Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জার্মানি: ধারাবাহিকতার অপর নাম

ফুটবল বিশ্বকাপে জার্মানি যে কতটা ধারাবাহিক, তা জানতে একটি তথ্যই পর্যাপ্ত – প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপের মূল পর্বে তারা ১০০টি ম্যাচ খেলেছে, গোল দিয়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২০টি। ২১টি আসরের মধ্যে ১৯টি আসরে তারা অংশগ্রহণ করে হেরেছে মাত্র ২২টি ম্যাচ। খেলেছে সর্বোচ্চ সংখ্যক সেমিফাইনাল (১৩ বার) এবং ফাইনাল (৮ বার)। বিশ্বকাপ জিতেছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চারবার। উপহার দিয়েছে বিশ্বসেরা সব ফুটবলার – ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার, জার্ড মুলার, লোথার ম্যাথাউস, মিরোস্লাভ ক্লোসা প্রমুখ।

১৯৩০ এর বিশ্বকাপে জার্মানি অংশগ্রহণ করতে অপাগরতা জানানোয় তারা প্রথম বিশ্বকাপে অংশ নেয় ১৯৩৪ সালে। নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপেই তারা বেলজিয়াম, সুইডেন, অস্ট্রিয়াকে হারিয়ে তৃতীয় স্থান দখল করে। এডমন্ড কোনেন যৌথভাবে হলেন টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় গোল স্কোরার। ১৯৩৮ সালে তাদের পারফরম্যান্স ছিল ভুলে যাওয়ার মতো। নকআউট পদ্ধতির এই টুর্নামেন্টে তারা প্রথম রাউন্ডেই সুইজারল্যান্ডের কাছে এক্সট্রা টাইমে হেরে বাদ পড়ে জার্মানরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য ১৯৪২, ১৯৪৬ সালে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়নি। আর ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপে জার্মানরা ছিল নিষিদ্ধ।

ষাটের দশক ছিল জার্মানির ঘুরে দাঁড়ানোর সময়। কোচ সেপ হারবার্জারের আন্ডারে ফ্রিৎজ ওয়াল্টারের অধিনায়কত্বে তারা রচনা করে একটি ফিরে আসার রূপকথা। ১৯৫৪ এর বিশ্বকাপে জার্মানি গ্রুপ রাউন্ডে ম্যাজিকাল ম্যাগিয়ার্স হাঙ্গেরির কাছে ৮-৩ গোলে পরাজিত হয়। কিন্তু ফাইনালে জার্মানির সাথে আবার তাদেরই দেখা হয়। পুসকাস-ককসিস-জিবর-হিদেকুটির হাঙ্গেরির সামনে তখন কোন দলই দাঁড়াতে পারে নি। ফাইনালেও মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে জার্মানরা ০-২ গোলে পিছিয়ে পড়ে। কিন্তু ভারী বর্ষণস্নাত সেইদিনের সমস্ত আলো কেড়ে নিলেন জার্মানির স্ট্রাইকার হেলমুট রান। একাই দুই গোল করে এক অবিশ্বাস্য জয়ই শুধু আনেন নি, বরং জার্মানিকে প্রথমবারের মতন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বানিয়ে দিলেন। হাতে উঠলো বিশ্ব জয়ের জুলেরিমে কাপ। নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরে এসেই বিশ্ব জয় করলো জার্মানরা।

১৯৫৪ এর বিশ্বকাপ জয়ের পথে
১৯৫৪ বিশ্বকাপ, আরেকটি বল ক্লিয়ার করলেন জার্মান গোলরক্ষক; Image Credit: Associated Press

১৯৫৮ সালের সুইডেন বিশ্বকাপেও তারা সেমিফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছে টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপের স্বপ্ন দেখছিল। কিন্তু এবার সুইডেনের কাছে হেরে তাদের স্বপ্নভঙ্গ হয়, গোঁদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে এলো তৃতীয় স্থান নির্ধারণ ম্যাচেও শোচনীয় পরাজয়। জাঁ ফন্টেইনের একার চার গোলই তাদের ছিটকে ফেলে। পরবর্তীতে ১৯৬২ বিশ্বকাপে জার্মানরা এবার কোয়ার্টার ফাইনালে বাদ পড়ল ইতিহাসের একমাত্র ব্যালন ডি’অর জয়ী গোলকিপার লেভ ইয়াসিনের তৎকালীন যুগোস্লাভিয়ার কাছে। সমাপ্তি ঘটলো ১৪ বছরের সেপ হারবার্জার যুগের।

