Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মাশরাফিকে খুঁজে পাওয়া কিংবদন্তি খুঁজে নিলেন পুরনো ছাত্রকে

বিশ্বকাপে মাশরাফি বিন মুর্তজার নামের পাশে শেষ পর্যন্ত লেখা হয়েছে মাত্র একটি উইকেট। সেই যে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওপেনার জনি বেয়ারস্টোকে ফিরিয়ে ব্রেক থ্রু দিয়েছিলেন; তারপর থেকে আর নিজের বোলিংয়ে উদযাপন করা হয়নি বাংলাদেশ দলের এই অধিনায়কের। টুর্নামেন্টে ম্যাচপ্রতি ৪৫.৭৮ রান খরচের পরিসংখ্যানই বলে দেয়, সহজাত মাশরাফির ইকোনমি বোলিংও সেভাবে উঠে আসছে না ইংলিশ কন্ডিশনে। সব মিলিয়ে খরচ করেছেন ৪১২ রান, এমন ফর্মহীনতা নিয়ে গুঞ্জন উঠছে। অনেকে বিশ্বকাপের পরই অবসরের প্রস্তাব দিচ্ছে। যদিও সবাই এটাও মনে রাখে, ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় একরকম যাবে না। মাশরাফিও সেই সময়গুলোর মধ্যে একটি দিয়ে যাচ্ছেন। তবে নিজের বিদায়ী বিশ্বকাপে এমন পারফরম্যান্স হয়তো নিজেও মেনে নিতে পারছেন না বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম এই ফাস্ট বোলার। মুহুর্মুহু ইনজুরির কারণে অবশ্য ফাস্ট বোলার থেকে সরে হয়ে গেছেন মিডিয়াম পেস বোলার। যারা ক্রিকেট বোঝেন, তারা অবশ্যই ফাস্ট বোলার আর মিডিয়াম পেস বোলারের মধ্যে চুল পরিমাণ পার্থক্যও ধরতে পারেন।

অ্যান্ডি রবার্টস; Image Source: Reuters

দুই পায়ের হাঁটুতে একাধিক ইনজুরি, অস্ত্রোপচার আর ফিরে আসা; ক্যারিয়ারে কী ছিল না মাশরাফির! তারপরও সমর্থক, সংবাদ মাধ্যমে তাকে নিয়ে আলোচনা, অভিজ্ঞতার ভারি আবরণের নিচে মাশরাফিও কি হতাশ হচ্ছেন না?

মাশরাফি অবশ্যই হতাশ ছিলেন। এমন সময়েই ফোন পেলেন অ্যান্ডি রবার্টসের কাছ থেকে। লোকটিকে চেনা মনে হয়? যারা পুরনো দিনের ক্রিকেট দেখেছেন, যারা বৈশ্বিক ক্রিকেটের রেকর্ড নিয়ে বিস্তর পড়াশোনা করেছেন, তারা উইন্ডিজ কিংবদন্তি অ্যান্ডি রবার্টসকে অবশ্যই চিনবেন। চিনতেই হবে।

অ্যান্ডি রবার্টস। ১৯৭৪ থেকে শুরু করে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত উইন্ডিজ জাতীয় ক্রিকেট দলের নিয়মিত মুখ ছিলেন। ডানহাতি এই ফাস্ট বোলার ৪৭ টেস্ট ম্যাচে নিয়েছেন ২০২ উইকেট। ওয়ানডে খেলেছেন ৫৬ ম্যাচ। নিয়েছেন ৮৭ উইকেট। জোয়েল গার্নার, মাইকেল হোল্ডিং আর কলিন ক্রফটের সাথে মিলে বারবার প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইন গুড়িয়ে দিতেন রবার্টস। নিজের প্রধান দুই অস্ত্র ‘রিব ব্রেকার’ আর ‘স্কিডি বাউন্সার’ দিয়ে ঘায়েল করতেন সবকিছু। সেই অ্যান্ডি রবার্টসের বয়স এখন ৬৮ বছর। প্রশ্ন আসতে পারে, মাশরাফির সাথে অ্যান্ডি রবার্টসের কী সম্পর্ক?

