Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ক্রিকেট বিশ্বকাপে শতকবৃত্তান্ত

দুয়ারে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। ৩০ মে ইংল্যান্ড বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ দিয়েই পর্দা উঠবে ১২তম বিশ্বকাপের মূল আসর। সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়া – নিউ জিল্যান্ড বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে টানা দুইটি শতক হাঁকিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। আর তাতে করে বিশ্বকাপের মঞ্চে বাংলাদেশের শতক না পাওয়ার অপূর্ণতাও লাঘব হয়েছে। বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে সেঞ্চুরি করা যেকোনো ব্যাটসম্যানের জন্য অসামান্য কিছু। আজ আমরা আসন্ন এই ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ উপলক্ষে দেখবো বিশ্বকাপের ইতিহাসের সেঞ্চুরির যত বৃত্তান্ত।

সর্বমোট সেঞ্চুরি

বিশ্বকাপের আগের ১১ আসরে সর্বমোট সেঞ্চুরির সংখ্যা ১৬৫টি। মাত্র ১০৩ জন খেলোয়াড়ের সৌভাগ্য হয়েছে বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে শতক হাঁকিয়ে ব্যাট উঁচিয়ে ধরার, যার সর্বশেষ সংযোজন অস্ট্রেলিয়ার স্টিভেন স্মিথ। ২০১৫ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে তার করা শতকটি ছিল বিশ্বকাপের ১৬৫তম শতক। অন্যদিকে, বিশ্বকাপের ১০০তম শতকটি করেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ম্যাথু হেইডেন। তবে সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপ শতকের ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে লিটল মাস্টার শচীন টেন্ডুলকার। সর্বোচ্চ ৬টি শতক হাঁকিয়েছেন এই ইন্ডিয়ান ব্যাটিং জিনিয়াস। তার ঠিক পেছনেই রয়েছেন রিকি পন্টিং ও কুমার সাঙ্গাকারা। তাদের ঝুলিতে রয়েছে ৫টি বিশ্বকাপ সেঞ্চুরি, যার মধ্যে সাঙ্গাকারা সর্বশেষ বিশ্বকাপেই টানা চার ম্যাচে চারটি শতক করার রেকর্ড গড়েন।

বিশ্বকাপের মঞ্চে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির মালিক শচীন টেন্ডুলকার; Image Source : India Times

আর এই তিনজনের বাইরে মাত্র ৫ জন খেলোয়াড়ের রয়েছে বিশ্বকাপের মঞ্চে অন্তত চারটি সেঞ্চুরি করার সৌভাগ্য। তারা হলেন: এবি ডি ভিলিয়ার্স, তিলকারত্নে দিলশান, সৌরভ গাঙ্গুলী, মাহেলা জয়াবর্ধনে ও মার্ক ওয়াহ।

২০১৫ বিশ্বকাপ – সেঞ্চুরি উৎসব

সর্বশেষ বিশ্বকাপে টানা চার সেঞ্চুরি করার কীর্তি গড়েন সাঙ্গাকারা; Image Source : BBC

বিশ্বকাপের ১১ আসরের মধ্যে দর্শক সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি দেখেছে ২০১৫ বিশ্বকাপেই। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হওয়া এই বিশ্বকাপে মোট সেঞ্চুরির সংখ্যা ছিল ৩৮টি, যা কি না ২০১১ বিশ্বকাপ থেকে ১৪টি বেশি। উল্টোদিকে, সবচেয়ে কমসংখ্যক সেঞ্চুরি হয়েছিল বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আসরে। ১৯৭৯ সালের সেই বিশ্বকাপে শতক হাঁকানো ইনিংস মোটে দুইটি। প্রতি বিশ্বকাপের মোট শতক সংখ্যা নিম্নে দেওয়া হলো:

