Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ক্রিস গেইল: হাসপাতালে শুয়ে যিনি পেয়েছিলেন উপভোগের মন্ত্র

১৪ বছর আগের কথা। ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়েছিলেন ক্রিস গেইল। সফরের তৃতীয় টেস্টের আগে আগে হার্টে ব্লক ধরা পড়ে গেইলের। দ্রুত সার্জারি না করলে তৈরি হতে পারে জীবন শঙ্কা। তাই মাঠে না গিয়ে হাসপাতালে ছুটতে হয়েছিল তাকে। কাউকে না জানিয়ে চলে যান অপারেশন টেবিলে। ওপেন হার্ট সার্জারি করা হয় গেইলের। মেলবোর্নে সফল সার্জারির পর ক্রিকেটে ফিরে আসেন গেইল।

হাসপাতালের বেডে শুয়েই জীবনকে নতুন করে সাজানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ক্যারিবিয়ান এই বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান, যেখানে জীবনকে উপভোগই ছিল মূলমন্ত্র। ক্রিকেট দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ‘বিনোদনের ফেরিওয়ালা’ তকমা এখন গেইলের নামের পাশে শোভা পায়। এটিই প্রমাণ করে, গেইল সত্যিই সময়টা উপভোগ করছেন। 

ক্যারিবিয়ানরা সহজাতভাবেই আমুদে। গেইলও সেই স্বভাবের বাইরে নন। ওপেন হার্ট সার্জারির পর দৌড়াতেও ভয় পান অনেকে। সেখানে বীরদর্পে ক্রিকেট খেলে বেড়াচ্ছেন গেইল, খুনে ব্যাটিংয়ে বিনোদিত করেছেন কোটি কোটি দর্শককে!

Image Credit: BCB/Raton Gomes

চার-ছক্কার ঝড়েই মূর্ত তার ছবি। পৃথিবীর সব প্রান্তেই টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের নিয়মিত মুখ তিনি। তাই তো টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন ধরা হয় গেইলকেই। ২২ গজে ব্যাট হাতে অগ্নিমূর্তি ধারণ শুধু নয়, মাঠে নেচেগেয়ে, হাসি-ঠাট্টায় ভক্তদের আনন্দ দিতে জুড়ি নেই বাঁহাতি এই ওপেনারের।

বঙ্গবন্ধু বিপিএলে এবার চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে খেলেছেন গেইল। যদিও বিপিএলের সপ্তম আসরের ড্রাফটে কীভাবে নাম আসলো, চট্টগ্রাম তাকে দলভুক্তও করে ফেললো, এসবের বিন্দু বিসর্গও নাকি জানতেন না গেইল! টুইট করে বিপিএলে যুক্ত হওয়ায় নিয়ে নিজের বিস্ময়ের কথা জানিয়েছিলেন গোটা দুনিয়াকে। তারপর অনেক আলাপ-আলোচনার পর নিজেই আবার জানিয়ে দেন, বিপিএলে তিনি খেলবেন।

গত ৭ জানুয়ারি ঢাকায় এসে পরদিনই চট্টগ্রামের জার্সিতে খেলতে নেমে গিয়েছিলেন। মিরপুর স্টেডিয়ামের বিসিবি একাডেমি মাঠে গত ৯ জানুয়ারি অনুশীলনের পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন গেইল। তার আগেই চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের পক্ষ থেকে বলে দেয়া হয়েছিল বিপিএলে খেলা, না খেলার বিতর্ক নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না এই ক্যারিবিয়ানকে। সাংবাদিকরাও ক্যামেরার সামনে ৪০ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারকে বিব্রত করেননি।

পরে বর্তমান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট, নিজের ক্যারিয়ার, জীবন কথা বলেছেন সাবেক এই ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক। আরও ৫ বছর ২২ গজে ব্যাটিং দাপট দেখাতে চান গেইল। 

Image Credit: BCB/Raton Gomes

টি-টোয়েন্টিতে নতুন সুপারস্টার কাউকে দেখছেন?

