ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল এখনও স্মৃতির পাতায় রঙিন হয়ে আছে। সেদিন সুপার ওভারের পরও রানের ব্যবধানে জয়ী দল নির্ধারণ করা না গেলে বাউন্ডারি সংখ্যা দিয়ে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করে হয়েছিল ইংল্যান্ডকে। স্বপ্নভঙ্গ হয় নিউ জিল্যান্ডের। এরপর সুপার ওভার নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়, যার ফলে নিয়ম পরিবর্তন হয় সুপার ওভারের। নতুন নিয়মে প্রথম সুপার ওভার খেলে পাঞ্জাব এবং মুম্বাই, যা আইপিএলে এই সপ্তাহের অন্যতম ঘটনা। রোমাঞ্চকর এই ম্যাচে শেষ হাসি হেসেছিল পাঞ্জাব। এছাড়াও আইপিএলের গত সপ্তাহে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনা দিয়ে শুরু করা যাক সপ্তাহান্তের খেরোখাতা।
১.
টসে জেতা মানে ম্যাচের শুরুতেই প্রতিপক্ষের থেকে এক ধাপ এগিয়ে থাকা - এমনটাই প্রচলিত ক্রিকেটে। তবে এইবারের আইপিএলে ঘটছে ঠিক তার উল্টো চিত্র। অধিনায়কেরা আগে ব্যাটিং করবেন নাকি ফিল্ডিং, এটা নিয়েই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন। আসরের প্রথম ৩০ ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করা দল জয় পায় ২১ ম্যাচে, ২ ম্যাচ টাই; আর রান তাড়ায় জয়ের সংখ্যা মাত্র সাতটি।
এই পরিসংখ্যানের ঠিক উল্টোদিক দেখা গেছে ৫ম সপ্তাহে। প্রথমে ব্যাট করে কোনো দলই জিততে পারেনি। টস ভাগ্য এবং ম্যাচের ফলাফলেও বড় ব্যবধান তৈরি হয়েছে। প্রথম ৪১ ম্যাচের মধ্যে টসে জেতা দল ম্যাচ জিতেছে মাত্র ১৩ বার।
২.
ইনজুরির কারণে আসরের প্রথম পাঁচ ম্যাচ খেলতে পারেননি দক্ষিণ আফ্রিকার অলরাউন্ডার ক্রিস মরিস। ইনজুরি কাটিয়ে বেঙ্গালুরুর একাদশে ফেরার পরই বেঙ্গালুরুর বোলিং অ্যাটাকের পারফরম্যান্স খোলনলচে বদলে গেছে। আসরের প্রথম পাঁচ ম্যাচে বেঙ্গালুরু ৯.১৩ ইকোনমি রেটে এবং ৩২.৫ বোলিং গড়ে ২৮ উইকেট শিকার করেছে। মরিস দলে আসার পর পাঁচ ম্যাচে মাত্র ৬.৮২ ইকোনমি রেটে এবং ২০.৭ বোলিং গড়ে প্রতিপক্ষের ৩৩ উইকেট তুলে নিয়েছে বেঙ্গালুরু।
৩.
চলতি আইপিএলে দুর্দান্ত ব্যাটিং করছেন শিখর ধাওয়ান, বিশেষ করে গত সপ্তাহে। তিনি আইপিএলের ইতিহাসে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসাবে পরপর দুই ইনিংসে শতক হাঁকিয়েছেন। মুম্বাইয়ের বিপক্ষে ৬৯* রানের ইনিংস খেলার পর রাজস্থানের বিপক্ষে ৫৭, চেন্নাইয়ের বিপক্ষে ১০১* এবং পাঞ্জাবের বিপক্ষে ১০৬* রানের ইনিংস খেলেন। এই চার ম্যাচে তিনি মোট ৩৩৩ রান করেন একবার আউট হয়ে। আইপিএলের ইতিহাসে টানা চার ম্যাচে ধাওয়ানের চেয়ে বেশি রান করেছেন শুধুমাত্র কোহলি৷ তিনি ২০১৬ সালে চার ম্যাচে ৩৫১ রান করেছিলেন।
শিখর ধাওয়ান আইপিএলের প্রতিটি আসরেই ধারাবাহিকভাবে রান করে যাচ্ছেন। মোট ১৩ আসরের মধ্যে ১১টি আসরেই তিনি ৩০০+ রান সংগ্রহ করেছেন। এইবারের আসরে তার ব্যাটিং গড় এবং স্ট্রাইকরেট অন্য যেকোনো আসরের চেয়ে বেশি।
৪.
