Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ক্রিকেটের ইতিহাসে ভয়ংকর বোলিং জুটিদের উপাখ্যান

এক প্রান্ত থেকে একজন চাপে রাখবে, অপর প্রান্ত থেকে আরেকজন সেই সুবিধা আদায় করে চটজলদি প্রতিপক্ষের উইকেট শিকার করবেন। বোলিং জুটির বাড়তি সুবিধা এটাই; যেমনটা বর্তমানে ভারতের রবীন্দ্র জাদেজা এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিন, ইংল্যান্ডের জেমস অ্যান্ডারসন এবং স্টুয়ার্ট ব্রড কাজে লাগাচ্ছেন।

জাঁকজমকপূর্ণ আইপিএলের উপর নজর সবারই থাকে। আইপিএলে বাংলাদেশের বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের খেলা প্রথম আসরে তার দল সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ চ্যাম্পিয়ন হয়। এই সাফল্যের পিছনে অন্যতম কারণ ছিল, বোলিং জুটি। মুস্তাফিজুর রহমান একপাশ থেকে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের চাপে রাখতেন, সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে উইকেট শিকার করতেন ভুবনেশ্বর কুমার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে বিশ্বসেরা বোলিং জুটিদের নিয়েই আজকের এ লেখা।

গ্লেন ম্যাকগ্রা এবং শেন ওয়ার্ন

ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে কার্যকরী বোলিং জুটি গ্লেন ম্যাকগ্রা এবং শেন ওয়ার্নের। ম্যাকগ্রা ডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম বোলার, ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা পেসারদের একজন তিনি। লেগ স্পিনকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া শেন ওয়ার্নের সাথে জুটি বেঁধে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের কুপোকাত করতেন।

এক প্রান্ত থেকে ব্যাটসম্যানদের সবসময় চাপে রাখতেন শেন ওয়ার্ন ; Source – Cricket Australia

গ্লেন ম্যাকগ্রার উচ্চতা ছয় ফুট পাঁচ ইঞ্চি। উচ্চতার দিক দিয়ে ডেনিস লিলি, থম্পসনদের চেয়ে বেশি লম্বা। তবে তাদের চেয়ে কম গতিতে বল করতেন তিনি। ব্রেট লি, শোয়েব আখতারদের মতো গতির ঝড় তুলতে না পারলেও একনাগাড়ে ভালো জায়গায় বল করতে পারতেন। তার বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং এবং সুইংয়ের কাছে ধরাশায়ী হতো বিশ্বের নামকরা ব্যাটসম্যানরা। ১৯৯৩ সালের ১২ নভেম্বরে অভিষেক টেস্ট ম্যাচ খেলেন ম্যাকগ্রা। ২০০৭ সালের দোসরা জানুয়ারি পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১২৪টি টেস্ট ম্যাচে প্রতিনিধিত্ব করে ৫৬৩টি উইকেট শিকার করে তিনি।

ম্যাচের শুরুতে ব্রেক থ্রু-টা এনে দিতেন গ্লেন ম্যাকগ্রাই ; Source – Getty Images

লেগ স্পিনকে ময়লার স্তূপ থেকে উঠিয়ে শিল্পে পরিণত করেছেন শেন ওয়ার্ন। লেগ স্পিনাররা বরাবরই ফটাফট উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। আবার তাদের একটি বাজে স্পেলের কারণে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ার আশঙ্কাও থাকে। শেন ওয়ার্নের ক্ষেত্রে এমনটা খুব কম হতো। তিনি উইকেট শিকার করতে না পারলেও লম্বা সময় ধরে ব্যাটসম্যানদের চাপে রাখতে পারতেন। তাকে শাসন করে ব্যাট করতে পারা ব্যাটসম্যানদের সংখ্যা খুব কম-ই ছিল। আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটে তিনি যাত্রা শুরু করেন ১৯৯২ সালের দোসরা জানুয়ারি, ইতি টানেন ২০০৭ সালের দোসরা জানুয়ারিতেই। ১৫ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তিনি ১৪৫টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ৭০৮টি উইকেট শিকার করেছিলেন। মুরালিধরনের পর টেস্ট ক্রিকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী বোলার তিনি।

ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে কার্যকরী বোলিং জুটি, গ্লেন ম্যাকগ্রা ও শেন ওয়ার্নের ; Source – Getty Images

গ্লেন ম্যাকগ্রা এবং শেন ওয়ার্ন একসাথে প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলেন গ্লেন ম্যাকগ্রার অভিষেক ম্যাচের মধ্য দিয়ে। এরপর দুজনে একসাথে ১০৪টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন। যার মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ৭১টি টেস্টে জয়লাভ করেছে। দুজনে সম্মিলিতভাবে ১০৪ টেস্টে ১,০০১টি উইকেট শিকার করেছিলেন। শেন ওয়ার্ন উইকেট শিকারের দিক দিয়ে ম্যাকগ্রার চেয়ে এগিয়ে থাকলেও, ম্যাকগ্রার চেয়ে উইকেট প্রতি বেশি রান খরচ করেছিলেন। গ্লেন ম্যাকগ্রা ২১.৩৮ বোলিং গড়ে ৪৮৮ উইকেট এবং শেন ওয়ার্ন ২৪.৮৭ বোলিং গড়ে ৫১৩ উইকেট শিকার করেছেন।

স্যার কার্টলি অ্যামব্রোস এবং কোর্টনি ওয়ালশ

দুজনেই ডানহাতি ফাস্ট বোলার। একজন পরিপূর্ণ ফাস্ট বোলারের মধ্যে যে যে গুণ থাকা প্রয়োজন, সেসব গুণ তাদের মধ্যে ছিল। লম্বাতেও দুজন ঊনিশ-বিশ। অ্যামব্রোস ছয় ফুট সাত ইঞ্চি এবং ওয়ালস ছয় ফুট ছয় ইঞ্চি। ভয়ংকর বোলিং জুটির উদাহরণ দিতে গেলে তাদের নাম উপরের দিকে থাকবে। গতি, বাউন্স এবং সুইং ব্যাটসম্যানদের নাজেহাল করতেন তারা।

ওয়ালশ সেরা নাকি অ্যামব্রোস! এটা নিয়ে কম যুক্তিতর্ক হয়নি। আলাদা আলাদাভাবে কে সেরা? এই প্রশ্নের উত্তর যা-ই হোক না কেন, দুজন একসাথে ভয়ংকর, সেটা কোনো হিসাব না কষেই বলা সম্ভব। স্যার কার্টলি অ্যামব্রোসের টেস্ট অভিষেক ঘটে ১৯৮৮ সালের দোসরা এপ্রিল। ঐ ম্যাচ থেকে অ্যামব্রোস-ওয়ালশ জুটির যাত্রা শুরু হয়। অ্যামব্রোস নিজের শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেন ২০০০ সালের ৩১শে আগস্ট। একযুগের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ৯৮টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ২০.৯৯ বোলিং গড়ে ৪০৫ উইকেট শিকার করেছেন তিনি।

কোর্টনি ওয়ালশ ; Source – A Jamaica Experience

কার্টলি অ্যামব্রোসের অভিষেকের প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে, ১৯৮৪ সালের ৯ই নভেম্বর কোর্টনি ওয়ালশের টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। অ্যামব্রোসের অভিষেকের আগে ১৯৮৭ সাল তিনি উইজডেন বর্ষসেরা ক্রিকেটারও নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০১ সালের ১৯শে এপ্রিল টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানান ওয়ালশ। দেড় যুগের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ১৩২টি টেস্ট খেলে ২৪.৪৪ বোলিং গড়ে ৫১৯ উইকেট শিকার করেছেন কোর্টনি ওয়ালশ।

নব্বইয়ের দশকের ভয়ংকর বোলিং জুটি অ্যামব্রোস এবং ওয়ালশ ; Source – Wisden India

কার্টলি অ্যামব্রোস এবং কোর্টনি ওয়ালশ একসাথে ৯৫টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। ৯৫টি টেস্টে তারা ৭৬২ উইকেট শিকার করেছেন, যার মধ্যে অ্যামব্রোস ২১.১১ বোলিং গড়ে ৩৮৯ উইকেট এবং ওয়ালশ ২৪.৩০ বোলিং গড়ে ৩৭৩ উইকেট শিকার করেছেন।