১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপে জার্মানরা গ্রুপপর্বে স্পেন-সুইজারল্যান্ডকে হারিয়ে, আর্জেন্টিনার সাথে ড্র করে নকআউট পর্ব নিশ্চিত করে। এরপর নকআউট পর্বে উরুগুয়ে, সোভিয়েত ইউনিয়নকে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে তারা। ফাইনালের ৯০ মিনিট পর্যন্ত ছিল ২-২ গোলে সমতা। কিন্তু এরপরই বিতর্কিত গোলে ইংল্যান্ডরা এগিয়ে যায়। বলটি গোল লাইন পার হয়েছে কি না, নিশ্চিতভাবে বোঝা না গেলেও রেফারি গোলের বাঁশি বাজান। পরবর্তীতে এ নিয়ে বিস্তর জল ঘোলা হলেও তা কেবলই কথার কথা। ইংল্যান্ড জিতল তাদের প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র বিশ্বকাপ।

বল নিয়ে ছুটছেন জার্ড মুলার (১৯৭০ এর সেমিফাইনাল)- pinterest
বল পায়ে ছুটছেন জার্ড মুলার; Image Credit: Offside

১৯৭০ বিশ্বকাপে জার্মানরা গতবারের হারের প্রতিশোধ নিল। ইংল্যান্ডকে ৩-২ গোলে হারিয়ে তারা সেমিফাইনালে ওঠে। সেমিফাইনালে তারা মুখোমুখি হয় দুইবারের চ্যাম্পিয়ন ইতালির। পরবর্তীতে টেলিগ্রাফের ২০টি সর্বকালের সেরা ম্যাচের তালিকায় এই ম্যাচই ছিল সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ম্যাচ। কী হয়নি এই ম্যাচে! নির্ধারিত ৯০ মিনিটের ম্যাচ ছিল ১-১। এরপরই যেন আসল খেলার শুরু।

৩০ মিনিটের এক্সট্রা টাইমে গোল হয়েছিল ৫টি! একবার ইতালি এগিয়ে যায়, তো আরেকবার জার্মানি। শেষমেশ জার্মানদের ৪-৩ গোলে হারিয়ে ফাইনালে চলে যায় ইতালি। সেই ম্যাচে কতটা জানপ্রাণ দিয়ে খেলা হয়েছে, তা বোঝা যায় একটি ঘটনাতেই। সেই ম্যাচে জার্মান কিংবদন্তি বেকেনবাওয়ার কাঁধের হাড় সরে যাওয়ার পরও দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে গিয়েছিলেন। সে বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুট জিতেছিলেন ইতিহাসের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার জার্ড মুলার ( ৬ ম্যাচে ১০ গোল)। আর জার্মানি উরুগুয়েকে হারিয়ে হল তৃতীয়। এবারও একদম তীরে এসে তরী ডুবল জার্মানদের।

১৯৭৪ এর বিশ্বকাপ ছিল টোটাল ফুটবলের দেশ হল্যান্ডের। যেমনটা ১৯৫৪ ছিল পুসকাসের হাঙ্গেরির। রাইনাস মিচেলের হল্যান্ড ক্রুইফের নেতৃত্বে খেলল এক নতুন ঘরানার ফুটবল। কিন্তু ‘৫৪ এর হাঙ্গেরির মতোন এবারও হল্যান্ড জার্মানদের কাছে মার খেল। এবার জার্মানি নিজেদের মাঠের বিশ্বকাপ জিতার সম্পুর্ণ প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিল। গত দুইবারের ভুল শুধরে তারা নিজেদের নিখুঁতভাবে গড়ে তুলেছে। ফাইনালে ম্যাচ শুরুর পর কোনো জার্মান প্লেয়ার বল পায়ে লাগানোর আগেই হল্যান্ডের জোয়ান নিসকেন্স পেনাল্টিতে গোল দিয়ে দলকে এগিয়ে দেন। এরপর ২৫ মিনিটের দিকে আরেকটি পেনাল্টি। এবার জার্মানির পক্ষে। পল ব্রিটনার সেখান থেকে গোল করতে কোনো ভুল করলেন না। এরপর হাফটাইমের একদম আগে দিয়ে বল চলে যায় জার্ড মুলারের পায়ে। চোখের নিমিষেই মুলার বল জালে জড়িয়ে দেন। জার্মানি ২-১ গোলে এগিয়ে গেল।

