শিরোপা জয়ের হিসেবে বিগত দশকে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ তথা ইংল্যান্ডের সফল ফুটবল ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটি। দীর্ঘ এই সময়ে ৪টি লিগ শিরোপাসহ সর্বমোট ১৪টি শিরোপা ঘরে তুলেছে সিটিজেনরা। ম্যানচেস্টার সিটির সফলতার কারণ খুঁজতে গিয়ে অনেকেই তাদের বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের বিষয়টি সম্মুখে আনেন। ২০১২ সালের পূর্বে প্রায় ৪৪ বছর যাবত প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা না জেতা ক্লাবটির এমন আমূল পরিবর্তনে কম আলোচনা হয়নি ফুটবল বিশ্বে। এমন আলোচনা হওয়ারই কথা! রিয়াল মাদ্রিদ কিংবা বার্সেলোনা ব্যতিত এত অর্থ বিনিয়োগের সাহস তখনও ইউরোপের অন্য কোনো ক্লাব দেখায়নি।
ধনী একজন মালিক পাওয়া কতটা সৌভাগ্যের, সেটা বোধহয় সবচেয়ে ভালো টের পেয়েছেন ম্যানচেস্টার সিটির সমর্থকেরা। ২০০৮ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপ-প্রধানমন্ত্রী শেখ মনসুর বিন জায়েদ আল নাহিয়ান ম্যানচেস্টার সিটির মালিকানা একহাত করে নেন। পরের বছর দলবদলে চমক দেখিয়ে একাধিক তারকা খেলোয়াড় দলে ভেড়ায় সিটি। এরপর অধরা লিগ শিরোপাসহ এসেছে অনেক সফলতা। সিটিজেনরা শেখ মনসুরের যুগে উপভোগ করেছেন ইউরোপের নামিদামি তারকাদের খেলা। সার্জিও আগুয়েরো, ডি ব্রুইনা, স্টার্লিংয়ের মতো তারকাদের একসঙ্গে দলে দেখবে এমনটা হয়তো কখনোই ভাবেননি তারা।
বর্তমান সময়ে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা দৌড়ে এগিয়ে থাকে কোন দল? এই প্রশ্নের উত্তরে সবার আগেই আসবে ম্যানচেস্টার সিটির নাম। কিন্তু এই জায়গাটুকু কি একদিনেই তৈরি হয়েছে? শেখ মনসুর তো শুধুমাত্র অর্থায়ন করেছিলেন। তাহলে ম্যানচেস্টার সিটির এমন অভাবনীয় উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক ফুটবলে তাদের এত প্রাধান্য থাকার কারণ কী হতে পারে? উত্তরগুলো খু্ঁজতে আমাদেরকে জানতে হবে ২০০৮ সালের পর শেখ মনসুর কীভাবে ক্লাবটিকে পরিচালনা করছেন সেই সম্পর্কে। সেই সাথে আলোচনা করতে হবে তার প্রতিষ্ঠিত সিটি ফুটবল গ্রুপের বৈশ্বিক কর্মকাণ্ড নিয়ে।
শেখ মনসুরের বিনিয়োগ, ম্যানচেস্টার সিটি এবং সিটি ফুটবল গ্রুপ এই তিনটি বিষয় একই সূত্রে গাঁথা। আর তাই আলাদাভাবে বিস্তারিত জানতে হবে সবকটা বিষয়ে। এতে করে যেমন বোঝা যাবে ম্যানচেস্টার সিটির বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ কোন কোন কারণে ইংল্যান্ড এবং ইউরোপে তাদেরকে শিরোপার দাবিদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তেমনি সিটি ফুটবল গ্রুপের বৈশ্বিক কার্যক্রমও পরিস্কার হবে এতে। সেই সাথে উঠে আসবে পর্দার আড়ালে থাকা ব্যক্তিদের নাম, যারা কি না আমিরাতিদের এত অর্থায়ন বিশাল লভ্যাংশে পরিণত করেছেন। আমাদের আজকের আলোচনা ম্যানচেস্টার সিটি এবং সিটি ফুটবল গ্রুপকে ঘিরে।
নতুন নীতিনির্ধারক নিয়োগ
