Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ববি ফিশার: আমেরিকার শ্রেষ্ঠ দাবাড়ু থেকে শেষমেশ ভবঘুরে

১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে সোভিয়েত ইউনিয়নের ছিল একচ্ছত্র রাজত্ব। মিখালি বোৎভিনিক, তাইগ্রান পেত্রোসিয়ান, বোরিস স্পাসকির মতো সোভিয়েত গ্র্যান্ডমাস্টারদের কাছে পাত্তাই পেত না কোনো পশ্চিমা দাবাড়ু। তা নিয়ে গর্বের সীমা ছিল না সোভিয়েত ইউনিয়নের। কিন্তু সব হিসেব পাল্টে দিয়ে ১৯৭২ সালে বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নেন একজন আমেরিকান গ্র্যান্ডমাস্টার। ভাগ বসান সোভিয়েত রাজত্বে। দাবার জগতে আবির্ভূত নতুন এই নক্ষত্রের নাম ছিল রবার্ট জেমস ফিশার, যিনি ববি ফিশার না নামেই সর্বাধিক পরিচিত। 

অনেকের মতেই ববি ফিশারের মতো প্রতিভা আন্তর্জাতিক দাবা দ্বিতীয়টি দেখেনি। এখনো তার বিভিন্ন ম্যাচ নিয়ে চলে চুলচেরা বিশ্লেষণ। তিনি যেন ছিলেন একজন মানব কম্পিউটার, যার দুর্বলতা খুঁজে বের করতে গিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রতিনিয়ত গলদঘর্ম হতে হয়েছে। একজন রাশিয়ান গ্র্যান্ডমাস্টার তাকে তুলনা করেছিলেন গ্রিক পুরাণে বর্ণিত একিলিসের সাথে, এমন এক একিলিস- যার ছিল না কোনো ‘একিলিস হিল’।

ববি ফিশার; Image Source: Encyclopedia Britannica

ববি ফিশারের জন্ম ৯ মার্চ, ১৯৪৩ সালে। আমেরিকার শিকাগো শহরে। তার মা, রেজিনা ফিশার ছিলেন একজন ইহুদি। তিনি ছ’টি ভাষায় সাবলীলভাবে কথা বলতে পারতেন এবং মেডিসিনের ওপর তিনি ছিলেন পি.এইচ.ডি ডিগ্রীধারী। ধারণা করা হয়, ববি ফিশার ছিলেন রেজিনা ফিশার এবং একজন হাঙ্গেরিয়ান ইহুদি বিজ্ঞানী– পল নেমেনি’র পরকীয়ার ফসল।

পল নেমেনি ছিলেন তুখোড় মেধাবী। মেকানিক্সের ওপর তার লেখা একটি বই বেশ বিখ্যাত। আলবার্ট আইনস্টাইনের ছেলে হ্যান্স-আলবার্ট আইনস্টাইনের সাথে লোয়া ইউনিভার্সিটির হাইড্রোলজি ল্যাবে কাজ করার অভিজ্ঞতাও ছিল তার। তবে তুখোর মেধার পাশাপাশি কিছু মানসিক সমস্যাতেও জর্জরিত ছিলেন তিনি, যা পরবর্তীতে ববি ফিশারের মধ্যেও দেখতে পেয়েছিল বিশ্ববাসী। 

ববি ফিশারের মা রেজিনা ফিশার; Image Source: Jacob SUTTON/Gamma-Rapho via Getty Images

