Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ফার্গি টাইম: ম্যানইউ কখনো হারত না, মাঝে মাঝে সময় শেষ হয়ে যেত!

ফুটবলে কোচ দুই প্রকারের। একদল দীর্ঘমেয়াদে থাকেন, যাদের সাফল্যের চেয়ে স্থিতিশীলতাই মুখ্য, অন্যদল স্বল্প মেয়াদী, যারা সাফল্য নিয়ে সরে যান বা ব্যর্থতার জন্য বরখাস্ত হন। কিন্তু সাফল্য, দীর্ঘ ক্যারিয়ার, দাপট, নিজেকে বার বার ভেঙে গড়া- সবকিছুর এক অপূর্ব মিশেল ছিলেন স্যার আলেক্স ফার্গুসন। ফুটবল ফ্যানমাত্রই তা জানা। কিন্তু ফার্গুসনের প্রভাব ইংলিশ লীগে এতটাই বেশি যে, লীগের অনেককিছুর সাথে সরাসরি তার নাম জড়িয়ে যেতে থাকে। ঠিক যেমন নির্ধারিত ৯০ মিনিটের সাথে যুক্ত অতিরিক্ত (বা মাত্রাতিরিক্ত) সময়ও খ্যাতি পেয়ে যায় ‘ফার্গি টাইম’ হিসেবে। আজকের লেখায় এর বিবর্তন, বিতর্ক ও তদানীন্তন হার না মানা এক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ক্লাবের কথাই তুলে ধরা হবে।

রেফারির সাথে বচসায় স্যার আলেক্স; Image Source: The Sun

কীভাবে এলো ফার্গি টাইম ?

১৯৯১-৯২ মৌসুমের কথা। শেফিল্ড ইউনাইটেডের সাথে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের খেলা চলছে। অ্যাওয়ে ম্যাচ। খেলা সমতায়। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের লীগ ভাগ্য তখনও সুতোয় ঝুলছে। মৌসুম প্রায় শেষের দিকে। সমতায় থাকা খেলা অতিরিক্ত সময়ে যাওয়ার আগেই আলেক্স ফার্গুসন রেফারিকে বার বার ঘড়ি দেখাতে থাকেন, যা ছিল পরোক্ষে সময় বাড়ানোর চাপ। ৭ মিনিট যোগ করা হয় যা নিয়ে প্রতিপক্ষ কোচ অসন্তুষ্ট ছিলেন। ৯০+৬ মিনিটের সময় স্টিভ ব্রুসের গোলে জয় পায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, অন্যদিকে, লীগের দ্বিতীয় দল পয়েন্ট হারায়। সেবার ইপিএল শুরু হবার পর প্রথম এবং দীর্ঘ ২৬ বছর পর লীগ জেতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। কিন্তু সেই ম্যাচের পর ইংলিশ মিডিয়া সেই সময়ের নাম দিয়ে দিল ‘ফার্গি টাইম’। সেই থেকে শুরু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই অপবাদের।

খোদ ফার্গিই বলেছিলান এটা তাঁর ছোট্ট একটা চাল মাত্র!;Image Source: South China Morning Source

বলা হতো, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড লীগের বাকি দলগুলোর চেয়ে বেশি সময় পায় ৯০ মিনিট পার হবার পর। স্বাভাবিকভাবেই আপনার দল যখন ২-১ গোলে এগিয়ে, জয়ের মাত্র মিনিট তিনেক দূরে আপনার দল, কিংবা ০-০ সমতায় আপনার দলের বিখ্যাত ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছ থেকে দুই পয়েন্ট ছিনিয়ে নেওয়ার পৈচাশিক আনন্দে আপনি মত্ত, তখন রেফারি যদি মিনিট দুই সময় বেশি দেয়, আর সেই সময়ে যদি আপনার দল গোল খেয়ে আপনার স্বপনে যবনিকা টেনে দেয়, তাহলে কে না নাখোশ হবে! তার উপর ঐতিহ্য ও ক্রমাগত সাফল্য ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে করেছিল ইংল্যাডের ‘টিম টু বিট’। ফলে ফার্গি টাইম নিয়ে সমালোচনা চলতেই থাকে।

ভিন্ন আঙ্গিকে সমালোচনার যৌক্তিকতা

Image Source: OPTA Sports

উপরে অপ্টা স্পোর্টসের বরাত দিয়ে প্রাপ্ত এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ইংল্যান্ডের সকল শীর্ষ ক্লাবের তুলনায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডই অতিরিক্ত সময় বেশি পেয়েছিল। গবেষণার আঙ্গিক ছিল আরো সূক্ষ্ম। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড জিততে থাকা অবস্থায় যে অতিরিক্ত সময় পেত, হারার সময় তার থেকে গড়ে ৭৯ সেকেণ্ড সময় বেশি পেত। তবে কি আসলেই ইউনাইটেড বেশি আনুকূল্য পেত? এর জবাব দিয়েছেন সাবেক বিখ্যাত ইপিএল রেফারি গ্রাহাম পোল। তিনি বলেন,