২০১২ সালে সার্জিও আগুয়েরোর গোলে ম্যানচেস্টার সিটি যখন প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জেতে, তখন ব্রিটিশ মিডিয়ায় বলা হয়, "১ বিলিয়ন ইউরো দিয়ে লিগ শিরোপা কিনলেন আমিরাতি শেখ।" তখনও হয়তো কেউ বুঝে উঠতে পারেনি শেখ মনসুরের পরবর্তী লক্ষ্য কী হতে চলেছে। খুঁজে বের করলেন এমন একজন ব্যক্তিকে যার মাধ্যমে নিজের নতুন বিজনেস মডেলকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে পারবেন তিনি। শুধুমাত্র ইংল্যান্ডেই নয়, ফুটবল-প্রধান দেশসমূহে আমিরাতি অর্থ বিনিয়োগের জন্য সিটি ফুটবল গ্রুপের কার্যক্রম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন শেখ মনসুর। আর তাই নিয়োগ করেন ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার সাবেক সহ-সভাপতি ফেরান সোরিয়ানোকে।
যারা ফুটবলের ভেতরগত খবর রাখেন তারা অবশ্যই চেনেন তাকে। ২০০৩ সালে বার্সেলোনার পরিচালনা পরিষদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন সোরিয়ানো। একজন নাপিতের ছেলে হয়েও মাত্র ৩৩ বছর বয়সে এমন দায়িত্বে নিয়োজিত হওয়া সোরিয়ানো বার্সেলোনার অর্থনীতি সামলান শক্ত হাতে। তিনি যখন দায়িত্ব নিয়েছিলেন তখনও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী ছিল না বার্সেলোনা। ৫ বছর দায়িত্বরত অবস্থায় বার্সেলোনাকে দেখিয়েছেন কীভাবে অল্প বিনিয়োগকে বৃহদাকারের লাভে পরিণত করা যায়। তার সময়ে শিরোপা জয়, খেলোয়াড় কেনা-বেচা কিংবা বাৎসরিক লাভ প্রায় সবকিছুতে সুফল পেয়েছিল ক্লাবটি।
কিন্তু ২০০৮ সালে আকস্মিকভাবে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান সোরিয়ানো। বার্সেলোনা পরিচালনা পর্ষদে 'দ্য কম্পিউটার' হিসেবে পরিচিত সোরিয়ানোকে এরপর দীর্ঘদিন যাবত দেখা যায়নি সংবাদমাধ্যমে। এরই মাঝে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক ক্লাবের সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব পান সোরিয়ানো। কিন্তু কর্মপরিকল্পনা পছন্দ না হওয়ায় কোথাও যোগদান করেননি তিনি। অতঃপর ডাক পড়ে সুদূর আরব আমিরাত থেকে। তবে গন্তব্য নিউ ইয়র্ক কিংবা ইউরোপের কোনো শহরে ছিল না। স্পেনএয়ারের একটি ফ্লাইটে সরাসরি আরব আমিরাতে পাড়ি জমান ফেরান সোরিয়ানো। উদ্দেশ্য ছিল শেখ মনসুরের নিয়োগকৃত মার্কিন আইনজীবি মার্টি এডেলম্যানের সঙ্গে সাক্ষাত করা।
২০১১ সালের অক্টোবর মাসের কোনো একদিন সকাল ৭টার ঘটনা এটি। আগেই তার নামে মে-ফেয়ার হোটেলে বুকিং দেয়া ছিল। এডেলম্যানের সঙ্গে সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন শেখ মনসুরের বিশ্বস্ত উপদেষ্টা খালদুন আল মুবারাক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত খালদুন ২০০৮ সাল থেকে সিটি ফুটবল গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। সেসময় আবুধাবিতে ফুটবল একাডেমি এবং ম্যানচেস্টার সিটি ক্লাবটিকে পরিচালনা করতো এই সিটি গ্রুপ। যা-ই হোক, বৈঠকে বিস্তারিতভাবে নিজেদের প্রস্তাব উপস্থাপন করেন এডেলম্যান এবং খালদুন। সেই সাথে বিশ্ব ফুটবলে বিনিয়োগের জন্য কোন কোন কারণে সোরিয়ানোকে তাদের প্রয়োজন সেই বিষয়েও ব্যাখ্যা করেন তারা। প্রথম সাক্ষাতেই এমন লোভনীয় প্রস্তাব লুফে নেননি এই কাতালান মাস্টারমাইন্ড।
