ক্রিস গেইল কিংবা শিখর ধাওয়ানকে তো আপনি তারকা বলেই মানেন। তারকা মানেন বিরাট কোহলি, কেন উইলিয়ামসন অথবা জো রুটকেও। তা এতজন তারকা-মহাতারকাদের এক লাইনে না লিখে এমন শ্রেণীবিভাজন কেন? উতলা হবেন না, কারণ তো একটা আছেই!
ক্রিস গেইল-শিখর ধাওয়ানদের নামের পাশে তারকার তকমা জুটে গিয়েছিল টিনএজেই, বয়সটা ঊনিশ ছাড়ানোর আগেই স্বীকৃতি মিলেছিল,
'ঊনিশ পেরোনোর আগে ক্রিকেটটা তাদের চাইতে ভালো খেলতে পারতেন না সমসাময়িক কেউ!'
কোহলি, রুট, উইলিয়ামসনদের ভাগ্যে জোটেনি এমন কোনো তকমা, জোটেনি আইসিসি আয়োজিত যুব বিশ্বকাপে সেরা ক্রিকেটার হবার স্বীকৃতি, তাতে আটকে থাকেনি সিনিয়র ক্রিকেটে তাদের মহাতারকা হওয়াও। তবুও, ক্রিস গেইল-শিখর ধাওয়ানরা নিজেদের একটু বিশেষ দাবি করতেই পারেন।
যেমন দাবি করতে পারেন তারা দু'জন ছাড়াও আরও দশজন ক্রিকেটার। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের টুর্নামেন্ট-সেরার স্বীকৃতি পাওয়া ক্রিকেটারদের নিয়েই আজকের এ আয়োজন!
১৯৯৮: ক্রিস গেইল
তখনও পৃথিবী 'গ্যাংনাম-স্টাইল' দেখেনি। নিজের নামের পাশে 'ইউনিভার্স বস' টাইটেল লাগাচ্ছেন কেউ, মানুষজন শোনেনি এমন। তবে জেনেছিল, ক্রিস গেইল নামে কেউ একজন আসছেন। ১৯৯৮ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপই হয়ে গিয়েছিল গেইলের আগমনী বার্তা শোনাবার মঞ্চ।
এবারের মতো যুব বিশ্বকাপের সে আসরটিও বসেছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পরিণতিও হয়েছিল অনেকটা এবারের মতোই। এবার সুপার লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল অব্দি পৌঁছালেও সেবার গ্রুপপর্বে বাদ পড়ে দৌড়াতে হয়েছিল প্লেট শিরোপার পেছনে। সেখানেও বাংলাদেশের কাছে পরাজিত হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল রানার্স-আপ হয়েই।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ না পারলেও নিজের জাত ঠিকই চিনিয়েছিলেন ক্রিস গেইল। প্লেটের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলতে পেরেছিল ২৪৩ রান, যার মাঝে গেইল একাই করেছিলেন ১৪১। ভুগিয়েছিলেন বাকি দলগুলোকেও, ৭ ম্যাচ খেলে সংগ্রহ করেছিলেন ৩৬৪ রান।
১৯৮৮ সালে প্রথমবার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ আয়োজিত হলেও টুর্নামেন্ট-সেরার পুরষ্কার দেয়া শুরু হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার ওই আসর থেকেই। আর অমন পারফরম্যান্সে প্রথমবারেই ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছিলেন 'ইউনিভার্স-বস'।
২০০০: যুবরাজ সিং
পরিসংখ্যান ঘাঁটলে জানা যাবে, যুবরাজ সে আসরে ব্যাট হাতে করেছিলেন ২০৩ রান, এক ম্যাচে তো আউট হয়েছিলেন রানের খাতা খোলার আগেই। আলোচনাটা তাই হওয়া উচিৎ ছিল তার বোলিং-সত্ত্বা নিয়ে, আসরে নিয়েছিলেন ১২ উইকেট।
তবে বছর না ঘুরতেই তিনি যে ভারতের জাতীয় দলে চলে এলেন, আইসিসির চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে নাস্তানাবুদ করে রাতারাতি মহাতারকা বনে গেলেন, সে পুরোটাই তার ব্যাটিংয়ের জন্যে। যার প্রমাণ রেখেছিলেন ২০৩ রানের ওই যাত্রাতেও, যার মাঝে ছিল ২৫ বলে ৫৮ রানের ইনিংসটিও।
এতদিন বাদে যুবরাজ কী করতে পারতেন, তা নিয়ে কথা বলা বাতুলতা। তবে সে মুহূর্তে যুবরাজের প্রতিভা নিয়ে কারও মনে কোনো সংশয় থাকলে তা দূর করার দায়িত্ব নিয়েছিল স্বয়ং ক্রিকইনফো। মোটামুটি ঘোষণার সুরেই তারা জানিয়ে দিয়েছিল,
'Cleanest striker of the ball since Sachin Tendulkar.'