আপনি খেলা পরিচালনার সময় এ কথা মাথায়ই আনবেন না। কিন্তু পেছন ফিরে তাকালে বুঝবেন বড় দলগুলোর স্টেডিয়ামে দর্শকদের চাপে আমরা আসলেই কিছু সময় বেশি দিয়েছি। আপনি অ্যানফিল্ড, স্টামফোর্ড ব্রিজ বা ওল্ড ট্রাফোর্ডে সময় কম দিলে সারা স্টেডিয়াম আপনাকে একসাথে দুয়ো দেয়। এটা আসলে পরোক্ষ একটা চাপ।

উপরের পরিসংখ্যানে আরো দুটি দল বেশ ভাল পরিমাণ অতিরিক্ত সময় পেলেও কিংবা রেফারি গ্রাহাম পোল তিন-চারটি দলের নাম নিলেও এই সময় কিন্তু ‘মরিনহো টাইম’ বা ‘বেনিতেজ টাইম’ নয়, বরং পরিচিত ছিল ‘ফার্গি টাইম’ নামেই। কেন? উত্তর খুঁজতে গেলে যুক্তি পাওয়ার চেয়ে মনে হয় এই সময়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিভিন্ন রুপকথার মতো সাফল্যই মূল কারণ মনে হয়। একনজরে বিখ্যাত কিছু ফার্গি টাইম গোল দেখে নেওয়া যাক।

বায়ার্ন মিউনিখ ১-২ ম্যানইউ (চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফাইনাল)

যোগ করা সময়ের সবচেয়ে বিখ্যাত জয় ১৯৯৯ সালের ইউসিএল ফাইনাল; Image Source: The Sun

বায়ার্ন মিউনিখ ১-০ গোলে এগিয়ে। অতিরিক্ত সময় শুরু হলো বলে। বায়ার্ন লিজেন্ড ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারকে বলা হলো ভিআইপি লাউঞ্জ থেকে নিচে আসতে। যেহেতু তাঁর সাবেক ক্লাব, সম্ভাব্য বিজয়ী বায়ার্নকে তিনিই কাপ হাতে তুলে দেবেন। তিনিও নিচে নামতে লাগলেন। তিনি জানান, লিফট দিয়ে নেমে দেখেন ১-১, আর সিড়ি বেয়ে আসতে আসতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ১-২ এ জয়ী। আসলে এরপর থেকেই ফার্গি টাইমের মাহাত্ম্য যেন আরো ছড়িয়ে যায়। মাত্র মিনিট চারেকের মাঝে ২ গোল করে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফাইনাল জয় যেন ফুটবল ইতিহাসের রুপকথারই এক অংশ।

লিভারপুল ১-২ ম্যানইউ (এফএ কাপ নক আউট)

বলে রাখা ভাল, এখন অবধি ইউনাইটেডই ইংল্যান্ডের একমাত্র ট্রেবলজয়ী দল। যেবার চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জেতে, সেবার ঘরোয়া কাপের নকআউটে বাধা হয়ে ছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লিভারপুল। ৮৫ মিনিট পর্যন্ত পিছিয়ে থাকা ইউনাইটেড আবারো সাত মিনিটের ঝড়ে দুই গোল দিয়ে জিতে যায়, এবং সেবার ঘরোয়া কাপও নিজের করে নেয়।

ম্যানইউ ৩-২ অ্যাস্টন ভিলা (২০০৮-০৯)

এই ম্যাচটি সম্ভবত বিখ্যাত হয়ে থাকবে ফ্রেদেরিকো মাচেদার নামে। একসময় তাকে ভাবা হতো নতুন রোনালদো। ঘরের মাঠে ২-১ এ পিছিয়ে থাকা ইউনাইটেডের সামনে পয়েন্ট হারানোর শঙ্কা। পা হড়কালেই চেলসি শীর্ষে। লীগ রেসের শেষ দিকে এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ৮৭ মিনিটে সমতায় ফেরান রোনালদো, আর বদলি হিসেবে মাঠে নেমে শেষ বাশি বাঁজার সেকেণ্ড বিশেক আগে গোল করে নিজের উপস্থিতি জানান দেন মাচেদা। মাচেদার আর তারকা হওয়া হয়নি, কিন্তু সেবার লীগ জিতেছিল ম্যানইউ ঠিকই।

