Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সুইডেন বাধা ডিঙিয়ে জার্মানি কি পারবে রাশিয়ায় টিকে থাকতে?

“ফুটবল একটি সাধারণ খেলা। নব্বই মিনিট ধরে বাইশজন মানুষ বলের পেছনে দৌড়ায় এবং দিনশেষে জার্মানরাই জেতে।”

– গ্যারি লিনেকার

আজ জার্মানির গ্যারি লিনেকারের কথাটিকে প্রমাণ করা ব্যতীত আর কোনো উপায় নেই। প্রথম ম্যাচে মেক্সিকোর সাথে ১-০ হারে ব্যাকফুটে চলে যাওয়া জার্মানির জন্য এই ম্যাচটি ডু অর ডাই হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিপক্ষ সুইডেন নামে সহজ মনে হলেও আদতে মোটেও তা নয়। নেদারল্যান্ড, ইতালির মতো দলকে বিশ্বকাপ খেলা থেকে বঞ্চিত করেই রাশিয়া এসেছে জেন এন্ডারসনের দল। তা-ও সুইডিশ সেরা প্লেয়ার জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচকে ছাড়াই। চলুন দেখে আসা যাক দুই দলের পরিসংখ্যান ও ম্যাচ নিয়ে চিন্তাভাবনা।

মুখোমুখি লড়াই

বিশ্বকাপে চারবার চ্যাম্পিয়ন সহ সর্বোচ্চ আটবার ফাইনাল খেলা ডি ম্যানশ্যাফটরা মাত্র একবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলা সুইডেন থেকে ধারে ভারে অনেক এগিয়ে থাকলেও মুখোমুখি পরিসংখ্যানে যে কারোরই ভ্রু কুঁচকানোটা স্বাভাবিক। মুখোমুখি ৩৬টি ম্যাচে ১৫টি জার্মানি জিতলেও প্রায় সমান তালে পাল্লা দিয়ে ১৩টি ম্যাচ জিতে নিয়েছে সুইডিশরা। বাকি ৮টি ম্যাচের ফলাফল ড্র। তবে জার্মানির সাথে বিশ্বকাপে মুখোমুখি হওয়া ৪ ম্যাচের মধ্যে এক জয়ের বিপরীতে ৩টি হারের মুখ দেখতে হয় সুইডেনের। তবুও সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনা করলে সুইডিশরা মোটেও ছেড়ে কথা বলবে না জার্মানদের। তাই এক আগুন গরম ম্যাচের অপেক্ষায় ফুটবলপ্রেমীরা।

জার্মানি টিম; Image Source: Sky Sports

জার্মানির সম্ভাব্য ট্যাক্টিকস ও ফর্মেশন

মেক্সিকোর সাথে জোয়াকিম লোর দল খেলে ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে। অধিনায়ক ম্যানুয়েল নয়্যারের সামনে ছিলেন জার্মানির প্রধান দুই সেন্টারব্যাক বোয়াটেং ও হুমেলস। আর দুই ফুলব্যাকে ছিলেন জশুয়া কিমিখ ও মারভিন প্লাটেনহার্ড। সেন্টার মিডফিল্ডের দায়িত্ব ছিল খেদিরা এবং ক্রুসের হাতে। আক্রমণভাগে মুলারের সঙ্গী ছিলেন ওজিল ও জুলিয়ান ড্রাক্সলার। একমাত্র স্ট্রাইকার হিসেবে খেলেছেন তরুণ ফরোয়ার্ড টিমো ভের্নার।

ফর্মেশন একই থাকলেও দলে কিছু পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে তা মোটামুটি নিশ্চিতই বলা চলে। মেক্সিকোর সাথে খেলা ম্যাট হুমেলসকে হয়তো বেঞ্চে বসাতে যাচ্ছেন লো। প্র্যাকটিস সেশনে ঘাড়ে ব্যথা পাওয়ায় তার জায়গায় আসতে পারে ৬ ফুট ৪ ইঞ্চির বায়ার্ন ডিফেন্ডার নিকোলাস সুলা । মারভিন প্লাটেনহার্ড বাজে পারফর্ম করায় জোনাস হেক্টরের নাম শোনা গেলেও অনেকের মতে প্লাটেনহার্ডকেই আবার ভরসা করতে যাচ্ছেন লো। অন্যদিকে প্রথম ম্যাচে ক্রুসকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি খেদিরা। তার জায়গায় দলে ঢুকতে পারেন ম্যানচেস্টার সিটির মিডফিল্ডার গুন্ডোগান। ফরোয়ার্ডে মেক্সিকোর সাথে ওজিল দিয়েছেন যাচ্ছেতাই পারফর্মেন্স। তার জায়গায় জোয়াকিম লোর সম্ভাব্য পছন্দ জুলিয়ান ব্রান্ডট। মুলার আর ড্রালারের সাথে ব্রান্ডটকে দেখা গেলে মার্কো রইসকে আবারো বেঞ্চ গরম করতেই দেখা যাবে। টিমো ভের্নারের জায়গায় পরীক্ষিত ও পোড় খাওয়া স্ট্রাইকার মারিও গোমেজকে দেখা যেতে পারে মূল একাদশে।

