Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপের ইতিহাস

মেয়েদের ক্রিকেট খেলার ইতিহাস কিন্তু দু’দিনের নয়। ১৭৪৫ সালের ২৬ জুলাই ইংল্যান্ডের দু’টি গ্রাম ব্রেমলে এবং হেমব্লেডনের মধ্যে একটি ক্রিকেট ম্যাচের মাধ্যমে এই খেলার জগতে নারীদের প্রথম পদার্পণ। সেই গ্রাম দু’টির গৃহপরিচারিকাগণ নিজেদের মধ্যে ক্রিকেট খেলাটির আয়োজন করেন। তবে আপনি হয়তো জেনে অবাক হবেন, পুরুষদের ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরুর আগেই নারীদের ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরু হয়েছিল।

১৯৭৫ সালে পুরুষদের ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরু হয়, আর প্রমীলা ক্রিকেট বিশ্বকাপ মাঠে গড়িয়েছিলো ১৯৭৩ সালে। এ পর্যন্ত প্রমীলা ক্রিকেট বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে মোট ১১টি, যার ৬টিই (১৯৭৮, ১৯৮২, ১৯৮৮, ১৯৯৭, ২০০৫, ২০১৩) জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। ৪টি বিশ্বকাপ (১৯৭৩, ১৯৯৩, ২০০৯, ২০১৭) জিতেছে ইংল্যান্ড। ২০০০ সালের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো নিউজিল্যান্ড। নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপের কোন আসর কেমন হয়েছিল, সেই ইতিহাসই সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা থাকবে এ লেখায়।

প্রথম বিশ্বকাপ (১৯৭৩)

১৯৭৩ সালের নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ ছিল ইংল্যান্ড। ছেলেদের ক্রিকেট বিশ্বকাপের দুই বছর আগে অনুষ্ঠিত সে বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল স্বাগতিকরা।

১৯৭৩ সালের বিশ্বকাপজয়ী ইংল্যান্ড দল; Image source: ICC

বিশ্বকাপটিতে মোট ৭টি দল অংশ নিয়েছিল। দলগুলো হলো: ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জ্যামাইকা, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো, আন্তর্জাতিক একাদশ, এবং ইয়ং ইংল্যান্ড টিম। রাউন্ড রবিন পদ্ধতির সে খেলায় প্রতিটি টিম প্রত্যেকের সাথেই লড়েছিল। এ বিশ্বকাপ সম্পর্কে ইংল্যান্ড দলের অধিনায়ক রাসেল হেইহো ফ্লিন্ট বলেন, এই টুর্নামেন্টটি নারী ক্রিকেটের অস্তিত্ব নিয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করেছে। উদ্বোধনী ম্যাচে ইংল্যান্ডের এনিড বেকওয়েল এবং লিন থমাস টুর্নামেন্টটির প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেন। সে ম্যাচে মাত্র এক উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ড করেছিল ২৫৮ রান।

ফাইনালে ইংল্যান্ড লড়েছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, যেখানে ইংল্যান্ডের বেকওয়েল আরো একটি সেঞ্চুরি করেন, এবং হেইহো ফ্লিন্ট হাফ সেঞ্চুরি করেন। ৬০ ওভার শেষে ইংল্যান্ডের রানসংখ্যা দাঁড়ায় ২৭৯, এবং পরবর্তীতে ৯২ রানের জয় পায়। ফাইনালজয়ী ইংল্যান্ড মোট ৫টি ম্যাচ জেতে, যেখানে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে তারা শুধু হেরেছিল নিউ জিল্যান্ডের কাছে। অস্ট্রেলিয়া জিতেছিল ৪টি ম্যাচ, নিউ জিল্যান্ড এবং আন্তর্জাতিক একাদশ জিতেছিল ৩টি করে ম্যাচ। ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো জিতেছিল ২টি, জ্যামাইকা এবং ইয়ং ইংল্যান্ড জিতেছিল ১টি করে ম্যাচ।

  • ১৯৭৩ সালের বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক: এনিড বেকওয়েল (ইংল্যান্ড), ৬ ম্যাচে ২৬৪ রান। 

  • সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক: রোজালিন্ড হেগস (ইয়ং ইংল্যান্ড), ৬ ম্যাচে ১২ উইকেট। 

