Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আইপিএল থেকে নির্বাসিত ৫ দল

যখন আপনি আইপিএলের খেলা উপভোগ করছেন, তখন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের জুয়াড়িরা ম্যাচ নিয়ে বাজি ধরে লক্ষ-কোটি টাকা কামাচ্ছে। ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকরা যেন টাকার বস্তা নিয়েই হাজির হয়েছে আইপিএলে। আবার টাকার অভাবেও কোনো কোনো দলকে নির্বাসিত হতে হয়েছে আইপিএল থেকে। ২০০৮ সালে ৮টি দল নিয়ে আইপিএল তার যাত্রা শুরু করে। মাঝখানের ১০ বছরে যুক্ত হয়েছে বেশ কিছু নতুন দল। তবে নানা প্রতিকূলতার ফলে দলগুলোর আর সামনে এগোনো হয়নি। আইপিএলের নির্বাসিত ৫ দল নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।

১. ডেকান চার্জার্স হায়দ্রাবাদ

২০০৮ সালে যে ৮টি দল নিয়ে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) তার যাত্রা শুরু করে তার মধ্যে ডেকান চার্জার্স ছিল অন্যতম। হায়দ্রাবাদভিত্তিক এই ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানা কিনেছিল ডেকান ক্রনিকল হোল্ডিং লিমিটেড। ডেকান ক্রনিকল হায়দ্রাবাদের একটি জনপ্রিয় ইংরেজি সংবাদপত্র। মূলত ডেকান ক্রনিকল থেকে ডেকান চার্জার্স এর নামকরণ।

ডেকান ক্রনিকল গ্রুপের মালিক টি ভেংকাটরাম রেড্ডির কন্যা গায়ত্রী রেড্ডি ছিলেন দলটির মূল স্বত্ত্বাধিকারী। ২০০৮ সালে ভিভিএস লক্ষ্মণ, অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড় অ্যান্ড্রু সায়মন্ডস, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদি, দক্ষিণ আফ্রিকার হার্শেল গিবস, শ্রীলঙ্কার চামিন্দা ভাসের মতো তারকা খেলোয়াড়দের নিয়ে প্রথম আসর শুরু বসে।

দলের অধিনায়কের ভূমিকায় ছিলেন ঘরের ছেলে ভিভিএস লক্ষ্মণ। তবে একগাদা তারকা খেলোয়াড় নিয়ে গড়া দলটি পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে থেকে প্রথম আসর শেষ করে। প্রথম আসরের ব্যর্থতার দরুন অধিনায়কত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় লক্ষ্মণকে। পরের বছর অধিনায়কত্বের গুরুদায়িত্ব পড়ে অ্যাডাম গিলক্রিস্টের ওপর। সেমিফাইনালে গিলক্রিস্টের ৩৫ বলে ৮৫ রানের ঝড়ো ইনিংসে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসকে ৬ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে ডেকান। ফাইনালে ১৪৩ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে ১৩৭ রানে অল আউট হয় রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। ফলে ৬ রানের জয় পায় ডেকান, সেই সাথে জিতে নেয় নিজেদের প্রথম আইপিএল শিরোপা

আইপিএলের ২য় আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় ডেকান চার্জার্স; Source: Sportskeeda.com

২৩ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী হন ডেকান চার্জার্সের ভারতীয় খেলোয়াড় রুদ্র প্রতাপ সিং। পরের বছর সেমিফাইনাল খেললেও ২০১১ এবং ২০১২ এই দুই বছর তারা ব্যর্থ হয়েছে। স্পন্সররা তাদের স্পন্সরশিপ তুলে নিতে থাকে। ফলে আর্থিক সংকটের মুখে পড়ে ডেকান। বাধ্য হয়ে দলটিকে নিলামে তোলে কর্তৃপক্ষ। পিভিপি ভেঞ্চার নামক এক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান নিলামে তোলে। কিন্তু নিলামের অর্থ দুই কিস্তিতে পরিশোধ করতে চাওয়ায় ডেকান চার্জার্স এই নিলাম প্রত্যাখ্যান করে, কারণ তাদের সেই মুহুর্তে নগদ টাকার প্রয়োজন ছিল।