পেসারদের পাশাপাশি দিল্লির দুই স্পিনার রবিচন্দ্রন আশ্বিন এবং অক্ষর প্যাটেলও দুর্দান্ত বোলিং করে যাচ্ছেন। তারা দুইজনেই পাওয়ারপ্লে'তে অসাধারণ বোলিং করছেন। এই দুইজন পাওয়ারপ্লেতে ১৫ ওভার বল করে ১০ উইকেট শিকার করেছেন মাত্র ৯.০০ স্ট্রাইকরেটে৷ আইপিএলের ইতিহাসে কোনো দলের পক্ষে এক আসরে স্পিনারদের এটিই সর্বনিম্ন স্ট্রাইকরেট।
৫.
পাঞ্জাবের দুই ওপেনারের ভালো শুরুর পর মিডল ওভারে দলকে দ্রুত রান এনে দিচ্ছেন নিকোলাস পুরান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের আক্রমণাত্মক এই ব্যাটসম্যান মিডল ওভারে প্রতি ওভারে গড়ে ১০.৬৭ রান করেছেন। মোট ১৮১ বলে ৩২২ রান, প্রতি চার বলে একটি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন। আইপিএলের ইতিহাসে ১৪৬ জন ব্যাটসম্যান মিডল ওভারে ১০০+ বল মোকাবেলা করেছেন, যার মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত রান তোলার রেকর্ড পুরানের দখলে।
এইবার একনজরে ৫ম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত ম্যাচগুলোর ফলাফল জেনে আসা যাক।
রাজস্থান বনাম বেঙ্গালুরু
আরও একটি ম্যাচ, আরও একটি ভিলিয়ার্স শো! ইতঃমধ্যেই তার নামের পাশে যত প্রকারের বিশেষণ দেয়া সম্ভব, সবগুলো দেওয়া হয়ে গিয়েছে। তাই নতুন করে বলার কিছু নেই। শুধুমাত্র এবি ডি ভিলিয়ার্স নামটিই যথেষ্ট। এতেই দুঃস্বপ্ন দেখা শুরু করে বোলাররা।
যে উইকেটে অন্যান্য ব্যাটসম্যানরা প্রতিটি রানের জন্য সংগ্রাম করতে হয়, সেখানে অনায়াসে হেসেখেলে বল সীমানা ছাড়া করেন ভিলিয়ার্স। কলকাতার বিপক্ষে শারজায় ৩৩ বলে অপরাজিত ৭৩ রানের ইনিংস খেলার পর পাঞ্জাবের বিপক্ষে ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তনের কারণে সুবিধা করতে পারেননি তিনি। রাজস্থানের বিপক্ষে এরপরের ম্যাচে নিজের নির্ধারিত পজিশনে ফিরে এসে আবারও বেঙ্গালুরুকে ম্যাচ জেতান, নিজে জেতেন ম্যাচসেরার পুরস্কার। টুর্নামেন্টে এই নিয়ে তিনবার ম্যাচসেরার পুরস্কার তার হাতে ওঠে।
দুবাইতে রাজস্থান প্রথমে ব্যাটিং করে ৬ উইকেটে ১৭৭ রান তোলে। জবাবে বেঙ্গালুরু ব্যাট করতে নেমে টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সূচনা পায়নি। এক পর্যায়ে তাদের প্রয়োজন ছিল পাঁচ ওভারে ৬৪ রান। সেখান থেকে তিন ওভারে ৪৫ রান এবং দুই ওভারে ৩৫ রান প্রয়োজন ছিল। স্টিভেন স্মিথ ইনিংসের ১৯তম ওভারে জোফরা আর্চারকে না দিয়ে উনাদকাটকে দেন, যা পরবর্তীতে ম্যাচ-চেঞ্জিং ভুল সিদ্ধান্তে পরিণত হয়।
