'আই থিংক আই হ্যাভ ফাউন্ড আ জিনিয়াস।'
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের স্কাউট বব বিশপের এই টেলিগ্রাম পেয়ে কোচ ম্যাট বাসবি হতভম্ব হয়ে গেলেন কিছুক্ষণের জন্য। তার এই স্কাউট তো ফালতু কথা বলার মানুষ নয়। কিন্তু এই টেলিগ্রাম এসেছে উত্তর আয়ারল্যান্ড থেকে। আশ্চর্য তো! উত্তর আয়ারল্যান্ডের মতো জায়গায় বব জিনিয়াস খুঁজে পেল কীভাবে?
সময়টা ১৯৬১ সাল। মিউনিখ ট্র্যাজেডির পরে কেটে গেছে ৩ বছর, কিন্তু এখনও সেই দুর্ঘটনার ক্ষত বয়ে চলেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। দলটাকে পুনরায় গড়ে তোলার জন্য পাগলের মতো খেলোয়াড় খুঁজে বেড়াচ্ছেন বাসবি। এই সময়ই ববের সেই টেলিগ্রাম।
সেই জিনিয়াসের নাম জর্জ বেস্ট। যাকে বলা হয় কখনোই বিশ্বকাপ না খেলা সর্বকালের অন্যতম ‘বেস্ট’ ফুটবলার। শুধু বিশ্বকাপ নয়, ফুটবলীয় শক্তির বিচারে খর্বশক্তির দল উত্তর আয়ারল্যান্ডে জন্মেছিলেন বলে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপেও খেলা হয়নি কখনো।
১৭ বছর বয়সে ইউনাইটেডের হয়ে অভিষেক। এটা ১৯৬৩ সালের কথা। এরপর টানা ১১ বছর খেলেছেন রেড ডেভিলদের হয়ে। ১৯৬৮ সালে জেতেন প্রথম ইউরোপিয়ান কাপ (বর্তমান চ্যাম্পিয়নস লিগ)। ওই মৌসুমে ক্লাবের হয়ে ৫৩ ম্যাচে করেছিলেন ৩২ গোল। তার এই পারফরম্যান্স ব্যালন এনে দেয় তাকে। মনে রাখতে হবে, বেস্ট কিন্তু স্ট্রাইকার ছিলেন না। অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ছিলেন মূলত। পরের চার মৌসুমে করেন আরও ৯৪ গোল।
ইউরোপিয়ান কাপ জিততে পারতেন আরও দুই বছর আগেই। ১৯৬৬ সালের ইউরোপিয়ান কাপের কোয়ার্টার ফাইনালের সেকেন্ড লেগ। বেনফিকার মাঠে ইউসেবিওর নেতৃত্বাধীন দলকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড হারায় ৫-১ ব্যবধানে, বেস্ট নিজে করেন দুই গোল। এমনই নাচিয়েছিলেন বেনফিকাকে যে, এই ম্যাচের পরে পর্তুগিজ মিডিয়া তার নাম দিয়ে ফেলে ‘ও কুইন্টো বিটল’। ইংরেজিতে যার মানে দাঁড়ায়, ‘দ্য ফিফথ বিটল’। সত্তরের দশকে জন লেনন, রিঙ্গো স্টার, জর্জ হ্যারিসন আর পল ম্যাককার্টনির ‘দ্য বিটলস’ ব্যান্ড দুনিয়া মাতাচ্ছিল। এদের চারজনকে ডাকা হতো বিটল। বেস্টের চুলের স্টাইল ছিল প্রায় তাদের মতোই। পর্তুগিজ মিডিয়ার কাছে বেস্ট হয়ে যান ফিফথ বিটল।
বেস্ট কতটা ভালো খেলতেন সেটা বোঝা যাবে একবার এক ম্যাচে তাকে আটকানোর দায়িত্ব পাওয়া এক ডিফেন্ডারের কথায়। রে ফেয়ারফ্যাক্স নামের সেই খেলোয়াড়টি বলেছিলেন, 'আমি একবারই তার সবচেয়ে কাছাকাছি যেতে পেরেছিলাম, যখন ম্যাচ শেষে আমরা হাত মেলাচ্ছিলাম।'
এই গেল অন ফিল্ডের কথা। অফ ফিল্ডে বেস্ট ছিলেন মাঠের চাইতেও দুর্দান্ত। সেন্স অফ হিউমার ছিল অসাধারণ পর্যায়ে, ছিলেন চরমমাত্রায় রমণীমোহন। কথায় তার জুড়ি মেলা ছিল ভার। এমন সব কথা বলতেন যেগুলো জায়গা করে নিয়েছে ফুটবল ইতিহাসের পাতায়। সুন্দরী নারী আর মদের প্রতি আকর্ষণ ছিল মাত্রাতিরিক্ত। তার উচ্ছৃঙ্খল জীবন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যেতে পারে এই কথাটিতে,
'আমি একবার নারী ও মদ ছেড়ে দিয়েছিলাম। সেটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বাজে ২০ মিনিট।'
‘বেস্ট’ শব্দটা ছিল তার নামের মধ্যেই। ফুটবল মাঠে সেরা ছিলেন, ছিলেন মাঠের বাইরেও। এমন সব কথা বলতেন, যা জায়গা পেয়ে গেছে সেরা উক্তির পাতায়। বেস্টের এমনই কয়েকটা বাণী জেনে নেওয়া যাক।
১। 'ম্যারাডোনা গুড, পেলে বেটার, জর্জ বেস্ট।'
২। আমি একবার পল গ্যাসকোয়েনকে (সাবেক ইংল্যান্ড ফুটবলার) বলেছিলাম, 'তোমার আইকিউ তোমার শার্টের নম্বরের চেয়েও কম।' এই শুনে ও আমাকে বলল, ‘আইকিউ জিনিসটা আবার কী?’
৩। 'মদ খাওয়া একবার বাদ দিয়ে দিয়েছিলাম, অবশ্য তখন আমি ছিলাম ঘুমের মধ্যে।'
৪। 'মদ, নারী এবং দামি গাড়ির পেছনে আমি অনেক টাকা খরচ করেছি। এ ছাড়া আমার জীবনের বাকি সব কিছুই ছিল অপচয়।'
৫। 'পেলে কে? আমি কালো হয়ে জন্মালে কেউ পেলের নাম জানতেই পারতো না।'
৬। 'আমি অনেক কিছুই মিস করি। মিস কানাডা, মিস যুক্তরাজ্য, মিস ওয়ার্ল্ড।'
৭। 'অ্যানফিল্ডে ৩০ গজ দূর থেকে ৪ জন ডিফেন্ডারকে ড্রিবল করে গোল দেওয়া এবং বিশ্ব সুন্দরীর সাথে শয্যা ভাগ করা, দুটোর মধ্যে একটিকে বেছে নিতে বললে আমি বিপাকে পড়ে যাব। সৌভাগ্যক্রমে, বাছাবাছির ঝামেলায় আমাকে যেতে হয়নি।'
অতিরিক্ত মদ্যপানই শেষ পর্যন্ত কাল হয়ে আসে তার জীবনে। ২০০৫ সালের ২৫ নভেম্বর ৫৯ বছর বয়সে পাড়ি দেন অন্য জগতে।
ফুটবল নিয়ে আরও জানতে পড়তে পারেন এই বইগুলোঃ
This article is about the legendary football player George Best.