Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কেনিয়ার সেমিফাইনালে খেলা: নিজেদের কৃতিত্ব, নাকি সৌভাগ্যের ফসল?

বিশ্বকাপে বহুবার নানা ধরনের চমক দিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে আন্ডারডগ দলগুলো। তবে এতসব চমকের মাঝেও দুইটা ঘটনার মাহাত্ম্য বাকি সবগুলোর চেয়ে আলাদা। একটি হচ্ছে ১৯৯৬ সালে সবাইকে চমকে দিয়ে শ্রীলঙ্কার বিশ্বজয়, আরেকটি ২০০৩ বিশ্বকাপে কেনিয়ার সেমিফাইনালে খেলা। প্রথমটি নিয়ে বহু গবেষণা হয়েছে; সেই বিশ্বজয় যে মোটেও ফ্লুক নয়, বরং একটা অসাধারণ দল পাওয়ার কারণেই সম্ভব হয়েছে, সেটা পরবর্তীতে শ্রীলঙ্কার ধারাবাহিক সাফল্যতেই প্রমাণিত হয়ে গেছে। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে দ্বিতীয় ঘটনাটি নিয়ে; ২০০৩ বিশ্বকাপে কেনিয়া যে সেমিফাইনাল খেলেছিলো, সেবার কি তারা সত্যিই ওই আসরের সেরা চার দলের একটি হওয়ার যোগ্য ছিল? নাকি পুরোপুরি ভাগ্যের সহায়তা পেয়েই তারা এতদূর চলে গিয়েছিল?

এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে ফিরে যেতে হবে ২০০৩ সালে। সেবার দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে বিশ্বকাপের সহ-আয়োজকের দায়িত্ব পেয়েছিলো জিম্বাবুয়ে ও কেনিয়া। সেই আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হয় কেনিয়া। পচেফস্ট্রুমে একপেশে সেই ম্যাচে প্রোটিয়াদের কাছে পাত্তাই পায়নি তারা, ম্যাচটি তারা হারে দশ উইকেটে

নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে কেপ টাউনে কানাডার মুখোমুখি হয় তারা। শক্তির বিচারে এই ম্যাচে কেনিয়া এগিয়ে থাকলেও নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশকে হারানোয় কানাডাও জয়ের ব্যাপারে বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিল। টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেম টমাস ওদোয়োর দারুণ বোলিংয়ে ১৯৭ রানেই গুটিয়ে যায় কানাডা, দশ ওভার বল করে মাত্র ২৮ রান দিয়ে ওদোয়ো তুলে নেন চার উইকেট। জবাব দিতে নেমে রবি শাহ’র ৬১ রান এবং অধিনায়ক স্টিভ টিকোলো’র ৪১ রানে ভর করে চার উইকেট হাতে রেখেই সেই ম্যাচ জিতে নেয় কেনিয়া। এই ম্যাচ জয়ের মাধ্যমেই আট বছর পর বিশ্বকাপে জয়ের দেখা পায় তারা। 

নিউজিল্যান্ডের কাছে ওয়াকওভার পেয়েই কেনিয়ার ভাগ্যের দরজাটা খুলে যায়; Image Source: Khelpanda

কেনিয়ার ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় তাদের তৃতীয় ম্যাচে। সেই ম্যাচে নাইরোবিতে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল তাদের, কিন্তু নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে নাইরোবি যেতে অস্বীকৃতি জানায় ব্ল্যাক ক্যাপসরা। শেষ পর্যন্ত টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী ওয়াকওভার পেয়ে যায় কেনিয়া, ফলে মাঠে না নেমেই চার পয়েন্ট পেয়ে যায় দলটি। কেনিয়ার এই চার পয়েন্ট প্রাপ্তি গ্রুপ বি এর পুরো সমীকরণ পাল্টে দেয়। নতুন সমীকরণ অনুযায়ী আর মাত্র দুইটা জয় পেলেই সুপার সিক্সের টিকিট পেয়ে যাবে তারা। সেই আসরে বাংলাদেশের যা হতশ্রী ফর্ম চলছিল, তাতে তাদের বিপক্ষে কেনিয়ার জয়টাই প্রত্যাশিত, সাথে দরকার ছিল শ্রীলঙ্কা অথবা উইন্ডিজ – যেকোনো একটা বড় দলকে হারানো।

