Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ক্রিকেটে ডানহাতি-বাঁহাতি জুটি কতটা কার্যকর?

এমন কোনো নিয়ম এমসিসি লিখে রাখেনি। তবুও, ক্রিজে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান এলে ক্যাপ্টেনের ইতিউতি চোখ একজন ডানহাতি অফ স্পিনারকেই খুঁজে ফেরে। ক্রিকেটের আদি পিতার নির্দেশ ক্ষণে ক্ষণে যদিও বা অমান্য হয়, এই অলিখিত নিয়মের কোনো হেরফেরই হয় না পারতপক্ষে। বিশ্বাস হচ্ছে না? বিশ্বকাপের অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ড ম্যাচের ক্লিপ খুজে বের করুন, আপনি অবাক চোখে দেখতে পাবেন, যার মাঝে অস্ট্রেলিয়ানরা একজন শেন ওয়ার্ন দেখতে পেত, সেই স্টিভেন স্মিথ কি না অফ স্পিনার বনে গেছেন! ক্রিজে দুজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান এসেছিলেন যে!

ক্রিকেটটা এখন এমনই। সারারাত পার্টি করে, পরদিন সকালে ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি মেরেছেন, এখন সে গল্প ঠাঁই নিয়েছে রূপকথার পাতায়। মাঠের বাইরের আচরণ তো বটেই, মাঠের ভেতরের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সিদ্ধান্তগুলোও তো আজকাল অ্যালগরিদমের সূত্র মেনে চলে। উদাহরণ তো দেখতেই পেলেন।

কিন্তু বাঁহাতি ব্যাটসম্যান এলেই ডানহাতি বোলার আক্রমণে আনতে হবে, ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশন রাখার চেষ্টা করতে হবে, এই সমন্বয়গুলোর সত্যতা আসলে কতটা? ম্যাচের ফলে এসব সমন্বয়ের প্রভাবই বা কতটা? জানার চেষ্টা করেছেন ক্রিকইনফোর ক্রিকেট লিখিয়ে জ্যারড কিম্বার। সুযোগে জেনে নিয়েছেন এই রচনার লেখকও।

সদ্য শেষ হওয়া আফগানিস্তান-উইন্ডিজের ২য় ম্যাচটি অবধি আয়োজিত ওয়ানডে ম্যাচের সংখ্যা ৪,২১৪টি। এত বিশাল সংখ্যক ম্যাচের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন অসাধ্য হয়ে যায় বিধায় একটি নির্দিষ্ট ম্যাচ ধরেই আলোচনা এগিয়ে নেয়া শ্রেয়। আমাদের রচনায় সেই গিনিপিগ হতে যাচ্ছে, ২০১৯ বিশ্বকাপ, আরও নির্দিষ্ট করে বললে বিশ্বকাপেরই অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ডের ম্যাচটি।

***

বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপের দিকে যদি তাকানো যায়, তবে দারুণ এক প্যাটার্ন লক্ষ করা যায়। যদি ইনিংসের শুরুতেই উইকেট পড়েছে, তবে ওয়ান ডাউনে নেমেছেন উসমান খাজা। তা উসমান খাজার পছন্দের ব্যাটিং পজিশন যেহেতু ওপেনিং, বলটা নতুন থাকতে থাকতে ওনারই নামার কথা। তবে এই ব্যাপারটিই বদলে গিয়েছিল বল কিছুটা পুরনো হলে। ভারতের সঙ্গে অ্যারন ফিঞ্চ প্যাভিলিয়নে ফিরেছিলেন প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হয়ে, ইনিংসের ১৪তম ওভারে। সেদিন আর বিকল্প ব্যাটসম্যান হিসেবে খাজা নন, বরং ক্রিজে গিয়েছিলেন স্টিভেন স্মিথ। যে ধারা বজায় ছিল পাকিস্তানের সঙ্গে পরের ম্যাচেও

তবে এই ব্যাপারটিই উল্টে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হতে গিয়ে। সেদিন ২৬ রানে আউট হয়ে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফিরেছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। ১৫ জুনের সে ম্যাচে স্মিথ নন, ওয়ান ডাউনে ক্রিজে গিয়েছিলেন উসমান খাজা। ডেভিড ওয়ার্নার আর উসমান খাজা দু’জনই বাঁহাতে ব্যাট করেন, এ তথ্য জানা থাকলে বুদ্ধিমান পাঠক এতক্ষণে নিশ্চিত করেই ধরে ফেলেছেন, অস্ট্রেলিয়ান ম্যানেজমেন্টের এভাবে ব্যাটিং পজিশন অদলবদলের উদ্দেশ্য। ক্রিজে ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশন ধরে রাখতেই তাদের এত চর্চা, এত আয়োজন!

