Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মহাকাব্যিক এক ফাইনাল!

পুরো ম্যাচ মিস করা কেউ যদি হুট করে বিশ্বকাপ ফাইনালের স্কোরকার্ডে চোখ বুলায়, তাহলে হয়তো কিছুক্ষণ অবিশ্বাস ভরা চোখে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়েই থাকবে। এটাও কি সম্ভব? ফাইনাল শুরুর আগে পুরো বিশ্বের সেরা চিত্রনাট্যকারকেও যদি এই ম্যাচের একটা অসাধারণ নাটকীয় কাহিনী লেখার দায়িত্ব দেওয়া হতো, তিনিও তার বানানো কাহিনীতে এত বাঁকবদল আনতে পারতেন না, তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। আনবেনই বা কী করে, স্বয়ং ক্রিকেট দেবতা নিজ হাতে যে ম্যাচের কাহিনী লিখে দিয়েছেন, সেটাকে কি অতিক্রম করা সম্ভব? 

ফাইনালের আগে ট্রফির সাথে দুই দলের অধিনায়ক; Image Credit: Getty Images

লর্ডসের ফাইনালে দুই দলের উপরেই আকাশসম চাপ ছিল, দুই দলের সামনেই ছিল প্রথমবারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ। এই মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন নিউ জিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। পিচে ঘাসের পরিমাণ ছিল অনেক বেশি, তাছাড়া সকালে এক পলশা বৃষ্টির কারণে আবহাওয়াও ছিল কিছুটা মেঘাচ্ছন্ন। তাই সব মিলিয়ে টসে হেরে ফিল্ডিংটাও ইংলিশদের জন্য খারাপ কোনো ফলাফল ছিল না। কন্ডিশনের পূর্ণ ফায়দা তুলে সুইংয়ের বিষাক্ত বিষে নিউ জিল্যান্ডের দুই ওপেনার মার্টিন গাপটিল ও হেনরি নিকোলসকে বারবার বিব্রত করছিলেন দুই ইংলিশ পেসার ক্রিস ওকস ও জোফরা আর্চার।

সেই দুর্দান্ত বোলিংয়ের কারণে পুরো আসরে নিজের ছায়া হয়ে থাকা গাপটিল এই ম্যাচে দারুণ শুরু করেও সেটাকে লম্বা করতে পারেননি, ব্যক্তিগত ১৯ রানে ওকসের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফিরেন। এরপর পুরো আসরেই ব্ল্যাকক্যাপসদের ত্রাণকর্তার ভূমিকা পালন করা উইলিয়ামসন ক্রিজে এসে নিকোলসকে সাথে নিয়ে আস্তেধীরে ইনিংস এগিয়ে নেওয়ার কাজ চালাতে থাকেন। শুরুতে রান তোলার গতি বেশ কম হলেও পরে দুইজনই রানরেট প্রায় পাঁচের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। 

ঠিক তখনই রঙ্গমঞ্চে হাজির লিয়াম প্লাঙ্কেট; উইলিয়ামসনকে বাটলারের তালুবন্দী করে ভেঙে দেন ৬৮ রানের জুটি। দলীয় ১১৫ রানে প্লাঙ্কেট ফিরিয়ে দেন আরেক সেট ব্যাটসম্যান নিকোলসকে, এর আগেই অবশ্য তিনি বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ফিফটি তুলে নিয়েছিলেন। এই আউটের পর অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান রস টেইলরের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছিল। কিন্তু আম্পায়ার মারিয়াস ইরাসমাসের এক ভুল সিদ্ধান্তে ব্যক্তিগত ১৫ রানে তিনি ফিরে গেলে বেশ চাপে পড়ে যায় ব্ল্যাকক্যাপসরা। শেষ পর্যন্ত টম ল্যাথামের ৪৭ রান ও বাকিদের ছোট ছোট অবদানে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৮ উইকেটে ২৪১ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় তারা। 

গুরুত্বপূর্ণ তিন উইকেট তুলে নিয়ে নিউ জিল্যান্ডের রানের চাকা শ্লথ করে দেন প্লাঙ্কেট; Image Credit: AP

