Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

এশিয়া কাপের দুর্ভাগ্যের দেয়াল ভাঙতে পারবে বাংলাদেশ?

ম্যাচ জয় এখন আর বাংলাদেশের জন্য স্বপ্নীল কোনো অনুভূতি নিয়ে আসে না, অধিকাংশ জয়ই এখন আর রোমহর্ষক কোনো মুগ্ধতা জাগায় না। সেটা এখন বাংলাদেশের জন্য ‘ডালভাত’, সবাই যে এখন জয়ের জন্যই খেলতে নামে! বড় মঞ্চেও ইদানিং দারুণ ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করে চলেছে বাংলাদেশ, সাহসিকতা আর নৈপুণ্যের ডানায় চড়ে গত বেশ কয়েকটি টুর্নামেন্টেই বাংলাদেশ পৌঁছে গিয়েছে ফাইনাল অবধি। কিন্তু কোনো এক অদ্ভুত কারণে ফাইনালে গিয়ে বারবার আটকে যেতে হচ্ছে তাদেরকে, রুদ্ধশ্বাস সব ম্যাচের উপহার দিয়ে শেষ বলে স্নায়ুযুদ্ধে হার মানতে হচ্ছে। তবু অতীত স্মৃতির তুলনায় এ পরিবর্তন অনুপ্রেরণাদায়ী এবং আশাব্যঞ্জক।

আগামীকাল সংযুক্ত আরব আমিরাতে গড়াতে যাচ্ছে ২০১৮ এশিয়া কাপ। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ এশিয়া কাপ ফাইনালে বাংলাদেশকে রীতিমতো উড়িয়ে দিয়ে ষষ্ঠবারের মতো জয়ের মুকুট মাথায় পরেছিলো ভারত, সেই ক্ষত এখনই শুকিয়ে যাওয়ার নয় বৈকি। ২০১২ এবং ২০১৬ সালে দুই দফা চেষ্টাতেও ফাইনালের গেরোটা খুলতে না পারা বাংলাদেশ এবার ইতিহাসটা নতুন করে লেখার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছে দুবাইতে। তবে সঙ্গে বোধহয় সঙ্গী হয়েছে একঝাঁক অস্বস্তি এবং দুশ্চিন্তা, সাকিব-তামিমদের মতো দলের মূল ক্রিকেটাররা যে ফিট নেই একদম! রাস্তাটা যে এবার খুব সহজ হবে না, সেটার আভাস বোধহয় পাওয়া যাচ্ছে টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই।

এশিয়া কাপে বাংলাদেশ

১৯৮৬ এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল; Image Source : Wikimedia

১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় এশিয়া কাপে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে ক্রিকেটে হাতেখড়ি বাংলাদেশের। শ্রীলঙ্কার সাথে সম্পর্কে তখন টানাপোড়েন চলার কারণে সেই টুর্নামেন্টে খেলতে অস্বীকৃতি জানালো ভারত, শিকে ছিড়লো ১৯৮৪ সালের সাউথ-ইস্ট এশিয়া কাপ জেতা তৎকালীন এশীয় দলগুলোর মধ্যে সেরা অ্যাসোসিয়েট সদস্য বাংলাদেশের ভাগ্যে। প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপে খেলতে নেমে অবশ্য খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারলো না বাংলাদেশ, রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে হওয়া টুর্নামেন্টে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা দুই দলের বিপক্ষেই সাত উইকেটের পরাজয় বরণ করে নিতে হলো বাংলাদেশকে।

১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপটি অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশেই, প্রথমবারের মতো কোনো বহুজাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজিত হলো বাংলাদেশের মাটিতে। রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে হওয়া টুর্নামেন্টটিতে এবারও প্রত্যেকটি দলের কাছেই রীতিমতো উড়ে গিয়েছিলো বাংলাদেশ, ১৯৯০-৯১ এশিয়া কাপেও অবস্থা তথৈবচ। এই খরা মৌসুম কাটতে সময় লেগে গেলো আরো প্রায় এক যুগেরও বেশি, অবশেষে প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপে জয়ের মুখ দেখলো বাংলাদেশ।

