Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ইংল্যান্ডের মাটিতে ভারতের ইংল্যান্ড বধ

আগামী পহেলা আগস্ট ভারত বনাম ইংল্যান্ডের মধ্যকার পাঁচ ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্ট মাঠে গড়াবে। পাঁচ ম্যাচের এই টেস্ট সিরিজ অনুষ্ঠিত হবে ইংল্যান্ডের মাটিতে। ইংল্যান্ডের মাটিতে ভারতের রেকর্ড তাদের পক্ষে কথা বলে না। এখন পর্যন্ত ৫৭টি টেস্ট ম্যাচে ছয়টি জয়ের বিপরীতে ৩০ ম্যাচে পরাজয়ের স্বাদ পেয়েছে উপমহাদেশের অন্যতম শক্তিশালী দল ভারত। ইংল্যান্ডের মাটিতে ভারতের স্মৃতি খুব একটা সুখকর না হলেও বেশ কয়েকবার স্বাগতিকদের বিপক্ষে শেষ হাসি হেসেছিলো ভারত। ইংল্যান্ডের মাটিতে ভারতের ঐতিহাসিক টেস্ট ম্যাচ নিয়ে আজকের লেখা।

দ্য ওভাল, ১৯৭১

১৯৭১ সালের ১৯ আগস্ট, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লন্ডনের কেনিংটন ওভালে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে মাঠে নামার আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের মাটিতে কোনো টেস্ট জয়ের স্বাদ পায়নি ভারত। ১৯৩২ সাল থেকে তখন পর্যন্ত ১৯টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ১৫টি টেস্টে পরাজিত হয়েছিলো ভারত। চারটি ড্রয়ের মধ্যে দুইটি ড্র করেছিলো ঐ সিরিজের প্রথম দুই টেস্টে।

ইংল্যান্ডের মাটিতে পূর্বের রেকর্ড হতাশাজনক হলেও এই সিরিজে বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলো ভারত। সুনীল গাভাস্কার, অজিত ওয়াড়েকারদের নেতৃত্বে গড়া ব্যাটিং লাইনআপ এবং বিসান বেদি ও চন্দ্রশেখরদের নিয়ে গড়া বোলিং লাইনআপ নিয়ে ইংল্যান্ডের সাথে সমানে সমানে লড়াই করেছিলো ভারত।
ইংল্যান্ডের অন্যান্য মাঠের তুলনায় কেনিংটন ওভালে স্পিনাররা বাড়তি সুবিধা পায়। তাই কেনিংটন ওভালে টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং করতে চেয়েছিল ভারত। যাতে ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে চন্দ্রশেখর, বেদিরা পিচ থেকে বাড়তি সুবিধা আদায় করে নিতে পারেন।

ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথম টেস্ট জয়ের নায়ক ভগবত চন্দ্রশেখর এবং অধিনায়ক অজিত ওয়াড়েকার; Image Source: Getty Images

১৯৭১ সালের সালের ১৯ আগস্ট, তখন ইংলিশ ক্রিকেট মৌসুমের দ্বিতীয় ভাগ। কেনিংটন ওভালে টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় ইংল্যান্ড। ব্যাট করতে নেমে জন জেমসনের ৮২ রান, অ্যালান নটের ৯০ রান এবং রিচার্ড হাটনের ৮১ রানের উপর ভর করে প্রথমদিনে সবক’টি উইকেট হারিয়ে ৩৫৫ রান সংগ্রহ করে ইংল্যান্ড। প্রথম ইনিংসে ভারতীয় স্পিনারদেরকে ভালোভাবেই প্রতিহত করেছিল ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। বাঁহাতি স্পিনার বেদি ১২০ রান খরচায় দুই উইকেট শিকার করেছিলেন।

ম্যাচের দ্বিতীয় দিন বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হলে ভারত তাদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নামে তৃতীয় দিনে। দিনশেষে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় সাত উইকেটে ২৩৪ রান। চতুর্থ দিন সকালে সবকটি উইকেট হারানোর আগে প্রথম ইনিংসে ২৮৪ রান সংগ্রহ করে ভারত। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৯ রান করেন ফারুখ ইঞ্জিনিয়ার এবং দিলিপ সারদেসাই ৫৪ রানে ইনিংস খেলেছিলেন।

