Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

গারিঞ্চা: যার বাঁকা পায়েই ব্রাজিলের বিশ্বজয়ের শুরু

‘আলেগ্রিয়া ডি পোভো’ ছিল তার ডাকনাম। বাংলায় বললে ‘মানুষের আনন্দ’। অনেকের মতে তিনি ফুটবল ইতিহাসের সেরা ড্রিবলার। অনেকের মতে পেলের চেয়েও বেশি প্রতিভাবান খেলোয়াড় তিনি। নাম তার গারিঞ্চা। পর্তুগিজ ভাষায় গারিঞ্চা শব্দের মানে দাঁড়ায় ‘ছোট পাখি’, নামটি ছিল তার বোনের দেওয়া।

‘মানুষের আনন্দ’ নামে পরিচিত কেন তিনি, তা জানা যাবে তার প্রথম জীবন থেকেই। মাত্র দুই পুরুষ আগেও তার বংশের লোকেরা আবদ্ধ ছিল দাসত্বের শৃঙ্খলে। তার বাবা ছিলেন পুরোদস্তুর মদ্যপ। জন্ম থেকেই গারিঞ্চার পায়ের আকৃতি ছিল অস্বাভাবিক, একটি পা ছিল অন্য পা থেকে ৬ ইঞ্চি ছোট, বাঁকা আর বাইরের দিকে বের হওয়া। ঘুণাক্ষরেও কেউ ভাবেনি যে এই ছেলে ফুটবলার হবে। অথচ এই পায়েই লুকিয়ে ছিল ব্রাজিলের দুটি বিশ্বকাপ জয়ের গল্প।

গারিঞ্চার অসমান পা দুটোই ছিল তাঁর এক অস্ত্র; Source: thenewage.co.za

সেসময় একটি পুরাতন ফুটবলই ছিল বহু দরিদ্র ব্রাজিলীয় শিশুর কাছে স্বর্গীয় উপহার। জনবহুল স্থানীয় রাস্তায় আর দশটা শিশুর মতোই ফুটবল নিয়ে দৌড়াতো সারাদিন ছোট্ট গারিঞ্চা, তবে তার ফুটবলার হওয়ার কথা মাথায়ও আসেনি কারো। পরিবার চালানোর দায়েই গারিঞ্চা একসময় স্থানীয় এক বস্ত্র কারখানায় কাজ করা শুরু করেন। চোখ প্রায়ই ঢুলে আসতো তার, তবে এর জন্য বকুনি খেতেন না! কেন? কারণ ওই কারখানার ফুটবল দলের হয়ে খেলতেন তিনি, তার উপরই থাকতো ম্যাচ জেতানোর দায়িত্ব। তাই ঊর্ধ্বতনরা তাকে কাজে ছাড় দিতেন বেশ। গারিঞ্চার কারখানার মালিকের একটি ক্লাব ছিল, যেটি ছিল রিও-ডি-জেনিরোর একটি জেলার সেরা ক্লাব। গারিঞ্চাকে সেই ক্লাবের হয়ে তিনি খেলতে দেন সেখানে। এমনও দিন যেত, দুটো বা তিনটা ম্যাচও খেলতেন তিনি। কারখানায় এসে তার কাজ ছিল ঘুমানো।

সেই ক্লাবেই তার প্রথম পেশাদার ‘চুক্তি’ হয়। কী ছিল সেই চুক্তিতে জানেন? গোলের বিনিময়ে খাবার ও মদ! কিন্তু ওই যে বিখ্যাত সিনেমা ‘দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশন’-এ একটি কথা ছিল, কিছু পাখিকে কখনোই খাঁচাবদ্ধ করা যায় না। গারিঞ্চাকেও যায়নি তেমনি।

