Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সর্বকালের সেরা কি নির্বাচন করা সম্ভব (শেষ পর্ব )

সর্বকালের সেরা নির্বাচন করা কি সম্ভব? (প্রথম পর্ব)

সর্বকালের সেরা নির্বাচন করা কি সম্ভব? (দ্বিতীয় পর্ব)

১.

প্রথম পর্বে গত শতাব্দীর যে তালিকা দেওয়া হয়েছিল, সেখানে এর পরবর্তীতে আসা চারজন খেলোয়াড়দের ( রোনালদো লিমা, জিদান, মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো) মাঝে কে কে সুযোগ পেতে পারেন?

এই চারজন আর আগের সেরাদের মাঝে একটা কমন মিল আছে। এরা সবাই নিজ নিজ জাতীয় দলের মূল খেলোয়াড় এবং অনেকেই ক্লাবেরও মূল খেলোয়াড়।

আচ্ছা, অনেক সময় দেখা যায় যে, একজন খেলোয়াড়ের অনুপস্থিতিতে খুব ভালো খেলতে থাকা দলও খারাপ খেলে। আবার খারাপ খেলতে থাকা একটা দল একটা নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের আগমনের সাথে সাথে ভালো খেলে। এর কারণটা কী? একটু ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা যাক। 

ব্যক্তিনির্ভর একটা দল হচ্ছে অনেকটা গাড়ির মতো। এর হর্ন আছে, বডি আছে, টায়ার আছে, ইঞ্জিন আছে, লাইট আছে। এখন কোনো গাড়ির হয়তো হর্ন ভালো, কিন্তু টায়ার খারাপ। কোনো গাড়ির হয়তো ইঞ্জিন খারাপ। এর মানে হচ্ছে, কোনো গাড়িরই সব কয়টা জিনিস ভালো থাকে না। আবার গাড়ির যে অংশটা থাকবে, সেটা কতটা নতুন বা পুরনো, সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে।

প্রতিটা গাড়িরই একজন ড্রাইভার থাকে, এবং একটা গাড়ির রেসে জেতার জন্য এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ভালো ড্রাইভার তার খারাপ গাড়ি নিয়েও নিজের দক্ষতা দিয়ে রেসে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেতে পারেন। কথা হচ্ছে, কোনো ভালো ড্রাইভারের গাড়িও যদি ভালো হয়, তাহলে সে নিশ্চিতভাবেই রেসে এগিয়ে থাকবে। সেই রেসে চ্যাম্পিয়ন হলে হতে পারে সে গাড়ির জন্য চ্যাম্পিয়ন হবে, কিংবা নিজের কারিশমার জন্য। এখানে কিছুটা সন্দেহ থেকে যায় যে, সে আসলে ভালো গাড়ির জন্য রেসটা জিতেছে, নাকি তার ড্রাইভিং স্কিলের জন্য। কিন্তু খারাপ গাড়ি নিয়ে ড্রাইভ না করলে আমরা বলতে পারব না যে, তার ড্রাইভিং অ্যাবিলিটি আদতে কতটা ভালো। এখন কোনো ভালো ড্রাইভার যদি ক্যারিয়ারে কখনোই খারাপ গাড়ি নিয়ে ড্রাইভ না করে, তাহলে তার প্রতি সন্দেহ থাকতে পারে যে, সে খারাপ গাড়ি নিয়ে সফল হতে পারত কিনা। তবে পরীক্ষায় পড়ার আগে কোনো মন্তব্য দেওয়া উচিত হবে না, সেটা পক্ষেই হোক আর বিপক্ষেই হোক। আবার আপনার রাস্তা কতটা প্রতিকূল, সেটাও বিবেচনায় আনতে হবে। 

বিষয়টা যদি ফুটবলে বিবেচনা করা হয়, তাহলে হয়তো ইতিহাসের সবচেয়ে ভালো ড্রাইভার হচ্ছেন ম্যারাডোনা, এরপর আসবেন জিদান।

ড্রাইভারের ভূমিকায় ম্যারাডোনাই হয়তো সর্বকালের সেরা; Image Credit: 2018 – 2020 Zedg3

গ্রেট হবার জন্য আপনাকে প্রথমে এরকম একজন ড্রাইভার হতে হবে, যাত্রী হয়ে লাভ নেই। যদিও একটা গাড়ির ড্রাইভার আর যাত্রী একই সাথে গন্তব্য পৌঁছে, কিন্তু মূল কৃতিত্বটুকু ড্রাইভারের কাঁধেই যায়, এবং সেটাই হওয়া উচিত।  

রোনালদো লিমা (ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে), জিদান, মেসি এবং ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো সবাই নিজেকে ‘ড্রাইভার’ হিসেবে প্রমাণ করেছেন। কিন্তু এদের চারজনের মাঝে কে সবচেয়ে ভালো ড্রাইভার, আর কে সবচেয়ে খারাপ?

