Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ভয়ঙ্কর ইনজুরি কাটিয়ে মাঠে ফিরেছিলেন যেসব ফুটবলার

একজন পেশাদার ফুটবলারের জন্য ইনজুরি মানেই বিভীষিকা। ইনজুরির মরণ কামড়ে কত শত প্রতিভাবান ফুটবলার কুড়ি হয়ে ফোটার আগেই ইতি টেনেছেন ফুটবল ক্যারিয়ারের তার ইয়ত্তা নাই। তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। বড় বড় ইনজুরিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মাঠে ফিরেছেন অনেকেই। আজকে আমরা জানবো এমনই কয়েকজন ফুটবলারের কাহিনী।

জিব্রিল সিসে – পা ভাঙা

২০০৪ সালে ১৪ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ফরাসি ক্লাব অঁরে থেকে এনফিল্ডে আসেন জিব্রিল সিসে। পুরনো ক্লাবের হয়ে ১২৮ ম্যাচে ৭০ গোল করা সিসেকে পেয়ে যারপরনাই খুশিই ছিলেন তৎকালীন লিভারপুল কোচ রাফায়েল বেনিতেজ। প্রথমে নিজের নামের প্রতি সুবিচার না করতে পারলেও ধীরে ধীরে নিজেকে মেলে ধরেন এই ফরাসি ফুটবলার।

৩০ অক্টোবর, ২০০৪; লিভারপুলের হয়ে নিজের ২০ তম প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলতে নামেন সিসে। প্রতিপক্ষ ইংলিশ ক্লাব ব্ল্যাকবার্ন। প্রথমার্ধের মাঝামাঝি সময়ে একটি বলের লড়াইয়ে অনাকাঙ্খিত ঘটনাটি ঘটে। ব্ল্যাকবার্ন ডিফেন্ডার জেই ম্যাকএভলির ট্যাকলে টিবিয়া ও ফিবুলা দুটি হাড়ই ভেঙে যায় সিসের। সাথে সাথেই মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। সাত মাস মাঠের বাইরে থাকার পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জুভেন্টাসের বিপক্ষে আবার লিভারপুলের হয়ে মাঠে নামেন তিনি।

সুস্থ হওয়ার পরের বছরই ২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপের জন্য ফ্রান্স দলে ডাক পান সিসে। বিশ্বকাপের জন্য খেলা প্রস্তুতি ম্যাচে চীনের বিপক্ষে আবারও একই জায়গায় পা ভাঙে এই ফুটবলারের। বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ার পাশাপাশি লম্বা সময়ের জন্য আবারও মাঠের বাইরে চলে যান তিনি। তবে সিসে কখনোই হাল ছাড়ার পাত্র ছিলেন না। সেখান থেকে আবারও ফিরে এসে একে একে খেলেছেন মার্শেই, সান্ডারল্যান্ড, লাজিও, কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্সের মতো ক্লাবে।

২০১৪ সালে ৩৪ বছর বয়সে ফুটবলকে বিদায় জানান হাল না ছাড়া সিসে।

পিটার চেক – মাথায় চিড়

২০০৬ সালের ১৪ অক্টোবরে খেলা চলছিলো চেলসি ও রিডিংয়ের মধ্যে। খেলার মাঝে রিডিং ফরোয়ার্ড স্টেফান হান্ট ও চেলসি গোলরক্ষকের মধ্যে ভয়াবহ এক সংঘর্ষ ঘটে। বলে হেড করতে লাফিয়ে ওঠা হান্টের হাঁটুর ধাক্কা লাগে চেকের মাথায়। তাতেই মাথায় ফাটল ধরে এই গোলরক্ষকের। ইমার্জেন্সি অপারেশনের জন্য সাথে সাথেই চেককে নেওয়া হয় বার্কশায়ার হাসপাতালে। অনেকে ভেবেছিলেন, খেলাই হয়তো ছেড়ে দিবেন চেক। কিন্তু তিন মাস পরেই ২০০৭ সালের জানুয়ারির ২০ তারিখে ব্লুজদের হয়ে লিভারপুলের বিপক্ষে আবার মাঠে নামেন তিনি। তবে সেই ঘটনার পর থেকে নিজের মাথাকে সুরক্ষিত রাখতে মাথায় রাগবি স্টাইলে একটি গার্ড পরে খেলতে নামেন তিনি।