শেখ মনসুরের পাঠানো প্রথম প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করারও বিশাল কারণ ছিল তার কাছে। একই সময় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তাকে নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছিল। অন্যদিকে, সোরিয়ানো তার লেখা বইতে ম্যানচেস্টার সিটির নতুন মালিকদের অঢেল অর্থ ব্যয়কে 'অযৌক্তিক বিনিয়োগ' হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। যদিও এরপর আবুধাবি থেকে কয়েকবার ফোনকল পেয়েছিলেন সোরিয়ানো। প্যারিস এবং আবুধাবিতে আরও দুই দফা বৈঠকের পর ২০১২ সালের এপ্রিলে ম্যানচেস্টারের পথ ধরেন তিনি। ঘুরে দেখেন ম্যানচেস্টার সিটি তথা সিটি গ্রুপের কার্যক্রম। এডেলম্যান তখন সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন, "আমরা ভবিষ্যতের জন্য একটি কাঠামো তৈরি করতে চলেছি। আর এটি শুধুমাত্র অসংখ্য তারকা খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া একটিমাত্র দল নয়।" ২০১২ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর ম্যানচেস্টার সিটির প্রধান নির্বাহী হিসেবে নিয়োগ পান সোরিয়ানো।
বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ কার্যক্রম
দায়িত্ব নেয়ার দুদিন পর সরাসরি নিউ ইয়র্কে পাড়ি জমান সিটির নবনিযুক্ত এই কর্মকর্তা। উদ্দেশ্য ছিল সিটি গ্রুপের হয়ে নতুন একটি ফুটবল ক্লাবের মালিকানা ক্রয় করা। মেজর লিগ সকারে নতুন একটি দল ক্রয়ের জন্য প্রায় একশত মিলিয়ন ডলার ক্যাশ নিয়েই বিমান ধরেছিলেন সোরিয়ানো এবং তার দলবল। গন্তব্যে পৌঁছানোর পর এডেলম্যান তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন বেসবল ক্লাব নিউ ইয়র্ক ইয়াঙ্কিসের মালিক হাঙ্ক এবং হাল স্টেইনব্রেনারের সঙ্গে। দুই ভাইয়ের মধ্যে হাঙ্ক কলেজ জীবনে প্রচুর ফুটবল খেলেছেন এবং স্থানীয় হাই স্কুল দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সিটি গ্রুপের নতুন দল গড়ার এই প্রস্তাবে মাত্র ১৫ সেকেন্ড ভেবেই সম্মতি দেন দুই ভাই।
চুক্তি অনুযায়ী ইয়াঙ্কিস নতুন ফুটবল দলের ২০ শতাংশ মালিকানা গ্রহণ করে এবং তাদের বেসবল স্টেডিয়ামটি সাময়িক সময়ের জন্য ফুটবল স্টেডিয়াম হিসেবে প্রদান করে। উল্লেখ্য, এই মাঠে বেসবল এবং ফুটবল উভয় ম্যাচই অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি ৭২ ঘন্টায় একবার মাঠের কাঠামো পরিবর্তন করে কর্মচারীরা। প্রতিষ্ঠিত হয় নিউ ইয়র্ক সিটি ফুটবল ক্লাব যার প্রায় ৮০ শতাংশের মালিকানা থাকে সিটি ফুটবল গ্রুপের নিকট। ২০১৫ সাল থেকেই ঘরোয়া ফুটবল লিগে নিয়মিত খেলছে নিউ ইয়র্ক সিটি এফসি। ফোর্বস প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্যমতে ক্লাবটির বর্তমান মূল্য প্রায় ৩৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলতি বছর ১৬ মিলিয়ন লোকসান দেখলেও আয় বেড়েছে দ্বিগুণ হারে। এই চুক্তি শেষে এডেলম্যানকে সোরিয়ানো বলেন,
আমাদের ব্রান্ড নিখুঁত কারণ এটি 'সিটি'। আমরা চাইলে এই নামটি যেকোনো শহরের পরেই যুক্ত করতে পারি।
