Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিশ্বকাপে প্রোটিয়াদের নাটকীয় সব বিদায়ের সাতকাহন

ক্রিকেটবিশ্বের অন্যতম সফল দল দক্ষিণ আফ্রিকা। সব ধরনের ফরম্যাটের দ্বিপাক্ষিক সিরিজেই তাদের পারফর্মেন্সের ছক বেশ ঊর্ধ্বমুখী। তিন ধরনের ফরম্যাটেই বেশ কয়েকবার র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানেও উঠেছে প্রোটিয়ারা, অথচ বিশ্বকাপে দলটির পারফর্মেন্স কোনোদিক থেকেই তাদের এসব কৃতিত্বের সাথে যায় না। এখন পর্যন্ত সাতটি বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে একবারও ফাইনাল খেলতে পারেনি তারা! বিশ্বকাপে তাদের এই ব্যর্থতার চেয়েও তাদের ব্যর্থ হওয়ার ভঙ্গিটা আরো বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কখনো ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, আবার কখনো চাপের মুখে নিজেরাই ভুল করে নিজেদের কপাল পুড়িয়েছে।

বর্ণবাদ বৈষম্যের কারণে ২২ বছর ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত থাকায় প্রথম চারটি বিশ্বকাপে অংশ নিতে পারেনি প্রোটিয়ারা। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় ১৯৯২ বিশ্বকাপের মাধ্যমে বিশ্বমঞ্চে প্রোটিয়াদের যাত্রা শুরু হয়। কেপলার ওয়েসেলসের মতো অভিজ্ঞ একজনের নেতৃত্ব, সাথে অ্যালান ডোনাল্ড, জন্টি রোডসের মতো তরুণ তুর্কি– সবমিলিয়ে দলটা বেশ ভারসাম্যপূর্ণ ছিল। গ্রুপ পর্বে পাঁচ জয় তুলে নিয়ে নিজেদের প্রথম আসরেই সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে দক্ষিণ আফ্রিকা, যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল ইংল্যান্ড। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ৪৫ ওভারে ৬ উইকেটে ২৫২ রান সংগ্রহ করে ইংলিশরা। জবাব দিতে নেমে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকলেও সবার অল্প অল্প অবদানে বেশ ভালোই জবাব দিচ্ছিলো প্রোটিয়ারা।

শেষ ১৩ বলে ৪ উইকেট হাতে রেখে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন ছিল ২২ রান, সম্ভাবনার বিচারে দুই দলেরই তখন সমান সম্ভাবনা ছিল। ঠিক তখনই বারো মিনিটের এক বৃষ্টি এমন জমজমাট ম্যাচে পুরো জল ঢেলে দেয়। সেসময়ের বৃষ্টিসংক্রান্ত আইন অনুযায়ী খেলার দ্বিতীয় ভাগে বৃষ্টি এলে প্রথমে বোলিং করা দলের সবচেয়ে কম রান দেওয়া ওভারগুলোর রানসংখ্যা কমানো হবে।

এই নিয়ম অনুযায়ী দক্ষিণ আফ্রিকার ২ ওভার যখন কমানো হলো তখন দেখা গেলো তাদের টার্গেট থেকে এক রানও কমানো হয়নি! কারণ নিজেদের ইনিংসে দুটি ওভারে একটি রানও করতে পারেনি ইংলিশরা, তাই নিয়ম অনুযায়ী সবচেয়ে কম রান দেওয়া ওভার হিসেবে ওই দুই ওভারের হিসাব ধরায় প্রোটিয়াদের টার্গেট থেকে যায় অপরিবর্তিত! ১৩ বলে ২২ রান থেকে প্রথমে ৭ বলে ২২ রান, পরে স্কোরবোর্ডে উঠলো ১ বলে ২২ রান। পুরো ক্রিকেট ইতিহাসে এর চেয়ে বড় তামাশা আর কখনো ঘটেনি, ভবিষ্যতেও হয়তো ঘটবে না। ভাগ্যের কাছে হেরে সেই আসরের সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে।

এই স্কোরকার্ডই যেন বিশাল এক তামাশার প্রতিচ্ছবি; Image Source: espncricinfo.com

১৯৯৬ বিশ্বকাপে উড়ন্ত সূচনা পায় দক্ষিণ আফ্রিকা, গ্রুপপর্বের পাঁচ ম্যাচের সবগুলো জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পা রাখে দলটি, যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল উইন্ডিজ। সেই আসরে তখন পর্যন্ত ক্যারিবীয়দের পারফর্মেন্স ছিল হতাশাব্যঞ্জক, গ্রুপপর্বে কেনিয়ার মতো আন্ডারডগের কাছে হেরে কড়া সমালোচনার সম্মুখীনও হয়েছিলো দলটি।

