Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আইপিএল সপ্তাহান্তের খেরোখাতা: পর্ব ২

দর্শকশূন্য আইপিএলের ১৩তম আসরের প্রথম দুই সপ্তাহ কেটেছে ব্যাটসম্যানদের দাপুটে সব ইনিংসের মধ্য দিয়ে। ১ম সপ্তাহের মতো ২য় সপ্তাহেও মাঠে গড়িয়েছে সাত ম্যাচ। মোট ১৪ ম্যাচ শেষে এখনও কোনো দল এককভাবে শীর্ষস্থান দখল করতে পারেনি। আট দলের মধ্যে ছয়টি দলের পয়েন্ট চার; তলানিতে থাকা চেন্নাই সুপার কিংস এবং কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের সংগ্রহ দুই পয়েন্ট। 

আইপিএলের অন্যতম সফল দল চেন্নাই জয় দিয়ে এইবারের আসর শুরু করলেও পরবর্তী তিন ম্যাচে পরাজয়ের গোলকধাঁধা থেকে বের হতে পারেনি। অভিজ্ঞতা দিয়ে ঠাঁসা এই দল বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ইতঃপূর্বে সফলতা পেলেও সংযুক্ত আরব আমিরাতের গরমে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। ওয়াটসন-ধোনিরা ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে এসে ফিটনেসের সাথেই আসল লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। অর্ধযুগ আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানো শেন ওয়াটসন এবার চেন্নাইকে ভালো সূচনা এনে দিতে পারেননি, ব্যর্থ ছিলেন মুরালি বিজয়ও; যার ফলে শুরুতেই রানের গতি মন্থর হয়ে পড়ে চেন্নাইয়ের। 

২য় সপ্তাহেও তরুণ ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স ছিল উল্লেখযোগ্য। শুভমান গিল, ইশান কিশান, ওয়াশিংটন সুন্দররা তাদের সুন্দর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আগমনী বার্তার জানান দিলেন। 

ইশান কিশান; Image Credit: BCCI

এক নজরে আইপিএলের ২য় সপ্তাহ 

  • ১ম সপ্তাহের মতো ২য় সপ্তাহেও রানের ফোয়ারা ছুটেছে শারজাহর স্ট্যাম্প-সাইজ বাউন্ডারি লাইনে। এই মাঠে আসরের প্রথম দুই ম্যাচে ব্যাটসম্যানরা ৬২টি ছয় হাঁকিয়েছেন। ওভারপ্রতি রান এসেছে ১০.৩৬। শারজায় প্রতি ৭.৮ বলে একটি ছয় হাঁকিয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। 

  • রাহুল তেওয়াটিয়ার অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে আইপিএলে রেকর্ড রান তাড়া করে জয় পেয়েছে রাজস্থান রয়্যালস। জয়ের জন্য শেষ পাঁচ ওভারে ৮৪ রানের প্রয়োজন ছিল রাজস্থানের, যা তিন বল হাতে রেখেই অতিক্রম করে ফেলে রাজস্থান। 

  • দীর্ঘ বিরতির পর মাঠে ফিরে স্বরূপে ফিরতে পারেননি বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি। প্রথম তিন ম্যাচে ৬.০০ ব্যাটিং গড়ে করেছেন মাত্র ১৮ রান, যা আইপিএলে তার প্রথম তিন ম্যাচে সবচেয়ে কম ব্যাটিং গড়। এর আগে ২০০৮ সালের আইপিএলের প্রথম তিন ম্যাচে তার ব্যাটিং গড় ছিল ১২.৩৩।

  • গত কয়েক বছর ধরে ভারতীয় ঘরোয়া ক্রিকেটে সবচেয়ে আলোচিত নাম শুভমান গিল। স্বয়ং বিরাট কোহলিও বলেছেন, এই বয়সে তিনিও এত ভালো ব্যাটিং করতেন না। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান হায়দরাবাদের সাথে ৭০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে সহজ জয় এনে দিয়েছিলেন। তার ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, বোলারদের উপর পুরোপুরি আধিপত্য বিস্তার করে ব্যাট করেন। এখন পর্যন্ত আইপিএলে মাত্র ৩.৬% বলে ভুল শট খেলেছেন তিনি। কন্ট্রোলের দিক থেকে গিল সবার উপরে, ২য় স্থানে থাকা উইলিয়ামসন ৩.৮% বলে ভুল শট খেলেছেন। গিল ৩ ইনিংসে ১০৭ বলে করেছেন ১২৪ রান, অন্যদিকে উইলিয়ামসন খেলেছেন মাত্র একটি ইনিংস। 