উনাদকাটের করা প্রথম তিন বলে তিনটি ছয় হাঁকিয়ে ম্যাচ নিজেদের দিকে নিয়ে আসেন ভিলিয়ার্স। ঐ ওভারে মোট ২৫ রান আসলে শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে ১০ রানের। আর্চারের ওভারের চতুর্থ বলে ছয় হাঁকিয়ে দুই বল হাতে রেখেই সাত উইকেটের জয় তুলে নেয় বেঙ্গালুরু।
ডি ভিলিয়ার্সের ২২ বলে অপরাজিত ৫৫ রানের কল্যাণে বেঙ্গালুরু শেষ হাসি হাসলেও মিডল ওভারে তাদের বাজে ব্যাটিংয়ের ধারাবাহিকতা বজায় ছিল এই ম্যাচেও। ইনিংসের ৭ থেকে ১৫ ওভারের মধ্যে তারা কোনো চারের দেখা পায়নি। বলের সাথে রানের সমীকরণে বারবার পিছিয়ে যাচ্ছিলেন পাড়িকাল-কোহলিরা। শুধু এই ম্যাচেই নয়, পুরো মৌসুমেই মিডল-ওভারে বাউন্ডারি হাঁকাতে হিমশিম খাচ্ছে বেঙ্গালুরুর ব্যাটসম্যানরা। এবিডিভি-মুগ্ধতায় তাদের এই ব্যর্থতা ক'দিন ঢাকা পড়ে থাকে, তা-ই দেখার বিষয়।
চেন্নাই বনাম দিল্লি
শিখর ধাওয়ানের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম শতকের পরিণতি শেষ পর্যন্ত পরাজিত দলের হয়ে হতো, যদি না অক্ষর প্যাটেল শেষ ওভারে তিনটি ছয় না হাঁকাতেন। প্যাটেলের ক্যামিও ইনিংস বাদে একাই দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। তার ৫৮ বলে অপরাজিত ১০১ রান এবং প্যাটেলের ৫ বলে অপরাজিত ২১ রানের উপর ভর করে চেন্নাইয়ের হাতের মুঠো থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে আনে দিল্লি।
চেন্নাইয়ের দেয়া ১৮০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি দিল্লির। পৃথ্বী শ', রাহানে এবং আয়াররা নিয়মিত বিরতিতে সাজঘরে ফিরে যাচ্ছিলেন। ব্যতিক্রম ছিলেন ধাওয়ান। কোনো প্রকার তাড়াহুড়ো না করে দলকে জয়ের পথে রাখেন তিনি। মিডল-ওভারে এই আসরে রেকর্ডসংখ্যক আটটি চার মেরে রানের চাকা সচল রেখেছিলেন তিনি। তার দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে শেষ দুই ওভারে জয়ের জন্য ২১ রানের প্রয়োজন পড়ে দিল্লির। এখন পর্যন্ত পরে ব্যাট করে জয় না পাওয়া দিল্লি স্যাম কারেনের করা ১৯তম ওভারে মাত্র চার রান তোলে। এতে করে সমীকরণ দাঁড়ায় ৬ বলে ১৭!