দ্বিতীয় বিশ্বকাপ (১৯৭৮)

১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশ ছিল ভারত, এবং এ টুর্নামেন্টের মাধ্যমেই ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভারতের যাত্রা শুরু হয়। এ বিশ্বকাপে মোট ৪টি টিম অংশগ্রহণ করে। টিমগুলো হচ্ছে: অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউ জিল্যান্ড এবং ভারত। প্রতিটি টিম প্রত্যেকের সাথে একবার করে ম্যাচ খেলে, এবং পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দল চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রত্যেকটি ম্যাচেই দর্শকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এ বিশ্বকাপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া; তারা নিউ জিল্যান্ডকে ৬৬ রানে এবং ভারতকে ৭১ রানে হারিয়েছিল।

১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়া দল; Image source: ICC

ফাইনাল খেলাটি অনুষ্ঠিত হয় হায়দরাবাদের লাল বাহাদুর শাহ শাস্ত্রী স্টেডিয়ামে। ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ১৯৭৩ বিশ্বকাপে হারের প্রতিশোধ নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। এ টুর্নামেন্টে ভারত কোনো জয়ের দেখাই পায়নি। টুর্নামেন্টের সেরা ৫ ব্যাটসম্যানের ৩ জনই ছিল অস্ট্রেলিয়ার (জেনিংস-১, শ্যারন-৪, ওয়েন্ডি হিলস-৫), এবং সেরা ৫ বোলারেরও ৩ জন ছিল অস্ট্রেলিয়ার (শ্যারিন হিল-১, শ্যারন-২, পেটা ভারকো-৫)।

  • ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক: মার্গারেট জেনিংস (অস্ট্রেলিয়া), ৩ ম্যাচে ১২৭ রান। 

  • সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক: শ্যারিন হিল (অস্ট্রেলিয়া), ৩ ম্যাচে ৭ উইকেট। 

তৃতীয় বিশ্বকাপ (১৯৮২)

১৯৮২ সালের বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ ছিল নিউজিল্যান্ড। এ বিশ্বকাপে আন্তর্জাতিক একাদশসহ মোট ৫টি টিম অংশ নেয়। প্রতিটি টিম রাউন্ড রবিন স্টেজে মোট ১২টি করে ম্যাচ খেলে। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দুই দল ফাইনালে মুখোমুখি হয়। ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে জয়ের মুকুট পরে অস্ট্রেলিয়া। ১২টি ম্যাচের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ১১টি ম্যাচেই জয়লাভ করে। অন্য ম্যাচটিতে জয় না পেলেও ক্রাইস্টচার্চের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টাই করে তারা। টাই হওয়া ম্যাচটিতে ৮ উইকেটে ১৬৭ রান করা ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়াকে ১৬৭ রানেই অলআউট করে দেয়। এটি ছিল এই টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় টাই হওয়া ম্যাচ। এর আগে ইংল্যান্ড এবং নিউ জিল্যান্ডের ম্যাচটিও টাই হয়।

১৯৮২ সালের বিশ্বকাপে ম্যাচের একটি মুহূর্ত; Image source: ICC

ফাইনাল ম্যাচটিও ছিল চরম প্রতিযোগিতাপূর্ণ। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ড সংগ্রহ করে ১৫১ রান। ইংল্যান্ডের জে অ্যালেন করেন সর্বোচ্চ ৫৩। জবাবে ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়ার জেন জ্যাকব ৩৭, ক্যারেন রিড ৩২, অ্যান ট্রেডরিয়া ২৫ এবং ম্যারি কর্নিশ করেন ২৪ রান। তাদের সম্মিলিত চেষ্টায়ই ৩ উইকেটে জয় পায় অস্ট্রেলিয়া।

  • ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক: জ্যানেট ব্রিটিন (ইংল্যান্ড), ১২ ম্যাচে ৩৯১ রান। 

  • সর্বোচ্চ উইকেটসংগ্রাহক: লিন ফুলস্টন (অস্ট্রেলিয়া), ১২ ম্যাচে ২৩ উইকেট। 

চতুর্থ বিশ্বকাপ (১৯৮৮)

