Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ফুটবলে আসছে নতুন চার নিয়ম

নিঃসন্দেহে ফুটবল এই পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলাগুলোর একটি; অনেকের মতে তো সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলাই! প্রতিটি খেলা যেমন পরিবর্তন-পরিবর্ধনের ভেতর দিয়ে যায়, ফুটবলও তেমন গিয়েছে। খেলার নিয়ম থেকে শুরু করে খেলার মাঠ, ট্যাকটিক্স, খেলোয়াড়দের রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা খেলোয়াড়দের পেশাদারিত্ব, সব কিছুই সময়ের সাথে সাথে বদলেছে। খেলাটিকে আরও সুন্দর ও সাবলীল করে তোলার জন্য নতুন নিয়ম আরোপ করার চেষ্টা করে থাকে ফুটবলের আইন প্রণেতা সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ড (আইএফএবি)। আর এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই আগামী মৌসুম থেকে কার্যকরের জন্য নতুন চারটি নিয়ম আরোপ করেছে তারা। এই নিয়মগুলোর প্রচলনের ফলে খেলার মাঠে প্রতারণা এবং কালক্ষেপণের সমস্যাগুলো দূর করা সম্ভব হবে।

১. সকল হ্যান্ডবল গোলই বাতিল ঘোষণা করা হবে

ইচ্ছাকৃত হোক বা অনিচ্ছাকৃত, হাতে বল লাগলেই গণ্য করা হবে হ্যান্ডবল হিসেবে; Image Source: Sportstar

বর্তমান ফুটবলে বিতর্কের অন্যতম একটি বিষয় হলো হ্যান্ডবল। সাধারণত, অনিচ্ছাকৃতভাবে বল হাতে লাগলে সেক্ষেত্রে হ্যান্ডবল হিসেবে পেনাল্টি কিংবা গোল দেন না কোনো রেফারি। ইচ্ছাকৃতভাবে হাতে লাগলে বা হাত শরীর থেকে বেশ দূরে অস্বাভাবিক অবস্থায় থাকলে হ্যান্ডবলের বাঁশি বাজান রেফারি। কিন্তু নতুন নিয়মে হাতে লাগলেই গোল বাতিল হবে কিংবা পেনাল্টি দেওয়া হবে, ইচ্ছাকৃত নাকি অনিচ্ছাকৃত সে বিষয় গণ্য না করেই। অর্থাৎ, কোনো খেলোয়াড়ের অনিচ্ছায় যদি হাতে লেগে গোল হয় যায়, তাহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গোল বাতিল হয় না। কিন্তু নতুন নিয়মে হাতে বল স্পর্শ করলেই সেই গোল বাতিল করা হবে, ইচ্ছার প্রশ্ন সেখানে তোলাই হবে না।

এই বিষয়টি পরিষ্কার করতে গিয়ে সাবেক প্রিমিয়ার লিগ রেফারি ডারমট গ্যালাঘার বলেন,

রেফারিরা যে হ্যান্ডবলের সিদ্ধান্তগুলো দেন, তার ৮০ শতাংশই অনিচ্ছাকৃত, তারা সেই সিদ্ধান্ত দেন কারণ খেলোয়াড় সেই ক্ষেত্রে শারীরিক সুবিধা পেয়েছে। ‘ইচ্ছাকৃত’ শব্দটি সরিয়ে দিলে এই শারীরিক সুবিধা পাওয়ার ব্যাপারটিও দূর হয়ে যাবে। এরপরও প্রশ্ন থাকবে, সে কি নিজেকে শরীরকে বড় করে তুলেছে কিংবা হাত অস্বাভাবিক কোনো পজিশনে রেখেছে? হাত যদি দেহের সাথে লাগানো থাকে এবং সে সময় বল হাতে লাগে, সেক্ষেত্রে রেফারি পেনাল্টি দেবেন না।

২. বদলি হওয়া খেলোয়াড় মাঠের যেকোনো জায়গা দিয়ে বের হতে পারবেন

সাবস্টিটিউশনের জন্য হাফওয়ে লাইনে আসার বাধ্যবাধকতা থাকছে না; Image Source: Dutch Referee Blog

যখনই কোনো খেলায় খেলোয়াড় বদল করা হয়, তখন বদলি হওয়া খেলোয়াড়কে মাঠ ছাড়ার জন্য আসতে হয় মাঠের হাফওয়ে লাইনে। আর দল এগিয়ে থাকা অবস্থায় ম্যাচের শেষমুহূর্তে সাবস্টিটিউশন করা হলে সেই খেলোয়াড় খুবই ঢিমেতালে সেদিকে আগান, কালক্ষেপণের জন্য। তবে, এসব করবার শেষ সুযোগ এই মৌসুমই, এরপর থেকে যে আর থাকছে না মাঠের মাঝখানে আসবার বাধ্যবাধকতা!

