Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ব্র‍্যাডম্যানের সেরা তিন ইনিংস

এমনিতে খুব একটা হ্যাপা হওয়ার কথা নয়। যে মানুষটি শেষ টেস্ট খেলেছেন ৭৩ বছর আগে, যার কীর্তি সম্পর্কে জানতে গেলে মুখের কথাই মূল আশ্রয়; কিছুটা সত্য আর অনেকটা কল্পনার মিশেলে তার সেরা তিন-পাঁচ-দশটা ইনিংসের ফিরিস্তি লিখে দেওয়া আর এমন কী কাজ!

কিন্তু ওই মানুষটির নাম যদি হয় ডোনাল্ড ব্র‍্যাডম্যান, যার শূন্য নিয়ে হওয়া সমস্ত আলোচনার যোগফল অনেক বিখ্যাত ক্রিকেটারের ক্যারিয়ারকেও বানিয়ে ফেলে তুচ্ছ, যিনি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৩৩৮ ইনিংসের প্রায় এক-তৃতীয়াংশেই (পাই-টু-পাই হিসাব চাইলে বলতে হবে ১১৭) যিনি করেছেন সেঞ্চুরি; আন্তর্জাতিক ক্রিকেট একটু কঠিন, যে কারণে ৫২ টেস্টে করেছেন ২৯ সেঞ্চুরি; এবং প্রতি ইনিংসে যার ব্যাটিং গড় ৯৯’র সামান্য বেশি, তার সেরা তিনটা ইনিংস বেছে নেওয়ার চেয়ে খড়ের গাদায় সূঁচ খোঁজার চেষ্টাই ভালো মনে হওয়ার কথা!

Image credit: Getty Images

তবুও সম্পাদকের চাপ আর পাঠকের ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টির ওপর ভরসা রেখে কাজটা করা হলো। লেখকের মন অবশ্য খুঁতখুঁত করছে, হেডিংলির ৩০৪, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৬৭ অথবা ২৯৯, কিংবা লিন্ডসে হ্যাসেটের ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪০৪ রান তাড়া করতে গিয়ে খেলা ১৭৩-কে ঠাঁই দেওয়া গেল না বলে। ব্র‍্যাডম্যান নিজে যেই ৪৫২ নিয়ে বলেছিলেন, ‘এ এমন এক ইনিংস, যেখানে সব মনমতো হয়েছিল’ – রাখা গেল না সেই ইনিংসকেও। অবশ্য এমন না রাখতে পারার বৃত্তান্ত দিতে বসলে তো তার শূন্য রানের ইনিংস নিয়েও আক্ষেপ করতে হয়। তার শূন্যগুলোও তো ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায় হীরে-জহরত বলেই বিবেচিত!

৩. হেডিংলির ৩৩৪

প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড, ১৯৩০

আগের দুই টেস্টে করেছিলেন সেঞ্চুরি আর ডাবল সেঞ্চুরি, এই ক্রমধারা মানলে ১৯৩০ অ্যাশেজের তৃতীয় টেস্টে ডনের ট্রিপল সেঞ্চুরিই করার কথা। এবং, আপনি জানেন, ডন ব্র‍্যাডম্যান সংখ্যার খেলাগুলো খেলতে ভালোই বাসতেন।

৩৩৪-এর পথে। Image credit: Getty Images

প্রথম দুই টেস্টে পরে ব্যাট করা অস্ট্রেলিয়া হেডিংলিতে টসে জিতে নিয়েছিল আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত। তবে অধিনায়কের সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণের আগেই প্যাভিলিয়নে ফিরেছিলেন আর্চি জ্যাকসন, মাত্র ১ রান করে হ্যারল্ড লারউডকে ক্যাচ দিয়েছিলেন মরিস টেটের বলে। ম্যাচের বয়স পাঁচ ওভার হতে না হতেই তাই ক্রিজে ডাক পড়েছিল ডন ব্র‍্যাডম্যানের। সেখানে তিনি খেললেন ৪৪৮ বল, ৭৪.৫৫ স্ট্রাইক রেটে রান করলেন ৩৩৪। টেস্ট ক্রিকেটে এর আগের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসের চেয়ে যা ৯ বেশি, মাসতিনেক আগেই অ্যান্ডি স্যান্ডহাম গড়েছিলেন কিংস্টনে। ওই ইনিংসে নয়ের সঙ্গে ব্র‍্যাডম্যানের সখ্যতা ছিল আরও। মেরেছিলেন ৪৬টা চার। টেস্টে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ চারের রেকর্ডটা এর আগে ছিল টিপ ফস্টারের, অভিষেকেই ২৮৭ রান করার পথে যিনি মেরেছিলেন ৩৭ চার।

