Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

পরিসংখ্যানের চোখে: পাওয়ারপ্লে কাজে লাগাতে পারবে বাংলাদেশ?

বিশ্বকাপ তো চলেই এল। চার বছর বাদে নতুন এক বিশ্বকাপের আগে দলগুলোর সে কী প্রস্তুতি, কত অঙ্ক, কত সমীকরণ। কেউ বা দলকে খোলনলচেই বদলে ফেলেছেন মাঝের এই চার বছরে, কেউ বা বদলেছেন খেলার ধরন। যদি প্রশ্ন করি, পরিসংখ্যানের চোখে কতটা বদলেছে একদিনের ক্রিকেট? সেই বদলের কতটা রপ্ত করতে পেরেছে বাংলদেশ দল?

ক্রিকবাজের দীপু নারায়ণের সাহায্য নিয়ে এই লেখক আজ জানাচ্ছেন, ২০১৫ বিশ্বকাপ-পরবর্তী যুগে প্রথম পাওয়ারপ্লে’র দশ ওভারে ক্রিকেট কেমন আচরণ করেছে, আর সেই আচরণের সঙ্গে বাংলাদেশ কতটুকু অভ্যস্ত হতে পেরেছে।

পরিসংখ্যানের আলোয় ব্যাটিং (১-১০ ওভার)

ওয়ানডে ক্রিকেট নিয়ে কথা বলতে গেলে, শুরু করতে হয় ইংল্যান্ডকে দিয়েই। ২০১৫ বিশ্বকাপের পরে ওয়ানডে ক্রিকেটকে দেখার দৃষ্টি বদলে ফেলা ইংল্যান্ড এখন যেকোনো পরিসংখ্যানেই অবস্থান করে সবার ওপরে। কী শুরুর পাওয়ারপ্লে, কী মাঝের ওভার, কী শেষের স্লগ ওভার, গত কয়েক বছরে ক্রিকেটটা তাদের চেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে খেলেনি আর কেউ। বাকি বিশ্ব যেখানে শুরুর দশ ওভার ব্যাট করেছে ৪.৯৩ রান রেটে, সেখানে ইংল্যান্ড এই ওভারগুলোতে রান তুলেছে ৫.৭৯ করে।

এই সাফল্যের সিংহভাগ কৃতিত্বের দাবিদার জেসন রয়। ২০১৫-বিশ্বকাপের ভরাডুবির পর ইংল্যান্ড জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া এ ক্রিকেটার শুরুর দশ ওভারে রান করেছেন ১,৪৮১ রান, গোটা বিশ্বের মাঝেই সবচেয়ে বেশি। কমপক্ষে এক হাজার রান করেছেন, এমন ব্যাটসম্যানদের ভেতর তার ৯৮ ছাড়ানো স্ট্রাইকরেটও অদ্বিতীয়।

ইংল্যান্ডের জুটি ভয়ংকর; Image credit: Getty Images

তার সতীর্থ জনি বেয়ারেস্টো ইনিংসের শুরুর দশ ওভারে ম্যাচ পেয়েছেন মোটে ৩৭টা; তাতেই ৬২.৯২ গড়ে রান তুলেছেন ৮২৫, সেটাও ১০৭.৭৭ স্ট্রাইকরেটে। বলা বাহুল্য, রান তোলার গতিতে তাকে ছাড়াতে পারেননি আর কেউ। বাউন্ডারির বাইরে বল পাঠানোতেও তিনি ছিলেন সবার সেরা, গড়ে ৫.৮ বলে একবার সীমানাছাড়া করেছেন এই ইংলিশ।

তার উইকেট তুলে নিতেও বোলারদের ঘাম ঝরাতে হয়েছে যথেষ্ট। উঁচু ডিসমিসাল রেট তো তাই-ই প্রমাণ করে। শুরুর পাওয়ারপ্লে’র ওভারগুলোতে আউট হবার আগে গড়ে বল খেলেছেন ৫৮টি। একমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকান কুইন্টন ডি কক’ই যেখানে এগিয়ে তার চেয়ে।

