Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ফিটনেসই সাকিবের সাফল্যের মূল

অস্ট্রেলিয়ার শেষ ম্যাচের কারণে সাকিব আবারও বিশ্বকাপের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের শীর্ষস্থান হারিয়েছেন। যদিও ওয়ার্নার-ফিঞ্চদের চেয়ে এক ম্যাচ পিছিয়ে এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। উইকেট পেয়েছেন ১০টি। সেমির লড়াইতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিততেই হতো বাংলাদেশকে। কঠিন উইকেটেও সেটা করতে পেরেছেন সাকিব। পাঁচ উইকেট নিয়ে রেকর্ডও গড়েছেন। পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে এমন পারফরম্যান্স তাকে হাতছানি দিচ্ছে টুর্নামেন্ট সেরা হওয়ার। নিজের ব্যাটিংয়ে ভারসাম্য এনে পছন্দের পজিশনে সেরাটা দিতে পেরে সাকিব নিজেও খুশি। সবকিছু মিলে, বাংলাদেশের জয়ের খাতায় লেখা গল্পের অনেকটুকুই সাকিবকে ঘিরে।

সাকিব ও তামিমের জুটি। Image Source: AFP

বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ থেকে নতুন সাকিবকে দেখেছে সমর্থকরা। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স তো বটেই, সতীর্থদের জন্যও তিনি অন্তপ্রাণ। প্রায় ম্যাচেই অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাকে সহায়তা করেছেন বিভিন্নভাবে। অর্থাৎ, সহজাত নেতৃত্বটাও ফুটিয়ে তুলেছেন নতুনভাবে। নিজেদের ইতিহাসের সেরা দল নিয়ে সাকিবসহ সবাই শতভাগ দেওয়ার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে। বাকিটা ভাগ্যের হাতে।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৭ উইকেটে ২৬২ রান তোলে বাংলাদেশ। এই ইনিংসে সাকিবের হাফ সেঞ্চুরির গুরুত্ব আকাশছোঁয়া। শুধু তা-ই নয়, একই ম্যাচে পাঁচ উইকেট নেওয়ার মধ্যে দিয়ে বিশ্বকাপের আসরে এক ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নেওয়ার দ্বিতীয় ক্রিকেটার হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। এর আগে ২০১১ বিশ্বকাপে প্রথম এই কীর্তি গড়েছিলেন ভারতীয় অলরাউন্ডার যুবরাজ সিং।

সাকিব উড়েছিলেন ডানা মেলে। ব্যাটিংয়েও, বোলিংয়েও। মুশফিকের সাথে উদযাপনে; Image Source: Getty Image

ভারতের বিপক্ষে খেলতে গিয়েই বিরাট কোহলিদের ঘাম ঝরিয়ে ছেড়েছিল আফগান স্পিনাররা। প্রায় জয়ের বন্দরে পৌঁছেও শেষটা করতে পারেনি রশিদ-গুলবাদিনের দল। শেষ পর্যন্ত মুখ বাঁচিয়ে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে ভারত। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের বিপক্ষেও তেমন কিছুই হবে; কল্পনা ছিল বিশেষজ্ঞদের। মাশরাফি-সাকিবরাও নিজেদের পরিকল্পনা গুছিয়ে নিয়েছিল ভারতের বিপক্ষে আফগানদের লড়াই দেখে। স্বভাবতই এই উইকেট বড় রানের জন্য না।

মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ম্যাচ শেষে বলেছিলেন,

‘আমরা ২৪০-২৫০ করতে চেয়েছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ, আমরা তার চাইতেও বেশি করতে পেরেছি। আমি ব্যাটে নেমে সব বল মারতে চেয়েছি, পেরেছিও।’

স্পিনারদের জন্য এই উইকেটে ছিল বাড়তি সুবিধা। সেই সুবিধা যেমন আফগানিস্তান পেয়েছে, তেমনই পেয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষত সাকিব। তুলে নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। ১০ ওভার বল করে ২৯ রান খরচ করে পাওয়া পাঁচ উইকেট সাকিবের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং পারফরম্যান্স।

সাকিবের ওভারে দারুণ একটি ক্যাচ নিয়েছিলেন লিটন দাস। ফিরতি উদযাপনে সাকিবও সঙ্গী; Image Source: AFP

ম্যাচ শেষে সাকিব তাই বললেন,

‘পাঁচ উইকেট পাওয়া অবশ্যই স্পেশাল ব্যাপার। দেখুন আমরা এমন স্পিনার (দেশে কিংবা বিদেশে) যাদের খানিকটা উইকেটের সাহায্য প্রয়োজন হয়। আমার মনে হয় আজকের উইকেটে সেটি ছিল। দল বলেন কিংবা আমার দিক থেকে বলেন, আজকে উইকেটে এটার দরকার ছিল। সৌভাগ্যবশত এখন পর্যন্ত পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে আমি সেরাটা দিতে পারছি।’

তিনি আরও বলেন,

‘আমি বিশ্বকাপের আগে থেকে নিজেকে ভালোভাবে তৈরি করেছি। তবে কখনই ভাবিনি যে আমার কিছু প্রমাণ করার আছে। বিশ্বকাপের আগে নিজেকে তৈরি করতে আমি সবকিছু করেছি। এগুলো এখন কাজে দিচ্ছে, আমাকে খুব সাহায্য করছে। আমি আমার পারফরম্যান্সের বিচার করতে চাই না। কিন্তু এটা ভালো লাগে যখন ব্যাট এবং বল; দুই জায়গাতেই ভালো করতে পারি। সত্যি বলতে একটা জায়গায় ভালো করার চেয়ে দুই জায়গাতে ভালো করতে পারলে আমি বেশি মানসিক প্রশান্তি পাই।’