স্বাভাবিকভাবেই সেই কোয়ার্টার ফাইনালে প্রোটিয়ারাই ছিল ফেভারিট। কিন্তু সব পাশার দান উল্টে দেন ব্রায়ান চার্লস লারা, তার ৯৪ বলে ১১১ রানের ইনিংসে ভর করে ৮ উইকেটে ২৬৪ রান সংগ্রহ করে উইন্ডিজ। করাচির স্লো পিচে এই টার্গেট টপকানো এমনিতেই বেশ দুরূহ, দক্ষিণ আফ্রিকাও পারেনি এই কঠিন চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে। ২৪৫ রানে অলআউট হয়ে ১৯ রানে ম্যাচটি হেরে যায় প্রোটিয়ারা। পুরো টুর্নামেন্টে দারুণ খেলেও এক লারার কাছে হেরে দলটিকে বিদায় নিতে হয় কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই। 

লারার সেদিনের সেই সেঞ্চুরি বিশ্বকাপ ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ইনিংস; Image Source: espncricinfo.com

প্রোটিয়াদের সবচেয়ে বড় বিশ্বকাপ ট্র্যাজেডি রচিত হয়েছে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে। সেই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয় তারা। টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শন পোলক ও অ্যালান ডোনাল্ডের বোলিং তোপে একদমই সুবিধা করতে পারেনি অজিরা, শেষপর্যন্ত স্টিভ ওয়াহ ও মাইকেল বেভানের ফিফটিতে ৪৯.২ ওভারে ২১৩ রানে অলআউট হয় তারা। মাঝারি মানের এই সংগ্রহ তাড়া করতে নেমে শেন ওয়ার্নের ঘূর্ণিতে মাত্র ৬১ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে পড়ে যায় প্রোটিয়ারা। সেখান থেকে ক্যালিস ও রোডসের ৮৪ রানের জুটিতে আবারো ঘুরে দাঁড়ায় তারা। তবে এই জুটি ভাঙার পর আবার আরেক মড়ক লাগে প্রোটিয়াদের ইনিংসে। কিন্তু এতকিছুর মাঝে একা লড়ে যেতে থাকেন ল্যান্স ক্লুজনার।

সেই বিশ্বকাপের খুব চেনা গল্প ছিল এটা, প্রোটিয়ারা যখনই বেশ কিছু উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকবে, তখনই বজ্রপাতের মতো আবির্ভূত হয়ে ঝড়ো এক ইনিংস খেলে তাদের নিশ্চিত হার থেকে বাঁচিয়ে আনবেন ক্লুজনার। এই ম্যাচেও ঠিক একই কাজ করেন, তার লড়াকু ইনিংসে ভর করে খেলা শেষ ওভার পর্যন্ত নিয়ে যায় প্রোটিয়ারা। সেখানে তাদের দরকার ছিল ৯ রান আর হাতে ছিল ১ উইকেট। ডেমিয়েন ফ্লেমিংয়ের প্রথম দুই বলে দুটি চার মেরে স্কোর সমান করে ফেলেন ক্লুজনার। বাকি চার বলে এক রান নিলেই প্রথমবারের মতো ফাইনালে চলে যাবে প্রোটিয়ারা। এই চাপটাই সামাল দিতে পারলেন না ক্লুজনার! ওভারের তৃতীয় বল ডট দেওয়ার পর চতুর্থ বলে ব্যাটে বল লাগিয়েই ভোঁ দৌড় লাগান তিনি।

অথচ বল তখন ওয়াহর হাতে, এই অবস্থা দেখে অপর প্রান্তের বাটসম্যান অ্যালান ডোনাল্ড দৌড়ে উল্টো নিজের ক্রিজেই ফিরে আসেন। ওয়াহর হাত থেকে বল যখন ফ্লেমিংয়ের হাতে এলো তখন ক্লুজনার ও ডোনাল্ড দুজনেই একই প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন! ডোনাল্ড তড়িঘড়ি করে আবার দৌড় শুরু করলেও লাভ হয়নি, তার আগেই গিলক্রিস্ট উইকেট ভেঙে দিয়ে প্রোটিয়াদের শেষ উইকেটের পতন নিশ্চিত করেন। 

