১৯৭০ বিশ্বকাপে সর্বকালের সেরা এক দল নিয়ে শিরোপা জেতার পর ব্রাজিল ফুটবলে দীর্ঘদিনের এক খরা শুরু হয়। অসাধারণ সব ফুটবলারের আগমন সত্ত্বেও বিশ্বমঞ্চে এলেই সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যেত। বিশেষ করে জিকো-ফ্যালকাও-সক্রেটিসদের নিয়ে গড়া অসাধারণ দলটি ১৯৮২ বিশ্বকাপে ব্যর্থ হওয়ার পর অনেকেই যেন আশা হারিয়ে ফেলছিল। এভাবে ২৪ বছর পার হওয়ার পর ১৯৯৪ বিশ্বকাপে আবারো স্বরূপে ফিরে আসে ব্রাজিল, বিশ্বজয়ী হয় ফিরে পায় নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ১৯৮২ বিশ্বকাপের ওই তারকাবহুল দলের তুলনায় শক্তির বিচারে ১৯৯৪ বিশ্বকাপের দলটি কিছুটা পিছিয়ে থাকবে। তবে রোমারিও ও বেবেতোর স্ট্রাইকিং জুটির প্রভাবের কারণে পিছিয়ে থাকা দলটিই চূড়ান্ত সাফল্য পেয়েছিল।
খেলার মাঠে এই জুটির রসায়ন অসাধারণ হলেও মাঠের বাইরে দুজন কিন্তু দুই বিপরীত মেরুর মানুষ। বেবেতো ছিলেন একজন ধার্মিক মানুষ, সবসময় নিজের জীবনকে একটি সুনির্দিষ্ট নিয়মের মাঝে রাখতেন। অন্যদিকে রোমারিও ছিলেন পাগলা হাওয়ার মতো, কখন যে কোনদিকে ছুট দিবেন তার খবর তিনি নিজেও জানতেন না। বেবেতোর আদর্শ যেখানে ছিলেন জিকো, সেখানে রোমারিওর আদর্শ ছিলেন গারিঞ্চা। রোমারিওর ভাষায়,
আমরা ভিন্ন দুই মেরুর মানুষ। বেবেতো যেখানে পুরোপুরি সাংসারিক, সেখানে আমি রাস্তার এক ছন্নছাড়া বিড়াল।
আচরণে ভিন্ন এই দুজন ক্লাব ক্যারিয়ারেও ছিলেন একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। জাতীয় দলে মূল স্ট্রাইকার হওয়ার জন্যেও নিজেদের মধ্যে একটি অলিখিত লড়াই চলছিল। বাহিয়ার মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া বেবেতো কৈশোরেই ফুটবলের সাথে নিজেকে জড়িয়ে নেন, বয়সভিত্তিক দলে আলো ছড়ানোয় ২০ বছর বয়সে ফ্ল্যামেঙ্গোর মতো নামকরা ক্লাবে সুযোগ পান। শারীরিকভাবে তেমন শক্তিশালী না হলেও আচমকা গতি বাড়ানোর ক্ষমতা ও নিজের সৃজনশীলতার জন্য খুব কম সময়েই স্ট্রাইকার হিসেবে বেশ নামডাক পেয়ে যান তিনি। ক্লাব ফুটবলে ভালো খেলার পুরস্কারস্বরূপ ১৯৮৫ সালে জাতীয় দলে ডাক পান তিনি।
কিন্তু টানা ছয় ম্যাচে গোল না পাওয়ায় তাকে বাদ দিয়ে রোমারিও ডি সৌজা ফারিয়া নামের আরেক তরুণ স্ট্রাইকারকে সুযোগ দেওয়া হয়। উচ্চতার দিক থেকে তিনি বেবেতোর চেয়েও চার ইঞ্চি খাটো ছিলেন। তবে বল নিয়ন্ত্রণের অসাধারণ ক্ষমতা আর ডি-বক্সে শিকারী পাখির মতো নিখুঁত হওয়ায় ডিফেন্ডারদের জন্য ত্রাস হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন তিনি। রোমারিওর শৈশব কেটেছে প্রচণ্ড অভাবের মাঝে, নিজের সেই বিষাদময় দিনের ব্যাপারে তিনি বলেন,
আমরা এতটাই গরীব ছিলাম যে প্রতিদিনকার খাবারও মাঝেমধ্যে যোগাড় করতে পারতাম না। সীমাহীন কষ্ট আর দারিদ্র্যের মাঝে আমাদের দিন পার করতে হয়েছিল। ক্ষুধার জ্বালা ভোলার একমাত্র পথ হিসেবে বেছে নিয়েছিলাম ফুটবলকে, রাস্তার ধারে সুযোগ পেলেই হারিয়ে যেতাম খেলার রাজ্যে।