তবে মানসিক সমস্যা কখনোই দাবার প্রতি ববি ফিশারের ভালোবাসাকে কমাতে পারেনি। আমেরিকার ব্রুকলিন নগরে বেড়ে ওঠা ফিশারের দাবা খেলায় হাতেখড়ি হয়েছিল ছ’ বছর বয়সে। অসাধারণ প্রতিভা এবং কোনো এক বিষয়ের প্রতি তীব্র মনোযোগ দিতে পারার বিরল ক্ষমতা ববিকে মাত্র নয় বছর বয়সেই এনে দেয় প্রথম কোনো দাবা টুর্নামেন্ট জয়ের স্বাদ। সেখান থেকেই শুরু হয় তার জয়যাত্রা। এগারো বছর বয়সেই তিনি হয়ে ওঠেন নিউ ইয়র্ক শহরের বিভিন্ন দাবা ক্লাবগুলোর পরিচিত মুখ।

দ্রুতই জাতীয় পর্যায়ে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেন ফিশার। তেরো বছর বয়সে তিনি আমেরিকার জুনিয়র দাবা চ্যাম্পিয়নে পরিণত হন এবং ঐ বছরে অনুষ্ঠিত ইউ.এস ওপেন দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে আমেরিকার সেরা দাবাড়ুদের সাথে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হন।

১৯৫৬ সালে অনুষ্ঠিত ‘রোজওয়াল্ড মেমোরিয়াল টুর্নামেন্টের’ একটি ম্যাচে ববি ফিশার তৎকালীন আন্তর্জাতিক গ্র্যান্ডমাস্টার ডোনাল্ড বিরনেকে হারিয়ে চারদিকে হৈ-চৈ ফেলে দেন, যা পরবর্তীতে ‘গেম অভ দ্য সেঞ্চুরি’ হিসেবে পরিচিতি পায়। রোজওয়াল্ড টুর্নামেন্ট চলাকালে ফিশারের বয়স ছিল মাত্র তেরো বছর। 

আন্তর্জাতিক দাবা র‌্যাংকিংয়ে দ্রুতই উপরের দিকে উঠতে থাকেন তিনি। তার বয়স যখন চৌদ্দ, তখন তিনি আমেরিকার জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নে পরিণত হন। পনেরো বছর বয়েসে ববি ফিশার ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ দাবাড়ু হিসেবে গ্র্যান্ডমাস্টার হবার কৃতিত্ব অর্জন করেন।

একইসাথে একুশ জনের বিপক্ষে দাবা খেলায় মগ্ন ১৩ বছর বয়সী ফিশার; Image Source Bettmann/Getty Images

জাতীয় পর্যায়ে পাওয়া সাফল্য ববি ফিশারের সামনে আন্তর্জাতিক দাবার মঞ্চ উন্মুক্ত করে দেয়। সে সময়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একচেটিয়া রাজত্ব ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের দাবাড়ুদের। ১৯৫৮ সালে ববি ফিশারের মা তৎকালীন সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভের কাছে একটি চিঠি লিখে তার ছেলেকে সোভিয়েত ইউনিয়নে খেলার আমন্ত্রণ জানাতে অনুরোধ করেন। নিকিতা ক্রুশ্চেভ তার অনুরোধ রক্ষা করে ফিশারকে সেই সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত ‘বিশ্ব যুব দাবা উৎসবে’ প্রতিযোগিতা করার আমন্ত্রণ জানান।

কিন্তু সেই আমন্ত্রণপত্র প্রশাসনিক জটিলতার কারণে ফিশারের হাতে পৌঁছুতে দেরি হওয়ায় ও তার মা প্লেনের টিকিটের টাকার ব্যবস্থা করতে না পারায় সেবার আর সোভিয়েত ইউনিয়নে গিয়ে খেলার সু্যোগ হয়নি তার। অবশেষে পরের বছর একটি কোম্পানি ফিশারের যাওয়া-আসার টিকিট ভাড়া স্পন্সর করলে প্রথমবারের মতো সোভিয়েত দাবাড়ুদের সাথে লড়াই করার সুযোগ চলে আসে তার সামনে।

মস্কোতে নেমেই ববি ফিশার কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি করে বসেন যে, তাকে যেন ‘সেন্ট্রাল চেজ ক্লাবে’ নিয়ে যাওয়া হয়। এতে করে তিনি দেশের সেরা তরুন দাবাড়ুদের সাথে খেলতে পারবেন। তাকে তার দাবি অনুযায়ী ‘সেন্ট্রাল চেজ ক্লাবে’ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের সবচেয়ে প্রতিভাবান দু’জন তরুণ দাবাড়ুর সাথে খেলতে বসে যান এবং প্রতিটি ম্যাচেই তাদের হারিয়ে দেন!