গারিঞ্চা আজও ব্রাজিলিয়ানদের কাছে এক মিথ; Source: footballnews.ge

ব্রাজিলিয়ান লিগের অন্যতম সেরা দল বোতাফোগোতে খেলা আরাটি নামের এক ডিফেন্ডার ১৯৫২ সালে সেই গ্রামে আসেন অতিথি হিসেবে একটি ম্যাচে, যে ম্যাচে গারিঞ্চা খেলছিলেন। আরাটি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তার নিজের চোখকে যে, জীর্ণ এক ছেলে অসমান পা নিয়েও সমানে অন্যদের কাটিয়ে যাচ্ছেন। ম্যাচের শেষে গারিঞ্চাকে বললেন তিনি, তার সাথে বোতাফোগোতে যেতে। গারিঞ্চা ভাবলেন, খোঁড়া ভেবে তার সাথে মজা করছেন আরাটি, যেটা অনেকেই করে। পাত্তা দিলেন না তিনি। তারপর দেখলেন যে, আরাটি পিছে লেগেই আছে। কিন্তু গারিঞ্চার কাছে রিওর বুকেই সব সুখ, তিনি নিশ্চিত, উচ্চ পর্যায়ে খেলা তার দ্বারা সম্ভব না। না করে দিলেন আরাটিকে।

১৯৫৩ সালে আরাটির নাছোড়বান্দা প্রচেষ্টা গারিঞ্চাকে বাধ্য করলো বোতাফোগোতে আসতে ট্রায়ালে। একটু বলে রাখা ভালো, আরাটির মুগ্ধতা শুনে ব্রাজিলের আরো দুই বড় ক্লাব ভাস্কো ও ফ্লুমিনেন্স তার খেলা দেখতে আসে, কিন্তু খোঁড়া পায়ের উপর সন্দেহ করে আর আগ্রহ দেখায়নি তারা! বোতাফোগোতে ট্রায়ালে তাকে রাখা হয় ব্রাজিল জাতীয় দলের ডিফেন্ডার নিল্টন সান্তোসের বিরুদ্ধে, সান্তোসকে বলা হয়, বাজিয়ে দেখো ওকে। সান্তোস দেখলেন, হেলায় তাকে তিনবার কাটিয়ে পায়ের ফাঁক দিয়ে বল নিয়ে আবার আগের জায়গায় চলে এসেছে এই ছেলে। সান্তোস বুঝে গেলেন বাকিটা, ক্লাব প্রেসিডেন্টকে বললেন, ওকে রাখতেই হবে। সমস্ত ধারণাকে ছাপিয়ে গারিঞ্চাকে নিয়ে নিল ব্রাজিলিয়ান লিগের দল বোতাফোগো।

তার অভিষেক ছিল সারা জীবন মনে রাখার মতো। দল ২-১ এ পিছিয়ে, কোচ মাঠে নামালেন গারিঞ্চাকে। নেমেই ডান পাশ দিয়ে দুজনকে ছিটকে বেরিয়ে গেলেন, এরপর ফাউল এবং পেনাল্টি। গারিঞ্চা নিজেই বল নিলেন পেনাল্টি নেবেন বলে। ওদিকে পুরো মাঠ ‘খোঁড়া’ ‘খোঁড়া’ বলে বিদ্রুপ করছে তাকে, সাথে প্রতিপক্ষের গোলরক্ষকও। গোল করে সমতায় ফেরালেন দলকে, এরপর বাকি সময়টায় হ্যাটট্রিক পূর্ণ করে নিজের অভিষেককে স্মরণীয় করে রাখলেন।

ওয়ান-অন-ওয়ান অবস্থায় গারিঞ্চা ছিলেন প্রায় অপ্রতিরোধ্য; Source: The Botafogo Star