এবি ডি ভিলিয়ার্সের অবসর-উত্তর যুগে, দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিংয়ের মুখ হয়ে উঠেছেন এই বাঁহাতি। জেসন রয়ের চেয়ে তিনি কিছুটা ধীর খেললেও কিংবা বাউন্ডারি আদায় করতে বেয়ারেস্টোর চাইতে তার দুই বল বেশি লাগলেও স্বীয় উইকেটের মূল্য দিয়েছেন তিনিই সবচেয়ে বেশি। প্রতি ডিসমিসালের আগে বল খেলেছেন গড়ে ৭২টি। হাশিম আমলার পড়তি ফর্ম, সাথে কম স্ট্রাইকরেটের পরও সাউথ আফ্রিকা যে রান তুলেছে ৫.৩০ রেটে, সেটা এই তরুণ ওপেনারের কল্যাণেই।

ফ্লিক করছেন ডি কক; Image credit: Associated Press

হাশিম আমলার স্ট্রাইকরেট তো তাও ৮০ ছাড়িয়েছে, রোহিত শর্মা শুরুর দশ ওভারে রান তুলেছেন মোটে ৭৪.৬২ স্ট্রাইকরেটে। এমনকি শুরুর পাওয়ারপ্লেতে তার সাড়ে ৬৭ শতাংশ ডট বল খেলার হারও শীর্ষ দশ রানসংগ্রাহকের মাঝে সবচেয়ে বেশি। তার ওপেনিং জুটির আরেকজন, শিখর ধাওয়ানের বেলায় যে হার শতকরা ৬১ ভাগ। এমনকি দু’জনে মিলে পাওয়ারপ্লেতে রান তুলেছেন ওভারপ্রতি ৪.৮৯ গড়ে, বৈশ্বিক অ্যাভারেজের চাইতেও যা .০৪ কম।

এরপরও ভারত বিশ্বকাপে আস্থা রাখতে চাইছে এই জুটির ওপরই, কেননা এই ধীরস্থির শুরুটা তারা সামলে নিয়েছেন মাঝের ওভারগুলোতে। ইনিংসের উদ্বোধন করা ৭১ ইনিংসের মাঝে ৩৬টিতেই রোহিত শর্মা প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন শুরুর দশ ওভারে। যে ৩৫ ম্যাচে ফেরেননি, সে ম্যাচগুলোতে তার ব্যাটিং গড় ব্র‍্যাডম্যানীয়, ৯৮.৮৫। ৩৫ ইনিংসের ৩১টিতেই ছাড়িয়েছেন পঞ্চাশের কোটা, সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন পনেরবার। সঙ্গ দিয়েছেন শিখর ধাওয়ানও, বিগত বিশ্বকাপের পর থেকে শিখর ধাওয়ান আর রোহিত শর্মা জুটির চেয়ে বেশি রান তুলতে পারেননি আর কোনো উদ্বোধনী ডুয়ো।

ভারতের উদ্বোধনী জুটি; Image credit: সংগৃহীত 

পাকিস্তান না পেরেছে ভারতের মধ্য ওভারে রান তোলার স্ট্র‍্যাটেজিকে অনুসরণ করতে, না পেরেছে ইংল্যান্ডের শুরুর তোলা ঝড়কে অনুকরণ করতে। বদলে তারা প্রথম দশে রান তুলেছে ৪.৬৯ রেটে, বিশ্বকাপের দলগুলোর ভেতর একমাত্র আফগানিস্তানের অবস্থাই এর চেয়ে বাজে।