সিডনি বার্নস এবং ফ্রাঙ্ক ফস্টার

ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা বোলার হিসাবে সিডনি বার্নসকে গণ্য করা হয়। বার্নস তার ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ যখন খেলেন, তখন তার বয়স ৩৪ বৎসর। প্রায় ৪৭ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি আন্তর্জাতিক টেস্ট ম্যাচ খেলেন। নিজের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজে মাত্র ১০.৯৩ বোলিং গড়ে ৪৯ উইকেট শিকার করেছিলেন। যা এখন পর্যন্ত বিশ্বরেকর্ড হিসাবে অক্ষত রয়েছে। ঐ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে তিনি ১৭ উইকেট শিকার করেছিলেন, যা তৎকালীন এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকারের বিশ্বরেকর্ড ছিল।

সিডনি বার্নস ; Source – Getty Images

সিডনি বার্নস ডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম বোলার ছিলেন। তিনি লেগব্রেকের মতো বল ঘুরাতে পারতেন, সেই সাথে অফ কাটারেও পারদর্শী ছিলেন তিনি। আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটে মাত্র ২৭ ম্যাচে ১৬.৪৩ বোলিং গড়ে ১৮৯ উইকেট শিকার করেছিলেন। এই ২৭ ম্যাচের মধ্যে সাতবার ম্যাচে দশ উইকেট এবং ২৪বার ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন। সিডনি বার্নস প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলেছেন ৬৩ বৎসর বয়স পর্যন্ত। প্রায় তিন যুগের প্রথম শ্রেণীর ক্যারিয়ারে ১৩৩ ম্যাচ খেলে ৭১৯ উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি।

সিডনি বার্নসের বোলিং অ্যাকশন ; Source – PA Photos

১৯১১-১২ মৌসুমে সিডনি বার্নসের সাথে বোলিং জুটি বেঁধে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের নাস্তানাবুদ করেন ওয়ারউইকশায়ারের বাঁহাতি পেসার ফ্রাঙ্ক ফস্টার। ফ্রাঙ্ক ফস্টার বল অফ স্ট্যাম্পের বাহিরে পিচ করিয়ে ব্যাটসম্যানদের পায়ের ফাঁক দিয়ে স্ট্যাম্প ভাঙতেন, অথবা পায়ে আঘাত হেনে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলতেন। সিডনি বার্নস এবং ফ্রাঙ্ক ফস্টার ১৯১১-১২ মৌসুমের অ্যাশেজে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে নিজেদের মধ্যে ৬৬ উইকেট ভাগাভাগি করে নেন। বার্নস ৩৪ উইকেট এবং ফস্টার ৩২ উইকেট শিকার করেন ঐ অ্যাশেজে। এরপর আরও ছয়টি টেস্ট একসাথে খেলেন দুজন। সেখানে বার্নস ৩৯ উইকেট এবং ফস্টার ১৩ উইকেট শিকার করেন। তারা দুজন ১১ টেস্টে ১১৮ উইকেট শিকার করেছিলেন।

হারিয়ে যাওয়া প্রতিভা ফ্রাঙ্ক ফস্টার ; Source – CricketCountry.com

ফ্রাঙ্ক ফস্টার মাত্র এক বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে পেরেছিলেন। মাত্র ২৫ বছর বয়সে তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের দুর্ভাগ্যজনকভাবে ইতি ঘটে। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার কারণে এই অলরাউন্ডারের সম্ভাবনাময় ক্রিকেট ক্যারিয়ার থেমে যায়। মাত্র ছয় বছরের ক্যারিয়ারে তিনি ১৫৯টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ট্রিপল সেঞ্চুরি সহ ৬,৫৪৮ রান করার পাশাপাশি ৭১৭ উইকেট শিকার করেছিলেন।

ভাগওয়াথ চন্দ্রশেখর এবং বিষাণ সিং বেদী

১৯৬৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিষাণ বেদীর টেস্ট অভিষেক ঘটে। ঐ ম্যাচ দিয়ে যাত্রা শুরু হয় চন্দ্রশেখর এবং বেদীর স্পিন জুটির। চন্দ্রশেখর ছিলেন লেগ স্পিনার এবং বেদী স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলার।