২০০৪ এশিয়া কাপে হংকংকে ১১৫ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো সুপার ফোরে উঠলো বাংলাদেশ, তবে সেখানে খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারলেন না হাবিবুল বাশারের নেতৃত্বাধীন টাইগাররা। ২০০৮ এশিয়া কাপেও প্রেক্ষাপট বদলালো না, হংকংয়ের পরিবর্তে এবার টাইগারদের শিকার সংযুক্ত আরব আমিরাত। তবে সুপার ফোরে যথারীতি ধ্বস, এবার ব্যবধান বাড়লো আরো বেশ কিছুটা। ২০১০ সালে শ্রীলংকায় অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে গ্রুপপর্বে তিনটি ম্যাচেই হেরে বাদ পড়ে বাংলাদেশ।

২০১৪ সালের এশিয়া কাপ ফাইনালে হেরে কেঁদেছিল গোটা বাংলাদেশ; Image Source: dbn24.com

২০১২ সালে একাদশ এশিয়া কাপ আবারও ফিরলো ঢাকাতে, সেই সাথে বুঝি ভাগ্যদেবীও কিছুটা প্রসন্ন হলেন বাংলাদেশের প্রতি। শচীন টেন্ডুলকারের শততম সেঞ্চুরি ছোঁয়ার অপেক্ষা নিয়ে শুরু হওয়া সেই টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে পরাজিত হলেও পরের দুই ম্যাচেই ভারত ও শ্রীলঙ্কাকে সাকিব-জাদুতে পাঁচ উইকেটের ব্যবধানে হারায় বাংলাদেশ, প্রথমবারের মতো কোনো টুর্নামেন্টে ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। তবে শেষটা জয়ের রঙে রাঙাতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ-শাহাদাতরা, ফাইনালে শেষ ওভারে শাহাদাত হোসেনের ১৯ রান দেওয়া খরুচে ওভার এবং নাজিমউদ্দিনের হতবাক করে দেওয়া নেতিবাচক মানসিকতার ব্যাটিংয়ের পরও সাকিব-বীরত্বে ম্যাচে ফিরেছিলো বাংলাদেশ। তবে শেষ রক্ষা হয়নি সেদিন, শেষ বলে তিন রান নেওয়ার সমীকরণ মিলাতে পারলেন না শাহাদাত, বাংলাদেশ হেরে গেলো ২ রানে। সেদিন সাকিব-নাসির-মুশফিকদের সঙ্গে কেঁদেছিলো গোটা বাংলাদেশ, আমাদের স্বপ্ন দেখার শুরুও হয়তো সেদিনই।

২০১৪ সালটা বাংলাদেশের জন্য হয়ে এসেছিলো রীতিমতো বিভীষিকা হয়ে, সেটা বজায় ছিলো দ্বাদশ এশিয়া কাপেও। ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান প্রত্যেকটি দলের বিপক্ষেই পরাজিত হয় সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালকে ছাড়াই খেলতে নামা বাংলাদেশ। শেষ দুই ম্যাচে সাকিব দলে ফিরলেও দলের দুর্ভাগ্যের দুষ্টচক্র আটকে দিয়েছে আবারও। সেটার তীব্রতা ছিলো এতটাই, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩২৭ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দিয়েও তিন উইকেটের পরাজয় বরণ করে নিতে হয়েছিলো বাংলাদেশকে। বিফলে গিয়েছিলো এনামুল হক বিজয়ের শতরান এবং সাকিব আল হাসানের অতিমানবীয় ১৬ বলে ৪৪ রানের ইনিংস। সাকিবের সেই ক্যামিওই হয়তো সাঈদ আজমলের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের এপিটাফ লিখে ফেলেছিলো, বাংলাদেশের ভক্তদের পক্ষে সেই ইনিংস ভোলা দুষ্কর বৈকি! তবু দিনশেষে ওই টুর্নামেন্ট থেকে বাংলাদেশের একমাত্র প্রাপ্তি ছিলেন এনামুল হক বিজয়, ৪ ম্যাচে ২২৭ রান করে নিজের সম্ভাবনার জানান দিয়েছিলেন।

২০১৮ এশিয়া কাপে খেলতে আসা খেলোয়াড়দের মধ্যে মুশফিকুর রহিমই এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক, অন্যদিকে বাংলাদেশের পক্ষে এশিয়া কাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তামিম ইকবাল; Image Source: Priyo.com