পরদিন ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড আইপিএলের আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে তাদের কাছে টার্মিনেশন লেটার (ইস্তফা পত্র) পাঠায়। বিলুপ্তি ঘটে ডেকান চার্জার্সের। তার কিছুদিন পর হায়দ্রাবাদের প্রভাবশালী টিভি নেটওয়ার্ক সান টিভি ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মালিকানার জন্যে নিলাম করে। নিলামে সফল হয়ে নিজেদের টিভি নেটওয়ার্কের নামানুসারে দলটিকে নতুনভাবে সাজায় সান টিভি। হায়দ্রাবাদ ভিত্তিক এই ফ্র্যাঞ্চাইজিটি পায় নতুন নাম, নতুন মালিকানায় যার নাম হয় সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ।

২. কোচি টাস্কার্স কেরালা

দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যের একমাত্র দল হিসেবে আইপিএলে অংশ নিয়েছে কোচি টাস্কার্স কেরালা। ২০০৮-১০ পর্যন্ত আইপিএলে ৮টি দল অংশগ্রহণ করে। ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড দল বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ লক্ষ্যে পুনে, আহমেদাবাদ, কোচি, নাগপুর, কানপুরসহ মোট ১২টি শহরের বিভিন্ন ব্যবসায়ী নিলামে অংশ নেয়। অংশীদারিত্বের মাধ্যমে দলটি কেনে রদেভু স্পোর্টসসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। তবে সর্বোচ্চ ২৬% শেয়ার কেনে রদেভু স্পোর্টস

পরের বছর কোচি টাস্কার্স কেরালা নামে আইপিএলে অংশ নেয় কেরালা রাজ্যের এই দলটি, যার ফলে দক্ষিণ ভারতের ৪টি রাজ্যের ৪টি দল প্রথমবারের মতো আইপিএলে অংশ নেয়। মাহেলা জয়াবর্ধনে, ব্র্যাড হজ, ভিভিএস লক্ষ্মণ, ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম, মুত্তিয়া মুরালিধরনের মতো খেলোয়াড় নিয়ে শুরু হয় দলটির পথচলা, যা সীমাবদ্ধ থাকে সে বছরই। ১০টি দলের মধ্যে ৮ম হয় কেরালা।

ব্যাঙ্গালোরের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে কোচির অধিনায়ক মাহেলা জয়াবর্ধনে; Source: p.imgci.com

দলটির শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে দেখা দেয় অন্তর্দ্বন্দ্ব। মৌসুম শুরুর আগে পুরো অর্থের ১০% ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে বলা হয় মালিকদের। তবে মৌসুম শেষে বার বার উকিল নোটিশ পাঠিয়েও কোনো কাজ হয়নি। তবে ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকরা সময় চেয়েছিলেন। ১৯ সেপ্টেম্বর বিসিসিআই এর তৎকালীন সভাপতি এন শ্রীনিবাসন পূ্র্বঘোষণা ছাড়াই দলটির বিলুপ্ত হওয়া নিয়ে নোটিশ পাঠান। সেই সাথে খেলোয়াড়দের বেতন-ভাতা পরিশোধের নির্দেশও দেয়া হয়। তাদের এই সিদ্ধান্ত বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করে দলটির অন্যতম স্বত্ত্বাধিকারী রদেভু স্পোর্টস ওয়ার্ল্ড।

