Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কোচ হলে মনে রাখতে হবে, আপনি চাকরি হারিয়েছেন নয়তো হারাচ্ছেন: গ্যারি কারস্টেন

বাংলাদেশের সঙ্গে এই মুহূর্তে গ্যারি কারস্টেনের সরাসরি সুসম্পর্ক। সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান এই ক্রিকেটার এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ক্রিকেট বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের বর্তমান প্রধান কোচ, স্টিভ রোডস; যিনি কি না প্রথমবারের মতো কোনো জাতীয় দলের হাল ধরেছেন, তার নিয়োগ হয়েছে কারস্টেনেরই পছন্দে। শুধু তা-ই নয়, তামিম ইকবাল-মুশফিকুর রহিমদের নতুন ব্যাটিং কোচ নেইল ম্যাকেঞ্জিকেও এনেছেন কারস্টেন।

এই উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার আগে কারস্টেনকে বিসিবি নিজেদের প্রধান কোচ হিসেবেই চেয়েছিল। কিন্তু ভারতের বিশ্বকাপজয়ী সাবেক এই কোচ সেই প্রস্তাবে রাজি হননি। চেয়েছিলেন চড়া বেতন। শুধু তা-ই নয়, কেবল সিরিজ সামনে এলেই দলের সঙ্গে কাজ করবেন; সেই ‘অদ্ভুত’ প্রস্তাবও দিয়েছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত তাই কোচ নয়, বরং উপদেষ্টা হিসেবেই কারস্টেনকে নিজেদের সঙ্গে রেখেছে বিসিবি।

গ্যারি কারস্টেনকে ক্রিকেট কোচিংয়ের ফেরিওয়ালা বলা যায়। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে টানা ১১ বছর খেলা এই মানুষটি কেবল জাতীয় দল নয়, ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টুর্নামেন্টেও কাজ করে যাচ্ছেন। তার মূল আগ্রহ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দিকে। কম সময়ে অধিক রোমাঞ্চ, চাপ আর ক্রিকেটীয় রণকৌশলের ধারাবিবরণী তাকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো করে টানে। যে কারণে ক্যারিয়ারে কখনও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট না খেলেও এই ফরম্যাটের জন্য তিনি সফল কোচ।

শুরুটা হয়েছিল ভারত থেকে। শচীন টেন্ডুলকার-মহেন্দ্র সিং ধোনিদের দায়িত্ব নিলেন ২০০৮ সালে। ২০১১ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতিয়ে ছাড়লেন দায়িত্ব। এরপরই সুযোগ পেলেন নিজের দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ হওয়ার। ২০১১ সালের জুন মাস থেকে নতুন মিশন শুরু, সেখান থেকে ২০১৩ সালের আগস্টে পারিবারিক কারণে পদত্যাগ। শেষবার ওটাই কোনো জাতীয় দলের কোচ হওয়া। এরপর একাধিক প্রস্তাব পেলেও ফিরিয়ে দিয়েছেন।

এই পুরোটা সময় জুড়ে পায়ের নিচে মাটি খুঁজেছেন ফ্র্যাঞ্চাজিভিত্তিক লিগগুলোতে। অস্ট্রেলিয়ার হোবার্ট হারিকেন্সের কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) তার ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। দিল্লি ডেয়ারডেভিলস, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে কাজ করেছেন, করছেন। আইপিএলে সফলতা পেয়েছেন মুঠো ভরে। কোচ হিসেবে পার করেছেন ১ যুগ।

রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর জার্সিতে গ্যারি কারস্টেন; Image Source: BCCI

ভিন্ন জায়গায়, ভিন্ন মত আর পরিবেশের ভিন্নতায় গ্যারি কারস্টেনের কোচিং নিয়ে ভাবনার কথা আগামী দিনের কোচদের বাস্তবতা বোঝাতে সাহায্য করে। কোচ হিসেবে নিজের পথ ও বর্তমান অবস্থার অভিজ্ঞতায় এক সাক্ষাতকারে কোচিং নিয়ে কথা বলেছেন প্রোটিয়া কারস্টেন।

হয়তো এর কোনো নির্দিষ্ট ফর্মূলা নেই। তারপরও, শিরোপা জেতার ইস্যু বাদ দিয়ে একটা সফল টি-টোয়েন্টি দল কিভাবে গঠন করা যায়?