একটা দল ভালো কিংবা খারাপ খেলতেই পারে। কিন্তু ভালো খেললে তার কৃতিত্ব মূল খেলোয়াড়ের উপরই যায়, আর খারাপ খেললেও সে দায়টুকুও তার উপরেই বর্তায়। ২০১৪ বিশ্বকাপে পর্তুগাল বিশ্বকাপের প্রথম পর্ব থেকে বাদ পড়েছে। এজন্য কেউ বলে না যে, পর্তুগাল দল হিসেবে খারাপ খেলেছে। সবাই ক্রিসকেই দোষ দেবে, এবং সেটাই উচিত। কারণ, আপনি যখন মূল খেলোয়াড়, তখন আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কী করলে কী ভাল হতে পারে।

একজন খেলোয়াড় বাদেই যদি কোনো দল খারাপ খেলে, তার মানে এটা দাঁড়ায় না যে, দলটা খুব খারাপ। বরং অনেক ভালো দলও ভালো ড্রাইভারের অভাবে খারাপ খেলতে পারে। আবার খারাপ দলও ভালো ড্রাইভারের হাতে পড়ে ভালো খেলতে পারে। ২০০২ বিশ্বকাপের আগেও রোনালদোবিহীন ব্রাজিল দল খুব ভুগছিল। কিন্তু রোনালদো লিমা বিশ্বকাপের টপ পারফর্মার হন, আর ব্রাজিলও বিশ্বকাপ জিতে নেয়। দলের বাকি খেলোয়াড়দের যোগ্যতা নিয়ে আশা করি কারো মনে প্রশ্ন থাকার কথা না।

২০১৪ বিশ্বকাপে নেইমার না খেলায় সেমিতে জার্মানির কাছে আর তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে নেদারল্যান্ডের কাছে ৩ গোল খায়। কোপাতে প্রথম রাউন্ড থেকেই ব্রাজিল বাদ পড়ে যায়। এ কারণে বলা উচিত হবে না যে, ব্রাজিল খুব দুর্বল দল। ব্রাজিলে বিকল্প ড্রাইভারের অভাব, এটা বললে সেটা কিছুটা সঠিক শোনা যায়। 

আবার কোনো দলে ড্রাইভার অধিক হয়ে গেলেও সমস্যা। যেহেতু আপনাকে ১১ জন খেলোয়াড়ই নিতে হবে, তাই বেশি ড্রাইভার নেওয়া মানে আপনি অন্য একটা অপশন কম নিচ্ছেন। মনে করুন, একটা গাড়িতে সেফটির জন্য আপনি ৫ জন ড্রাইভার নিলেন, কিন্তু একটা চাকা নিলেন না। তাহলেও গাড়ি নিয়ে আপনি এগুতে পারবেন না।

গ্যালাকটিকো যুগে অনেক গ্রেটদের নিয়েও প্রত্যাশিত ফল পায়নি রিয়াল মাদ্রিদ; Image Credit: AP

এই সমস্যাটাই হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদের জিদান-ফিগো-বেকহাম-রোনালদোদের গ্যালাকটিকো যুগে। এখানে সব দলের মূল খেলোয়াড়গুলো নিয়ে আসা হয়েছিল। খুব সম্ভবত একই সময়ে খেলা একটা প্রজন্মের সেরা খেলোয়াড়দের সমন্বয়ে এটাই সবচেয়ে সেরা দল। তারপরও দলটা সাফল্য পায়নি, কারণ ‘অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট’। এই দলে কারো উপরে এককভাবে দলের মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। কাজেই এই দল ব্যর্থ হবার পেছনে এককভাবে কাউকে দোষ দেওয়া যায় না। কিন্তু সম্মিলিতভাবে সবাইকে দোষ দেওয়া যায়। 

২.

গত শতাব্দীর সেরার তালিকা করতে যে মানদণ্ড ব্যবহার করা হয়েছিল, তাতে জিদান আর রোনালদো লিমাই নিশ্চিতভাবে সেরার তালিকায় এসে পড়বেন। তাদের জাতীয় দলের পারফরম্যান্সের সাথে সাথে ক্লাব ক্যারিয়ারও যথেষ্ট সন্তোষজনক। মেসি আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ক্লাব পারফর্মেন্সে এগিয়ে থাকলেও জাতীয় দলে, বিশেষত বিশ্বকাপে এসে পূর্বোল্লিখিত দু’জনের চেয়ে পিছিয়ে যাবেন।

কিন্তু বিশ্বকাপে পেছানোর পরও তারা দু’জনেই সেরার তালিকায় বেশ উপরের দিকেই থাকবেন। সেটা কী কারণে?

