Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ক্রিকেটারদের বিচিত্র সব কুসংস্কার

মুরুব্বিরা বলেন, খাওয়ার পর ভাতের হাঁড়ি খালি রাখতে হয় না। কেউবা আবার ঘরে ‘অলক্ষ্মী’ হবে এই ভেবে রাতের বেলা ঘরও ঝাড়ু দিতে চান না। আর রাস্তায় বের হওয়ার সময় যদি সামনে দিয়ে কালো বিড়াল যায়, তাহলে তো হয়েছেই! অনেকেই ভয়ে থাকেন যে আজ কপালে নিশ্চয় কোনো দুর্গতি আছে। যদিও বিড়াল কালো হোক আর সাদা হোক, তাতে ফারাক পড়ে না।

এসবই কুসংস্কার। এই কুসংস্কার শিক্ষিত-অশিক্ষিত কিংবা ধনী-গরীব কোনোকিছুই মানে না। যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকদের মধ্যে বিচিত্র সব কুসংস্কার আছে।আছে ক্রীড়াক্ষেত্রেও। ফুটবলে যেমন আছে, ক্রিকেটেও আছে। হালের স্টিভ স্মিথ-স্টুয়ার্ট ব্রড থেকে শুরু করে সেকালের ইমরান খান; সবাই নিজেদের ক্যারিয়ারে কিছু না কিছু কুসংস্কারে বিশ্বাসী ছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় ক্রিকেটারদের বিশেষ, অদ্ভুত ও বিচিত্র কিছু কুসংস্কার নিয়ে এই আয়োজন।

স্টিভ ওয়াহর লাল রংয়ের ছেঁড়া কাপড়

স্টিভ ওয়াহ

অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটা সময় পকেটে একটা লাল রঙয়ের ছেঁড়া কাপড় রাখতেন। এর শুরুটা হয়েছিল ১৯৯৩ সালে লিডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাশেজ সিরিজে ব্যাট করার সময়। মূলত ঘাম মোছার জন্য কাপড়টা নিয়েছিলেন তিনি। ওই ইনিংসে ১৫৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ওয়াহ। তারপর থেকে ক্যারিয়ারের শেষ ১১ বছর পর্যন্ত লাল রঙয়ের কাপড়টি মাঠে নামলেই সঙ্গে রেখেছেন। এটাকে তিনি ‘সিকিউরিটি ব্লাঙ্কেট’ বলে ডাকতেন।

জয়সুরিয়ার ‘ছোঁয়াছুঁয়ি’

সনাৎ জয়সুরিয়া; Image Source: AFP

শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি সনাৎ জয়সুরিয়া ক্রিকেট নিয়ে কুসংস্কারে বিশ্বাসী ছিলেন। তার ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুত ছিল। তিনি মনে করতেন, ব্যাটিংয়ে নেমে বল খেলার আগে ব্যাটিং ইকুইপমেন্টের প্রতিটি অংশ ছুঁয়ে নেওয়া উচিত। আর সেটা তিনি করতেন প্রতি বলেই!

অর্থাৎ, প্রতি বল খেলার আগে জুতা, প্যাড, গ্লভস, চেস্ট গার্ড, হ্যান্ড গার্ড থেকে শুরু করে ব্যাটের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত প্রতিটি অংশ ছুঁয়ে নিতেন জয়সুরিয়া। এটাই নাকি তার সাফল্যের মূলমন্ত্র ছিল। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ করার আগপর্যন্ত তিনি মোট ২৫,৮৯৫টি বল মোকাবেলা করেছেন। প্রত্যেকবারই জয়িসুরিয়া তার ‘ছোঁয়াছুঁয়ি’র কাজটা ঠিকঠাক করে গেছেন।

শুধু তা-ই নয়, এই রীতি তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটেও বজায় রেখেছেন। তাই তিনি বলতেই পারেন, টেস্টে ৪০.০৭ ও ওয়ানডেতে ৩২.৩৬ গড় রানের সাথে ৪২ সেঞ্চুরি ও ৯৯ হাফসেঞ্চুরির পিছনে তার এই অদ্ভুত কুসংস্কারই দায়ী।     

