Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সর্বকালের সেরা দশজন মুষ্টিযোদ্ধা

খেলাধুলার জগতে বক্সিংয়ের বয়স নেহাত কম নয়। একদম প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা বক্সিং যেন খেলার চেয়েও বেশিকিছু। রিংয়ের ভেতর লড়তে থাকা বক্সারদের অনবদ্য পারফর্মেন্সে মুগ্ধ দর্শকরাও যেনো এক পরোক্ষভাবে লড়তে থাকেন প্রিয় বক্সারের পাশেই। এ কারণেই খেলাধুলার জগতে বক্সিংয়ের অবস্থান সম্পূর্ণ ভিন্ন এক উচ্চতায়। আর সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিতে বক্সিং রিংয়ে জায়গা করে আছেন কয়েকজন বিখ্যাত বক্সার। তাদের মতো করে বক্সিং রিংয়ে রাজত্ব করা বক্সারের সংখ্যা কমই বলা চলে। আজ তবে জেনে নেয়া যাক সর্বকালের শ্রেষ্ঠ দশ বক্সারের কথা।

. মুহাম্মদ আলী

মুহাম্মদ আলী; Source: ABC News

প্রথমেই যার নাম নিতে হবে তিনি শুধুমাত্র সর্বকালের সেরা বক্সারই নন, তাকে বলা হয় শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াব্যক্তিত্ব; তিনি হলেন মার্কিন পেশাদার মুষ্টিযোদ্ধা মুহাম্মদ আলী। ১৯৪২ সালের জানুয়ারি মাসের ১৭ তারিখ জন্ম নেয়া এই মানুষটি মাত্র আঠারো বছর বয়সে পা রাখেন পেশাদার বক্সিংয়ের জগতে। ক্যারিয়ারের শুরুতেই ১৯৬০ সালের রোম অলিম্পিকের লাইট হেভিওয়েট ক্যাটাগরিতে তিনি স্বর্ণপদক জিতেছেন। সেটা ছিল মাত্র শুরু, মাত্র ২২ বছর বয়সে তিনি প্রথমবারের মতো হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নেন। সেই ম্যাচ জেতার কিছুদিন পর তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তার পূর্বের নাম ছিল ক্যাসিয়াস ক্লে; মুসলমান হওয়ার পর তিনি মুহাম্মদ আলী নাম গ্রহণ করেন এবং বলেন, “ক্যাসিয়াস ক্লে ছিল আমার ক্রীতদাস নাম”। তিনি একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে তিন তিনবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। ক্যারিয়ারে মোট ৬১টি লড়াইয়ের মোকাবেলায় তিনি জয়ী হয়েছেন মোট ৫৬টিতে; এর মধ্যে ৩৭টি নকআউট ও ১৯টি রেফারির সিদ্ধান্তে। ১৯৯৯ সালে স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড তাকে শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড় এবং বিবিসি শতাব্দীর সেরা ক্রীড়াব্যক্তিত্ব হিসেবে সম্মানিত করে। দীর্ঘ ৩২ বছর পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত থাকার পর, ২০১৬ সালের ৩ জুন ৭৪ বছর বয়সে মারা যান মুহাম্মদ আলী।