পুরো ক্যারিয়ারেই এরা অস্বাভাবিকরকম ধারাবাহিক পারফরম্যান্স বজায় রেখেছেন, এবং পেলে বাদে এরকম কেউ করতে পারেনি। একটু লক্ষ্য করা যাক।

দু’জনেই সবচেয়ে বেশিবার ফিফা বর্ষসেরা একাদশে সুযোগ পেয়েছেন (এই একাদশ অবশ্য শুরু হয়েছে ২০০৫ সাল থেকে; এজন্য আগের খেলোয়াড়দের সম্পর্কে বলা যাবে না, তারা কতবার সেরা একাদশে সুযোগ পেতেন)।

ফিফা বর্ষসেরায় মেসির অবস্থান ২০০৭ সাল থেকে যথাক্রমে ২য়, ২য়, ১ম, ১ম, ১ম, ১ম, ২য়, ২য়, ১ম, ২য়, ২য়, ৫ম; অন্যদিকে ক্রিস্টিয়ানো যথাক্রমে ৩য়, ১ম, ২য়, ৬ষ্ঠ, ২য়, ২য়, ১ম, ১ম, ২য়, ১ম, ২য়। এতটা ধারাবাহিক পুরো ক্যারিয়ারজুড়ে জিদান, রোনালদো লিমা, প্লাতিনি কিংবা ক্রুইফও ছিলেন না। ১৯৯৭ সাল থেকে জিদান হয়েছিলেন ৩য়, ১ম, ৪র্থ, ১ম, ৪র্থ, ৩য়, ১ম, ৫ম, মাঝে এক সিজন গ্যাপ, তারপর ২য়। লিমা হয়েছিলেন ১৯৯৬ সাল থেকে ১ম, ১ম, ২য়, মাঝে ৩ বছর বিরতি, তারপর আবার ১ম, ৩য়, ৭ম। ক্রুইফ বা প্লাতিনির অবস্থা আরো খারাপ।

বর্ষসেরা একাদশে সবচেয়ে বেশি থাকার রেকর্ড মেসি এবং ক্রিসের; Image Source: Sports.es

ক্লাব নিয়ে আর কিছু বলার প্রয়োজন নেই, সেটা হয়তো সবার জানা। জাতীয় দল নিয়ে কিছু বলা যাক। মেসি আসার পরই আর্জেন্টিনা এতটা দীর্ঘ সময় র‍্যাংকিংয়ে ১ নম্বরে থাকতে পেরেছে, চারটা বড় টুর্নামেন্টে ফাইনাল খেলেছে। যদিও প্রথমটাতে মূল খেলোয়াড় হিসেবে খেলেননি, তবে পারফরম্যান্স অসাধারণই ছিল। পরের তিনটা টুর্নামেন্টের মূল খেলোয়াড় হিসেবে খেলেছেন, এবং দুই টুর্নামেন্টের একটাতে সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন। প্রচলিত রয়েছে যে, কোপার আসরে তিনি সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন, কিন্তু নিজেই পুরস্কার বর্জন করেছিলেন।  বিষয়টা বিশ্বাসযোগ্য, কারণ সেই কোপা টুর্নামেন্টের সেই আসরে অন্য কোনো খেলোয়াড়কে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার দেওয়া হয়নি।  

পুরো ক্যারিয়ারজুড়ে হাতে গোনা দুই-একটিমাত্র মৌসুম বাদে প্রথম দুই খেলোয়াড়ের মাঝে থাকার কৃতিত্ব মেসি বাদে আর কারো নেই (পেলের যুগে নন-ইউরোপিয়ান খেলোয়াড়দের ব্যালন দেবার নিয়ম থাকলে হয়তো পেলে থাকলেও থাকতে পারতেন। পরবর্তীতে সম্মানসূচক সাতটা ব্যালন পেয়েছিলেন, অন্যান্য সময়ে হয়তো দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও থাকতে পারতেন)। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ২০১০ বিশ্বকাপের বছরটা বাদ দিলে পুরো ক্যারিয়ারজুড়ে টপ থ্রি’র মাঝেই ছিলেন। এমন কিন্তু নয় যে, রোনালদো লিমা কিংবা জিদান সবসময় অন্যান্য লিজেন্ডদের কাছেই হেরেছেন। ২০০৪ আর ২০০৫ সালে সেরা হয়েছিলেন আরেক গ্রেট রোনালদিনহো। কিন্তু জিদানের আগে হেনরি, শেভচেঙ্কো কিংবা ল্যাম্পার্ড আর ইতো’র মতো খেলোয়াড়ও ছিলেন। সেই রকম ভালো খেলোয়াড় এখনো আছেন, কিন্তু পুরো ক্যারিয়ারেই কিছু বছর ছাড়া এক ক্রিস (এবং অধুনা লুকা মদ্রিচ) বাদে আর কেউই মেসিকে হটাতে পারেননি। কাজেই, সেরার তালিকার উপরের দিকে মেসি অবশ্যই আসবেন।