লক্ষ্যমাত্রার হিসাবে ২৪২ রান এই যুগে আহামরি কিছু না। কিন্তু লর্ডসের উইকেটে অনেক বেশি সবুজ হওয়ায় আসরের সেরা বোলিং লাইনআপের বিরুদ্ধে এই রান তুলতেও ইংলিশদের কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে, তা শুরু থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। ইনিংসের প্রথম বলেই বোল্টের বলে এলবিডব্লিউ হতে পারতেন ইংল্যান্ডের তুরুপের তাস জেসন রয়, কিন্তু সেই দফায় একদম অল্পের জন্য বেঁচে যান তিনি। তবে খুব বেশিক্ষণ ক্রিজেও থাকতে পারেননি রয়, তাকে ব্যক্তিগত ১৭ রানে ফিরিয়ে ২৮ রানে ইংল্যান্ডের এই ভয়ঙ্কর জুটি ভাঙেন ম্যাট হেনরি।

এরপর বেয়ারস্টোকে সাথে নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় ইনিংস এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালান ইংলিশদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান জো রুট, কিন্তু সেই প্রচেষ্টা চালাতে গিয়ে খুব ধীরগতিতে ব্যাট চালানোয় তিনি নিজেই ভীষণ চাপে পড়ে যান। সেই চাপের কারণেই গ্র‍্যান্ডহোমের বলে ব্যক্তিগত ৭ রানে ফিরে যান তিনি। আর এই ৭ রান করতেই তাকে খরচ করতে হয়েছিল ৩০টি বল! এরপর বেয়ারস্টোর উপর একটু বাড়তি দায়িত্ব ছিল, তার ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল, তিনি বেশ ভালো ছন্দেই আছেন। কিন্তু লকি ফার্গুসনের বলে বোল্ড হয়ে ইংল্যান্ডের বিপদ আরো বাড়িয়ে দেন তিনি।

ইংল্যান্ড সম্পূর্ণ খাদের কিনারায় চলে যায় ২৩.১ ওভারে। রানের গতি বাড়াতে জিমি নিশামের করা প্রথম বলেই অহেতুক আক্রমণ করে বসেন মরগ্যান। দুর্দান্ত এক ক্যাচ ধরে তাকে আউট করেন ফার্গুসন, মরগ্যান আউট হলেন ২২ বলে ৯ রান করে। ইংল্যান্ডের সংগ্রহ তখন ৮৬/৪।

পেন্ডুলামের কাঁটা হুট করে যেন নিউ জিল্যান্ডের দিকে চলে গেল। তখন ইংলিশদের ম্যাচে ফেরার একমাত্র আশা বেন স্টোকস আর জস বাটলারের জুটি। ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় মঞ্চে এই দুইজন অবশ্য হতাশ করেননি, পাগলামি না করে হিসেবি ব্যাটিং করে দলকে বিপদ থেকে টেনে তুলতে থাকেন এই দুইজন। দুইজনই তুলে নেন ফিফটি।

ধুঁকতে থাকা ইংল্যান্ডকে টেনে তুলেন স্টোকস আর বাটলার; Image Credit: AFP

তাদের এই বড় জুটিতে মনে হচ্ছিল, ইংল্যান্ড বুঝি সহজ জয়ের দিকেই হাঁটছে। কিন্তু এই ম্যাচের গতিপথ এতটা সহজ হলে তো হয়েই গেছিল, দলীয় ১৯৬ রানের সময়ে ফার্গুসনের বলে ৫৯ রানে বাটলার আউট হলে ভেঙে যায় ১১০ রানের জুটি। ইংল্যান্ডের তখনও জয়ের জন্য দরকার ৩১ বলে ৪৪ রান, এমন সময়ে ইংলিশদের সেরা ফিনিশার আউট হওয়ায় ম্যাচে বেশ ভালোভাবেই ফিরে আসে নিউ জিল্যান্ড। ‘ব্ল্যাক ক্যাপস’দের আশার পালে আবারও আরেকটু হাওয়া লাগান ফার্গুসন, অলরাউন্ডার ক্রিস ওকসকে আউট করে ইংলিশদের প্রথম বিশ্বজয়ের পথটাকে ভীষণ বন্ধুর করে দেন এই পেসার।