লাসিথ মালিঙ্গার চুমু

উদযাপনে লাসিথ মালিঙ্গা; Image Source: Getty Image

শ্রীলঙ্কার বিধ্বংসী ফাস্ট বোলার লাসিথ মালিঙ্গা যেকোনো প্রতিপক্ষের জন্যই সাক্ষাত ত্রাস। কিন্তু অনেকেই জানেন না, বল করার সময় তিনিও একধরনের কুসংস্কার অনুশীলন করেন। আর এটা তিনি প্রতি বলেই করে থাকেন। যারা তার বোলিং দেখেছেন, তারাও ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছেন। সেটা হচ্ছে, রান আপ থেকে দৌড়ানোর আগে বলে চুমু খাওয়া। এটা আসলে তার অভ্যেস নয়, কুসংস্কার।

এ প্রসঙ্গে মালিঙ্গা একবার বলেছিলেন, “ক্রিকেট বলের প্রতি আমার সর্বোচ্চ সম্মান আছে। তাই আমি এমনটা করি।”

শচীন টেন্ডুলকারের ডিনার

শচীন টেন্ডুলকার; Image Source: BCCI

ভারতীয় ক্রিকেটের ঈশ্বর ও সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্রিকেট কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার ক্রিকেটের একটি নির্দিষ্ট ম্যাচে কুসংস্কারচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। ঘটনাটি ঘটেছিল ২০০৪ সালের জানুয়ারিতে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিডনি টেস্টে।

ম্যাচে নিজেদের প্রথম ইনিংসে অপরাজিত ২৪১ রানের ইনিংস খেলেন শচীন, যেটা তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংস ছিল।

মজার ব্যাপার হলো, শচীন মনে করেন এই ম্যাচে তার রাতের খাবার খাওয়ার পেছনেই নাকি সফলতার রহস্য জড়িয়ে ছিল। সেটা কী রকম? তিনি এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছিলেন, ২০০৪ সালের ওই সিডনি টেস্টের প্রথম তিন রাতে সিডনির একটি মালয়েশিয়ান রেস্টুরেন্টে একই টেবিলে বসে একই খাবার খেয়েছিলেন। ম্যাচে তখন রুটিনমাফিক সফলতার পথে এগোচ্ছিলেন শচীন। তাই খাবারের ব্যাপারে ও বসার জায়গা নিয়েও নিজের রুটিন ভাঙতে চাননি তিনি।

ক্রিকেটবিশ্বে ১০০টি সেঞ্চুরি হাঁকানো এ ক্রিকেটার বিশ্বাস করেন, খাবারের রুটিন না ভাঙার বিষয়টি তাকে সফলতা এনে দিয়েছে। 

‘ডাক’ খেয়ে ডাবল সেঞ্চুরি!

স্টিভেন স্মিথ; Image Source: AP

কেপটাউন টেস্টে বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারির জন্য ‘আপাতত’ জাতীয় দল থেকে নির্বাসিত অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথের এক অদ্ভুত কুসংস্কার ছিল। তিনি কোনো ম্যাচের আগে হাঁসের মাংস খেতেন না। কারণ ইংরেজিতে ‘ডাক’ এর আলাদা অর্থ আছে ক্রিকেটে। এখানে ডাক বলতে বোঝানো হয় শূন্য। অর্থাৎ, যেন শূন্য রানে আউট হতে না হয় সেই ভয়েই ম্যাচের আগে কখনই হাঁসের মাংস খেতেন না স্টিভ স্মিথ।

কিন্তু ২০১৫ সালে একবার ভুলে গেলেন সে কথা। ইংল্যান্ডের লর্ডসে অ্যাশেজ চলাকালীন সময়ে মনের ভুলে হাঁসের মাংস খেয়ে ফেললেন। কিন্তু ঘটনা ঘটলো উল্টো। শূন্য রানে আউট হওয়া তো দূরে থাক, ক্যারিয়ারের সেরা ২১৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ফেললেন! তারপর থেকে ম্যাচের আগে নিয়মিত হাঁসের মাংস খেতেন কি না, সে ব্যাপারে জানা যায়নি। তবে ২১৫ রানের রেকর্ড ভেঙে পার্থ টেস্টে গড়েছিলেন নতুন রেকর্ড। খেলেছিলেন ২৩৮ রানের ইনিংস।