অভিজ্ঞ বোলার ডোয়াইন ব্রাভো হঠাৎ করে পাওয়া চোট পাওয়ার ফলে ধোনি বাঁহাতি স্পিনার জাদেজার হাতে বল তুলে দেন৷ দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের সামনে শেষ ওভারে কোনো প্রতিরোধই করতে পারেননি তিনি। তিনটি ছয় হাঁকিয়ে এক বল হাতে রেখেই দলকে পাঁচ উইকেটের জয় এনে দেন অক্ষর প্যাটেল।
ধোনির নেতৃত্বে আইপিএলের অন্যতম সফল দল চেন্নাই এইবারের আসর জয় দিয়ে শুরু করার পর হারের বৃত্ত থেকে বের হতে পারেনি। অভিজ্ঞদের অভিজ্ঞতা হার মেনে যাচ্ছে তারুণ্যের উদ্দীপনায়। শারজায় দিল্লির বিপক্ষে জয়ের ভালো সুযোগ নষ্ট করে বাজে ফিল্ডিং এবং ব্রাভোর অনাকাঙ্ক্ষিত ইনজুরির কারণে। সেঞ্চুরিয়ান ধাওয়ানকে ২৭, ৫০ এবং ৭৯ রানে আউট করার সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি।
দিনের শুরুতে শারজাহ'র ছোট মাঠে টসে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়ে শুরুটা ভালো না করলেও শেষটা ভালো হয় চেন্নাইয়ের। রায়ুডুর ২৫ বলে অপরাজিত ৪৫ রান এবং জাদেজার ১৩ বলে ৩৩* রানের ইনিংসের কল্যাণে শেষ পাঁচ ওভারে ৬৭ রান করে তারা৷ এতে করে দিল্লিকে ১৮০ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিতে সক্ষম হয় চেন্নাই, যা ধাওয়ান এবং প্যাটেলের দিল্লিকে আটকানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না।
কলকাতা বনাম হায়দরাবাদ
সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলতি আসরে স্পিনারদের চেয়ে পেসারদের সাফল্যের হার বেশি৷ বিশেষ করে দ্রুতগতিসম্পন্ন পেসাররা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিচ্ছে কয়েক ওভারের মধ্যেই। কলকাতার হয়ে এইবারের আসরে প্রথম মাঠে নেমে কিউই স্পিডস্টার লকি ফার্গুসনও বাইশ গজে গতির ঝড় তুলেছিলেন। প্রথমে নির্ধারিত চার ওভারে মাত্র ১৫ রানের বিনিময়ে তিন উইকেটের শিকারের পর সুপার ওভারে মাত্র দুই রান দিয়ে দুই উইকেট তুলে নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন।
আবুধাবিতে টসে জিতে কলকাতাকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিল হায়দরাবাদ। আগের দুই ম্যাচে বাজেভাবে হেরে যাওয়া কলকাতার ঘুরে দাঁড়ানোর ম্যাচ ছিল এটি। কিন্তু ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে তারা। শেষদিকে বর্তমান অধিনায়ক মরগান ও সাবেক অধিনায়ক কার্তিকের ৫৮ রানের জুটিতে পাঁচ উইকেটে ১৬৩ রান তোলে কলকাতা। তারা দুইজন শেষ চার ওভারে ৫২ রান সংগ্রহ করেন। অধিনায়কের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া কার্তিক খেলেন ১৪ বলে ২৯* রানের কার্যকর ইনিংস।
গত কয়েক ম্যাচে হায়দরাবাদের মিডল-অর্ডার সামলানো কেন উইলিয়ামসন এই ম্যাচে ওপেনিংয়ে ব্যাট করেন। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট থাকার কারণে নিয়মিত ওপেনার ওয়ার্নারের বদলে তাকে নামানো হয়, যার পুরো সদ্ব্যবহার করেন তিনি। পাওয়ারপ্লে'তে ১৯ বলে ২৯ রানের ইনিংস খেলে স্কোরবোর্ডে ৫৮ রান যোগ করতে বড় অবদান রাখেন তিনি। তার বিদায়ের পর ফার্গুসনের গতির ঝড়ের কাছে অসহায় হয়ে পড়ে হায়দরাবাদ। ছয় ওভারে বিনা উইকেটে ৫৮ রান থেকে ১২ ওভার শেষে তাদের রানসংখ্যা দাঁড়ায় ৮২ রানে চার উইকেট।
২০১৪ সালের পর এই প্রথম চারে ব্যাট করা ওয়ার্নার কুলদ্বীপ যাদবের বিপক্ষে রান তুলতে হিমশিম খেলেও ক্রিজে থেকে দলকে জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন। শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১৮ রান প্রয়োজন পড়লে আনফিট আন্দ্রে রাসেলের টানা তিন বলে তিনটি চারের মারে এক বলে দুই রানের সমীকরণ দাঁড় করান। কিন্তু শেষ বলে ব্যাটে-বলে করতে ব্যর্থ হলে ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। সুপার ওভার পুরোটাই ছিল ফার্গুসনময়!