এখন অনেক নতুন খেলোয়াড় উঠে এসেছে। শুধুমাত্র একজনকে খুঁজে বের করা কঠিন। কোনো না কোনো সময়, আপনি সবসময়ই দেখবেন যে, নতুন প্রজন্মের কেউ বেরিয়ে এসেছে। তাদের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জৌলুসটা এবং নিজেদের নামটা ধরে রাখতে হবে, উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে, তবেই তারা পরবর্তী মহাতারকা হয়ে উঠবে। পৃথিবীটা একটা চক্র, আমরা আসবো, আমরা যাবো।

আপনার মতো কাউকে দেখার আশা করছেন?

আর কোনো ক্রিস গেইল কিংবা ইউনিভার্স বস আসবে না। সেটা সবসময় একজনই থাকবে, এবং আর কেউ আমার মতো হবে না।

স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই বৈশ্বিক হতে হবে, নিজের নামটাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, সব ধরনের কন্ডিশনে পারফর্ম করতে হবে, এবং আমি নিজের ক্ষেত্রে সেটা ভালোভাবেই করতে পেরেছি। আমার আর কিছুই প্রমাণ করার নেই, আপনারা জানেন যে ক্রিকেট ক্যারিয়ারে আমি ঠিক কোন জায়গায় আছি। সুতরাং, তারা সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করতেই পারে। তাদের অধিকাংশই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের জন্য বিশ্বব্যাপী খেলার সুযোগটা তেমন পায় না। 

Image Source: ESPNcricinfo

এখনও নিশ্চয়ই ক্রিকেট উপভোগ করছেন…

হ্যাঁ হ্যাঁ, একদম! আমি শুধু ভাবি যে, কিছুটা বোধহয় মন্থরই হয়ে গেছি। আপনারা জানেন, জীবন এগিয়ে নেয়ার জন্য পরিকল্পনা দরকার। ইতঃমধ্যেই ২০ বছর হয়ে গেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে, এবং সার্বিকভাবেও ক্রিকেটে ২০ বছর কাটিয়ে ফেলেছি! ক্রিকেটের বাইরেও একটা জীবন আছে, আর এখনই সময় কিছু পরিকল্পনা করে নেয়ার। ক্রিকেটও কিছুটা খেলে যেতে হবে। এখন হয়তো এটা আর হবে না যে, সবগুলো টুর্নামেন্টেই খেলব, কিংবা কোনো একটি টুর্নামেন্টের সবগুলো খেলাতেই থাকব। কীভাবে এগিয়ে যেতে চাইছি, দেখেশুনেই সেটা ঠিক করতে হবে। 

আর কতদিন খেলা চালিয়ে যেতে চান?

এখনও অনেক মানুষই চায় ক্রিস গেইলকে মাঠে দেখতে। আমার নিজেরও খেলাটার প্রতি যথেষ্ট ভালবাসা ও আসক্তি আছে। যতদিন সম্ভব, আমি টি-টোয়েন্টি এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট চালিয়ে যেতে চাই। আমি এখনও সারা দুনিয়ায় ম্যাচ খেলে বেড়াই, কারণ এখন পর্যন্ত আমি অনুভব করি যে অনেক কিছুই আমার দেওয়ার আছে। শরীরটাকেও বেশ ভালো বোধ হচ্ছে, এবং আমি নিশ্চিত যতই দিন যাচ্ছে আরও তরুণ হচ্ছি আমি। সুতরাং, আমি আরও সামনে এগিয়ে যাওয়ার দিকেই মনোযোগী।

৪৫ একটা দারুণ সংখ্যা। বরং ৪৫ বছর বয়সেই এটা নিয়ে কথা বলা যাক। আমার কাছে এটাকে বেশ ভালো নাম্বার মনে হয়, আমার ফার্স্ট নাম্বার!