প্রথম ইনিংসে ৭১ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ভগবত চন্দ্রশেখরের বোলিং তোপের মুখে পড়ে মাত্র ১০১ রানে গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড। চন্দ্রশেখর বোলিং আক্রমণে এসে নিজের প্রথম ওভারেই প্রথম ইনিংসে অর্ধশতক হাঁকানো জেমসনকে রান আউট করেন। তিনি ১৮.১ ওভারে ৩৮ রানের বিনিময়ে ছয় উইকেট শিকার করলে ইংল্যান্ড ৪৫.১ ওভারে ১০১ রানে সবক’টি উইকেট হারায়। যার ফলে জয়ের জন্য ম্যাচের বাকি আট ঘন্টায় ১৭৩ রান প্রয়োজন ছিলো ভারতের।

জয়সূচক রান আসে সৈয়দ আবিদ আলীর ব্যাট থেকে; Image Source: Getty Images

জয়ের লক্ষ্যে চতুর্থ দিনে ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই সুনীল গাভাস্কারের উইকেট হারায় ভারত। চতুর্থ দিনশেষে অধিনায়ক অজিত ওয়াড়েকারের অপরাজিত ৪৫ রানের উপর ভর করে জয়ের পথেই থাকে ভারত। দিনশেষে ভারতের সংগ্রহ ছিলো দুই উইকেটে ৭৬ রান। পরদিন জয়ের জন্য বাকি ৯৭ রান তুলতে মাঠে নামে ভারত।

দিনের শুরুতেই হোঁচট খায় সফরকারীরা। আগের দিনের ৪৫ রানের সাথে কোনো রান যোগ না করেই রান আউটের শিকার হন ওয়াড়েকার। দলীয় ১২৪ রানে সারদেসাই ৪০ রান করে এবং ১৩০ রানের মাথায় মাত্র এক রান করে সোলকার সাজঘরে ফিরে গেলে ম্যাচে ফিরে ইংল্যান্ডের। সেখান থেকে গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ ৩৩ রান এবং ফারুখ ইঞ্জিনিয়ার অপরাজিত ২৮ রান করে ভারতের জয় নিশ্চিত করেন। সৈয়দ আবিদ আলী জয়সূচক চার হাঁকিয়ে চার উইকেটের জয় এনে দেন।

ভারতের জয় নিশ্চিত হওয়ার পর দৌড়ে মাঠে প্রবেশ করছেন সমর্থকরা; Image Source: Getty Images

এই জয়ের মধ্য দিয়ে ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথম টেস্ট এবং সিরিজ জয়ের কীর্তি গড়ে ভারত। ম্যাচের চতুর্থ দিনশেষে যখন ভারত ভালো অবস্থানে ছিলো তখনি গ্যালারিতে ভারতীয় দর্শকদের আনাগোনা বেড়ে যায়। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দেশে ফেরার পর বোম্বের সান্তা ক্রুজ এয়ারপোর্টে ভারতীয় ক্রিকেটারদের রাজকীয় সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ঐতিহাসিক জয়ের পর ক্রিকেটারদের অভিবাদন জানানোর জন্য হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় ভিড় করেছিলো।

দ্য ওভাল, ১৯৭৯

চার ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে ইনিংস ও ৮৩ রানের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলো ভারত। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় টেস্ট ড্র হওয়ার পর ১৯৭৯ সালের ৩০শে আগস্ট সিরিজ বাঁচানোর লক্ষ্যে কেনিংটন ওভালে চতুর্থ টেস্টে মাঠে নামে ভারত। ওভালে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় ইংল্যান্ড। গ্রাহাম গুছ এবং পিটার উইলির অর্ধশতকের উপর ভর করে প্রথম ইনিংসে ৩০৫ রান সংগ্রহ করে ইংল্যান্ড। জবাবে ভারত নিজেদের প্রথম ইনিংসে মাত্র ২০২ রানে অল আউট হয়ে যায়। স্যার ইয়ান বোথাম চার উইকেট এবং উইলিস ও হেন্ড্রিক তিনটি করে উইকেট শিকার করে ইংল্যান্ডকে প্রথম ইনিংসে ১০৩ রানের লিড এনে দেন।

দ্বিশতক হাঁকানোর পর সুনীল গাভাস্কারের পদধূলি নিচ্ছে একজন ভক্ত; Image Source: PA Photos