কথাটি এভাবে বলা যায়, রবার্টস ছিলেন বলেই মাশরাফি এসেছেন। ২০০১ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অনুরোধে এক সপ্তাহের বোলিং ক্যাম্প করাতে এসেছিলেন অ্যান্ডি রবার্টস। কাজ করেছিলেন বোলিং পরামর্শক হিসেবে। সেই ক্যাম্পেই তিনি খুঁজে পান মাশরাফিকে। তবে বিশ্বজুড়ে যখন সবাই তাকে চেনে মাশরাফি নামে, রবার্টসের কাছে এখনও মাশরাফি ‘কৌশিক’ নামেই পরিচিত। মূলত মাশরাফির ক্যরিয়ার বদলে যায় ওই এক সপ্তাহের ক্যাম্প থেকেই। রবার্টস মাশরাফি-তালহা জুবায়েরদের তুলে দিয়ে যান বিসিবির হাতে। সেখান থেকে ‘এ’ দলে মাশরাফি। একই বছরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জাতীয় দলে অভিষেক।

২০০৭ সালে উইন্ডিজ সফরে; মাশরাফি-শাহাদতকে পরামর্শ দিচ্ছেন রবার্টস; Image Source: AP

বিশ্বকাপের মাঝে আবারও মাশরাফি খুঁজে পেলেন রবার্টসকে। বলা যায় মাশরাফিকেই খুঁজে নিয়েছেন তার এই বোলিং গুরু। মাশরাফির খারাপ সময়ে বাংলাদেশের বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালসের কাছ থেকে মাশরাফির ফোন নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করেছেন তিনি নিজেই। তাতে আপ্লুত মাশরাফি। পেয়েছেন বেশ কিছু পরামর্শ। সেসবেই উজ্জীবিত হতে চান অধিনায়ক।

মাশরাফি রবার্টসের কাছ থেকে ফোন পেয়ে দারুণভাবে চমকে গেছেন বলা যায়। সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন,

আগে আমাদের মাঝে অনেক কথা হতো। কিন্তু সময়ের সাথে আমাদের মধ্যে যোগাযোগ কমে গিয়েছিল। সম্প্রতি তিনি ওয়ালশের কাছ থেকে আমার নম্বর নিয়ে নিজেই যোগাযোগ করেছেন। আমাকে বলেছেন আমার সবকিছু ঠিক আছে। সবার একটা ধাপ আসে। আমাকে বলেছেন বোলিংয়ে মনোযোগী হতে। ঠিক এই কথাগুলোই তিনি আমাকে আমার ক্যারিয়ারের সেই শুরুর দিকে বলতেন। তার বার্তাটা খুব সাধারণ ছিল। অবশ্যই তার কাছ থেকে ফোন আসতে পারে আমি এই মুহূর্তে আশাই করিনি। তিনি বৃদ্ধ হচ্ছেন, কিন্তু এখনও ক্রিকেট অনুসরণ করেন। এখনও আমাকে কৌশিক নামে ডাকেন।

রবার্টস যে সময়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন, সেই সময়ে বাংলাদেশ কেবলই টেস্ট ক্রিকেটে পা রেখেছে। ওই সময়ে দলে পরিণত ফাস্ট বোলার বলতে তেমন কিছু ছিল না। রবার্টসের হাত ধরে পরবর্তীতে মাশরাফিরা দলে আসেন, সাদা পোশাকে ফাস্ট বোলারের আক্ষেপ অনেকটা হলেও কমে যায়। বলা যায়, অ্যান্ডি রবার্টসের কাছে বাংলাদেশের ক্রিকেট অনেকটাই ঋণী।

তারুণ্যে ভরপুর মাশরাফি বিন মুর্তজা; Image Source: AFP

মাশরাফির ভাষায়,

যারা ক্রিকেট খুব কাছ থেকে ফলো করে কেবল তারাই অ্যান্ডি রবার্টসে চিনবে তার অসাধারণ সব রেকর্ডের জন্য। আমরা ক্রিকেটার হিসেবে তাকে চিনতাম। তিনি একজন কিংবদন্তি ক্রিকেটার। তিনি কেবল আমাদেরকে ওই একবারই শিখিয়ে ছেড়ে দেননি। সবসময় খোঁজ নিতেন। আমার মতো মানুষের কাছে অবশ্যই এটা খুব বড় ব্যাপার যে তার মতো গ্রেট ক্রিকেটার আমার খেলা ফলো করেন।