    শুভমান গিল; Image Credit: BCCI/IPL
  • সৌরভ তিওয়ারির ইনজুরির কারণে মুম্বাইয়ের মূল একাদশে সুযোগ পেয়েই বাজিমাত করেছেন আরেক তরুণ ব্যাটসম্যান ইশান কিশান। ব্যাঙ্গালুরুর দেয়া ২০২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ২৩ রানে দুই উইকেট হারিয়ে বসে মুম্বাই। সেখান থেকে দলকে টেনে নিয়ে প্রায় অবিশ্বাস্য এক জয় প্রায় এনেই দিচ্ছিলেন কিশান। ৫৮ বলে ৯৯ রান করে খেলা নিয়ে গেছিলেন সুপার ওভারে। 

  • ২০০৯ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো আইপিএলে প্রথম চার ম্যাচের মধ্যে তিনটিতেই পরাজিত হয়েছে চেন্নাই। এই দু’টি আসরই ভারতের বাইরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। হায়দরাবাদের বিপক্ষে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে ৭ রানে পরাজিত হয় তারা। বল হাতে খুব একটা সুবিধা করতে না পারলেও ব্যাট হাতে অর্ধশতক হাঁকিয়ে আইপিএলের প্রথম অলরাউন্ডার হিসাবে দুই হাজার রান এবং ১০০ উইকেট শিকারের কীর্তি গড়েন রবীন্দ্র জাদেজা।

  • ওপেনারদের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পরেও ডেথ ওভারে বোলারদের ব্যর্থতার দরুন এই সপ্তাহের দুই ম্যাচেই পরাজিত হয়েছে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। রাজস্থানের বিপক্ষে শেষ ৪.৩ ওভারে ৮৪ রান দেয়ার পর মুম্বাইয়ের বিপক্ষে শেষ পাঁচ ওভারে দিয়েছে ৮৯ রান। অধিনায়ক রাহুল ডেথ ওভারে হাতে থাকা প্রায় সব অস্ত্র ব্যবহার করার পরেও এখনও সফলতা পাননি। বাকি রয়েছে স্পিনার মুজিব-উর রহমান।           

২য় সপ্তাহের ম্যাচের সংক্ষিপ্ত বিবরণ 

  • কলকাতা নাইট রাইডার্স বনাম সানরাইজার্স হায়দরাবাদ 

Image Credit: BCCI

আসরের প্রথম ম্যাচে চেন্নাই পরে ব্যাট করে জেতার পর পরবর্তী ছয় ম্যাচে আগে ব্যাট করা দল শেষ হাসি হেসেছে। তাই টসে জিতে রান তাড়া না করে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় অধিনায়কেরা। ওয়ার্নার আগের ম্যাচে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলেও এই ম্যাচে টসে জিতে রান তাড়ার সমীকরণে যায়নি। 

প্রথমে ব্যাট করে কলকাতার বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে চার উইকেটে ১৪২ রান সংগ্রহ করে। মিলিয়ন ডলার ম্যান কামিন্সের পাশাপাশি অন্যান্য বোলাররাও রানের চাকা আটকে ধরেন। জবাবে ৫৩ রানে তিন উইকেট হারানোর পরেও গিলের অপরাজিত ৭০ এবং মরগানের অপরাজিত ৪২ রানের উপর ভর করে ১২ বল এবং সাত উইকেট হাতে রেখে জয় তুলে নেয় কলকাতা। 

  • রাজস্থান রয়্যালস বনাম কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব  

রাহুল তেওয়াটিয়া; Image Credit: BCCI/IPL/ANI

ওপেনিং উইকেট জুটিতে মায়াঙ্ক আগারওয়াল এবং লোকেশ রাহুল ১৬.৩ ওভারে ১৮৩ রান করেছিলেন, যার ফলে পাঞ্জাব নির্ধারিত ওভারে দুই উইকেটে ২২৩ রান তোলে। রাজস্থানকে জিততে হলে নিজেদের রেকর্ডকে পুনরায় লিখতে হবে।