চারদিনের টেস্ট নিয়ে আপনার মতামত কী?

আমি এটার ঠিক গুণগ্রাহী নই। আমি ১০০ টেস্ট খেলেছি, কিছু ৩ দিনে শেষ এবং কিছু চারদিনে শেষ হয়েছে। কিন্তু পাঁচদিনের টেস্টই হচ্ছে মৌলিক বিষয়, এবং চারদিনের টেস্ট হলে… আমি সেটার প্রতি তেমন উৎসাহ বোধ করছি না। একটা ঐতিহ্য তৈরি হয়েছে, এবং দীর্ঘ সময় ধরে এটা চলছে। এখন কেন এটা নিয়ে একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি করা হচ্ছে? যদি তারা কিছু খেলোয়াড়কে এর স্বাদ দিতে চায় এ কারণে যে, ৫ দিনের ক্রিকেট খেললে তা জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে, সেটা ভিন্ন কথা। জীবনের সঙ্গে কীভাবে মানিয়ে নেবেন, এটা পুরোপুরি মানসিক ব্যাপার।

Image Credit: Lakruwan Wanniarachchi/AFP/Getty Images

অনেক বছর ধরে বিপিএলে খেলছেন আপনি। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের উন্নতি কতটা দেখছেন?

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তারা এখন আমাদের চেয়ে ভাল করছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট উত্থান-পতনের মধ্যে এগিয়ে যাচ্ছে, এবং আমাদের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটছে। আমরা বেশি বেশি ম্যাচ ও সিরিজ জিতে নিজেদের ধারাবাহিকতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। বেশিরভাগ সময়ই আমরা কিছু খেলোয়াড় হারাচ্ছি, এবং আমাদের আবার নতুন খেলোয়াড় তৈরি করতে হচ্ছে। তাদের এখন ছাঁটাই প্রক্রিয়ায় গিয়ে পরিবর্তন এনে আবার নতুন করে ভাল খেলোয়াড়ের একটি গ্রুপ তৈরি করতে পরবর্তী কয়েক বছর প্রচুর কাজ করতে হবে। আর এভাবেই নিজেকে ওপরের দিকে তুলে নিয়ে যেতে হবে, ঠিক যেভাবে কাজ করে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ জিতেছে এবার। তাদের একটি চার বছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা ছিল, এবং শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপও জিতল। আর এ বিষয়টার দিকেই মনোনিবেশ করতে হবে, যেন ভাল একটি দল গড়া যায়। তারা সেটাই করেছে, এবং এখন একটা পরিবারের মতো হয়ে উঠেছে, যা আগামীতে তাদের জন্য আরও ভাল কিছু বয়ে আনবে।

বিপিএলের প্রায় সব মৌসুমেই আপনি খেলেছেন। এখানে ‘পোস্টার বয়’ তকমা পাওয়াটা কতখানি উপভোগ করেন?

এটা এমন এক জায়গা, যেখানে আপনি এসে খেলতে পারেন। বিশেষ করে সমর্থকদের কাছ থেকে যে সমর্থনটা পাওয়া যায়, তারা সত্যিই বাড়তি অনুপ্রেরণা জোগায় ভাল করার। মাঠে তারা বিনোদন চায়। এটা মাঝে মাঝে খেলোয়াড় হিসেবে আপনাকে বাড়তি অনুপ্রেরণা দেয়। আর খেলোয়াড় হিসেবে আমার খেলাটাও এমন ধরনের। আমি যতটা পারি বিনোদন দিতে চাই, এবং মাঠেও সবার সঙ্গে চুটিয়ে মজা করি। কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে খেলতে এসে চমৎকার কিছু সময় কেটেছে আমার, উপভোগও করেছি অনেক। এটা অন্তত বলতে পারি, এখানেই শেষ দেখছি না, আরো অনেক কিছু দেওয়ার আছে আমার। 

Image Credit: Mark Kolbe/Getty Images

আপনি কি পরবর্তী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলার চিন্তা করছেন?