ব্র‍্যাডম্যানের এমন ইনিংসের পর ইংল্যান্ডকে রান পাহাড়ে চাপা দিতে (৫৬৬) কোনো সমস্যাই হয়নি অস্ট্রেলিয়ার, যদিও অজি ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল ৭৭, করেছিলেন অ্যালান কিপ্যাক্স। চারদিনের টেস্ট ছিল বলে প্রথম ইনিংসে ৩৯১ করেও ইংল্যান্ডকে করতে হয়েছিল ফলোঅন, দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ উইকেটে ৯১ রান তুলতেই ফুরিয়েছিল ম্যাচের আয়ু

২৩২ করেছিলেন সিরিজের শেষ টেস্টে। Image credit: Getty Images

পাঁচ ম্যাচের সিরিজের শেষ টেস্টে ব্র‍্যাডম্যান করেছিলেন ২৩২, সব মিলিয়ে ৯৭৪। এক সিরিজে এর চেয়ে বেশি রান করতে পারেননি আর কোনো ব্যাটসম্যান। 

২. লর্ডসের ২৫৪

(প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড, ১৯৩০)

এর আগেরবারের অ্যাশেজ জিতেছিল ইংল্যান্ডই, সেটাও অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েই। ১৯৩০ সালে ঘরের মাঠে অ্যাশেজ ধরে রাখতে ইংলিশ ক্রিকেটাররা তাই আত্মবিশ্বাসীই ছিলেন। ট্রেন্টব্রিজে প্রথম টেস্ট ৯৩ রানে জিতে দিয়েছিল তেমন আভাসই। কিন্তু পাশার দান বদলে গিয়েছিল পরের টেস্টেই, স্যার ডন ব্র‍্যাডম্যানের ব্যাটে।

ব্র‍্যাডম্যান শতকের দেখা পেয়েছিলেন ট্রেন্টব্রিজেও, করেছেন ১৩১। কিন্তু বাকিদের ব্যর্থতায় সেই ইনিংস দেখেনি জয়ের মুখ। লর্ডসে তাই মিলেছিল আরও ভয়ংকর ব্র‍্যাডম্যানের দেখা। প্রথমে ব্যাট করে দুলীপসিংজির ১৭৩ রানে ইংল্যান্ড দাঁড় করিয়েছিল ৪২৫; জবাবে তুলে নিয়েছিলেন ৩৭৬ বলে ২৫৪, ছিল ২৫টি চারের মারও। দেড় শতাধিক রানের ইনিংস খেলেছিলেন ডনের অধিনায়ক বিল উডফুলও (১৫৫)। ৬ উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া ইনিংস ঘোষণা করেছিল টেস্টে তাদের তৎকালীন সর্বোচ্চ ৭২৯ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্র‍্যাডম্যান মাত্র ১ রান করেই ফিরেছিলেন মরিস টেটের বলে পার্সি চ্যাপম্যানকে দিয়ে। সিরিজে অস্ট্রেলিয়াকে সমতায় ফেরাতে এই ইনিংসই অবশ্য যথেষ্ট ছিল। চ্যাপম্যানের ১২১ সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়াকে তো মাত্র ৭২ রানেরই টার্গেট দিতে পেরেছিল ইংল্যান্ড।

Image credit: Getty Images

১. মেলবোর্নের ২৭০

প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড, ১৯৩৮

আগের দু’টি ইনিংস নিয়ে মত-দ্বিমত থাকতে পারে, তবে এই ইনিংস নিয়ে কোনো ভিন্নমত থাকবে বলে মনে হয় না। ‘ক্রিকেটের বাইবেল’-খ্যাত উইজডেনই তো ইনিংসটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে ‘গ্রেটেস্ট টেস্ট ইনিংস অব অল-টাইম’ বলে। কেন? উত্তরটা লুকিয়ে সিএলআর জেমসের ওই লাইনে, ‘যারা শুধু ক্রিকেটই জানে, তারা ক্রিকেটের কতটুকুই বা জানে?’

সিরিজের আগের দু’টি টেস্টই হেরেছিল অস্ট্রেলিয়া। ওই মৌসুমের শুরুতেই নেতৃত্বের দায়ভার বর্তানো ব্র‍্যাডম্যানের অধিনায়কত্ব নিয়েও তাই উঠতে শুরু করেছিল প্রশ্ন, ‘তবে কি তিনি নিজের কাঁধে বড্ড বেশি দায়িত্ব নিয়ে ফেলেছেন তিনি?’ ব্যাট হাতেও ব্র‍্যাডম্যানের ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। ব্রিসবেনে প্রথম টেস্টে দুই ইনিংসে করেছিলেন ৩৮ ও ০। এবং ইংল্যান্ড অধিনায়ক গাবি অ্যালেনের মনে হয়েছিল, ‘ব্র‍্যাডম্যান ঠিক নিজের মধ্যে নেই। আর ওকে এই মানসিক অবস্থাতেই আটকে রাখতে পারলে আমাদের সিরিজ জয় ঠেকায় কে!’