আর সেই বড় দল হিসেবে লঙ্কানদেরই বেছে নেয় তারা। নাইরোবিতে টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে কেনেডি ওটিয়েনোর ৮৮ বলে ৬০ রান এবং বাকি ব্যাটসম্যানদের ছোট ছোট অবদানে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেটে ২১০ রান সংগ্রহ করে কেনিয়া। মাপকাঠির বিচারে ২১১ রান লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে খুব একটা বড় ছিল না। কিন্তু নাইরোবির স্লো পিচ, সাথে স্বাগতিক হওয়ার সুবিধা… সব মিলিয়ে এই স্বল্প পুঁজিই কেনিয়াকে লড়াই করার স্বপ্ন দেখাচ্ছিল। 

লঙ্কানদের বিপক্ষে সেই ঐতিহাসিক জয়ের পর কেনিয়ার উল্লাস; Image Source: Cricbuzz

জবাব দিতে নেমে ৩৯ রানের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারিয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে যায় শ্রীলঙ্কা। সেখান থেকে তাদেরকে তুলে আনার চেষ্টা করেন দুই অভিজ্ঞ সেনা, হাসান তিলকারত্নে ও অরবিন্দ ডি সিলভা। কিন্তু তাদের সব প্রতিরোধ ভেঙে দেন কেনিয়ার লেগ স্পিনার কলিন্স ওবুইয়া। ম্যাচসেরা এই বোলার মাত্র ২৪ রানে ৫ উইকেট তুলে নিলে ১৫৭ রানেই অলআউট হয়ে যায় লঙ্কানরা। মহাগুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচ কেনিয়া জিতে নেয় ৫৩ রানে

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই জয়ের পর আত্মবিশ্বাসী কেনিয়া বাংলাদেশকে হারাবে সেই সম্ভাবনা আরো বেশি বেড়ে যায়। সেই আত্মবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে জোহানেসবার্গে বাংলাদেশের বিপক্ষে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে মরিস ওদুম্বের দারুণ এক ফিফটিতে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৭ উইকেটে ২১৭ রান সংগ্রহ করে কেনিয়া। শুধু ব্যাট নয়, সেদিন বল হাতেও বাংলাদেশকে চেপে ধরেন ওদুম্বে, মাত্র ৩৮ রানে চার উইকেট তুলে নিয়ে কেনিয়ার ৩২ রানের জয়ে বড় অবদান রাখেন এই অলরাউন্ডার। এই জয়ের ফলে কেনিয়ার সুপার সিক্সে খেলা নিশ্চিত হয়ে যায়, নিজেদের শেষ ম্যাচে উইন্ডিজের কাছে ১৪২ রানের বড় ব্যবধানের হারও সেই সুপার সিক্স খেলায় কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারেনি। 

বাংলাদেশের বিপক্ষে ওই জয় কেনিয়াকে সুপার সিক্সের টিকিট এনে দেয়; Image Source: espncricinfo.com

অর্থাৎ সবমিলিয়ে দেখা যাচ্ছে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওই ম্যাচে ওয়াকওভার পাওয়ার ফলেই কেনিয়ার সুপার সিক্সে খেলার পথ সৃষ্টি হয়েছিলো, সেই ম্যাচ যদি মাঠে গড়াতো তাহলে সম্ভাবনার বিচারে কিউইদের জেতার সম্ভাবনাই বেশি ছিল। আর সেটা হলে কেনিয়ার আর সুপার সিক্সে খেলা হতো না। তবে ভাগ্য শুধুমাত্র এই একটি ম্যাচের মাধ্যমে কেনিয়াকে সাহায্য করেছে সেটা ভাবা ভুল হবে। আরো একটি ম্যাচের ফলাফল কেনিয়ার এই সুপার সিক্সে খেলার পিছনে বড় ভূমিকা রেখেছিলো।

