Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ইমরুল কায়েস: মিস্টার ক্রাইসিস ম্যান

গত ২২ জানুয়ারি, ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে ৭ রানে জিতেছিলো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ম্যাচশেষে সংবাদ সম্মেলনের পর ড্রেসিংরুমে ফিরছিলেন কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। হাঁটতে হাঁটতেই বললেন, ‘ভাই কি খবর?’ 

বললাম, “ক্যাপ্টেন, কালকে (২৩ জানুয়ারি) দল ঘোষণা করবে নিউজিল্যান্ড ট্যুরের।”

তথ্যটা শুনতেই ইমরুল বললেন,

‘আমাকে রাখবে কি না, জানি না। আপনার এটা মনে আছে তো, শেষ নিউজিল্যান্ড ট্যুরে কিন্তু ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রান আমার। আর নিউজিল্যান্ডে তো আমার সেঞ্চুরিও আছে।’

ইমরুলের তথ্য শতভাগ সঠিক। ২০১৭ নিউজিল্যান্ড সফরে তিন ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ১১৯ রান (গড় ৩৯.৬৬) করেছিলেন তিনি। ৬ রান কম করে তার পরই ছিলেন তামিম ইকবাল। ওয়ানডেতে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিটা (১০১) ইমরুল ক্রাইস্টচার্চে করেছিলেন, ২০১০ সালে।

Image Credit: Getty Images

ড্রেসিংরুমের খুব কাছে চলে এসেছেন ইমরুল। ড্রেসিংরুমে ঢোকার আগে দাঁড়িয়ে এক নিঃশ্বাসে যেন বলে গেলেন, রাখা না রাখা নির্বাচকদের কাজ।

‘তবে ভাই, সমস্যা কি, আপনি যদি কেবল দলে আসা-যাওয়ার মাঝে থাকেন, তাহলে ভালো কিছু করা কঠিন। আমার দলে আসতে হলে ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করতে হয়, দলে আসলেও প্রতিদিন রান করতে হবে। ২-১ ম্যাচ খারাপ হলেই বাদ দিয়ে দেয়। অবশ্য এভাবেই তো আমার ক্যারিয়ার কাটছে। তাই এখন আর ভাবি না অত।’

আগের রাতে দাঁড়িয়ে করা ইমরুলের আশঙ্কা রাত পোহাতেই বাস্তবতায় ধরা দিয়েছে। নিউজিল্যান্ড সফরের জন্য ঘোষিত বাংলাদেশের ১৫ সদস্যের ওয়ানডে দলে জায়গা হয়নি বাঁহাতি এই ওপেনারের। তামিমের সঙ্গী হিসেবে ওপেনার কোটায় দলে সুযোগ পেয়েছেন লিটন কুমার দাস ও সৌম্য সরকার।

২৩ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে ইমরুলকে বাদ দেয়ার বিষয়ে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু বলেছিলেন,

‘প্রেজেন্ট ফর্ম ও কন্ডিশন চিন্তা করে ওকে বাদ দেয়া হয়েছে। আমাদের বিশ্বকাপের জন্য ৩২ জনের যেই পুল আছে, তাদের মধ্যেই ও আছে। তিন ওয়ানডের জন্য যারা যাচ্ছে, তাদেরকেও দেখতে হবে। যারা এখানে থাকবে, তাদেরকেও প্রিপেয়ার করা হবে। কাউকে আড়াল করা হচ্ছে না। সামনে আয়ারল্যান্ড আছে। সাথে সাথে বিশ্বকাপ, সুতরাং প্রতিটা খেলোয়াড়কেই দেখভাল করা হবে।’

কিছুটা অদ্ভুত হলেও প্রধান নির্বাচকের ভাষায়, নিউজিল্যান্ডে না থাকলেও বিশ্বকাপ ভাবনায় নাকি রয়েছেন ইমরুল। মিনহাজুল আবেদীন নান্নু বলেছেন,

‘নিউজিল্যান্ড দলে সে না থাকলেও এমন নয় যে সে আমাদের বিশ্বকাপ দলে নেই। সে আমাদের ৩২ জনের পুলের মধ্যেই আছে।’