নিউ ইয়র্কে নতুন ক্লাব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সোরিয়ানোর নেতৃত্বে শুরু হয় সিটি ফুটবল গ্রুপের বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ কর্মসূচি। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে আবারও চমক দেখায় সিটি ফুটবল গ্রুপ। এবার অবশ্য আমেরিকায় নয়, বরঞ্চ সোরিয়ানো এবং তার দলবল দৌঁড়েছেন অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে। ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত মেলবোর্ন হার্ট ক্লাবটি তখন অস্ট্রেলিয়ান শীর্ষ লিগে নিয়মিত অংশগ্রহণ করছিল। মালিকানা বিক্রির সময় ভোটের আয়োজনের মধ্য দিয়ে ভক্তদের সমর্থন আদায় করে ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতারা। যদিও সিটি ফুটবল গ্রুপ ২ বছরের মাথায় ক্লাবটির নাম এবং জার্সির রং পরিবর্তন করে। তবে এই পরিবর্তন যাতে সমর্থকদের মাঝে প্রভাব ফেলতে না পারে সেজন্য দলবদলে চমক দেখায় নতুন কর্তারা। ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো শিরোপা ঘরে তোলে মেলবোর্ন সিটি ফুটবল ক্লাব।
অস্ট্রেলিয়ায় সফলতার সঙ্গে কার্যসম্পাদন করে সিটি গ্রুপের কর্তারা এবার দৃষ্টি দেন জাপানী লিগে। ২০১৪ সালের মে মাসে জে-লিগের দল ইয়োকোহামা এফ. মেরিনোসের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় সিটি ফুটবল গ্রুপ। চুক্তি অনুযায়ী ক্লাবের ২০ শতাংশ মালিকানা অর্জন করে প্রতিষ্ঠানটি। অন্যদিকে, বাকি ৮০ শতাংশের মালিকানা থাকে গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নিশান-এর দখলে। মূলত এই চুক্তিকে মাঠের বাইরের অর্থনৈতিক চুক্তি হিসেবে দেখেন অনেকে। কারণ সিটি ফুটবল গ্রুপের অন্যতম বড় অর্থ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এটি। দীর্ঘদিন যাবত ম্যানচেস্টার সিটি এবং সিটি গ্রুপের অটোমোটিভ পার্টনার হিসেবে চুক্তিবদ্ধ রয়েছে নিশান। চুক্তি অনুযায়ী ম্যানসিটি কোচ পেপ গার্দিওলাকে অফিশিয়াল শুভেচ্ছাদূত হিসেবে নিয়োগ দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়াও ইয়া ইয়া তোরে এবং সার্জিও আগুয়েরোকে বিভিন্ন সময় নিশানের বিজ্ঞাপনে দেখা যেত।
আগে হোক কিংবা পরে, লাতিন আমেরিকায় পা বাড়াতেই হতো সিটি গ্রুপকে। কারণ ম্যানচেস্টার সিটির সফলতার অন্যতম কারিগর সার্জিও আগুয়েরো কিংবা কার্লোস তেভেজের উত্তরসূরিদের খুঁজতে হতো। ইউরোপিয়ান ফুটবলে লাতিন আমেরিকানদের প্রভাব অস্বীকার করা একেবারেই অসম্ভব। আর তাই উরুগুয়ের রাজধানী মন্টেভিডিওর দিকে নজর দেয় সিটি ফুটবল গ্রুপ। ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত অ্যাটলেটিকো টর্কে ক্লাবটি ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো পেশাদার লিগে খেলার মর্যাদা অর্জন করে। ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা রাউল রেইনোসো অবশ্য বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও সিটিজেনদের লোভনীয় প্রস্তাবগুলো প্রত্যাখ্যান করতে পারেননি।। কয়েকবছর দ্বিতীয় বিভাগের লিগে খেললেও ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো উরুগুয়ের প্রিমিয়ার লিগে উত্তীর্ণ হয় অ্যাটলেটিকো টর্কে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে ক্লাবটির নাম, প্রতীক এবং জার্সি পরিবর্তনের ঘোষণা জানায় সিটি গ্রুপ। সেই সঙ্গে