সেই আসরে বাংলাদেশ সর্বসাকুল্যে দুই পয়েন্ট পেয়েছিলো আর সেই দুই পয়েন্ট পাওয়ার মূল কারণ ছিল উইন্ডিজদের সাথে টাইগারদের ম্যাচটি পরিত্যক্ত হওয়া। ওই ম্যাচে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেটে ২৪৪ রান সংগ্রহ করে ক্যারিবীয়রা। ওই আসরে বাংলাদেশের যা পারফরম্যান্স ছিল, তাতে ওই সংগ্রহই উইন্ডিজদের জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল। বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুটা দেখেও ঠিক সেরকমই মনে হচ্ছিল, মাত্র ৩২ রান তুলতেই ২ উইকেট খুইয়ে বসে টাইগাররা। কিন্তু বেরসিক বৃষ্টির কারণে খেলা পরিত্যক্ত হওয়ায় নিশ্চিত জয় থেকে বঞ্চিত হয় ক্যারিবিয়ানরা, ফলে সম্ভাব্য চার পয়েন্টের বদলে তারা এই ম্যাচ থেকে পায় দুই পয়েন্ট। 

গ্রুপপর্বের সব ম্যাচ শেষে ‘গ্রুপ বি’ পয়েন্ট টেবিল; Image Source: Wikipidea

উইন্ডিজের এই দুই পয়েন্ট হারানোও কেনিয়ার সুপার সিক্সে উঠার পিছনে বড় অবদান রাখে।

উপরে দেওয়া ছবিটি লক্ষ্য করুন। গ্রুপপর্বের ম্যাচশেষে দেখা যাচ্ছে, শ্রীলঙ্কা ১৮ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে, আর সমান ১৬ পয়েন্ট নিয়ে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে নিউজিল্যান্ড ও কেনিয়া। উইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকা দুই দলের সংগ্রহই ১৪ পয়েন্ট। এখন বাংলাদেশের বিপক্ষে ওই ম্যাচটা পরিত্যক্ত হওয়ার বদলে যদি উইন্ডিজ জিতে যেত, সেক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ড ও কেনিয়ার মতো তাদের সংগ্রহও ১৬ পয়েন্টে দাঁড়াতো। হেড-টু-হেডেও এই তিন দল সমান অবস্থায় থাকায় সেক্ষেত্রে নেট রানরেটের মাধ্যমেই সুপার সিক্সে কারা যাবে, সেটা নির্ধারিত হতো। ছবিতে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে, উইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ডের তুলনায় নেট রানরেটে ঢের পিছিয়ে ছিল কেনিয়া।

অর্থাৎ, নিউজিল্যান্ডের ওই ওয়াকওভার, সাথে উইন্ডিজের এই পোড়া কপাল – দুইটা ঘটনা একসাথে না ঘটলে কেনিয়ার সুপার সিক্সে খেলা সম্ভবই হতো না।

এখন এই ভাগ্যের ছোঁয়ায় কেনিয়ার সুপার সিক্সে খেলার ঘটনাটা তো বোধগম্য হলো, কিন্তু সুপার সিক্স থেকে সেমিফাইনালে তারা কীভাবে পৌঁছাল?

আসলে গ্রুপপর্বে কেনিয়া যে ভাগ্যের ছোঁয়া পেয়েছিলো, তার মাধ্যমে তাদের সুপার সিক্স তো বটেই, সেখান থেকে সেমিফাইনালে খেলাটাও এক প্রকার নিশ্চিত হয়ে গেছিল! সেই আসরের নিয়ম অনুযায়ী, সুপার সিক্সে উত্তীর্ণ প্রতিটি দল অপর গ্রুপ থেকে উত্তীর্ণ তিনটি দলের মুখোমুখি হবে। তবে গ্রুপপর্বের ম্যাচগুলোর ফলাফলের উপর ভিত্তি করে সুপারে সিক্স শুরু হওয়ার আগেই প্রতিটি দলের ঝুলিতে বেশ কিছু পয়েন্ট দিয়ে দেওয়া হয়। নিজ গ্রুপ থেকে যে দুই দল কোয়ালিফাই করেছে, তাদের বিপক্ষে গ্রুপপর্বে জয় পেলে দেওয়া হয় চার পয়েন্ট। আর কোয়ালিফাই করতে পারেনি, এমন দলের বিপক্ষে গ্রুপপর্বে জয়ের জন্য দেওয়া হয় এক পয়েন্ট।