রোনালদো কিংবা জিদানরা ইতোর কাছেও ক্যারিয়ারের কোনো পর্যায়ে হেরেছেন; Image Credit: Christophe Simone/AFP/Getty Images

সাথে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও আসবেন। মেসির মতো প্রতিপক্ষ থাকার পরও বছরজুড়ে দুর্দান্ত ক্লাব পারফরম্যান্স ভালো থাকাটা একটা কারণ, তবে এর সাথে ইউরো জয়ও একটা ফ্যাক্টর। পর্তুগালের জন্য ইউরো অনেক বড় একটা বিষয়। এমনও হতে পারে, ক্রিস অবসর নেবার পর কাছাকাছি সময়ে হয়তো পর্তুগালের পক্ষে আর শিরোপা জেতা সম্ভব হচ্ছে না। নতুন কেউ আসার আগ পর্যন্ত পর্তুগালের জন্য ক্রিস অনেকটা জিদান আসার আগ পর্যন্ত ফ্রান্সের প্লাতিনির মতোই হয়েই থাকবেন। কিন্তু কথা হচ্ছে, তারা দুজনেই সেরার তালিকায় ঠিক কতটা উপরের দিকে থাকতে পারেন!

এক বিশ্বকাপ তাদের কতটা পেছনে ফেলতে পারে? বিশ্বকাপটা তাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

৩.

কে বেশি স্কিলফুল ছিলেন? পেলে নাকি ডি স্টেফানো? ক্রুইফ নাকি ম্যারাডোনা? আসলে এভাবে বিচার করার কোনো সুযোগ আমাদের হাতে নেই। কারণ, স্কিল পরিমাপ করার মতো কোনো ইউনিট আমাদের এখনো আবিষ্কার করা হয়নি। তবে স্বাভাবিকভাবেই আগের যুগের খেলোয়াড়দের চেয়ে এখনকার খেলোয়াড়দের স্কিল বেশি থাকা উচিত। এটা প্রযুক্তি আর সময়ের সাথে কিছুটা সম্বন্ধীয়।

মনে করুন, ১৯৭০ সালের বাংলাদেশের একটা ৩ বছরের শিশু হাতে ট্যাব পেত না। এখনকার শহরের শিশুদের অনেকের হাতেই ট্যাব বা মোবাইল খুঁজে পাবেন। এই সব ছেলেরা খুব ছোটবেলা থেকেই আগের ছেলেমেয়েদের চেয়ে স্মার্ট। কিন্তু এই স্মার্টনেস অনেকটাই তার নিজ যোগ্যতার কারণে নয়, উন্নত সময়ে জন্মানোর কারণে।

পেলে কিংবা ইউসেবিওরা তাদের যুগের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন; Image Credit: AP

এখন সেইভাবে হিসেব করলে পেলে কিংবা স্টেফানোর চেয়েও সমসাময়িক লুইস সুয়ারেজ কিংবা হ্যাজার্ডও হয়তো টেকনিক্যালি বেশি স্কিলড গণ্য হয়ে যেতে পারেন। কিন্তু সেভাবে কি আদৌ মনে করা হয়? নিশ্চিতভাবেই, না।

কাজেই, এটা বলা উচিত নয় যে, মেসি পেলের চেয়ে বেশি স্কিলড, কিংবা ম্যারাডোনা ক্রুইফের চেয়ে বেশি। এমনকি পুসকাস কিংবা ইউসেবিওকেও অনেকে স্কিলের দিক থেকে এদের সমমানের মনে করেন। এদের একজনকে আরেকজনের থেকে আসলে আলাদা করা হয় পরিস্থিতি অনুযায়ী কীভাবে এক-একজন কতটুকু ট্যাকল করতে পেরেছেন, সেটা দিয়ে।

তবে, সমসাময়িক খেলোয়াড়ের মাঝে স্কিলের তুলনা করা অনেকাংশেই সম্ভব।   

৪.

মেসি আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মাঝে কে সেরা?