গত ৩ বছর যাবত ক্লাবের মালিকানা সিটি ফুটবল গ্রুপের নিকট ছিল এই বিষয়টিও উল্লেখ করা হয় ঐ বিবৃতিতে। মন্টেভিডিও সিটি টর্কে নামে পরিবর্তিত হয় ক্লাবটি। এর আগে এই ক্লাবের সঙ্গে অ্যাটলেটিকো ভেনেজুয়েলার সম্পৃক্ততার গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। যদিও সিটি ফুটবল গ্রুপের মুখপাত্র জানান, শুধুমাত্র প্রশিক্ষক এবং স্কাউটিং সংক্রান্ত চুক্তিতে রয়েছে ক্লাব দুটি। তবে পর্দার আড়ালের প্রেক্ষাপট কেমন সেটি বুঝতে বাকি নেই সাংবাদিকদের। দক্ষিণ আমেরিকায় একাধিক ক্লাবের মাধ্যমে প্রতিভাবান ফুটবলার খুঁজে বের করে গড়ে তোলার এই অভিযানে হয়তো বেরিয়ে আসবেন পরবর্তী প্রজন্মের তেভেজ, সুয়ারেজ কিংবা এডিনসন কাভানি। আর এমনটাই আশাবাদী প্রধান নির্বাহী ফেরান সোরিয়ানো।
কাতালুনিয়ায় জন্মগ্রহণ করা সোরিয়ানো ইতোমধ্যেই এশিয়া এবং আমেরিকায় সিটি ফুটবল গ্রুপের প্রতিনিধিত্বকারী ফুটবল ক্লাব গঠনে সাহায্য করেছেন। এত প্রতিভাবান ফুটবলারের তীর্থস্থান স্পেন এবং কাতালুনিয়ায় কোনো একটি ক্লাবের মালিকানা ক্রয়ের পরামর্শ দেন সোরিয়ানো। এমনিতেও ইউরোপে তরুণ প্রতিভাবান ফুটবলারদের একটি বড় অংশ বেড়ে উঠে স্পেনে। আর এই কারণে সেখানেও নিজেদের প্রতিনিধি হিসেবে একটি ক্লাবের মালিকানা ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয় সিটি ফুটবল গ্রুপ। ২০১৫ সালে জিরোনা ফুটবল ক্লাবের কর্তাদের সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক করেন সোরিয়ানো। এর আগে অবশ্য সিটি গ্রুপের ক্লাবগুলো থেকে প্রায় আধ ডজন খেলোয়াড় সেখানে লোনে খেলে। এই কারণে দু'পক্ষের পরিচয় বেশ পুরোনো।
তখন দ্বিতীয় বিভাগের দল জিরোনার শতভাগ মালিকানা ছিল পেপ গার্দিওলার ভাই পেরে গার্দিওলার হাতে। তবে পেরে গার্দিওলা ছিলেন একাধারে তার ভাইয়ের এজেন্ট। ঐ পরিপ্রেক্ষিতে সোরিয়ানোর সঙ্গে বেশ ভালভাবেই পরিচয় ছিল তার। আর তাই সিটিজেনদের সঙ্গে পেরের চুক্তিটা খুব সহজেই পাকাপোক্ত হয়। ২০১৬ সালে নতুন কোচ হিসেবে পেপ গার্দিওলাকে নিয়োগ দেয় ম্যানচেস্টার সিটি। এর কিছুদিন পর সিটি ফুটবল গ্রুপ আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মধ্য দিয়ে জিরোনা ফুটবল ক্লাবের মালিকানা গ্রহণ করে। যদিও চুক্তি অনুযায়ী ৪৪.৩ শতাংশ মালিকানা থাকে পেরে গার্দিওলার নিকট। বর্তমানে সিটি ফুটবল গ্রুপের অভ্যন্তরীণ কাজেও দায়িত্ব পালন করছেন পেপ গার্দিওলার ভাই।
২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে ইতিহাদে উপস্থিত ছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ম্যাচ শেষে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এবং ম্যানচেস্টার সিটি তারকা সার্জিও আগুয়েরোর সঙ্গে সেলফি তোলেন তিনি। এই ঘটনার পর তাকে ঘিরে গুঞ্জন শুরু হয়। তার ইতিহাদ ভ্রমণের কারণ খুঁজতে মহাব্যস্ত হয়ে পড়ে ইংরেজ পত্রিকাগুলো। এর দু'মাস পর ৪০০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে সিটি ফুটবল গ্রুপের ১৩ শতাংশ মালিকানা কিনে নেয় চীনা বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান চাইনিজ মিডিয়া ক্যাপিটাল। সেসময় সিটি ফুটবল গ্রুপের অর্থনৈতিক কাঠামোর মূল্য ছিল ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বর্তমানে প্রায় ৫ বিলিয়নে পৌঁছেছে। এছাড়াও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সিটি গ্রুপের কর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চীনের ফুটবলের উন্নয়ন পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করেন।