১৯৮৮ সালের বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ ছিল অস্ট্রেলিয়া। এটিও ছিল পাঁচ টিমের বিশ্বকাপ। তবে এবার আন্তর্জাতিক একাদশের পরিবর্তে সহযোগী দেশ আয়ারল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ড প্রথম অংশ নেয়। ১৯৮৮ সালের বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিল না ভারত। এই বিশ্বকাপে প্রতিটি টিম ৮টি করে ম্যাচে অংশগ্রহণ করে। নিজেদের ৮টি ম্যাচের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ৭টিতে জয় পায়, এবং ইংল্যান্ডের কাছে একটি ম্যাচ হেরে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকে। ৬ ম্যাচ জিতে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউ জিল্যান্ডের কাছে দু’টি ম্যাচে পরাজিত হয় ইংল্যান্ড। নতুন দল হিসেবে নেদারল্যান্ড ৮টি ম্যাচেই পরাজিত হয়। তবে আয়ারল্যান্ড ১টি ম্যাচে জয় পায় নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে।

১৯৮৮ সালের বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়া দল; Image source: ICC

ফাইনাল ম্যাচটি অবশ্য ‘৮২ বিশ্বকাপের মতো এত উত্তেজনাপূর্ণ ছিল না। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেটে ইংল্যান্ড করেছিল ১২৭ রান। ইংল্যান্ডের পক্ষে জ্যানেট ব্রিটিন করেন সর্বোচ্চ ৪৬ রান, অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের মধ্যে লেফট-আর্ম স্পিনার লিন ফুলস্টন নেন ২৯ রানে ৩ উইকেট। জবাবে খেলতে নেমে ১৪ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে বসে অস্ট্রেলিয়া। তবে লিন্ডসে রিলার এর অপরাজিত ৫৯ এবং ডেনসি অ্যনেটসের ৪৮ রানে ৮ উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে অস্ট্রেলিয়া।

  • ১৯৮৮ সালের বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক: লিন্ডসে রিলার (অস্ট্রেলিয়া), ৮ ম্যাচে ৪৪৮ রান। 

  • সর্বোচ্চ উইকেটসংগ্রাহক: লিন ফুলস্টন (অস্ট্রেলিয়া), ৮ ম্যাচে ১৬ উইকেট। 

পঞ্চম বিশ্বকাপ (১৯৯৩)

১৯৯৩ সালের বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ ছিল ইংল্যান্ড। এই টুর্নামেন্টটি প্রায় বন্ধই হয়ে যাচ্ছিল। তবে ‘ফাউন্ডেশন ফর স্পোর্টস অ্যান্ড আর্টস’ এর ৯০ হাজার পাউন্ড ডোনেশনের ফলে টুর্নামেন্টটি চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছিল। এই আসরে মোট ৮টি টিম অংশ নিয়েছিল। ডেনমার্ক এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বকাপযাত্রা শুরু হয় এই আসরে। আগের আসরে না খেলা ভারত আবার এই আসরে ফিরে আসে। প্রত্যেক টিমের ৭ ম্যাচের রাউন্ড রবিন পর্ব শেষে নিউ জিল্যান্ড এবং ইংল্যান্ড ফাইনালে মুখোমুখি হয়।

১৯৯৩ সালের বিশ্বকাপজয়ী ইংল্যান্ড দল; Image source: Getty Image

ফাইনালে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে জ্যানেট ব্রিটিন (৪৮) এবং ক্যারল হজ (৪৫) এর ৮৫ রানের পার্টনারশিপ ইংল্যান্ডকে ভালো সূচনা এনে দেয়। এই বিশ্বকাপেই বিশ্বের প্রথম নারী ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে ১ হাজার রান করার গৌরব অর্জন করেন ব্রিটিন। এই জুটির পর ৩৩ বলে ৩৮ রান করেন জো চেম্বারলিন। ফলে ইংল্যান্ডের রান দাড়ায় ৫ উইকেটে ১৯৫। জবাবে ১২৮ রানেই গুটিয়ে যায় নিউ জিল্যান্ডের ইনিংস। ফলে ৬৭ রানের জয় নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ড।

  • ১৯৯৩ সালের বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক: জ্যানেট ব্রিটিন (ইংল্যান্ড), ৮ ম্যাচে ৪১০ রান। 

