Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

চেলসি বনাম বার্সেলোনা: বাঘে মহিষের লড়াই

১.

বার্সেলোনা বনাম চেলসি- স্পেনিশ জায়ান্ট বনাম ইংলিশ টপ ফোর দলের একটি।

আজ দিবাগত রাতে তারা মুখোমুখি হচ্ছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দ্বিতীয় পর্বে।

কে জিতবে আজকের ম্যাচ? খেলাটি যেহেতু দুই লেগের, সেজন্য এই ম্যাচ দিয়েই সরাসরি কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে না। তবে আজকের খেলার উপরেই একটা অনুমান করে ফেলা যাবে। খেলাটি যেহেতু চেলসির মাঠে, কাজেই বার্সেলোনার সম্ভাব্য লক্ষ্য হবে ডিফেন্স ঠেকিয়ে কোনোভাবে যাতে একটি গোল করে ফেলা যায়। সেক্ষেত্রে অ্যাওয়ে গোলের সুবিধাটা নেওয়া যাবে। অন্যদিকে চেলসির লক্ষ্য থাকবে, কোনোভাবেই যেন গোল অন্তত না খাওয়া হয়।

আর দশটি সাধারণ বিগ ম্যাচের মতো এই ম্যাচটা হওয়ার কথা থাকলেও, আদতে তা নয়। কেন নয়, সেটি বোঝার জন্য আপনাকে চেলসি-বার্সা ম্যাচের সাম্প্রতিক অতীতের কিছু ইতিহাস জানতে হবে। চলুন একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক সাম্প্রতিককালে তাদের দ্বৈরথগুলোর দিকে।

২.

২০০৫ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ দ্বিতীয় পর্ব

বার্সেলোনা সেই সময় ইউরোপের শীর্ষ দলগুলোর মাঝে একটু পিছিয়ে। তখন পর্যন্ত তাদের ঘরে ১৯৯২ সালের উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগটি বাদে ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের আর কোনো শিরোপা নেই। তবে রোনালদিনহো নামের এক জাদুকরের সংস্পর্শে ঘরোয়া লিগে তারা দুর্দান্ত সময়ই কাটাচ্ছিল। বিপরীতে চেলসি তখন আব্রামোবিচের অধীনে সেরার তালিকায় উঠে আসার জন্য লড়াই করছে।

ম্যাজিশিয়ান দিনহোর গোল, যদিও শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা বার্সা হেরে যায়; Source: Goal.com

এসি মিলানের গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় হয়ে পরের পর্বে আসা বার্সেলোনার চেয়ে আরেক গ্রুপের গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন চেলসি তাই একটু হলেও ফেভারিট ছিল। প্রথম লেগে ঘরের মাঠে বার্সা ২-১ গোলে জিতলেও, বেলোত্তির আত্মঘাতি গোলের সুবাদে অ্যাওয়ে গোলের সুবিধাটি পেয়ে যায় চেলসি। পরের লেগের সমীকরণ ছিল অন্তত ১-০ গোলে জয়

ঘরের মাঠে ১৯ মিনিটের মাঝেই ৩-০ গোলে এগিয়ে যায় চেলসি। পরবর্তী ১৯ মিনিটের মাঝে দুটি গোল পরিশোধ করেন বার্সার রোনালদিনহো। একটা সময়ে ম্যাচের পরিস্থিতি ছিল ৪-৪ গোলে সমতা; কিন্তু অ্যাওয়ে গোল বেশি করার কারণে বার্সা জিতে যাবে। কিন্তু ৭৬ তম মিনিটে জন টেরির গোলে জিতে গেল চেলসির স্বপ্নটাই।

যদিও পরবর্তীতে সেমিফাইনালে আরেক ইংলিশ ক্লাব লিভারপুলের বিপক্ষে চেলসি বাদ পড়ে যায়।

২০০৬ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ দ্বিতীয় পর্ব

পরের বছরেই বার্সেলোনা প্রতিশোধ নেবার সুযোগটা পায়। যদিও সেবারে গ্রুপ পর্বে বার্সেলোনার পারফর্মেন্স তুলনামূলকভাবে ভালো ছিল। আর ততদিনে বার্সেলোনা রোনালদিনহোর অধীনে নিজেদেরকে অনেক গুছিয়ে নিয়েছে। গ্রুপ পর্ব থেকে অপরাজিতভাবে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই বার্সেলোনা পরের পর্বে মুখোমুখি হয় লিভারপুলের গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় হওয়া চেলসির বিপক্ষে।

২০০৫ সালে রেফারিকে মৃত্যুর হুমকি দেওয়া হয়েছিল দ্রগবা কে লাল কার্ড দেখানোর জন্য; Source: Pinterest