দ্বিতীয়ার্ধে দুই পক্ষ অনেক চেষ্টা করলো গোলের মুখ দেখতে। কিন্তু ‘কাইজার’ বেকেনবাওয়ার, গোলকিপার সেপ মেয়ার যেন দূর্গ গড়ে রেখেছিলেন। ক্রুইফের দল সেই দুর্গ ভেদ করতে পারল না। অধিনায়ক বেকেনবাওয়ারের হাতে উঠল জার্মানির দ্বিতীয় বিশ্বকাপ, নতুন মডেলের প্রথম বিশ্বকাপ। ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে টানা ইউরো-বিশ্বকাপ জিতল জার্মানি।

১৯৭৪ বিশ্বকাপ, ম্যাচ শুরুর আগে বেকেনবাওয়ার এবং ক্রুইফ; Image Credit: Peter Robinson – EMPICS

১৯৭৮ এর বিশ্বকাপে জার্মানি তেমন কিছুই করতে পারেনি। দ্বিতীয় রাউন্ডে ইতালি, হল্যান্ডের সাথে ড্র করলেও অস্ট্রিয়ার কাছে তারা ৩-২ গোলে হেরে যায়। কর্ডোবার সেই ম্যাচকে বলা হয় ‘শেম অফ কর্ডোবা’। এরপর জার্মানি যেন আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল। তারই ফল হিসেবে তারা নব্বইয়ের দশকের তিনটি বিশ্বকাপেই তারা কমপক্ষে ফাইনাল খেলেছে। ১৯৮২ এর বিশ্বকাপে তারা দ্বিতীয় রাউন্ডে স্বাগতিক স্পেনকে হারিয়ে সেমিফাইনালে ওঠে জার্মানি। সেখানে তারা মুখোমুখি হয় জাদুকর মিশেল প্লাতিনির ফ্রান্সের। কী হয়নি এই সেমিফাইনালে?

এবারেও ৯০ মিনিটে স্কোর ১-১। এরপর এক্সট্রা টাইমে হয়েছে আরো চার গোল। গোল পেয়েছেন ফ্রান্সের প্লাতিনি-ট্রেসর-জিরেস, জার্মানির লিটবারস্কি, রুমেনিগে, ফিশার। মিশেল প্লাতিনির মতে, এই ম্যাচটি ছিল  “The Most Beautiful Match”। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের এই ম্যাচে ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে হারিয়ে ফাইনালে উঠে যায়। কিন্তু ফাইনালে পাওলো রসির ইতালির সাথে জার্মানরা পেরে উঠল না। তাদের ৩-১ গোলে হারিয়ে ইতালির হাতে উঠল তাদের তৃতীয় বিশ্বকাপ।

এরপর আবার শুরু হল জার্মানিতে ‘কাইজার’ যুগ। এবারে অধিনায়ক না, ম্যানেজার হিসেবে। জার্মানদের কাছে এই বিশ্বকাপ ছিল সম্পুর্ণ ‘৮২ এর পুনরাবৃত্তি। কোয়ার্টার ফাইনালে এবারেও স্বাগতিক দলকে (মেক্সিকো) হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠল। সেমিফাইনালে এবারও প্লাতিনির ফ্রান্স। তবে এবার জার্মানদের কাছে তারা পাত্তা পেল না। জার্মান ফুলব্যাক আন্দ্রেস ব্রেমে, স্ট্রাইকার রুদি ভোলারের গোলে ২-০তে জয় পায় জার্মানরা।

ফাইনালে কাইজারের জার্মানির মুখোমুখি হলো আরেক জাদুকর ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা। ফাইনালে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ার পর রুমেনিগে, ভোলার ছয় মিনিটের ব্যবধানে জার্মানদের আবার ম্যাচে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। কিন্তু অল-আউট অ্যাটাকের মাশুল দিয়ে ৩-২ গোলে হেরে যায় রুমেনিগের দল। এবারও ‘৮২ এর মতোন ফাইনালে হেরে গেল জার্মানি।