এক শব্দে যদি বলতে হয়, আমার মতে সেটা হলো ধারাবাহিকতা। ফলাফলের শেষ কথা হলো, পারফরম্যান্স। তো আপনি কিভাবে পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন? আপনি যদি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) বড় দলগুলোর পারফরম্যান্স দেখেন, তাহলেই উদাহরণটা বুঝতে পারবেন। সত্যি বলতে, আমরা এখান থেকে শিখছি। আমার কাছে মনে হয়, আইপিএলের মূল শক্তির জায়গাটা হলো চাপ। এখানে চাপের সময় সবাই প্রতিক্রিয়া দেখায়। আমরা যদি জায়গামতো এসব চাপ প্রয়োগ করতে পারি, তাহলে আমার মনে হয় আমরা ধারাবাহিকতাটা খুব ভালোভাবেই ধরে রাখতে পারি। দল নির্বাচন, ক্রিকেটার নির্বাচন; এমনকি ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে একটা পরিকল্পনা, ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে এগুলো খুব সাহায্য করে। কিন্তু আপনি যখন ভালো ফল পাবেন না, তখন আপনাকে একটু তো কষ্ট করতেই হবে। ম্যানেজমেন্ট থেকে বাড়তি চাপ থাকবেই।

আপনি আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু এবং ভারত জাতীয় দল; দুই জায়গাতেই কোচের দায়িত্বে ছিলেন, দুই জায়গাতেই সাফল্যের চিহ্ন রেখেছেন। সত্যি বলতে, দুই জায়গাতেই কি আপনার আশা সমান ছিল?

কোচিংয়ের সবচেয়ে বড় যে জিনিসটা আমি উপভোগ করি তা হলো সংশ্লিষ্ট পরিবেশ কী চাইছে সেটার দিকে নজর দেওয়া। আমি যখন ভারত জাতীয় দলে যোগ দেই, তখন কিছুই জানতাম না। ক্রিকেট বোর্ড এমন একজন কোচ চাইছিল, যে কি না তাদের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে। সব দলের ক্ষেত্রেই একই ব্যাপার। আপনার নেতৃত্বগুণ কেমন, আপনি কত সহজে ‘সেট’ হতে পারেন দলের সঙ্গে; এগুলো সময়ই বলে দেবে। একই সূত্রের মাধ্যমে আমি সেরা ক্রিকেটারগুলোকে পেয়েছি।

দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের হয়ে সংবাদ সম্মেলনে; Image Source: DD

আমি এটা মেনেই নিয়েছি যে আমার কোচিং দর্শন সবসময় কাজ করবে না। তবে আমি আশা ছাড়ছি না। আমি আশাবাদী, হয়তো কোনোদিন এগুলো কাজে দেবেই। আমার কোচিং ক্যারিয়ারে সফলতা  ও ব্যর্থতা দুটিই আছে। আমার কোচিংয়ে দল যেমন শিখরে উঠেছে, তেমনই তলানিতেও গিয়েছে। কোচ হতে হলে একটা জিনিস মাথায় রাখতেই হবে। হয় আপনাকে চাকরি হারিয়েছেন, অথবা চাকরি হারাতে  যাচ্ছেন।

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আপনি কোচিং পেশায় নিয়োজিত। কোন বিষয়টি আপনাকে এক্ষেত্রে প্রভাবিত করে?

আমি আসলে নিশ্চিত করে জানি না। আমি পাগল। আমি ভারত ভালোবাসি, আইপিএল ভালোবাসি। প্রতি বছর এখান থেকে আপনি অনেক কিছু শিখতে পারবেন। আইপিএল অসাধারণ একটা টুর্নামেন্ট। সে কারণেই আমি কোচিং; বিশেষ করে টি-টোয়েন্টির কোচিং পছন্দ করি, উপভোগ করি। কোচ হিসেবে এই ফরম্যাটে আপনি অনেক কাজ করতে পারবেন। কিন্তু টেস্ট দলের হেড কোচ হলে অনেক সময় ধরে আপনাকে দল নিয়ে কাজ করতে হবে। তাছাড়া টানা পাঁচদিন এই নিয়ে বসে থাকা।

দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ থাকাকালীন সময়ে কারস্টেন; Image Source: AFP

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কোচদের কাছ থেকে কী ধরনের চাহিদা থাকে?

