Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

প্যারিসের রাজপুত্রের প্রায় অস্ট্রেলিয়া জয়ের গল্প

তাকে লোকে আদর করে ডাকে ‘প্রিন্স অফ ক্লে’। 

রাজপুত্র ডাকবার কারণ, গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালে উঠেছেন দুবার, সেই দুবারই প্যারিসের রোলা গাঁরোর ক্লে কোর্টে। তবে দুবারই তাকে হার মানতে হয়েছে রাফায়েল নাদালের কাছে, যিনি ক্লে কোর্টের অবিসংবাদিত নেতা।

‘ডমিনেটর’ নামেও ডাকেন কেউ কেউ এই অস্ট্রিয়ান যুবককে, পেছনের কারণটা তার খেলার সময় উইনার মেরে জিতবার ইচ্ছা, প্রতিপক্ষের আনফোর্সড এররের চেয়ে দারুণ কোনো এক ব্যাকহ্যান্ড কিংবা ফোরহ্যান্ডে পয়েন্ট জিতে নেবার চিন্তাটাই তার মাথায় বেশি ঘোরে।

অস্ট্রিয়ান এই যুবকের নাম ডমিনিক থিম, যিনি ২০২০ সালের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে রীতিমতো ঘোর লাগিয়ে রেখেছিলেন। ফাইনালে পৌঁছানোর পথে ক্লে এর রাজাকে পরাস্ত করেছেন, পার করেছেন আরেক নেক্সট জেন আলেক্সান্ডার জেভেরেভকেও। ফাইনালে প্রতিপক্ষ? 

সার্বিয়ার নোভাক জোকোভিচ, যাকে লোকে রোবট ডাকতে কুণ্ঠাবোধ করে না। হার্ড কোর্টে যাকে হারানোটা স্রেফ মুশকিল নয়, প্রায় অসম্ভব।

থিমের তৃতীয় গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালটা সেই সার্বিনেটরের সাথে। ফাইনালে কী হয়েছিলো, তা পরে শুনে নেবেন। আগে গল্প শুনুন, ডমিনিক থিমের ফাইনালে উঠবার গল্প।

স্বাগতিকে বিপত্তি! 

দ্বিতীয় রাউন্ডে স্বাগতিক অ্যালেক্স বোল্টকে হারানোর পর থিম; Image: Reuters/ Hannah Mckay

প্রথম রাউন্ডে থিমের সামনে ছিলেন ফ্রান্সের আদ্রিয়ান ম্যানারিনো, যিনি র‍্যাংকিংয়ে ছিলেন ৪৪ এ। ম্যানারিনোকে রীতিমতো উড়িয়ে দিলেন থিম, ৬-৩, ৭-৫, ৬-২ সরাসরি সেটে জিতে পরের রাউন্ডে পৌঁছলেন, সেখানে প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়ান অ্যালেক্স বোল্ট। তবে তার চেয়েও বড় সমস্যা অন্য জায়গায়, থিমকে এবার খেলতে হবে বেয়াড়া অস্ট্রেলিয়ান দর্শকের সামনে।

প্রথম সেটটা থিম ৬-২ ব্যবধানে সহজেই জিতে গেলেন, তবে হোম অ্যাডভান্টেজ কী বস্তু, সেটি পরের সেট ৫-৭ এ জিতেই বুঝিয়ে দিলেন বোল্ট। বোল্ট জিতলেন পরের সেটটাও, এবার খেলা গেলো টাইব্রেকারে, সেখানে ৫-৭ এ জিতে বোল্ট সেট জিতে নিলেন ৭-৬ ব্যবধানে, ম্যাচে ২-১ এগিয়ে এটিপি র‍্যাংকিং ১৪৪ এ থাকা বোল্ট। 

কিন্তু বোল্ট বোধকরি সেট দুটো জিতে ভুল করে ফেললেন, থিম আর তাকে কোনো সুযোগই দিলেন না। পরের দুই সেট জিতলেন ৬-১, ৬-২ ব্যবধানে, পৌঁছে গেলেন থার্ড রাউন্ডে। 

