Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জাতীয় দল নিয়েই কখনও ভাবিনি, ডাক পাওয়া তো দূরের কথা: ফজলে রাব্বি

ফজলে মাহমুদ রাব্বি। বয়স ৩০ হলেও, বোঝার জো নেই। সদা হাস্যোজ্জ্বল আর মারকুটে ব্যাটিং তাকে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়ে গেছে অন্য উচ্চতায়। সেই উচ্চতা বলতে এমন নয় যে, তার নামের পাশে হাজার হাজার রান। তবে রাব্বি পরিচিত তার ব্যাটিং স্টাইলের জন্য। সোজা ব্যাটের ছক্কায় তার লোভের কথা সকলেরই জানা। প্রায় ১৫ বছর ধরে ক্রিকেট খেলছেন, সেই ২০০৪ সালে ‘এ’ দলে অভিষিক্ত হয়েছেন। এরপর কখনো ঘরোয়া লিগ, কখনো ‘এ’ দল, কখনো বা হালের হাই পারফরম্যান্স ইউনিট (এইচপি)। কিন্তু মূল যে জায়গা, সেই জাতীয় দলে ডাক পাওয়াটা হচ্ছিলো না। সেই ‘কাঙ্খিত’ ডাক এবার পেলেন রাব্বি। বাংলাদেশে যেখানে ৩০ বছর বয়সে ক্যারিয়ার গুটিয়ে যায়, রাব্বির শুরুটা হচ্ছে ঠিক সেখান থেকেই। যেন দেশের ক্রিকেটে বয়সের এই ‘ট্যাবু’ ভাঙতে আসছেন।

আসন্ন জিম্বাবুয়ে সিরিজে বাংলাদেশের ওয়ানডে স্কোয়াডে একমাত্র নতুন মুখ রাব্বি। তার ডাক পাওয়াটা একরকম ‘অপ্রত্যাশিত’ই বলা যায়, অন্তত তিনি নিজে সেটাই স্বীকার করছেন। তবে নির্বাচকদের মতে, রাব্বিকে তারা ‘চোখে চোখে’ রেখেছিলেন আরও আগে থেকেই। নির্বাচক কমিটি সদস্য হাবিবুল বাশার সুমনের চোখে রাব্বি ‘পারফেক্ট প্যাকেজ’। তামিম ইকবাল-সাকিব আল হাসানের ইনজুরির পর দলের এমন দুর্দিনে রাব্বির মতো এমন একটা প্যাকেজের খোঁজেই ছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। সে কারণেই খুলনায় জাতীয় লিগের খেলা শেষে বরিশালের এই ছেলে বাড়ি যাওয়ার পথে শুনলেন সুখবর, পরদিনই ছুটলেন ঢাকার পথে।

হাবিবুল বাশার সুমনের চোখে রাব্বি ‘পারফেক্ট প্যাকেজ’ ; Image Source : Jagonews24.com

১৫ বছরে রাব্বির ক্রিকেট ক্যারিয়ারে মাঠের বাইরেও ঘটেছে অনেক কিছু। কখনও এই ক্রিকেটে তাল হারিয়ে জায়গা খুঁজেছেন অন্য চাকরিতে, কখনও বা ক্রিকেটই ছেড়ে দিতে চেয়েছেন। তবে পড়াশোনাটা ঠিক চালিয়ে গেছেন, এসব চড়াই উৎরাইয়ের মধ্যেই পার করেছেন অনার্স ও মাস্টার্স।

কেমন ছিল ফজলে রাব্বির ঘরোয়া ক্রিকেট ক্যারিয়ার? সত্যি বলতে, পরিসংখ্যান দিয়ে বন্ধুর সেই সফরের বিন্দুবিসর্গ টের পাওয়ানো সম্ভব নয়। সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে চতুর্থ সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক ছিলেন। সেবার প্রাইম দোলেশ্বরের হয়ে ৪৭.২০ গড়ে তুলেছিলেন মোট ৭০৮ রান। সেবারই ‘এ’ দলে ফিরলেন। শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের বিপক্ষে মাঠে নামার সুযোগ পেয়েছিলেন, ৬৩ বলে খেলেছিলেন ৫৯ রানের ইনিংস। আয়ারল্যান্ড সফরেও ছিলেন মুমিনুল হক-সৌম্য সরকারদের সাথে, সেখানে দুই ম্যাচে যথাক্রমে ৫৩ ও ৭৪ রানের দারুণ দুটি ইনিংস খেলেন। চলতি জাতীয় লিগের প্রথম রাউন্ডে বরিশালের হয়ে তাক লাগিয়েছেন, রংপুরের বিপক্ষে ১৯৫ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেন তিনি। প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি থেকে পাঁচ রান দূরে থাকার আক্ষেপ ছিল বটে, সেটা উড়িয়ে দিল জাতীয় দলের ডাক।