তরুণ ববি ফিশার; Image Source: ChessBase

কিন্তু সমবয়সী সোভিয়েত দাবাড়ুদেরকে হারিয়েও ফিশারের মন ভরলো না। তার চোখ ছিল আরও বড় লক্ষ্যে। তিনি তৎকালীন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন সোভিয়েত দাবাড়ু মিখালি বোৎভিনিকের সাথে খেলার দাবি জানান কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু তার দাবি অগ্রাহ্য করা হয়। তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে একটি বিতর্কিত মন্তব্য করে বসেন ফিশার। তিনি রাশিয়ানদের শুকরের সাথে তুলনা করেন এবং বলেন যে,

“রাশিয়ানদের আতিথেয়তা ছিল অপ্রীতিকর। তাছাড়া রাশিয়ান মানুষগুলোও যাচ্ছেতা-ই।”

এই উক্তির মাধ্যমে ফিশার যেন এক অঘোষিত যুদ্ধই ঘোষণা করেন সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে।

ষোল বছর বয়সে ববি ফিশার স্কুল থেকে ড্রপ-আউট হন দাবাতেই পুরোপুরি মনোনিবেশ করার জন্য। দাবা ব্যতীত অন্য যেকোনো কিছুই ছিল তার কাছে বিরক্তিকর। এমনকি তার মা একসময় নিউ ইয়র্ক ছেড়ে ওয়াশিংটন ডি.সিতে বসবাস করা শুরু করলেও ফিশার দাবার টানে থেকে যান নিউ ইয়র্কেই। তিনি তার মাকে সাফ জানিয়ে দেন যে, মাকে ছাড়া তার দিন ঠিকই চলে যাবে, কিন্তু দাবাকে ছাড়া নয়।

মা চলে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে ফিশার একা হয়ে পড়েন। যদিও দিন দিন তার দাবার প্রতিভা তীব্রতর হচ্ছিল, একইসাথে বাড়ছিল মানসিক উদ্ভ্রান্ততা। ১৯৬২ সালের একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন,

“দাবায় ইহুদিদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তারা দাবার মর্যাদা নষ্ট করছে। বিশেষ করে তাদের পোশাক-আশাক আমার একদমই পছন্দ নয়!’”

এই সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় তার বয়স ছিল ঊনিশ বছর।

দাবার ছকে ববি ফিশার; Image Source: Chess the Musical | Dramaturgy Site

১৯৫৭-১৯৬৭ সাল পর্যন্ত টানা দশ বছর ববি ফিশার ইউ.এস দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নেন। সোভিয়েত গ্র্যান্ডমাস্টার আলেক্সান্ডার কোতোভ তার প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বলেন, “এত অল্প বয়সে এত নিখুঁতভাবে এক একটা গেম শেষ করার প্রতিভা আসলেই বিরল।”

পরের বছর মার্ক তাইমানোভ নামক একজন সোভিয়েত গ্র্যান্ডমাস্টার ফিশারকে হারানোর হুমকি দেন। ফিশারও তার সাথে লড়তে রাজি হয়ে যান। ফিশারের পূর্ববর্তী বিভিন্ন ম্যাচের ওপর করা নিবিড় গবেষণা তাইমানোভকে আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছিল। কিন্তু ফলাফলে দেখা গেল তাইমানোভ ফিশারের কাছে ৬-০ গেমে হেরে বসেছেন, যেখানে কিনা ১৮৭৬ সালের পর থেকে আন্তর্জাতিক কোন দাবার টুর্নামেন্ট কোনো গ্র্যান্ডমাস্টারের এত বাজেভাবে হার দেখেনি!