রাজা বনাম রাজপুত্র: তফাতটা স্রেফ সার্ফেসে

তৃতীয় রাউন্ডে যুক্তরাষ্ট্রের টেইলর ফ্রিটজকে হারাতে তেমন বেগ পেতে হয়নি থিমকে, তৃতীয় সেটটা টাইব্রেকে হারলেও ঠিকই ৩-১ ব্যবধানে জিতে নেন এই অস্ট্রিয়ান। এরপর চতুর্থ রাউন্ডে রীতিমতো উড়িয়ে দেন এটিপি র‍্যাংকিংয়ে দশ নম্বরে থাকা গেইল মনফিলসকে, প্যারিসের রোলা গাঁরোর রাজপুত্র থিম স্ট্রেইট সেটে হারান ফরাসি মনফিলসকে। কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা পাকা, কিন্তু প্রতিপক্ষ? 

রাফায়েল নাদাল। সেই রাফায়েল নাদাল, যার কাছে ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনাল হেরেছেন দুবার। কিন্তু এবার সামান্য পার্থক্য, খেলাটা ক্লে কোর্টে নয়, অস্ট্রেলিয়ার সিন্থেটিক হার্ড সার্ফেসে। 

ক্লে’র রাজা বাহবা দিচ্ছেন রাজপুত্রকে!; Image: Reuters/Hannah Mckay

প্রথম সেটটাই গড়ালো টাইব্রেকারে, দর্শকদের কানে ভেসে আসলো টেনিস ক্লাসিকের মূর্ছনা। সেই টাইব্রেকারে নিজের নার্ভ ধরে রাখলেন থিম, ৭-৩ এ টাইব্রেকার জিতে সেট জিতলেন ৭-৬ ব্যবধানে। সেই রাফায়েল নাদালের বিপক্ষে, যার স্নায়ুর দৃঢ়তা অবাক করায় প্রতি মুহূর্তেই। 

দ্বিতীয় সেটটাও গড়ালো টাইব্রেকারে, এবারও নিজের স্নায়ুর দৃঢ়তা দেখালেন সেই অস্ট্রিয়ান। এবার ব্যবধানটা টাইব্রেকারে ৭-৪, কিন্তু সেট পকেটে পুরলেন থিম, পরের সেটটা জিতলেই সেমিফাইনালে পা রাখবেন। 

তবে নাদাল এত সহজে হার মানার পাত্র হলে ১৯টা গ্র্যান্ড স্ল্যাম তার ঝুলিতে পুরতে পারতেন না, পরের সেটটা এই স্প্যানিশ তারকা ৬-৪ এ জিতে ব্যবধান কমিয়ে আনলেন ২-১ এ। 

কিন্তু থিম যে এবার পণ করে নেমেছেন, হার মানবেন না কিছুতেই! পরের সেটে একবার থিম ৪-২ করে ফেলেন তো নাদাল টেনে নামান ৪-৩ এ, থিম ৫-৩ করার পর ৬-৫ করে ফেলেন নাদাল, বুঝি আরেকবার নাদালের হাতে ধরাশয়ী হন থিম! ২০১৮ ইউএস ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালের কথা কি মনে আসছিলো তখন থিমের? যেবার প্রথম সেট ৬-০ তে জেতার পর পরের সেটটাও জিতে নিয়েছিলেন, কিন্তু লাভের লাভ হয়নি, নাদাল ঠিকই পরের তিন সেট জিতে থিমকে হতাশার সাগরে ডুবিয়ে সেমিতে চলে গিয়েছিলেন। 

মনে পড়লেও পাত্তা দেননি বোধকরি, তাই থিম এবার খেলা টেনে নিয়ে যান টাইব্রেকারে। টাইব্রেকারে এগিয়েও গিয়েছিলেন ৬-৪ এ, কিন্তু নাদাল এত সহজে হাল ছাড়বেন? নাহ, তাই নাদাল ৬-৬ করেন। কিন্তু থিম এবার হারতে রাজি ছিলেন না, পরের দুই পয়েন্ট নিয়ে টাইব্রেকার জিতে নিলেন, ক্লে এর রাজা পরাজয় বরণ করলেন ক্লে এর রাজপুত্রের কাছে, যার সামনে এখন আলেক্সান্ডার জেভেরেভ। 

জার্মান ঝঞ্ঝাট!

হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর জেভেরেভকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন যেন এই বলে, “ব্যাপার না, এমন হয়!”; Image: Reuters/Kim Hong-Ji

সেমিতে থিমের সামনে ২২ বছরের জার্মান আলেক্সান্ডার ‘শাশা’ জেভেরেভ, যাকে টেনিসের ভবিষ্যৎ বলেও মানেন অনেকে। কেন, সেটা প্রথম সেটেই বোঝালেন তিনি। 

নাদালকে হারিয়ে আসা থিমকে রীতিমতো উড়িয়ে দিলেন প্রথম সেটে, জিতলেন ৬-৩ ব্যবধানে। কিন্তু থিম এবার সহজে ছাড়বার পাত্র নন, দ্বিতীয় সেটটা জিতে নেন ৬-৪ ব্যবধানে। তৃতীয় সেটে লড়াইটা সেয়ানে-সেয়ানে হয়, কিন্তু টাইব্রেকারে গিয়ে অদম্য থিম জিতে নেন ৭-৩ এর ব্যবধানে সহজেই। 

বাঁচা-মরার চতুর্থ সেটে জেভেরেভ নিজের পুরোটা ঢেলে দেন, কিন্তু ওই যে, থিম যেন নাদালকে হারিয়ে নাদালের দৃঢ়তার পুরোটাই বুকে ধারণ করে আছেন। খেলা আবার গড়ায় টাইব্রেকে, এবারও স্নায়ুর লড়াইয়ে জয়ী থিম, টাইব্রেকার জিতে নেন ৭-৪ এ, পৌছে যান নিজের ক্যারিয়ারের তৃতীয় গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালে, যেখানে অপেক্ষা করছেন নোভাক জোকোভিচ, কিংবা জোকার। 

রোবট কিংবা জোকারের মুখোমুখি

অস্ট্রিয়া এবং সার্বিয়ার সম্পর্কটা ঠিক সুবিধের নয়। খেলার মাঠে রাজনীতি টেনে আনতে অনেকের ঘোর আপত্তি, কিন্তু মুখোমুখি হলে উত্তেজনার পারদে একটু ধাক্কা লাগে বৈকি! 

জোকোভিচের সঙ্গে লড়াইটাও জমেছিলো বেশ!; Image: Reuters/ Kim Hong-Ji

সে যা-ই হোক, ফাইনালে ডমিনিক থিমের সামনে নোভাক জোকোভিচ, যিনি কি না অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে কখনও হারেননি! নিজের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যামটা জিততে হলে থিমকে তাই অসম্ভবকে সম্ভব করতে হতো।

কিন্তু ধাক্কা খান প্রথম সেটেই, ‘সার্বিনেটর’ প্রথম সেটটা তুলে নেন ৬-৪ ব্যবধানে। কিন্তু ওই যে, ডমিনিক থিম বদলে গেছেন। পরের সেটটা ৬-৪ এ তুলে নিয়েই শান্ত হন না, তৃতীয় সেটে জোকোভিচকে উড়িয়ে দেন ৬-২ ব্যবধানে, তুলে নেন দুটো ব্রেক পয়েন্ট। জোকোভিচ যেন একটু ঘাবড়ে যান, দুর্গ কি এবার তবে যাবে অন্য কারও দখলে? 