এই ফরম্যাটে অধিনায়কের চেয়ে কোচ বেশি প্রাসঙ্গিক নয়, তবে দুজনেরই সমান দায়িত্ব। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের এই জিনিসটা আমাকে রোমাঞ্চিত করে। আমি মনে করি, এগুলো অধিনায়কের কাঁধ থেকে চাপ নামিয়ে দেয়। আর এক্ষেত্রে চাহিদা যা-ই থাকুক, আপনাকে সেটা সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় পূরণ করতে হবে। আপনি যদি আপনার কাজকে উপভোগ করেন, তাহলে করতেই হবে। এটা কোনো ব্যাপার না। কাজের সঙ্গে যে সব চাপ আমার উপরে আসে, আমি সেগুলো উপভোগ করি। দিন শেষে, আপনি যা করছেন সেটা দলের একজন নেতৃত্বস্থানীয় হিসেবেই করছেন যেন দলের বাকি সদস্যদের সাহায্য করা যায় এবং তারা মাঠে ভালোভাবে খেলতে পারে। এগুলো অনেক আনন্দেরও বটে।

টি-টোয়েন্টিতে কোচের প্রাসঙ্গিকতা কতটুকু?

আমার কাছে ‘ম্যান-ম্যানেজমেন্ট’ ব্যাপারটাই সবকিছু। কোচিংয়ের সবচেয়ে বড় কাজগুলো সম্ভবত টিম নিয়ে পরিকল্পনা, দল কিভাবে খেলতে চায় সেগুলো নিয়ে কাজ করা। তবে ক্রিকেট কোচিং প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। যদিও ঐতিহ্যগতভাবে বলতে গেলে বলা হয় অধিনায়কই দলের প্রধান এবং সেই পুরো জাহাজটা (দল) চালিয়ে নিয়ে যায়। সে কারণে সব সিদ্ধান্তও নিয়ে থাকে সে। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে একজন অধিনায়ক সব সিদ্ধান্ত একা নেয় না। হ্যাঁ, এগুলো সে করে। টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়ক মাঠে যায়, কিন্তু সঙ্গে নিয়ে যায় একটা পরিকল্পনা।

এগুলো নিয়ে অনেক আলাপ হয়। দল নির্বাচন, নতুন খেলোয়াড়কে দলে অন্তর্ভুক্তি, প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কীভাবে খেলতে চাই, কোন কন্ডিশনে কী ধরনের খেলোয়াড় আমরা ব্যবহার করতে চাই- সবকিছুই।

ফিল্ডিং অনুশীলন করাচ্ছেন কারস্টেন; Image Source: AP

টি-টোয়েন্টিতে একজন কোচের অধিনায়কের সঙ্গে ছাড়াও অনেক কাজ থাকে। তাকে কোচিং স্টাফদের সঙ্গে কাজ করতে হয়, দল তৈরি করতে হয়, স্কোয়াড পরিবর্তনসহ আরও অনেক কিছু। কিন্তু এগুলোর সবই একজন কোচ করে থাকেন মাঠের বাইরে থেকে। যখন একজন অধিনায়ক মাঠে নামেন, তার একটা পরিকল্পনা থাকে। সেই পরিকল্পনাটা হলো সে কীভাবে খেলবে, কী হবে না হবে সেগুলোর কৌশলগত দিক। বিশ্বের যেকোনো খেলার দিকে  যদি আপনি নজর রাখেন, টের পাবেন ম্যানেজার অথবা কোচ দলের উপর অনেক বড় অবদান রাখে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এই মুহূর্তে একই কাজ করছে। অনেক বেশি কাজ করে।

ফিচার ইমেজ- AFP

Related Articles