কথা হচ্ছে মেসি আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মাঝে তুলনা হয় কীভাবে? দুইজন খেলেন দুই পজিশনে, নিজ নিজ দলে তাদের ভূমিকাটাও ভিন্ন। তবে কি ভিন্ন পজিশনে থাকা খেলোয়াড়দের মাঝে তুলনা করা সম্ভব নয়?

গত শতাব্দীর ওয়ার্ল্ড সকারের করা সেরার নির্বাচনে পেলে ম্যারাডোনারা প্রথম দিকে থাকলেও জিকো, গ্যারিঞ্চা, ববি চার্লটন, বারোসি কিংবা জার্ড মুলারের আগে ছিলেন লেভ ইয়াসিন। তার মানে দুই পজিশনে খেলা খেলোয়াড়ের মাঝেও ভালো ভাবেই তুলনা করা সম্ভব। অতীতে সেটা করা হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে।

তবে এটা ঠিক যে যিনি ফরোয়ার্ড পজিশনে খেলেন তিনি গোলকিপার কিংবা ডিফেন্ডারের চেয়ে সেরা হবার ক্ষেত্রে সুবিধাজনক পজিশনে থাকবেন। কারণ ফুটবল মাঠে তার কাজ করার সুযোগ বেশী থাকবে।

ঠিক এই কারণেই দুই পজিশনে খেলার পরেও মেসি আর ক্রিসের মাঝে তুলনা হয়।

মেসি ভক্তের দাবি, রোনালদো কোনোভাবেই মেসির সাথে তুলনার যোগ্য নন। ক্রিসের তুলনায় মেসির গোল রেশিও, প্লে-মেকিং অ্যাবিলিটি, অ্যাসিস্ট রেশিও কিংবা পাসিং অ্যাবিলিটি অনেক বেটার। আর সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিস কেবল ডি-বক্সের কাছাকাছি থেকে গোলের দিকে নজর দেয়। বিপরীতে, মেসির চেষ্টা থাকে পুরো মাঠজুড়ে খেলার।

তবে ক্রিস-ভক্তদের কাছেও যুক্তি রয়েছে। ক্রিস জাতীয় দলের হয়ে ইউরো জিতেছেন। ক্রিস ভক্তদের অনেকের ধারণা, মেসি আসলে সফল হয়েছেন বার্সায় থাকার কারণে। বার্সা ছাড়া তার তেমন কোনো সফলতা নেই। মনে করুন, মেসি বার্সার হয়ে আর রন রিয়ালের হয়ে একই পারফর্ম করেছেন। কিন্তু যদি ৭টা লা লিগা জেতার বদলে (রন রিয়ালে আসার পর) বার্সা ১টা জিততো, আর একটি লা লিগা জেতার বদলে রিয়াল ৭টা জিততো, তখন কিন্তু হিসেব উল্টে যেত। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স কিন্তু দু’জনেরই আগের মতোই। কিন্তু দলগত সফলতার কারণে একই পারফরম্যান্স করেও রন এগিয়ে থাকতেন। এটা অস্বাভাবিকও নয়, বরং এমন হওয়াই উচিত। 

Image Credit: Alexander Hassenstein/Getty Images

অন্যদিকে, রোনালদো রিয়ালের হয়ে লা লিগায় সফলতা না পেলেও সব মিলিয়ে একেবারে পিছিয়ে নেই। বিশেষ করে চ্যাম্পিয়নস লিগে বিগত কয়েক বছরে ক্রিস অনেকটাই এগিয়ে, এবং রিয়াল মাদ্রিদের এই সময়ে চারটি আসরে চ্যাম্পিয়ন হবার পেছনে ক্রিসের অবদানই সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়েও তার রেকর্ড ভালো। ইতালির রক্ষণাত্মক ‘শৌর্য’ মাথায় রাখলে জুভেন্টাসের হয়েও পরিসংখ্যান নেহায়েত মন্দ নয় বৈকি। সবচেয়ে বড় কথা, পর্তুগালের হয়ে তিনি একটি বৈশ্বিক ট্রফিও জিতে ফেলেছেন!  

৫.