  • সর্বোচ্চ উইকেটসংগ্রাহক: ক্যারেন স্মিথিস (ইংল্যান্ড) এবং জুলি হ্যারিস (নিউ জিল্যান্ড), ৮ ম্যাচে ১৫ উইকেট। 

ষষ্ঠ বিশ্বকাপ (১৯৯৭)

১৯৯৭ সালের বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ ছিল ভারত। এই বিশ্বকাপে রেকর্ডসংখ্যক ১১টি টিম অংশ নিয়েছিল, এবং এই বিশ্বকাপেই প্রথম ৫০ ওভারের ম্যাচ খেলা হয়। এই বিশ্বকাপেই সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড সৃষ্টি হয়। ডেনমার্কের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার বেলিন্ডা ক্লার্কের ২২৯ এবং আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের শার্লট এডওয়ার্ডসের ১৭৩ রান এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান। এই আসরে মোট ৪টি তিন শতাধিক রানের স্কোর হয়। নারীদের ক্রিকেটে দলীয় সর্বনিম্ন রানটিও হয় এই আসরে, মাত্র ৮২ বলেই ২৭ রানে গুটিয়ে যাওয়ার লজ্জাজনক রেকর্ডটি করে পাকিস্তান।

১৯৯৭ সালের বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়া দল; Image source: ICC

গ্রুপপর্ব শেষে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ড এবং ভারত সেমিফাইনালে ওঠে। প্রথম সেমিতে ভারতকে ১৯ রানে হারায় অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় সেমিতে ইংল্যান্ডকে ২০ রানে হারায় নিউ জিল্যান্ড। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার সামনে ১৬৫ রানের লক্ষ্যমাত্রা দেয় নিউ জিল্যান্ড। নিউ জিল্যান্ডের ডেবি হকলি করেন সর্বোচ্চ ৭৯ রান। ক্লার্কের ৫২ রানের সুবাদে ভালো সূচনা পায় অস্ট্রেলিয়া। ৪৭.৪ ওভারশেষে ৫ উইকেট হারিয়েই অস্ট্রেলিয়া জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায়। কলকাতার ইডেন গর্ডেনে ৮০ হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে সে জয় ছিল অস্ট্রেলিয়ার ৪র্থ বিশ্বকাপজয়।

  • ১৯৯৭ সালের বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক: ডেবি হকলি (নিউ জিল্যান্ড), ৭ ম্যাচে ৪৫৬ রান। 

  • সর্বোচ্চ উইকেটসংগ্রাহক: ক্যাটরিনা কিনান (নিউ জিল্যান্ড), ৭ ম্যাচে ১৩ উইকেট।

সপ্তম বিশ্বকাপ (২০০০)

২০০০ সালের বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ ছিলো নিউজিল্যান্ড। এই আসরে মোট ৮টি টিম অংশ নেয়। টিমগুলো হচ্ছে- অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভারত, সাউথ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, শ্রীলংকা, আয়ারল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ড। রাউন্ড রবিন পর্বে প্রতিটি টিমই প্রত্যেকের সাথে মুখোমুখি হয়। সেমিফাইনালে ওঠে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভারত এবং সাউথ আফ্রিকা। অপরাজিত অস্ট্রেলিয়া সেমিফাইনালে সাউথ আফ্রিকাকে হারায় ৯ উইকেটে। গ্রুপপর্বে একমাত্র অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাজিত হওয়া নিউজিল্যান্ড ৯ উইকেটের জয় পায় ভারতের বিপক্ষে।

২০০০ সালের বিশ্বকাপজয়ী নিউজিল্যান্ড দল; Image Source: espncricinfo

ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ১৮৫ রানের টার্গেট দেয় নিউজিল্যান্ড। জবাবে অস্ট্রেলিয়ার বেলিন্ডা ক্লার্ক ৯১ রান করলেও ১৮০ রানে থেমে যায় অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস। ফলে ৪ রানের জয় নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে নিউজিল্যান্ড।

  • ২০০০ সালের বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক: ক্যারেন রল্টন (অস্ট্রেলিয়া), ৯ ম্যাচে ৩৯৩ রান। 

  • সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক: শার্মেইন ম্যাসন (অস্ট্রেলিয়া), ৮ ম্যাচে ১৭ উইকেট। 

অষ্টম বিশ্বকাপ (২০০৫)

২০০৫ সালের বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। আগেরবারের মতো এ আসরেও আগের ৮টি টিমই অংশ নেয়। তবে এ আসরে প্রথমবারের মতো ফাইনালে লড়ে ভারত। এ আসরে অস্ট্রেলিয়া ছিলো সবচেয়ে প্রাধান্য বিস্তারকারী দল। তারা রাউন্ড রবিন পর্বের ৭টির ৫টিতেই বড় ব্যবধানে জয়লাভ করে।

২০০৫ সালের বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়া দল: Image Source: Getty Image

সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারায় অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়ার ক্যাথরিন ফিৎজপ্যাট্রিক নেন ২৭ রানে ৩ উইকেট। ফলে ইংল্যান্ডের ইনিংস থামে ১৫৮ রানে। অস্ট্রেলিয়ার জয়ের পথে বেলিন্ডা ক্লার্ক করেন সর্বোচ্চ ৬২ রান। অপর সেমিতে নিউজিল্যান্ডকে ৪০ রানে হারায় ভারত। ভারতের পক্ষে মিতালি রাজ করেন অপরাজিত ৯১ রান, এবং অমিতা শার্মা ২৪ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট।

ফাইনালে ক্যারেন রল্টনের অপরাজিত ১০৭ রানের সুবাদে ভারতকে ২১৫ রানের টার্গেট দেয় অস্ট্রেলিয়া। জবাবে খেলতে নেমে ১১৭ রানেই গুটিয়ে যায় ভারতের ইনিংস।

  • ২০০৫ সালের বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক: শার্লট এডওয়ার্ডস (ইংল্যান্ড), ৬ ম্যাচে ২৮০ রান। 

  • সর্বোচ্চ উইকেটসংগ্রাহক: নিতু ডেভিড (ভারত), ৮ ম্যাচে ২০ উইকেট।

নবম বিশ্বকাপ (২০০৯)

২০০৯ সালের বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ ছিল অস্ট্রেলিয়া। এবারই প্রথম নারীদের ক্রিকেট বিশ্বকাপ আয়োজন করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। এই আসরে টিমগুলো ২টি গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলে। দুই গ্রুপ থেকে শীর্ষ তিনটি করে দল সুপার সিক্সে উত্তীর্ণ হয়। স্বাগতিক দেশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার কাছে অনেক বেশি প্রত্যাশা থাকলেও তারা উদ্বোধনী ম্যাচেই হেরে যায় নিউ জিল্যান্ডের কাছে।

২০০৯ সালের বিশ্বকাপজয়ী ইংল্যান্ড দল; Image Source: ICC

সুপার সিক্সে অস্ট্রেলিয়া হারে ভারতের কাছে। কিন্তু তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ভারতকে পরাজিত করে ৩ উইকেটে। এই আসরে শ্রীলংকা এবং দক্ষিণ আফ্রিকা একটি ম্যাচেও জয়ের দেখা পায়নি। সুপার সিক্সে পাকিস্তানের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের সুজি বেটস এবং হাইডি টিফেন দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে করেন ২৬২ রান, যেটি ওয়ানডেতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ পার্টনারশিপের রেকর্ড।

সিডনি ওভালের ফাইনালে ইংল্যান্ডের পেস বোলার নিকি শ’র ৪৩ রানে ৪ উইকেটের সুবাদে ১৬৬ রানেই গুটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ডের ইনিংস। তবে ব্যাটিং নৈপুন্য দেখিয়ে ৪ উইকেটের জয় তুলে নেয় ইংল্যান্ড।

  • ২০০৯ সালের বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক: সারাহ টেইলর (ইংল্যান্ড), ৭ ম্যাচে ৩২৪ রান। 

  • সর্বোচ্চ উইকেটসংগ্রাহক: লরা মার্শ (ইংল্যান্ড), ৬ ম্যাচে ১৬ উইকেট।

দশম বিশ্বকাপ (২০১৩)

