Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

যত কাণ্ড ব্রেন্ডন টেলরে

অক্টোবর, ২০১৯। মাসের একদম শেষের দিকের ঘটনা। ব্রেন্ডন টেলর তখন ভারতে পৌছেছেন। টেলরের এই হঠাৎ ভারতে আগমনের কারণ ছিল মিস্টার ‘এস’ (আইসিসি এই মিস্টার ‘এস’ এর আসল পরিচয় প্রকাশ করেনি)। মিস্টার ‘এস’ আবার টেলরকে ভারতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন জিম্বাবুয়েতে একটা টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আয়োজন করবেন এমন প্রস্তাবের আলোচনা করতে। তবে টেলরের এজেন্ট কিন্তু এই মিস্টার ‘এস’কে নিয়ে টেলরকে সাবধান করেছিল, ভারতে যেতে মানা করেছিল। কিন্তু এজেন্টের এই নিষেধ সত্ত্বেও টেলর ভারতে গিয়েছিলেন, দেখা করেছিলেন মিস্টার ‘এস’-এর সাথে। 

ব্রেন্ডন টেলরের সাথে এই মিস্টার ‘এস’-এর সাক্ষাতের ঘটনা অনেকটা হিথ স্ট্রিক কাণ্ডের মতো শোনাচ্ছে। কিন্তু একইরকম শোনালেও হিথ স্ট্রিক কাণ্ডের মূল কালপ্রিট দীপক আগারওয়াল আর এই মিস্টার ‘এস’ কিন্তু আলাদা দুজন মানুষ। তবে আলাদা হলে কী হবে, টেলরের সাজা কিন্তু এতে আটকে থাকেনি। আইসিসির দুর্নীতি দমন নীতিমালার চারটি নীতি ভাঙার অভিযোগে টেলরকে সাড়ে তিন বছরের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক এই সংস্থাটি। 

টেলর ছিলেন জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের ‘ছোট দলের বড় তারকা’; Image Credit; Getty Images

মিস্টার ‘এস’ ব্রেন্ডন টেলরের আগে যোগাযোগ করেছিলেন তার এজেন্টের সাথে। সেটাও ২০১৯-এর সেপ্টেম্বরের ঘটনা। সে সময় টেলরের এজেন্ট মিস্টার ‘এস’-এর সাথে আলোচনা করেছিলেন সে বছর হতে যাওয়া আফগানিস্তান প্রিমিয়ার লিগে টেলরের অংশগ্রহণ নিয়ে। সে টুর্নামেন্ট অবশ্য পরে আর হয়নি, আর টেলরের এজেন্টও টেলরকে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে মিস্টার ‘এস’ এর সাথে আলোচনা একদমই আলোর মুখ দেখেনি। তবে আলোচনা ফলপ্রসূ না হলেও এবার মিস্টার ‘এস’ সরাসরি যোগাযোগ করে ব্রেন্ডন টেলরের সাথে। আর এই মিস্টার ‘এস’-এর আহ্বানে সাড়া দিতেই ২০১৯ এর অক্টোবর মাসের একদম শেষদিকে ভারতে উড়ে যান ব্রেন্ডন টেলর। আকসুর রিপোর্ট বলছে,

“২০১৯ এর অক্টোবরের শেষদিকে মিস্টার ‘এস’-এর আহ্বানে মিস্টার টেলর চার দিন আর তিন রাতের জন্যে ভারতে উড়ে যান। সফরে টেলর মিস্টার ‘এস’, মিস্টার ‘এস’-এর পরিবার ও সহযোগীদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। টেলরের ভারত সফরের পুরো ব্যয় বহন করেন মিস্টার ‘এস’। মিস্টার ‘এস’ মিস্টার টেলরকে বলেছিলেন, তিনি জিম্বাবুয়েতে একটা টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে চান এবং এটার সম্ভাব্য স্পন্সরশিপ নিয়ে টেলরের সাথে তিনি আলোচনায় বসতে ইচ্ছুক। মিস্টার ‘এস’ ভারত সফরে মিস্টার টেলরের সময় ও শ্রমের জন্যে ১৫ হাজার মার্কিন ডলার দেওয়ারও প্রস্তাব দেন।”