কিন্তু সংবাদ সম্মেলন শেষ হতেই সবার মুখে মুখে ফিরছিলো, ইমরুলের প্রতি অবিচার করা হলো। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ঈর্ষনীয় ব্যাটিংয়ের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে দুই ম্যাচে ব্যর্থ হওয়ায় শেষ ম্যাচে বাদ দেয়া হয়েছিলো তাকে। আর দুই ম্যাচের ব্যর্থতায় নির্বাচকরা বেমালুম ভুলে গেলেন এক সিরিজ আগে ইমরুলের অনবদ্য ব্যাটিং কীর্তি!

Image Credit: Dhaka Tribune/Md Manik

মিস্টার ক্রাইসিস ম্যান

এই তো, গত সেপ্টেম্বরে খুলনায় প্রস্তুতি ম্যাচ খেলছিলেন। দুবাই থেকে ডাক এলো। খুলনা-যশোর হয়ে সন্ধ্যায় ঢাকায়, রাতে আবার দুবাইয়ের ফ্লাইটে চড়ে বসলেন ইমরুল। বিস্ময়ের ঘোর কাটার আগেই সকালে দুবাই পৌঁছে দলের সঙ্গে আবারও দুই ঘন্টা ভ্রমণ করে যেতে হলো আবুধাবি। রশীদ খান পড়তে পারার দক্ষতার কারণে দীর্ঘ ভ্রমণক্লান্তিকে পাশ কাটিয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে একাদশে রাখা হলো ইমরুলকে। ব্যাটিংয়ে নামেন ছয় নম্বরে, ইনিংসের ১৯তম ওভারে। ততক্ষণে ৮১ রানে বাংলাদেশের চার উইকেট নেই। ৬ রানের ব্যবধানে মুশফিকও বিদায় নেন।

তারপর মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ম্যাচ বাঁচানো ১২৮ রানের জুটি গড়েন ইমরুল। আবুধাবির তপ্ত মরুর বুকে ৮৯ বলে ৭২ রান করে অপরাজিত থাকেন এই বাঁহাতি। পরে মুস্তাফিজের বোলিংয়ে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতে নেয় ৩ রানে। তবে ত্রাতার ঘরে ইমরুলের নামটাই বসাতে হবে। রশীদ খানকে সামলানোর কাজটা ভালোভাবেই শেষ করেছিলেন তিনি। ম্যাচে ৪৬ রান দিয়ে এক উইকেট নিয়েছিলেন রশিদ, তাও ইমরুল ব্যাটিংয়ে আসার আগে।

অক্টোবর-নভেম্বর-ডিসেম্বরে জিম্বাবুয়ে-ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে হোম সিরিজ। সাকিব-তামিম ইনজুরিতে। দুই সিনিয়র ক্রিকেটারের অভাব মেটানোর গুরুভার দলে থাকা অভিজ্ঞদের উপর। ওপেনিংয়ে সিনিয়র হিসেবে ইমরুলের কাঁধেই বড় দায়িত্ব। ৩১ বছর বয়সী এই ওপেনার যেভাবে সাড়া দিলেন, তা ছিল অবিশ্বাস্য। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচে দু’টি সেঞ্চুরি। স্কোরগুলো এমন: ১৪৪, ৯০, ১১৫। তিন ম্যাচে ৩৪৯ রান! ঈর্ষনীয় বললেও কম বলা হবে।

Image Credit: STR/AFP/Getty Images

বাংলাদেশের হয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে সর্বোচ্চ রানের কীর্তি গড়লেন ইমরুল। ক্যারিবিয়ানদের বিরুদ্ধে দুই ম্যাচে যথাক্রমে ৪ এবং ০ রানে আউট হতেই তৃতীয় ম্যাচে একাদশ থেকে বাদ তিনি। দুই ম্যাচ আগেই যার ব্যাটে ছিল রানের জোয়ার, দুই ম্যাচ ব্যর্থ হওয়াতেই ছেঁটে ফেলা হয় তাকে, যা কারো চোখেই শোভন মনে হয়নি। বাংলাদেশের যখনই প্রয়োজন হয়েছে, ব্যাট হাতে সার্ভিস দিয়েছেন ইমরুল। কিন্তু প্রয়োজন ফুরাতেই মিস্টার ক্রাইসিস ম্যানকে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে অবহেলায়।