এ সময়ের মধ্যে ফিশারের বলার মত হার ছিল মাত্র একটি। সেটি ছিল জার্মানিতে অনুষ্ঠিত ১৯তম দাবা অলিম্পিয়াডে, সোভিয়েত ইউনিয়নের তৎকালীন শ্রেষ্ঠ দাবাড়ু বরিস স্পাসকির কাছে। অবশ্য স্পাসকির সাথে মুখোমুখি লড়াইয়ের আরেকটি সুযোগ খুব তাড়াতাড়িই পেয়ে যান ফিশার।

 ১৯৭২ সালে আইসল্যান্ডের রিকজাভিক শহরে অনুষ্ঠিত বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে মুখোমুখি হন তখনকার সময়ের দুই শ্রেষ্ঠ দাবাড়ু। সেসময় আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে ঠাণ্ডা যুদ্ধ চলছিল। ফলে ঐ ম্যাচকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। এ যেন শুধুই দুই দেশের দুই শ্রেষ্ঠ প্রতিভার মধ্যকার লড়াই ছিল না, বরং ছিল গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্রের মধ্যেও অঘোষিত এক যুদ্ধ!

বরিস স্পাসকির সাথে ম্যাচ খেলার কথা ঘোষণা দেয়া হয় ৩১ জানুয়ারি, ১৯৭২ সালের একটি প্রেস কনফারেন্সে; Image Source: Wikimedia Commons

ম্যাচের প্রথম গেমে বাজে শুরুর ফলে হেরে যান ফিশার। কিন্তু হার মেনে না নিয়ে তিনি অভিযোগ তোলেন টেবিলের চারদিক ঘিরে রাখা ক্যামেরাগুলোর প্রতি। ক্যামেরার কারণে তার মনোযোগ বিঘ্নিত হয়েছে বলে তিনি চেঁচামেচি শুরু করেন এবং সব ক্যামেরা অপসারণ করার জন্য কর্তৃপক্ষকে চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু তার দাবি অগ্রাহ্য করা হলে তিনি দ্বিতীয় গেমে আর অংশগ্রহণ করেননি। ফলে ২-০ তে এগিয়ে যান স্পাসকি।

ফিশার আর কোনো গেমেই অংশগ্রহণ করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না ক্যামেরাগুলো অপসারণ করা হচ্ছে। ফিশারের অনড় দাবির মুখে অবশেষে কর্তৃপক্ষ তার দাবি মেনে নিয়ে সব ক্যামেরা সরিয়ে ফেলে।

১৯৭২ সালে বরিস স্পাসকির সাথে সেই বিখ্যাত ম্যাচে ববি ফিশার; Image Source: HBODocs/YouTube

তৃতীয় গেম থেকে ফিশার প্রভাব বিস্তার করা শুরু করেন এবং পরবর্তী আটটি গেমের মধ্যে ছয়টিতেই জিতে এবং বাকি দু’টি ড্র করে অসাধারণ প্রত্যাবর্তনের গল্প লেখেন তিনি। ফিশারের এই দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনে সোভিয়েত ইউনিয়নের কর্মকর্তারা হকচকিয়ে যান। সি.আই.এ হয়তো স্পাসকির শরীরে বিষ প্রয়োগ করেছে বলে সন্দেহ করেন তারা। তাই স্পাসকির জুস, চেয়ার এমনকি কক্ষের লাইটগুলোও পরীক্ষা করে দেখা হয়। কিন্তু সন্দেহ করার মতো কিছুই পাওয়া যায়নি।  

