Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ক্রিকেটে গতির রেকর্ডধারী সেরা দশ বোলার

একটা সময় দ্বন্দ্বযুদ্ধে মানুষ কী করত? দুটো মানুষ পরষ্পরের বিপক্ষে লড়াই করত। এই মানুষ দুটো সবসময় শুধু মাত্র নিজেদের জন্যেই লড়াই করত না, কখনো একটি দেশ কিংবা জাতির পক্ষ থেকেও প্রতিনিধিত্ব করত। দেখা যেত, কেবল দুজনের লড়াইয়ের জয়-পরাজয়ের উপর নির্ভর করেই গোটা যুদ্ধের ফলাফল নির্ধারিত হতো। ক্রিকেটে একজন ব্যাটসম্যান আর একজন বোলারের লড়াইটাও কিন্তু অনেকটা এমনই।

তবে দ্বন্দ্ব যুদ্ধের সাথে এই যুদ্ধের পার্থক্যটা হলো, এখানে বোলিং পক্ষ আক্রমণ করে আর ব্যাটসম্যান তার প্রতিরোধ করে। এই লড়াইয়ের অন্যতম রোমাঞ্চকর একটি অংশ হচ্ছে ব্যাটসম্যানের সাথে ফাস্ট বোলারের দ্বৈরথ।

মোটা দাগে ক্রিকেটের বোলারদেরকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়; পেস বোলার আর স্পিন বোলার। স্পিন বোলিংটা রহস্যময়, আর ফাস্ট বোলিংয়ে আছে গতির বন্যতা। একজন ফাস্ট বোলারের অস্ত্র হিসেবে সুইং কিংবা লাইন-লেংথ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে, পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা ব্যাটসম্যানটিও গতির মুখোমুখি হতে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করে।

একজন বোলার গতির মাধ্যমে মিডল স্ট্যাম্প উড়িয়ে দিচ্ছে, একজন ব্যাটসম্যানের জন্য এর চেয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতি আর কী হতে পারে? তবে এর সাথে সাথে শোয়েব আকতারের বোলিংয়ের বিপক্ষে সৌরভ গাঙ্গুলীর পিচে ছটফট করা কিংবা অ্যালান ডোনাল্ডের গতির সামনে আজহারউদ্দিনের লম্ফঝম্ফও দর্শকদের আনন্দ দেয়। ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে যাকে ধরা হয়, সেই ব্র্যাডম্যানকেও লারউডের গতি দিয়েই একটি সিরিজে আটকানো হয়েছিল।

পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা ব্যাটসম্যানটিও গতির মুখোমুখি হতে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করে; Source: ESPNcricinfo

তবে সমস্যার কথা হচ্ছে, গতি নিয়ে মানুষের আগ্রহ থাকলেও একটি সময় পর্যন্ত এই গতি পরিমাপ করার কোনো গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি ক্রিকেটে ছিল না। একসময় ক্রিকেটে বোলিংয়ের গতি পরিমাপ করার জন্য রাডার গান ব্যবহার শুরু হয়। গতিশীল বলের গতি কোনো ত্রুটি ছাড়াই এর সাহায্যে সঠিকভাবে পরিমাপ করা সম্ভব হয়।

এই রাডার গান ব্যবহার করে এখন পর্যন্ত আইসিসির অনুমোদিত অফিসিয়াল টুর্নামেন্ট কিংবা সিরিজের গ্রহণযোগ্য যে রেকর্ডগুলো সংরক্ষিত করা হয়েছে, আমরা আজ তার মাঝে প্রথম ১০টি সম্পর্কে জানবো।

এখানে মনে রাখতে হবে, এই রেকর্ডের বাইরেও অনেক বোলার হয়তো এক সময় জোরে বোলিং করেছেন; কিন্তু সেগুলোর রেকর্ড সংরক্ষিত নেই বলে সেগুলোকে আওতায় আনা হয়নি।

১০. ডেল স্টেইন: ১৫৬.২ কি.মি./ঘণ্টা

বর্তমান যুগে ফাস্ট বোলারদের প্রতিনিধিত্ব করছেন ডেল স্টেইন; Source: Cricingif

সময়ের সেরা ফাস্ট বোলার তার গতির সাথে লাইন-লেংথের জন্যও বিখ্যাত। ২০০০ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫৫.৭ কি.মি./ঘণ্টা গতির একটি রেকর্ড গড়েন তিনি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। পরবর্তীতে ২০১০ সালে আইপিএল এ কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে নিজের রেকর্ড ভেঙ্গে ১৫৬.২ কি.মি./ঘণ্টা গতির রেকর্ড গড়েন।