মাঝে দুই যুগ কেটে গিয়েছে, যুবরাজের হাত ধরে ভারত দু-দু'টি বৈশ্বিক আসর জিতেছে, কথাটি আজ অবধি একইরকম ধ্রুব আছে। যেমন করে অমর সত্য হয়ে গিয়েছে 'যুবরাজ-আইসিসি ইভেন্ট: বেটার লাভ স্টোরি দ্যান টোয়াইলাইট!'
২০০২: টাটেন্ডা টাইবু
হুট করেই কি নিজেকে একটু বৃদ্ধ মনে হচ্ছে? কিংবা একটু নস্টালজিক? টাটেন্ডা টাইবু নামটা তো আপনার সেই আদ্যিকালের চেনা। জিম্বাবুয়ে তখন ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী, আর টাইবু ছিলেন সবচেয়ে বড় কাঁটা।
উনিও গোটা পৃথিবীর নজরে এসেছিলেন যুব বিশ্বকাপ দিয়েই। ব্যাটে-বলে কিংবা উইকেটরক্ষণে, টাইবু ছিলেন জিম্বাবুয়ের সবখানেই। বল হাতে ১২ উইকেটের পাশে রান করেছিলেন ১৮৫, উইকেটের পেছনে ক্যাচও লুফেছিলেন ৩টি। এমন অনবদ্য পারফরম্যান্সে ম্যান অফ দ্য টুর্নামেন্টের পুরষ্কারটিও গিয়েছিল তার ঘরেই।
মুদ্রার উল্টো পিঠটা টাইবু এত সহসাই দেখেছিলেন যে, ক্যারিয়ারের ঊষালগ্নের ওই পুরষ্কার এখন হয়তো বা আক্ষেপই জাগায় টাইবুর মনে। কে জানে, হয়তো আপনার মনেও!
২০০৪: শিখর ধাওয়ান
বীরেন্দর শেবাগ সে বছর ত্রিশতক তুলেছিলেন পাকিস্তানি বোলারদের বিরুদ্ধে। মুলতানের সেই ইনিংসের মাসদুয়েক আগেই অবশ্য বিশ্ব জেনে গিয়েছিল, বীরেন্দর শেবাগের হাত থেকে মুক্তি মিলছে না সহসাই। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হওয়া সেবারের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে যে দেখা মিলেছিল বাঁহাতি বীরেন্দর শেবাগের! নাম, শিখর ধাওয়ান।
তিন শতক আর এক অর্ধশতকে ধাওয়ান রান করেছিলেন ৫০৫, টুর্নামেন্টে আরও ১৫ দেশের দু'শো ছুঁইছুঁই ক্রিকেটার খেললেও সেবার ব্যক্তিগত চারশ' রানই পেরোতে পারেননি তিনি ছাড়া আর কেউ। তবে বীরেন্দর শেবাগ হতে চাইলে তো কেবল রান করলেই চলে না, ব্যাটে থাকা চাই আগ্রাসনও। ৯৩.৫১ স্ট্রাইকরেটটা অবশ্য সাক্ষ্য দেয়, 'বড়ে মিয়া'র চেয়ে তিনিও কম যাননি কোনো অংশে।
সেই খুনে মেজাজটা ধরে রেখেছেন এখনো। ১৩৬টি একদিনের ম্যাচ খেলে ৯৪ স্ট্রাইকরেটে ৫৬৮৮ রান তো সে কথাই বলে!