পাঞ্জাব বনাম মুম্বাই
আইপিএলে রবিবার দিনটি ছিল নাটকীয়তায় ভরপুর। দিনের প্রথম ম্যাচ সুপার ওভারে গড়ানোর পর দ্বিতীয় ম্যাচের নিষ্পত্তি হয় ডাবল সুপার ওভারে। এই মৌসুমে পাঞ্জাবের তীরে এসে তরী ডোবার ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েক ম্যাচে। মুম্বাইয়ের রবিবার রাতেও এমনই ঘটতে চলেছিল। শেষ পর্যন্ত মোহাম্মদ শামি-গেইলদের কল্যাণে শেষ রক্ষা হয়।
নির্ধারিত ওভারের ম্যাচে মুম্বাই প্রথমে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ১৭৬ রান করে। পোলার্ড এবং কোল্টার-নাইল শেষ তিন ওভারে ৫২ রান করলে বাজে শুরুর পরেও লড়াকু সংগ্রহ জমা করতে পারে মুম্বাই। জবাবে লোকেশ রাহুলের আরও একটি অর্ধশত রানের ইনিংসের উপর ভর করে জয়ের পথেই থাকে পাঞ্জাব। শেষ তিন ওভারে জয়ের জন্য ২৭ রান প্রয়োজন পড়লে পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করা বুমরাহ নিজের শেষ ওভারেও দলকে ম্যাচ ফেরার তাগিদে ছিলেন। মাত্র চার রান খরচায় তুলে নেন রাহুলের উইকেট। ইনিংসে মোট তিন উইকেট নেন ২৪ রানের বিনিময়ে।
জয়ের জন্য শেষ চার বলে চার রানের প্রয়োজন ছিল পাঞ্জাবের, যা ক্রিস জর্ডান এবং দীপক হুদা নিতে পারেননি। নিজের আগের ২০ বলে ৪৫ রান খরচা করা বোল্ট শেষ চার বলে দেন তিন রান। ফলে ম্যাচ গড় সুপার ওভারে।
সুপার ওভারে প্রথমে ব্যাট করে পাঞ্জাব মাত্র পাঁচ রান তুলতে পারে বুমরাহর বিপক্ষে। ছয় বলে ছয় রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে পোলার্ড-পান্ডিয়াদের না পাঠিয়ে নিয়মিত ওপেনার ডি কক এবং রোহিত নামলে তাদেরকে পাঁচ রানের বেশি করতে দেননি শামি। ম্যাচ গড়ায় দ্বিতীয় সুপার ওভারে।
দ্বিতীয় সুপার ওভারে মুম্বাইয়ের হয়ে ব্যাট করতে নামেন পোলার্ড ও পান্ডিয়া। শেষ বলে আগারওয়ালের দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ের সহায়তায় তাদেরকে ১১ রানে আটকে রাখেন ক্রিস জর্ডান। জবাবে বোল্টের করা প্রথম বলেই ছয় হাঁকিয়ে পাঞ্জাবের লক্ষ্য সহজ করে দেন গেইল। এরপর আগারওয়াল পরপর দুই চার মেরে জয় নিশ্চিত করেন।
চেন্নাই বনাম রাজস্থান
পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে থাকা দুই দল চেন্নাই এবং রাজস্থান মুখোমুখি হয় আবুধাবিতে। জয় দিয়ে টুর্নামেন্টে টিকে থাকার লড়াইয়ে টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় চেন্নাই। বরাবরের মতো এই ম্যাচেও তাদের ব্যাটসম্যানরা হতাশ করে। পাওয়ারপ্লে'তে ওয়াটসন ও ডু প্লেসিস ফেরার পর ১০ ওভারে চার উইকেটে ৫৬ রান তুলতে সক্ষম হয় তারা। এরপর জাদেজা এবং ধোনি অর্ধশত রানের জুটি গড়লেও রানের গতি বাড়ানোর দিকে দুইজনেই অমনোযোগী ছিলেন, যাতে করে নির্ধারিত ওভারে পাঁচ উইকেটে ১২৫ রানের বেশি তুলতে পারেনি চেন্নাই। প্রথমে ব্যাট করে এই আসরে সর্বনিম্ন সংগ্রহ এটাই।