ঘরের মাঠে প্রথম লেগে চেলসি শুরুতেই পিছিয়ে যায় আত্মঘাতী গোলে, কিন্তু ম্যাচে আবার ফিরে আসে সেই আত্মঘাতী গোলেই। শেষপর্যন্ত এতোর গোলে অ্যাওয়ে গোলসহ জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে বার্সা।

দ্বিতীয় লেগে বার্সেলোনার লক্ষ্য ছিল ড্র করে ফেলা, ১-০ গোলে হেরে গেলেও পরের পর্বে যেতে সমস্যা হবে না। আর চেলসিকে ম্যাচটি অন্তত টাইব্রেকার পর্যন্ত নিয়ে যেতে হলেও ২-১ গোলে জিততে হবে। এমন সমীকরণ মাথায় নিয়ে ৭৮ তম মিনিটে রোনালদিনহোর গোলে পিছিয়ে পড়ে চেলসি। শেষ পর্যন্ত ৯০ তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে হারটাই শুধু এড়ায় বার্সেলোনা।

সেই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয় বার্সা, জন্ম হয় এক নতুন পথচলার।

২০০৯ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনাল

এক বছরে একটি ক্লাব সর্বোচ্চ ৬টি শিরোপা জিততে পারে। ইতিহাসে বার্সেলোনাই একমাত্র এই কীর্তিটি ঘটাতে পেরেছে। কাজটি যে কতটা কঠিন, সেটা বোঝার জন্য এই একটি তথ্যই যথেষ্ট। তবে তাদের এই জয়ে কিছুটা কলঙ্ক জড়িয়ে আছে।

রেফারির বিপক্ষে অভিযোগ তোলার জন্য চেলসি ম্যানেজার মরিনহোকে ব্যান করা হয়েছিল; Source: Daily Mail

সেমিফাইনালের আগে দুটো দলই অসাধারণ খেলছিল। দ্বিতীয় পর্বে বার্সেলোনা হারায় লিওনকে, আর কোয়ার্টারে বায়ার্ন মিউনিখের মতো দলকে হারায় ৫-১ গোলের ব্যবধানে। অন্যদিকে চেলসিও দ্বিতীয় পর্বে জুভেন্টাসকে ৩-২ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টারে লিভারপুলকে হারায় ৭-৫ গোলের ব্যবধানে।

প্রথম লেগে বার্সেলোনার মাঠ থেকে গোলশূন্য ড্র ম্যাচ নিয়ে ঘরে ফিরে আসে চেলসি। হিসাব-কিতাব যা হবে, সেটি লন্ডনে চেলসির মাঠে। কিন্তু রেফারির কারণে ম্যাচটি বিতর্কিত হয়। ম্যাচের নবম মিনিটেই মাইকেল এসিয়েনের গোলে চেলসি এগিয়ে যায়। এরপর থেকে বার্সা গোল করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকলেও সফল হচ্ছিল না। মাঝে চেলসির চারটি পেনাল্টির আবেদন বাতিল করা হয়। তবে ম্যাচের ৬৬তম মিনিটে এরিক আবিদালের লাল কার্ড পাওয়াটাও বিতর্ক বাড়িয়ে দেয়। ম্যাচের একেবারে অন্তিম মুহূর্তে (৯৩ মিনিটে) ইনিয়েস্তা যখন অসাধারণ এক গোল করেন, তখন চেলসির আর ফিরে আসার সুযোগ নেই। অ্যাওয়ে গোলের সুবাদে ম্যাচ ড্র হওয়া সত্ত্বেও বার্সেলোনা পরের পর্বে চলে যায়।

চারটা পেনাল্টি না দেওয়ায় ম্যাচ হারের পর রেফারির উপর দ্রগবার ক্ষোভ; Source: Football Fancast

ফাইনাল যে বার্সেলোনা জিতেছিল, সেটি তো শুরুর হেক্সার গল্প মনে রেখে বুঝে ফেলার কথা।

২০১২ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনাল

প্রতিশোধ নিতে চেলসিকে অপেক্ষা করতে হয় ৩টি বছর। ঘরোয়া লিগে চেলসির দুরাবস্থা থাকলেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ভালো সময়ই কাটাচ্ছিল তারা। তবে বার্সা বিপক্ষে চেলসিকে কেউই ফেভারিট ভাবেনি। গার্দিওয়ালার সেই বার্সা তখন প্রথমবারের মতো ব্যাক টু ব্যাক চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার রেকর্ড গড়ার পথে এগোচ্ছে।