রোমারিওর পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল ভাস্কো দা গামায়, মজার ব্যাপার হচ্ছে বেবেতোর প্রথম ক্লাব ফ্ল্যামেঙ্গোর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিল ভাস্কো। ১৯৮৫ সালে ভাস্কোর হয়ে অভিষেক হওয়ার পর খুব অল্প সময়ে আলোড়ন তুলে ফেলেন তিনি। নতুন এই তারকার আগমনে বেবেতোর ওপর থাকা স্পটলাইট কিছুটা ম্রিয়মাণ হয়ে যায়।
আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তখনকার সংবাদমাধ্যম তাদের মধ্যে এক অলিখিত লড়াই সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। রিওর স্টেট লিগে ফ্ল্যামেঙ্গো ও ভাস্কোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা সেই লড়াইয়ের সংবাদকে আরো উসকে দেয়। দুজনেই গোলের বন্যা বইয়ে দিয়েছিলেন, শেষপর্যন্ত রোমারিওর ভাস্কোই স্টেট লিগে শেষ হাসি হেসেছিল। অবশ্য স্টেট লিগে হারলেও জাতীয় লিগে এর শোধ তুলে নেয় ফ্ল্যামেঙ্গো, শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ভাস্কোকে তারা হারায় ২-১ গোলে।
ভাস্কোর হয়ে দুর্দান্ত ফর্মে থাকায় ১৯৮৭ সালে জাতীয় দলে ডাক পান রোমারিও। নিজের সমসাময়িক প্রতিদ্বন্দ্বী বেবেতোর মতো দলে মানিয়ে নেওয়ার জন্য খুব বেশি সময় তিনি নেননি, প্রথম ছয় ম্যাচে চার গোল করে বেশ ভালোভাবে জাতীয় দলে নিজের অভিযান শুরু করেন তিনি। ১৯৮৮ সালে সিউল অলিম্পিকের জন্য ঘোষিত দলে রোমারিও ও বেবেতো– দুজনকেই একসাথে ডাকা হয়।
সেই আসরে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে নিজের আগমনী বার্তা বেশ ভালোভাবেই পৌঁছে দেন রোমারিও, সবমিলিয়ে গোল করেছিলেন সাতটি। অন্যদিকে রোমারিওর দাপুটে ফর্মের কারণে বেবেতো মুল একাদশে সেভাবে সুযোগ পাননি, তবে বদলি হিসেবে নেমেই তিনি সেই আসরে করেছিলেন দুই গোল। তবে তাদের এই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স সত্ত্বেও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে ফাইনালে হেরে রৌপ্যপদক নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় ব্রাজিলকে।
১৯৮৮-৮৯ মৌসুমে ব্রাজিলের লিগ ছেড়ে ডাচ দল পিএসভি আইন্দোহভেনে যোগ দেন রোমারিও। অন্যদিকে পরের মৌসুমে সবাইকে হতবাক করে দিয়ে নিজের পুরনো ক্লাব ফ্ল্যামেঙ্গো ছেড়ে ভাস্কোতে যোগ দেন বেবেতো! দুজনই নিজেদের নতুন ক্লাবে দ্রুত মানিয়ে নিয়ে বেশ ভালো পারফর্ম করতে থাকেন। ঘরের মাঠে অনুষ্ঠেয় কোপা আমেরিকায় দুজনকেই দলে রাখা হয়। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে রোমারিওর একমাত্র গোলে উরুগুয়েকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ব্রাজিল। অবশ্য ছয় গোল করে আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা হন বেবেতো।