৯. শেইন বন্ড: ১৫৬.৪ কি.মি./ঘণ্টা

ক্ষুদ্র ক্যারিয়ারেও ব্যাটসম্যানদের আতঙ্ক ছিলেন বন্ড; Source: CricketCountry.com

আরেকজন চমৎকার ফাস্ট বোলার, যার ক্যারিয়ার সংক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছিল শুধুমাত্র ইনজুরির কারণে। ভিন্ন ধরনের স্টাইলের কারণেও অনেক ক্রিকেটপ্রেমীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছিলেন তিনি। ২০০৩ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৫৬.২ কি.মি./ঘণ্টা গতির রেকর্ডটিও করেন তিনি। ক্যারিয়ার দীর্ঘস্থায়ী না হলেও, যতদিন খেলেছেন ততদিন ব্যাটসম্যানদের ত্রাস হয়েই ছিলেন এই কিউই।

০৮. মোহাম্মদ সামি: ১৫৬.৪ কি.মি./ঘণ্টা

হারিয়ে যাওয়া প্রতিভা সামি; Source: Wikipedia

সামিও ছিলেন আরেক হারিয়ে যাওয়া প্রতিভা। ক্যারিয়ারের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্তভাবে। ওয়াসিম এবং ওয়াকারের শেষের দিকে তার ক্যারিয়ার শুরু হওয়ায় ভাবা হয়েছিল তিনি হবেন তাদের উত্তরসূরী। কিন্তু গতির সাথে লাইন-লেংথের সমন্বয় করতে না পারায় ক্যারিয়ারটা হয়ে যায় খুবই সংক্ষিপ্ত। এরই মাঝে ২০০৩ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৫৬.৪ কি.মি./ঘণ্টা গতির বলটি করেন সামি।

০৭. মিচেল জনসন: ১৫৬.৮ কি.মি./ঘণ্টা

মিচেল জনসন একাই কাঁপিয়েছিলেন ইংলিশদের; Source: CricketCountry.com

ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় তিনি গতিশীল ছিলেন, তেমনটি বলা যাবে না। তবে ২০১৩ সালের অ্যাশেজে তিনি নিয়মিত ১৫০+ কি.মি./ঘণ্টা গতিতে বল করে ইংলিশ ব্যাটসম্যানদেরকে অস্বস্তিতে ফেলেছেন। এই সিরিজেরই চতুর্থ টেস্টে ১৫৬.৮ কি.মি./ঘণ্টা গতিতে বল করে রেকর্ডটি করেন তিনি। একই সাথে সেই সময়ের অন্যতম সেরা গতিশীল বোলার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন এই অস্ট্রেলিয়ান।

০৬. ফিডেল অ্যাডওয়ার্ডস: ১৫৭.৭ কি.মি./ঘণ্টা

ফিডেল অ্যাডওয়ার্ডস; Source: cricketworld.com

তার বোলিং স্টাইল কিছুটা ওয়াকার ইউনুসের মতো ছিল, কিন্তু একজন ফাস্ট বোলার হিসেবে তার উচ্চতা ছিল যথেষ্ট কম। বোলার হিসেবে মোটেই ধারাবাহিক ছিলেন না তিনি, তবে গতির দিক থেকে বিবেচনা করলে ধারাবাহিক বলা চলে। ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ান্ডারার্সে একটি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে তিনি এই কৃতিত্ব গড়েন।

০৫. অ্যান্ডি রবার্টস: ১৫৯.৫ কি.মি./ঘণ্টা

বিখ্যাত পেস চতুষ্টয়ের একজন রবার্টস; Source: The Cricket Monthly

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিখ্যাত পেস আক্রমনের অন্যতম সদস্য ছিলেন অ্যান্ডি রবার্টস। হোল্ডিং, মার্শাল, গার্নার কিংবা রবার্টস- প্রত্যেকেই গতিতে সেরা হলেও তার যুগের বেশিরভাগ ব্যাটসম্যান গতিশীল বলে তাকেই স্বীকৃতি দিয়েছেন। ১৯৭৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়াকা গ্রাউন্ডে তিনি এই রেকর্ড গড়েন।