  • ১৯৭৫ – ৬টি

  • ১৯৭৯ – ২টি

  • ১৯৮৩ – ৮টি

  • ১৯৮৭ – ১১টি

  • ১৯৯২ – ৮টি

  • ১৯৯৬ – ১৬টি

  • ১৯৯৯ – ১১টি

  • ২০০৩ – ২১টি

  • ২০০৭ – ২০টি

  • ২০১১ – ২৪টি

  • ২০১৫ – ৩৮টি

বিশ্বকাপের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান

মজার ব্যাপার হলো, এই রেকর্ডটি এককভাবে কারো নেই। বিশ্বকাপের সর্বপ্রথম শতক হাঁকানো ব্যাটসম্যানের স্বীকৃতি পেয়েছেন দুইজন। ১৯৭৫ বিশ্বকাপে উদ্বোধনী দিনেই দুই মাঠে গড়ায় দুইটি ম্যাচ। সেই দুই ম্যাচেই প্রথম ইনিংসে দুইটি শতক দেখে বিশ্ব।

লর্ডসে মুখোমুখি হওয়া ইংল্যান্ড বনাম ভারত ম্যাচে শতকের দেখা পান ইংল্যান্ডের ডেনিস অ্যামিস, ভারতের বিরুদ্ধে তিনি করেন ১৩৭ রান। অন্যদিকে, এজবাস্টনে নিউ জিল্যান্ড বনাম উত্তর আফ্রিকার খেলায় শতক হাঁকান নিউজিল্যান্ডের গ্লেন টার্নার। তিনি খেলেন অপরাজিত ১৭১ রানের অসাধারণ একটি ইনিংস। তাই প্রথম বিশ্বকাপ সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে দুইজনের নামই একই সাথে উচ্চারিত হয়।

গ্লেন টার্নার প্রথম শতক হাঁকানো দুইজনের একজন; Image Source: ICC

বিশ্বকাপের দ্রুততম সেঞ্চুরি

বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক আয়ারল্যান্ডের কেভিন ও’ব্রায়েন। ২০১১ বিশ্বকাপে তার কাঁধে সওয়ার হয়েই ইংল্যান্ডকে হারায় আয়ারল্যান্ড। ৩২৯ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে এক অসাধারণ ইনিংস খেলেন এই ব্যাটসম্যান। ৫০ বলে শতক হাঁকিয়ে বিশ্বকাপের দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিকও বনে যান কেভিন। ১১৩ রানের সেই ইনিংস তিনি সাজিয়েছিলেন ১৩টি চার ও ৬টি ছক্কার সাহায্যে।

কমবয়সী বিশ্বকাপ সেঞ্চুরিয়ান

দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডের মতো এই রেকর্ডটিও সহযোগী দেশগুলোর দখলে। তবে এইবারও দেশটির নাম আয়ারল্যান্ড। পল স্টারলিং ২০১১ বিশ্বকাপে যখন নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে শতক হাঁকান, সেই সময় এই ওপেনারের বয়স ছিল মাত্র ২০ বছর ১৯৬ দিন। আর তাতেই বিশ্বকাপের সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান বনে যান তিনি। উল্লেখ্য যে, ২১ বছরের কম বয়সী আর কোনো খেলোয়াড়েরই বিশ্বকাপে নেই কোনো সেঞ্চুরি।

মাত্র ২০ বছরেই বিশ্বকাপের মঞ্চে শতক তুলে নেন পল স্টারলিং; Image Source : Sportskeeda

জ্যেষ্ঠ বিশ্বকাপ সেঞ্চুরিয়ান

২০১৫ বিশ্বকাপে ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ বনাম শ্রীলংকা ম্যাচে শতক হাঁকিয়ে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সে শতক তুলে নেওয়ার রেকর্ড করেন তিলকারত্নে দিলশান। সেই সময় দিলশানের বয়স ছিলো ৩৮ বছর ১৩৫ দিন। তবে এই রেকর্ড টিকে ছিল মোটে ১৩ দিন। ১১ই মার্চ স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের রেকর্ডই আবার ভেঙে নতুন করে গড়েন দিলশান। সেই ম্যাচে শতক হাঁকানোর সময় দিলশানের বয়স হয় ৩৮ বছর ১৪৮ দিন। তাই বর্তমানে তিনিই বিশ্বকাপের জ্যেষ্ঠতম সেঞ্চুরিয়ান।

