Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ই-স্পোর্টস: খেলাধুলার নতুন এক জগৎ এবং কোটি টাকার এক শিল্প

পিসি, কনসোল আর মোবাইল ডিভাইস, গেমিং যেন তার পুরো আলাদা একটি দুনিয়া তৈরি করে নিয়েছে। অনলাইন মাল্টি-প্লেয়ার নামের সাথে যুক্ত হয়েছে কম্পিটিটিভ গেমিং। কিন্তু কী এই স্পোর্টস আর কম্পিটিটিভ গেমিং? আজ কথা হবে এ নিয়েই।

ই-স্পোর্টস কী?

ইলেক্ট্রনিক স্পোর্টস বা সংক্ষেপে ই-স্পোর্টস দিয়ে বোঝায় হয় একটি সুন্দর গুছানো টুর্নামেন্টকে, যেখানে বাস্তব খেলার প্রতিযোগিতার বদলে হয় অনলাইন গেমগুলোর প্রতিযোগিতা। অনেকটা টেনিস বা গলফের মতোই, শুধু এখানে অনেক জনপ্রিয় গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সেরা প্লেয়ারদের নিয়ে নিজস্ব একটি টুর্নামেন্টের আয়োজন করে। পুরস্কার হিসেবে থাকে আকর্ষণীয় প্রাইজমানি আর জনপ্রিয়তা। ছোট স্থানীয় টুর্নামেন্ট থেকে হতে পারে তা স্টেডিয়াম ভর্তি মানুষের সামনে। জনপ্রিয় গেমিং টাইটলগুলোর মধ্যে রয়েছে League of Legends, Fortnite, CS:GO, Overwatch, Call of duty, Madden NFL, FIFA ইত্যাদি। এই গেমগুলোর যেমন রয়েছে লাখ লাখ ফ্যানবেজ, তেমনি স্ট্রিমিং এর কল্যাণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে এর পরিসর।

ইতিহাস এবং জনপ্রিয়তার কারণ

যদিও এটি আধুনিক যুগের একটি সৃষ্টি এবং সাম্প্রতিক সময়ে এসে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, কিন্তু শুরুটা হয়েছিল অনেক আগেই। ৭০ দশক থেকে এর শুরু বলে ধারণা করা হয়। ১৯৭২ সালে স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্পেস ওয়ার  গেমের একটি প্রতিযোগিতা আয়োজন করে। যার পুরস্কার হিসেবে থাকে এক বছরের রোলিং স্টোন ম্যাগাজিন এর সাবস্ক্রিপশন।

সফলভাবে ভিডিও গেমের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় আশির দশকে। দশ হাজার অংশগ্রহণকারী নিয়ে আয়োজন করা হয় স্পেস ইনভেডার চ্যাম্পিয়নশিপ। একে অপরকে পরাজিত করে জনপ্রিয়তার শেকড় তৈরি এখানে থেকেই।

স্পেস ইনভেডার চ্যাম্পিয়নশিপ ১৯৮০; Photo : Medium

ধীরে ধীরে নব্বইয়ের দশকে ভিডিও গেম জনপ্রিয় হতে থাকলে নিন্টেন্ডো, সাগার মতো কোম্পানিরা টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে শুরু করে। মূলত এখানে থেকেই প্রফেশনাল গেমিং টুর্নামেন্ট চালু হওয়া শুরু হয়। জনপ্রিয়তার সাথে যুক্ত হয় প্রাইজমানি।

কিন্তু ১৯৯৭ সালের Red Annihilation Quake Tournament কে প্রথম সত্যিকারের ই-স্পোর্টস ইভেন্ট হিসেবে ধরা হয়। ২০০ প্রতিযোগী এতে অংশগ্রহণ করে, যার গ্র্যান্ড প্রাইজ ছিল 1987 Ferrari 328 GTS Cabriolet।

এর কয়েক সপ্তাহ পরেই Cyberathlete Professional League প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই সংস্থাকে ই-স্পোর্টস এর জনক বলা হয়।

ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা এবং ভিডিও স্ট্রিমিং এর সুবাদে শুধু খেলাই না, লক্ষ লক্ষ মানুষ দেখার মাঝেও নিজেদের আগ্রহ তৈরি করে নিয়েছে। জনপ্রিয় টুর্নামেন্ট থেকে যেমন বিপুল আয় হয়, তেমনই প্রফেশনাল খেলোয়াড়েরাও প্রচুর পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে এর থেকে। এছাড়া সরাসরি এসব স্ট্রিমিং করার মাধ্যমেও আয় করেন অনেকেই।

গেম এবং কনসোল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গুলো Photo : Reddit

কারা খেলে এবং কীভাবে এতে অংশগ্রহণ করা যায়?