আন্দ্রেস ব্রেমে পেনাল্টি নিচ্ছেন; Image Credit: Getty Images

১৯৯০ বিশ্বকাপ, যে বিশ্বকাপকে বলা হয় অতিরিক্ত সময়ের বিশ্বকাপ। প্রায় প্রতিটি ম্যাচই শেষমেশ ঘুরে ফিরে টাইব্রেকারে গিয়ে শেষ হয়েছে। এই বিশ্বকাপের শুরু থেকেই প্রতিটি ম্যাচে জার্মানরা বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা এবার বিশ্বকাপ জিততেই এসেছে। দ্বিতীয় রাউন্ডে রাইকার্ড-খুলিতের হল্যান্ড, কোয়ার্টার ফাইনালে স্কুরাভির চেকোস্লোভাকিয়া, সেমিফাইনালে লিনেকার-গ্যাসকোয়েনের ইংল্যান্ডকে হারিয়ে জার্মানি ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে টানা তৃতীয়বার বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠল।

সে সময়ে একটি কথা প্রচলিত ছিল যে, কোনো দল টানা তিনবার ফাইনাল খেলতে পারে না। জার্মানি সেই কথা মিথ্যা প্রমাণ করে দিল। এবারেও ফাইনালে প্রতিপক্ষ ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা। কিন্তু এবার তাকে খোলস থেকে বের হতে দেয়নি জার্মানরা। ম্যাচের সতের মিনিট পর্যন্ত ম্যারাডোনার পায়ে বল পর্যন্ত পৌঁছাতে দেননি ব্রেমে-কোহলাররা। প্রথমার্ধে তেমন কিছু না হলেও দ্বিতীয়ার্ধে জার্মানরা জয়ে জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে। ম্যাচের প্রায় শেষ দিকে রবার্তো সেনসিনি স্লাইডিং ট্যাকেলে রুদি ভোলারকে ডি বক্সের মধ্যে ফেলে দেন। রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দেন। পেনাল্টি থেকে বল জালে জড়াতে আন্দ্রেস ব্রেমে কোনো ভুল করেন নি। আর্জেন্টাইনরা এই পেনাল্টির নির্দেশকে বিতর্কিত দাবি করলেন, তা শেষমেশ হাতাহাতিতে রূপ নেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয় জার্মানিরই হয়েছিল। অধিনায়ক ম্যাথাউসের হাতে উঠল জার্মানির তৃতীয় বিশ্বকাপ, আর বেকেনবাওয়ার গড়লেন ইতিহাস। তিনিই ফুটবল ইতিহাসে প্রথম অধিনায়ক এবং ম্যানেজার হিসেবে বিশ্বকাপ জিতলেন।

এরপরের ১৯৯৪ ও ১৯৯৮ এর বিশ্বকাপে জার্মানদের একই চিত্র। কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাদ। কিন্তু ২০০২ বিশ্বকাপেই তারা আবার তাদের চেনা জায়গায়, বিশ্বকাপ ফাইনালে। কিন্তু এবার রোনালদো-রোনালদিনহোর ব্রাজিলের কাছে ধরাশায়ী হল জার্মানি। এমনিতেই সাসপেনশনের জন্য জার্মানির ‘প্রাণ’ বালাক ফাইনাল খেলতে পারেননি, তার উপর বিশ্বসেরা গোলকিপার অলিভার কানের অনিচ্ছাকৃত ছেলেমানুষি ভুলে গ্লাভস থেকে বল ফসকে গিয়ে পড়ল রোনালদোর পায়ে। এভাবেই জার্মানদের বিশ্বকাপ স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। পরবর্তীতে ফুটবল ইতিহাসের একমাত্র গোলকিপার হিসেবে গোল্ডেন বল জিতলেও অলিভার কান তাতে সান্ত্বনা খুঁজে পাননি।

এরপরের ২০০৬ ও ২০১০ এর বিশ্বকাপেও জার্মানদের প্রায় একই চিত্র। পরাশক্তিদের পরাজিত করে সেমিফাইনালে গেলেও যথাক্রমে ইতালি এবং স্পেনের কাছে হেরে তৃতীয় হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাদের। মাইকেল বালাক পারলেন না দেশের মাটিতে জার্মানিকে আরেকটি বিশ্বকাপ উপহার দিতে। ১২০ মিনিটে গোল খেয়ে হেরে গেলেন ইতালির কাছে। আর পরেরবার তো বিশ্বকাপের একদম আগ মুহূর্তে ইনজুরিতে পর খেলতেই পারলেন না এই জার্মান অধিনায়ক।