তবে টেলরের এসব কাণ্ড নিয়ে টেলর নিজে প্রথম মুখ খোলেন এ বছরের জানুয়ারির ২৪ তারিখে। নিজের একাউন্ট থেকে দেওয়া টুইটার পোস্টে তিনি সবাইকে জানান, মিস্টার ‘এস’-এর প্রস্তাব নিয়ে তিনি খানিকটা চিন্তিতই ছিলেন। তবে ভারত সফরের প্রধান কারণ হিসেবে টেলর বলেন, তার ভারত সফরের প্রধান কারণ ছিল জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট। দেশটির ক্রিকেট বোর্ড প্রায় ছয় মাস ধরে নিজেদের খেলোয়াড়দের বকেয়া পরিশোধ করছে না, আর আইসিসির পূর্ণ সদস্য হিসেবে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের সদস্যপদ হুমকির মুখে ছিল। টেলরের এই যুক্তির পেছনে অবশ্য খানিকটা প্রামাণ্য উদাহরণ পাওয়া যায়। কেননা, ২০১৯-এর জুলাইতেই আইসিসির প্রথম কোনো পূর্ণ সদস্য দেশ হিসেবে জিম্বাবুয়েকে নিষেধাজ্ঞা দেয় আইসিসি। তবে টেলরের ভারত সফরের আগেই অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে জিম্বাবুয়ের ওপর থেকে আইসিসি এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। 

তবে টেলর যে নিজের টুইটে বলেছেন তিনি কোনো অনৈতিক কাজের উদ্দেশ্যে ভারতে উড়াল দেননি, সেটার সত্যতা আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিট আকসু পেয়ছে। নিজেদের রিপোর্টে তারা জানিয়েছে, 

“মিস্টার টেলর মিস্টার ‘এস’-কে জানিয়েছিলেন যদি সেখানে অনৈতিক বা ধোঁয়াশাপূর্ণ কিছু থাকে, তাহলে আমি প্লেনে উঠছি না। মিস্টার টেলরের কথার পাল্টা কথায় মিস্টার ‘এস’ মিস্টার টেলরকে বলেছিলেন, “না, আমরা কখনও এভাবে কাজ করি না। আমরা আইনসঙ্গত লোক।”

স্পট ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব

Image Credit: Reuters

টেলরের এই কাণ্ড নিয়ে আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিট ‘আকসু’ মোট চারবার টেলরের সাক্ষাৎকার নেন। ২০২০ সালের ১লা এপ্রিল, ২রা এপ্রিল, ১৭ই আগস্ট আর ৮ই ডিসেম্বরের ঐ সাক্ষাৎকারে টেলর নিজের ভারত সফর আর মিস্টার ‘এস’-এর সাথে আলাপ নিয়ে আরো বিশদভাবে আকসুকে জানান। টেলর জানান, ভারতে নামার পরই টেলর মিস্টার ‘এস’-এর পক্ষ থেকে একটা স্যামস্যাং এস টেন সিরিজের এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন পান, কারণ টেলরের নিজের ফোনটা নাকি ‘নষ্ট হয়ে গেছিল’।  তবে এই ফোন ছাড়াও টেলর পুরো ভারত সফরে মিস্টার ‘এস’-এর পক্ষ থেকে বেশ কিছু নতুন জামাকাপড় আর নানা ধরনের বিনোদনসামগ্রী পান। তবে সেটা ঠিক কী ধরনের বিনোদনসামগ্রী, সেটা পরিষ্কার নয়।

তবে মিস্টার ‘এস’-এর আমন্ত্রণের প্রধান প্রস্তাব টেলর পান ভারত সফরের একদম শেষদিকে। সফর শেষে যখন তিনি জিম্বাবুয়েতে ফিরে যাবেন, তখন মিস্টার ‘এস’ ও তার সহযোগীরা টেলরের সাথে আবারও আলাপে বসেন। সেই আলাপে জিম্বাবুয়ের সামনের ম্যাচগুলিতে স্পট ফিক্সিংয়ের জন্যে টেলরকে তারা ৩৫ হাজার মার্কিন ডলারের প্রস্তাব দেন। আকসুর মতে, মিস্টার ‘এস’-এর এই প্রস্তাব ছিল মূলত ফেব্রুয়ারি-মার্চে হতে যাওয়া জিম্বাবুয়ের বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা সফরের জন্যে। আকসুর রিপোর্ট অনুসারে, 