১২৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই দ্রুত উইকেট হারায় রাজস্থান। ২৮ রান তুলতেই স্টোকস, উথাপ্পা এবং স্যামসনের উইকেট হারায় তারা। চেন্নাইয়ের ভালো সময় বেশিক্ষণ টিকেনি। এরপর জুটি বাঁধেন জস বাটলার এবং স্টিভেন স্মিথ। তারা আর কোনো সুযোগ না দিয়ে অবিচ্ছিন্ন ৯৮ রানের জুটি গড়ে দলকে সাত উইকেটের বড় জয় এনে দেন। অন্যান্য ব্যাটসম্যান যেখানে বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে ব্যর্থ, সেখানে বাটলার ৪৮ বলে ৭০* রানের ইনিংস খেলে দুই দলের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেন।
দিল্লি বনাম পাঞ্জাব
দুবাইতে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করা দিল্লির ইনিংস একাই টেনে নিয়েছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা শিখর ধাওয়ান। আইপিএলের প্রথম ক্রিকেটার হিসাবে টানা দুই ইনিংসে শতক হাঁকিয়ে অপরাজিত ছিলেন ৬১ বলে ১০৬ রান করে। তা সত্ত্বেও দিল্লির ইনিংস থেমে যায় পাঁচ উইকেটে ১৬৪ রানে, যার কারণ অন্যান্য ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা। দলের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪ রান করেছিলেন আইয়ার।
১৬৫ রান তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই দ্রুত রান তুলতে থাকে পাঞ্জাব। পাওয়ারপ্লেতে তিন উইকেট হারালেও রানরেট ছিল ১০ ছুঁইছুঁই। এরপর নিকোলাস পুরান এবং গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও দ্রুত রান তুলতে থাকেন। পুরাণ ২৮ বলে ৫৩ এবং ম্যাক্সওয়েল ২৪ বলে ৩২ রান করে ফিরে গেলে বাকি কাজটুকু সেরে নেন হুদা এবং নিশাম। তারা ছয় বল হাতে রেখে পাঁচ উইকেটের জয় নিশ্চিত করেন।
কলকাতা বনাম বেঙ্গালুরু
২০১২ সালের পর এই প্রথম আন্দ্রে রাসেল এবং সুনীল নারাইন ছাড়া একাদশ নিয়ে খেলতে নামা কলকাতা ইনিংসের প্রথম চার ওভারেই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে যায়। আবুধাবিতে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়ে মোহাম্মদ সিরাজের বোলিং তোপের মুখে পড়ে তিন রানে তিন উইকেট এবং ১৪ রানের মাথায় চার উইকেট হারিয়ে বসে। সিরাজ নিজের প্রথম দুই ওভারে কোনো রান না দিয়ে তিন উইকেট শিকার করে কলকাতার ব্যাটিং লাইনআপে ধস নামান, যা থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি তারা।
কলকাতা পুরো ২০ ওভার ব্যাটিং করলেও আট উইকেটে ৮৪ রানের বেশি তুলতে পারেনি। আইপিএলে অলআউট না হয়ে এটিই সবচেয়ে কম রানের রেকর্ড। জবাবে জয় পেতে কোনো বেগ পেতে হয়নি কোহলিদের। ৩৯ বল এবং আট উইকেট হাতে রেখে জয় তুলে নেয় তারা।
রাজস্থান বনাম হায়দরাবাদ