. জ্যাক জনসন

জ্যাক জনসন; Source: Famous People

তালিকার দুই নাম্বারেই আছেন আরেক বিখ্যাত আফ্রিকান-আমেরিকান বক্সার জ্যাক জনসন। তিনি এই তালিকার সবচেয়ে পুরনো বক্সার এবং তিনি এমন একসময় বক্সিং করেছেন যখন আফ্রিকান-আমেরিকানদের সমাজের নিচু স্তরের মানুষ হিসেব গণ্য করা হতো। শ্বেতাঙ্গদের শত অবহেলা অবজ্ঞাকে তুচ্ছ করে দিয়ে ১৯০৮ ইতিহাসের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে বিশ্ব হেভিওয়েট বক্সিং চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করে নেন তিনি। পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ের ক্যারিয়ার জীবনে তিনি ১০৪টি লড়াইয়ের মোট ৭৩টিতে জয়লাভ করেন, এর মধ্যে ৪০টিই ছিল নকআউট। খ্যাতনামা তথ্যচিত্র পরিচালক কেন বার্নস, তার ডকুমেন্টারিতে জ্যাক জনসনকে সবচেয়ে বিখ্যাত ও বিপজ্জনক আফ্রিকান আমেরিকান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বিশ বছর বয়সে পেশাদার বক্সিংয়ে নাম লেখানো কিংবদন্তী এই মুষ্টিযোদ্ধা ১৯৪৬ সালের ১০ জুন ৬৮ বছর বয়সে মারা যান।

. সুগার রে লিওনার্ড

সুগার রে লিওনার্ড; Source: Fightgameblog

দু’দুবার করে ‘বর্ষসেরা মুষ্টিযোদ্ধা’ খেতাব পাওয়া সেই সুগার রে-এর কথা মনে আছে তো? প্রথম বক্সার হিসেবে যিনি ১০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি আয় করছেন। ১৯৭৬ সনের অলিম্পিকের চূড়ান্ত লড়াইয়ে আন্দ্রেস আলদামাকে ৫-০ তে হারিয়ে তিনি স্বর্ণপদক জিতেছেন। তিনি একমাত্র বক্সার হিসেবে পাঁচটি ভিন্ন ক্যাটাগরির বক্সিং বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন। উইলফ্রেড বেনিতেজের মতো বক্সার যাকে ১৯৭৯ সালের ৩০ নভেম্বরের আগে কেউ হারাতে পারেনি, তিনি সুগার রে’র কাছে কুপোকাত হন। ক্যারিয়ারে মোট ৪০টি লড়াইয়ের মোকাবিলায় তিনি ৩৬টি জিততে সমর্থ হন। ১৯৯৭ সালের জানুয়ারি মাসে তাকে বক্সিংয়ের আন্তর্জাতিক ‘‌হল অফ ফেম’‌-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

৪. ম্যানি প্যাকাও

ম্যানি প্যাকাও © Robert Gallagher

আমাদের তালিকায় এবারে আছেন ৩৮ বছর বয়সী ফিলিপাইনে জন্ম নেয়া ম্যানি প্যাকাও। তিনি এই তালিকার সবচেয়ে কমবয়সী বক্সার। ফোর্বসের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া ক্রীড়াবিদদের ২০১৫ সালের তালিকায় তিনি ছিলেন দুই নাম্বার স্থানে। সে বছর তার আয়ের পরিমাণ ছিল ১,১৫০ কোটি টাকারও বেশী। বক্সিং বাদেও তাকে মাঝে মধ্যেই দেখা যায় সিনেমার পর্দায়। এছাড়াও মিউজিক, বাস্কেটবল এবং রাজনীতিতেও তাকে বেশ আগ্রহ নিয়ে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে। তিনি অষ্টম বিভাগীর বিশ্ব প্রতিযোগিতার একমাত্র শিরোপাধারী।