শারজাহর‌ ব্যাটিং স্বর্গে কোন সংগ্রহই ঠিক নিরাপদ নয়, যা শুরু থেকেই বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন স্মিথ। তার সাথে যোগ দিয়েছিলেন সাঞ্জু স্যামসনও। তাদের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ঠিক পথেই ছিল রাজস্থান। তবে তেওয়াটিয়ার এলোমেলো ব্যাটিংয়ে ম্যাচ ক্রমশ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছিল। একপর্যায়ে স্যামসনও প্রান্ত বদল করার সাহসও পাচ্ছিলেন না। কিন্তু স্যামসনের বিদায়ের পর মূহুর্তেই রঙ বদলে ফেলেন তেওয়াতিয়া। কটরেলকে এক ওভারে পাঁচ ছয় হাঁকিয়ে দলকে চার উইকেটের নাটকীয় জয় এনে দেন৷ ‘জিরো থেকে হিরো’র বাস্তব উদাহরণ রেখে যান রাহুল এই ইনিংসের মধ্য দিয়ে।  

  • রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু বনাম মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স

Image Credit: BCCI

আগের রাতের নাটকীয়তা রেশ না কাটতেই আবারও টিভিসেটের সামনে বসা দর্শকদের টানটান উত্তেজনার এক ম্যাচ উপহার দেয় বেঙ্গালুরু এবং মুম্বাই। প্রথমে ব্যাট করা বেঙ্গালুরু ডি ভিলিয়ার্সের ২৪ বলে অপরাজিত ৫৫ রানের সুবাদে তিন উইকেটে ২০১ রান করেছিল। জবাবে শুরু থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকা মুম্বাই একপর্যায়ে ১১.২ ওভারে ৭৮ রান তুলতেই চার উইকেট হারায়। সেখান থেকে ব্যাঙ্গালুরুর ফিল্ডারদের তৈলাক্ত হাতের ‘কল্যাণে’ অসাধ্য সাধন করে ফেলছিলেন ইশান কিশান ও পোলার্ড। কিশান ৫৮ বলে ৯৯ রান করে ফিরে গেলেও ২৪ বলে অপরাজিত ৬০ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ সুপার ওভারে নিয়ে যান পোলার্ড। সাইনির দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে সুপার ওভারে বেঙ্গালুরু জয় তুলে নিলেও পোলার্ড ও কিশানের পাল্টা আক্রমণ ছিল ম্যাচের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয়। 

  • সানরাইজার্স হায়দরাবাদ বনাম দিল্লি ক্যাপিটালস 

Image Credit: BCCI

সপ্তাহের প্রথম দুই ম্যাচে পরে ব্যাট করা দল জয় পেয়েছিল, মুম্বাইও জিততে জিততে হেরে যায়। এসব দেখেই হয়তো দিল্লির অধিনায়ক রান তাড়ার সিদ্ধান্ত নেন৷ আমন্ত্রণ পেয়ে ব্যাট করতে নেমে চার উইকেটে ১৬২ রান করে হায়দরাবাদ। মিডল অর্ডার আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে উইলিয়ামসনকে খেলানোর সিদ্ধান্ত নেয় ম্যানেজমেন্ট, গুরুত্বপূর্ণ ৪১ রানের ইনিংস সিদ্ধান্তের যথার্থতা প্রমাণ করেছিলেন তিনি।

ভুবনেশ্বর কুমার এবং রশীদ খানের দুর্দান্ত স্পেলে দিল্লিকে আসরের প্রথম পরাজয়ের স্বাদ উপহার দেয় হায়দরাবাদ। ম্যাচসেরা রশিদ খান ১৪ রানে তিন উইকেট নিয়ে তার দলকে ১৫ রানের জয় এনে দেন।

