Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের সেরা পাঁচ জুটি

সাদা পোশাকের ক্রিকেটের স্ট্যাটাস পাওয়া নিয়ে কত কথাই না শুনতে হয়েছে বাংলাদেশকে। ক্রিকেট বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যতই খারাপ করুক, কখনও তাদের টেস্ট মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার কথা উঠেছে বলে খুব একটা শোনা যায় না। কিন্তু বাংলাদেশ যেন সেই শুরু থেকেই অবহেলার শিকার। ভারতের ‘কৃপায়’ গলায় টেস্টের মালা উঠেছে বাংলাদেশের, এমন কথা আজ ঠাণ্ডা ভাতের মতো কড়কড়ে হয়ে গেছে। এসব সমালোচনার জবাবে টেস্টে অনেক কিছু করে দেখিয়েছে টাইগাররা। এনেছে মনে রাখার মতো কিছু অর্জন।

টেস্ট মানেই বিধ্বংসী বোলিংয়ের সামনে ধৈর্য্যের ব্যাটিং পরীক্ষা। সেখানে যেমন ১০০ রানের নিচে গুটিয়ে গিয়ে লজ্জার শিকার হয়েছে বাংলাদেশ, কখনোবা ৩০০ রানের উপরে জুটি গড়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া দেশটি তাদের অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি পেয়েছিল সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুলের ব্যাটে। এরপর অনেক সেঞ্চুরিই হয়েছে। কিন্তু ডাবল সেঞ্চুরি হবে, সেটি ভাবতে ভাবতে সময় লেগেছে ১৩ বছর পর্যন্ত। সেগুলো করতে গিয়ে প্রয়োজন হয়েছে বড় বড় জুটি। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের ১৮ বছরে সর্বোচ্চ রানের এমন পাঁচটি জুটি নিয়েই এই আয়োজন।

পরিসংখ্যান বলছে, জুটির দৌড়ে সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। প্রথম পাঁচে তার অংশগ্রহণ তিনবার। সর্বোচ্চ রানের জুটিতেও নাম লিখিয়েছেন তিনি। বাকিদের কী অবস্থা? সেটি জানতে বিষদ আলোচনার বিকল্প নেই।

সাকিব আল হাসান-মুশফিকুর রহিম (৩৫৯, ওয়েলিংটন)

শুরুতেই বলে নেওয়া ভালো যে, এই ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল সাত উইকেটের বিশাল ব্যবধানে। তারপরও সেবারে টেস্টে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের জুটি পায় বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে রচিত হয় রেকর্ডটি। প্রথম ম্যাচের প্রথম ইনিংসে এই কীর্তি গড়েছিলেন বাংলাদেশের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার বাঁহাতি সাকিব আল হাসান ও উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম।

সেবার দলীয় ১৪৫ রানের সময় পঞ্চম উইকেটে জুটি গড়েছিলেন সাকিব-মুশফিক। তৎকালীন টেস্ট অধিনায়ক মুশফিক ১৫৯ রানে আউট হলে থামে জুটি। বাংলাদেশের রান তখন ৫ উইকেটে ৫১৯। ১৭ রানের মাথায় সাকিবও আউট হয়ে যান। সাকিব টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি এই জুটির পথেই তুলে নিয়েছিলেন। খেলেছিলেন ২১৭ রানের অনবদ্য এক ইনিংস। ৪১৮ মিনিট উইকেটে ব্যাট করে তিনি মোকাবেলা করেন ২৭৬ বল। ইনিংসের ৩১টি চারের মার ছিল। বলের হিসাবে আর খোলা চোখে দেখলে সাকিবের ওই ইনিংসকে টেস্ট নয়, ওয়ানডের মতো মনে হয়। অন্যদিকে মুশফিক ১৫৯ রানের ইনিংস খেলতে গিয়ে ৩১টি চারের সাথে একটি ছক্কা মেরেছিলেন।

অভিনন্দনের জবাবে সাকিব আল হাসান; Source: Wisden India

শেষপর্যন্ত ৮ উইকেটে ৫৯৫ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। কিন্তু দুর্ভাগ্য, ম্যাচ বাঁচাতে পারেনি সফরকারীরা। ৫৩৯ রানে নিউজিল্যান্ডকে গুটিয়ে দেওয়ায় এগিয়ে ছিল টাইগাররা। কিন্তু এবারও ‘প্রথা’ অনুয়ায়ী, নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ধস নামে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপে। ১৬০ রানে গুটিয়ে গেলে সাত উইকেটে জয় পায় কেন উইলিয়ামসনের নিউজিল্যান্ড।

তামিম ইকবাল-ইমরুল কায়েস (৩১২, খুলনা)

২০১৫ সাল। সেটি ছিল বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ইতিহাসের সফলতম একটি বছর। ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেওয়ার পর, ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের সুখস্মৃতি বোধহয় এখনও রোমাঞ্চিত করে ক্রিকেটার, সমর্থকদের।

খুলনায় তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েসের সেই জুটি; Source: Cricket Australia

ওই বছরে খুলনার শেখ আবু নাসের ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে জুটির রেকর্ড গড়েছিল বাংলাদেশ। ওপেনিং জুটিতে তামিম ইকবাল-ইমরুল কায়েসের তোপে সাদামাটা বোলার বনে গিয়েছিল জুনায়েদ খান, মোহাম্মদ হাফিজরা। সেয়ানে সেয়ানে লড়াইয়ের ম্যাচে ড্র করেছিল বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ৩৩২ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর পাকিস্তান তাদের ওপেনার মোহাম্মদ হাফিজের ২২৪ রানের ইনিংসে চড়ে ৬২৮ রানে অলআউট হয়।