নতুন নিয়মে, সাবস্টিটিউশনের ঘোষণা আসার পর খেলোয়াড় তার সবচেয়ে কাছে থাকা সীমানা দিয়ে বের হয়ে যেতে পারবেন, ফলে কমবে প্রতিটি সাবস্টিটিউশনে অপচয় হওয়া সময়।

স্কাই স্পোর্টসকে গ্যালাঘার বলেন,

অতীতে, এগিয়ে থাকা কিছু দল টেকনিক্যাল এরিয়া থেকে সবচেয়ে দূরে থাকা খেলোয়াড়কে বদল করে, কিন্তু সেটি আর হচ্ছে না। তবে খেলোয়াড়েরা আদৌ সবচেয়ে কাছের সীমানা দিয়ে বের হবেন কি না সেটি দেখার বিষয়, কিন্তু এটা রেফারির উপর নির্ভরশীল যে সে তাকে জোর করবে কি না।”

৩. ফ্রি-কিকের দেয়ালে আক্রমণকারী দলের কোনো খেলোয়াড় থাকবে না

ফ্রি-কিকের দেয়ালে কোনো আক্রমণকারী খেলোয়াড় থাকতে পারবেন না; Image Source: The Telegraph

ফুটবল মাঠের অন্যতম পরিচিত দৃশ্য হলো ফ্রি-কিকের দেয়ালে দুই দলের খেলোয়াড়দের ধাক্কাধাক্কি। প্রায়ই এই সাধারণ ধাক্কাধাক্কি কুৎসিত রূপ ধারণ করে, সেখানে বাধা দিতে হয় রেফারিকে। ফ্রি-কিকের দেয়ালে প্রায়ই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় আক্রমণকারী দলের খেলোয়াড়দের, কিন্তু এই মৌসুমের পর তা আর হচ্ছে না।

ফ্রি-কিকের দেয়ালে আক্রমণকারী দলের খেলোয়াড়েরা থাকেন একটি কৌশলের অংশ হিসেবে। তারা দেয়ালে থাকলে রক্ষণের খেলোয়াড়ের মনোযোগ একটু হলেও সরে যায়, এই সুযোগে তারা গোলে আক্রমণের সুযোগ তৈরি করেন। এছাড়াও, প্রায়ই দেখা যায় এরা ঠিক গোলকিপারের সামনে দাঁড়িয়ে গোলকিপারের দৃষ্টিসীমাকে আটকে দেন, ফলে গোলকিপার বল ঠিকভাবে দেখতে পারেন না। তাছাড়া, প্রায়ই দেয়ালে থাকা এই খেলোয়াড়েরা লাফ দেন বা নীচু হয়ে যান, তখন তাদের পায়ের নীচে দিয়ে বা মাথার উপরে দিয়ে শট নিয়ে গোলরক্ষককে চমকে দেন আক্রমণকারী দলের খেলোয়াড়।

নতুন নিয়মে থাকছে না সেই সুযোগ, আক্রমণকারী দলের কোনো খেলোয়াড় দেয়ালে দাঁড়াতে তো পারবেন না বটেই, ফ্রি-কিক নেওয়ার সময় আক্রমণকারী দলের যেকোনো খেলোয়াড়কে দেয়াল থেকে কমপক্ষে এক মিটার দূরে থাকতে হবে।

৪. কোচদেরও দেয়া হবে কার্ড

আগের মতো শুধু মৌখিক তিরষ্কার নয়, এখন থেকে কার্ড দেওয়া হবে কোচদেরও; Image Source: Royal Blue Mersey 

জুভেন্টাসের বিপক্ষে সিমিওনের বুনো, কারও মতে অশ্লীল, উদযাপন কিংবা কোনো গোলের পর যেকোনো কোচের রেফারিকে গালাগাল, এসবের জন্য এতদিন শাস্তি ছিলো শুধুমাত্র মৌখিক তিরষ্কার। কিন্তু সেটি আর থাকছে না, এখন থেকে অপরাধের মাত্রা বিবেচনা করে কোচদেরকেও হলুদ কিংবা লাল কার্ড দেখাতে পারবেন রেফারি। অর্থাৎ, খেলোয়াড়দের জন্য থাকা হলুদ ও লাল কার্ডের নিয়মগুলো এখন থেকে কার্যকর হবে কোচদের ক্ষেত্রেও।

