Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সালা: ফিরে আসুন

এমিলিয়ানো সালা।

নামটা সাধারণ মানুষ চেনা দূরে থাক, ফুটবলের অনেক পাঁড় ভক্তও এই নাম শুনে ভ্রু কুঁচকাবেন। সদ্যই নঁতে থেকে কার্ডিফে যোগ দেওয়া এই আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারকে সবার চেনার তেমন প্রয়োজনও ছিল না। কিন্তু সেই সালা’ই এখন ফুটবল বিশ্বের সমস্ত মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে। সালা যে দিগন্তবিস্তারী সমুদ্রের বুকে হারিয়ে গেছেন!

সাবেক নঁতে স্ট্রাইকার এমিলিয়ানো সালা; Image Source : Goal

এমিলিয়ানো সালা জন্ম নেন ১৯৯০ সালের ৩১শে অক্টোবর, আর্জেন্টিনার সান্তা ফে’তে। ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত খেলেন বাড়ির কাছের ক্লাব সান মার্টিন ডি প্রগ্রেসোতে। এরপর সিদ্ধান্ত নেন, সেখান থেকে ৯০ মাইল দূরের শহর সান ফ্রান্সিসকোতে চলে আসবেন। সেখানে তিনি যোগ দেন প্রোয়েক্টো ক্রেসারে, যে ক্লাবের সাথে সরাসরি যুক্ত আছে স্প্যানিশ ক্লাব মায়োর্কা এবং ফ্রেঞ্চ দল বোর্দো। ২০১০ সালে ২০ বছর বয়সে ইউরোপে চলে আসেন সালা, অন্য সব লাতিন ফুটবলারের মতোই ইউরোপের লিগ মাতানোর স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু তাকে প্রত্যাখ্যান করে বোর্দো। তার এজেন্ট কয়েকটি ইতালিয়ান ক্লাবের কাছে অফার করেন বটে, কিন্তু রাজি হয়নি কেউই। বোর্দো’র রিজার্ভ দলে খেলতে থাকেন তিনি।

অবশেষে ভাগ্য তার প্রতি সুপ্রসন্ন হয় ২০১২ সালে, বোর্দো দলে জায়গা পান তিনি। পরের বছরতিনেক তিনি ধারে কাটান ইউএস অর্লিন্স এবং নিয়র্ট ও’কায়েন ক্লাবে, তিন মৌসুম মিলিয়ে ৮৭ ম্যাচে করেন ৪২ গোল। তার প্রতিভা দেখতে পেয়ে ২০১৫ সালে ১ মিলিয়ন ইউরোতে বোর্দো থেকে তাকে দলে ভেড়ায় নঁতে, চুক্তি হয় ৫ বছরের। প্রথম তিন মৌসুমে করেছিলেন ৩০ গোল, গত দুই মৌসুমে করেন ১২টি করে গোল। আর এই মৌসুমে ছিলেন ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে।

কার্ডিফ সিটি তাকে দলে ভিড়িয়েছিলো রেকর্ড সাইনিং হিসেবে; Image Source : Goal

এই মৌসুমে দুর্দান্ত ফর্মেই ছিলেন সালা, ১৯ ম্যাচেই করে ফেলেছিলেন ১২ গোল। আর এতেই তার উপর নজর পড়ে ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাবের। আর ক্লাবগুলোর মাঝে দৌঁড় প্রতিযোগীতায় বিজয়ী হয় প্রিমিয়ার লিগের দল কার্ডিফ সিটি, ১৫ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে তার স্বাক্ষর আদায় করে নেয় ক্লাবটি, যেটি ক্লাব ইতিহাসেই সর্বোচ্চ ট্রান্সফার ফি। উপায়ও ছিলো না, সদ্যই প্রিমিয়ার লিগে উঠে আসা কার্ডিফ বর্তমানে আছে লিগ টেবিলের ১৮ নম্বরে, ২৩ ম্যাচে করেছে মাত্র ১৯ গোল, মাথার উপরে ঝুলছে অবনমনের খড়্গ। ক’দিন আগেই কার্ডিফে এসে চুক্তি স্বাক্ষর ও ফটোসেশন করে গিয়েছিলেন সালা, ওয়েলস থেকে নঁতে’য় ফিরেছিলেন কিছু কাজ শেষ করে নিজের পুরনো সতীর্থদের বিদায় বলতে। সেখান থেকে ফিরতে গিয়েই বাঁধলো বিপত্তি। ২১ তারিখ সালা তার সাবেক সতীর্থদের সাথে একটি ছবি ইন্সটাগ্রামে পোস্ট করেন। ক্যাপশনে লেখেন, ‘শেষ ছবিটি!