উচ্চ আদালত কোচি দলকে ৫৫০ কোটি রুপি ক্ষতিপূরণ দিতে বিসিসিআইকে নির্দেশ দেয়। ইএসপিএন ক্রিকইনফোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ফ্যাঞ্চাইজি মালিকরা ক্ষতিপূরণের পরিবর্তে আইপিএলে তাদের দলের পুনরায় অন্তর্ভুক্তি চায়। তবে তাদের ফিরে আসার ব্যাপারে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড কোনো তথ্য পরবর্তীতে নিশ্চিত করেনি। ফলে ২০১১ সালে প্রথম এবং শেষবারের মতোই আইপিএল খেলে কোচি টাস্কার্স কেরালা।

৩. পুনে ওয়ারিয়র্স ইন্ডিয়া

মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের পর মহারাষ্ট্র রাজ্য থেকে অংশ নেওয়া ২য় দল পুনে ওয়ারিয়র্স ইন্ডিয়া। বিসিসিআই এর দল বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে ২০১০ সালে ১৯ বিলিয়ন রুপিতে পুনে দলের মালিকানা কিনে নেয় সাহারা অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস লিমিটেড। প্রথম বছর দলটির ঘরোয়া ভেন্যু ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়াম হলেও পরবর্তী দুই বছর পুনের সমস্ত ঘরোয়া ম্যাচ মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে স্থানান্তরিত করা হয়। আশিষ নেহরা, যুবরাজ সিং, জেসি রাইডারদের দলে ভেড়ায় পুনে। সেই আসর শেষে দলটির অবস্থান ছিল ৯ম। পরের বছর আশিষ নেহরার পরিবর্তে দলে আসেন সৌরভ গাঙ্গুলি।

অধিনায়কত্ব দেওয়া হয় প্রিন্স অব ক্যালকাটাকে। ২০১২-১৩ এই ২ বছর আইপিএলে পুনের জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন বাংলাদেশি ওপেনার তামিম ইকবাল। টুর্নামেন্ট চলাকালীন খারাপ অধিনায়কত্বের কারণে সৌরভ গাঙ্গুলিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে শ্রীলঙ্কার অলরাউন্ডার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস হন দলটির নতুন অধিনায়ক। ২০১৩ সালে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম ছিল আইপিএলের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৬৩ রানের সাক্ষী হয়ে। গেইলের ব্যাটের কাছে পুনের বোলাররা অসহায় হয়ে পড়েন। সেই ম্যাচে মাত্র ৩০ বলে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন গেইল, খেলেছিলেন আইপিলের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৭৫ রানের ইনিংস।

দলটির মালিক সাহারা গ্রুপ ছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের তৎকালীন প্রধান পৃষ্ঠপোষক। আর্থিক সংকটে পড়ে জাতীয় দলের স্পন্সরশীপ হারায় দলটি। আইপিলের ২৫% ফ্রাঞ্চাইজি ফি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয় পুনে। ফলে অর্থাভাবে আইপিএল থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিতে চায় সাহারা গ্রুপ। সাহারা গ্রুপের মালিক সুব্রত রায় জানান, তাদের প্রতি বিসিসিআই এর সভাপতির আচরণ ব্যবসায়ীসুলভ ছিলো না। তবে দলটির একটি বিশেষত্ব ছিলো। আইপিএলের অন্যান্য দল যেখানে চিয়ারলিডার হিসেবে বিদেশী চিয়ারলিডারদের সাথে চুক্তি করে, সেখানে একমাত্র পুনে ওয়ারিয়র্স ইন্ডিয়াই তাদের দলের চিয়ারলিডার হিসেবে দেশি শাস্ত্রীয় নৃত্যশিল্পীদের সুযোগ দিয়েছিল।