আহমেদ শেহজাদের ৬৭ কিংবা আজহার আলীর ৭০.১৮ স্ট্রাইকরেটকেও অনেক বেশি মনে হয়, যখন জানা যায় বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ওপেনার ইমাম-উল হক প্রথম দশ ওভার শুরু করেছেন ৬২ স্ট্রাইকরেটে। এমনকি তিনে নামা বাবর আজমও শুরুর দশ ওভারে ৬৬ স্ট্রাইকরেট ছুঁতে পারেননি। পাকিস্তান সান্ত্বনা খুঁজতে পারে এই ভেবে যে, এর আগে ৫৯.৫১ স্ট্রাইকরেটে মোহাম্মদ হাফিজও তাদের হয়ে ইনিংসের গোড়াপত্তন করেছেন।

ধীর শুরু করেছেন অস্ট্রেলিয়ার কাপ্তান অ্যারন ফিঞ্চও। শুরুর দশ ওভারে স্ট্রাইকরেট ৮০ ছোঁয়নি তার। তবে নিষেধাজ্ঞার পূর্বে অপর প্রান্তে ডেভিড ওয়ার্নার ছিলেন, যিনি ১০০ ছাড়ানো স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করতেন, গড়ে সাত বল অন্তর অন্তর চার-ছক্কার পসরা বসাতেন, এবং বিশ্বকাপে অ্যারন ফিঞ্চের সঙ্গে সম্ভবত তিনিই নামবেন।

অ্যারন ফিঞ্চের ধীর শুরু নিয়েও অস্ট্রেলিয়া বোধকরি আপত্তি তুলবে না। মাঝে বেশ এক ফিফটি খরা কাটালেও বিগত তিন বছরে রান তুলেছেন পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই গড়ে। সাথে বিশ্বকাপের ভেন্যুতে ৯১.৫৪ স্ট্রাইকরেট বলে, আক্রমণাত্মক ক্রিকেটটাও তার ব্যাটে ভালোই আসে।

আক্রমণাত্মক ক্রিকেটটা নিউ জিল্যান্ডও খেলে। ইংল্যান্ডের পর প্রথম পাওয়ারপ্লে’র ওভারগুলোতে নিউ জিল্যান্ডই সবচেয়ে বেশি রান তুলেছে গত চার বছরে। মার্টিন গাপটিল, সাথে কলিন মুনরো কিংবা হেনরি নিকোলস, নিউ জিল্যান্ড শুরুর দশ ওভারে রান তুলেছে ৫.৪১ রেটে। মার্টিন গাপটিল তো ছিলেন রীতিমতো বিধ্বংসী, ৯৪.৯১ স্ট্রাইকরেটের সঙ্গে গড়ে সাত বল অন্তর অন্তর বাউন্ডারি আদায় করে নিউ জিল্যান্ডের শুরুতে সুরটা বেঁধে দিয়েছেন তিনিই।

আক্রমণাত্মক খেলতে চেয়েছিলেন শ্রীলংকান ব্যাটসম্যানরাও। ইংল্যান্ড আর নিউ জিল্যান্ডের পরে ওভারপ্রতি সবচেয়ে বেশি তুলেছেন তারা। সেটা যে তাদের জন্যে বুমেরাং হয়েছে, সেটা বোঝা যায় পাওয়ারপ্লেতে সবচেয়ে বেশি উইকেট খোয়ানো দলটা শ্রীলংকা, এই তথ্য জেনে। শ্রীলংকার ব্যাটসম্যানদের উইকেট পেতে প্রতিপক্ষ বোলারদের গড়ে খরচ করতে হয়েছে ৩৬.৮ বল। প্রথমেই একগাদা উইকেট হারিয়ে দিনশেষে শ্রীলংকা বেশিরভাগ ম্যাচেই নাম লিখিয়েছে পরাজিত দলের কাতারে