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে শক্ত অবস্থান তৈরির লক্ষ্যে সেসময় ৫০,০০০ ফুটবল স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন শি জিনপিং। এসব স্কুলের আওতায় ১০ বছরে সর্বমোট ১,৪০,০০০ ফুটবল মাঠ তৈরির বিষয়েও আলোচনা করেন তিনি। শি জিনপিংয়ের এমন পরিকল্পনা শুনে একমত না হয়ে পারেননি সিটি গ্রুপের কর্তারা। তখন সোরিয়ানো বলেন, "ম্যানচেস্টার সিটির থেকেও বড় ব্যবসা হতে পারে সেখানে।" অতঃপর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে চীনে দ্বিতীয় টোপ ফেলে সিটি ফুটবল গ্রুপ। তাদের হয়ে তৃতীয় বিভাগের দল সিচুয়ান জিউনিউ-এর মালিকানা বুঝে নেন সোরিয়ানো। এই প্রসঙ্গে সোরিয়ানো বলেন,
চীনা বাজার অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। সিচুয়ান জিউনিউ চীনের সবচেয়ে প্রতিভাবানদের গড়ে তুলবে, নয়তো ইউরোপে পাঠাবে। নতুবা এটি সিটি ফুটবল গ্রুপের বাণিজ্যিক কর্মসূচিতে ভূমিকা পালন করবে।
গত বছরের নভেম্বরে উপমহাদেশে পাড়ি জমান সিটি ফুটবল গ্রুপের প্রধান নির্বাহী ফেরান সোরিয়ানো। মুম্বাইয়ে এক জমকালো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ভারতীয় ফুটবলের নবদিগন্তের সূচনা করেন এই কর্মকর্তা। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত মুম্বাই সিটি ফুটবল ক্লাবের মালিকানা বুঝে নেয় সিটি ফুটবল গ্রুপ। তবে কথাবার্তা যে বেশ আগে থেকেই চলছিল তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি কারো। কারণ ইতোমধ্যেই দলটির কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সাবেক ম্যানচেস্টার সিটি তারকা পিটার রিড এবং নিকোলাস আনেলকা। এটি এখন অবধি সিটি ফুটবল ক্লাবের সত্ত্বাধিকারী অষ্টম ক্লাব। তবে গুঞ্জন রয়েছে ফ্রান্স, পর্তুগাল, ভিয়েতনাম, ঘানা এবং মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন ক্লাবের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছেন সিটি গ্রুপের কর্তারা। ভবিষ্যতে হয়তো নতুন চমক নিয়ে হাজির হবেন তারা।
প্লেয়ার পলিসি
দ্য গার্ডিয়ানের হিসেবে সিটি ফুটবল গ্রুপের সঙ্গে ২৫০ এর অধিক পেশাদার ফুটবলার চুক্তিবদ্ধ রয়েছেন। নারী ফুটবলেও বিনিয়োগ বাড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে প্রায় ৩০ জন নারী ফুটবলারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে সিটি গ্রুপ। এছাড়াও আরও কয়েকশ তরুণ ফুটবলার সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন বিভিন্ন ক্লাব এবং একাডেমিতে খেলছেন। এসব খেলোয়াড়দের জন্য বিশ্বমানের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে সিটি গ্রুপ। তাদের লক্ষ্য পৃথিবীর সকল প্রান্তের প্রতিভাবান তরুণ ফুটবলারদের গড়ে তুলে মালিকানাধীন দলগুলোতে খেলানো কিংবা বেশি দামে অন্যত্র বিক্রি করা।