কিন্তু সমস্যা ছিল অন্য জায়গায়। ১৯৫০ সালে অপ্রত্যাশিতভাবে মারাকানায় বিশ্বকাপ ফাইনাল হেরে ব্রাজিল যখন তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য ‘জিঙ্গা’ স্টাইল ছেড়ে ইউরোপিয়ান ঘরানার দিকে ঝুঁকছে, তখনও গারিঞ্চা ছিলেন পুরোদস্তুর আলাদা রকম। ট্যাকটিক্স বা টিমপ্লে, এসবে মাততেন না তিনি। তাকে উপেক্ষা করা হতে লাগলো জাতীয় দলে। কিন্তু ক্লাবের হয়ে তার সাফল্যযাত্রা চললোই। খুব একটা ভালো দল না থাকার পরেও ২৬ গোল করে দলকে রানার্স-আপ করান তিনি। এর পরেরবার শিরোপা লড়াইয়ে তার দল, শেষ ম্যাচ ফ্লুমিনেন্সের সাথে মারাকানায়, জিততেই হবে। সেই ফ্লুমিনেন্স, যারা তাকে কিনতে চায়নি! সেই ম্যাচের আগে গারিঞ্চাকে ক্লাবে এনে দেওয়া সান্তোস বাজি ধরেছিলেন যে, গারিঞ্চা যত গোল করবেন, তিনি তার জার্সি তত টুকরো করবেন। ম্যাচ শেষে তিনি তার জার্সি কুচিকুচি অবস্থায় মিডিয়ার সামনে এনে দেখান! গারিঞ্চার সারা ক্যারিয়ারই ছিল বোতাফোগোময়, ৬৪৫ ম্যাচে ২৬৪ গোল করেন তিনি এ ক্লাবের হয়ে। অনিয়ন্ত্রিত জীবনের লোক হওয়ায় জুভেন্টাস, রিয়াল মাদ্রিদ, এসি মিলান, ইন্টার মিলান এসব ক্লাবের অসম্ভব আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও ব্রাজিল ছাড়েননি তিনি।

গারিঞ্চা কেমন এককেন্দ্রিক খেলোয়াড় ছিলেন বলা যাক। ভাস্কোর সাথে এক ম্যাচে এক ভাস্কো ডিফেন্ডার তাকে শুরুতেই প্রচণ্ড ট্যাকেল করতে থাকে। রেগে গিয়ে বললেন গারিঞ্চা, আজ তাকে শিক্ষা দেবেন তিনি! এরপর শুরু হলো তার প্রদর্শনী। ড্রিবলিং, বডি ফেইক, ফেইন্ট, পায়ের ফাঁক দিয়ে, মাথার উপর দিয়ে যেভাবে পারে বল নেওয়া শুরু করলেন। বেচারা ডিফেন্ডার এত বেশি মনযোগ দিয়ে গারিঞ্চাকে মার্ক করছিলেন যে, একবার গারিঞ্চা বল ফেইক করে জায়গায় রেখে দৌড় দিলেন, দেখাদেখি সেই ডিফেন্ডারও দৌড়ে চলে গেলেন একদম লাইনের শেষ মাথায়। ফিরে দেখেন, বল প্রায় মিটারখানেক দূরে! স্টেডিয়ামে হাস্যরোল পড়ে যায় তখন। কিন্তু গারিঞ্চার এই শো-ম্যান খেলার ধাঁচের জন্য ১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপ দলে তার জায়গা মেলেনি। কিন্তু ১৯৫৮ সালের দলে আর উপেক্ষা করা যায়নি তাকে।

গারিঞ্চা ব্রাজিলকে এনে দেন দুটি টানা বিশ্বকাপ; Source: Youtube

১৯৫৮ বিশ্বকাপের মাসখানেক আগে গারিঞ্চা ইতালির সাথে এক ম্যাচে চারজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে একটি গোল করেন, ইতালির দর্শকরা তার খেলার পর দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানান। কিন্তু তারপরেও ব্রাজিলের কোচিং স্টাফ তাকে খেলায়নি বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচ। তৃতীয় ম্যাচে সোভিয়েতের সাথে তাকে প্রথমবারের মতো নামান কোচ। সেই ম্যাচেই পেলে ও গারিঞ্চা প্রথম একসাথে খেলেন। সোভিয়েতকে নিয়ে ব্রাজিল বেশ চিন্তায় ছিল তাদের কড়া ডিফেন্সের কারণে। কিক-অফ করলেন পেলে আর গারিঞ্চা একসাথেই, যেন ঠিক করেই এসেছিলেন প্রথম থেকেই আক্রমণ শানাবেন। একদম বল পেয়েই তিনজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে শট নিলেন গারিঞ্চা, বল লাগলো বারে, ফিরতি শট পেলেও লাগান বারে। এর পরেও আক্রমণ শানাতে থাকে ব্রাজিল। সেই তিন মিনিটকে এখনো ‘বেস্ট থ্রি মিনিট অব ব্রাজিল হিস্ট্রি’ বলা হয়। বিখ্যাত সোভিয়েত ডিফেন্সকে রীতিমতো কাঁপিয়ে ২-০ গোলে জিতে নেয় ব্রাজিল। গারিঞ্চাও দলে স্থায়ী হয়ে যান। আর ব্রাজিলকে পিছে তাকাতে হয়নি।