ব্যাটিংয়ে সবচেয়ে বাজে সময় কাটানো দলটির নাম অবশ্য শ্রীলংকা নয়, সেটি আফগানিস্তান। সবচেয়ে বেশি ডট খেলা (৭৩.৩১%), পাওয়ারপ্লেতে সবচেয়ে কম রান তোলা (২৭.৫৩ গড়ে), চার-ছক্কার প্রতি সবচেয়ে বেশি অনীহা (গড়ে ১১ বলে একবার), কিংবা সবচেয়ে মন্থর ব্যাটিং (৪.১৫ রান রেট), আফগানিস্তান দখল করেছে এর সবগুলোই। বিশ্বকাপে নামে-ভারে বড় দলগুলোর বিপক্ষে এই আফগানিস্তান কী করে, দেখতে চাইবেন অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষকই।

পরিসংখ্যানের আলোয় বোলিং (১-১০ ওভার)

তবে আফগানিস্তানের বোলিংয়ের দিকে যে নজর থাকবে গোটা ক্রিকেট বিশ্বেরই, সে তো অজানা নয় মোটেই। মুজিব-উর রহমান, রশীদ খান, মোহাম্মদ নবী – ফ্র‍্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের এই যুগে এই স্পিনত্রয়ী নজর কেড়েছেন সবার। এবার বিশ্বকাপের মঞ্চেও কতটা কী করতে পারেন, সেটাই দেখার।

পরিসংখ্যান অবশ্য তাদের হয়েই কথা বলে। ব্যাটিং পাওয়ারপ্লে’তে মাত্র ৪.১৫ রেটে রান তুললেও তা কাটাকাটি হয়ে যাচ্ছে বোলিংয়ে তাদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে। প্রতিপক্ষকে প্রথম পাওয়ারপ্লেতে রান দেয়ার বেলায় আফগান বোলাররা ছিলেন সবার চেয়ে কৃপণ, ইকোনমি রেট মাত্র ৪.০৮। তাদের আঁটসাঁট বোলিংয়ের বিপক্ষে বাউন্ডারি আদায়ও যে বেশ কঠিনসাধ্য এক কাজ ছিল, সে তো ১২ বল অন্তর অন্তর বাউন্ডারি হজম করাই প্রমাণ করে। এই কৃতিত্বের বেশিরভাগটাই যাবে স্পিনারদের পকেটে, বিশেষ করে মুজিব-উর রহমানের ঝুলিতে। ২০১৮ সালে আগমনের পর ১ম পাওয়ারপ্লেতে উনি বল করেছেন ১৩০টির মতো ওভার, এবং তখন তার ইকোনমি রেট মাত্র ৩.৫৪, পাশাপাশি দখল করেছেন ২৯ উইকেট। অন্য যেকোনো স্পিনারকে এই অসম লড়াইতে নামানোর কোনো কারণই তো নেই, নতুন বলটা তো আর স্পিনারদের নয়!

পল স্টার্লিং যেন বাকি বিশ্বেরই প্রতিরূপ, মুজিব-উর রহমানের দিকে নজর রাখছেন তীক্ষ্ণ চোখে; Image credit: Peter Della Penna

উইকেট দখলের লড়াইতে তার দল অবশ্য ছিল দ্বিতীয় সেরা, ডিসমিসালপ্রতি ৩৭.৫৬ বল খরচ করে সবার সেরা নিউ জিল্যান্ড। প্রথম পাওয়ারপ্লে’তে ৪৪ উইকেট নিয়ে ট্রেন্ট বোল্ট প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইনআপকে ধ্বসিয়ে দিয়েছেন এক প্রান্তে, অপর প্রান্তে ম্যাট হেনরি কিংবা টিম সাউদি আঁটসাঁট বোলিংয়ে চেপে ধরেছেন রানের চাকা। কিন্তু, এবারের বিশ্বকাপের ফ্ল্যাট পিচে তারা কতটা সফল হতে পারবেন, সে শঙ্কা অবশ্য থেকেই যাচ্ছে। দেশের বাইরে তাদের বোলিং গড় ৩৭.৩৭, নিউজিল্যান্ডের সিমিং অ্যান্ড সুইঙ্গিং কন্ডিশনে যা মাত্র ২৫.৩৪!