২০১৩ সালের বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ ছিল ভারত। এই আসরে আগে থেকে নিজেদের খেলা নিশ্চিত করে রেখেছিল অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত এবং নিউ জিল্যান্ড। অপর ৪টি টিমকে (শ্রীলংকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ) বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত কোয়ালিফায়ার খেলে বিশ্বকাপে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করতে হয়েছিল।

২০১৩ সালের বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়া দল: Image Source: Getty Image

শ্রীলংকা ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে গ্রুপপর্বে এক উইকেটে হারিয়ে বিস্ময়ের জন্ম দেয়। সেই সাথে ভারতকেও ১৩৮ রানে পরাজিত করে শ্রীলংকা। ফলে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়ে স্বাগতিক ভারত। পুরো টুর্নামেন্টে পাকিস্তান ছিলো জয়শূন্য।

গ্রুপপর্বে ভারত এবং ইংল্যান্ডের কাছে হেরে সুপার সিক্সে এসে ঘুরে দাঁড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সুপার সিক্সে তিন ম্যাচের তিনটিতেই জয় পায় তারা, এবং প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়া এবং নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের স্বাদ গ্রহণ করে। কিন্তু ফাইনালে এসে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ১১৪ রানের বড় ব্যবধানে হেরে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফলে ষষ্ঠবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া।

  • ২০১৩ সালের বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক: সুজি বেটস (নিউজিল্যান্ড), ৭ ম্যাচে ৪০৭ রান। 

  • সর্বোচ্চ উইকেটসংগ্রাহক: মেগান শ্যুট (অস্ট্রেলিয়া), ৭ ম্যাচে ১৫ উইকেট।

একাদশ বিশ্বকাপ (২০১৭)

২০১৭ সালের বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ ছিল ইংল্যান্ড। সর্বমোট ৮টি টিম অংশ নেয় এই আসরে। সেমিফাইনালে ওঠে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকা।

প্রথম সেমিতে মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা ৬ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করে ২১৮ রান। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ অপরাজিত ৭৬ রান করেন মিগনন ডু প্রিজ। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৪৯.৪ ওভারে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ইংল্যান্ড।

দ্বিতীয় সেমিতে মুখোমুখি হয় ভারত এবং অস্ট্রেলিয়া। আগে ব্যাট করতে নেমে ৪ উইকেটে ২৮১ রান করে ভারত। ভারতের পক্ষে ১৭১ রান করেন হারমানপ্রীত কৌর। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ২৪৫ রানেই থেমে যায় অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস। অস্ট্রেলিয়ার অ্যালেক্স ব্ল্যাকওয়েল ৯০ এবং এলিস ভিলানি ৭৫ রান করেন, ভারতের দীপ্তি শর্মা নেন ৩ উইকেট।

২০১৭ সালের বিশ্বকাপজযী ইংল্যান্ড দল; Image Source: ICC

ফাইনাল খেলাটি অনুষ্ঠিত হয় লর্ডসে। টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় ইংল্যান্ড এবং ৭ উইকেট হারিয়ে ২২৮ রান করে। ইংল্যান্ডের সারাহ টেইলর করেন সর্বোচ্চ ৪৫ রান। ভারতের ঝুলন গোস্বামী নেন ৩ উইকেট। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৪৮.৪ ওভারে ২১৯ রানেই থামে ভারতের ইনিংস। ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮৬ রান করেন পুনম রাউত। ইংল্যান্ডের পক্ষে অ্যানিয়া শ্রাবসোল ৪৬ রান খরচ করে নেন ৬ উইকেট। চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড দল থেকে প্লেয়ার অফ দ্য ফাইনালও নির্বাচিত হন তিনিই।

  • ২০১৭ সালের বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক: ট্যামি বিউমন্ট (ইংল্যান্ড), ৯ ম্যাচে ৪১০ রান।

  • সর্বোচ্চ উইকেটসংগ্রাহক: ডেন ভ্যান নিকার্ক (সাউথ আফ্রিকা), ৭ ম্যাচে ১৫ উইকেট।

This post is about the history of women's cricket world cup, written in the Bengali language. Here, history has been described from 1973 to 2017. Necessary sources have been hyperlinked. 

Featured Image Source: Getty Image

Related Articles