বিশ্বকাপে নিয়মিত ৩ নম্বরে ব্যাট করছেন সাকিব। সেটি অবশ্য বহু আগে থেকেই চেয়ে এসেছেন। বিশ্বকাপে সেই চাওয়ার বাস্তবায়নে পারফরম্যান্সের ভেলকিও দেখাচ্ছেন। চেষ্টা করছেন নিজের সেরাটা দলের জন্য এনে দিতে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রতিপক্ষ দলের স্পিনাররা যখন সবকিছু স্পিনারদের জন্য কঠিন করে দিচ্ছিল, তখন ধৈর্য্য হারাননি সাকিব। শান্তভাবে ব্যাট করে গেছেন। উইকেটে থেকে ১, ২ রান নিয়ে এগিয়ে গেছেন। যখনই খারাপ বল পেয়েছেন, বাউন্ডারি মারার চেষ্টা করেছেন। সাকিব গুলাবদিন নাইবের বলে ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’এ শট হাঁকিয়েছিলেন পয়েন্ট অঞ্চল দিয়ে। সেখানে ক্রিকেটার থাকলে জীবন হারাতে পারতেন। তারপর থেকে লেগ সাইডে যতটা পেরেছেন বড় শট খেলার চেষ্টা করেছেন।

ব্যাটিংয়ে সাকিব কখনও ছিলেন রক্ষণাত্মক, কখনও ছিলেন আক্রমণাত্মক; Image Source: Getty Image

সাকিব যখন ২৬ রানে, তখনই তার বিপক্ষে এলবিডব্লিউয়ের আবেদন করেন আফগান লেগ স্পিনার রশিদ খান। আম্পায়ারও আউটের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। কিন্তু সাকিব রিভিউ নিতে ভুল করেননি। অন্য সময় হলে হয়তো পরবর্তী বলগুলোতে তেড়েফুঁড়ে খেলতে চাইতেন সাকিব। কিন্তু এ অন্য সাকিব। জীবন ফিরে পেয়ে খেলেছেন পুরনো গতিতেই। দ্রুত রান নয়, বেশি সময় খেলতে চাওয়ার মানসিকতা লক্ষ্যণীয় ছিল তার ব্যাটে।

নিজের এই বদলে যাওয়া মানসিকতা প্রসঙ্গে নিজে বলেছেন,

‘গেল এক থেকে দেড় মাস ধরে আমি আমার ফিটনেস নিয়ে যে কাজ করেছি তা এখন অনেক কাজে দিচ্ছে। এই ফিটনেসই আমাকে কঠিন পরিস্থিতিতে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। আমার মনে হয় ভালো করার এটা একটা কারণ। আমার মনে হয় না আমার সাফল্যের পেছনে এর বাইরে আর কোন কার্বন আছে। এর বাইরে আমি নিজের আর কোনোকিছু পরিবর্তন করিনি। শুধুমাত্র নিজের ফিটনেস নিয়ে যা করেছি সেগুলোই সবকিছু মিলিয়ে আমাকে সামনের দিকে এগিয়ে দিচ্ছে।’

সাকিবকে বলা হচ্ছে বাংলাদেশ দলের ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’। তবে নিজেকে ততটা উপরে তুলতে নারাজ সাকিব। তিনি বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশে এই ধরনের কোনো কিছু নেই। পুরো দলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার কারণেই একেকটি সাফল্য আসছে বলে ভাবনা তার। সবাইকে নিয়ে সেভাবেই এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় এই পোস্টার বয়।

সাকিবকে নিয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে এভাবেই বারবার উদযাপনে মেতেছিল সতীর্থরা; Image Source: AFP 

তিনি বলেন,

‘না, আমাদের এখানে ওয়ান ম্যান আর্মি বলতে কিছু নেই। আপনি যদি আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটা দেখেন, মুশফিকের ইনিংস, রিয়াদের কন্ট্রিবিউশন, তামিমের ব্যাটিং; দিন শেষে মোসাদ্দেক। সবার একটু একটু করে করা পারফরম্যান্সই এই ধরনের ইনিংস দিনশেষে এনে দিয়েছে। সবাই মিলে কাজ করতে পারাটা খুব দরকারি। হতে পারে আমি এবার খুব ভালো খেলছি। কিন্তু বাকিদের পারফরম্যান্স ছাড়া দল এই ধরনের ফলাফল কখনই পেতে পারতো না। একই কথা বোলিংয়ের ক্ষেত্রেও। মুস্তাফিজ বলেন, সাইফউদ্দিন বলেন কিংবা তারা দুজনেই যে বিশ্বকাপে ৯-১০ উইকেট পাচ্ছে এটা খুব বড় ব্যাপার। আমার মনে হয় এগুলো অনেক বড় অর্জন।’

বাংলাদেশের হাতে এখনও দুটি ম্যাচ। ভারত ও পাকিস্তান। সেমির লড়াইতে জিততে হবে দুটি ম্যাচেই। সাকিব নিজেদের নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু শুধু জিতলেই হচ্ছে না, বাংলাদেশকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে বাকি দলের ম্যাচগুলোর দিকেও। সবকিছু মিলিয়ে দিন শেষে বাংলাদেশ কোথায় গিয়ে আটকাবে তা কেবল সময়ের অপেক্ষা। তবে বাংলাদেশ এই আসরে নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স দেখিয়ে যাচ্ছে, তা নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।

This is an article based on Shakib Al Hasan. This is about what shakib felt about the match after beat Afghanistan.

Feature Photo: AFP

Related Articles