লজানোর গোলে মেক্সিকোর সাথে হার দিয়ে শুরু হয় জার্মানির বিশ্বকাপ অভিযান;  Image Source: Daily Express

প্রথম ম্যাচে প্রায় ৬৭ % বল ধরে রেখেও গোলের দেখা পায়নি ডি ম্যানশ্যাফটরা। ২৬টি শটের মধ্যে ৯টিই ছিলো গোলবারে। যদিও ক্রুস, ভার্নাররা ভাগ্যকেও দুষতে পারেন। ক্রসবার ছাড়াও ওচোয়া জার্মানদের সামনে হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন চীনের প্রাচীর হয়ে। করেছেন ৯টি দুর্দান্ত সেভ। ফরোয়ার্ড নিয়ে দুশ্চিন্তা না করলেও ডিফেন্সকে নিয়ে ভালোই ভুগছেন জোয়াকিম লো। মেক্সিকোর দুই উইঙ্গার হারভিং লোজানো ও লিউন প্রথম হাফে বারবার ডিফেন্স ভেঙ্গে বিপজ্জনকভাবে ভিতরে ঢুকেছিলেন। প্লাটেনহার্ডের জায়গায় তাই পরীক্ষিত লেফটব্যাক জোনাস হেক্টরের দলে ঢোকার সম্ভাবনা আছে।

মুলার, ক্রুস, ড্রাক্সলার- এই ত্রয়ীর দিকে তাকিয়ে থাকবে জার্মানি; Image Source: Getty Image

তবে জয় ব্যতীত কোনো চিন্তাই মাথায় নেই অধিনায়ক নয়্যার ও কোচ জোয়াকিম লোর মাথায়। র‍্যাংকিংয়ে ১ নাম্বারে থাকা জার্মানি দলের যে সামর্থ্য আছে ২৪ নাম্বারে থাকা সুইডেনকে হারানোর তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে তার আগে মাঠের কাজটা ঠিকঠাকভাবে করে দেখাতে হবে মুলার, ক্রুসদের।

সুইডেনের সম্ভাব্য ফর্মেশন ও ট্যাক্টিকস

দক্ষিণ কোরিয়াকে প্রথম ম্যাচে ১-০ গোলে হারিয়ে মোটামুটি ফুরফুরেই আছে জেন এন্ডারসনের দল। জার্মানির সাথে ১ পয়েন্ট আদায় করে নিতে পারলেই দ্বিতীয় রাউন্ডের পথটা আরো সুগম হবে সুইডেনের। তবে জেন এন্ডারসনের দল কিছুটা কোণঠাসা জার্মানিকে চেপে ধরে জয় তুলে নেয়ার জন্যই আজ রাশিয়ার সোচিতে নামবে।

সুইডেন টিম; Image Source: Fifa.com

দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে সুইডেন খেলেছে কোচের পছন্দের ফর্মেশন ৪-৪-২ এ। গোলকিপার রবিন ওলসনের সামনে ছিলেন চার ডিফেন্ডার লাস্টিগ, পন্টাস, গ্রানকভিস্ট ও লুডউইগ অগাস্টিনসন। দলের একমাত্র গোলটিও আসে ডিফেন্ডার গ্রাঙ্কভিস্টের পা থেকে। যদিও স্পটকিক থেকে গোলটি করেন এই সেন্টারব্যাক। মিডফিল্ডে সুইডিশ তারকা লারসন ও ফর্সবার্গের সাথে ছিলেন ভিক্টর ক্লাসেন ও আলবিন একদাল। দুই স্ট্রাইকারের পজিশনে ছিলেন মার্কাস বার্গ এবং ওলা টইভনান।

গ্রাঙ্কভিস্কের পেনাল্টিতে দক্ষিণ কোরিয়াকে প্রথম ম্যাচ হারিয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করে সুইডেন; Image Source: Pinterest

