Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় ইংরেজদের উত্থান এবং স্প্যানিশদের পতনের কিছু কারণ

অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের নতুন স্টেডিয়াম তৈরির পর উয়েফা থেকে ঘোষণা আসে ২০১৯ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল ম্যাচ আয়োজনের। আর সেই ঘোষণার পর থেকে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমে তোড়জোড় শুরু হয় স্পেনের দলগুলোকে নিয়ে। কারণ সেই সময়ে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় চলছিলো স্প্যানিশ দলগুলোর একক আধিপত্য। আর সেই আধিপত্য ছিল একটানা কয়েক বছর ধরে। ঐ হিসেবে মৌসুমের শুরুতে ধরেই নেয়া হয়েছিল, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ইউরোপা লিগ কিংবা সুপার কাপের শিরোপা আবারও যাবে স্পেনে। কারণ, প্রিমিয়ার লিগের দলগুলো দিন দিন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছিল, আর তাদের পথেই হাঁটছিল ইতালি ও জার্মানির লিগের বড় দলগুলো।

Image source: Marca

শীর্ষ ৫ লিগের অন্য দলগুলোর এমন ব্যর্থতার দিনে স্প্যানিশ লিগ থেকে সর্বাধিক সফলতা অর্জন করেছিল রিয়াল মাদ্রিদ, সেভিয়া, বার্সেলোনা এবং অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। আর ওয়ান্ডা মেট্রোপলিটানোতে ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে, এমন ঘোষণার পর তর্কাতর্কি চলে কোন দুই স্প্যানিশ দল ফাইনাল খেলবে সে বিষয়ে।

Image source:  Extra Pasto

স্প্যানিশ তিন হেভিওয়েট দলের এমন প্রস্তুতি এবং আত্মবিশ্বাসের মাঝে কোনো ফুটবল ভক্তই হয়তো ভাবেননি, হঠাৎ করে জ্বলে উঠবে প্রিমিয়ার লিগের দলগুলো! চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউট পর্বে একে একে বাদ পড়েছিল অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা। অতঃপর ওয়ান্ডা মেট্রোপলিটানোতে ফাইনালে মুখোমুখি হয় প্রিমিয়ার লিগের দুই জায়ান্ট লিভারপুল ও টটেনহ্যাম। পচেত্তিনোর সুকৌশলে ম্যানচেস্টার সিটি, আয়াক্সের মতো দলকে পরাজিত করে রূপকথার জন্ম দিয়ে গতবার প্রথমবারের মতো ফাইনালে কোয়ালিফাই করেছিল টটেনহ্যাম।

Image source: The Guardian

অন্যদিকে, অল রেডরা বার্সেলোনার বিপক্ষে অসাধারণভাবে ফিরে এসে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনাল নিশ্চিত করে। অতঃপর ওয়ান্ডা মেট্রোপলিটানোতে ফুটবল-বিশ্ব দীর্ঘ সময় পর উপভোগ করে একটি ‘অল-ইংল্যান্ড’ ফাইনাল ম্যাচ। আর সেই ফাইনালে টটেনহ্যামকে পরাজিত করে শিরোপা জিতেছিল লিভারপুল। এই শিরোপা জয়ের মধ্য দিয়ে ২০১৩ সালের পর আবারও স্পেনের বাইরের কোনো দলের ক্যাবিনেটে যুক্ত হয় মর্যাদাপূর্ণ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপাটি।

Image source:  Africanews

একই ঘটনা পরিলক্ষিত হয়েছিল ইউরোপা লিগে। সেখানেও ফুটবল-বিশ্ব উপভোগ করে আরেকটি ‘অল-ইংল্যান্ড’ ফাইনাল ম্যাচ। নাপোলি, ভ্যালেন্সিয়ার মতো তারকাসমৃদ্ধ দলকে পরাজিত করে গতবারের ইউরোপা লিগের ফাইনালে কোয়ালিফাই করেছিল আর্সেনাল। অন্যদিকে ডায়নামো কিয়েভ, ফ্রাঙ্কফুর্টের মতো দলকে পরাজিত করে দ্বিতীয় দল হিসেবে ফাইনালে কোয়ালিফাই করে চেলসি। অতঃপর বাকুতে সদ্যবিদায়ী তারকা ইডেন হ্যাজার্ডের জাদুতে আর্সেনালকে পরাজিত করে শিরোপা জিতেছিল ‘ব্লুজ’রা। এই ইউরোপা লিগ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জেতার মধ্য দিয়ে স্প্যানিশদের আধিপত্যকে গুঁড়িয়ে দিয়ে ইউরোপিয়ান ফুটবলে নতুন করে আধিপত্য কায়েম করছিল প্রিমিয়ার লিগের দল দুটো। আজ আমরা আলোচনা করবো ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় স্প্যানিশদের এমন পতন ও ইংরেজদের আচমকা সফলতার উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ নিয়ে। তবে তার আগে স্প্যানিশদের সফলতা কেমন ছিল, তা-ও ভালোভাবে জানা যাক।