তবে ভক্তদের ভাবনা ছেড়ে একটু নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করা যাক।

মেসি সেরা নাকি রন, এই দু’জন অবসর নেবার আগে বিতর্কটা থামবে না। তবে দু’জনের সেরা হবার পক্ষেই কিছু যুক্তি রয়েছে।

বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিযোগিতাপূর্ণ ফুটবল ম্যাচ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে বার্সেলোনা বনাম রিয়াল মাদ্রিদের এল ক্ল্যাসিকো ম্যাচটিকে। এল ক্ল্যাসিকোতে সবচেয়ে বেশি গোল করার রেকর্ড মেসির, সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্ট করার রেকর্ডও মেসির। রোনালদোর আবার এল ক্ল্যাসিকোতে টানা ৬ ম্যাচে গোল করার রেকর্ড, এমনকি টানা ৬টি অ্যাওয়ে ম্যাচে গোল করার রেকর্ড।  

ক্রিস্টিয়ানো একসময় ড্রিবলিং দক্ষতা ভালো দেখালেও বর্তমানে গোলের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন দলের প্রয়োজনে। এই কথাটা যেমন সত্য, আবার এটাও সত্য যে মেসির মতো একই সাথে ড্রিবলিং, প্লে-মেকিং আর গোল করার ধারাবাহিকতা এতদিন ক্রিস্টিয়ানো একসাথে করে দেখাতে পারেননি।  ভিন্ন ভিন্ন পজিশনে খেলার জন্যও মেসি অনেক এগিয়ে আছেন। তবে রোনালদো আবার এগিয়ে আছেন ভিন্ন ভিন্ন ক্লাবের হয়ে পারফর্ম করার কারণে। ভিন্ন ভিন্ন ক্লাবে পারফর্ম করার বিষয়টা যে কতটা কঠিন কাজ, সেটা হয়তো অনেকেই বুঝতে পারবেন না। এটা নিয়ে একটু বলা যাক।

অনেক বড় বড় খেলোয়াড়ই ক্লাব পাল্টানোর পর ভালো খেলতে পারেননি। রোনালদিনহো বার্সা থেকে মিলানে গিয়েছিলেন বিশ্বের এক নম্বর খেলোয়াড় হিসেবে। কিন্তু মিলানে তার পারফরম্যান্স বিশ্বের সেরা ২০-এর মাঝেও ছিল না। শেভচেঙ্কো মিলান থেকে চেলসিতে গিয়ে সুপার ফ্লপ, কাকা সেরা হিসেবে মিলান থেকে রিয়াল মাদ্রিদে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে খুঁজেছেন, বেকহ্যাম ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে রিয়াল মাদ্রিদে গিয়ে ফ্লপ হয়েছেন। এমন নয় যে তারা খারাপ খেলোয়াড় ছিলেন, কিংবা তাদের দক্ষতা কম ছিল। অনেক কারণই থাকে নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারার জন্য। অনেক সময় পলিটিক্স থাকে, কিছু কিছু সময় কোচের সাথে সংঘর্ষের বিষয় থাকে। কাজেই নতুন ক্লাবে গিয়ে নিজেকে প্রমাণ করাটাও অনেকটা চ্যালেঞ্জের মতো।

আরেকটা দিকে সেরার দৌড়ে মেসি কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকবেন। গত শতাব্দীর সেরার তালিকাটা একটু লক্ষ্য করুন। পেলে, ম্যারাডোনা, ক্রুইফ, প্লাতিনি, ডি স্টেফানো, পুসকাস – এরা সবাই প্লেমেকার ছিলেন, কেউই নিখাঁদ স্ট্রাইকার ছিলেন না। রোনালদো ঠিক এই জায়গাতেই মেসির চেয়ে পেছনে পড়ে যাবেন । ক্যারিয়ারের একটা বড় সময় রোনালদো শুধু গোল করার দিকে মন দিয়েছেন। ক্যারিয়ারে কিছু অ্যাসিস্ট আছে, কিন্তু মেসির অ্যাসিস্টের সাথে তুলনা করলে সেটা কিছুটা হলেও নিষ্প্রাণ মনে হতে বাধ্য। সেরা ফর্মের মেসির ৯০ মিনিটই নান্দনিক, অন্তত পরিশ্রমী ফুটবলের শিল্পী রনের চেয়ে তো বেশিই। 

একই সাথে, আরেকটা কথা মাথায় রাখতে হবে যে, ফুটবলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কঠিন কাজটাই কিন্তু গোল করা। আপনি দিনশেষে ১০ টা ড্রিবলিং করতে পারবেন, দুটো সুযোগ তৈরি করতে পারবেন, কিন্তু গোল করাটা এতটা সহজ নয়। পুরো ম্যাচে কয়টা গোল হয়?

মেসি কিংবা নেইমারের মতো খেলোয়াড়রা গোল না পেলেও মাঠে অন্যভাবে কিছু কাজ করলেও মনে হবে যে, তারা কিছু করেছেন। ক্রিস্টিয়ানো আপাতত যেহেতু গোল করার দিকেই মন দিয়েছেন, তাই তার জন্য পরিস্থিতিটা কিছুটা কঠিনও বটে। তিন ম্যাচে গোল না পেলেই কিন্তু সমালোচনা হবে। সেটা মাথায় রেখেও প্রতি সিজনে ক্রিস গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গোল করেছেন, এবং নিজেকে প্রতিযোগিতায় টিকিয়েও রেখেছেন। সহজ কথা নয় বৈকি!