পয়েন্ট টেবিলের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে হায়দরাবাদের মুখোমুখি হয় রাজস্থান। টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে হায়দরাবাদের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ছয় উইকেটে ১৫৪ রানের বেশি করতে পারেনি রাজস্থান। স্টোকস, স্যামসন, স্মিথরা উইকেটে সেট হলেও কার্যকরী ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হয়েছিল; যার ফলে দুবাইয়ের ব্যাটিং উইকেট কাজে লাগাতে পারেননি তারা। হায়দরাবাদের হয়ে এই আসরে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা হোল্ডার নিয়েছিলেন তিন উইকেট।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই হায়দরাবাদের দুই ওপেনারের উইকেট তুলে নেন জোফরা আর্চার৷ দুই বিদেশি ইনফর্ম ব্যাটসম্যানকে দ্রুত হারিয়েও ভেঙে পড়েনি হায়দরাবাদ। মনীশ পান্ডে এবং বিজয় শংকরের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে আর কোনো উইকেট না হারিয়েই জয় তুলে নেয় তারা৷ এই দুইজন তৃতীয় উইকেট জুটিতে অবিচ্ছিন্ন ১৪০ রান যোগ করেছিলেন, যার মধ্যে পান্ডে করেন ৪৭ বলে ৮৩* রান। তাদের জুটিতে ১১ বল এবং আট উইকেট হাতে রেখেই সহজ জয় পায় হায়দরাবাদ।
চেন্নাই বনাম মুম্বাই
একের পর এক ম্যাচ হেরে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া চেন্নাই এই ম্যাচেও কোনো প্রতিরোধ গড়তে পারেনি। খেলা শুরু হওয়ার প্রথম ১৭ বল পরই সম্মানজনক পরাজয়ের চিন্তা শুরু করতে হয়েছিল। বোল্টের দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে মাত্র তিন রান তুলতেই চার উইকেট হারিয়ে বসে চেন্নাই, সেটা পরবর্তীতে পরিণত হয় ৪৩ রানে সাত উইকেটে। এরপর স্যাম কারেনের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে শতরানের গণ্ডি টপকায় চেন্নাই৷ তার ৫২ রানের ইনিংসের সুবাদে নয় উইকেটে ১১৪ রান করে তারা।
১১৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে চেন্নাইকে ম্যাচে ফেরার কোন সুযোগ দেননি কিশান এবং ডি কক। তারা উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে ১২.২ ওভারে ১১৬ রান যোগ করলে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে জয় পায় মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। এতে করে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে আসে তারা। অন্যদিকে, ১১ ম্যাচে অষ্টম পরাজয়ে পয়েন্ট টেবিলের তলানিতেই থাকে চেন্নাই। এই পরাজয়ের পর চেন্নাইয়ের টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়া প্রায় নিশ্চিত হলেও এখনও যদি-কিন্তুর উপর ভরসা করে আছে চেন্নাইয়ের প্লে-অফ খেলা।
This article is in Bangla language. It is the week five review of the Indian Premier League (IPL).
Featured Image: BCCI, Background Image: ESPNcricinfo