পুনে ওয়ারিয়র্স ইন্ডিয়ার শাস্ত্রীয় নৃত্যশিল্পীরা; Source: sportzwiki

৪. গুজরাট লায়ন্স

২০১৫ সালে ফিক্সিং এর দায়ে চেন্নাই সুপার কিংস এবং রাজস্থান রয়্যালস পরবর্তী ২ বছরের জন্যে নিষিদ্ধ হলে তাদের পরিবর্তে নতুন দুই দল খেলানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিসিসিআই। তবে শর্ত একটিই, নতুন দুই দলের চুক্তি হবে দুই বছরের জন্য, অর্থাৎ চেন্নাই এবং রাজস্থান যখন ২ বছর পর ফিরে আসবে, তখন নতুন দুই দল আর খেলার সুযোগ পাবে না। এদিকে মালিকানা কিনে নেয় ইন্টেক্স গ্রুপ। সুরেশ রায়নার অধীনে রবীন্দ্র জাদেজা, ডোয়াইন ব্রাভো, ব্র্যান্ডন ম্যাককালামকে নিয়ে দল গড়ে গুজরাট, প্রধান কোচ ছিলেন ব্র্যাড হজ। ২০১৬ সালে ৩য় হয় দলটি। ২০১৭-তে জিতে নেয় আইপিএলের ফেয়ার প্লে ট্রফি।

উচ্ছ্বসিত গুজরাটের খেলোয়াররা, Source; Cricketcountry.com

তবে পরের বছর আইপিলে অংশ না নিতে পারার ব্যাপারে অনেকটা নাখোশ দলটির মালিক কেশব বানসাল। পরের বছর তাদের অংশ গ্রহণের ব্যাপারে বিসিসিআই সভাপতি বিনোদ রায় জানান, তাদের সাথে চুক্তি বৃদ্ধি করা হবে না যেহেতু তারা জানতো তারা দুই বছরের জন্যে অংশ নিচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে দল বাড়ানো হলে তাদের আইপিএলে ফিরে আসার সুযোগ থাকছে। সেক্ষেত্রে তাদের অবশ্য সম্পূর্ণ নতুনভাবে নিলাম করে দল সাজাতে হবে।

৫. রাইজিং পুনে সুপার জায়ান্ট

ভারতীয় সংস্কৃতির রাজধানী পুনে শহরের ২য় দল রাইজিং পুনে সুপার জায়ান্ট। গুজরাট লায়ন্সের মতো ২ বছরের চুক্তিতে অংশ নেয় পুনে। দলটিকে নেতৃত্ব দেন ভারতের জাতীয় দল এবং আইপিলের সফল অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। ঘরোয়া ভেন্যু ছিলো মহারাষ্ট্র ক্রিকেট  অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়াম। মাঠে অতিরিক্ত পানি ব্যবহারের ফলে সাধারণ মানুষের মাঝে দেখা যায় পানির খরা, যেখানে মানুষ পানির অভাবে কষ্ট পাচ্ছে, সেখানে আইপিএলের আয়োজন করাটা নিছক বিলাসিতা ছাড়া কিছুই না।

মুম্বাই হাইকোর্ট পুনের সবগুলো ম্যাচ সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয়। পুনে তাদের বাকি ম্যাচগুলো খেলে ওয়াই এস রাজশেখর রেড্ডি স্টেডিয়ামে। সেই বছর নিলামে সর্বোচ্চ ১৪.৫ কোটি রুপি দাম হাঁকিয়ে ইংলিশ অলরাউন্ডার বেন স্টোকসকে দলে ভেড়ায় পুনে। তবে ৮টি দলের মধ্যে ৭ম হয় পুনে। পরের বছর ধোনিকে অধিনায়কত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে নেতৃত্ব দেওয়া হয় স্টিভ স্মিথের হাতে।

স্মিথ এবং ধোনি, Source;espncricinfo

ফাইনালে মুম্বাইয়ের মুখোমুখি হয় পুনে। শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে মাত্র ১ রানে হেরে যায় রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্ট। সেই সাথে ৩য়বারের মতো শিরোপা ঘরে তোলে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। ফাইনাল ম্যাচটি ছিলো আইপিএলে খেলা রাইজিং পুনে সুপার জায়ান্টের শেষ ম্যাচ।

ফিচার ইমেজ : espncricinfo

Related Articles