মাথায় আঘাত পাওয়ার মূহুর্তে চেক; Image Source : Daily Mirror

এরন রামসি – পা ভাঙা

এরন রামসির পাশাপাশি রায়ান শক্রসও চিরদিন মনে রাখবেন ঘটনাটি। স্টোক সিটির এই ডিফেন্ডারের জঘন্য ট্যাকলে ডান পায়ের টিবিয়া ও ফিবুলা ভেঙে যায় রামসির। ট্যাকলের পরপরই রায়ান শক্রস কান্নায় ভেঙে পড়েন।

ঘটনাটি ঘটে ২০১০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। স্টোক সিটির বিপক্ষে ব্রিটানিয়া স্টেডিয়ামে খেলতে নামে আর্সেনাল। ১৯ বছর বয়সে নিজেকে সবেমাত্র তুলে ধরতে শুরু করা রামসির ক্যারিয়ারও সংকটে পড়ে যায় এই ঘটনায়।

নভেম্বরের মাঝেই অবশ্য ফিরে আসেন রামসি। তবে ইনজুরির দরুন আর্সেনাল তাকে লোনে পাঠায় উলভারহ্যাম্পটন ও কার্ডিফ সিটিতে। পরে অবশ্য নিজের সামর্থ্যের জানান দিয়েই আর্সেনালে নিজের জায়গা পোক্ত করে নেন এই ওয়েলস তারকা।

এরন রামসির ইনজুরি: Image Source: Goal.com

এলান স্মিথ – পা ভাঙা ও গোড়ালিচ্যুতি

লিভারপুল বনাম ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের একটি ম্যাচে এই অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্ম হয়। লিভারপুলের একটি ফ্রি কিক ঠেকাতে গিয়ে এলান স্মিথের গোড়ালিচ্যুতি ঘটে। ২০০৬ সালের সেই ম্যাচে এই ইনজুরির দরুন মাঠ ছাড়ার সময় এনফিল্ডের দর্শকেরাও দাঁড়িয়ে সম্মান জানায় এলান স্মিথকে।

স্যার এলেক্স ফার্গুসন নিজেও বলেছিলেন, তার দেখা অন্যতম ভয়ঙ্কর চোট ছিলো সেটি। সাত মাস মাঠের বাইরে থাকার পর উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সেল্টিকের বিপক্ষে পুনরায় আবার মাঠে নামেন স্মিথ। সেই সময় অনেকেই ভেবেছিলেন, স্মিথ হয়তো হাঁটতেও পারবেন না আর। সবার ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে ঠিকই আবার মাঠে আসেন স্মিথ।

বর্তমানে নটস কান্ট্রি ক্লাবে আছেন স্মিথ। তার আগে নিউক্যাসেল ইউনাইটেড ও এমকে ডনসের হয়ে খেলেছিলেন এই ইংলিশ খেলোয়াড়। তবে সেই ইনজুরির পর আর সেভাবে কখনোই নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি এলান স্মিথ।

এলান স্মিথ; Image Source: Daily Mail

লুক শ – পায়ের দুটি চিড়

মাত্র ১৮ বছর বয়সী লুক শ-কে ৩০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে সাউদাম্পটন থেকে ওল্ড ট্রাফোর্ডে নিয়ে আসে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। বড় ক্লাবের পাশাপাশি দামী প্রাইস ট্যাগের চাপ নিয়েও দুর্দান্ত পারফর্ম করতে থাকেন শ। তবে সেই মধুর সময় টেকেনি বেশিদিন।

১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সালে পিএসভির মাঠে খেলতে যায় রেড ডেভিলরা। পিএসভি মিডফিল্ডার হেক্টর মরেনোর ট্যাকলে পায়ের দুই জায়গায় চিড় ধরে শ’র। স্ট্রেচারে করে অক্সিজেন মাস্ক মুখে দিয়ে ফিলিপ্স স্টেডিয়াম ত্যাগ করেন শ। নয় মাস ধরে মাঠের বাইরে কাটান। ৩০৫ দিন পরে ফিরে আসেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের স্কোয়াডে। চলতি মৌসুমে মরিনহোর অধীনে খেলতেও শুরু করেছেন তিনি।