ব্যাটিং দিয়েই সমস্ত কার্যসিদ্ধি করতে চাওয়া ইংল্যান্ডের বোলিং হয়ে গিয়েছে বেহুলার বাসরঘর। প্রথম পাওয়ারপ্লে’তে তারা যেমন রান করেছে, তেমনি প্রতিপক্ষও তাদের বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রচুর রান তুলেছে। ওভারপ্রতি ৫.২৮ রান বিলিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তোলার দায়িত্বটা নিয়েছিলেন ইংলিশ বোলাররাই। জোফরা আর্চারের অন্তর্ভুক্তি অবশ্য এক্ষেত্রে তাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে।

শ্রীলংকার অবশ্য সেই সুযোগ নেই। কেননা, যাকেই সুযোগ দিয়েছে শ্রীলংকার ম্যানেজমেন্ট, রান দেয়ার কাজটা তিনিই উদারহস্তে করেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য নতুন বলে জেসন হোল্ডার আর কেমার রোচ ইকোনমিক্যাল বোলিং করলেও নতুন বলে উইকেট আদায়ে তারা বেশ পিছিয়ে ছিলেন। এক্ষেত্রে অবশ্য অস্ট্রেলিয়াও ছিল তাদের ধারেকাছেই, অস্ট্রেলিয়ার প্রতি উইকেট আদায়ে যেখানে বল খরচ করতে হয়েছে গড়ে ৪৬টি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বেলায় তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০টিতে, যেকোনো দল মিলিয়েই সবচেয়ে বেশি।

শ্যানন গ্যাব্রিয়েলকে বিশ্বকাপ দলে অন্তর্ভুক্ত করার পেছনেও রহস্য হিসেবে সম্ভবত এই কারণটিই কাজ করেছে। ওয়ানডে দলে যে অল্প কয়েক ম্যাচে সুযোগ পেয়েছেন, তাতেই নতুন বলে তুলে নিয়েছেন ১৩ উইকেট, উইকেটপ্রতি অপেক্ষাটা ছিল গড়ে ৪.২ ওভারের।

অস্ট্রেলিয়ার জন্যে শ্যানন গ্যাব্রিয়েল কে হবেন, সে অবশ্য এখনো ধোঁয়াশাতেই আচ্ছন্ন। গত বিশ্বকাপের পর যে ১১ বোলার অস্ট্রেলিয়ার হয়ে প্রথম পাওয়ারপ্লে’তে কমপক্ষে ২০ ওভার করেছেন, তার মাঝে কেবল প্যাট কামিন্সই নিজের বোলিং গড়কে ৩০-এর নিচে (২৫.৬০) রাখতে পেরেছেন। এমনকি গত বিশ্বকাপের ম্যান অব দ্যা টুর্নামেন্ট মিচেল স্টার্কও যেন নতুন বল হাতে জাদু হারিয়ে ফেলেছেন, ৩৬.৬৫ গড়ে নিয়েছেন ১৭ উইকেট।

বোলিংটাও তো জুটির খেলাই, ট্রেন্ট বোল্ট আর সাউদি; Image credit: Photosport

কাগিসো রাবাদা তো কয়েক বছর ধরেই বিশ্বসেরা পেসারদের একজন। সাথে ‘নবাগত’ লুঙ্গি এনগিডি মিলে নতুন বলে গড়ে তুলেছেন ভয়ানক এক জুটি। দলে আসার পর পাওয়ারপ্লেতে এনগিডি তুলে নিয়েছেন ১৬ উইকেট, মাত্র ২০.৬৯ গড়ে।