ভাগ্যের কী লীলা, এই হিসাবের মারপ্যাঁচও কেনিয়ার পক্ষেই গেল! গ্রুপ বি থেকে উত্তীর্ণ শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ড, দুই দলের বিপক্ষেই গ্রুপপর্বে জয় পাওয়ায় কেনিয়ার ঝুলিতে যোগ হয় আট পয়েন্ট। সাথে বাংলাদেশ ও কানাডাকে হারানোর জন্য দুই পয়েন্ট, মোট দশ পয়েন্ট নিয়ে সুপার সিক্স শুরু করে কেনিয়া। সেখানে গ্রুপপর্বে কেনিয়ার চেয়ে ২ পয়েন্ট বেশি থাকা সত্ত্বেও শ্রীলঙ্কা সুপার সিক্স শুরু করে ৭.৫ পয়েন্ট নিয়ে, আর কেনিয়ার সমান পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপপর্ব শেষ করা নিউজিল্যান্ড সুপার সিক্স শুরু করে মাত্র চার পয়েন্ট নিয়ে! 

সুপার সিক্সে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ছয় উইকেটের হার দিয়ে মিশন শুরু করে কেনিয়া। পরের ম্যাচে কেনিয়ার প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে। দল হিসেবে তখনকার জিম্বাবুয়ে বেশ শক্তিশালী হলেও সে সময়ে দেশটির রাষ্ট্রপতি রবার্ট মুগাবের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে দলটিতে তখন বেশ অস্থিরতা বিরাজ করছিল। জিম্বাবুয়ের এই টালমাটাল অবস্থার সুযোগটা ভালোভাবেই নিয়েছিল কেনিয়া, আগের ১২ দেখায় যাদের বিরুদ্ধে একবারও তারা জয় পায়নি, তাদেরকেই মাত্র ১৩৩ রানে গুটিয়ে দিয়ে কেনিয়া ম্যাচটা জিতে নেয় সাত উইকেটে! এই ম্যাচ জয়ের ফলে কেনিয়ার সেমিফাইনাল খেলাটা নিশ্চিত হয়ে যায়। নিয়মরক্ষার শেষ ম্যাচে আসিফ করিমের অনবদ্য এক বোলিং স্পেল সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়ার কাছে পাঁচ উইকেটে হারে কেনিয়া। 

জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিতের পর মরিস ওদুম্বে; Image Source: Cricbuzz

তবে সুপার সিক্সের বাকি ম্যাচগুলোতে যা ফলাফল এসেছিলো, তাতে দেখা যায়, কেনিয়ার প্রাপ্ত আগের দশ পয়েন্টই তাদের সেমিফাইনালে নিয়ে যেতে যথেষ্ট ছিল। জিম্বাবুয়ের সাথে জয়ের চার পয়েন্ট নিয়ে মোট ১৪ পয়েন্ট পেয়ে সুপার সিক্সের টেবিলে তৃতীয় স্থানে থাকে কেনিয়া। সেমিফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হয় কেনিয়া, একপেশে সেই সেমিফাইনালে তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হয়নি। সৌরভ গাঙ্গুলির দারুণ এক সেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৪ উইকেটে ২৭০ রান সংগ্রহ করে ভারত। জবাব দিতে নেমে শুরু থেকেই উইকেট হারাতে থাকা কেনিয়া জয়ের কোনো সম্ভাবনাই তৈরি করতে পারেনি, ১৭৯ রানে অলআউট হয়ে ম্যাচটি তারা হারে ৯১ রানে। এই হারের মধ্য দিয়ে কেনিয়ার এক অবিশ্বাস্য বিশ্বকাপ মিশনের সমাপ্তি ঘটে। 