আসা-যাওয়ার মাঝে থাকা ক্যারিয়ারেই বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে তিনটি, ওয়ানডেতে চারটি সেঞ্চুরি করেছেন ইমরুল। ৭৮ ওয়ানডেতে তার সংগ্রহ ২,৪৩৪ রান, গড় ৩২.০২। হালের এনামুল হক বিজয় (গড় ৩০.৫২), সাব্বির রহমান (গড় ২৪.৫১), লিটন দাসদের (গড় ২১.৯৫) চেয়েও ওয়ানডেতে ভালো ব্যাটিং গড় তার। তরুণদের মধ্যে সৌম্য (গড় ৩৫.৯৪) শুধু ইমরুলের চেয়ে এগিয়ে।

কেন বারবার ইমরুলকে ছুঁড়ে ফেলা হয়?

আহা, কী চোখ জুড়ানো কভার ড্রাইভ। পয়েন্টে কত সাবলীল কাট। ডাউন দ্য উইকেট এসে উড়িয়ে মারা। পুল করে মিড উইকেটের উপর দিয়ে বল পাঠানো। সৌম্য সরকারের ব্যাটিংয়ে এমন আরও অনেক নান্দনিকতা রয়েছে।

উইকেটে নেমেই প্রথম বল থেকে বোলারকে চার্জ করা। বোলার পায়ের উপর বল ফেলেছেন, পরের দৃশ্যটা হলো চোখের পলকে অসাধারণ ফ্লিক হবে, বল কিছুটা উঠলে পা তুলে স্কয়ার লেগের উপর দিয়ে ছক্কা। লিটন দাসের ব্যাটিং বাংলাদেশকে ইনিংসের শুরুতে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে আরেকটা ছবি উপহার দিয়েছে।

লিটন-সৌম্য; Image Credit: Getty Images

লিটন-সৌম্যদের মতো নান্দনিকতা, সৌন্দর্য্য হয়তো ইমরুলের ব্যাটে নেই। তবে কার্যকারিতার জায়গায়, দ্রুত রান তোলার দিক থেকে, ক্রিকেটীয় শটস খেলার দিক থেকে, অর্থাৎ ২২ গজে এই দুই তরুণের চেয়ে কিছুতেই পিছিয়ে নন অভিজ্ঞ এই ওপেনার। তারপরও কেন বারবার বাদ পড়েন ইমরুল?

এই প্রশ্ন এখন অনেকের মনেই খেলা করছে। প্রশ্নটির উত্তরের জন্য ভিন্ন আঙ্গিকের বিশ্লেষণ রয়েছে, তবে বিশ্লেষণ শতভাগ বাস্তবসম্মত।

বাংলাদেশ দলে ওপেনিংয়ের অটোমেটিক চয়েস তামিম ইকবাল। তিন ফরম্যাটেই তার ব্যাটে বহু সাফল্যের ভিত রচিত হয়েছে। কিন্তু ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে বদলে গেছে তামিমের ব্যাটিংয়ের ধরন। এখন আর আগের মতো আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন না তিনি, বরং ইনিংস বিনির্মাণে এক প্রান্ত আগলে খেলেন শুরু থেকে। মানে দলের ইনিংস গাইড করার দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামেন তামিম।

তাই আগের মতো স্ট্রোক-প্লে ব্যাটসম্যানের ছবিতে দেখা যায় না তাকে। অভিজ্ঞ এই ওপেনার যখন দলের দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত থাকেন, তখন অপর প্রান্তে বাংলাদেশের আরেকজন ওপেনার দরকার, যিনি উইকেটে আক্রমণের কাজটা করবেন। পাওয়ার প্লে’র সঠিক ব্যবহার করতে স্ট্রোক খেলবেন। একশ’র বেশি স্ট্রাইকরেটে রান তুলবেন। তামিমের ধরে খেলার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আক্রমণের দায়িত্বটা ন্যস্ত থাকে আরেক ওপেনারের উপর। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ওয়ানডেগুলোতে চোখ রাখলেই এই চিত্র পরিষ্কার হয়ে যাবে।