ভারতের নতুন বলের বোলাররা অবশ্য উইকেট দখলের চেয়ে বেশি মন দিয়েছেন রান আটকে রাখায়। ভুবনেশ্বর কুমার (ইকোনমি রেট ৪.৪৩), জসপ্রীত বুমরাহ (৪.১৯) কিংবা মোহাম্মদ শামির (৪.১৩) বিরুদ্ধে রান তুলতে হাঁসফাঁস করা ব্যাটসম্যানেরা রান তুলতে চেয়েছেন দুই রিস্ট স্পিনার কুলদীপ যাদব আর যুজবেন্দ্র চাহালের বলে, মাঝের ওভারগুলোতে। তাদের বিরুদ্ধে ঝুঁকি নিতে গিয়েই উইকেট ছুঁড়ে এসেছেন তখন। এবারের বিশ্বকাপেও ভারত ঠিক একই পদ্ধতি অবলম্বন করতে চাইবে, সেটাই তো স্বাভাবিক।

এবং বাংলাদেশ…

গত বিশ্বকাপের পর থেকে ওয়ানডে ক্রিকেটে আমূল বদলে যাওয়া বাংলাদেশ দল বদলে যাওয়া প্রথম পাওয়ারপ্লে’র সঙ্গে কতটুকু খাপ খাইয়ে নিয়েছে? পরিসংখ্যানের দিকে চোখ রেখে উত্তর পাওয়া যাবে, কিন্তু ততটা নয়।

বোলিংয়ের দিকেই যদি তাকাই, নতুন বলে উইকেট তুলে নিতেই যখন ব্যস্ত ছিল সব দল, বাংলাদেশ হন্যে হয়ে খুঁজে ফিরেছে একজন উইকেটশিকারী বোলারকে। গত বিশ্বকাপের পর থেকে, নতুন বলে শীর্ষ দশ উইকেটশিকারীর তালিকায় নেই কোনো বাংলাদেশী বোলার। ২২ উইকেট নিয়ে মাশরাফি অবস্থান করছেন তালিকার ১৩ নম্বরে। শুরুতে উইকেট তুলে নিতে না পারার ব্যর্থতায় প্রতিপক্ষ শেষ দিকে বাড়াচ্ছে রানের গতি। শুরুর পাওয়ারপ্লে’র ৪.৮০ ইকোনমি রেট তাই শেষ হচ্ছে ওভারপ্রতি ছয়ের বেশি রান হজম করে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিচে আছে বলেই রক্ষা, নইলে পাওয়ারপ্লে’তে প্রতি উইকেট আদায়ে ৪৬.৮৬ বল খরচ করা বাংলাদেশের অবস্থানই হতো সবার নিচে।

বিশ্বকাপে ভালো কিছু করতে চাইলে, এমনভাবে উল্লাসে মাততে হবে ইনিংসের শুরুতেই; Image credit: AFP

ব্যাটিংয়ের অবস্থা তো আরও করুণ। তামিমের স্থিতধী শুরুর কারণে প্রথম দশ ওভারে রানের চাকা ঘুরেছে ধীরগতিতে, সাথে অপর প্রান্তের ওপেনার তড়িঘড়ি করে প্যাভিলিয়নে ফেরায় পাওয়ারপ্লের সুবিধা আদায় করা যায়নি পুরোপুরি। প্রথম পাওয়ারপ্লে’তে তাই রান উঠেছে ৩৪.৭৯ গড়ে, ওভারপ্রতি ৪.৭০ করে। শুরুর পাওয়ারপ্লে’তে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানেরা খেলেছেন ৬৯ শতাংশ ডট বল, কেবল আফগানিস্তান আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরাই এর চেয়েও রক্ষণাত্মক ব্যাটিং করেছেন।

বিশ্বকাপের মঞ্চে নিজেদের পুরোপুরি বদলে বাংলাদেশ আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে কি না, সেটাই এখন দেখার।

This article is in bangla language. In the last few years, Every cricket team is trying to maintain a higher strike rate in the upfront of a game. Did Bangladesh do the same? The answer is in this article. References are hyperlinked inside the article. 

Featured image © Getty Images

Related Articles