সব মিলিয়ে এই ছিল কেনিয়ার সেমিফাইনাল খেলার আদ্যোপান্ত।

একটা ব্যাপার কিন্তু পরিষ্কার, গ্রুপপর্বের ওই ভাগ্যের ছোঁয়া ছাড়া কেনিয়ার পক্ষে এই সেমিফাইনাল খেলা তো বটেই, সুপার সিক্স খেলাও অসম্ভব ছিল। তাছাড়া, পুরো টুর্নামেন্টে কেনিয়ার পারফরম্যান্স ছক যা ছিল, সেটাও তাদের সেমিফাইনালে খেলাটাকে যৌক্তিক প্রমাণ করতে পারে না। পুরো আসরে বড় দল বলতে একমাত্র শ্রীলঙ্কাকেই হারাতে পেরেছিল তারা। আর এমন জয় তো আয়ারল্যান্ড ২০১১ কিংবা ২০১৫ বিশ্বকাপেও পেয়েছিল। অথচ ওই এক জয়ের কারণে সেমিফাইনাল তো বহু দূর, কোয়ার্টার ফাইনালের টিকেটও আইরিশদের কপালে জোটেনি।

জয়-পরাজয়ের হিসাব বাদ দিলেও বেশ কিছু ম্যাচে কেনিয়া এত বাজেভাবে হেরেছিল, যেটা একটা সেমিফাইনালিস্ট দলের পাশে সত্যিই বেমানান। যে দক্ষিণ আফ্রিকা ও উইন্ডিজকে টপকে কেনিয়া সুপার সিক্সের টিকিট পেয়েছিল, সেই দুই দলের কাছে তো গ্রুপপর্বে পাত্তাই পায়নি তারা। তাছাড়া এই বিশ্বকাপের সাফল্যের সূত্র ধরে কেনিয়াকে শারজাহ কাপের মতো মর্যাদাপূর্ণ আসরে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু সেখানেও প্রতিটি ম্যাচ বাজেভাবে হেরে তাদের সেমিফাইনালে খেলাটা যে ফ্লুক ছিল, সেটারই প্রমাণ তারা দিয়ে গেছে।

অজিদের বিপক্ষে ৮ ওভার বল করে মাত্র ৭ রানে ৩ উইকেট নেন আসিফ করিম; Image Source: espncricinfo

কেনিয়ার এই সেমিফাইনাল খেলা দেখে খালি চোখে অনেকেই ভেবেছিল, দলটি ভবিষ্যতে বুঝি আরো সাফল্য উপহার দিবে। ২০০১ সালে কেন কেনিয়াকে টপকে বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছিল, সেটা নিয়েও তখন সমালোচকরা প্রশ্ন তুলেছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সাফল্যের সাথে একটা দেশের ক্রিকেট ঐতিহ্য, দর্শকপ্রিয়তা, ঘরোয়া ক্রিকেট কাঠামো… এসব বিবেচনা করেই সে সময়ে কেনিয়ার আগে বাংলাদেশকে টেস্ট স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছিল।

আইসিসির সেই সিদ্ধান্ত আজ যথার্থ বলে প্রমাণিত হয়ে গেছে; বাংলাদেশ আজ ক্রিকেট বিশ্বে নিজেদের একটা শক্ত জায়গা তৈরি করতে পেরেছে। অন্যদিকে, ২০০৩ বিশ্বকাপের পর কেনিয়া শুধু পিছনের দিকে হেঁটেছে। ২০১১ সালের পর ওয়ানডে বলুন বা টি-টোয়েন্টি, কোনো ফরম্যাটের বিশ্বকাপেই তারা আর কোয়ালিফাই করতে পারেনি।

যেভাবে এই দলটি এগোচ্ছে, তাতে একসময় হয়তো দেশটি থেকে ক্রিকেট খেলাটাই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কেনিয়ার এই অবনতির পিছনে আইসিসির কিছু নীতিমালা অবশ্যই দায়ী। কিন্তু ২০০৩ সালে ভাগ্যের জোরে সেমিফাইনালে খেলার ব্যাপারটাও কি তাদের উপর আলাদা চাপ সৃষ্টি করেনি? প্রত্যাশা কিংবা যোগ্যতার চেয়ে বেশি কিছু পেয়ে গেলে সেটার প্রভাব পড়াটাই স্বাভাবিক। সে যাই হোক, কেনিয়ার মতো আর কোনো দেশ এভাবে হুট করে হারিয়ে না যাক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।      

This article is in Bangla language. It's a critical analysis of Kenya's dream run in 2003 CWC. For references, please check the hyperlinks inside the article.

Featured Image: espncricinfo.com

Related Articles