একসাথে ব্যাটিংয়ে নামছেন তামিম-ইমরুল; Image Credit: Getty Images

গত জুলাইয়ে ক্যারিবিয়ান সফরে প্রথম ওয়ানডেতে পুরো ৫০ ওভার ব্যাটিং করেছিলেন তামিম, ১৬০ বলে করেছিলেন ১৩০ রান। তৃতীয় ম্যাচে ১০১ রান করে আউট হয়েছিলেন ৩৯তম ওভারে। একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে গত ডিসেম্বরে তৃতীয় ওয়ানডেতে প্রায় ৩৯ ওভার ব্যাটিং করে অপরাজিত ছিলেন তামিম। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে এই বাঁহাতি ওপেনারের ব্যাটিংয়ে চোখ রাখলে দেখা যায়, বিশ্বকাপ শেষে সাতটি সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। যার মধ্যে দু’টি সেঞ্চুরিতে শুধু স্ট্রাইক রেট ছিল ১০০.০০। বিশ্বকাপের পর যত ওয়ানডে খেলেছেন তামিম, তাতেও শুধু এই দুই ইনিংসেই তার স্ট্রাইক রেট ১০০ ছাড়িয়েছিলো। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয়, ২০১৬ সালে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচে যা দেখা গিয়েছিলো।

গুরুভার পালনে নিয়োজিত তামিমের কারণে যতটুকু ঘাটতি হয়, সেটা পুষিয়ে দেয়ার দায়িত্ব থাকে লিটন-সৌম্যদের, বিশেষ করে ইনিংসের শুরুতে। আর সৌম্য-লিটনরাও সহজাতভাবে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে পছন্দ করেন। সে তুলনায় পিছিয়ে থাকেন ইমরুল, কারণ তামিমের মতোই উইকেটে সেট হতে তার কিছুটা সময় লাগে। পরে কভারও করতে পারেন। কিন্তু গিয়েই আক্রমণ করার কাজটা তিনি কমই করেন। তামিম-ইমরুল জুটি হলে ওপেনাররা একই ঘরনার হয়ে যান। তাই সুযোগ পেলেই, তথা লিটন-সৌম্যরা ছন্দে থাকলেই কোপ পড়ে ইমরুলের উপর। সেখানে তার যত ভালো পারফরম্যান্সই থাকুক না কেন, টিম কম্বিনেশন কিংবা টিম স্ট্রাট্রেজির অংশ হিসেবেই ইমরুলের জায়গা হয় না দলে।

সেদিন রাতের আলাপচারিতার শেষটা টেনেছিলেন ইমরুলই। বলেছিলেন,

‘আমি এখন সবসময় প্রস্তুত থাকি। জানি বাদ পড়বো, আবার হয়তো দলের প্রয়োজনে ডাক আসতে পারে। তাই বাদ পড়া নিয়ে আর অত ভাবি না। বরং সুযোগ পেলেই যেন কাজে লাগাতে পারি, সেটাই চেষ্টা করি।’

কয়েক মাস আগেও গোটা বাংলাদেশের আলোচনায় ছিল জাতীয় দলে চার ওপেনারের উপস্থিতি, যাকে ‘মধুর সমস্যা’ বলেই অ্যাখ্যায়িত করা হয়েছিলো। ইমরুলকে ছেঁটে ফেলার মধ্য দিয়ে ইতি ঘটলো তৃপ্তির আস্বাদ এনে দেয়া মধুর সমস্যার। তবে যেভাবে বাদ পড়লেন ইমরুল, সেটি যেকোনো ক্রিকেটারের জন্যই আশঙ্কার।

This article is in Bangla language. It is about Imrul Kayes, the Bangladesh Men's National Cricket Team Opener, who has been dropped from the squad announced for New Zealand tour. It's an analysis of the possible reason for his frequent inclusion and exclusion. 

Featured Image: Getty Images

Related Articles