খেলোয়াড়দের উন্নয়ন প্রসঙ্গে সোরিয়ানো বলেন, "ব্যবসায়ের দুই নম্বর সূত্র খেলোয়াড়দের নিয়ে কাজ করা। আমরা বার্সা মডেলটিকে বিশ্বায়ন করছি।" তার এই কথায় স্পষ্টভাবে বোঝা যায় তরুণদের নিয়ে সিটি ফুটবল গ্রুপের উদ্দেশ্য কেমন। আর এই কাজে সোরিয়ানোর চেয়ে অভিজ্ঞ দ্বিতীয় কেউ নেই। তার হিসেবে লা মাসিয়া একাডেমি মেসি, পুয়োল, ইনিয়েস্তা এবং জাভি প্রত্যেকের উন্নতির জন্য গড়ে ২ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছিল। অথচ বর্তমান বাজারমূল্যে ১ বিলিয়ন দিয়েও তাদের সবাইকে মূল্যায়ন করা সম্ভব না। তার মতে,
তৈরি করা কিংবা ক্রয় করা এমন চ্যালেঞ্জ এখন ফুটবলে প্রায়শ দেখা যায়। যেহেতু আপনি দ্রুত বর্ধনশীল বাজারে সবাইকে কিনতে পারবেন না সেহেতু আপনাকে গড়ে তুলতে হবে। আর তাই একাডেমি, কোচ এবং তরুণ ফুটবলারদের পেছনে প্রচুর ব্যয় করতে হবে। আপনার যদি প্রয়োজন হয় ১০ জন প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের পেছনে গড়ে ১০ মিলিয়ন অর্থ খরচ করতে হবে, তবে সেটা করা উচিত। কারণ বর্তমান বাজারে একজন পরিপক্ব খেলোয়াড়ের মাধ্যমে ১০০ মিলিয়ন আয়ের সুযোগ রয়েছে।
খেলোয়াড়দের উন্নয়নের প্রাথমিক উপায় হলো তাদেরকে অন্য দলে লোনে খেলতে পাঠানো। এতে করে প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্টে খেলার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে তারা। সেই সাথে বড় মঞ্চে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ থাকে তাদের সামনে। কিন্তু সিটি ফুটবল গ্রুপের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা ইংল্যান্ডের ক্লাব ফুটবলের কিছু নিয়মনীতি। কারণ সেখানে চাইলেই বয়সভিত্তিক দলের খেলোয়াড়েরা মাঝপথে শীর্ষ লিগের দলে খেলতে পারেন না।
এছাড়াও লোনে অন্য দলে পাঠানোর পর সেসব খেলোয়াড়ের উপর পরিচর্যার সকল নিয়ন্ত্রণ হারায় মূল ক্লাব। এই সমস্যার কারণে বিগত বছরগুলোতে ভুক্তভোগী হয় প্রিমিয়ার লিগের আরেক ক্লাব চেলসি। তাদের প্রায় ৪০ জন তরুণ ফুটবলার বিভিন্ন ক্লাবে লোনে খেলছেন। কিন্তু চেলসি একাডেমি ছাড়ার পর তাদের সবার খেলার ধরন এবং পরিচর্যার পদ্ধতি পাল্টে যায়। ফলে ৪০ জন তরুণ ফুটবলারের মধ্য থেকে ২ জন পরিপক্ব খেলোয়াড়কে মূল দলে খেলাতে পারেনি চেলসি। আর এটি নিঃসন্দেহে মালিকপক্ষের জন্য বড়সড় ক্ষতি।
এমন সমস্যা সমাধানের জন্য সিটি ফুটবল গ্রুপ তাদের মালিকানাধীন সবক'টা ক্লাবেই একই ধরনের ফুটবল চালু রেখেছে। খেলার ধরন এবং প্রশিক্ষক সবাই মালিকপক্ষের উদ্দেশ্যকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়। আর তাই সিটি ফুটবল গ্রুপের বিভিন্ন ক্লাবের একাডেমিতে বেড়ে ওঠা তরুণদের মালিকানাধীন ক্লাবগুলোতে লোনে পাঠায় কর্তৃপক্ষ। এতে করে খেলোয়াড়দের পরিচর্যার উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে সিটি ফুটবল গ্রুপের। এই পদ্ধতিতে খেলোয়াড়দের ব্যাপক উন্নয়নের পাশাপাশি ক্লাবগুলোকে শীর্ষ লিগে টিকিয়ে রাখতে পারে সিটি ফুটবল গ্রুপ। জিরোনা ফুটবল ক্লাবের মালিকানা ক্রয়ের সময় তারা দ্বিতীয় বিভাগের ফুটবল খেলতো। পরের মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটি একাডেমির একঝাঁক তরুণ ফুটবলারকে সেখানে লোনে পাঠায় কর্তৃপক্ষ। পরের মৌসুমে লা লিগায় খেলার সুযোগ পায় জিরোনা।