জার্সি নাম্বার

যুবরাজ সিং (বাঁয়ে) ও মহেন্দ্র সিং ধোনি (ডানে); Image Source: Zimbio

 সংখ্যা ব্যাপারটা ক্রিকেটে অনেক পুরনো বিশ্বাস। যেমন ভারতীয় দুই তারকা ক্রিকেটার মহেন্দ্র সিং ধোনি কিংবা যুবরাজ সিং জার্সি নম্বরে নিজেদের ‘লাকি’ নম্বর রাখেন। এমন আরও অনেকে আছে।

আবার ধরা যাক ইংল্যান্ডের ফাস্ট বোলার স্টুয়ার্ট ব্রডের কথা। তার কাছে সবকিছুই হতে হবে ‘৩’। যখন ব্যাট করতে নামেন, তখন তিনবার উইকেটে দাঁড়িয়ে মার্কিংটা ঠিক করে নেন তিনি। যখন বোলিং করেন, তখনও তিনবার অনুশীলন বল করেন। যখন ব্যাটসম্যানকে বল করা শুরু করেন, তখনও তার মাথার মধ্যে থাকে ‘৩’।

আগে ডান পা নাকি বাম পা?

শচীন টেন্ডুলকার; Image Source: India Today

অনেক ব্যাটসম্যান আছেন, যারা নিয়ম করে বাঁ পা আগে মাঠে রাখেন, কেউ বা আবার ডান পা আগে মাটিতে রাখেন। এগুলো আসলে একধরনের কুসংস্কার। এমন হয়েছে যে, কোনো ম্যাচে ডান পা আগে রেখে বড় রানের ইনিংস খেলেছেন; ব্যস! ওটাকেই ধরে বসে থাকতে হয়।

আবার কোন পায়ে আগে প্যাড পরতে হবে সেটা নিয়েও রয়েছে কুসংস্কার। এক্ষেত্রেও ব্যাখ্যাটা একই রকম। এর মধ্যে শচীন টেন্ডুলকার ছিলেন অন্যতম। কিংবদন্তি এই সাবেক ভারতীয় ব্যাটসম্যান আগে ডান পায়ে প্যাড পরতেন। ঠিক একই কাজ করতেন শচীনেরই সতীর্থ ‘দ্য ওয়াল’ খ্যাত রাহুল দ্রাবিড়।

পকেটে পুরিয়া গুরুরও ছবি

উদযাপনে ‘বোলার’ সৌরভ গাঙ্গুলি; Image Source: Wisden India

ভারতীয় সাবেক অধিনায়ক ও দেশটির কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান সৌরভ গাঙ্গুলি ব্যাট করতে নামার সময় পকেটে নিজের গুরুর ছবি নিয়ে নামতেন।

মোজায় সমাধান

ম্যাথু ওয়েড; Image Source: Sporting News

অস্ট্রেলিয়ার উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ম্যাথু ওয়েড ব্যাট হাতে ফর্ম ফিরে পেতে এক হাস্যকর কাণ্ড করতেন। সতীর্থ ডেভিড হাসির কাছ থেকে নতুন একজোড়া মোজা ধার নিতেন। এটা ছিল তার কুসংস্কার। তিনি বিশ্বাস করতেন, হাসির দেওয়া একজোড়া নতুন মোজায় তাকে খারাপ ফর্ম থেকে বের করে আনতে পারে।

ওয়েড একবার বলেছিলেন, “এটা শুনতে খুব হাস্যকর মনে হতে পারে। আমি অফ ফর্মে থাকলেই ডেভিড হাসির কাছ থেকে নতুন মোজা ধার নেই। যত তাড়াতাড়ি আমি নতুন প্যাকেট থেকে এক জোড়া নতুন, চকচকে মোজা পায়, তত দ্রুত আমার মনে হয় আমি আমার ফর্ম ফিরে পাচ্ছি।”

ফিচার ইমেজ- AFP

Related Articles