সেমিতে প্রথম লেগে ঘরের মাঠে চেলসি জিতলো ১-০ গোলে। বার্সার জন্য এটি কোনো সমস্যা হবার কথা ছিল না। দ্বিতীয় পর্বে ঘরের মাঠে তারা বেয়ার লেভারকুসেনকে হারিয়েছে ৭-১ গোলে, যার মাঝে মেসি একাই করেছেন পাঁচটি গোল। মিলানকে তারা দিয়েছে তিন গোল। সেই বার্সার জন্য ২-০ গোলে জেতা মোটেও অস্বাভাবিক কিছু ছিল না।

ইনিয়েস্তার অতিরিক্ত সময়ের গোলেই বার্সার ফাইনালে ওঠা, উল্লাসটা তাই যথার্থ; Source: Barca Blaugranes

দ্বিতীয় লেগের প্রথম অর্ধেই ২-০ গোলে এগিয়ে হিসাবটা ঠিকই রেখেছিল বার্সেলোনা। কিন্তু সব গরমিল করে দিল চেলসি। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে রামেরিসের ১ গোলে অ্যাওয়ে গোলের সুবিধাটি পেয়ে গেল চেলসি। ম্যাচ এই অবস্থায় শেষ হলে ড্র হয়, কিন্তু অ্যাওয়ে গোলের সুবাদে চেলসি পরের পর্বে চলে যায়। শেষ পর্যন্ত ম্যাচের একেবারে অন্তিম মূহুর্তে তোরেসের গোলে ফাইনালে উঠে চেলসিই।

বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে টাইব্রেকারে ম্যাচটি জিতে প্রথমবারের মতো ইউরোপ সেরা হয় চেলসি।

৩.

এতক্ষণ ইতিহাসের কথা বলা হলো শুধুমাত্র দুই দলের চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি বোঝার জন্য। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, মাঠে যখন দুই দল নামবে তখন অতীতকে পেছনে ফেলেই নামবে। দুই দলের জন্যই ম্যাচটি নতুন এবং এই ম্যাচে যে দল ভালো খেলবে সেই দলই জিতবে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কোন দলের অবস্থানটা কেমন?

সর্বশেষ দেখায় জনটেরিকে লাল কার্ড হজম করতে হয়েছিল; Source: New Statesman

বার্সেলোনা দল গত মৌসুমের পর বেশ টালমাটাল অবস্থাতেই ছিল। গত মৌসুমে কেবলমাত্র কোপা দেল রে জেতার পর এই মৌসুমের শুরুতেই নেইমারের দল ছেড়ে চলে যাওয়া, কোচ বদল- সব মিলিয়ে বার্সা কিছুটা অস্থিতিশীল অবস্থার মাঝেই ছিল। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে নতুন কোচ খুব দ্রুত নিজেকে মানিয়ে নেন। এর জন্য অবশ্য লিওনেল মেসিকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। মেসির পারফর্মেন্স এই মৌসুমে ছিল যেন অবিশ্বাস্য।

লিওনেল মেসি, এখন পর্যন্ত চেলসির বিপক্ষে গোলহীন, আজ কি গোলের খাতা খুলবে; Source: The Independent

অন্যদিকে মুদ্রার উল্টো পিঠে যেন অবস্থান করছে চেলসি। গত মৌসুমের লিগ চ্যাম্পিয়ন হলেও এই মৌসুমে তারা ঘরোয়া লিগে আছে চতুর্থ অবস্থানে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও অবস্থা তেমন সুবিধাজনক নয়। এই অবস্থায় এই সিজনে সব টুর্নামেন্ট মিলিয়ে এখন পর্যন্ত অপরাজিত থাকা বার্সেলোনার বিপক্ষে জয় আশা করাটা চেলসির জন্য কিছুটা বাড়াবাড়িই হয়ে যায়।

এছাড়া চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সর্বশেষ সাত ম্যাচের ছয়টিতেই বার্সাকে কোনো গোল হজম করতে হয়নি। আবার চেলসির পক্ষেও কিছু ইতিহাস রয়েছে। চেলসি কোনো স্প্যানিশ দলের বিপক্ষে সর্বশেষ ১৬ ম্যাচের মধ্যে মাত্র দুটিতে হেরেছে।

দুই দলের এই যুদ্ধের মাঝেও ফুটবলপ্রেমীদের নজর থাকবে লিওনেল মেসির দিকে। এই ভদ্রলোক এখন পর্যন্ত চেলসির বিপক্ষে আটটি (৭টি পূর্ণাঙ্গ এবং বদলী হিসেবে ১টি) ম্যাচ খেলে একটিও গোল করতে পারেননি। জয় পেয়েছেন মাত্র একটি ম্যাচে।

এছাড়া লড়াই চলবে দুই দলের কোচ কন্তে আর ভালভার্দের মাঝেও।

আশা করা যায়, ম্যাচটি দারুণ উপভোগ্যই হবে।

ফিচার ইমেজ: YouTube

Related Articles