স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে শতকের মাধ্যমে জ্যেষ্ঠতম শতক হাঁকানো খেলোয়াড় হন দিলশান; Image source: Cricinfo

অস্ট্রেলিয়ানদের জয়জয়কার

বিশ্বকাপ জেতার সংখ্যায় যেমন অজিরা বাকিদের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে, তেমনই সেঞ্চুরির সংখ্যায়ও অস্ট্রেলিয়ানরাই এক নাম্বার স্থান দখল করে আছেন। সর্বমোট ২৬টি সেঞ্চুরি এসেছে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের থেকে। তবে ঘাড় দূরত্বেই নিঃশ্বাস ফেলছেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা, তাদের থেকে এসেছে ২৫টি সেঞ্চুরি। অন্যদিকে, বাকি দেশগুলোর মধ্যে যথাক্রমে শ্রীলংকা ২৩, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৭, নিউ জিল্যান্ড ১৫, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকা ১৪, ইংল্যান্ড ১১ ও বাংলাদেশ ২টি শতকের অধিকারী।

ফাইনাল মঞ্চে শতক

বিশ্বকাপ ফাইনালে শতক! যেকোনো ব্যাটসম্যানের জন্যই আরাধ্য একটি ইনিংস। তবে সবার ভাগ্যে তো ফাইনালই জোটেনা। আবার ফাইনাল জুটলেও শতক হাঁকানোর ব্যাপারটা আরও কঠিন। ক্রিকেটের ইতিহাসে মাত্র ছয়জন খেলোয়াড় বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলে নিয়েছেন সেঞ্চুরি।

বিশ্বকাপ ফাইনালের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের মালিক গিলক্রিস্ট; Image Source : Pinterest

প্রথম আসরেই এই কাজটি করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তী ক্লাইভ লয়েড। ১৯৭৫ সালের ফাইনালে ৮৫ বলে ১০২ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। এর পরের ফাইনালেই আরেক ওয়েস্ট ইন্ডিজ গ্রেট এই মাইলফলক অর্জন করতে সক্ষম হন। তিনি আর কেউ নন, স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস। ১৯৭৯ বিশ্বকাপ ফাইনালে শতক হাঁকান স্যার ভিভ, খেলেন অপরাজিত ১৩৮ রানের ইনিংস। পরবর্তীতে ১৯৯৬ ফাইনালে অরবিন্দ ডি সিলভার অনবদ্য ১০৭ রানের ইনিংসে শিরোপা জিতে নেয় স্বাগতিক শ্রীলংকা। অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তী রিকি পন্টিং (১৪০*) ও অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (১৪৯) যথাক্রমে ২০০৩ ও ২০০৭ ফাইনালেও সেঞ্চুরি করেন। এর মধ্যে গিলক্রিস্টের শ্রীলংকার বিপক্ষে করা ১৪৯ রানের ইনিংসটি এখন পর্যন্ত ফাইনালে খেলা সর্বোচ্চ ইনিংস।

তবে এই পাঁচজন থেকে একটু ব্যতিক্রম মাহেলা জয়াবর্ধনের ফাইনালে করা শতকটি। ২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ৮৮ বলে অপরাজিত ১০৩ রানের ইনিংস খেলার পরও তাকে থাকতে হয়েছিল পরাজিত দলে। যেখানে বাকি পাঁচজনই ছিলেন চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য।

সেঞ্চুরির পয়মন্ত ভেন্যু

শতকের জন্য পয়া ভেন্যু খ্যাত এমসিজি;  Image Source : ICC

অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডকে বিশ্বকাপ সেঞ্চুরির জন্য সবচেয়ে পয়মন্ত ভেন্যু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৭টি সেঞ্চুরি দেখেছে মেলবোর্ন। তারপরই অবস্থান পাকিস্তানের করাচী স্টেডিয়াম, সেখানে শতক হয়েছে ছয়টি। বিখ্যাত লর্ডস ও ওভালেও ব্যাটসম্যানেরা সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছে পাঁচবার করে।

This Bangla article is about the facts of the cricket world cup century. References are hyperlinked in below.

Feature Image: ICC

Related Articles