অদলবদলের খেলায়; Image credit: Clive Mason/ Getty Images

***

প্রশ্নটা দাঁড়াচ্ছে, এই যে ডানহাতি-বাঁহাতি সমন্বয় ধরে রাখতে দলগুলোর এত চেষ্টা, আদতেই কি এর কোনো কার্যকারিতা আছে? দৃশ্যত যদিও প্রতীয়মান, মাঝের ওভারগুলোতে প্রতিপক্ষ দলগুলো যখন স্পিনারদের দিয়েই কাজ চালিয়ে নিতে চায়, তখন লেফট-রাইট সমন্বয় থাকলে অন্তত একজনের জন্যে বল ভেতরে ঢোকাটা নিশ্চিত হয়৷ আর কে না জানে, বল ভেতরে ঢুকলেই খেলতে কিছুটা সহজ হয়!

তবে পরিসংখ্যান বলছে, ডানহাতি-বাঁহাতির এই তত্ত্ব যতটা মিথের মতো দলগুলোর পরিকল্পনায় গেড়ে বসেছে, সে তত্ত্বের উপযোগিতা ধারণার তুলনায় সামান্যই।

Image credit: ESPNCricinfo Ltd 

ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশন বোলারদের লাইন-লেংথ গড়বড় করে দেয়, এই তথ্য মেনেই সাধারণত পরিকল্পনা সাজায় দলগুলো। কিন্তু, ২০১৭ সালের পহেলা জুন থেকে ২০১৯ সালের ২৯ মে পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যাচ্ছে, তথ্যে কিছুটা খামতি আছেই। ক্রিজে যখন ডানহাতি-বাঁহাতি জুটি থাকে, তখন বোলারদের হাত থেকে ওয়াইড ডেলিভারি বের হয় প্রতি ৪৩.৫০ বল অন্তর। যা নেমে আসে ৩৮.৩০ অবধি, যখন ক্রিজে দু’জন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান জুটি বাঁধেন। অর্থাৎ, বাঁহাতি ব্যাটসম্যান বেশি থাকা মানেই, অতিরিক্ত খাতে বাড়তি কিছু রান যোগ হবার সম্ভাবনা বাড়া। যা কি না প্রমাণ করে দেয় ডান-বাম তত্ত্বের অসারতা।

***

যদি তাকানো যায় ব্যাটিং গড় কিংবা স্ট্রাইক রেটের দিকে, সেখানেও পার্থক্য হয় না খুব বেশি। শেষ দুই বছরের জুটিগুলোর দিকে কিছুটা দৃষ্টি দিলেই দেখা যায়, স্ট্রাইক রেটের কিছুটা বৃদ্ধি ছাড়া ডান-বাম জুটি কাজ করেনি তেমন। যে সময়ে পেসারদের বিপক্ষে দু’জন ডানহাতি ব্যাটসম্যান রান করেছেন ৮৬.০৯ স্ট্রাইকরেটে, সেখানে একজন ডানহাতি আর একজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান জুটি রান করেছেন ৮৭.৫৪ স্ট্রাইকরেটে। তুলনায় বাঁহাতি ব্যাটসম্যান জুটিই রান তুলেছেন দ্রুতগতিতে, ৮৭.৮৫ স্ট্রাইকরেটে। দু’জন ডানহাতি ব্যাটসম্যান ক্রিজে থাকলেই ব্যাটিং গড়ে যা একটু কমতি দেখা যাচ্ছে গত দুই বছরে, নইলে তো অত হিসাব-নিকাশের জুটি গড়ারই দরকার পড়ছে না!