স্পেনের এক দশকের আধিপত্য

চলতি শতাব্দীতে নিজ ভূখণ্ডের গণ্ডি পেরিয়ে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বেশি সফল হয়েছে স্প্যানিশ কয়েকটি দল। ২০০৯ সালের পর শুধুমাত্র রিয়াল মাদ্রিদ একাই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতেছে সর্বমোট ৪ বার। তাদের নগর প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ শিরোপা না জিততে পারলেও ফাইনাল খেলেছে মোট ২ বার। আর এই পরিসংখ্যানে রিয়ালের পরই অবস্থান বার্সেলোনার। গত ১০ বছরে কাতালান ক্লাবটিও ৩ বার শিরোপা জিতেছে। অর্থাৎ, বিগত ১০ বছরে ৯ বার ফাইনাল খেলেছে স্প্যানিশ দলগুলো, ৭টি শিরোপা পৌঁছে দিয়েছে স্পেনে।

Image source:  Goal

অন্যদিকে, জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা প্রিমিয়ার লিগের দলগুলো বিগত ১০ বছরে এখন অবধি মাত্র ৫ বার ফাইনালে পৌঁছাতে পেরেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সফলতা এসেছে ২০১২ এবং ২০১৯ সালের ফাইনালে। চেলসি এবং লিভারপুল ইংল্যান্ডকে এই সফলতা এনে দেয়।

Image source: Reuters

শুধুমাত্র চ্যাম্পিয়ন্স লিগে প্রাধান্য বিস্তার করেই ক্ষান্ত হয়নি স্প্যানিশ দলগুলো। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ ইউরোপা লিগেও স্পেনের দলগুলোর ব্যাপক সফলতা লক্ষ্য করা গেছে। সেভিয়া ২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত টানা ৩ বার এই প্রতিযোগিতার শিরোপা জিতে নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করেছিল। শুধু সেভিয়াই না, গত দশ বছরে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদও ৩ বার ইউরোপা লিগের শিরোপা ঘরে তুলেছে। আর পরিসংখ্যান যখন এমন, তখন বোঝাই যাচ্ছে প্রিমিয়ার লিগের দলগুলোর তুলনায় স্প্যানিশ দলগুলো বিগত বছরগুলোতে একটু বেশিই সফলতা কুড়িয়েছে।

অর্থই বর্তমান সময়ে ইংরেজদের সফলতার মূল কারণ?

গত মৌসুমে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় প্রিমিয়ার লিগের দলগুলো উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করার পরিপ্রেক্ষিতে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমগুলো অতিরিক্ত অর্থব্যয়ই ইংরেজদের সফলতার মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করে। পত্রিকাগুলোর এমন দাবি কিছু কিছু ক্ষেত্রে যৌক্তিক হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একেবারেই অযৌক্তিক।

Image source: Getty Images

ফেরা যাক গত মৌসুমের সেমিফাইনাল পর্বে। শিরোপাজয়ী লিভারপুল দুই লেগ মিলিয়ে বার্সেলোনাকে পরাজিত করে ৪-৩ গোলের ব্যবধানে। প্রথম লেগে বার্সেলোনার ঘরের মাঠ ক্যাম্প ন্যু’তে ০-৩ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল ইয়ুর্গেন ক্লপের শিষ্যরা। এমন পরাজয়ের পর অবশ্য কেউই ভাবেনি যে, আবার ফিরে আসতে পারবে দলটি। কিন্তু ফিরতি লেগে ঠিকই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখায় অল রেডরা। অ্যানফিল্ডে বার্সেলোনার প্রায় ১ বিলিয়ন মূল্যের স্কোয়াডকে ৪-০ গোলে পরাজিত করে ফাইনালে উঠেছিল লিভারপুল। আর এই জয়ে আদৌ কি অর্থ কোনো বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল? কখনোই না!

Image source: PA

একইভাবে, ইউরোপা লিগের সেমিফাইনালে ভ্যালেন্সিয়ার মুখোমুখি হয় আর্সেনাল। হিসেব করে দেখা যায়, ভ্যালেন্সিয়ার গোটা স্কোয়াডের চেয়ে আর্সেনালের দুই স্ট্রাইকারের দাম বেশি। প্রথম লেগের ম্যাচটি লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই ম্যাচে নিজেদের কিছু ভুলের কারণে ৩-১ গোলে পরাজিত হয়েছিল ভ্যালেন্সিয়া। পরের লেগেও একই ঘটনা ঘটায় স্প্যানিশ দলটি। নিজেদের মাঠে আধিপত্য বিস্তার করে খেলেও ৪-২ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয় তারা। অথচ দুই লেগে বল দখল এবং আক্রমণ রচনায় এগিয়ে ছিল ভ্যালেন্সিয়া। সেক্ষেত্রে দুর্বল ফিনিশিংয়ের জন্য কখনোই আর্সেনালের শত মিলিয়নকে দায়ী করা যাবে না!