খেলার জন্য আপনার প্রয়োজন শুধু একটি গেমিং কম্পিউটার বা কনসোল । যদি আপনার তা থেকে থাকে, তাহলে আপনি সব জনপ্রিয় ই-স্পোর্টস টাইটেলগুলো খেলতে পারবেন। প্রতিবছরেই জনপ্রিয় গেমগুলোর টুর্নামেন্টের জন্য বাছাই পর্ব হয়ে থাকে, আপনার প্রফেশনাল পর্যায়ের দক্ষতা থেকে থাকলে আপনিও হয়ে যেতে পারেন জনপ্রিয় ই-স্পোর্টস গেমার

বর্তমানে মোবাইল গেমিংও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়া মোবাইল গেম পাবজির ই স্পোর্টস গেমিং টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয় গতবছর যা এ বছরও বড়সড়ভাবে আয়োজন করা হবে।

ই-স্পোর্টসে ক্যারিয়ার

আমাদের দেশে এটি সম্পূর্ণভাবে নতুন হলেও বিভিন্ন দেশে ই-স্পোর্টসকে অনেকেই পেশা হিসেবে তৈরি করে নিয়েছেন। শুধু গেমিং কম্পিটিশনই নয়, প্রতিনিয়ত ইউটিউব আর টুইচ এ স্ট্রিমিং এবং ভিডিও আপলোড করে আয় করে নিজের ক্যারিয়ার গড়ছেন অনেক গেমার।

একজন ই স্পোর্টস গেমার photo: unsplash

অনলাইন গেমিং-এ যে কেউ অংশগ্রহণ করতে পারে, যার ফলে প্রতিযোগীর সংখ্যা হয় বিশাল মাপের। এখানে ভালো করতে হলে প্রয়োজন প্রচুর সময় এবং প্রত্যয়। আর ভালো একটি গেমিং ডিভাইস কিনতে বা তৈরি করতে ভালো অর্থেরও প্রয়োজন। যদি আপনার অর্থ এবং সময় থেকে থাকে তাহলে টুইচ স্ট্রিম দিয়ে শুরু করতে পারেন আপনার যাত্রা। বিভিন্ন লোকাল গেমিং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করে হতে পারেন বিশ্বমানের একজন গেমার।

কেমন অর্থ উপার্জন হবে এটা নির্ভর করে গেম এবং টুর্নামেন্টের উপর। এছাড়া সাধারণত ইউটিউব থেকে স্ট্রিমিং এর মাধ্যমেও গ্রহণযোগ্য অর্থ উপার্জন সম্ভব।

কীভাবে এটি শিল্পে পরিণত হলো 

ই-স্পোর্টসকে একটা সদ্য আবিষ্কৃত স্বর্ণখনির সাথে তুলনা করা যেতে পারে। ২০১৬ থেকে এর দর্শকসংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৬-১৭ সালে সচরাচর দর্শকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১৯.৩ %, ২০১৭ সালে অনিয়মিত দর্শক ছিল ১৯২ মিলিয়ন এবং নিয়মিত দর্শকের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৪৩ মিলিয়ন, যা মোট দাঁড়ায় ৩৩৫ মিলিয়ন।

দর্শক বৃদ্ধির হার photo : Newzoo

২০১৮ সালে দর্শকসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ১৭.৮ শতাংশ। ২২২ মিলিয়ন অনিয়মিত এবং ১৭৩ মিলিয়ন নিয়মিত দর্শকদের নিয়ে মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৯৫ মিলিয়নে। ২০১৯ সালে সর্বমোট দর্শকের সংখ্যা ছিল ৪৫৪ মিলিয়ন, বৃদ্ধির হার ছিল ১৫ শতাংশ। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২২ সাল অব্দি এর পরিসর ৬৪৫ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে। অর্থের দিক দিয়ে ২০১৯ গ্লোবাল ই-স্পোর্টস মার্কেটের জন্য একটি মাইলস্টোন ছিল। এটিলর রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়ে শত কোটি মার্কিন ডলার ছোঁয়। রাজস্ব বৃদ্ধির হার ছিল গত বছরের তুলনায় ২৬.৭ শতাংশ। এই বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে সামাজিক গণমাধ্যমকে দায়ী করছেন অনেকেই।  