Image credit: ESPNCricinfo Ltd 

তবে চাওয়া যদি হয় স্পিনারদের প্রতি আক্রমণ, তবে ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশনেরই খোঁজ করবেন কোচিং স্টাফরা। দু’জন একই ধরনের ব্যাটসম্যান যেখানে রান করেছেন ৭৯ কিংবা ৮০ স্ট্রাইকরেটে, সেখানে প্রতি ১০০ বলে দু’জন ভিন্ন ধরনের ব্যাটসম্যান রান তুলেছেন ৮২.৬৪ করে।  

***

যদি নজর দেয়া যায় বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ড ম্যাচের দিকে, তবে দেখা যাচ্ছে, এত তথ্য-উপাত্ত কোচ কিংবা অধিনায়কের ভাবনায় বদল আনতে পারছে না তেমন। অস্ট্রেলিয়া শুরুতেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলায় উইকেটে শেষমেশ জুটি জমে উসমান খাজা আর অ্যালেক্স ক্যারির মাঝে। দুইজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে নিষ্ক্রিয় রাখতে ইনিংসের ৩১তম ওভারে আক্রমণে আসেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। ম্যাচ-আপ ইনফরমেশনের কথা মাথায় রাখলে যা দারুণ সিদ্ধান্তই ছিল বলতে হবে। কেন উইলিয়ামসনের ভাষ্যে,

“ম্যাচ-আপের কথা মাথায় নিয়ে আমার অন্যদিকে যাবার সুযোগ ছিল না। তারা দু’জনই ছিল বাঁহাতি, এবং তাদের জন্যে সোধি আর স্যান্টনারের বল সবসময় ভেতরেই ঢুকত।”

৭ ওভারে মাত্র ২৫ রান বিলানো উইলিয়ামসনকে সে চিন্তায় সফলই বলা যায়। তার মূল দুই স্পিনার যেখানে রান বিলিয়েছেন ওভারপ্রতি ৫.৮৩ আর ৭.৬৬ হারে, সেখানে ওই ইনিংসে তার ইকোনমি রেট ছিল সবচেয়ে কম। তবে, যে উইকেটকে ধরে নেয়া হচ্ছিল স্পিন-বান্ধব হিসেবে, একই চিন্তায় নিউজিল্যান্ড খেলিয়েছিল তিন স্পিনারকে, সে ম্যাচে দলের মূল দুই স্পিনারের কেউই তার বোলিং কোটা পূরণ না করলে কিছুটা প্রশ্ন তো উঠবেই। এই প্রশ্নের উত্তর খুজঁতেই সে ম্যাচকে ফেলা হয়েছিল আতশকাঁচের নিচে।

ক্রিজে দুইজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান, এই বিবেচনায় যে মিচেল স্যান্টনার থেমে গিয়েছিলেন মাত্র তিন ওভার বল করেই, তার ক্যারিয়ার বলছে, ডানহাতিদের তুলনায় বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষেই বেশি সফল তিনি। ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে এই বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনারের বোলিং গড় যেখানে ৩৭ ছুঁইছুঁই, সেই সংখ্যাটিই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে নেমে আসে ২৮.৮৮-এ। একই কথা প্রযোজ্য কেন উইলিয়ামসনের ক্ষেত্রেও। ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষের ২৩.৯৩ বোলিং গড়টাই উঠে যায় ৬২-তে, যখন বিবেচনা করা হয় বাঁহাতিদের বিপক্ষে রেকর্ড।

তবে, ইশ সোধির পরিসংখ্যান বলছে, ম্যাচ-আপ তত্ত্ব কাজ করে এখনও। লেগ স্পিনারদের সফল হবার কথা ডানহাতিদের বিপক্ষেই। ডানহাতিদের বিপক্ষে ৩১.৩৬ গড়ের বিপরীতে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের প্রতি উইকেট পেতে খরচ হয়েছে ৪৬ রান, কেন উইলিয়ামসন নিশ্চয়ই এ তথ্যও মাথায় রেখেছিলেন।