লড়াকু মনোভাবটাই ক্রিসকে প্রতিযোগীতায় টিকিয়ে রেখেছে; Image Credit: OSCAR DEL POZO/AFP

সবচেয়ে বড় কথা, ক্রিস নিজেও জানেন তার স্বীমাবদ্ধতা। এরপরও তিনি হার মানতে চান না, প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে চান। এই বৈশিষ্ট্যটাই ক্রিসের সবচেয়ে বড় শক্তি। খেলোয়াড়ি স্কিলে তিনি হয়তো পেলে, ম্যারাডোনা, পুসকাস, জিদান, ক্রুইফ কিংবা মেসিদের কাতারে পড়বেন না। তবে প্রতিনিয়ত নিজেকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে যাওয়া, কিংবা হার না মানা মনোভাবের কারণেই অনেকের সাথেই প্রতিযোগিতায় তিনি অনেকটা এগিয়ে যাবেন। প্রতিভা আর পরিশ্রম একত্র করা হলে কী হতে পারে, এর জাজ্বল্যমান উদাহরণ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। 

৬.

সেরা নির্ধারণে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ কিংবা ম্যাচ রেটিংও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এটাও সবসময় সেরা নির্বাচনে আপনাকে সঠিক রেজাল্ট দিতে পারবে না। যেমন, ২০০২ বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হয়েছেন রিভালদো (৩ বার)। কিন্তু সেই বিশ্বকাপে ব্রাজিলের সেরা খেলোয়াড় রোনালদো লিমা, ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হয়েছিল ২টি ম্যাচে (সেমিফাইনাল আর ফাইনাল)। ২০০৬ বিশ্বকাপেও সবচেয়ে বেশিবার ম্যান অফ দ্য ম্যাচ পিরলো (৩ বার), কিন্তু টুর্নামেন্টসেরা জিদান। তবে সবচেয়ে বেশি ম্যান অফ দ্য ম্যাচ পাওয়া খেলোয়াড়ও টুর্নামেন্টসেরা হয়েছে (মেসি, ২০১৪)।

তার মানে, সবচেয়ে বেশি ম্যান অফ দ্য ম্যাচ পেলে বা রেটিং সবচেয়ে বেশি হলেই সে সেরা হবে, বিষয়টা এমন নয়। তবে সেরা খেলোয়াড়ের রেটিং সবচেয়ে বেশি হলেও হতে পারে। রেটিং কিংবা ম্যান অফ দ্য ম্যাচ একজনের ধারাবাহিকতা ইন্ডিকেট করে। কিন্তু আপনি যথেষ্ট পরিমাণ ধারাবাহিক না হয়েও অনেক ধারাবাহিক খেলোয়াড়ের চেয়ে সফল হতে পারেন। আগের যুগে রেটিং পয়েন্ট ছিল না। তবে রেটিং পয়েন্ট থাকলে ম্যারাডোনার ম্যাচপ্রতি রেটিং অনেক কম থাকতো, গ্রেটের তালিকায় অনেক পেছনে থাকা খেলোয়াড়ের চেয়ে। কিন্তু ম্যারাডোনা ক্রুশিয়াল ম্যাচ পারফরমার। দলের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সময়ে নিজের সেরাটা দেওয়ার বৈশিষ্ট্যের জন্য তাকে অনেক এগিয়ে রাখে।

পাকিস্তানের ১৯৯২ বিশ্বকাপ জয়ে মূল অবদান কার? সবাই নির্দ্বিধায় স্বীকার করবে, ইমরান খানের। ইমরান কিন্তু সেই বিশ্বকাপের একটা ম্যাচেও ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হননি।

মাঝে মাঝে কোনো অতিমানবীয় পারফরম্যান্সও সেরা নির্বাচনে আপনাকে ভাবিয়ে তুলবে। মনে করুন, পাহাড়ে উঠার প্রতিযোগিতা হবে। এক একজন ১০ বার করে সুযোগ পাবে। এখানে, ধরুন, ১০টা বিভিন্ন উচ্চতার চূড়া আছে। একজন মানুষ ধারাবাহিকভাবে প্রতিবারই ৭ নম্বর উচ্চতা পর্যন্ত উঠে যেতে পারল। কিন্তু আরেকজন খামখেয়ালি মানুষ ৪ বার পারল ২ নম্বর পর্যন্ত যেতে, ৩ বার ৫ নম্বর পর্যন্ত, ২ বার ৭ নম্বর পর্যন্ত, কিন্তু ১ বার সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছে গেল। এখন গড়ে প্রথমজন এগিয়ে থাকলেও দ্বিতীয়জন কিন্তু তার সেরা সময়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে অস্বাভাবিক ক্ষমতা দেখাল। আমরা একজন নায়কের কাছে আশা করি, সে তার পিক অবস্থায় এমন কিছু করবে, যা কি না ইতিহাসে খুব মানুষ করতে পেরেছে।

৭.