তবে প্রথম ম্যাচে জিতলেও আজকে না চাইলেও কয়েকটি পরিবর্তন আনতে বাধ্য সুইডিশ কোচ। পেটের পীড়াতে ভোগায় দুই সেন্টারব্যাক পন্টাস ও হেলেন্ডার রয়ে গেছেন টিম হোটেলেই। তবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ডিফেন্ডার ভিক্টর লিন্ডেলফ প্রথম ম্যাচে ইনজুরির জন্য খেলতে না পারলেও এই ম্যাচ দিয়ে দলে ফিরছেন। সেক্ষেত্রে পন্টাসের জায়গায় দলে আসবেন লিন্ডেলফ। একই ইনজুরিতে পড়ায় এন্ডারসন পাচ্ছেন না মিডফিল্ডার মার্কাস রোডেন ও স্ট্রাইকার ইসাক কিসেকে। তবে ফিরে পাচ্ছেন আলাভেসের ফরোয়ার্ড জন গুইদেত্তিকে।

জার্মানির বিপক্ষে সুইডেনের ডিফেন্সকে ভালো পরীক্ষাই দিতে হবে; Image Source: Goal.com

ফর্মেশনে কোনো পরিবর্তন হবে না তা বলাই চলে। একমাত্র পরিবর্তনটি হবে পন্টাসের পরিবর্তে লিন্ডেলফের দলে সু্যোগ পাওয়া। তবে ট্যাকটিকাল চেঞ্জ আসবে দলে তা বলাই যায়। মূলত কমপক্ষে একটি পয়েন্ট আদায় করার জন্যই মাঠে নামবে সুইডেন। ডিফেন্স ঠিক রেখে কাউন্টার অ্যাটাকই হবে সুইডেনের মূলমন্ত্র। এক্ষেত্রে জার্মানির জন্য কাজটা কঠিনই হয়ে দাঁড়াবে। এই বিশ্বকাপে বহু ম্যাচেই ভালো দলগুলো জমাট ডিফেন্স ভাংতে ব্যর্থ হয়েছে। জার্মানি নিজেই নিজের উদাহরণ। দ্বিতীয় হাফে ডি ম্যানশ্যাফটরাও চিড় ধরাতে পারেনি মেক্সিকোর জমাট রক্ষণের।

ম্যাচ ট্রিভিয়া

১. জার্মানি সর্বশেষ ১১ ম্যাচ ধরে সুইডেনের সাথে অপরাজিত (৬ জয়, ৫ ড্র)। সুইডেনের সর্বশেষ জয় ৪০ বছর আগে। ম্যাচটি তারা জিতেছিল ৩-১ গোলে

২. জার্মানি বিশ্বকাপে ব্যাক টু ব্যাক ম্যাচ হারে ১৯৫৮ সালে। সেবার সেমিফাইনালে এই সুইডেনের সাথে হারার পর তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে তারা হারে ফ্রান্সের কাছে।

৩. বিশ্বকাপে ১৪ শটে ১০ গোল পাওয়া মুলার সর্বশেষ ম্যাচে একমাত্র জার্মান খেলোয়াড় হিসেবে মেক্সিকোর সাথে কোনো শট নিতে পারেননি। বিশ্বকাপে সর্বশেষ ২৩৯ মিনিট ধরে গোলবারে কোনো শট নেই এই জার্মান মিডফিল্ডারের।

ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে জার্মানিই পরিষ্কার ফেভারিট। যদিও তাদের উপর একটি অদৃশ্য চাপ বিরাজমান। সাথে সর্বশেষ দুই বিশ্বকাপে ঘটা কাহিনী ভড়কে দিতে পারে জার্মানিকে। সর্বশেষ দুই ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইতালি ও স্পেন পরের বিশ্বকাপে বাদ পড়েছিলো গ্রুপ পর্বেই। তবে আরেকটি পরিসংখ্যান থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারেন মুলার, নয়্যাররা। সর্বশেষ জার্মানি নিজেদের প্রথম ম্যাচ হারে ১৯৮২ বিশ্বকাপে। তবে সেবার ফাইনাল খেলেছিল ডি ম্যানশ্যাফটরাই। সেই অনুপ্রেরণায় সোচিতে আজ দুর্দান্ত হয়ে উঠতে পারে জার্মানি। তবে তাদের স্বপ্ন চূর্ণ করতে সুইডেন প্রস্তুত পূর্ণ উদ্যমেই। তাই সোচিতে এক আগুন গরম ম্যাচের অপেক্ষায় ফুটবল বিশ্ব।

This Bangla article is about the match preview of Germany and Sweden world cup match. Necessary sources are hyperlinked in the article.

Feature Image: Fifa wallpapers

Related Articles