তখনও ইংলিশদের দরকার ২৩ বলে ৩৯ রান। হিসেবের মারপ্যাঁচে মোটেও সহজ কিছু নয়। তবে ইংলিশদের আশার কারণ ছিল একটাই, ক্রিজে তখনও বেন স্টোকস ছিলেন। তাকে বেশ ভালো সঙ্গ দেন লিয়াম প্লাঙ্কেট, কিন্তু ১০ বলে ১০ রান করে তিনিও ফিরে গেলে পুরো চাপটাই চলে আসে স্টোকসের একার উপরে। শেষ ৯ বলে দরকার ২২ রান, লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে তখন তাকে বড় কিছু করতেই হতো।

নিশামের বলে স্লগ সুইপ হাঁকালেন স্টোকস, লং অনের বাউন্ডারি লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা বোল্ট সেই ক্যাচটা ধরেও ফেললেন। কিন্তু ভারসাম্য রাখতে না পারায় বল তুলে দিলেন গাপটিলের হাতে। তবে ততক্ষণে যা সর্বনাশ হওয়ার হয়ে গেছে। গাপটিলের হাত থেকে বল ছুঁড়ে মারার আগেই বোল্টের পা বাউন্ডারি লাইন স্পর্শ করেছিল, ফলে নিশ্চিত আউটের বদলে উল্টো ছক্কা পেয়ে যান স্টোকস! 

বোল্টের এই এক ভুল পুরো ফাইনালের হিসাব বদলে দেয়; Image Source: Stuff.co.nz

বোল্টের এক ভুলে পুরো ম্যাচ নিউজিল্যান্ডের হাতে এসেও আসলো না! তবুও নিশাম শেষ চেষ্টা চালালেন, নিজের স্পেলের শেষ বলে আর্চারকে আউট করে শেষ ওভারে বোল্টের জন্য রেখে যান ১৫ রান। এদিকে ক্রিজে আছেন ইংল্যান্ডের শেষ ভরসা বেন স্টোকস। প্রথম দুই বলে অসাধারণভাবে দুইটা ডট আদায় করে নিয়ে বোল্ট যেন আগের ওভারে করা ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। ৪ বলে ১৫ রান যখন প্রায় অসম্ভব মনে হচ্ছিল, তখন আবারও নাটকে বাঁকবদল। স্লগ সুইপে ছক্কা মেরে ইংল্যান্ডকে খেলায় ফেরালেন স্টোকস।

৩ বলে দরকার ৯ রান! দুই দলের দিকেই তখন পাল্লা সমান ভারি। চতুর্থ বলে অবশ্য বাউন্ডারি হাঁকাতে পারলেন না স্টোকস, ডিপ মিড উইকেটে বল ঠেলে দিয়ে ছুটলেন দুই রানের জন্য। এদিকে স্টোকসকে রান আউট করার জন্য বল তার প্রান্তে ছুঁড়ে দেওয়া হলো। কিন্তু হায়, এ কেমন অদ্ভুতুড়ে পরিস্থিতি! নিজেকে আউট থেকে বাঁচাতে মাটিতে ঝাঁপিয়ে পড়া স্টোকসের ব্যাটে লেগে বল চলে গেল সীমানার বাইরে! যেটাতে মেরেকেটে দুই হতে পারতো বড়জোর, সেটাই হয়ে গেল ছয় রান! অবশ্য সেখানে স্টোকসের কোনো দোষ ছিল না, পুরো ব্যাপারটাই ছিল অনিচ্ছাকৃত। কিন্তু অতিরিক্ত চার রান খাওয়ার এই আক্ষেপ কি তাতে একটুও ঘুচবে? 