প্রথম ইনিংসে ১০৩ রানে এগিয়ে থেকে ব্যাট করতে নেমে জিওফ বয়কটের ১২৫ রানের উপর ভর করে আট উইকেটে ৩৩৪ রান সংগ্রহ করে ইনিংস ঘোষণা করে ইংল্যান্ড। যার ফলে জয়ের জন্য ভারতের সামনে লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ৪৩৮ রানের। টেস্ট ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে যা অতিক্রম করা প্রায় অসম্ভব। এর আগে কিংবা এখন পর্যন্ত কোনো ৪৩৮ রান অতিক্রম করে টেস্ট ম্যাচ জিতেনি। ৪৩৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে চতুর্থ দিনশেষে বিনা উইকেটে ৭৬ রান সংগ্রহ করে ভারত।

ম্যাচের পঞ্চম দিনেও গাভাস্কার-চৌহানের উদ্বোধনী উইকেটের জুটি ভারতকে জয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিল। চেতান চৌহান ২৬৩ বলে ৮০ রান করে সাজঘরে ফিরে গেলে ২১৩ রানের ওপেনিং জুটি ভাঙে। ভারতের অধিনায়ক শ্রীনিবাস ভেঙ্কটরাঘবন বলেন, “চতুর্থ ইনিংস যখন শুরু হয়েছে, তখন আমরা জয়ের ব্যাপারে ভাবিনি। কিন্তু প্রথম উইকেট জুটিতে দুইশ রান যোগ হওয়ার পর আমরা জানতাম একটি সুযোগ রয়েছে।

২২১ রানের ইনিংস খেলার পথে গাভাস্কারের একটি সুইপ শট; Image Source: Getty Images

শেষদিনের চা-বিরতির সময় ভারতের সংগ্রহ ছিলো এক উইকেটে ৩০৪ রান। জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিলো মাত্র ১৩৪ রান, হাতে পর্যাপ্ত সময় এবং উইকেট ছিলো। তখনি নড়েচড়ে বসে ক্রিকেট বিশ্ব। সুনীল গাভাস্কার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংস খেলে দ্বিশতক। ইংলিশ বোলারদের কোনো সুযোগ না দিয়ে ভারতকে অবিশ্বাস্য জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান তিনি।

শেষপর্যন্ত ফলাফল ভারতের অনুকূলে আসেনি। শেষ ১২ ওভারে জয়ের জন্য আট উইকেট হাতে রেখে ৭২ রান প্রয়োজন ছিলো ভারতের। দ্রুত রান তোলার তাগিদে দলীয় ৩৬৬ রানের মাথায় দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসাবে দিলিপ ভেংসরকার সাজঘরে ফিরে গেলে ক্রিজে আসেন কপিল দেব। কিন্তু রান তোলার আগেই পিটার উইলির শিকারে পরিণত হন।

দলীয় ৩৮৯ রানের মাথায় ৪৪৩ বলে ২১টি চার মেরে ২২১ রান করে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসাবে সুনীল গাভাস্কার সাজঘরে ফিরে গেলে হোঁচট খায় ভারত। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকা তারা। ভারত আট উইকেটে ৪২৯ রান করার পর দুই অধিনায়ক ড্র মেনে নেন। দিনের শেষ বলে ভারতের নয় রান এবং ইংল্যান্ডের দুই উইকেট প্রয়োজন ছিলো। তাই দুই অধিনায়ক ড্র মেনে নেন। সুনীল গাভাস্কার দুর্দান্ত ব্যাটিং করে সিরিজ বাঁচাতে না পারলেও ম্যাচ বাঁচান।

ম্যাচ বাঁচানো দ্বিশতক হাঁকানোর পর ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন সুনীল গাভাস্কার; Image Source: Getty Images

লর্ডস, লন্ডন, ১৯৮৬

কপিল দেব এবং লর্ডস, দিলিপ ভেংসরকার এবং লর্ডস। এই দুটি বন্ধন বরাবর-ই স্পেশাল। ১৯৮৩ সালে লর্ডসে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ঘরে তুলেছিল কপিল দেবের ভারত। এর তিনবছর পর তার নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো লর্ডসে টেস্ট জিতেছিল ভারত। দিলিপ ভেংসরকার একবার বলেছিলেন, তিনি যদি পারতেন, তাহলে যেখানে যেতেন সবখানে লর্ডসের পিচ সাথে করে নিয়ে যেতেন। ভেংসরকারের এরকম বলাটাও খুব একটা বাড়াবাড়ি নয়।