এই দুই তরুণই ১৯৯০ বিশ্বকাপের ২৩ সদস্যের দলে ডাক পান। কিন্তু বিশ্বকাপের ৩ মাস আগে ইনজুরিতে পড়ে ফিটনেস হারানোয় বিশ্বকাপে মাত্র একটি ম্যাচে ৬৬ মিনিট খেলার সুযোগ পান রোমারিও। অন্যদিকে অভিজ্ঞ ক্যারেকাকে জায়গা করে দেওয়ার জন্য বেবেতোর বিশ্বকাপ কেটেছিল সাইডবেঞ্চে বসে। এই দুজনকে বাদ দিয়ে ব্রাজিলও তেমন সুবিধা করতে পারেনি, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার কাছে ০-১ গোলে হেরে বিদায় রাউন্ড অফ সিক্সটিন থেকেই বিদায় নেয় সেলেসাওরা।
এদিকে তিন মৌসুম ভাস্কোতে কাটানোর পর অবশেষে ১৯৯২ সালে ইউরোপে পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত নেন বেবেতো, যোগ দেন স্প্যানিশ ক্লাব দেপোর্তিভা লা করুণায়। তখনকার মাঝারি মানের ক্লাবটি বেবেতোর সাথে আরেক ব্রাজিলিয়ান মাউরো সিলভা ও স্প্যানিশ ফ্রানকে দলে ভিড়িয়ে সেবারের লিগ জয়ের বড় দাবিদার হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে। নিজের প্রথম মৌসুমেই ২৯ গোল করে লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হন আর লিগ টেবিলে তৃতীয় অবস্থানে থেকে লিগ শেষ করে দেপোর্তিভা।
যেহেতু রোমারিও ও বেবেতো দুজন তখন ভিন্ন দুই লিগে খেলছিলেন, তাই অনেকেই ভেবেছিলেন যে দুজনের মধ্যকার প্রতিদ্বন্দ্বিতার অবসান বুঝি ঘটলো। কিন্তু ১৯৯৩ সালে দলের শক্তি বাড়ানোর জন্য পিএসভি থেকে রোমারিওকে দলে আনার সিদ্ধান্ত নেন তৎকালীন বার্সা কোচ ইয়োহান ক্রুইফ। আবারো একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হন রোমারিও ও বেবেতো।
এবারের প্রতিদ্বন্দ্বিতার উত্তাপ অবশ্য আগের সবকিছুকেই ছাড়িয়ে যায়। লিগের সময় যত এগোতে থাকে, শিরোপার মূল লড়াইটা বার্সেলোনা ও দেপোর্তিভার মধ্যে সীমাবদ্ধ হতে থাকে। আর সেই ইঁদুর লড়াইয়ের উত্তাপে রোমারিও ও বেবেতোও একে অপরের সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। প্রায় প্রতি ম্যাচেই রেফারির কাছে অভিযোগ জানানোয় বেবেতোকে 'শিশুর ন্যায় ক্রন্দনকারী' হিসেবে উল্লেখ করেন রোমারিও।
লিগজয়ের লড়াই গড়ায় শেষ গেমউইকে, বার্সেলোনার চেয়ে ২ পয়েন্ট এগিয়ে থাকলেও শেষ ম্যাচে সেভিয়ার বিপক্ষে বার্সার জয়ের পর ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে দেপোর্তিভার জন্য জয় ভিন্ন কোনো পথ খোলা ছিল না। খেলার একদম অন্তিম মুহূর্তে পেনাল্টি পাওয়ায় সেই জয়ের কক্ষপথেই ছিল বেবেতোর দল। কিন্তু তার সতীর্থ মিরোস্লাভ দুকিচ সেই পেনাল্টি মিস করায় মাত্র এক পয়েন্টের ব্যবধানে লিগ জিতে নেয় রোমারিওর বার্সেলোনা।
ঘরোয়া লিগে এই দ্বন্দ্ব, সাথে জাতীয় দলেও আরেক ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন রোমারিও। তৎকালীন ব্রাজিল বস কার্লোস আলবার্তো পাহেইরাকে নিয়ে প্রকাশ্যে কটু মন্তব্য করায় রোমারিওকে জাতীয় দলে না ডাকার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এদিকে দলের সবচেয়ে বড় তারকাকে ছাড়া বাছাইপর্বে ব্রাজিলের অবস্থা তখন তথৈবচ, অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে সরাসরি কোয়ালিফাই করার জন্য বাছাইপর্বের শেষ ম্যাচে উরুগুয়ের বিপক্ষে ব্রাজিলকে জিততেই হবে।