৫. রকি মার্চিয়ানো

রকি মার্কিয়ানো; Source: Playbuzz

হেভিওয়েট বক্সিংতে শতবাগ জয়ের হার নিয়ে তালিকার পঞ্চম অবস্থানে আছেন রকি মার্কিয়ানো। ক্যারিয়ারের ৪৯টি লড়াইয়ের ৪৯তেই জয় তো ছিলই, এমনকি ৪৩ লড়াই তিনি জিতেছেন নকআউট পদ্ধতিতে এবং বাকী ৬টি রেফারির সিদ্ধান্তে। রকি ছিলেন অন্যান্য বক্সার থেকে অনেকটাই ব্যতিক্রম। তার লড়াইয়ের কৌশল, শক্তিশালী পাঞ্চ করার ক্ষমতা এবং লোহার মতো শক্ত চিবুক তার জন্যে বয়ে আনে ভিন্ন এক জনপ্রিয়তা। তার নিষ্করুণ মনোবলের কাছে হার মেনেছেন তার বিরুদ্ধে লড়তে নামা প্রত্যেকজন বক্সার এবং তাদের মধ্যে আছেন মুহাম্মদ আলিও। কম্পিউটার সিমুলেশনের উপর ভিত্তি করে মার্চিয়ানো ও আলির মধ্যে এক ফিকশনাল ম্যাচের আয়োজন করা হয় ১৯৭৯ সালের জুলাই মাসে এবং সিমুলেশন অনুযায়ী তাতে মার্চিয়ানো জয়ী হন। ব্রকটন ব্লকবাস্টার’ হিসেবে পরিচিত পাওয়া এই বস্কারকে ইতিহাসবিদরা সর্বশ্রেষ্ঠ বক্সারদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তবে দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে, প্রতিভাবান এই বক্সার ১৯৬৯ সালে অক্টোবর মাসের ৩১ তারিখ অর্থাৎ তার ৪৬তম জন্মদিনের ঠিক আগের দিন বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান।

৬. জো লুইস

জো লুইস; Source: Boxing News

আমাদের তালিকায় এবারে আছেন ‘ব্রাউন বোম্বার’ খ্যাত জো লুইস। তার পেশাগত ক্যারিয়ারের মোট ৬৯টি লড়াইয়ের মোকাবেলায় তিনি জিতেছেন ৬৬টিতে। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত তিনি মোট তেরোটি লড়াইয়ের মোকাবেলা করার পরেও তার হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন টাইটেলটি সুরক্ষিত রাখেন। তাছাড়া ১৯৩৭ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন সবচেয়ে কম বয়সী হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন। তার খেলা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, যদি আফ্রিকায় বর্ণবাদ না থাকতো, তাহলে হয়তো পেশাদার বক্সারই হতেন তিনি শেষ পর্যন্ত। লুইস প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নায়ক উপাধি লাভ করেন। তিনি ১৯৮১ সালের এপ্রিলের ২ তারিখ ৬৬ বছর বয়সে মারা যান।

৭. সুগার রে রবিনসন

সুগার রে রবিনসন/ওয়াকার স্মিথ ; Source: Izquierdazo

১৯২১ সালের মে মাসের ৩ তারিখ জন্ম নেয়া ওয়াকার স্মিথ জুনিয়র আছেন আমাদের তালিকার সপ্তম স্থানে। মূল নাম ওয়াকার স্মিথ হলেও তিনি সুগার রে রবিনসন নামেই বেশি পরিচিত। তাকে স্মরণ করা হয় বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বক্সিং কিংবদন্তীদের একজন হিসেবে। ১৯৪০ সালে পেশাগত বক্সিং ক্যারিয়ার শুরু করার পর, সেবছরই  সবাইকে তাক লাগিয়ে তিনি টানা ৬টি লড়াই জিতে নেন। আর ঠিক পরের বছর পরাজিত করেন তৎকালীন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্যামি অ্যাঙ্গট ও সাবেক চ্যাম্পিয়ন ফ্রিজি জিভিককে। সুগার রে তার ক্যারিয়ারে ২০০টি লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়েছেন এবং জিতেছেন মোট ১৭৩টিতে; তার মধ্যে ১০৮টি ছিল নকআউটের মাধ্যমে। জীবনের শেষ সময়টা খুব কষ্টের মধ্যে কাটাতে হয়েছে তাকে। তার লোকদেখানো জাঁকজমকপূর্ণ জীবনযাপনের ফলে শেষ বয়সে তাকে আর্থিক সমস্যা পড়তে হয়েছিল।  আলঝেইমার রোগে আক্রান্ত সুগার রে ১৯৮৯ সালে ৬৫ বছর বয়সে মারা যান।

