেখা যাবেই। কিন্তু ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে না পারার জন্য লুকাকু-হ্যাজার্ড-ডি ব্রুইনের মতো বিশ্বসেরা খেলোয়াড় থাকার পরও তাদের সেভাবে কোনো সাফল্য নেই।

পর্তুগাল (২০১৬-২০১৯)

২০১৬ সালের পর্তুগাল। প্রথম দেখায় মনে হবে না, খুব আহামরি কোনো দল। তবে ইউরোর আগে তাদের কোচ কী পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন, তা বোঝা দায়। তাদের শুরুও ভালো হয়নি। গ্রুপপর্বে সব ম্যাচে ড্র করে তারা পরের রাউন্ডে উঠেছিল একমাত্র সমীকরণের মারপ্যাঁচে। কিন্তু মূল পর্বে উঠেই তারা খোলস ছেড়ে বের হয়ে এলো প্রবল পরাক্রমে।    

গোলের পসরা বসানো সৌন্দর্য্যের ফুটবল কখনো খেলেনি ফার্নান্দো সান্তোসের দল। ক্রোয়েশিয়া, পোল্যান্ড ও ওয়েলস বাধা টপকেছে একদম শেষ সময়ে। এর কারণ, মূল পর্বের প্রত্যেক ম্যাচে তারা চূড়ান্তরকমের আত্মবিশ্বাসী ছিল। জয়ই যেন তাদের মূল মন্ত্র। ইউরো দিয়ে আবির্ভাব ঘটেছিল আন্দ্রে গোমেজ, রেনাতো সানচেজের মতো তরুণরা। কিন্তু ফ্রান্সকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ইউরো জেতার মূল কারণ ছিল বুড়ো হাড়ের ভেলকি।

ইউরো কাপ হাতে রোনালদোবাহিনী © FRANCK FIFE/AFP via Getty Images

এরপর নেশনস লিগ শিরোপা জিতেছে পর্তুগাল। যদিও বিশ্বকাপে তারা সেভাবে সফল ছিল না। কিন্তু বর্তমানে তাদের দুর্দান্ত একটি দল আছে। প্যাট্রিসিয়ো, পেপে, রোনালদো, মৌতিনহোরা শেষ বয়সেও দলের হাল ধরে আছেন, সাথে যুক্ত হয়েছে বার্নাডো সিলভা, নেলসন সেমেদো, গঞ্জালো গোদেস, ব্রুনো ফার্নান্দেজ, আন্দ্রিয়ান সিলভা ও জোয়াও ফেলিক্সের মতো তরুণ তারকাশক্তি। তবে বর্তমানে তাদের দল প্রত্যেক দিক থেকে শক্তিশালী দেখালেও পর্তুগিজ সমর্থকেরা চিরদিন মনে রাখবে তাদের ইউরো জেতানো সেই স্কোয়াডকে।

Related Articles