ফাইনালে স্বাগতিক সুইডেনের সাথে মুখোমুখি হয় ব্রাজিল। পুরো স্টেডিয়াম ব্রাজিলের বিপক্ষে, শুরুতেই ব্রাজিল পিছিয়ে যায়। পুরো ব্রাজিল দলকে পেয়ে যায় আরেকটা মারাকানা-ট্র্যাজেডির ভয়। কিন্তু খেই হারাননি দুজন, গারিঞ্চা-ভাভা। ডানপাশ থেকে বারবার বেরিয়ে যাচ্ছিলেন গারিঞ্চা, তারই দেওয়া ক্রসে ভাভার গোলে সমতায় ফেরে ব্রাজিল। ঠিক একই রকম আরেকটি মুভে গারিঞ্চার বানিয়ে দেওয়া বলে গোল করে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয় নিশ্চিত করেন ভাভা।

যে দুজনের পায়ে ভর করে ব্রাজিল পেয়েছে তাদের ফুটবল শৌর্য; Source: rasid.co

১৯৬২ সালের চিলির বিশ্বকাপ ছিল গারিঞ্চার আসল অমরত্ব প্রাপ্তির আসর। প্রথম দুই ম্যাচে ব্রাজিলের এক জয় আর এক ড্র; পেলে আহত, আর ফিরবেন না সেই বিশ্বকাপে। পেলেবিহীন এক ব্রাজিলের তৃতীয় ম্যাচ স্পেনের সাথে। দ্বিতীয়ার্ধে গোল হজম করে পিছিয়ে যায় ব্রাজিল, গারিঞ্চারই গোলে ম্যাচে ফেরে আবার। ম্যাচ শেষ হওয়ার তখনও পাঁচ মিনিট বাকি, ডানপ্রান্ত দিয়ে তার সাথে লেগে থাকা মার্কারকে ছিটকে বেরিয়ে গিয়ে তার বিখ্যাত বডি ফেইন্টে আরো দুজনকে বোকা বানিয়ে আরমান্দোকে গোলের বলটি বানিয়ে দেন গারিঞ্চা।

কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের সাথে পুরো খেলাটা নিজের পায়ে নিয়ে আসেন। প্রথমেই হেডে এগিয়ে দেন ব্রাজিলকে, এরপর আবার সেই ভাভাকে দিয়ে গোল করান আর শেষদিকে ডিবক্সের বাইরে থেকে তার বিখ্যাত ‘ব্যানানা শটে’ গোল করে ব্রাজিলকে সেমিতে নিয়ে যান। সেখানে স্বাগতিক চিলির সাথে জোড়া গোল করে ফাইনালে ওঠান ব্রাজিলকে। পেলেবিহীন ব্রাজিল তখনও সমান ভয়ংকর এই এক গারিঞ্চার জন্যই। ফাইনালে চেকোস্লোভাকিয়ারও কোনো উত্তর ছিল না গারিঞ্চা ম্যাজিকের বিপরীতে। অসমান পায়ের খর্বাকার এই গারিঞ্চার পায়ের জাদুতেই মারাকানার দুঃখ ভুলিয়ে টানা দুই বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে মাতে ব্রাজিল।

মৃত্যুর পর ব্রাজিল সরকার একটি স্টেডিয়ামের নামকরণ করে তার নামে; Source: StadiumDB.com