২০০৬: চেতেশ্বর পূজারা
প্রভাত নাকি দিনের পূর্বাভাসটাই দেয়। কিন্তু পুরোটা দেয় কি? চেতেশ্বর পূজারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মাতাবেন, এ তো জানা গিয়েছিল ক্যারিয়ারের প্রভাতেই। তবে যুব ক্রিকেটের যে ফরম্যাটে আলো ছড়িয়ে জানান দিয়েছিলেন নিজের আগমনের, বড়দের ক্রিকেটে সেই ফরম্যাটে যে 'যতিচিহ্ন' পড়বে পাঁচ ম্যাচেই, পূজারা বোধহয় ঘোর দুঃস্বপ্নেও এমনটা ভাবেননি।
অথচ ২০০৬ সালের সে বিশ্বকাপে কিন্তু আরও অনেকেই খেলেছিলেন। ইয়োন মরগান, রোহিত শর্মা, কিংবা বলা যেতে পারে রবীন্দ্র জাদেজার কথা। তাদের টপকে ৮২ ছাড়ানো স্ট্রাইকরেটে ৩৪৯ রান করে টুর্নামেন্টসেরার পুরষ্কার জিতেছিলেন চেতেশ্বর পূজারা। শ্রীলংকার ধীরগতির উইকেটে রানবন্যার ঢল নামানো মানুষটিই কেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসে স্ট্রাইকরেটকে চল্লিশের ঘরেও নিতে পারলেন না, তা বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের মতোই এক অমীমাংসিত রহস্য!
তাতে অবশ্য ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের খেদ থাকা উচিৎ নয়। রাহুল দ্রাবিড়ের শূন্যতা ঢাকতে তারা যে 'দ্য ওয়াল ২.০'-য়ের দেখা পেয়ে গিয়েছে চে পূজারার মাঝেই।
২০০৮: টিম সাউদি
২০০৮ যুব বিশ্বকাপকে ভুলবার তো কোনো প্রশ্নই আসে না। অন্তত বিরাট কোহলি তা ক্রিকেটীয় জীবদ্দশায় সে সুযোগ দেবেন বলে মনেও হচ্ছে না! পণ যখন করেছেন, ক্রিকেটের অতিক্রম্য কিংবা প্রায় অনতিক্রম্য রেকর্ডগুলোকে নিজের করে নেবেন বলে, তখন তো ২০০৮ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপকে স্মরণে আনতেই হবে, বিরাট কোহলি নামের বটবৃক্ষের সঙ্গে কোটি কোটি লোকচক্ষুর পরিচয় ঘটেছিল যে সে বছরই। অথচ সেবারের টুর্নামেন্টসেরা ক্রিকেটারটির নাম কিন্তু বিরাট কোহলি নয়!
অবশ্য যিনি হয়েছিলেন, তার নামের পাশেও তারকা শব্দটি বেমানান নয়। নিউ জিল্যান্ড ক্রিকেট দলের বোলিং ইউনিটকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন হরহামেশাই। ট্রেন্ট বোল্ট, ম্যাট হেনরি, নিল ওয়াগনার কিংবা লকি ফার্গুসনদের নিয়ে গড়া বোলিং আক্রমণের নেতাও তিনিই। বুঝে যাবার কথা এতটুকুতেই, টিম সাউদির সঙ্গে আপনার পরিচিতি তো আর কম দিনের নয়!
বিশ্ব ক্রিকেট থেকেই সুইং বোলার হারিয়ে যাচ্ছে বলে যে হাহাকারটা উঠছে চারদিকে, সে পৃথিবীতে এখনো জাজ্বল্যমান প্রদীপ হয়ে টিকে থাকা দু-একজন বোলারের একজন এই সাউদিই। নিজের সুইং বোলিং সামর্থ্যের প্রদর্শনীই যেন মেলে ধরেছিলেন ২০০৮ সালের ওই আসরে। নামের পাশে ৬ ম্যাচে ১৭ উইকেট তার সামর্থ্যের পুরোটা বোঝায় না বলেই হয়তো ছেলেখেলা করেছিলেন বোলিং গড় আর ইকোনমি রেটের পরিসংখ্যানে। ৬.৬৪ বোলিং গড়ের চেয়েও বেশি বিস্ময় জাগিয়েছিল টুর্নামেন্টজুড়ে তার ২.৫২ (টাইপিং মিসটেক নয়, সত্যিই!) ইকোনমি রেট।
নিউ জিল্যান্ড ক্রিকেট ম্যানেজমেন্ট তো তার প্রতিভার মূল্য দিয়েছিল এর আগেই, বিশ্বকাপের আগে আগেই অভিষেক ঘটিয়ে দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। বাকি বিশ্বও কুর্নিশ জানাতে শুরু করেছিল যুব বিশ্বকাপের পরপরই, জানাচ্ছে এখনো!