এমন ক্রান্তিলগ্নে দারুণ বিচক্ষণতার প্রমাণ দেন বেবেতো, ব্যক্তিগত সব দ্বন্দ্ব ভুলে তিনি রোমারিওকে দলে ডাকার ব্যাপারে কোচ পাহেইরাকে রাজি করান। সুযোগ পেয়ে মারাকানায় সেদিন একাই ম্যাচ জেতানোর দায়িত্ব নেন রোমারিও, দ্বিতীয়ার্ধে তার করা জোড়া গোলে উরুগুয়েকে ২-০ গোলে হারিয়ে প্রতিটি বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করার অনন্য এক রেকর্ড অক্ষুণ্ণ রাখে সেলেসাওরা।
অনেকে আশা করেছিলেন এই ঘটনার পর হয়তো রোমারিও ও বেবেতোর মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠবে। কিন্তু একগুঁয়ে রোমারিও তার আগের সিদ্ধান্তেই অটল থাকেন, বেবেতোর সাথে পাশাপাশি সিটে বসে বিমানভ্রমণ করবেন না– এমন কথাও জানিয়ে দেন তিনি। যে দুজনকে ঘিরে দীর্ঘ ২৪ বছর পর বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখছিল ব্রাজিলিয়ানরা, সেই দুজনের মাঝে এমন সম্পর্ক দেখে অনেকেই আশা হারিয়ে ফেলছিলেন। তবে মাঠের বাইরে ঘটা এক দুর্ঘটনা একদম ম্যাজিকের মতো সবকিছু ঠিক করে দেয়।
বিশ্বকাপের কিছুদিন আগে বেবেতোর গর্ভবতী স্ত্রী ছিনতাইকারীদের দ্বারা আক্রান্ত হন, কিছুদিন পর তার ভাইকে অপহরণ করার চেষ্টা করা হয়। প্রায় একই সময়ে চড়া অঙ্কের টাকা চেয়ে রোমারিওর বাবাকে অপহরণ করা হয়। সৌভাগ্যবশত, কারোরই তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে একই ধরনের বিপদের সম্মুখীন হওয়ায় হঠাৎ করে দুজনের সম্পর্কে জমে থাকা বরফ গলতে শুরু করে।
এই ঘটনার রেশ সাথে ২৪ বছর পর শিরোপাজয়ে দৃঢ়চিত্ত– সবমিলিয়ে রোমারিও ও বেবেতো পুরনো সব স্মৃতি ভুলে একসাথে কাজ করার ব্যাপারে একমত হন। গ্রুপ পর্বে এর সুফল পেতে শুরু করে ব্রাজিল, তিন ম্যাচে তিন গোল করেন রোমারিও আর বেবেতোর ঝুলিতে ছিল এক গোল। এছাড়া প্রত্যেকেই অন্যের একটি গোলে অ্যাসিস্ট করেছিলেন।
রাউন্ড অফ সিক্সটিনে স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রের মুখোমুখি হয় ব্রাজিল, ৪৩ মিনিটে লিওনার্দো লাল কার্ড দেখলে বেশ চাপে পড়ে যায় সেলেসাওরা। দলের এমন বিপদের সময়ে এই জুটি ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়। মাঝমাঠ থেকে দারুণ এক দৌড় নিয়ে পেনাল্টি বক্সের কাছাকাছি এসে বেবেতোর দিকে থ্রু পাস বাড়িয়ে দেন রোমারিও, ঠাণ্ডা মাথায় বল জালে জড়ান বেবেতো। গোলের পর আবেগাপ্লুত বেবেতো ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ বলে রোমারিওকে জড়িয়ে ধরেন। রোমারিও ও বেবেতোর মাঝে এখনো দ্বন্দ্ব চলছে– এই কাণ্ডের পর এমন কথা বলার সাহস আর কেউ পায়নি।
কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হয় ব্রাজিল। ডেনিস বার্গক্যাম্প, মার্ক ওভারমার্স রোনাল্ড ডি বোরের মতো দুর্দান্ত সব ফরোয়ার্ডদের নিয়ে ডাচদের সেই দলটি বেশ শক্তিশালী ছিল। তবে বেবেতো-রোমারিওর অদম্য জুটি থাকায় শক্তির পাল্লায় ব্রাজিলও পিছিয়ে ছিল না। গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধের ৫৩ মিনিটে বাঁ প্রান্ত থেকে দারুণ এক বল বাড়িয়ে দেন বেবেতো, দুর্দান্ত ফর্মে থাকা রোমারিও সেই পাস থেকে গোল করতে ভুল করেননি।
দুই মিনিট পর ব্রাজিলের রক্ষণভাগ থেকে রোমারিওর দিকে লং পাস বাড়িয়ে দেওয়া হয়, এদিকে বাঁ পাশেই বেবেতো কিছুটা আনমার্কড অবস্থায় ছিলেন। চতুর রোমারিও পুরো পরিস্থিতি বুঝতে পেরে সেই পাস নিজে না ধরে বেবেতোর দিকে পাঠিয়ে দেন। দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত এক ফিনিশিংয়ে বেবতোর গোল আর তারপর মাজিনহার সদ্যোজাত বাচ্চাকে উৎসর্গ করে সেই বিখ্যাত বেবি সেলিব্রেশন। শেষপর্যন্ত ব্রাজিল ম্যাচটি জিতে নেয় ৩-২ গোলে।
সেমিফাইনালে সুইডেনের বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়ে গোলটি ছিল রোমারিওর। ফাইনালে আরেক পরাশক্তি ইতালির মুখোমুখি হয় ব্রাজিল। একদিকে রোমারিও-বেবেতো, অন্যদিকে ব্যাজিও– সবমিলিয়ে দুর্দান্ত এক লড়াইয়ের অপেক্ষায় ছিল ফুটবলবিশ্ব। তবে রোজবৌল স্টেডিয়ামে তিনজনের কেউই সেদিন জ্বলে উঠতে পারেননি, ফলে ১২০ মিনিট শেষেও কোনো দল আর গোলের খাতা খুলতে পারেনি। শেষপর্যন্ত টাইব্রেকারে ব্রাজিলের জয় আসে ৩-২ গোলে, দীর্ঘ ২৪ বছর পর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি ফুটবলে আবারো নিজেদের একক শ্রেষ্ঠত্ব স্থাপন করে সেলেসাওরা।
একটা লম্বা সময় যে দুটি মানুষ শুধু একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে গেছেন, তারাই একসাথে জুটি বেঁধে ফুটবলের সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত ট্রফিটি জিতেছেন। দুজন একসাথে ম্যাচ খেলেছিলেন ২৩টি, যার একটিতেও হারের মুখ দেখেনি ব্রাজিল। এরপর অবশ্য রোনালদোর আগমনের ফলে এই জুটির একসাথে খেলার পথ মোটামুটি রুদ্ধ হয়ে যায়। তবে তার আগেই পেলে-গারিঞ্চার মতো রোমারিও-বেবেতোর নামটাও কালজয়ী জুটি হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে মুদ্রিত হয়ে গেছে।
প্রিয় পাঠক, রোর বাংলার ‘খেলাধুলা' বিভাগে এখন থেকে নিয়মিত লিখতে পারবেন আপনিও। সমৃদ্ধ করে তুলতে পারবেন রোর বাংলাকে আপনার সৃজনশীল ও বুদ্ধিদীপ্ত লেখনীর মাধ্যমে। আমাদের সাথে লিখতে চাইলে আপনার পূর্বে অপ্রকাশিত লেখাটি সাবমিট করুন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/
ফুটবল নিয়ে আরও জানতে পড়তে পারেন এই বইগুলোঃ
This article is in Bangla language. It's a story about a famous partnership which was formed by two Brazilian strikers - Romario and Bebeto. It is based on an article, previously published in the football times. For references, please check the hyperlinks inside the article.
Featured Image: The Football Times