খেলোয়াড়দের দিয়ে সিটি ফুটবল গ্রুপ যে লাভজনক ব্যবসা পরিচালনা করছে সেটি নিশ্চিতভাবে বলা যায়। উদাহরণস্বরূপ অস্ট্রেলিয়ান ফুটবলার অ্যারন মোয়-এর দলবদলের গল্পটি উল্লেখ করা যেতে পারে। মোয় ২০১৪ সালে মেলবোর্ন সিটি ফুটবল ক্লাবে যোগ দেন। প্রথম ২ মৌসুমে ক্লাবের বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হন তিনি। সিটি ফুটবল গ্রুপ বুঝতে পারে মোয় ইংল্যান্ডে খেলার জন্য প্রস্তুত। অতঃপর ২০১৬ সালের গ্রীষ্মকালীন দলবদলে মাত্র ৪,২৫,০০০ ইউরোর বিনিময়ে ম্যানচেস্টার সিটি তাকে কিনে নেয়। যদিও ম্যানচেস্টার সিটিতে খেলেননি তিনি। তাকে সরাসরি হাডার্সফিল্ড টাউনে লোনে পাঠায় ম্যানসিটি। পরের মৌসুমে হাডার্সফিল্ড তাকে ১০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে কিনে নেয়। আর এই পরিমাণ অর্থ সিটি ফুটবল গ্রুপকে মেলবোর্ন সিটি ক্লাব ক্রয়ের ৪০ শতাংশ অর্থের যোগান দিয়েছিল।
ম্যানচেস্টার সিটি তাদের বৈশ্বিক কার্যক্রম শুরু করে আরও ৮ বছর আগে। ফেরান সোরিয়ানো সাংবাদিকদের যে 'বার্সা মডেল' প্রতিষ্ঠার কথা বলেন, সেটি এখন কাগজে-কলমে প্রমাণিত। আর তাই আমিরাতি অর্থায়নে কয়েকবছর পর ইউরোপ, আমেরিকা এবং পূর্ব এশিয়ার ফুটবল বাণিজ্যে সিটি ফুটবল গ্রুপের কর্তৃত্ব অন্য সবার থেকে বেশি থাকবে এটি জানা কথা। সোরিয়ানোর জটিল সমস্যার সরল সমাধান নামক ফিলোসফি সিটি ফুটবল গ্রুপের বৈশ্বিক কার্যক্রমে দারুণ প্রভাব ফেলেছে বলা যায়।
শেখ মনসুরের স্বপ্ন এখনও পুরোপুরি পূরণ হয়েছে কি না আমরা তা জানি না। কিন্তু বিশ্ব ফুটবল বাণিজ্যে গুগল, ফেসবুক কিংবা ডিজনির মতো বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিটি গ্রুপের আবির্ভাব হয়েছে বলা যায়। আপাতত একে শুধুমাত্র ফুটবলের কোকা-কোলা হিসেবেই দেখেন ব্রিটিশ সাংবাদিকেরা। যতদিন সিটি ফুটবল গ্রুপের দৌড় অব্যাহত থাকবে, ততদিন ইংরেজ ফুটবলে ম্যানচেস্টার সিটির আধিপত্য কায়েম থাকবে তা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। আমিরাতি অর্থায়নে ম্যানচেস্টার সিটির বর্তমান অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হওয়ার আর কোনো কারণ নেই। এই ক্লাবটির জন্য সিটি ফুটবল গ্রুপের সৃষ্টি নাকি শেখ মনসুরের স্বপ্ন বাস্তবায়নের একটি অংশ এটি তা এখন অনেকটাই পরিস্কার।
This article written about City Football Group. This corporation economically growing by a member of the United Arab Emirates’ ruling family, Sheikh Mansour bin Zayed al-Nahyan, and the other is Khaldoon al-Mubarak, a youthful executive and adviser to the royal family.
Football has already been transformed by big money – but the businessmen behind Man City are trying to build a global corporation that will change the game for ever.
Features Image: This is Anfield.com