২০১০: ডমিনিক হেনড্রিকস
লোকেশ রাহুল সে টুর্নামেন্ট শেষ করেছিলেন ১৪৩ রানে। জো রুট তো আরও কম, ২৭ ছোঁয়া গড়ে ১৩৮ রানে। আজ বছর দশেক পরে রুটকে আপনি চেনেন 'ফ্যাবুলাস ফোর'-এর একজন হিসেবে। ক্রিকেটীয় সামর্থ্য আর বাস্তবায়নের মধ্যে বেশ খানিকটা ফারাক থাকলেও রাহুলও পায়ের নিচে মাটি খুঁজে পেয়েছেন, অবশেষে। অথচ, সে বিশ্বকাপে ডমিনিক হেনড্রিকস বলেও একজন খেলেছিলেন, রাহুল-রুটের চেয়ে প্রায় তিনগুণ রান করে টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছিলেন! ক্রিকেটের অলিগলির খবর রাখা আপনার কানে এ খবর আজকেই প্রথম পৌঁছালেও, আপনাকে দোষী করার সুযোগ সামান্যই। এই যেমন ধরুন, আমার সঙ্গে ওই ভদ্রলোকের পরিচয় হয়েছিল যে একজন ফটোগ্রাফার হিসেবে!
অথচ ২০১০ বিশ্বকাপটা কি দারুণই না কাটিয়েছিলেন তিনি। ৬ ম্যাচে ৯৭ ছাড়ানো গড়ে রান করেছিলেন ৩৯১, ছক্কা মারার চেয়ে ব্যাটিংটা যে সময় নিয়ে করতেই ভালোবাসেন, তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ৩৭ চারে। নিচু সারির দলের বিপক্ষে রান করেছিলেন, এমন যুক্তিও তো খাটছে না তার আর বড় না হতে পারার কারণ হিসেবে। জশ হ্যাজলউড, ডগ ব্রেসওয়েল, অ্যাডাম জাম্পা কিংবা সন্দীপ শর্মাদের বিপক্ষে রান করাটা তো আজকের ক্রিকেটেও সহজ কর্ম নয়!
কী জানি, এরপরে কী হয়েছিল! ১২৪টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন, এছাড়া ডমিনিক হেনড্রিকসকে নিয়ে যে বলা যাচ্ছে সামান্যই।
২০১২: উইলিয়াম বসিস্টো
ক্রিকেট নিয়ে অন্তত অস্ট্রেলিয়ানদের মনে কোনো আক্ষেপ থাকবার কথা নয়। পাঁচ-পাঁচটি বিশ্বকাপ শোভা পায় যাদের ট্রফি ক্যাবিনেটে, তাদের কি আর আক্ষেপ শোভা পায়!
তবুও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার অর্গলে কান পাতলে এই আক্ষেপের দীর্ঘশ্বাসটা ঠিকই টের পাওয়া যায়, শেন ওয়ার্ন কখনো অস্ট্রেলিয়াকে নেতৃত্ব দেননি, এটা নাকি অস্ট্রেলিয়ার সবচাইতে বড় আফসোস।
শেন ওয়ার্নের মতো যদি নাও হয়, ধারেকাছে আসতে পারে আরেকজনের নেতৃত্ব না দেয়ার আক্ষেপটাও। ২০১২ যুব বিশ্বকাপে তো সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক কিংবা সর্বোচ্চ উইকেটশিকারীকে টুর্নামেন্টসেরার পুরষ্কার দেয়া হয়নি, দেয়া হয়েছিল অজি শিবিরের সবচেয়ে ক্ষুরধার মস্তিষ্ককে, অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক উইলিয়াম বসিস্টোকে।
সেবারের আসরে সর্বাধিক রানসংগ্রাহকদের তালিকায় বসিস্টো ছিলেন ছয় নম্বরে। স্ট্রাইকরেট তো ছিল রীতিমতো জঘন্য, মোটে ৫৫.৭৫! তবুও ফাইনালের আগ অবধি প্রতি ম্যাচেই প্রতিপক্ষকে দু'শো রানের কমে আটকে রাখা গিয়েছিল বিধায় কাল হয়নি তার ধীরগতির ব্যাটিং। ফাইনালে গিয়ে ভারতের কাছে হারলেও টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছিলেন বসিস্টোই। বিপক্ষকে প্রতি ম্যাচেই কম রানে আটকে রাখার কৃতিত্বটা তো অনেকাংশে অধিনায়কেরও ছিল!
২০১৪: ইডেন মার্করাম
কাজটা করতে পারেননি গ্রায়েম স্মিথ, পারেননি শন পোলক, এবি ডি ভিলিয়ার্স কিংবা ফ্যাফ ডু প্লেসিও। পেরেছিলেন অকালপ্রয়াত হানসি ক্রনিয়ে, তারপর পেরেছিলেন একজনই, ইডেন মার্করাম। ক্রিকেটের বিশ্বমঞ্চে 'চোকার' দক্ষিণ আফ্রিকাকে শিরোপার স্বাদ দিতে পেরেছিলেন তো এই দু'জনই!