শারীরিক প্রতিবন্ধকতাও চন্দ্রশেখরকে আটকে রাখতে পারেনি ; Source – Getty Images

সে সময় চন্দ্রশেখরের হাত ধরে বিদেশের মাটিতে সাফল্যের মুখ দেখেছিল ভারত। বিদেশের মাটিতে জয় পাওয়া পাঁচটি ম্যাচে চন্দ্রশেখর ৪২টি উইকেট শিকার করেছিলেন। তার গুগলির কাছে ধরাশায়ী হতো উপমহাদেশের বাহিরের ব্যাটসম্যানরা। বিষাণ বেদী ব্যাটসম্যানদের প্রলুব্ধ করতেন তার বল খেলার জন্য। বাতাসে ভাসিয়ে খুব কম গতিতে বল নিক্ষেপ করতেন তিনি। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ৩৭০ ম্যাচে ১,৫৬০ উইকেট নিয়ে ভারতীয় বোলাদের মধ্যে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকারের রেকর্ড তার দখলে।

প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের রেকর্ড এখনও বেদীর দখলে ; Source – Espn Cricinfo

একপ্রান্ত থেকে চন্দ্রশেখরের লেগ স্পিন, অপর প্রান্তে বেদীর স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে ব্যাটসম্যানদের বেশ অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলত। তারা দুজন একসাথে ৪২টি টেস্ট খেলেছেন, এই ৪২টি টেস্টে তারা ৩৬৮টি উইকেট শিকার করেছেন। কাকতালীয়ভাবে দুজনেই ১৮৪টি করে উইকেট শিকার করেছেন।

ম্যালকম মার্শাল এবং মাইকেল হোল্ডিং

গত শতকে ক্রিকেট বিশ্বে রাজত্ব করেছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ, যার সিংহভাগ কৃতিত্ব তাদের পেস অ্যাটাকের। অ্যামব্রোস, ওয়ালশের কীর্তি উপরে উল্লেখ করা আছেই। এছাড়া আশির দশকে মাইকেল হোল্ডিং, ম্যালকম মার্শাল, কলিন ক্রপ্ট, অ্যান্ডি রবার্টস এবং জোয়েল গার্নাররাও ব্যাটসম্যানদের উপর আধিপত্য দেখিয়ে গিয়েছেন।

ভাঙা হাত নিয়েও প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দেওয়ার কীর্তি রয়েছে মার্শালের ; Source – Patrick Eagar

আশির দশকে ম্যালকম মার্শাল এবং মাইকেল হোল্ডিংয়ের বোলিং জুটি বেশ কার্যকরী ছিল। হোল্ডিংয়ের টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেকে ঘটে ১৯৭৫ সালে এবং মার্শালের ১৯৭৮ সালে। দুজনে একসাথে প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলেন ১৯৮০ সালে, মাইকেল হোল্ডিং ১৯৮৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালে তাদের জুটির সমাপ্তি ঘটে।

মাইকেল হোল্ডিংয়ের বোলিং অ্যাকশন ; Source – Getty Images

১৯৮০-৮৭ সাল পর্যন্ত তারা একসাথে ৩৩ ম্যাচ খেলে ২৯১ উইকেট শিকার করেন। মাইকেল হোল্ডিংয়ের চেয়ে ম্যালকম মার্শাল বেশি ভয়ংকর ছিল ব্যাটসম্যানদের কাছে। তবে মাইকেল হোল্ডিংও স্ট্যাম্প-টু-স্ট্যাম্প বল করে ব্যাটসম্যানদের চাপে রাখতেন। হোল্ডিং ৬০ ম্যাচের আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্যারিয়ারে ২৪৯ উইকেট শিকার করেছিলেন। ইনিংসে পাঁচ উইকেট ১৩ বার এবং ম্যাচে দশ উইকেট দু’বার পেয়েছিলেন। অন্যদিকে ম্যালকম মার্শালের ক্যারিয়ার আরও বেশি সমৃদ্ধ। তিনি ৮১টি টেস্টে ৩৭৬ উইকেট শিকার করেছিলেন। ইনিংসে পাঁচ উইকেট ২২বার এবং ম্যাচে ১০ উইকেট চারবার পেয়েছিলেন।