০৪. জেফ্রি থমসন: ১৬০.৬ কি.মি./ঘণ্টা

থমসনকে অনেকেই ইতিহাসের সবচেয়ে গতিসম্পন্ন বোলার মনে করেন; Source: ESPNcricinfo

১৯৭৬ সালে যে মেশিন দিয়ে গতি পরিমাপ করা হতো, সেটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ আছে। তবে এটি নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, থমসন তার যুগের সেরা গতির পেসারই ছিলেন। তার বলের এই গতি পরিমাপ করা হয়েছিল ওয়াকা গ্রাউন্ডে।

তবে থমসনের যুগের অনেক ব্যাটসম্যানদের বিশ্বাস, তিনি পরবর্তী যুগের ব্রেট লি কিংবা শোয়েব আকতারের চেয়েও বেশি গতিতে বোলিং করতেন। এমনকি জেফ্রির নিজের মনেও এই বিশ্বাসটা আছে। অনেকেরই ধারণা, ১৯৭৬ সালে কাঁধে আঘাত পাওয়ার আগে থমসন তার সেরা সময়ে ১৬২ থেকে ১৭০ কি.মি./ঘণ্টা গতিতে বল করেছেন।

০৩. শন টেইট: ১৬১.১ কি.মি./ঘণ্টা

শন টেইট; অল্প সময় ছিলেন কিন্তু পেস ছাড়েননি; Source: The Telegraph

খুবই অল্প সময়ের ক্যারিয়ার ছিল এই অস্ট্রেলিয়ান বোলারের। কিন্তু যতদিন খেলে গিয়েছেন, ততদিন গতির সাথে আপোষ করেননি। প্রথাগত ফাস্ট বোলারদের মতো উচ্চতা না পাওয়া সত্ত্বেও তার বোলিংয়ে পেস এবং স্কিডের সাথে সাথে লাইন-লেংথও ভালো ছিল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১০ সালে নেপিয়ারে তিনি এই রেকর্ডটি গড়েন।

০২. ব্রেট লি: ১৬১.১ কি.মি./ঘণ্টা

প্রতিপক্ষের স্ট্যাম্প ভাঙাতেই ব্রেট লির আনন্দ; Source: Zoom.lk

শোয়েব আকতারের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বীই ছিলেন এই অস্ট্রেলিয়ান পেসার। ক্যারিয়ারের একটা সময় তিনিও অনবরত ১৫০ কি.মি./ঘণ্টা গতিতে বল করে যেতেন। ২০০৫ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একটি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে তিনি ১৬১.১ কি.মি./ঘণ্টা গতিতে বল করেন। ইতিহাসের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে তিনি ১০০ মাইল/ঘণ্টার রেকর্ড স্পর্শ করেন।

০১. শোয়েব আকতার: ১৬১.৩ কি.মি./ঘণ্টা

শোয়েব আকতার কাছে গতি ছিল যেন নেশার মতো; Source: ESPNcricinfo

ক্রিকেটে সেঞ্চুরি সবাই করতে চায়। তবে সেটি ব্যাটিংয়ে, বোলিংয়ে নয়। বোলিংয়ে কোনো বোলার যত কম রান দিতে পারেন, ততই মঙ্গল। তবে ফাস্ট বোলাররা যদি ঘণ্টায় ১০০ মাইল গতিতে বল করতে পারেন, তাহলে সেটি বিবেচিত হয় অসামান্য অর্জন হিসাবে। এই অর্জনটি যে মোটেই সহজ কোনো বিষয় নয়, সেটি রেকর্ড দেখলেই বুঝতে পারা যায়।

ক্রিকেট ইতিহাসের অফিশিয়াল ম্যাচ বিবেচনা করলে, এই কাজটি এ পর্যন্ত কেবলমাত্র একজন বোলারই করতে পেরেছেন। তিনি হলেন শোয়েব আকতার। ২০০৩ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের নিক নাইটের বিপক্ষে তিনি একটি বল করেছিলেন ১৬১.৩ কি.মি./ঘণ্টা গতিতে। ক্যারিয়ারের একটা সময়ে তিনি প্রতিনিয়ত ১৫০ কি.মি./ঘণ্টা গতিতে বল করে যেতেন।

ফিচার ইমেজ: zeenews.india.com

Related Articles