হানসি ক্রনিয়ের মতো মার্করামও ২০১৪ যুব বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সামনে থেকেই। সাদমান ইসলাম আর ইমাম-উল-হকের পেছনে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করেছিলেন তৃতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক হিসেবে। ফাইনালের মঞ্চেও খেলেছিলেন ৬৬ রানের এক দায়িত্বশীল ইনিংস। সেই দায়িত্বশীলতা টেনে এনেছেন সিনিয়র পর্যায়ের ক্রিকেটেও, নিজেকে বানিয়ে নিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট দলের অপরিহার্য সদস্য।
২০১৬: মেহেদী হাসান মিরাজ
সেবারের আসরের সর্বাধিক রানসংগ্রাহকদের তালিকায় তিনি ছিলেন সেরা দশের বাইরে, সর্বোচ্চ উইকেটশিকারীর তালিকাতেও তাকে খুঁজে পেতে নামতে হচ্ছিল নয় নম্বরে, যুব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক আর উইকেটশিকারীকে দলে নিয়েও পারেননি বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন করতে! তবুও মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সমাপনী অনুষ্ঠানের মঞ্চে দাঁড়িয়ে সঞ্চালক যখন টুর্নামেন্টসেরা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজের নাম, তাতে অবাক হওয়ার ছিল সামান্যই। একজন ক্রিকেটারের পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব, সবটুকুই তো মিরাজ করেছিলেন যুব বিশ্বকাপের একাদশ আসরে।
ব্যাটিংয়ে ২৪২ রানের পাশাপাশি উইকেট তুলেছিলেন ১২টি, ইনিংসের শুরুতে কিংবা শেষে বেশিরভাগ সময় বল করেও ওভারপ্রতি রান খরচ করেছিলেন মাত্র ৩.৭৫ হারে! দারুণ ব্যাটিংয়ে নেপালের সঙ্গে কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশকে এনে দিয়েছিলেন স্মরণীয় এক জয়, সেমিফাইনালেও দলকে এনে দিয়েছিলেন লড়াই করার মতো পুঁজি। যুব ক্রিকেটের ক্যারিয়ারটাও শেষ করেছিলেন সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী হয়ে!
যুব বিশ্বকাপের টুর্নামেন্টসেরার ট্রফিটাও তাই মিরাজ ছাড়া অন্য কারও হাতে মানায় না!
২০১৮: শুভমান গিল
শুভমান গিলের আক্ষেপ না থেকে পারেই না! তার জন্মটা কেন ভারত ছাড়া অন্য কোনো দেশে হলো না!
২০১৮ যুব বিশ্বকাপ খেলতে নিউ জিল্যান্ড গিয়েছিলেন 'সম্ভাব্য ভবিষ্যতের তারকা' তকমা নিয়ে। সেই তিনিই মাসখানেক বাদে নিউ জিল্যান্ড থেকে যখন ফেরত এসেছিলেন, নামের পাশে যোগ করেছিলেন ১১২ ছাড়ানো স্ট্রাইকরেটে ৩৭২ রান, পুরষ্কারের ঝুলিতে যোগ করেছিলেন যুব বিশ্বকাপের সেরা হবার ট্রফি, শটের সম্মোহনে বিমোহিত করে নিশ্চিত করেছিলেন ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে ১.৮ কোটি রুপির অর্থলগ্নিও। সেখানেও পারফর্ম করেছেন নিয়মিত, পারফর্ম করেছেন এরপর খেলা সব জায়গাতেই!
তবুও, সে বিশ্বকাপের পরে দু'বছর কেটে গেলেও সিনিয়রদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলা হয়নি দুটোর বেশি ম্যাচ। কারণটা শুভমান গিল নিজেও জানেন, জন্মদেশটা ভারত বলেই অপেক্ষাটা এত দীর্ঘ!
শুভমান গিল তাই অপেক্ষা করছেন তেরঙা জার্সিটা পরতে। অপেক্ষায় আছেন এই লেখকও, নতুন শুভমান গিল কিংবা গেইলদেরকে খুঁজে নিতে।
This article is in Bangla language. This article is on those cricketers who got the man-of-the-tournament award for their outstanding performance in the U-19 cricket world cup. Necessary hyperlinks are attached inside.
Featured image © Vijayanand Gupta/Hindustan Times via Getty Images