Image credit: ESPNCricinfo Ltd 

উপরের ছবি থেকে এটাও স্পষ্ট, তিন স্পিনারের মাঝে বাঁহাতিদের বিপক্ষে কে বল করবেন, এ আলোচনায় কেন উইলিয়ামসনের নামই সবার পরে আসবে। সোধির চেয়ে কিছুটা মিতব্যয়ী হলেও বাঁহাতিদের উইকেট পেতে তাকে খরচা করতে হয়েছে সোধির চেয়ে ১৫ রান বেশি। স্যান্টনারও বাঁহাতিদের বিপক্ষে কিছুটা খরুচে হলেও ডানহাতিদের চেয়ে বাঁহাতিদের বিপক্ষে বোলিংটাই তিনি উপভোগ করেন বেশি।

ম্যাচ-আপ তত্ত্বের গলদটা ঠিক এখানেই। ডানহাতি ব্যাটসম্যান ক্রিজে এলেই বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনার আক্রমণে আনতে হবে, এ ধারণা সত্য নয়। সবার জন্যে প্রযোজ্যও নয়। সেদিনের দুই ব্যাটসম্যান উসমান খাজা আর অ্যালেক্স ক্যারির ক্যারিয়ারেই যা স্পষ্ট। বেরিয়ে যাওয়া স্পিন বলে ক্যারি দারুণ ভুগলেও একই ধরনের বলে উসমান খাজা আবার ভীষণ স্বচ্ছন্দ।

Image credit: ESPNCricinfo Ltd 

***

শুরুটা করেছিলাম স্টিভেন স্মিথের অফ স্পিনার হয়ে যাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে। সেদিন কলিন ডি গ্রান্ডহোম আউট হবার পর ক্রিজে এসেছিলেন টম ল্যাথাম, যাকে বোলিং করতে গিয়েই স্মিথ হয়ে গিয়েছিলেন অফ-স্পিনার।

অথচ ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শুরু থেকে হিসেব করলে দেখা যাচ্ছে, অফ-স্পিনারদের চেয়ে লেগ স্পিনাররাই বরং বেশি হন্তারক হয়েছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের। ওভারপ্রতি ০.৭ রান বেশি দিলেও লেগস্পিনাররা উইকেট নিয়েছেন অফস্পিনারদের চেয়ে ৭.২৫ রান কম দিয়ে।

স্মিথ কী পারেন না! Image credit: Andy Kearns/ Getty Images

ওয়ার্ন হবার চেষ্টা বহু আগেই ছেড়ে দিয়ে স্মিথ এখন পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান। স্মিথের বোলিং করবার ঘটনাই এখন বিরল। অথচ, সেদিন কি না এই লেগ-স্পিনার হয়ে গিয়েছিলেন অফ-স্পিনার! ওই ওভারেই তিনটি ফুলটস বল করেছিলেন স্মিথ। অফ-স্পিনার হতে গিয়ে বলকে বাইশ গজ পার করতেই হিমশিম খাচ্ছিলেন তিনি। স্মিথের সে চেষ্টা যে সফল হয়নি, তা তো বোঝাই যাচ্ছে।

অবশ্য স্মিথের সফল হবার দরকারই বা কোথায়! ডানহাতি-বাঁহাতি, বাঁহাতি ব্যাটসম্যান-অফ স্পিনার তত্ত্বের বাস্তব কার্যকারিতা যে নেই, সে তো পরিসংখ্যানেই প্রমাণিত।

প্রিয় পাঠক, রোর বাংলার ‘খেলাধুলা’ বিভাগে এখন থেকে লিখতে পারবেন আপনিও। সমৃদ্ধ করে তুলতে পারবেন রোর বাংলাকে আপনার সৃজনশীল ও বুদ্ধিদীপ্ত লেখনীর মাধ্যমে। আমাদের সাথে লিখতে চাইলে আপনার পূর্বে অপ্রকাশিত লেখাটি সাবমিট করুন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/

ক্রিকেট সম্পর্কে আরও জানতে পড়তে পারেন এই বইগুলোঃ

১) মাশরাফি
২) কাছের ক্রিকেট দূরের ক্রিকেট
৩) ক্রিকেট অভিধান

This article is in Bangla language. Do left-right pair at crease works? Do right-arm off-spin against left handers amd vice-versa works? This article is on that. Necessary hyperlinks are attached inside.

Featured image © Deshakalyan Chowdhury/ Getty Images 

Related Articles