এসব ম্যাচ কেবল কয়েকটি উদাহরণ। গোল ডট কমের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ফার্গুসনের সময়ে ম্যানইউ মোট ৮১টি গোল করেছে ৯০ মিনিটের পর, যার ৭২টিই হয় জয়সূচক বা পয়েন্ট বাঁচানোর গোল। যদি ৮০ মিনিটের পর ধরা হয়, তাহলে সংখ্যাটি বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তবে কি এটা কেবলই রেফারিদের আনুকূল্য? নাকি ফার্গুসনের রেফারির সাথে মাইন্ডগেম? আসলে কিছুই না। ফার্গির সময়ের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছিল সর্বজয়ী। আজকাল সর্বজয়ীর অর্থ ধরে নেওয়া হয় শিরোপা সংখ্যা দিয়ে। আসলে তা সঠিক না। ফার্গিও প্রায়ই হেরেছেন, কিন্তু লীগে শেষ দিন পর্যন্ত লড়েছেন, কাপগুলোয় শেষ বিন্দু দিয়ে লড়ে হেরেছেন। হারার আগে হারেননি। সেই ফার্গির শিষ্য রয় কিন, ভিদিচ, ফার্দিনান্দ, ক্যান্টনা, গিগস, স্কোলসরা ছিল অন্য ধাতুতে গড়া যোদ্ধা, যাদের সংস্পর্শে এসে রোনালদো, রুনিরাও হয়ে যেতেন ইস্পাতদৃঢ় মানসিকতার খেলোয়াড়। বস্তুত ৮০ মিনিটের পর যখন অনেক দলের পা আড়ষ্ট হয়ে যেত, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সেই হার না মানা খেলোয়াড়দের তখনও কাজ শেষ হতো না। তারই ফল ফার্গি টাইমে এত সাফল্য।

ফার্গি টাইম যখন ফার্গিকেই ঘায়েল করে!

 ৯৩.২০ মিনিটের যে গোল ইউনাইটেডের শিরোপাস্বপ্ন মাটিতে মিশিয়ে দেয়; Image Source: Soccer Blogger

ফার্গুসন যেবার অবসর নেন, তার আগের মৌসুমে একপর্যায়ে লীগে ৮ পয়েন্ট এগিয়ে যায়। তিনি একটা ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন যে সাফল্য নিয়েই তিনি সরে দাঁড়াবেন। যেহেতু সেবার প্রায় লীগ জয়ের দ্বারপ্রান্তে ছিলেন, তার নিকটতম কিছু সূত্র নিশ্চিত করে যে এবার লীগ জিতে তিনি অবসরে যেতে পারেন। কিন্তু ইউনাইটেড শেষের দিকে পয়েন্ট হারাতে থাকে। ফলাফল দাঁড়ায়, ইউনাইটেডের শেষ ম্যাচে জিততেই হবে আর ম্যানসিটি ড্র করলে বা হারলেই চ্যাম্পিয়ন ম্যানইউ। সান্ডারল্যান্ডের সাথে শেষ ম্যাচে জয় পায় ইউনাইটেড। শেষ গেমউইকে একই সময়ে খেলা হয় বিধায় চোখ সিটি বনাম কিউপিআর ম্যাচে, যেখানে সিটি ২-১ গোলে পিছিয়ে। শেষদিকে ২-২ এ সমতা, আর সেই ফার্গি টাইমের গোলে ৩-২ এ জয়। ফার্গি টাইমে এসেই লীগ হারে ফার্গির শিষ্যরা! হয়তো সে কারণেই অবসর পরিকল্পনা পিছিয়ে পরেরবার লীগ জিতেই অবসরে যান সর্বকালের অন্যতম সেরা এই কোচ।

‘ফার্গি টাইম’কে কেউ ইউনাইটেডের মাহাত্ম্য বর্ণনায় ব্যাখ্যা করেন, তো কেউ তাদের সমালোচনায়। কিছু সেকেন্ড অতিরিক্ত পাওয়ার সমালোচনাকে সত্য ধরে নিয়েও যদি বিচার করা যায়, শেষ সময়ে কিংবা যোগ করা সময়ে করা এত এত গোল আসলে হার না মানা মানসিকতারই পরিচায়ক। তাই তো একপর্যায়ে একটা কথা বলাবলি হতো, “ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কখনো হারে না, মাঝে মাঝে সময় শেষ হয়ে যায়!

Language: Bangla

Topic: Fergie Time, its history and impact

Reference: Hyperlinked inside the article

Related Articles