লর্ডসে একমাত্র বিদেশি ব্যাটসম্যান হিসাবে তার তিনটি শতক রয়েছে। ডন ব্র্যাডম্যান, ভিভ রিচার্ডস, গ্যারি সোবার্সদের মতো ব্যাটসম্যানরাও এই কীর্তি গড়তে পারেননি। তিনি ১৯৭৯ সালে লর্ডসে ম্যাচ বাঁচানো শতক হাঁকিয়েছিলেন। এরপর ১৯৮২ সালে এসেও শতক হাঁকিয়েছিলেন তিনি। ১৯৮৬ সালে লর্ডসে ভারতের প্রথম জয় পাওয়া ম্যাচেও তিনি শতক হাঁকান।

শুধুমাত্র লর্ডসেই না, দিলিপ ভেংসরকার ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত বিশ্বক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন। সেইসময় ২৬টি টেস্ট ম্যাচ খেলে নয়টি করে শতক এবং অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৭৫.৩১ ব্যাটিং গড়ে ২,১৮৪ রান করেছিলেন তিনি। ১৯৮৬ সালের ৫ জুন, লর্ডসে টসে জিতে ইংল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় ভারত। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে গ্রাহাম গুছের ১১৪ রানের ইনিংসের উপর ভর করে ইংল্যান্ড ২৯৪ রান সংগ্রহ করে। ভারতের হয়ে ৬৪ রানে পাঁচ উইকেট শিকার করেন চেতান শর্মা। জবাবে দিলিপ ভেংসরকারের অপরাজিত ১২৬ রান এবং মহিন্দর অমরনাথের ৬৯ রানের উপর ভর করে ৩৪১ রান সংগ্রহ করে ভারত।

মাত্র ১০ বলে ২৩ রানের ইনিংস খেলার পথে কপিল দেবের একটি শট; Image Source: Getty Images

প্রথম ইনিংসে ৪৭ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে কপিল দেবের বোলিং তোপের মুখে পড়ে ইংল্যান্ড। মাত্র একরানের ব্যবধানে তিনি টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফেরান। শেষপর্যন্ত ইংল্যান্ড তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৮০ রানে গুটিয়ে গেলে জয়ের জন্য ভারতের প্রয়োজন পড়ে ১৩৪ রানের। দিলিপ ভেংসরকারের ৩৩ রান এবং অধিনায়ক কপিল দেবের মাত্র ১০ বলে চারটি চার এবং একটি ছয়ের সাহায্যে সাজানো ২৩ রানের ইনিংসের উপর ভর করে পাঁচ উইকেট হাতে রেখে লর্ডসে নিজেদের প্রথম টেস্ট জয়ের কীর্তি গড়ে ভারত।

তৎকালীন বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ২৭৯ রানের বড় ব্যবধানে পরাজিত করে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ২-০ তে জিতে নিয়েছিল।

হেডিংলি, ২০০২

১৯৮৬ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জয়ের পর প্রায় ১৬ বছর ইংল্যান্ডের মাটিতে কোনো টেস্ট ম্যাচ জিতেনি ভারত। ২০০২ সালে হেডিংলিতে ১৬ বছর পর ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জয়ের স্বাদ পেয়েছিলো ভারত। এই জয়ের পর থেকেই ক্রিকেট বিশ্বে নিজেদের শক্ত অবস্থান দাঁড় করিয়েছিল ভারত। স্বাগতিক পেসারদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার জন্য হেডিংলিতে সবুজ উইকেট তৈরি করা হয়েছিলো। এমন উইকেটে ভারতের পরিকল্পনা ছিলো টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করে স্কোরবোর্ডে ভালো সংগ্রহ জমা করা।

অতঃপর চতুর্থ ইনিংসে দুই স্পিনারকে দুই প্রান্ত থেকে আক্রমণে এনে ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের নাস্তানাবুদ করা। অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন। সবকিছু ভারতের পরিকল্পনা অনুযায়ী হচ্ছিলো। ব্যাটসম্যানরা স্কোরবোর্ডে পাহাড়সম রান জমা করে এবং বোলাররা ২০ উইকেট তুলে নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন।

২০০২ সালের ২২ আগস্ট, চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ১-০ তে পিছিয়ে থেকে হেডিংলিতে তৃতীয় টেস্টে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। শুরুতে শেহওয়াগের উইকেট হারালেও রাহুল দ্রাবিড়ের ১৪৮, শচীন টেন্ডুলকারের ১৯৩ এবং সৌরভ গাঙ্গুলীর ১২৮ রানের উপর ভর করে প্রথম ইনিংসে আট উইকেটে ৬২৮ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে ভারত।