  • কলকাতা নাইট রাইডার্স বনাম রাজস্থান রয়্যালস 

Image Credit: BCCI

আগের ম্যাচে রেকর্ড জয়ের পর আবারও রান তাড়া করার সিদ্ধান্ত নিয়ে কলকাতাকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিল রাজস্থান। শারজাহর ব্যাটিংস্বর্গে রানের ফোয়ারা ছোটানোর পর রাজস্থানের ব্যাটসম্যানরা কলকাতার পেসারদের সামনে কোণঠাসা হয়ে পড়ে। ১৭৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৪২ রানে পাঁচ উইকেট হারানোর পর টম কারেনের অপরাজিত ৫৪ রানের সাহায্যে হারের ব্যবধান কমায় রাজস্থান। 

  • মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স বনাম কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব

অধিনায়ক রোহিত শর্মা ৭০ রানের ইনিংস খেলে যখন সাজঘরে ফেরেন, তখন দলের সংগ্রহ ছিল ১৬.১ ওভারে চার উইকেটে ১২৪ রান। রোহিতের বিদায়ের পর দুই হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান পোলার্ড এবং হার্দিক পান্ডিয়া পাঞ্জাবের ডেথ ওভারের দুর্বল দিকে ভালোভাবে আঘাত হেনে শেষ ২৩ বলে ৬৭ রান তোলেন, যার ফলে পাঞ্জাবের জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৯২ রান। মুম্বাইয়ের শক্তিশালী বোলিং লাইনআপের বিপক্ষে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি পাঞ্জাবের ব্যাটসম্যানরা, যার ফলে ৪৮ রানের বড় ব্যবধানে পরাজিত হয় তারা। 

  • সানরাইজার্স হায়দরাবাদ বনাম চেন্নাই সুপার কিংস

ব্যাটিং অর্ডারের নিয়মিত পরিবর্তন, স্পিনারদের খরুচে বোলিং, ফিল্ডারদের একের পর এক ক্যাচ মিস। প্রথম দুই ম্যাচের পর তৃতীয় ম্যাচেও চেন্নাইয়ের নিয়মিত দৃশ্য ছিল এইগুলো। আরব আমিরাতের গরমে বয়সের ভার অনুভব করেছিলেন অনেকেই, তাই হারের বৃত্ত থেকে এবারও বের হতে পারেনি চেন্নাই। ৬৯ রানের হায়দরাবাদের সেরা চার ব্যাটসম্যানকে ফেরত পাঠানোর পরও ফিল্ডারদের ব্যর্থতা এবং বোলারদের নিয়ন্ত্রণহীন বোলিংয়ে হায়দরাবাদকে অল্প রানে আটকে রাখতে পারেনি চেন্নাই।

দুই যুবা ব্যাটসম্যান প্রিয়ম গার্গ এবং অভিষেক শর্মার ব্যাটে চড়ে ১৬৪ রান তোলে হায়দরাবাদ। জবাবে আবারও ব্যর্থ হয় চেন্নাইয়ের টপ-অর্ডার। ৮.২ ওভারে ৪২ রানে চার উইকেট হারানোর পর মন্থর গতিতে এগিয়ে যেতে থাকেন জাদেজা ও ধোনি৷ জাদেজা শেষদিকে দ্রুত রান তুলে আইপিএলের ক্যারিয়ারের ১ম অর্ধশতক হাঁকান।

জাদেজা রানের গতি বাড়ালেও ধোনি রানের গতি বাড়াতে বেশি সময় নিয়ে নেন। শেষ পর্যন্ত ৪৭ রানে অপরাজিত থাকলেও দলের সাত রানের পরাজয় এড়াতে পারেননি। ধোনি এর আগে আইপিএলে ব্যর্থ রান তাড়ায় চারবার অপরাজিত ছিলেন, আর এই আসরে ইতঃমধ্যে দুইবার অপরাজিত থেকে দলের হারের চাক্ষুষ সাক্ষী হলেন। সময় কীভাবে বদলে যায়!

** আইপিএলের ২য় সপ্তাহ (২৬শে সেপ্টেম্বর থেকে ২রা অক্টোবর পর্যন্ত) **        

This article is in Bangla language. It is the week two review of the Indian Premier League (IPL). 

Featured Image: IANS

Related Articles