এতক্ষণ কিছু  যুক্তি, আর মেসি-রনের সেরা থাকার কিছু কারণ বলা হলো। কিন্তু এখন যদি প্রশ্ন করা হয়, রোনালদো লিমা, জিদান, মেসি আর রনের মাঝে কে এগিয়ে থাকবেন?

মনে করুন, সেরা নির্বাচনে দশটা ফ্যাক্টর আছে। পারফরম্যান্স, স্কিল, ধারাবাহিকতা, ট্রফি… এমন সব মিলিয়ে ১০টা। এখন এই ১০টা বিষয়ে যদি মোট নাম্বার যোগ করা হয়, তাহলে মেসি কিংবা ক্রিস এগিয়ে থাকবেন। কিন্তু যদি গ্রেডিং করা হয়, তাহলে তারা পিছিয়ে যেতে পারেন। কীভাবে, সেটা বলা যাক।

মনে করুন, স্কিলে মেসি যদি ৯৫ পান, তাহলে জিদান অন্তত ৯০ পাবেন। ধারাবাহিকতায় মেসি ৯৫ পেলে জিদান অন্তত ৮৫ পাবেন। পারফরম্যান্সে মেসি ৯৭ পেলে জিদান অন্তত ৮৫ পাবেন। কিন্তু ক্রুশিয়াল ম্যাচ ফ্যাক্টে জিদান ৯০ পেলে মেসি পাবেন ৭০। তার মানে, গ্রেডিং সিস্টেমে আসলে মেসি সব সাবজেক্টে এ+ পাবেন না। কিন্তু নম্বর হিসেব করলে মেসি দেখা যাবে অনেকটাই বেশি নম্বর পেতে পারেন। এভাবে হিসেব করলে হয়তো বাকি সবাইকেই (এমনকি পেলে-ম্যারাডোনাকেও) মেসি কিংবা ক্রিসের পক্ষে ছাড়ানো সম্ভব। কিন্তু গ্রেডিং করলে দু’জনেই বাকিদের চেয়ে কিছুটা পেছনে থাকবেন।

দেখার বিষয় হচ্ছে, বিচারকরা বিচার করার সময় কোন দিকটাকে প্রাধান্য দেয়।  

৮.                                              

তিন পর্বের এই ফিচারটাতে অনেক ডাটা দেখানো হলো, কিছু বিশ্লেষণও করা হলো। তবে খেলাধুলার বিষয়টা পিউর সায়েন্সের মতো নয় যে, সূত্রে ফেললে রেজাল্ট বেরিয়ে আসবে। বরং এটা অনেকটাই আর্টসের মতো, একেকজন বিশ্লেষক একেক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে বিশ্লেষণ করবে। প্রতিটা মানুষেরই নিজস্ব পছন্দও থাকতে পারে।

তবে, দিনশেষে প্রতিটা মানুষের উচিত বিশেষজ্ঞদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তকে মেনে নেওয়া। এটা জরুরী নয় যে, বিশেষজ্ঞরা যেভাবে ভাববে, তার সাথে আপনাকে একমত হতে হবে। যেকোনো নির্বাচনে পেলে অনেক বেশি ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও উনি কিন্তু সব ভোট পান না। তার মানে, অনেকেই পেলেকে সেরা মানেন না। যারা মানে না, তারা যে খেলা বোঝে না, বিষয়টা এমনও নয়।

এর মানে, আপনিও ইচ্ছে করলে অন্য কাউকে সেরা মনে করতেই পারেন। আপনার নিজের মতো করে ভাববার অধিকার আছে। তবে বিশেষজ্ঞদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়াটাও বাঞ্ছনীয়। বিশেষজ্ঞদের নির্বাচনের খুঁত ধরার চেষ্টা না করে তারা কীভাবে ভাবার চেষ্টা করছেন, সেটা বের করতে পারাটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত।

সেই কাজটা সঠিকভাবে করতে পারলে সর্বকালের সেরা নির্বাচন করাটা অনেকাংশেই সম্ভব।

Related Articles