এতদিন কোচ সাইডলাইন থেকে অশোভন কিছু করলে তাকে রেফারি এসে মৌখিক সতর্কবাণী দেন রেফারি। তবে কোচ যদি অতিরিক্ত কিছু করে ফেলেন তাহলে তাকে টেকনিক্যাল এরিয়া থেকে বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন রেফারি, তাকে খেলা দেখতে হয় দর্শকসারি থেকে। এরপর টুর্নামেন্ট কমিটি টেকনিক্যাল এরিয়ায় তাকে পরবর্তী ম্যাচ বা দীর্ঘ সময়ের জন্য বরখাস্ত করা হবে কি না সে সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এখন থেকে কমিটি পর্যন্ত গড়ানোর ঝামেলা নেই, মাঠেই রেফারি নিষ্পত্তি করবেন ব্যাপারটির। লাল কার্ড পেলে সেই ম্যাচ তো বটেই, পরের ম্যাচ কিংবা প্রতিযোগিতার নিয়মানুযায়ী শান্তি পাবেন সেই কোচ।

গত বছরই এরকম একটি নিয়মের প্রচলন করেছিলো ইএফএল (ইংলিশ ফুটবল লিগ) কর্তৃপক্ষ, যেখানে কোচেরা যেকোনো ধরনের নিয়মভঙ্গ করলে এক ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হতেন।

মাঝখানে আরেকটি নিয়মের গুজব উঠেছিলো, গোলকিপার পেনাল্টি ফিরিয়ে দিলে কিংবা বল বারে লেগে ফেরত আসলে সেখান থেকে গোল করা যাবে না। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত আইএফএবি এর নভেম্বরের একটি সভায় বাতিল করা হয়, এবং এর পরে আর এই নিয়মের ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয়নি।

ভিএআর নিয়ে উঠেছে সমালোচনার ঝড়; Image Source: THe Independent

পৃথিবীর সবকিছুই পরিবর্তনশীল, খেলাধুলার বিষয়টিও ব্যতিক্রম নয়। ফুটবল, ক্রিকেট কিংবা অন্য যেকোনো খেলা, সবকিছুই যাচ্ছে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে। ফুটবলে আসা সর্বশেষ যুগান্তকারী পরিবর্তন ভিএআর (ভিডিও এসিস্ট্যান্ট রেফারি), এবং এটি নিয়েও বিতর্কের শেষ নেই। ভিএআর থাকার পরেও দেখা যাচ্ছে নানা ভুল সিদ্ধান্ত, যেমন ধরুন, সর্বশেষ মাদ্রিদ ডার্বিতে ভিনিসিয়ুসকে ফাউল করা হলো ডি বক্সের বাইরে, অথচ পেনাল্টি! চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে দ্বিতীয় লেগে আয়াক্সের ডুসান ট্যাডিচের করা তৃতীয় গোলটির বিল্ডআপে বল চলে গিয়েছিলো মাঠের বাইরে, অথচ বাতিল হয়নি গোলটি! তবে, ভিএআর থাকার ফলে যে স্রেফ ভুলভাল সিদ্ধান্তই আসছে তা কিন্তু নয়। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড পিএসজিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দ্বিতীয় লেগে যে পেনাল্টি গোলে হারিয়ে দিলো, সেই পেনাল্টির সিদ্ধান্তও এসেছিলো ভিএআর থেকে।

ভিএআর নিয়ে এই যে মিশ্র অভিমত, তা হয়ে আছে ফুটবল ভক্তদের আলোচনার প্রধান খোরাক। তবে নতুন যে নিয়মগুলো আসছে এগুলো ঠিক ভিএআর এর মতো যুগান্তকারী না, বরং ছোটখাট পরিবর্তন, খেলাকে আরও বেশি সাবলীল করে তুলবার জন্য। নিয়মগুলো প্রচলিত হলে খুব বড় প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা খুবই কম, আদৌ ফেলে নাকি সেই অপেক্ষায় থাকা যাক!

A detailed article on 4 new rules set to be introduced to football from the 2019/20 season. These rules are about handball decisions in the box, reducing time wasting during substitutions, attackers being in the wall while a free kick is being taken and managers receiving cards. 

 

Featured Image Source - These Football Times 

Related Articles