২০১৫ সালে আইসিসি কর্তৃক এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের বিলুপ্তি ঘোষণার পর নির্ধারিত হয়, এবার থেকে এশিয়া কাপ চক্রাবর্তে ওয়ানডে এবং টি২০ দুই ফরম্যাটেই খেলা হবে। অর্থাৎ ২০১৬ সালের এশিয়া কাপ প্রথমবারের মতো আয়োজিত হবে টি২০ ফরম্যাটে, যাতে চারটি টেস্ট খেলুড়ে দক্ষিণ এশীয় দলগুলোর সঙ্গে পঞ্চম দল হিসেবে খেলবে সংযুক্ত আরব আমিরাত। দারুণ একটা টুর্নামেন্ট কাটায় বাংলাদেশ, ভারতের বিপক্ষে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করলেও পরের তিনটি ম্যাচেই পরিষ্কার ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে আনে টাইগাররা। তবে ফাইনালে খড়কুটোর মতো উড়ে যায় বাংলাদেশ, ৩৭ বল হাতে রেখেই আট উইকেটে ম্যাচটি জিতে ষষ্ঠবারের মতো শিরোপা জিতে নেয় ভারত।

২০১৮ এশিয়া কাপে বাংলাদেশ

এশিয়া কাপ যেমন বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনার গল্প শোনায়, তেমনই শোনায় আশাভঙ্গের গল্পও। ১৯৮৬ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই শুরু হয়েছিলো বাংলাদেশের ওয়ানডে-যাত্রা, তবে ফরম্যাটটির ধাঁচ বুঝতেই কেটে গিয়েছিলো অনেকগুলো বছর। সেদিন গিয়াছে কহিছে কালের ঘড়ি, এখন বাংলাদেশ প্রতি ম্যাচেই নামে জেতার জন্য। জয়ের স্পৃহা দিনে দিনে বেড়েছে প্রচুর, সামর্থ্য এবং ইচ্ছার সঙ্গে দিনে দিনে বেড়েছে ধারাবাহিকতাও। এবার তাই টুর্নামেন্টে অন্যতম ফেভারিট দল হিসেবেই সংযুক্ত আরব আমিরাতে খেলতে গিয়েছে বাংলাদেশ।

এশিয়া কাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের তালিকা; Image Source: Cricbuzz

তবে সেটার শুরুটা খুব একটা সুবিধার হয়নি বাংলাদেশের। চূড়ান্ত স্কোয়াড থেকে শৃঙ্খলাজনিত নিষেধাজ্ঞার কারণে বাদ পড়েছেন তরুণ সম্ভাবনাময় ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান, যা মিডল অর্ডারে একটি শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। গত বেশ কয়েক বছর ধরেই সাব্বির রহমানকে প্রস্তুত করে তোলা হচ্ছিলো দলের হার্ডহিটিং অপশন হিসেবে, তবে সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। অধিনায়ক-কোচের সুদৃষ্টি তার দিকে থাকলেও মাঠ ও মাঠের বাইরে বিভিন্ন অপ্রত্যাশিত কারণে বারবার শিরোনাম হয়েছেন তিনি। এর আগে ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে সাব্বিরকে নিষিদ্ধ করা হলেও তার টনক নড়েনি। তাই এবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকেও নিষিদ্ধ হয়ে মাশুল গুণতে হলো তাকে। বিশ্বকাপের স্বপ্নটাও কি কিছুটা ধূসর হয়ে এলো তার জন্য? সেটা এখনই বলা দুষ্কর। তবে টিম ম্যানেজমেন্টের ব্যাড বুকে যে চলে গেছেন ইতোমধ্যে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।