রবার্টস যখন বাংলাদেশে আসেন, তারও অনেক আগেই অবসর নিয়েছেন তিনি। মাশরাফিদের সুযোগ হয়নি তার খেলা দেখা। ছিল না ইউটিউব। মাশরাফি জানান, পরবর্তীতে সুযোগ পেলেই রবার্টসের খেলার ভিডিও দেখতেন তিনি।

মাশরাফির ভাষায়

২০০১ সালে যখন তিনি বাংলাদেশে এলেন, ব্যাপারটা দারুণ ছিল। আমি তালহা জুবায়ের, আনোয়ার হোসেন মনির, মাহবুবুল আলম রবিন, সাফাক আল জুবায়ের, সৈয়দ রাসেল, তারেক আজিজ এবং আলমগীর কবিরের মতো ক্রিকেটারদের সাথে সেবার ভবিষ্যৎ টেস্ট পেস বোলারদের ক্যাম্পে ছিলাম। আমরা জানতাম অ্যান্ডি রবার্টস কে। তার দিকে সবাই শুধু তাকিয়েই থাকতাম। আমরা কখনোই তার খেলা দেখিনি, কিন্তু পরে ইউটিউবে তার ভিডিও দেখেছিলাম। আমরা জেনেছিলাম তিনি কেমন গ্রেট বোলার ছিলেন। তার মতো কোচের অধীনে শিখতে পারা আমাদের জন্য অনেক বড় ব্যাপার ছিল।

বিশ্বকাপে মাশরাফির পারফরম্যান্স নিয়ে যখন আলোচনা, তখন রবার্ট জানাচ্ছেন- ঠিক পথেই আছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। রবার্টসের মতে, বিশ্বকাপে উইন্ডিজের বিপক্ষে মাশরাফি খুবই ভাল বল করেছেন। রান রেটও ছিল নিয়ন্ত্রণে। এরপর সাকিবের ১২৪ রানের ইনিংস দলকে জিতিয়েছে। ৩২২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে সেই ম্যাচে বাংলাদেশ জিতে যায় ৫১ বল হাতে রেখে।

মাশরাফি বিন মুর্তজা; Image Source: Getty Image

উইন্ডিজের বিপক্ষে জয় পাওয়ার পর ড্রেসিংরুমের চেহারাই বদলে গিয়েছিল বলে উল্লেখ করেছেন মাশরাফি। একইসাথে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের খুব কাছে গিয়েও হেরে যাওয়া হতাশ করেছিল পুরো বাংলাদেশ দলকে।

মাশরাফি বলেন,

উইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ জয় খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এমন নয় যে শুধু টুর্নামেন্টে টিকে থাকার জন্য, জয় দরকার ছিল নিজেরা কতটা নিজেদের জায়গা থেকে দিতে পারছি সেটাও প্রমাণের। আমরা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটা বৃষ্টির কারণে খেলতে পারিনি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে যাওয়ায় আমাদের সময়টা খারাপ যাচ্ছিল। উন্ডিজের বিপক্ষে জয় পাওয়ার কারণে আমরা সেই জায়গা থেকে বের হতে পেরেছি।

বিদেশ বিভূঁইয়ে দীর্ঘদিন পর রবার্টসকে পেয়ে খুশি মাশরফি। অন্তত তার খারাপ সময়ে একজন হলেও পাশে থেকেছেন, দূর থেকে তাকে মনে করেছেন, কাছে এসেছেন তাতে পারফরম্যান্সের ভারাক্রান্ত মন খানিকটা হলেও হালকা হয়েছে অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারের। কিন্তু বিশ্বকাপ থেকে রিক্ত হাতেই ফিরতে হয়েছে তাকে। হয়তো নিজেও টের পাচ্ছেন, টুর্নামেন্টজুড়ে যদি বল হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারতেন, হয়তো শেষ চারে প্রথমবারের মতো লেখা থাকতো বাংলাদেশের নাম।

This is an article about the inventor of Mashrafe Bin Mortaza, Sir Andy Robarts, who is a legendary fast bowler of WI. Recently Roberts communicate with Mashrafe during WC2019 and help him to come up from his performence frustation. 
Feature Photo: New Age 

Related Articles