সবার কাছে এই ছবিটা সর্বকালের সেরা ওয়ানডে ম্যাচের ছবি, কিন্তু প্রোটিয়াদের কাছে এটি যেন এক ভয়াল দুঃস্বপ্ন; Image Source: Scroll.in

ম্যাচ টাই, কিন্তু সুপার সিক্সে নেট রান রেটে এগিয়ে থাকায় ফাইনালের টিকিট পায় অজিরাই। অথচ একটু মাথা ঠাণ্ডা রাখলে বাকি দুই বল থেকে খুব সহজেই এক রান নিয়ে নিতে পারতেন ক্লুজনার। এই ব্যর্থতার লজ্জা ঢাকতেই হয়তো আর পেছনে ফিরে থামেননি তিনি, সেই যে রান নেওয়ার জন্য দৌড় শুরু করেছেন সেই এক দৌড়েই চলে গেছেন প্যাভিলিয়নে। তাতে অবশ্য লাভ হয়নি, এই ম্যাচ হারার মাধ্যমেই প্রোটিয়াদের গায়ে ‘চোকার্স’ তকমাটা আটকে গেছে অনেক দৃঢ়ভাবে।

১৯৯৯ বিশ্বকাপের সেই দুঃসহ স্মৃতি মুছে ফেলার খুব ভালো একটা সুযোগ পরের আসরেই পেয়ে যায় প্রোটিয়ারা, সেবারই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার সুযোগ পায় তারা। কিন্তু গ্রুপপর্বে উইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে যাওয়ায় গ্রুপ পর্ব থেকেই দলটির বিদায়ের শঙ্কা দেখা দেয়! সুপার সিক্সে যেতে হলে নিজেদের গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাদের জয় ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা ছিল না।

এই মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মারভান আতাপাত্তুর দারুণ এক সেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেটে ২৬৮ রান সংগ্রহ করে শ্রীলঙ্কা। চ্যালেঞ্জিং টার্গেট তাড়া করতে নেমে হার্শেল গিবসের ৭৩ রানে ভর দিয়ে জবাবটা ভালোই দিচ্ছিলো প্রোটিয়ারা। গিবস আউট হলেও শেষদিকে লড়াইটা একাই চালিয়ে যাচ্ছিলেন মার্ক বাউচার।

খেলার তখন ৪৫ তম ওভার চলছে, এদিকে ডারবানের আকাশ জুড়ে তখন বৃষ্টির ছায়া! সেই ওভার শেষেই খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল প্রবল, তাই জয়-পরাজয় নির্ধারক হিসেবে ওই ওভারটিই যেন শেষ ওভারে পরিণত হয়েছিলো। প্রোটিয়া শিবির থেকে বাউচার আর ক্লুজনারকে খবর পাঠানো হলো, এই ওভার থেকে ১৩ রান করতে পারলেই তারা বৃষ্টি আইনে এগিয়ে থাকবে। গুড়িগুড়ি বৃষ্টির মাঝেই সেই ওভার করতে এলেন মুত্তিয়া মুরালিধরন, তবে ভেজা বল গ্রিপ করতে সমস্যা হওয়ায় তিনি ওয়াইডে ৫ রান দিয়ে বসলেন!

সেই ওভারের পঞ্চম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে প্রয়োজনীয় ১৩ রানের কোটা পূরণ করে ফেলেন বাউচার, জয় নিশ্চিত হয়েছে ভেবে পরের বলটা বেশ আয়েশি ভঙ্গিতে ডট দেন তিনি। এরপর বৃষ্টির মাত্রা অনেক বেড়ে গেলে দুই দলই মাঠ ত্যাগ করে। কিন্তু প্যাভিলিয়নে গিয়ে বাউচার আর ক্লুজনারের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে! তাদের যে হিসাব পাঠানো হয়েছিলো সেই হিসাবে শেষ ওভারে ১৩ রান করলে দুই দলের স্কোর সমান হবে, কিন্তু জিততে চাইলে আরো ১ রান বেশি করতে হতো প্রোটিয়াদের! 