ক্ষমাপ্রার্থী স্টোকস! Image Source: The South African

তবে দুর্ভাগ্যের কাছে মাথা না নুইয়ে নিজেদের সেরাটা দিয়ে লড়তে থাকে নিউ জিল্যান্ড। ২ বলে তখন দরকার ৩ রান, বোল্টের করা পঞ্চম বল লং অফে পাঠিয়ে অসম্ভব এক দুই রানের পিছনে ছোটেন স্টোকস। সেই যাত্রায় অবশ্য সফল হননি, আদিল রশিদ রানআউট হলে এক রানই যোগ হয় ইংলিশদের খাতায়।  

বিশ্বকাপের শেষ বল। জয়ের জন্য ইংলিশদের দরকার ২ রান, আর নিউ জিল্যান্ডের দরকার ডট বল। আর এক রান হলে ম্যাচ চলে যাবে সুপার ওভারে! শেষ বল করতে এলেন বোল্ট, এই অতিরিক্ত চাপের ফলেই হয়তো দিয়ে বসলেন ফুলটস। কিন্তু আরো বেশি চাপে থাকা স্টোকস সেই ফুলটসকে সজোরে মারার চেষ্টা না করে আলতো করে লংঅনের দিকে মেরে দিলেন। এক রান নেওয়ার পর শেষ চেষ্টা হিসেবে নেওয়ার দৌড় দিলেন দ্বিতীয় রানের জন্য, কিন্তু নিশামের অসাধারণ থ্রো থেকে বল পেয়ে উড ক্রিজে আসার আগেই স্ট্যাম্প ভেঙে দেন বোল্ট। দীর্ঘ সাড়ে সাত ঘন্টার অবিশ্বাস্য এক লড়াই শেষেও জয়ী দল খুঁজে পাওয়া গেল না। ম্যাচ টাই!

তবে নিয়ম অনুযায়ী একটা দলকে তো চ্যাম্পিয়ন হতেই হবে! তাই ম্যাচ গড়ালো সুপার ওভারে। মূল ম্যাচে পরে ব্যাট করা ইংল্যান্ড সুপার ওভারে আগে ব্যাট করতে নামে, এই ম্যাচে তাদের সেরা দুই ব্যাটসম্যান বাটলার আর স্টোকসকেই নামানো হয় বিশ্বকাপ-নির্ধারণী এই লড়াইয়ের জন্য। অন্যদিকে, শেষ ওভারের মতো সুপার ওভারও করতে আসেন ট্রেন্ট বোল্ট। স্টোকসের ৩ বলে ৮ রান আর বাটলারের ৩ বলে ৭ রানে বোল্টের সুপার ওভার থেকে ১৫ রান তুলে নেয় ইংলিশরা।

জয়ের জন্য নিউ জিল্যান্ডকে করতে হতো ১৬ রান, ১৫ রান করলে সুপার ওভারও টাই হবে। কিন্তু সেক্ষেত্রে মূল ম্যাচে বেশি বাউন্ডারি মারা দলই জিতবে।

নিজেদের সেরা ডেথ ওভার বোলার জোফরা আর্চারকেই সুপার ওভার করার দায়িত্ব দেন মরগ্যান। আর নিউ জিল্যান্ডের সেরা দুই হিটার নিশাম আর গাপটিল নামেন এক গুরুদায়িত্ব নিয়ে। প্রথম বলে ওয়াইড ইয়র্কার মারতে গিয়ে ওয়াইড দিয়ে বসেন ক্যারিবিয়ান বংশোদ্ভূত এই পেসার। ফলে আবারও করতে হয় প্রথম বল, সেখান থেকে দুই রান নেন নিশাম। দ্বিতীয় বলে ইয়র্কার মারতে গিয়ে স্লটে বল দিয়ে বসেন আর্চার, তার ফায়দা লুটে ছক্কা হাঁকিয়ে নেন নিশাম।