চ্যাম্পিয়ন জার্মানি; Image Credit: Marcello Casal Jr/Agência Brasil

অবশেষে এল ২০১৪। ৬৪ বছর বাদে আবার ফুটবলের এই মহাযজ্ঞ বসেছে ব্রাজিলে। কিন্তু এবার জোয়াকিম লো’র জার্মানি যেন ১৯৯০ এর চেয়েও ভয়ংকর, তার চেয়েও প্রস্তুত; সবচেয়ে বড় কথা, তার চেয়েও ক্ষুধার্ত। একে একে ফ্রান্স-পর্তুগালকে পরাজিত করে উঠল সেমিফাইনালে। সেখানে প্রায় লাখো দর্শকের সামনে বিধ্বস্ত করল ব্রাজিলকে।

২০০২ এর প্রতিশোধটা বড় নির্মম হয়ে গেল। পাঁচ মিনিটের এক ঝড়ে ব্রাজিল পাঁচ গোল খেয়ে গেল। সেদিন এক গোল করে জার্মানির মিরোস্লাভ ক্লোসা হয়ে গেলেন বিশ্বকাপের সবচেয়ে বেশি গোলদাতা। ৭-১ গোলের বিশাল এক জয়ে জার্মানি চলে গেল ফাইনালে।

ফাইনালে মুখোমুখি সেই চিরচেনা আর্জেন্টিনা। এই আর্জেন্টিনাও এবার প্রতিশোধের অপেক্ষায় আছে। কেননা, ‘০৬ ও ‘১০ দুইবারই কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের ঘাড়ে পা দিয়েই সেমিফাইনালে উঠেছিল জার্মানরা। কিন্তু এবারও ফাইনালের একদম শেষদিকে, ১১৩ মিনিটের দিকে এক অসাধারণ গোল করলেন জার্মানির মারিও গোৎজে। বিশ্বসেরা লিওনেল মেসিকে আরেকবার পরাজিত হতে হলো জার্মানির কাছে। ২৪ বছর বাদে আবার শিরোপা উঠল জার্মানির হাতে। ফিলিপ লাম চতুর্থ জার্মান অধিনায়ক হিসেবে জিতলেন বিশ্বকাপ।

২০১৮-এর গল্প জার্মানদের রাজ্যচ্যুত হওয়ার গল্প। রাশিয়ার এই বিশ্বকাপে জার্মানরা এসেছিল তাদের বিশ্বকাপ ধরে রাখতে। কিন্তু তারা মেক্সিকো-দক্ষিণ কোরিয়ার  কাছে হেরে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গ্রুপপর্বেই বাদ পড়ল। রাশিয়ার গল্প তাদের কাছে হয়ে থাকল রাজা হিসেবে এসে ভিখারি হিসেবে প্রত্যাবর্তন।

এটিই হলো অতি সংক্ষেপে জার্মানদের বিশ্বকাপ ইতিহাস। ইতিহাস ঘাটলে একটা ব্যাপার দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে যায়, জার্মানরা বিশ্বকাপের অন্যতম ধারাবাহিক একটি দল। সবচেয়ে বেশিবার বিশ্বকাপ জিততে না পারলেও অনেক দিক দিয়েই তারা সবচেয়ে সফল। অনেকের মতে, জার্মানদের খেলায় শিল্প নেই। অনেকের মতে, জার্মানরা খেলে যান্ত্রিক ফুটবল। পেলে-ম্যারাডোনা কিংবা ক্রুইফ-প্লাতিনির তুলির আঁচড় নেই এদের ফুটবলে। তবে, সবাই এটা নির্দ্বিধায় স্বীকার করবে, জার্মানরা যান্ত্রিকতার মধ্যেই শিল্পের ফুল ফুটিয়েছে। কিন্তু যদি কাউকে জিজ্ঞাসা করা হয়, কেন জার্মানি অন্য সব দলের চেয়ে আলাদা? তাহলে অধিকাংশের কাছেই একই উত্তর পাওয়া যাবে। তা হলো, তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর মানসিকতা, অদম্য ইচ্ছাশক্তি। যার উপর ভর করেই জার্মানি খাদে পড়ে গেলেও আবার আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখতে পারে।

Related Articles