ভুল বুঝতে পেরে হতভম্ব প্রোটিয়া অধিনায়ক শন পোলক; Image Source: Cricketcountry.com

অথচ তখন যা অবস্থা ছিল বাউচার চাইলেই কিছুটা ঝুঁকি নিয়ে শেষ বলে এক রান নিতেই পারতেন। শেষপর্যন্ত বৃষ্টির কারণে খেলা আর মাঠে গড়ায়নি, ম্যাচ টাই বলে ঘোষণা করা হয়। ১৯৯২ সালের পর আবারো দক্ষিণ আফ্রিকার অভিশাপ হয়ে বৃষ্টির আগমন। ফলশ্রুতিতে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয় তাদের।

২০০৭ বিশ্বকাপে প্রোটিয়াদের বিদায়ে অবশ্য কোনো নাটকীয়তা ছিল না, সেই আসরে তারা র‍্যাঙ্কিংয়ের সেরা দল হয়ে গেলেও আসরজুড়ে তাদের পারফর্মেন্স তেমন সন্তোষজনক ছিল না। তাই সেমিফাইনালে অজিদের কাছে তাদের ৭ উইকেটের হার খুবই স্বাভাবিক ছিল। তবে পরের বিশ্বকাপেই প্রোটিয়াদের সেই নাটকীয় বিদায় আবারো পুনঃর্মঞ্চায়িত হয়।

সেই আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই বিশ্বকাপে দুই দলের ফর্ম তখন দুই ভিন্ন মেরুতে, প্রোটিয়ারা সেই বিশ্বকাপে রীতিমতো আকাশে উড়ছিলো! গ্রুপপর্বে ইংলিশদের বিপক্ষে হার বাদে বাকি সব ম্যাচেই তারা জয় পেয়েছিলো। এমনকি স্বাগতিক ভারতকেও তারা হারিয়েছিলো! যেখানে প্রোটিয়ারা ছিল গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন, সেখানে কিউইরা নিজেদের গ্রুপের শেষ দল হিসেবে পেয়েছিলো কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট। তাছাড়া যে ঢাকায় সেই ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হচ্ছিলো, সেই মাঠেই মাত্র চার মাস আগে বাংলাদেশের কাছে ধবল ধোলাইয়ের দুঃস্মৃতিও তাদের তাড়া করছিলো।

তাই সব মিলিয়ে প্রোটিয়াদের সহজ জয় অনুমান করাটা খুবই স্বাভাবিক ছিল। টসে জিতে নিউজিল্যান্ড যখন ২২১ রানের মাঝারিমানের সংগ্রহ দাঁড় করালো, তখনও সেই অনুমানকেই সফল বলে মনে হচ্ছিলো। জবাবটা ভালোই দিচ্ছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা, একপর্যায়ে তাদের সংগ্রহ ছিল ২ উইকেটে ১০৮ রান। সেই সময়েই নাটকের মোড় ঘুরতে শুরু করে, জ্যাক ক্যালিসের নিশ্চিত ছক্কাকে অবিশ্বাস্য এক ক্যাচে পরিণত করেন জ্যাকব ওরাম!

খেলার আসল সর্বনাশটা হয় ২৮তম ওভারে, সেই ওভারের চতুর্থ বলে ডুমিনি আউট হওয়ার পর শেষ বলে ডু প্লেসিসের সাথে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে যান দলের সেরা ব্যাটসম্যান ডি ভিলিয়ার্স! এই আউটের পর প্রোটিয়ারা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি, এই সহজ টার্গেট তাড়া করতে নেমেও ৪৯ রানে হেরে বিদায় নিতে হয় দলটিকে।

সেই সর্বনাশা ওভার! Image Source: Daily Mail

দুর্ভাগ্য ও চোকিং– এই দুইয়ের অসাধারণ সংমিশ্রণ দেখা গেছে ২০১৫ বিশ্বকাপে প্রোটিয়াদের বিদায়ের মঞ্চে। সেই আসরের সেমিফাইনালে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই দুই ওপেনারকে হারালেও পরে বেশ দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় প্রোটিয়ারা। ৩৮ ওভার শেষে তাদের সংগ্রহ ছিল ২৩৮/৩। তখন খেলার যা অবস্থা ছিল তাতে ৩৫০-৩৭৫ রানের সংগ্রহ সম্ভব বলেই মনে হচ্ছিলো।

কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার চিরশত্রু বৃষ্টির আবারো বাগড়া দিতে হাজির হয়ে যায়, যে কারণে ৫০ ওভারের বদলে ৪৩ ওভারের খেলা নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত ৪৩ ওভারে ৫ উইকেটে ২৮১ রান সংগ্রহ করে প্রোটিয়ারা, আর বৃষ্টি আইনে নিউজিল্যান্ডের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয় ৪৩ ওভারে ২৯৮ রান।