ছয় বলে ১৬ রান থেকে সমীকরণ নেমে আসে চার বলে সাত রানে! ম্যাচের পেন্ডুলাম আবারও নিউ জিল্যান্ডের দিকে! পরের দুই বলে বাউন্ডারি নিতে না পারলেও ইংল্যান্ডের মিসফিল্ডিং আর ভুল প্রান্তে থ্রো করার সুবিধা নিয়ে মোট চার রান তুলে সমীকরণ ২ বলে ৩ রানে নামিয়ে আনেন নিশাম। কী বিচিত্র এই পৃথিবী, মূল ম্যাচেও ইংল্যান্ডের শেষ বলে দরকার ছিল ঠিক ৩ রান! পরের বলে অবশ্য ২ নিতে পারলেন না নিশাম, ১ রানে সন্তুষ্ট থাকায় শেষ বলে নিউ জিল্যান্ডের জয়ের জন্য দরকার পড়ে ২ রান।

সেই ২ রান নেওয়ার গুরুদায়িত্বটা যায় মার্টিন গাপটিলের ঘাড়ে, যিনি সেমিফাইনালের ওই অবিশ্বাস্য রানআউট বাদে পুরো আসরেই ছিলেন নিষ্প্রভ। অন্যদিকে, বল হাতে দাঁড়িয়ে আছেন সেই জোফরা আর্চার, যাকে দলে নিতে প্রচলিত নিয়মে পরিবর্তন এনেছিল ইংলিশরা, একদম শেষ মুহূর্তে ডেভিড উইলির বদলে তাকে দলে নেওয়ায় সমালোচনাও কম হয়নি। দুইজনের সামনেই নায়ক হওয়ার সুযোগ। 

বিশ্বকাপ-নির্ধারণী সেই রান আউট; Image Source: Fox Sports

শেষ বলে একদম গাপটিলের বুট বরাবর ফুল লেংথে বল করেন আর্চার, ডিপ স্কয়ারে সেই বল পাঠয়ে দ্রুত এক রান নিয়ে দ্বিতীয় রানের জন্য দৌড় লাগান গাপটিল। এদিকে ফিল্ডার জেসন রয় কোনো ভুল করেননি, নিঁখুত থ্রোয়ের মাধ্যমে বল পাঠিয়ে দেন বাটলারের কাছে। গাপটিল ক্রিজে প্রবেশ করার আগেই উইকেট ভেঙে দিলেন বাটলার।

একপ্রান্তে রাজ্যের হতাশা, অন্যপ্রান্তে অনাবিল উল্লাস!; Image Source: ICC

পুরো ইংল্যান্ড দল তখন আনন্দে উন্মাতাল, নিজেদের ঘরের মাঠ লর্ডসের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন সবাই। সেই ১৯৭৫ সালে বিশ্বকাপ শুরুর পর থেকে যে অপেক্ষার শুরু, দীর্ঘ ৪৪ বছর পর সেই অপেক্ষার শেষ হওয়াতে এমন উচ্ছ্বাসই তো স্বাভাবিক।

অন্যদিকে, আক্ষেপে মাথা নুইয়ে ফেলেছেন গাপটিল, তাকে সান্ত্বনা দিতে আসা নিশামও যেন শোকে বাকরুদ্ধ। অবস্থা বুঝতে পেরে উদযাপন থামিয়ে নিউ জিল্যান্ডের দুই খেলোয়াড়কে সমবেদনা জানাতে এগিয়ে আসেন ইংলিশ খেলোয়াড়েরা। কিন্তু তাতে কি এই দুঃখ ঘুচবে? অফিসিয়ালি ম্যাচ টাই, সুপার ওভারেও ম্যাচ টাই, তবুও যখন আপনি যখন পরাজিত দলে, তখন পৃথিবীর সমস্ত সমবেদনাও সেই দুঃখে প্রলেপ দিতে যথেষ্ট নয়। ফাইনালশেষে নিশামের একটি টুইটই বুঝিয়ে দেয়, কতটা হতাশ ছিলেন তারা,

‘বাচ্চারা, খেলাধুলাকে পেশা হিসেবে নিও না। ওর চেয়ে বরং বেকারি বা অন্য কিছু করো, ষাট বছর বয়সে মোটা-হাসিখুশি থেকেই চলে যাও।’ 