কে জানতো, এটি হয়তো তার জীবনেরই শেষ ছবি হয়ে থাকবে!

নঁতের সদ্য সাবেক সতীর্থদের সাথে তোলা সেই শেষ ছবি! ; Image Source : Emiliano Sala Instagram

সালা’কে বহনকারী ১৯৮৪ সালে নির্মিত সিঙ্গেল টার্বাইন ইঞ্জিনের পাইপার পিএ-৪৬ মালিবু বিমানটি সেদিন সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে নঁতে ত্যাগ করে। কার্ডিফ সিটি ক্লাবের পক্ষ থেকে তার বিমান ঠিক করে দিতে চাইলেও সালা রাজি হননি। নঁতে ছেড়ে এসে ইংলিশ চ্যানেলের দ্বীপ গুয়ের্নসের কাছে ৫,০০০ ফিট উচ্চতা দিয়ে উড়ছিলো বিমানটি। এ সময় প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ২,৩০০ ফিট উচ্চতায় নেমে আসে সেটি। তবে এরপরই ঘটে বিপদ, বিমানের সঙ্গে গুয়ের্নসের পুলিশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, রাডার থেকে হারিয়ে যায় বিমানের চিহ্ন। জানা যায়, গুয়ের্নসে থেকে ১৫ মাইল দূরে রাডারের সাথে যোগাযোগ হারায় বিমানটি। ধারণা করা হয়, ৫০০০ ফিট উচ্চতার ঠান্ডায় বিমানটির ইঞ্জিন জমে গিয়েছিলো, আর সেই আটকে যাওয়া ইঞ্জিনের তাপমাত্রা কমানোর জন্যই নিচে নামছিলো বিমানটি। রাডার থেকে অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই শুরু হয় সার্চ পার্টির অভিযান, তবে রাত দুইটার দিকে তীব্র বাতাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে অভিযান বন্ধ করা হয়। পরদিন সকাল আটটায় আবার শুরু হয় অভিযান, কার্ডিফ সিটি তাদের সেদিনের ট্রেনিং বাতিল করে। দুপুরের দিকে চ্যানেল আইল্যান্ডস এয়ার সার্চের চিফ অফিসার জন ফিটজগেরাল্ড জানান, কেউ বেঁচে আছে বলে তারা আশা করতে পারছেন না। তার বক্তব্য অনুযায়ী, প্লেনটি স্রেফ অদৃশ্য হয়ে যায়, কোনো রেডিও যোগাযোগও ছিল না।

সালাকে বহনকারী হতভাগ্য বিমানটি; Image Source : Mirror.co.uk

দুর্ঘটনার কয়েক ঘন্টা পর প্রকাশ পায় দুর্ঘটনার আগে পরিবার ও বন্ধুদের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো সালার অডিও মেসেজ, যেখানে ভীতসন্ত্রস্ত মনে হচ্ছিলো তাকে। সেখানে সালা বলেন,

‘কী খবর বন্ধুরা, তোমরা কেমন আছো?’

‘বন্ধু, আমি ক্লান্ত। আমি এখানে নঁতে’তে ছিলাম, কাজ করছিলাম এবং করছিলাম, কিন্তু সেটা কখনোই শেষ হয় না।’

‘আমি এমন একটা বিমানে আছি, যেটা মনে হচ্ছে ভেঙ্গে পড়বে। আমি কার্ডিফে যাচ্ছি, সেখানে গিয়ে আমি কালকেই শুরু করবো, এবং কালকে বিকেলেই আমার প্রথম ট্রেনিং, আমার নতুন ক্লাবে…’

‘তো… দেখা যাক কী হয়! তোমরা কেমন আছো বন্ধুরা?’

‘যদি ঘন্টা দেড়েকের মধ্যে আমার থেকে কোনো খবর না পাও, আমি জানি না ওরা আমাকে খোঁজার জন্য কাউকে পাঠাবে কি না। কারণ আমি জানি না, ওরা আমাকে খুঁজে পাবে কি না। কিন্তু তুমি তো জানো বাবা, আমি কতখানি ভীত!’