মাত্র ২১ বছর বয়সী এই ইংলিশ ডিফেন্ডারের ক্যারিয়ারের অনেক সময়ই এখনো পড়ে আছে। এই বিভীষিকাময় ইনজুরির দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে কত দ্রুত নিজেকে মেলে ধরতে পারেন তিনি সেটাই এখন দেখার বিষয়।

লুক শ; Image Source: Express.co.uk

এডুয়ার্ডো দা সিলভা – পা ভাঙা

ব্রাজিলে জন্মানো এই ক্রোয়েশিয়ান খেলোয়াড় তার পা ভাঙেন ২০০৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। গানার্সদের হয়ে সেবার সিলভা খেলতে যান বার্মিংহামের সেইন্ট অ্যান্ড্রুস স্টেডিয়ামে। বার্মিংহাম ডিফেন্ডার মার্টিন টেইলরের ট্যাকলে পা ভেঙে মাঠ ছাড়েন সিলভা। সেই ট্যাকলের জন্য সরাসরি লাল কার্ড দেখে অবশ্য টেইলরও একইসাথে মাঠ ত্যাগ করেন। সাথে সাথেই সিলভাকে শল্যবিদের কাঁচির নিচে যেতে হয়।

প্রায় এক বছর ফুটবল থেকে দূরে থাকার পর অবশেষে এফএ কাপে কার্ডিফ সিটির বিপক্ষে আবার মাঠে নামেন তিনি। ২০১০ এর জুলাইয়ে সিলভা পাড়ি জমান শাখতার দোনেৎস্কে। পরবর্তীতে খেলেন ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ফ্ল্যামেঙ্গোতে। তবে ইনজুরির কারণে নিজেকে আর সেভাবে তুলে ধরতে পারেননি এই ফুটবলার।

এডুয়ার্ডো দা সিলভা;  Image Source: Goal.com

প্যাট্রিক ব্যাটিনসন – হাড়, দাঁত ভাঙা ও কোমা

প্যাট্রিক ব্যাটিনসনকে করা হেরাল্ড শুমাখারের ট্যাকলকে ধরা হয় ফুটবলে ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্য ফাউল হিসেবে। তবে আশ্চর্য হলেও সত্য, সেদিন এই ফাউলের জন্য কোনো কার্ডই দেখেননি জার্মান গোলকিপার শুমাখার।

ঘটনাটি ঘটে সেভিয়াতে হওয়া ১৯৮২ বিশ্বকাপের সেমি ফাইনালে। ফ্রান্স বনাম জার্মানি ম্যাচটির একপর্যায়ে মিশেল প্লাতিনির দেওয়া থ্রু বল ধরার জন্য ব্যাটিনসন দৌড় দিলে জার্মান গোলকিপার শুমাখারের সাথে সংঘর্ষ হয় তার। সাথে সাথেই চারটি দাঁত পড়ে যাওয়ার পাশাপাশি চোয়ালও ভেঙে যায় ব্যাটিনসনের। সাথে এই ফরাসি ফুটবলারের মেরুদন্ডও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এই ঘটনার পর ম্যাচের চিত্রনাট্যও বদলে যায়। লিড নেওয়া ম্যাচে ফ্রান্স শেষপর্যন্ত টাইব্রেকারে হেরে যায়। তবে প্রায় ৬ মাস পর ব্যাটিনসন ফুটবলে ফিরে আসেন। খেলেন বোর্দো ও মোনাকোর হয়ে। তবে শুমাখারের কোনো কার্ড না দেখা আজও বিস্ময় জাগায় মানুষের মনে।

শুমাখারের সেই ফাউল; Image Source: Goal.com

Feature Image: The Sports Law

References: References are hyperlinked in the article.

Description: This article is about the footballers who came back from brutal injuries.

Related Articles