“মিস্টার ‘এস’ মিস্টার টেলরকে বলেছিলেন, তার এই ফিক্সিংকাণ্ড ঘটাতে আরো একজন খেলোয়াড় দরকার; আর তিনি চাচ্ছিলেন, টেলরই তার জন্যে আরেকজন খেলোয়াড় খুঁজে বের করুক। এরপর আংশিক পরিশোধ হিসেবে মিস্টার টেলরের হাতে তিনি ১৫ হাজার মার্কিন ডলার তুলে দেন এবং বলেন, ফিক্সিংয়ের পর বাকি টাকাটাও টেলর পেয়ে যাবেন। সে সময় ফেব্রুয়ারি আর মার্চে জিম্বাবুয়ের বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা সফর বাকি ছিল।”

তবে আকসুর মতে, টেলরের সাথে মিস্টার ‘এস’-এর আবারও যোগাযোগ হয় ২০২০ এর ৩১শে মার্চ, ভারত সফরের প্রায় পাঁচ মাস পর। তিনি অবশ্য প্রথমে মিস্টার ‘এস’-এর সাথে ফিক্সিংয়ের ব্যাপারে আলাপের ব্যাপারে না বললেও ১৫ হাজার মার্কিন ডলার নেওয়ার কথা ঠিকই স্বীকার করেন। আকসু বলছে, 

“সাক্ষাৎকারের প্রথমদিকে মিস্টার টেলর বলেন, ১৫ হাজার মার্কিন ডলার ছিল মূলত তার নিজের ভারত সফরের জন্যে, এটা ছিল আসলে অ্যাপিয়ারেন্স ফি। তবে পরের সাক্ষাৎকারে টেলর গল্পটা পাল্টে ফেলেন, এবং বলেন, প্রথমে ১৫ হাজার ডলার অ্যাপিয়ারেন্স ফি জেনে ভারত সফরে গেলেও সফরের শেষদিকে তাকে যখন টাকা দেওয়া হয়, তখন আলোচনা ফিক্সিংয়ের দিকে গড়ায়। আর তিনি জানতে পারেন, তাকে মূলত টাকার বিনিময়ে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।”

  তবে আকসু অবশ্য বলছে, টেলর শেষ অব্দি স্পট ফিক্সিং করেননি; যদিও স্পট ফিক্সিংয়ের জন্যে টাকা ঠিকই নিয়েছিলেন। আকসুর রিপোর্টে এসেছে, 

“মিস্টার টেলর বলেছেন, মিস্টার ‘এস’-এর প্রস্তাবে ফিক্সিং করার ব্যাপারে তার কোনোদিনই আগ্রহ ছিল না, এবং তিনি তা করেনওনি। কিন্তু তিনি প্রথমদিকে মিস্টার ‘এস’-এর প্রস্তাবে না বললেও পরে রাজি হয়ে ১৫ হাজার মার্কিন ডলার নিজের হাতে তুলে নেন। মিস্টার টেলর বলেন, তিনি টাকাটা নিয়েছিলেন কারণ তার হাতে আর কোনো উপায় ছিল না। কেননা, প্রথমবার না বলার পর মিস্টার ‘এস’ ব্ল্যাকমেইল করতে শুরু করেন মিস্টার টেলরকে। মিস্টার ‘এস’ বলেন, তার কাছে মিস্টার টেলরের স্পর্শকাতর ভিডিও আছে, এবং এখন তিনি সেটা মিডিয়া ও মিস্টার টেলরের স্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেবেন।”

এখন প্রশ্ন হলো, সেই ভিডিওতে কী ছিল? মূলত ভারত সফরের শেষ রাতে ডিনারের পর টেলর মিস্টার ‘এস’-এর সাথে কোকেন-পার্টিতে অংশ নিয়েছিলেন, আর মিস্টার ‘এস’ লুকিয়ে সেটার ভিডিও করে রেখেছিলেন। টেলর অবশ্য বলেন, তিনি বোকার মতো সেটাতে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি মূলত সচেতনই ছিলেন এবং পরিস্থিতি এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন। আকসুর রিপোর্ট অনুযায়ী, 

“সাক্ষাৎকারে মিস্টার টেলর বলেছেন, তিনি টাকাটা নিয়েছিলেন কারণ –

১) এটা মূলত ভারত সফরে আসার জন্যে তার অ্যাপিয়ারেন্স ফি ছিল, এবং

২) তিনি ভীতসন্ত্রস্ত ছিলেন, কারণ টাকা না নিলে মিস্টার ‘এস’ ও তার সহযোগীরা তার সাথে কী করতে পারে, সে ব্যাপারে তার কোনো আন্দাজ ছিল না।

তাই তিনি টাকা নিয়েছিলেন, যাতে করে দ্রুত সেই ঘর থেকে বের হয়ে যেতে পারেন। যদিও এসব প্রস্তাবের ব্যাপারে টেলরের কোনো আগ্রহই ছিল না।”