ছেলের দুর্ঘটনার পর ভেঙে পড়া সালার বাবা; Image Source : The Australian

কার্ডিফ থেকে নঁতে’তে ফিরেছিলেন সালা এই বিমানটিতে করেই, এবং তিনি তার বন্ধুবান্ধবদের কাছে সেই বিমানে যাত্রা নিয়ে সংশয়ও প্রকাশ করেছিলেন। বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার আগে নাকি সালা তার বন্ধুদের কাছে এই বলে মেসেজ পাঠিয়েছিলেন যে, বিমানটি ‘অদ্ভুত শব্দ’ করছে।

কয়েক ঘন্টা আগে খবর আসে, বিমানের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পেয়েছে গুয়ের্নসে পুলিশ। তারা বলেছে, যদি এটি সেই বিমানের হয়ে থাকে, এবং বিমানটি পানিতে আঘাত করে থাকে, তাহলে তাদের দু’জনের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ, খুবই ক্ষীণ।

সালা’র জন্য প্রার্থনা শুরু করেছে তার সাবেক দল নঁতে এবং বর্তমান দল কার্ডিফের সমর্থকেরা। মোমবাতি জ্বালিয়ে, ফুল দিয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছেন, যেন ফিরে আসেন সালা। সাথে ষাট বছর বয়সী পাইলট ডেভিড ইবটস্টোন, যিনি তিন সন্তানের বাবা। কার্ডিফ সিটি সালার পরিবারের জন্য শোক প্রকাশ করেছে, তার বোনকে ওয়েলসে ডেকে পাঠিয়েছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ।

সালা’র জন্য নঁতে সমর্থকদের প্রার্থনা ; Image Source : FC Nantes Twitter

কার্ডিফের জন্যও সময়টি মোটেও সুবিধার নয়। ক্লাব রেকর্ড এই সাইনিংয়ের জন্য তাদের খরচ হয়েছিলো ১৭ মিলিয়ন ইউরো, ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে পুরোটাই ক্ষতি। অন্যান্য ক্ষেত্রে দেখা যায়, এরকম দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ক্লাব ইনস্যুরেন্সের টাকা পায়। কিন্তু সালার সাইনিং সম্পন্নই হয় ১৯শে জানুয়ারি, এর মধ্যে তারা ইনসুরেন্সের কাজ আদৌ সম্পন্ন করতে পেরেছেন বলে মনে হয় না। তবে যদি তারা নঁতে’র সাথে এমন চুক্তি করে থাকেন যে, তারা পুরো টাকা একসাথে না দিয়ে ইন্সটলমেন্টে দেবেন, তাহলে হয়তো কিছু হতে পারে।

তবে সেটি মুখ্য নয়। মুখ্য বিষয় এখানে একটাই, এমিলিয়ানো সালা। যাকে নিয়ে স্বপ্ন শুধু কার্ডিফ ভক্তরাই দেখছিলেন না, দেখছিলেন আলবিসেলেস্তারাও। জাতীয় দলের স্ট্রাইকাররা ক্লাবে দারুণ হয়েও যে জাতীয় দলে বারবার ব্যর্থতায় পর্যুদস্ত হন, সেই ধারা সালা ভাঙবেন, এই আশায় ছিলেন অনেকেই। কিন্তু সে আর হলো কই! গুয়ের্নসে কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় দিনের পর অভিযান বন্ধ করে দিয়েছে, তাদের মতে এটি আর উদ্ধার অভিযান নয়, বরং ধ্বংসাবশেষ খোঁজার অভিযান। কালকে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন, অভিযান আর চালাবেন কি না। পৃথিবীটা বড্ড যান্ত্রিক, এখানে কেউ আশায় বুক বাঁধতে চায় না!  

আসুন, আমরা আশা করি, হয়তো বিমানটি বিধ্বস্ত হয়নি, ধ্বংসাবশেষগুলো সেই বিমানের নয়। আমরা ধরে নিই,  প্লেনটা ভেঙে পড়ার আগেই তারা দু’জনে প্যারাস্যুট নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, উঠেছেন আশেপাশের কোনো এক দ্বীপে। আমরা হতাশ না হই, সালা আর ডেভিড হয়তো কোনো এক ভেলায় চড়ে ভাসছেন ইংলিশ চ্যানেলে, কাল ভোরের আলো ফুটতেই তার দেখা পাবে কোনো এক উদ্ধারকারী হেলিকপ্টার।

আসুন আমরা অপেক্ষা করি একটি অলৌকিক ঘটনার, যখন আমাদের প্রার্থনা মঞ্জুর হবে, যখন এমিলিয়ানো সালা আবার ফিরে আসবেন। আমরা ততক্ষণ আশায় বুক বেঁধে অপেক্ষা করি। আপনি ফিরে আসুন সালা, আমাদের জন্য, ফুটবলের জন্য।

This article is in Bangla language. It is dedicated in memory of Emiliano Sala, an Argentine striker, who recently moved from FC Nantes to Cardiff City, has been lost in a plane accident in the British Channel. Sala was an in-form striker who was brought in for a club record fee by Cardiff City. This article talks about the accident, and also of our hope, that he may survive. 

Feature Image: Reuters

Related Articles