সংগ্রাম, পরিশ্রমসহ আরো যত কিছুই থাকুক, ফজলে রাব্বি নিজেকে জিতিয়েছেন। অবশেষে জাতীয় দলের খাতায় নিজের নাম লেখালেন। সবকিছু ঠিক থাকলে, চলতি অক্টোবরে জিম্বাবুয়ে সিরিজেই মিলবে তার স্বপ্নপূরণের দৃশ্য। তবে রাব্বি জানালেন, জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার কথা তো দূরে থাক, সে কথা ভাবতেই পারেননি তিনি। আর সেটা ভাবেননি বলেই হয়তো পারফরম্যান্স করেছেন, ডাকও পাচ্ছেন।

ক্যারিয়ার, জাতীয় দলের ভাবনা, নিজের ব্যাটিং সবকিছু নিয়ে এবার ফজলে রাব্বি এবার রোর বাংলার মুখোমুখি হয়েছেন। খোলামেলা সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন ক্রিকেট নিয়ে তার অন্তরের আদ্যোপান্ত ।

ফজলে মাহমুদ রাব্বি ; Image Source : New Age

প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে, কেমন লাগছে?

অবশ্যই খুব ভালো লাগছে। সেই ভালো লাগাটা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। জাতীয় দলই তো দিনশেষে সবার স্বপ্ন থাকে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। নির্বাচক যারা আমাকে দলে নিয়েছেন, আমার পাশে যারা ছিলেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ।

ডাক পেয়েছেন, সেই খবরটা কখন কিভাবে পেলেন?

দল ঘোষণার আগেরদিন আমি খবরটা পেয়েছিলাম। তখন আমি খুলনা থেকে জাতীয় দলের খেলাশেষে বরিশালে ফিরছিলাম। তারপর তো আমার সাথে সুমন স্যারের সাথে কথা হয়েছে (হাবিবুল বাশার সুমন, সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান নির্বাচক কমিটির সদস্য)।

ঢাকা আসা হলো কবে? জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সাথে কী কথা হলো?

জাতীয় দলের সঙ্গে যোগ দিতে ঢাকা পৌঁছেছি রবিবার। সবার সাথেই কথা হয়েছে টুকটাক। আমার সাথে অপুর (নাজমুল ইসলাম) খুব ভালো সম্পর্ক, ওর সাথে এমনিতে এসব নিয়ে টুকটাক কথা হয়েছে।

মাঝে নাকি খেলা ছেড়ে দিয়েছিলেন?

খেলা ছাড়ার যে বিষয়টা ছিল, আমি আসলে পরপর দুইটা প্রিমিয়ার লিগে সুবিধা করতে পারছিলাম না। তারপর জাতীয় লিগের পারফরম্যান্সও খারাপ হচ্ছিল। খারাপ বলতে যে, আমার মনের মতো হচ্ছিল না।

ক্রিকেটে যখন সুবিধা করতে পারছিলেন না, তখন পরিবার থেকে চাপ ছিল?

আমার পরিবার থেকে ওরকম কোনো চাপ ছিল না। তবে এটা বলা হচ্ছিলো যে, যদি খেলাটা তোমার না-ই হয়, তাহলে অন্য প্রফেশনের জন্য চেষ্টা করো। তবে এটা আমার পরিকল্পনা ছিল যে, যদি আমি ওই মৌসুমটাও খারাপ খেলি তাহলে ক্রিকেট ছেড়ে দেব।

Image Source : BCB

৩০ বছর বয়সে প্রথমবার জাতীয় দলে ডাক পাওয়া। এই অবস্থায় বাংলাদেশে বেশিরভাগ সময় ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায়। এমন কখনও মনে হয়নি?