আকসুকে জানানো

Image Credit: Getty Images

জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশ সফরে থাকার সময়ে মিস্টার ‘এস’ আবারও টেলরের সাথে যোগাযোগ করেন। মিস্টার ‘এস’ চাচ্ছিলেন, টেলর সেই সফর থেকেই তার সাথে কাজ করা শুরু করুক। কিন্তু টেলর মিস্টার ‘এস’-এর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তবে এ দফায় শুধু প্রত্যাখ্যানই নয়, এবার টেলর মূলত এই ফিক্সিংয়ের প্রস্তাবটি আইসিসিকে জানিয়ে দেন। আকসুর রিপোর্ট যেমনটা বলছে, 

“মিস্টার টেলর বলেন, তিনি মিস্টার ‘এস’-এর সাথে কোনো কাজ করতে চাচ্ছিলেন না (যেহেতু তিনি বুঝতে পারছিলেন মিস্টার ‘এস’ এর প্রস্তাব মূলত ফিক্সিংয়ের ছিল)। কিন্তু মিস্টার ‘এস’ বারবার তাকে হুমকি দিচ্ছিল, টেলর যদি তার হয়ে কাজ না করেন, তাহলে সেই ভিডিওটি তিনি টিভি, রেডিও ও মিস্টার টেলরের স্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেবেন। তবে এতেও কাজ না হলে মিস্টার ‘এস’ তাকে টাকাটা ফেরত দিয়ে দিতে বলেন, আর বলেন, এই ব্যাপারটা এখানেই শেষ করে দিতে। তবে এরপরও মিস্টার ‘এস’ মিস্টার টেলরকে ভিডিও প্রকাশের ব্যাপারে হুমকি দিতে থাকেন। মূলত এরপরই মার্চের ঐ ফোনকলের পরে টেলর বুঝতে পারেন, পুরো ব্যাপারটা তার আকসুকে রিপোর্ট করা উচিত। ৩১শে মার্চ ২০২০ তারিখে তিনি সেটা করেও ফেলেন। তবে তখনই মিস্টার টেলর আকসুকে পুরো ঘটনাটা জানিয়ে দেননি, বিশেষত দুর্নীতি ব্যাপারে টেলর যে আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন, সে ব্যাপারে তিনি কিছুই বলেননি।”

আকসু টেলরকে এরপর বলে মিস্টার ‘এস’কে ব্লক করে দিতে, কিন্তু টেলর সেটা না করে ব্লক করার বদলে মিস্টার ‘এস’-এর সাথে তার সব কথোপকথন ও মেসেজ ডিলিট করে দেন। টেলর এটা কেন করেছিলেন, সে ব্যাপারে আকসুর রিপোর্ট বলছে, 

“মিস্টার টেলর আমাদেরকে বলেন, তিনি এটা করেছিলেন কারণ তিনি ভীত ছিলেন যদি তার পরিবার টেলরের এ সমস্ত মেসেজ দেখে ফেলে। তবে আকসু যদি এসমস্ত মেসেজ দেখতে পারত, তাহলে আকসুর তদন্ত কাজে সেটা কাজে আসত।”

আকসুর নির্দেশনা না মেনে মিস্টার ‘এস’ এর সাথে সব মেসেজ ও কথোপকথন ব্রেন্ডন টেলর ডিলিট করে দেন, যেটা থাকলে আকসুর কাজ আরো সহজ হত ; Image Credit: ESPNCricinfo/Getty

তবে ১৫ হাজার মার্কিন ডলারের ব্যাপারে টেলর আকসুকে বলেন, এটা তার এক বন্ধুর কাছে সাবধানে রাখা আছে। টেলরের নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে ২৫শে জুলাই, ২০২৫। তবে টাকার ব্যাপারে আকসু মনে করে, টেলরের আর সেটা রাখার নৈতিক অধিকার নেই। টেলরও অবশ্য আকসুকে সেটাই বলেছে, যেটা এসেছে আকসুর রিপোর্টে: 