এটা দারুণ হবে। সুযোগটার জন্য আমার দুয়ার খোলাই আছে। দেখা যাক কী হয়। আমাদের কিছু উজ্জ্বল তরুণ তারকাও আছে। আমার সঙ্গে তাদের যোগাযোগের রাস্তা আমি খোলাই রেখেছি, দেখা যাক ইউনিভার্স বসকে তারা চায় কি না! 

ক্রিকেটের পরবর্তী জীবন নিয়ে আপনার ভাবনা কী?

জীবন তো চলছেই। আমি এটা উপভোগই করছি, এবং জীবনের সঙ্গে ক্রিকেটটাকেও মিশিয়ে ফেলেছি। পৃথিবীর যেখানেই আমি যাই না কেন, সর্বোচ্চটা কাজে লাগাতে সচেষ্ট হই। কারণ, গত ২০ বছর অধিকাংশ সময়ই আমি ঘরের বাইরে থেকেছি। নতুন নতুন মানুষ আর খেলোয়াড়ের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ ঘটেছে। নতুন করে পারিবারিক বন্ধন গড়েছে, তাই নতুন সংস্কৃতির সঙ্গে এগিয়ে যাওয়া সহজ হয়েছে। খুবই চমৎকার কিছু সময় কেটেছে, জীবনটা কখনোই থমকে যায়নি আমার। জীবন আর ক্রিকেট মিলেমিশেই একাকার হয়েছে আমার।  

Image Credit: BCB/Raton Gomes

জীবনকে উপভোগ করার রহস্যটা কী?

আমার বইয়ে আমি যেটা লিখেছি, অস্ট্রেলিয়ায় আমার হার্ট সার্জারি হয়েছিল, এবং সেটাই আমার জীবনের প্রথম সার্জারি। যখন আমার জ্ঞান ফিরল, আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে সর্বোচ্চ ভালোভাবে বাঁচব। কখনোই পেছনে তাকাব না, সে আশেপাশে যা-ই ঘটতে থাকুক না কেন। আমি সবসময়ই সচেষ্ট থাকি সর্বোচ্চটা উপভোগ করতে এবং সেটা আমাকে দীর্ঘদিন ভাল সময়ের মধ্যেই রেখেছে।

অবসরের পর কি কোচিংয়ের দায়িত্ব নেবেন?

সত্যি বলতে, এমন কোনো পরিকল্পনা আমার নেই। কোচিংয়ের দায়িত্ব আমার কোনো পরিকল্পনাতেই নেই। কিন্তু যেমনটা আমি বলেছি, কখনোই কিছু ঘটবে না, তা বলা যাবে না। একটা গণ্ডিবদ্ধ জীবনে আপনার সবসময়ই চাওয়া থাকে ভিন্ন ধরনের কিছু অভিজ্ঞতা অর্জনের। এমনকি ক্রিকেটের পরও আমার মনে হয় আমি অনেক ভ্রমণ করব। আমি এমন সব জায়গা দেখতে চাই, যেসব আগে কখনো দেখিনি। তাছাড়া আমার পরিবার আছে, সুতরাং তাদের সঙ্গেও বেশি সময় কাটাতে চাই। এটা এমন এক অবস্থান, যেখানে পৌঁছেই বুঝতে হবে ক্রিকেটের পর আসলে আপনি কী করতে চান।

আপনি কি মনে করেন, পাকিস্তান ভ্রমণ নিরাপদ?

পাকিস্তান এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম একটি নিরাপদ জায়গা। তারা বলছে, আপনাকে প্রেসিডেন্ট পর্যায়ের নিরাপত্তা দেবে, তাই আপনার চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমরা বাংলাদেশেও তো নিরাপদ, তাই নয় কি?

This article is in Bangla language. It is an interview with Chris Gayle when he was in Bangladesh while the Bangabandhu BPL. 

Featured Image Credit: BCB/Raton Gomes

Related Articles