এই জিনিসটা তো এখন আমার সামনে বদলে দেওয়ার সুযোগ। আমি আসলে এগুলো নিয়ে ভাবিইনি। সত্যি বলতে আমি জাতীয় দল নিয়ে ভাবিইনি, ডাক পাওয়া তো দূরের কথা। আমার তো জাতীয় দল চিন্তাতেই ছিল না। আমার চিন্তা ছিল শুধু পারফরম্যান্স। আমার পারফরম্যান্স দেখে যদি আমাকে নির্বাচকরা জাতীয় দলে নিতে ইচ্ছুক হন, তাহলে আমার জন্য একরকম সোনায় সোহাগার মতো আর কি। ওইরকম যদি আমি চিন্তা করতাম যে, আমাকে জাতীয় দলে চান্স পাইতে হবে, আমাকে পারফর্ম করতে হবে, তাহলে হয়তো আজকের এই সুযোগটা আমি পেতাম না।

আপনি দীর্ঘদিন ধরে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলছেন। সেক্ষেত্রে বয়স বেশি হলেই জাতীয় দলের পথটা বন্ধ হয়ে যায়, এই কথাটা কতটা বিশ্বাস করেন?

আসলে সবকিছুর মূলে ফিটনেস আর মানসিকতা। আমাদের দেশে আগে যেটা ছিল, বয়স ২৫-২৬-২৭-২৮ হয়ে গেলে আমরা ভাবতাম আমাদের খেলা শেষ। আমরা মানসিকভাবেই তৈরি ছিলাম যে ২৭-২৮ হয়ে গেলে বা সর্বোচ্চ ৩০ হয়ে গেলে, খেলা আমাকে শেষ করে দিতে হবে। কিন্তু এখন আমাদের ওই ধারণাটা পরিবর্তন হয়েছে। আমরা এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যা দেখি, তাদের কিন্তু ২৫ বছর বয়স হওয়ার পরই ক্রিকেটের ম্যাচুরিটি আসে। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যন্ত সবাই সমান সমান থাকে। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে যখন তারা এগোতে থাকে, ততক্ষণে তারা আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেটার হয়ে যায়। আমরা আমাদের আগের সেই ধারণা থেকে বের হয়ে আসা শুরু করেছি। কিন্তু এগুলো তো একদিনে পরিবর্তন হবে না। আমি যদি প্রমাণ করতে পারি, আমার ফিটনেস লেভেল ২০-২২ বছরের মতো, তাহলে তো আর কোনো সমস্যা নাই।

সেক্ষেত্রে যারা ঘরোয়াতে খেলছে, তাদের ফিটনেসের ব্যাপারে গুরুত্ব কতটুকু?

ইদানিং গুরুত্ব বাড়ছে, সবাই অনেক সচেতন। এখন আমাদের ব্লিপ টেস্ট দিয়ে নিজেদের ফিটনেসের অবস্থার প্রমাণ দিতে হবে। সেটা না হলে দলে থাকা নিয়ে বিপত্তি বাধে, বোর্ড থেকে বেতন পাওয়া নিয়েও সমস্যা হয়। অর্থাৎ, ঘরোয়াতে যারা খেলছে তাদেরকেও একটা ন্যূনতম ফিটনেস রেখেই খেলতে হচ্ছে।  এগুলো সবই ক্রিকেট বোর্ডের উদ্যোগ। অর্থাৎ, তারা অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের মূল্য দিতে চাইছে। কারণ আমরা যদি জানিই যে, আমাদের বয়স ২৭-২৮ হয়ে গেলে আমাদের আর দলে নেবে না, তাহলে খেলার আগ্রহটাও আর থাকে না। কিন্তু এখন জিনিসটা এমন হয়েছে যে, এই পেশাটা অনেক ভালো। অন্য পেশায় গেলে এরকম বেতন, ফ্রি থাকা –  এর কোন গ্যারান্টি নেই। এখানে আমি মনের আনন্দে ক্রিকেটও খেলতে পারছি, সাথে উপার্জনও করতে পারছি। তো আমি যখন জিনিসটাকে পেশাদারি মানসিকতায় নেব, তখন আমাকে ফিট থাকতেই হবে।

বলা হয়, তামিম ইকবালের ব্যাটিং স্টাইলের সঙ্গে আপনার মিল আছে। সত্যি বলতে আপনার আইডল কে? বাংলাদেশ দলে এই মুহূর্তে কার কার খেলা আপনার ভালো লাগে?