ম্যালকম মার্শালের বোলিং অ্যাকশন ; Source – Espn Cricinfo

তাদের মধ্যকার ৩৩ ম্যাচের মধ্যে ম্যালকম মার্শাল ২০.৭৭ বোলিং গড়ে ১৬২টি উইকেট এবং মাইকেল হোল্ডিং ২৫.২৭ বোলিং গড়ে ১২৯টি উইকেট শিকার করেছিলেন।

ওয়াসিম আকরাম এবং ওয়াকার ইউনুস

সুলতান অফ সুইং ওয়াসিম আকরাম ; Source – Getty Images

বিশ্বসেরা পেসারের নাম বলতে বললে অনেকেই দোটানায় পড়ে যাবে। কিন্তু যদি বলা হয়, বিশ্বসেরা বাঁহাতি পেসারের নাম বলতে, তাহলে নির্দ্বিধায় সবাই ওয়াসিম আকরামের নাম বলবে। তার রিভার্স সুইং, আউট সুইং আর বিধ্বংসী ইয়র্কারে ব্যাটসম্যানরা নাস্তানাবুদ হতো।

অন্যদিকে ওয়াকার ইউনুস স্ট্যাম্প-টু-স্ট্যাম্প বল করতে পছন্দ করতেন। দুজনেরই প্রধান অস্ত্র ছিল সুইং। যেকোনো কন্ডিশনে তাদের বিপক্ষে ব্যাট করা কঠিন ছিল। অন্যসব বোলিং জুটিদের থেকে তারা ভিন্নধর্মী। ওপেনিংয়ে বল করে প্রতিপক্ষের ওপেনারদের উইকেট শিকার করতেন। ১৯৮৯ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত তারা একসাথে ৬১টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ৫৫৯ উইকেট শিকার করেছেন, যার মধ্যে ৫৬ ম্যাচে তারা বোলিং উদ্বোধন করে ২২.৩৯ বোলিং গড়ে ৪৭৬ উইকেট শিকার করেছেন।

ওয়াসিম আকরাম (বামে) এবং ওয়াকার ইউনুস ; Source – Getty Images

নিজেদের মধ্যে খেলা ৬১টি টেস্টের মধ্যে ওয়াসিম আকরাম ২১.৩৩ বোলিং গড়ে ২৮২ উইকেট শিকার করেছিলেন। ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করেছিলেন ২০বার এবং ম্যাচে ১০ উইকেট শিকার করেছিলেন চারবার। ওয়াকার ইউনুসও খুব একটা পিছিয়ে নেই, তিনি ২২.৯২ বোলিং গড়ে ২৭৭ উইকেট শিকার করেছিলেন। ইনিংসে ৫ উইকেট সতেরবার এবং ম্যাচে ১০ উইকেট তিনবার শিকার করেছিলেন।

মুত্তিয়া মুরালিধরন এবং চামিন্দা ভাস

উইকেট শিকারের দিক দিয়ে সবচেয়ে সফল বোলিং জুটিদের তালিকায় গ্লেন ম্যাকগ্রা এবং শেন ওয়ার্নের পরেই আছেন মুরালি এবং ভাস। তবে দুজনের উইকেট শিকারের ব্যবধান চোখে পড়ার মতো। তারা দুজনে একসাথে ৯৫টি টেস্ট খেলে ৮৯৫টি উইকেট শিকার করেছিলেন। এর মধ্যে মুত্তিয়া মুরালিধরনের দখলে ৫৮৬ উইকেট এবং চামিন্দা ভাসের ঝুলিতে জমা পড়েছে বাকি ৩০৯ উইকেট।

মুত্তিয়া মুরালিধরন এবং চামিন্দা ভাস ; Source – AFP

বাঁহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম বোলার চামিন্দা ভাস ঠিকই তার কাজ শতভাগ পালন করতেন। উপমহাদেশের স্পিন সহায়ক উইকেটে একপ্রান্ত থেকে লাগাতার ভালো জায়গায় বল করে ব্যাটসম্যানদের চাপে রাখতেন তিনি। আর মুরালিধরন তার ঘূর্ণিতে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের সাজঘরে ফেরত পাঠাতেন। ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার উন্নতির পিছনে তাদের অবদান অপরিসীম।

ফিচার ইমেজ- Cricket Australia

Related Articles