দ্বিতীয় ইনিংসে তামিম-ইমরুলের ব্যাটে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পান বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। ২৭৮ বলে ২০৬ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। অন্যপাশে ইমরুল কায়েস তার সাথে সমানতালে রান তুলেছেন। টেস্টে ১৫০ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেন তিনি। তামিমের ২০৬ রানের ইনিংস জুড়ে ছিল ১৭ চার আর ৭টি ছক্কা। ইমরুল নিজের ইনিংস সাজান ১৬ চার, ৩ ছক্কায়।

মোহাম্মদ আশরাফুল-মুশফিকুর রহিম (২৬৭, গল)

আশরাফুল টেস্টে সেদিন বাংলাদেশের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিয়ান হতে পারতেন। কিন্তু কীর্তি নামক সৌভাগ্যের মালা তার গলায় ওঠেনি। যে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে তার ২৬৭ রানের জুটি হলো, সেই মুশফিক সেদিন ২০০ রানের ইনিংস খেললেন। নাম লেখালেন টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে। আর আশরাফুল? ১৯০ রান করে থেমে গিয়েছিলেন নার্ভাস নাইনটিজে।

প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির শুভেচ্ছা নিচ্ছেন মুশফিক; Source: AP

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গলে সেই ম্যাচ ড্র হয়। ২০১৩ সালের মার্চে লঙ্কানরা প্রথম ইনিংসে চার উইকেটে ৫৭০ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করেছিল। সেই সিদ্ধান্তকে ভুল প্রমাণিত করেন সাবেক দুই অধিনায়ক আশরাফুল-মুশফিক। তাদের ২৬৭ রানের জুটির পর নাসিরের সেঞ্চুরিতে চড়ে ৬৩৮ রানের পাহাড় গড়ে বাংলাদেশ।

মুশফিক সেদিনের ২০০ রানের ইনিংস খেলার পথে উইকেটে টিকে ছিলেন ৪৩৭ মিনিট। ৩২১ বল খেলে ২২ চার আর একটি ছক্কায় রূপ নিয়েছিলেন ‘পারফেক্ট’ টেস্ট ব্যাটসম্যানের। সাদা পোশাকের ঐশ্বর্য সেদিন চুইয়ে পড়ছিল দুজনের ব্যাট থেকেই। আশরাফুল ৪৯৯ মিনিট ব্যাট করে, ৪১৭ বল খেলে ২০ চার ও একটি ছক্কায় সেদিনের ১৯০ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেছিলেন।

মুমিনুল হক-মুশফিকুর রহিম (২৩৬, চট্টগ্রাম)

টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পাঁচ জুটির শেষ তিনটিই এসেছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সাবেক টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে এই সেদিন ২৩৬ রানের ইনিংস খেলেন মুমিনুল হক। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সাগরিকায় হাজারো সমালোচনার জবাব দিয়েছিলেন মুমিনুল হক। খেলেছিলেন ১৭৬ রানের অনবদ্য ইনিংস। মুশফিকুর রহিমকে দুর্ভাগা বলতে হবে। ৯২ রানের মাথায় মাত্র ৮ রানে পিছিয়ে থেকে সেঞ্চুরি বঞ্চিত হন তিনি।

মুমিনুল হকের সাথে উদযাপনে মুশফিকুর রহিম; Source: BCB

সাবেক প্রধান কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহের অবহেলা, উপেক্ষা আর অভিযোগের জবাবে নিজের সেরাটা দিয়েছিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান মুমিনুল। যে হাথুরুসিংহে এখন শ্রীলঙ্কার কোচ, তারই ছাত্রদের বিপক্ষে এমন ইনিংস হয়তো মানসিকভাবে শক্তি দিয়েছিলো শান্ত, নম্র মুমিনুলকে। তাই তো, সেঞ্চুরির উদযাপনে নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি তিনি। তেড়েফুঁড়ে যেন শ্রীলঙ্কার ড্রেসিংরুমের পথে ইঙ্গিত করছিলেন।

১৭৬ রানের ইনিংস খেলতে গিয়ে ১৬ চার ও একটি ছক্কা মারেন মুমিনুল। মুশফিকের ৯২ রানের ইনিংসে ছিল ১০টি চার।

ম্যাচটিতে হারের সম্ভাবনা দেখিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ড্র হয় ব্যাটসম্যানদের হাত ধরেই।

সামসুর রহমান-ইমরুল কায়েস (২৩২, চট্টগ্রাম)

ইমরুল কায়েস এখনও জাতীয় দলে। সামসুর রহমানের ঘরোয়া ক্রিকেটে। জুটির গল্প হয়তো দুজনকেই রোমাঞ্চিত করে; Source: AFP

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ম্যাচটি। ২০১৪ সালের সেই ম্যাচে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম ইনিংসে কুমার সাঙ্গাকারার ট্রিপল সেঞ্চুরিতে (৩১৯) চড়ে ৫৮৭ রান পর্যন্ত তুলতে পেরেছিল লঙ্কানরা। জবাবে ওপেনার তামিম ইকবাল শূন্য রানে আউট হওয়ার পর, দ্বিতীয় উইকেটে দুই সেঞ্চুরিতে ২৩৬ রান তোলেন ইমরুল কায়েস ও ওপেনার সামসুর রহমান শুভ। ১১৫ রানের ইনিংস খেলতে গিয়ে ১৭টি চার ও একটি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন ইমরুল কায়েস। সামসুর রহমান করেন ১০৬ রান। তার ইনিংসে ছিলো ১১ চার, একটি ছক্কা।

ওই ম্যাচেও ড্র করে বাংলাদেশ।

ফিচার ইমেজ: AP

Related Articles