Image credit: Getty Images

সিডনিতে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৮২ রান করে দিয়েছিলেন স্বরূপে ফেরার আভাস। তবে হেডলি ভেরিটির লং-হপে যে শট খেলে আউট হয়েছিলেন, তাতে ব্র‍্যাডম্যানে গুণমুগ্ধ সিবি ফ্রাই পর্যন্ত বলতে বাধ্য হয়েছিলেন,

‘The greatest run-getter in the history of cricket has made the worst stroke in the history of cricket.’

অস্ট্রেলিয়াও হেরেছিল। ইংলিশদের সমীকরণ তখন খুব সোজা, বাকি তিন টেস্টের যেকোনো একটি জিতে ছাইদানি পুনরুদ্ধার করো।

তবে ব্র‍্যাডম্যানের সেরাটা বেরিয়ে এসেছিল এরপরই। প্রথমে অস্ট্রেলিয়াকে উদ্ধার করেছিলেন অধিনায়কত্বের জাদুতে। বৃষ্টিতে ভেজা উইকেটে ব্যাটিং করা দুরূহ বলে দ্বিতীয় দিনে ইনিংস ঘোষণা করে দিয়েছিলেন স্কোরবোর্ডে মাত্র ২০০ রান তুলেই। বোলাররাও দিয়েছিলেন অধিনায়কের সিদ্ধান্তের যথার্থতার প্রমাণ, উইকেটের অসমান বাউন্স কাজে লাগিয়ে মাত্র ৭৬ রানেই তুলে নিয়েছিল ইংল্যান্ডের ৯ উইকেট। ব্যাটিং দিয়ে লড়াইয়ের চেষ্টা বৃথা বুঝতে পেরে অ্যালেন ইনিংস ঘোষণা করে দিয়েছিলেন ওই রানেই। রেকর্ড বইয়ে নতুন একটা পাতাও যোগ হয়েছিল এতে, ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো দুই অধিনায়কই ঘোষণা করেছিলেন নিজেদের প্রথম ইনিংস।

তবে অ্যালেন বোধহয় একটু দেরিই করে ফেলেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার এক উইকেট পড়তেই শেষ হয়েছিল দ্বিতীয় দিনের খেলা। অধিনায়ক ব্র‍্যাডম্যান নিজের বিচক্ষণতার আরেকপ্রস্থ প্রমাণ রেখেছিলেন এই ইনিংসে। পুরো ব্যাটিং-অর্ডার উল্টে দলের সেরা ব্যাটসম্যানদের জমিয়ে রেখেছিলেন শেষের জন্য, যেন তারা নামতে নামতে উইকেটের স্যাঁতসেঁতে ভাবটা কেটে যায় পুরোপুরি।

Image credit: The cricket country

প্রথম ইনিংসে তিনে ব্যাট করা ব্র‍্যাডম্যান দ্বিতীয় ইনিংসে নেমে গিয়েছিলেন সাতে, ৩৮ রানে ৩ আর ৯৭ রানে ৫ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের সেরা জুটিটাও হয়েছিল ষষ্ঠ উইকেটে। বডিলাইনের সিরিজ নিয়ে দু’জনের মধ্যে মন কষাকষির খবর পাওয়া গেলেও জ্যাক ফিঙ্গলটনের সঙ্গে মিলে ব্র‍্যাডম্যান গড়েছিলেন ৩৪৬ রানের জুটি, ষষ্ঠ উইকেটে সর্বোচ্চ রানের পার্টনারশিপ হিসেবে যা টিকে ছিল ৭২ বছর!

৩৭৫ বলে ডন ব্র‍্যাডম্যান করেছিলেন ২৭০, ইনিংসে ছিল ২২টি চার। অস্ট্রেলিয়াও দাঁড় করিয়েছিল ৫৬৪, প্রথম ইনিংসের বিপর্যয় কাটিয়ে ইংল্যান্ড ৩২৩ করলেও অস্ট্রেলিয়া জিতেছিল ৩৬৫ রানে। পরে তো সিরিজের প্রথম দুই টেস্ট হেরে সিরিজ জয়ের প্রথম উদাহরণও গড়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার এই ঘুরে দাঁড়ানোর কৃতিত্বও তাই ব্র্যাডম্যানই পাবেন।

পরে জানা গেছে, ডন ব্র‍্যাডম্যান ওই ইনিংসটা খেলেছিলেন জ্বর সঙ্গী করে। ব্র‍্যাডম্যান অবশ্য তখন এসব জাগতিক সুস্থতা-অসুস্থতার ঊর্ধ্বে। ওই অ্যাশেজ শুরুর কয়েকদিন আগেই যার প্রথম সন্তান অন্যলোকে পাড়ি জমিয়েছেন, তাকে কি এসব সামান্য অসুখ ছুঁতে পারে?

This article is in Bangla language. This article is on Sir Don Bradman's top 3 test knocks. Necessary hyperlinks and images are attached inside.

Featured image © Hulton Archive/Allsport

Related Articles