জবাব দিতে নেমে ম্যাককালামের ঝড়ো ফিফটিতে দারুণ শুরু পায় স্বাগতিকরা। তবে মর্নে মর্কেলের দারুণ বোলিংয়ে খেলায় ফিরে আসে প্রোটিয়ারা। কিন্তু কোরে অ্যান্ডারসনকে সাথে নিয়ে দারুণভাবে লড়ে যেতে থাকেন গ্রান্ট এলিয়ট। অবশ্য দুজনকে আউট করার সুযোগই দক্ষিণ আফ্রিকা পেয়েছিলো, কিন্তু সহজ ক্যাচ ও রান আউটের সুযোগ মিস করায় সেই সুযোগ কাজে লাগেনি। আর সেটার চড়া মাশুলও গুণতে হয় তাদের, গ্রান্ট এলিয়টের ৭৩ বলে ৮৪ রানের ইনিংসে ভর করে ১ বল হাতে রেখে চার উইকেটে জিতে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফাইনালে চলে যায় নিউজিল্যান্ড। সেই ম্যাচ হারার পর ডি ভিলিয়ার্স-ডু প্লেসিসদের অশ্রুসিক্ত ছবি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম বড় ট্র্যাজেডি। 

এত কাছে তবু এত দূরে! Image Source: DNA India

আর ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, যে এলিয়টের ব্যাট তরবারি হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার পিঠ ক্ষত-বিক্ষত করে দিয়েছে, তার জন্মস্থান দক্ষিণ আফ্রিকাতেই! প্রোটিয়াদের বিশ্বকাপ ইতিহাসে যত ক্লাইম্যাক্স আছে, স্ক্রিপ্টেড নাটকেও এত ক্লাইম্যাক্স আনা সম্ভব না। একটি দলের সাথেই কেন বারবার এত অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটছে সেটার উত্তর বিধাতা ছাড়া আর কারো পক্ষেই দেওয়া সম্ভব না। তবে সব দায় বিধাতার উপর চাপিয়ে দেওয়াটাও ঠিক হবে না, এসব নাটকীয় বিদায়ের পেছনে প্রোটিয়াদের দায়ও কম না। ১৯৯২ বা ১৯৯৬ বিশ্বকাপ নাহয় বাদ দিলাম, কিন্তু ১৯৯৯ বিশ্বকাপে কেন ওই শেষ রান নিতে গিয়ে ক্লুজনার এত তাড়াহুড়ো করলেন?

কেন ২০০৩ বিশ্বকাপে সহজ একটা হিসেব ভুল করে নিজেদের পায়ে দক্ষিণ আফ্রিকা কুড়াল মারলো? কোয়ার্টার ফাইনালের মতো মঞ্চে কেন ডি ভিলিয়ার্স ওভাবে রান আউট হবেন? আর কেনই বা ক্যাচ আর রান আউট মিসের মহড়া দিয়ে এলিয়টকে নায়ক হওয়ার সুযোগ করে দেবে তারা? ভাগ্য সবসময় প্রোটিয়াদের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে এটা যেমন সত্যি, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে চাপে ভেঙে পড়ে অমার্জনীয় ভুল করে প্রোটিয়ারাও নিজেদের বিপদের মাত্রা বহু গুণ বাড়িয়েছে এটাও সত্যি।

যতদিন না পর্যন্ত নিজেদের এসব ভুল প্রোটিয়ারা শোধরাতে পারছে ততদিন তাদের বিশ্বকাপ দুর্ভাগ্য ঘুচবে না তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। এবারের বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকেই অবশ্য কিছুটা ব্যাকফুটে রয়েছে দলটি, তাদের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান এবি ডি ভিলিয়ার্স বিশ্বকাপ শুরুর মাত্র এক বছর আগে অবসর নিয়ে দলকে বেশ টালমাটাল অবস্থায় ফেলে দিয়েছেন। এই টালমাটাল অবস্থা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে প্রোটিয়ারা তাদের পুরনো দুর্ভাগ্য ঘোচাতে পারে কি না সেটাই এখন দেখার বিষয়।  

This article is in Bangla language. It's a story about all the dramatic eliminations of South Africa in the world cup. For references please check the hyperlinks inside the article.

Featured Image: Scroll.in

Related Articles