৮. মাইক টাইসন

মাইক টাইসন ; Source: Jenny Doh’s Blog

কী নামে পরিচয় করিয়ে দেয়া যায় তাকে? আয়রন মাইক নাকি কিড ডায়নামাইট? সর্বশ্রেষ্ঠদের তালিকার প্রথম পাঁচে না থাকলেও মাইক টাইসন ক্রীড়া জগতের সবচেয়ে চেনা পরিচিত মুখগুলোর মাঝে অন্যতম। সবচেয়ে কম বয়সে হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার রেকর্ডটি তার দখলে। মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি সেই খেতাব অর্জন করেন। পেশাদারী ক্যারিয়ারে ৫৮টি লড়াইয়ের মোকাবেলায় তিনি জিতেছেন ৫০টিতে, এর মধ্যে ৪৪টি নকআউট পদ্ধতিতে। পেশাগত জীবনে ব্যাপক সুনাম কামালেও নব্বইয়ের দশকে তাকে আদালতে বিচারের সম্মুখীন হতে হয়। ১৯৯২ সালে এক কিশোরী ‘বিউটি কুইন’-কে ধর্ষণের অভিযোগে তাকে ছয় বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। অবশ্য তিন বছর জেল খাটার পর তাকে মুক্তি দেয়া হয়। কারারুদ্ধ থাকাকালীন সময় তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং নাম পরিবর্তন করে রাখেন মালিক আব্দুল আজিজ।

৯. জো ফ্রেজিয়ার

জো ফ্রেজিয়ার; Source: The Guardian

তালিকায় এবারে আছেন ‘স্মোকিং জো’ হিসেবে পরিচিত জো ফ্রেজিয়ার। বারো ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। শৈশব থেকেই তার শখ ছিল তিনি জো লুইসের মতো বক্সার হবেন। কৈশোরে তিনি যখন ফিলাডেলফিয়ার এক কসাইখানায় চাকরি করতেন, তখন সেখানকার হিমাগারে রাখা মাংসের উপর নিয়মিত বক্সিং অনুশীলন করতেন। তিনি ১৯৬৪ সালের অলিম্পিক গেমে হেভিওয়েট ক্যাটাগরিতে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন এবং পরের বছর তিনি পেশাদার বক্সারদের খাতায় নাম লেখান। ১৯৭১ সালে তিনি মুহাম্মদ আলির মোকাবেলা করেন এবং সেই ম্যাচে জয়লাভ করেন। তাদের এই ম্যাচটিকে ‘ফাইট অফ দ্য সেঞ্চুরি’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তার লিভার ক্যান্সার ধরা পরে এবং সেবছরেরই নভেম্বর মাসে তিনি মারা যান। মারা যাওয়ার সময় তার বয়স ছিল ৬৭ বছর।

১০. রবার্তো ডুরান

রবার্তো ডুরান; Source: The Boxing Tribune

আমাদের তালিকার সর্বশেষ বক্সার হচ্ছেন পানামার রবার্তো ডুরান। সর্বমোট চার শ্রেণীর ওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা রবার্তো ‘মানস দ্য পিয়েদ্রা’ বা ‘হ্যান্ডস অব স্টোন’ নামে সুপরিচিত। জ্যাক জ্যাকসনের পর তিনি দ্বিতীয় বক্সার হিসেবে প্রায় পঞ্চাশ বছর ক্যারিয়ার চালিয়ে যান। এই লম্বা সময়ের পেশাগত জীবনে তিনি ১১৯টি লড়াইয়ের ১০৩টি জিতে বক্সিংয়ের আন্তর্জাতিক ‘‌হল অফ ফেম’‌-‌এ জায়গা করে নিয়েছেন। বক্সিং ছাড়াও তিনি বেশ কিছু সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ২০০২ সালে এক মারাত্মক গাড়ি দুর্ঘটনা আহত হলে তিনি বক্সিং থেকে অবসর নেন।

ফিচার ইমেজ- Wallpaper Cave

Related Articles