১১তম গেমে এসে স্পাসকি কিছুটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সক্ষম হন। ঐ গেমটি জিতে নেন তিনি। কিন্তু ওটাই ছিল স্পাসকির জেতা শেষ গেম। পরবর্তী সাতটি গেম ড্র হয়। সবশেষে ২১তম গেমে এসে ববি ফিশারের কাছে হার মেনে নেন স্পাসকি।

এই জয়ের মধ্য দিয়ে ববি ফিশার প্রথমবারের মতো জিতে নেন বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ এবং অবসান ঘটান দাবার রাজ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নের চব্বিশ বছরের রাজত্বের।

সাংবাদিক পরিবেষ্টিত ফিশার; Image Source: Wkimedia Commons

কিন্তু এই বিশাল সাফল্য উপভোগের কোন আকাঙ্ক্ষাই ছিল না ফিশারের মধ্যে। ম্যাচ শেষ হওয়া মাত্র প্লেনে করে বাড়িতে ফেরেন তিনি। এরপর আর কাউকেই তিনি কোনো ধরনের সাক্ষাৎকার দেননি। মিলিয়ন ডলারের সব স্পন্সরশিপ চুক্তিও ফিরিয়ে দেন এবং ক্যারিয়ারের মধ্যগগনে থাকা সত্ত্বেও লোকচক্ষুর অন্তরালে একাকী জীবনযাপন করা শুরু করেন তিনি।

পরবর্তী ২০ বছর আর কোনো ধরনের প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে অংশ নেননি ফিশার। ১৯৭৫ সালে যখন তাকে তার চ্যাম্পিয়ন খেতাব ডিফেন্ড করতে আহ্বান জানানো হয়, তখন তিনি টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করার শর্ত হিসেবে ১৭৯টি দাবি সম্বলিত একটি পত্র লিখে পাঠান কর্তৃপক্ষের কাছে। তার একটি দাবিও পূরণ করা হয়নি। তাই তিনিও আর নিজেকে ডিফেন্ড করার প্রয়োজন মনে করেননি। ফলে দাবার বোর্ডে একটি চাল না দিয়েও তাকে হারাতে হয় চ্যাম্পিয়ন খেতাব।

তার কাছে দাবাই ছিল জীবন; Image Source: QuoteParrot

১৯৯২ সালে যুগোস্লাভিয়ার ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার অপরাধে আমেরিকা যাওয়ার ক্ষেত্রে ফিশারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ফলে বিদেশে নির্বাসনের জীবন বেছে নিতে হয় তাকে। নির্বাসনে থাকাকালে তার মা এবং বোন মারা যান। কিন্তু তাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় পর্যন্ত উপস্থিত থাকতে পারেননি ফিশার।

২০০৪ সালে আমেরিকান পাসপোর্ট নিয়ে জাপান ভ্রমণের কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং তার পাসপোর্ট জব্দ করা হয়। নিরুপায় হয়ে ২০০৫ সালে তিনি আইসল্যান্ডের কাছে সিটিজেনশিপের আবেদন করেন। তার আবেদন মঞ্জুর করা হয়। জীবনের বাকিটা সময় লোকচক্ষুর অন্তরালে আইসল্যান্ডেই কেটেছিল ফিশারের।   

অনেকের মতেই, তিনি অ্যাসপারগার সিন্ড্রোমে আক্রান্ত ছিলেন জীবনভর। আবার অনেকের ধারণা, তিনি ভুগতেন পারসোনালিটি ডিসঅর্ডারে। তবে ফিশারের মানসিক সমস্যা যা-ই থাক না কেন, তিনি ২০০৮ সালে কিডনি অকেজো হয়ে যাওয়ার কারণে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর। কাকতালীয়ভাবে দাবা বোর্ডে স্কয়ারের সংখ্যাও ৬৪। কী অদ্ভুত মিল, তা-ই না?

This article is in Bangla language. It's an article about the life of great American chess player- Bobby Fischer.

The sources are hyperlinked in the article.

Featured Image: All thats Interesting

Related Articles