ট্রফি হাতে উল্লাসে ব্যস্ত ইংলিশরা; Image Credit: Getty Images

ফাইনালে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছেন বেন স্টোকস। বিচিত্র এই পৃথিবীর সমস্ত রূপই হয়তো দেখে ফেলেছেন এই ইংলিশ অলরাউন্ডার। তিন বছর আগে ইডেন গার্ডেনে ব্রাথওয়েটের কাছে টানা চার ছক্কা খেয়ে ফাইনাল হারার পর স্টোকসের কান্নাভেজা মুখ পুরো ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম ট্র্যাজিক ছবি। এরপরের বছরই বারে গিয়ে মারপিট করার অপরাধে স্টোকস যখন জড়িয়ে গেলেন, তখন মনে হচ্ছিল, তার ক্যারিয়ারটাই বুঝি এখানে থেমে যাবে। 

ফাইনালের আসল নায়ক স্টোকস; Image Source: AAP / Fox Sports

কিন্তু এত কিছুর পরেও দমে যাননি তিনি, সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে ফাইনালে ৮৪ রানের অনবদ্য এক ইনিংস খেলে দলকে লড়াইয়ে টিকিয়ে রেখেছিলেন। এমনকি সুপার ওভারে ৮ রান নিয়েও দলকে এনে দিয়েছিলেন লড়াই করার মতো সংগ্রহ। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, যেই নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে এই অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স উপহার দিলেন স্টোকস, সেই নিউ জিল্যান্ডই তার জন্মভূমি।

নিউ জিল্যান্ড অবশ্য একেবারে খালি হাতে ফিরে যায়নি, পুরো আসরে ৮১ গড়ে ৫৭৮ রান করে নিউ জিল্যান্ডের দুর্বল ব্যাটিং লাইনআপকে বলতে গেলে একাই টেনে নিয়ে গেছেন তাদের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। শুধু ব্যাট হাতে নয়, নিঁখুত রণকৌশলে যেভাবে পুরো দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তা এক কথায় অবিশ্বাস্য। তাই সব মিলিয়ে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়েছেন ক্রিকেটের এই জেন্টলম্যান। কিন্তু টানা দুইবার সোনালি ট্রফিটা এত কাছ থেকে হাতছাড়া করার দুঃখ কি এই পুরস্কার দিয়ে ভুলতে পারবেন উইলিয়ামসন? 

টুর্নামেন্ট সেরা হয়েও হতাশ কেন উইলিয়ামসন; Image Source: AP

হয়তো পারবেন না, সারাজীবনে নিজের আফসোসের কথা বলতে গিয়ে হয়তো এই ম্যাচের কথা অজস্রবার বলতে হবে তাকে। তবুও বলছি, এমন হারে হতাশ হওয়ার কিছু নেই, নেই লজ্জিত হওয়ার কোনো কারণ। চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড ঠিক যতটুকু অভিবাদন প্রাপ্য, ঠিক ততটাই অভিবাদন প্রাপ্য রানার্সআপ নিউ জিল্যান্ডেরও। এমন একটা ম্যাচ উপভোগ করতে পারাটা সত্যিই সৌভাগ্যের ব্যাপার। সর্বকালের অন্যতম সেরা ওয়ানডে ম্যাচ উপহার দেওয়ার পর সুপার ওভারেও যখন ম্যাচ টাই হলো, তখন দুই দলকে যুগ্মভাবে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করলেই হয়তো সেরা ফলাফল বলে মনে হতো। কিন্তু নিয়মের মারপ্যাঁচে এক দলকে তো জয়ী হতেই হবে।

নিয়ম গোল্লায় যাক। দৃঢ়চিত্তে বরং বলি, এই ফাইনালে যেমন ইংল্যান্ড হারেনি, তেমনি হারেনি নিউ জিল্যান্ডও। এমন একটা ম্যাচের পর জয়ী একজনই, আর সেটা অবশ্যই ক্রিকেট!

This article is in Bangla language. It's a review about the epic ICC Cricket World Cup 2019 Final bwtween England & New Zealand. For references please check the hyperlinks inside the article.

Featured Image: espncricinfo.com

Related Articles