গারিঞ্চার খেলা ঠিক সাধারণ কোনো ফুটবলারের মতো ছিল না। বল পায়ে ইচ্ছামতো খেলোয়াড়দের পরাস্ত করতেন, কে সামনে আর কে পিছে কোনো হুশ থাকতো না। পেলে আর গারিঞ্চার মধ্যে কী ফারাক ছিল জানেন? পেলে ছিলেন সুষম এক ফুটবলার, আর গারিঞ্চা উদ্দাম। বল পায়ে সব ভুলে যেতেন, তাই তার খেলা ছিল ব্রাজিলিয়ানদের আনন্দ। যদি ব্রাজিলের জনগণের আনন্দরুপী উপন্যাস হয় মাঠে তার খেলা, তবে সেই উপন্যাসের লেখক নিজে যেন ছিলেন এক বিষাদগ্রস্থ লোক। বাবার মদের নেশাটা তারও ছিল, মদ্যপ অবস্থায় ১৬ বার দুর্ঘটনার কথা জানা যায় তার, সাথে ছিল অত্যাধিক নারীসঙ্গ। এতটাই বেসামাল থাকতেন যে, ১৯৫৮ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পর সবাই যখন উল্লাসে মত্ত, তিনি চুপ করে বসে আছেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, চুপচাপ কেন বসে আছেন। তিনি জবাব দেন, রিটার্ন লেগ তো বাকি! মানে হলো, লিগে যেমন প্রতি দলের সাথে দুইবার করে খেলা হয়, তার ধারণা ছিল যে, বিশ্বকাপও এভাবেই খেলা হয়। ভেবে দেখুন, সদ্য ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জেতানো একজন খেলোয়াড় জানতেনই না যে বিশ্বকাপের কী ফরম্যাট!

পুরোপুরি অগোছালো জীবনের এই লোকটা যখন মাঠে নামতেন, হয়তো বলই হয়ে আসতো তার কাছে দুঃখ ভুলে থাকার উপায় হয়ে, সেজন্যই বোধহয় এমন খেলা খুব কম খেলোয়াড়ই খেলেছেন ইতিহাসে। একসময় ভাবা হতো, বাঁ পায়ের প্লেয়াররা নাকি ড্রিবলের জন্য না, গারিঞ্চা সেই মিথ ভাঙেন। অনেকের মতে, মেসি, ম্যারাডোনা বা রোবেনদের মতো ডানপাশে বাঁ পায়ের ড্রিবলারদের ট্রেন্ডের আসল সূচনাকারী ছিলেন গারিঞ্চা।

আধুনিক যুগের আদর্শ ফুটবলার কে? রোনালদো, মেসি। দারুণ প্রতিভাবান; সাথে শৃঙ্খলিত, নিয়মানুবর্তী, সুদর্শন, বিপণনযোগ্য- সব মিলিয়েই তারা অনন্য। সেই মাপকাঠিতে গারিঞ্চা কিছুই না, প্রতিভা ছাড়া আর কিছুই তার পক্ষে ছিল না। মাত্র ৫০ বছর বয়সে অতিরিক্ত মদ্যপানের প্রভাবে লিভারের রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। কিন্তু এই জীর্ণকায়, অসমান পায়ের লোকটাই একসময় ব্রাজিলিয়ানদের আনন্দের উৎস ছিলেন। টানা দুবার বিশ্বকাপ জিতিয়ে তিনি সারা বিশ্বকে জানান দিয়েছিলেন নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব, পরবর্তী বহু প্রজন্মের শিশুদের শিখিয়ে গেছেন বল পায়ে দুঃখ ভুলে থাকার মন্ত্র। ব্রাজিলের বহু মহাতারকাই বস্তি থেকে উঠে আসা। গারিঞ্চার এমন প্রভাব ব্রাজিলে যুগ থেকে যুগান্তরে চলতেই থাকবে।

ব্রাজিলের আনন্দ; Source: Goal.com

ব্রাজিলের ইতিহাসে গারিঞ্চা যেন এক রূপকথার নাম। পেলে হচ্ছেন ব্রাজিলের অহঙ্কার। কিন্তু গারিঞ্চা হলেন তাদের আনন্দ, ‘আলেগ্রিয়া ডি পোভো’ বা ‘দ্য জয় অব পিপল’।

ফিচার ইমেজ: JVicttor

Related Articles