অন্যদিকে সাকিব আল হাসান এবারও এশিয়া কাপ খেলতে যাচ্ছেন ইনজুরি নিয়ে। বিশ্বসেরা এই বাঁহাতি অলরাউন্ডার উইন্ডিজ সফর শেষে দেশে ফিরেই জানিয়েছিলেন, এশিয়া কাপের আগে সেরে ফেলতে চান অস্ত্রোপচার। সে কারণেই কথা ছিলো, হজ্ব শেষে উড়ে যাবেন অস্ট্রেলিয়াতে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বিসিবি সভাপতির সঙ্গে আলোচনা শেষে মত বদলান সাকিব, সিদ্ধান্ত হয় এশিয়া কাপে খেলার। সেভাবেই স্কোয়াড ঘোষণাও হয়ে যায় মহাসমারোহে। তবে স্কোয়াড ঘোষণার পরই ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে সাকিব সাক্ষাৎকারে বলেন, তিনি নিজেকে ২০-৩০ শতাংশ ফিট বলে মনে করছেন। এতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যায় বিসিবি। বোর্ড ডিরেক্টর জালাল ইউনূস বলেন, সাকিব যদি নিজেকে আনফিট মনে করেন, মিডিয়ার আগে সেটা বোর্ডকে জানানো উচিত ছিলো তার। এই ফিটনেস বিতর্ক নিয়ে কোচ স্টিভ রোডস বললেন অন্যরকম কথাই, “আমার মনে হয় সে আরও বেশি ফিট। ওয়েস্ট ইন্ডিজে সে দুর্দান্ত খেলেছে। সেখানে যেভাবে খেলেছে, তার অবস্থা খুব একটা বদলায়নি।” তবে ফিটনেস নিয়ে বিতর্ক যতই থাকুক, সাকিব মরুর দেশে উড়ে গেছেন ইতোমধ্যে, অনুশীলনও করছেন পুরোদমে। সাকিবের উপস্থিতি দলকে নিঃসন্দেহে আত্মবিশ্বাসের যোগান দেবে।

সর্বোচ্চ উইকেটসংগ্রাহী বাংলাদেশী বোলারদের তালিকা; Image Source: Cricbuzz

বহুল প্রত্যাশিত ডাক অবশেষে পেয়েই গেলেন মুমিনুল হক। বেশ কয়েক বছর ধরেই তার গায়ে লেগে আছে ‘টেস্ট স্পেশালিস্ট’ তকমা। সে তকমা ঝেড়ে ফেলতেই কি না গত কয়েক বছর ধরে ঘরোয়া ক্রিকেটে টানা পারফর্ম করে চলেছেন তিনি, সম্প্রতি ‘এ’ দলের হয়ে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩৩ বলে ১৮২ রানের বিধ্বংসী ইনিংসের পর সেই দাবি আরো জোরালো হয়। তবে ১৫ জনের চূড়ান্ত স্কোয়াডে প্রথমে জায়গা হয়নি তার, উপেক্ষিত হয়েছিলেন এবারও। তামিম-সাকিবের ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন উঠলে অবশেষে অপেক্ষার অবসান হয় তার, ‘ব্যাকআপ প্লেয়ার’ হিসেবে স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত হন তিনি। টুর্নামেন্টে তার খেলার সম্ভাবনা নিতান্তই কম হলেও তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, দলের প্রয়োজনে যেকোনো পজিশনেই তিনি খেলতে প্রস্তুত।

সাব্বির রহমানের পরিবর্তে জাতীয় দলে ফিরেছেন মোহাম্মদ মিঠুন। ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের মধ্যে থাকা মিঠুন আলো ছড়িয়েছেন আয়ারল্যান্ডেও, নিয়মিত জ্বলে উঠেছেন বিভিন্ন পজিশনে ব্যাটিং করে। ধারাবাহিকতার সঙ্গে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের মিশেলে ৪৭.৭৫ গড়ে পাঁচটি পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচে করেছেন ১৯১ রান। ফলে টিম ম্যানেজমেন্ট এবার ছয়-সাতের সংকট কাটাতে ফিরেছে এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যানের কাছেই। মিঠুনের পক্ষে সবচেয়ে বড় অ্যাডভান্টেজ, দলের জন্য যেকোনো পজিশনেই তিনি সমানভাবে স্বচ্ছন্দ্য। আপাদমস্তক ‘টিমম্যানশিপ’ বাংলাদেশের এই দলের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ডের একটি, আর সেখানে মিঠুন টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে বেশ উঁচু দরই পাচ্ছেন। ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেক হলেও এরপর খেলতে পেরেছেন মাত্র ৩ ম্যাচ, তাতে সাকুল্যে তার সংগ্রহ ৩৬ রান। পারফরম্যান্স তার হয়ে কথা না বললেও মিঠুন হয়তো এবার বেশ লম্বা সময়ের জন্যই সুযোগ পেতে যাচ্ছেন। দল ও তার নিজের জন্য হলেও তার এবার ক্লিক করে যাওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ছবির ক্যাচটির মতো এবার আর সুযোগটাও হাতছাড়া হতে দিতে চান না মিঠুন; Image Source : Getty Images