খেলছিলেন সামান্য চোট নিয়ে, জোকোভিচ মেডিকেল ব্রেক নেন, থিমের অপেক্ষা বাড়ে। জোকোভিচ মেডিকেল ব্রেকে বোধকরি নিজেকে শান্ত করেন, নিজের সেই রোবোটিক রূপ ফিরিয়ে আনেন যেন। 

নইলে যে থিম তাকে রীতিমতো ঘোল খাইয়ে ছাড়ছিলেন, তাকে পাল্টা ঘোল কী করে খাওয়ালেন? পরের সেটটা ৬-৩ ব্যবধানে জিতে খেলায় ফেরত আসেন জোকোভিচ, থিমের অপেক্ষা বাড়ে আরেকটু। 

ডিসাইডার সেটে থিম এগিয়ে যান প্রথমে, কিন্তু তাকে টেনে নামান জোকোভিচ, এগিয়ে যান ৩-১ এ। থিম ৩-২ করেন, জোকোভিচ করেন ৪-২। ইঁদুর-বেড়াল খেলা চলতে চলতে জোকোভিচ এগিয়ে যান ৫-৪ এ, ৪০-১৫ তে এগিয়ে থেকে সার্ভ করেন। যে করেই হোক সেখান থেকে ম্যাচ উদ্ধার করতে হবে থিমের, নইলে অপেক্ষা বাড়বে গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপায় প্রথম চুমুর জন্য। 

থিম পারেন না, জোকোভিচ ঠিক জিতে যান। দুইয়ে দুইয়ে চার হবার মতো জোকোভিচ তার অষ্টম অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ফাইনালটা জিতে যান, থিম অপেক্ষায় থেকে যান কোনো এক বাসস্ট্যান্ডে বসে থাকা অপেক্ষারত প্রেমিকের মতো। 

তবে থিমের আফসোস নেই। ফাইনাল হারার পর আক্ষেপ ভুলে তিনি বলে ওঠেন অস্ট্রেলিয়ার দাবানলের কথা, বলেন বিগ থ্রি জোকোভিচ, নাদাল ও রজার ফেদেরারের সঙ্গে একই মঞ্চে খেলতে পেরে গর্ববোধ করবার কথা, জোকোভিচকে শুভেচ্ছা জানান, দর্শকদের জানান ধন্যবাদ, আশায় থাকেন আগামী বছরের জন্য। থিম বলে ওঠেন, 

মনোযোগ সরিয়ে নেওয়ার ভালো একটা উপলক্ষ্য ছিলো অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, তবে আমি আশা করি, দাবানলে ক্ষতিগ্রস্থ অস্ট্রেলিয়া, তাদের মানুষ ও বন্যপ্রাণীরা যেন খুব দ্রুত তাদের পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে পারেন 

ফাইনালে হারের পরও থিমের মুখে অমলিন হাসি! Image: Reuters/ Kai Pfaffenbach

প্যারিসের রাজপুত্র হয়তো অ্যাকিলিস হয়েছেন, ২-১ সেটে এগিয়ে থেকেও ম্যাচ হেরেছেন। কিন্তু সব সময় কি সবাই হারে? অ্যাকিলিস হেরেছিলেন? ডমিনিক থিম ফাইনাল হেরেছেন বটে, তবে জোকোভিচ, যার ডাক নাম ‘সার্বিনেটর’, তার কাছে হারবার পর দোষ দেবার উপায় নেই। ডমিনিক থিম এবার পারেননি, তো? বেশ লম্বা ক্যারিয়ার এখনও বাকি তার, অনেক সম্ভাবনাকে জীবন দেওয়া বাকি।

তাই ২০২০ অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শেষ হাসিটা জোকারের হলেও, পরেরটা থিমের হবে না, কে বলতে পারে? 

A story on the journey of Dominic Thiem to the Australian Open 2020 final, where he succumbed to Serbian Novak Djokovic. 

Feature Photo: REUTERS/Kai Pfaffenbach

Related Articles