গ্লোবাল রিপোর্ট ২০১৯ Photo: Newzoo 

প্রতিনিয়ত ই স্পোর্টস এর জনপ্রিয়তা যেভাবে বাড়ছে এতে করে তৈরি হচ্ছে বিনিয়োগের নতুন সুযোগ। অনেক নামীদামী কোম্পানি ইতিমধ্যেই এর মাঝে ঢুকে পড়েছে এবং টিভি আর ডিজিটাল ব্রডকাস্টিং মিডিয়ারাও ই-স্পোর্টসের কন্টেন্টের জন্য নিজেদের মাঝে প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। এছাড়া নতুন ফিচার যুক্ত হচ্ছে সবসময়ই, যা আগ্রহ বাড়িয়ে তুলছে দর্শকদের মাঝে। মোবাইল গেমিং এর সাথে যুক্ত হয়ে আরো নতুন নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ২০২২ সালের মধ্যে ই-স্পোর্টস মার্কেট ১.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রাজস্ব অর্জন করতে পারবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।

কিছু নেতিবাচক দিক: স্বাস্থ্য এবং আসক্তি

যদিও ই-স্পোর্টস শিল্প এবং গেমার হিসেবে আয়ের জন্য একটি ইতিবাচক ধারণা প্রকাশ করে, তবে এর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে, যেগুলো সম্পর্কে সজাগ থাকা উচিত। যার মধ্যে স্বাস্থ্য-ঝুঁকি এবং আসক্তি অন্যতম।

ই-স্পোর্টস গেমিং-এ নিজেকে সফলভাবে প্রতিষ্ঠা করতে গেলে প্রচুর সময় ব্যয় করতে হয়। দীর্ঘসময় অন্ধকার রুমে আলোকিত একটি স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে স্বাস্থ্যের উপর অধিক চাপ পড়ে। ফেকার নামধারী একজন গেমার দিনে ১২-১৫ ঘণ্টা গেমিং এর উপর ব্যয় করেন, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এসব গেমারের অনেকেই শারীরিক সমস্যায় ভুগে থাকেন।

হেডফোন লাগিয়ে খেলা  Photo: Alex Haney on Unsplash

এছাড়া আধুনিকায়নের ফলে অনেক কম বয়স্ক ছেলেমেয়েরা এসব গেমিং এর দিকে ঝুঁকছে। আকর্ষণীয় প্রাইজ এবং জনপ্রিয়তা পাবার জন্য দীর্ঘসময় এসব নিয়ে পড়ে থাকছে, যার ফলে বাইরের জগত থেকে তারা ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে এবং বাস্তবে খেলার অনুভূতিগুলো হারিয়ে ফেলছে। এটি যেমন তাদের আসক্ত করছে, তেমনভাবে তাদের স্বাস্থ্যের পরিণতিও অবনতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। গেমিংয়ে আসক্তি একটি পুরনো ব্যাপার। এজন্য সামাজিক সচেতনতার সাথে সাথে পারিবারিকভাবেও সচেতন থাকতে হবে, যাতে এটি আসক্তিতে পরিণত না হতে পারে।

সর্বোপরি, প্রতিটি বিষয়েরই ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিক বিদ্যমান। তবে আজকের দুনিয়ায় ই-স্পোর্টস নতুন একটি সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। অলিম্পিকের মতো বিশাল স্পোর্টস ইভেন্টেও ই-স্পোর্টসকে ঢোকানোর পরিকল্পনা চলছে। আর খুব অল্পদিনের মাঝেই যে এটি আরো নতুন রূপে নিজেকে উপস্থাপন করবে, সেটি বলা নিষ্প্রয়োজন।

This Bengali article is about Esports. Esports is a form of sport using video games. Esports have a significant factor in the video gaming industry.

Feature Image: Muvi

Related Articles