“মিস্টার টেলর মনে করেন এবং আমাদের সাথে সম্মত হন যে মিস্টার ‘এস’-এর কাছ থেকে পাওয়া ১৫ হাজার মার্কিন ডলার তার কাছে রাখা আর ঠিক হবে না। তিনি এটাও মনে করেন, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তিনি, তার পরিবার, কিংবা তার কোনো বন্ধু সেই টাকা থেকে কোনো অংশ ভোগ করার অধিকার রাখেন না। তাই নিষেধাজ্ঞা শেষে আবারও ক্রিকেটে ফেরার ব্যাপারে আইসিসি টেলরকে এই শর্ত দিচ্ছে যে, তিনি ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন একান্তই যদি সেই টাকার কোনো অংশ যদি মিস্টার টেলর, তার পরিবার বা কোনো বন্ধুবান্ধব ব্যবহার না করে থাকেন।”

ম্যাচের আগে কোকেন

২৫শে জানুয়ারির ঘটনা। ব্রেন্ডন টেলর নিজেকে এক ‘সমস্যা’র জন্যে নিয়ে গেলেন মাদক নিরাময় কেন্দ্রে। তখনই তিনি ইংরেজি দৈনিক ডেইলি মেইলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, শেষবার জিম্বাবুয়ের হয়ে খেলার সময় ২০২১ এর সেপ্টেম্বরে তিনি ডোপ টেস্টে ফেল করেছিলেন। সেটা অবশ্য ছিল সেপ্টেম্বরে ৮ তারিখে, বেলফাস্টে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের আগে রুটিন-চেকের অংশ হিসেবে টেলর নিজের মূত্রের স্যাম্পল দেন ডোপ টেস্টের জন্যে। আর সে বছরেরই অক্টোবরের ১৩ তারিখের ওয়ার্ল্ড ডোপিং এজেন্সি (ওয়াডা)-র অনুমোদনপ্রাপ্ত এক ল্যাবরেটরি জানায়, টেলরের মূত্রে আইসিসির অ্যান্টি-ডোপিং কোডে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া মেটাবোলিক কোকেন বেনজয়িলকগনিন পাওয়া গেছে। 

সেপ্টেম্বর,২০২১- বেলফাস্টে আয়ারল্যান্ডের সাথে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচের পর টেলর ডোপ টেস্টে ব্যার্থ হন; Image Credit: ESPNCricinfo/Getty

এরপর নভেম্বরের ৩০ তারিখে আইসিসি টেলরকে জানায়, টেলর যদি প্রমাণ করতে পারেন টেলর এই কোকেন নিজের শরীরে নিয়েছেন কোনো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ ছাড়াই, আর এর সাথে খেলার পারফরম্যান্স বৃদ্ধির কোনো সম্পর্ক নেই, তাহলে আইসিসি টেলরকে ৩ মাসের নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে, যেটা কি না পরে ১ মাসেও কমে আসতে পারে। এছাড়াও আইসিসি টেলরকে বলে, তিনি চাইলে পুনরায় তার ‘বি স্যাম্পল’ টেস্ট করাতে পারেন।

টেলর অবশ্য এত সব ঝামেলায় যাননি। তিনি আইসিসির কাছে স্বীকার করে নেন, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, আয়ারল্যান্ডের সাথে ওয়ানডে ম্যাচের তিনদিন আগে তিনি কোকেন গ্রহণ করেছিলেন। আর এই কোকেন গ্রহণের সাথে পারফরম্যান্স বৃদ্ধির কোনো সম্পর্ক ছিল না, এটা তিনি করেছিলেন নিতান্তই নিজেকে বিনোদন দিতে।

আইসিসি তাকে এই ডোপিং কেলেঙ্কারির জন্যে এক মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। এখন অবশ্য টেলরকে এই এক মাসের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে না ভাবলেও চলবে। কেননা আকসুর দেওয়া লম্বা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই তার এই ছোটখাটো নিষেধাজ্ঞাটি চলমান থাকবে। তবে যেটাই হোক, মুমূর্ষু জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের অন্যতম আশার প্রদীপ হয়ে যে সুপারস্টার জ্বাজল্যমান ছিলেন, তিনি ব্রেন্ডন টেলর। সেই টেলরই যখন মুছে যান কালো প্রদীপের পেছনে, তখন জিম্বাবুইয়ান ক্রিকেট অনুরাগীরা তো যারপরনাই কষ্ট পাবেনই। 

টেলর ছিলেন জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের স্বর্গের দেবতা। সেই দেবতা স্বর্গের বারান্দা থেকে কেন নেমে গেলেন নরকের দ্বারে, সেটা মনে হয় না কেউ বলতে পারবে! 

The feature is in Bengali Language about the detailed story of Brendon Taylor scandal. Necessary references are attached as hyperlinks. Image credits are attached in captions. 

Featured Image: Getty Images

Related Articles