জবাবে ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ২৭৩ রানে সবক’টি উইকেট হারিয়ে ফলো-অনে পড়ে। ফলো-অনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে অধিনায়ক নাসের হুসাইনের ১১০ রানের ইনিংসের সত্ত্বেও ইংল্যান্ড ৩০৯ রানে গুটিয়ে গিয়ে ইনিংস ও ৪৬ রানের ব্যবধানে পরাজিত হয়। ম্যাচে ভারতের দুই স্পিনার অনিল কুম্বলে এবং হারভাজন সিং ১১ উইকেট শিকার করেছিলেন।

১৬ বছর পর ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জয়ের পর উদযাপন করছেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা; Image Source: Espncricinfo Ltd

ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট ম্যাচের প্রায় প্রতিটা সেশন নিজেদের করে নিয়ে ইনিংস ব্যবধানে জেতার পর স্বাভাবিকভাবে ভারতের আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল। বিদেশের মাটিতেও যে তারা ভালো খেলতে পারে, সেই ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস কাজ করেছিল। এরপর থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বিদেশের মাটিতে ৪৫টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ১৮টি টেস্ট ম্যাচে জয়লাভ করেছিলো ভারত।

ট্রেন্ট ব্রিজ, ২০০৭

৫ বছর আগে লিডসে পেস সহায়ক সবুজ উইকেটে প্রথমে ব্যাট করে পাহাড়সম রান সংগ্রহ করে ইংল্যান্ডকে ইনিংস ব্যবধানে পরাজিত করেছিলো ভারত। ৫ বছর পর ট্রেন্ট ব্রিজে প্রায় একই অবস্থায় রাহুল দ্রাবিড়ের ভারত ইংল্যান্ডকে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান। ট্রেন্ট ব্রিজের পেস সহায়ক পিচ কাজে লাগানোর জন্য দ্রাবিড়ের হাতে ছিলো জহির খান, আরপি সিং এবং শ্রীশান্তের মতো পেসাররা ছিলো। ভারতীয় পেসাররা অধিনায়ককে হতাশ করেননি।

২০০৭ সালের ২৭ জুলাই ট্রেন্ট ব্রিজে তিন ম্যাচ টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে টসে জিতে ইংল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় ভারত। ব্যাট করতে নেমে জহির খান এবং অনিল কুম্বলের তোপের মুখে পড়ে ৬৫.৩ ওভারে মাত্র ১৯৮ রানে গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড। ভারতের হয়ে জহির খান চারটি এবং কুম্বলে তিনটি উইকেট শিকার করেন। পেস সহায়ক ট্রেন্ট ব্রিজের পিচে চাইলে যে স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাটও করা যায়, সেটা ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা করে দেখিয়েছিলেন। দিনেশ কার্তিক, ওয়াসিম জাফর, শচিন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলি এবং ভিভিএস লক্ষ্মণের অর্ধশতকের উপর ভর করে ভারত প্রথম ইনিংসে ৪৮১ রান সংগ্রহ করে।

ট্রেন্ট ব্রিজে জহির খান নয় উইকেট শিকার করে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন; Image Source: Getty Images

প্রথম ইনিংসে ২৮৩ রানে পিছিয়ে থেকে ব্যাট করতে নেমে অধিনায়ক মাইকেল ভনের ১২৪ রানের ইনিংসের উপর ভর করে একপর্যায়ে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ছিলো তিন উইকেটে ২৮৭ রান। তারপর মাত্র ৬৮ রান যোগ করতেই শেষ সাত উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। জহির খান পাঁচ উইকেট শিকার করে ইংল্যান্ডের লিড ৭২ রানের বেশি হতে দেননি।

ইংল্যান্ডের দেওয়া ৭৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে ৪৭ রান যোগ করেন কার্তিক এবং জাফর। এরপর দ্রুত তিন উইকেট পড়ে গেলেও ভারতীয় শিবিরের পরিবেশ ফুরফুরে ছিলো। শেষপর্যন্ত সাত উইকেটে ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্ট জিতেছিল ভারত। সিরিজের শেষ টেস্ট ড্র হলে ১-০ তে সিরিজ জেতে ভারত।

ফিচার ইমেজ : Getty Images

Related Articles