আরিফুল হকের জন্য ২০১৮ সালটা হয়ে এসেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদার্পণের বছর। ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত পারফর্মার ২৫ বছর বয়সী এই পেস বোলিং অলরাউন্ডারের ইতোমধ্যেই টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়ে গিয়েছে, ছয়টি ম্যাচও খেলে ফেলেছেন। তবে অলরাউন্ডার বলা হলেও সাকুল্যে বোলিং করতে পেরেছেন একটিমাত্র ওভার, ব্যাট হাতেও সেভাবে সুযোগ পাননি। তবে যতটুকু সুযোগ পেয়েছেন, নিজের সাহসিকতার প্রমাণটা ইতোমধ্যেই দিতে পেরেছেন তিনি। এবার এশিয়া কাপে ওয়ানডে অভিষেকটাও হয়ে যাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে তার।

আরিফুলের মতোই নাজমুল ইসলাম অপুও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পদার্পণ করেছেন, খুব বেশিদিনের কথা নয়। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ইতোমধ্যেই নিজের কার্যকারিতা এবং অপরিহার্যতা প্রমাণ করে ফেলেছেন, এবার আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতেও অভিষেকের হাতছানি তার সামনে। উইন্ডিজ সফরে চ্যাডউইক ওয়ালটনের বুটের স্পাইকে হাত ক্ষতবিক্ষত হওয়াতে ২৫টি সেলাই লেগেছিলো অপুর, ফলে এশিয়া কাপে তার প্রাপ্যতা নিয়ে কিছুটা সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছিলো। তবে সেই সংশয় পিছনে ফেলে নিয়মিত প্রস্তুতি ক্যাম্পে বোলিং করেছেন তিনি, এই মুহূর্তে দলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতে রয়েছেন। একাদশে সুযোগ পেলে দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হয়ে ওঠার সক্ষমতা পুরোমাত্রায়ই রয়েছে তার।

তবে একাদশে সুযোগ পেতে হলে তাকে লড়াই করতে হতে পারে মেহেদি হাসান মিরাজের সঙ্গে। প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সঙ্গে সওয়ার হয়েছেন তিনি। তবে নিজের আলাদা করে কোনো প্রত্যাশা নেই, নেই ব্যাটিং পজিশন নিয়ে কোনো বিশেষ ফরমায়েশ। দলের প্রয়োজনে যখন যেখানে প্রয়োজন, সেভাবেই খেলতে প্রস্তুত তিনি। টিম ম্যানেজমেন্টের প্রত্যাশা সম্পর্কেও যথেষ্ট ওয়াকিবহাল তরুণ এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার, “আমি যেখানে ব্যাট করি সেখানে ২০-২৫ রানও অনেক ভাইটাল। আমি চেষ্টা করবো দল আমার কাছে যেটা আশা করে সেটাই দেয়ার।” বোঝাই যাচ্ছে, চ্যালেঞ্জটা লুফে নিতে মুখিয়ে আছেন মিরাজ।

তামিমের সঙ্গী হিসেবে এবার এশিয়া কাপে ওপেনিংয়ে নামবেন লিটন দাস; Image Source: AFP

ওপেনিং পজিশনে তামিম ইকবালের যোগ্যতম সঙ্গী হিসেবে বেশ কিছুদিন ধরেই ভাবা হচ্ছিলো সৌম্য সরকারকে। তবে হুট করেই অফ ফর্মে চলে গেলেন সেই কবে, এরপর যেন আর স্বরূপে ফিরতেই পারছিলেন না সৌম্য। ফলে এনামুল হক বিজয়ের শরণাপন্ন হতে হয়েছিলো টিম ম্যানেজমেন্টকে, যা খুব একটা কাজে দেয়নি। অগত্যা দল ফিরলো লিটন দাসের কাছেই, এবার এশিয়া কাপে তিনিই তামিম ইকবালের সঙ্গে জুটি বাঁধতে চলেছেন। বিশ্বকাপের আগে তামিম-লিটন জুটিটা এবার দেখে নেওয়ার পালা কাছ থেকে। লিটনের থেকে তাই বড় প্রত্যাশা নিয়েই এবার উড়াল দিয়েছে বাংলাদেশ দল।