তামিম ভাইয়ের খেলা খুব ভালো লাগে। ওনার ম্যাচুরিটি দেখার মতো। আগে তো খুব মারতেন। এখন ওনার যে ধারাবাহিকতা, আমার সেটা খুব ভালো লাগে। আর আইডল বলতে কি, একদম প্রথম থেকে আমার শাহরিয়ার নাফীস ভাইয়ের খেলা খুব ভালো লাগে। আর বাংলাদেশ দলের কার কথা বলবো, অনেক আছে। তামিম ভাই, সাকিব ভাই, মাশরাফি ভাই।

ঘরোয়া লিগের অন্যতম সেরা পারফরমার রাব্বি ; Image Source : BCB

এই সিরিজ নিয়ে আপনার লক্ষ্য?

আমার লক্ষ্য ভালো খেলা। তাছাড়া জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নেমে যদি ভালোটা খেলতে পারি, তাহলেই কেবল আমার স্বপ্নটা পূরণ হবে।

মূলত সাকিব আল হাসানের ইনজুরিতে তার পজিশনের জন্য আপনাকে ভাবছেন নির্বাচকরা। সেক্ষেত্রে সাকিবের ফেরার পর আপনার জন্য জায়গাটা ধরে রাখা কতটা শক্ত হবে বলে মনে হয়?

প্রথম কথা হলো, সাকিব ভাই একজনই। উনি যদি এক বছর পর আসেন, কিংবা এই ৩-৪ মাসের মধ্যে ফিট হয়ে যান, উনি দলে চলে আসবেন। ওনার জায়গা ওনারই থাকবে, আমি নিতে পারবো না। আমি যেটা পারি, আমার খেলাটা ভালোভাবে খেলে একটা জায়গা তৈরি করতে। খারাপ খেললে তো কোনো জায়গা নেই। আর ভালো খেলার পরও যদি মনে করা হয় সাকিব ভাইয়ের জায়গাতেই আমাকে নেওয়া হয়েছে, তারপরও যদি আমি বাদ পড়ি, আমার কোন আফসোস নাই।

সাকিব আল হাসানের হিসেবে আপনাকে টপ অর্ডারের আলোচনায় আসছেন। কিন্তু আমাদের লোয়ার অর্ডারেও ব্যাটিংয়ে কিছু ঘাটতি আছে, এটা কি আপনাকে সুযোগ বাড়িয়ে দেবে বলে মনে হয়?

আমার মাথায় তো সব পজিশনই ঘুরছে, হাহাহা! ব্যাটিংয়ে পজিশন যেটাই হোক, আমার কোনো সমস্যা নেই।

যখন ক্যারিয়ারে সুবিধা করতে পারছিলেন না, তখন একরকম ভাবনা ছিল। জাতীয় দলে ডাকা পাওয়ার পর এখন ক্যারিয়ারটাকে কোথায় দেখতে চান?

দুই বছর আগেও আমার আমার ভাবনা ছিল, আমি আরও ১০ বছর ক্রিকেট খেলবো। এই দুই বছর পরেও আমার ভাবনা আমি আরও ৮ বছর খেলবো।  সত্যিই তাই, যদি আল্লাহর রহমতে ফিট থাকি, তাহলে আরও অন্তত ৬-৭ বছর খেলতে চাই। আর হয় না এমন যে, সকালে উঠে মনে হচ্ছে আমার শরীর নিচ্ছে না… সেদিন থেকে আমি আর খেলবো না। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কি করবো না করবো, সেটা যতক্ষণ পর্যন্ত না খেলছি ততক্ষণ পর্যন্ত স্বপ্ন দেখতে চাই না।

Featured Image Source : BCB

Related Articles