তবে অর্থ আয়ে প্রিমিয়ার লিগের দলগুলো লা লিগার থেকে এগিয়ে থাকে, এটি অস্বীকার করার কিছু নেই। কারণ গত মৌসুমে পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে থেকেও হার্ডাসফিল্ড শুধুমাত্র টেলিভিশন সম্প্রচার থেকে যে অর্থ আয় করেছে, তা ২০১৭-১৮ মৌসুমে বার্সেলোনা ও রিয়ালের টিভি সম্প্রচারের মোট আয় থেকেও বেশি। এমনটা অর্থ ব্যয়ের কারণেই নয়, জনপ্রিয়তাও এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। সে হিসেবে প্রিমিয়ার লিগের এমন সফলতার ক্ষেত্রে তাদের অনেক অর্থ ব্যয়কে উল্লেখ করা একেবারেই অযৌক্তিক।

সেরা কোচদের প্রভাব

প্রিমিয়ার লিগের দলগুলোর এমন উল্লেখযোগ্য সফলতার পেছনে সময়ের সেরা কয়েকজন কোচের অবদান রয়েছে। গত মৌসুমে শিরোপাজয়ী লিভারপুলের কোচ ছিলেন ইয়ুর্গেন ক্লপ এবং ইউরোপাজয়ী চেলসির কোচ ছিলেন মরিসিও সারি। যদিও সারি বর্তমানে ইংল্যান্ড ছেড়ে ইতালিতে পাড়ি জমিয়েছেন, তবে ক্লপ এখনও লিভারপুলেই রয়ে গেছেন। আর এই ক্লপের নেতৃত্বে টানা দুবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল খেলেছে লিভারপুল। প্রথমবার স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে পরাজিত হলেও পরেরবার পচেত্তিনোর টটেনহ্যামকে পরাজিত করে শিরোপা জিতেছিল দলটি।

Image source: Getty Images

২০১৩ সালে টটেনহ্যামের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত বেশ সুনামের সঙ্গেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন আর্জেন্টাইন পচেত্তিনো। একাধিকবার লিগ শিরোপা জেতার দ্বারপ্রান্তে গিয়েও ব্যর্থ হন তিনি। তবে এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে পৌঁছাতে বেশ কষ্টকর পথ পাড়ি দিতে হয় পচেত্তিনোকে। গার্দিওলার ‘হট ফেভারিট’ ম্যানচেস্টার সিটি, অতঃপর টুর্নামেন্টে রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্টাসকে পরাজিত করে সেমিতে কোয়ালিফাই করা আয়াক্সকে পরাজিত করে তার শিষ্যরা। আর এই গোটা অগ্রযাত্রায় তিনি পাশে পাননি প্রধান তারকা হ্যারি কেনকে। কারণ, ইনজুরির কারণে হ্যারি কেন নকআউট পর্বে অংশগ্রহণই করতে পারেননি।

একইভাবে, ইউরোপা লিগের দুই ফাইনালিস্ট চেলসি এবং আর্সেনালের দুই কোচ ছিলেন অভিজ্ঞ। গানার্সদের উনাই এমেরি সেভিয়া ছাড়ার পূর্বে দলটিকে টানা ৩ বার ইউরোপা লিগ জেতান। সেই হিসেবে ইউরোপা লিগের সবকিছুই তার ভালোভাবে জানা ছিল। অন্যদিকে, মরিসিও সারি নিজের প্রথম মৌসুমে এসেই প্রিমিয়ার লিগে বাজিমাত করেন। চেলসিকে শীর্ষ চারে রাখার পাশাপাশি ইউরোপা লিগও জেতান তিনি। সেই হিসেবে বলা যায়, বিশ্বমানের কোচ থাকার পরিপ্রেক্ষিতেই এমন উল্লেখযোগ্য সফলতা পেয়েছে প্রিমিয়ার লিগের দলগুলো।

Image source: Getty Images

গত মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের এমন সফলতার দিনে স্প্যানিশ লিগে নামকরা কোনো কোচই ছিলেন না। এর আগে জিদানের বিদায়ের পর রিয়াল মাদ্রিদ পরপর ২ জন কোচকে অদলবদল করে। জিদান আবার দলের দায়িত্ব নিলেও ততক্ষণে রিয়ালের হারানোর মতো বাকি আর কিছুই ছিল না। একইভাবে, কোচ ভালভার্দের ধারাবাহিক ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত দিয়েছে বার্সেলোনা। তা না হলে লিভারপুলের বিপক্ষে প্রথম লেগে এগিয়ে থেকেও পরের লেগে কোনো গোল করতে না পেরে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হতো না দলটিকে। শুধু চ্যাম্পিয়নসন্স লিগেই নয়, কোপা দেল রে ফাইনালে, এমনকি ইউরোপা লিগের সেমিফাইনাল খেলা ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষেও পরাজিত হয়েছিল দলটি। আর দিনশেষে স্প্যানিশ লিগে নামকরা কোনো কোচ না থাকাটাও তাদের ব্যর্থতার অন্যতম একটি কারণ।

This article is in Bangla language. It is about the English domination and the sudden Spanish downfall in european championships. 

Featured Image: Image via adidas

Related Articles