বরাবরের মতোই দলে মূল খেলোয়াড় হিসেবে গুরুদায়িত্ব অর্পিত থাকবে পঞ্চপাণ্ডবের উপরই। তবে তামিম-সাকিবের ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন থাকাতে দলের তরুণ খেলোয়াড়দেরকে যে এগিয়ে আসতেই হবে এবার, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই বিন্দুমাত্র। পেস-চতুষ্টয় আশা যোগাচ্ছে এবারও, স্কিপার মাশরাফীর সঙ্গে মুস্তাফিজ-রুবেল-রনিকে নিয়ে জমাট পেস আক্রমণ নিয়ে দারুণ আশাবাদী টিম ম্যানেজমেন্ট। এশিয়া কাপে পারফরম্যান্স ভালো করার প্রতিশ্রুতি বারবার শোনা গিয়েছে এবার তরুণদের মুখে। মিঠুন-আরিফুল-মিরাজরা বারবার বলে গেছেন, এশিয়া কাপ জিততেই যাচ্ছেন তারা। তবে দলের অধিনায়ক-কোচদের মুখে সতর্কবাণী, এগোতে হবে ম্যাচ ধরে ধরে। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ফর্ম আশা যোগাচ্ছে, তবে সতর্কতার সঙ্গেই প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে চায় টিম ম্যানেজমেন্ট।

তবে মরুর দেশে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে দুবাইয়ের তাপমাত্রা। তাপমাত্রা বেশি থাকায় সেখানে খেলাটা কঠিন হবে বলেই মনে করেন মাহমুদউল্লাহ, “আরব আমিরাতের কন্ডিশন কম-বেশি আমাদের মতোই, কিন্তু গরমটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হবে। কিন্তু আমরা পেশাদার ক্রিকেটার, আমাদেরকে মানিয়ে নিতে হবে।” পঞ্চপাণ্ডবের সঙ্গে একঝাঁক প্রতিভাবান তরুণ ক্রিকেটার, অভিজ্ঞতার সঙ্গে তারুণ্যের মিশেলে এবার এশিয়া কাপের দলটা বেশ জমজমাট। এবার দেখার বিষয়, গত কয়েকবারের ফাইনাল-দুর্ভাগ্যের ইতি এবার টানা সম্ভব হয় কি না!

বরাবরই বড় মঞ্চের খেলোয়াড় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ; Image Source : AP Photo/Eranga Jayawardena

একনজরে বাংলাদেশ

বর্তমান র‍্যাংকিং : ০৭

এশিয়া কাপে অংশগ্রহণ : ১৩

সর্বোচ্চ অর্জন : রানার্সআপ (২০১২, ২০১৬)

সম্ভাব্য মাইলফলক : 

১. মুশফিকুর রহিমের সামনে হাতছানি দিচ্ছে ওয়ানডে ক্রিকেটে ৫০০০ রানের মাইলফলক। এই মুহুর্তে তার মোট সংগ্রহ ৪৮২৮ রান, আর মাত্র ১৭২ রান সংগ্রহ করতে পারলেই তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করবেন তিনি। 

২. আর পাঁচ উইকেট পেলেই প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেটে ২৫০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করবেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসানের এই মাইলফলক স্পর্শ করতে প্রয়োজন আর ১৩টি উইকেট। 

প্রধান কোচ : স্টিভ রোডস

চূড়ান্ত স্কোয়াড :

মাশরাফি বিন মুর্তজা (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান (সহ-অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, মোহাম্মদ মিঠুন, লিটন কুমার দাস, মুশফিকুর রহিম, আরিফুল হক, মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, নাজমুল হোসেন শান্ত, মেহেদি হাসান মিরাজ, নাজমুল ইসলাম অপু, রুবেল হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, আবু হায়দার রনি, মুমিনুল হক। 

Featured Image Credit : Farhan Anjum Dhrubo

Related Articles