Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

এই কি তবে মার্সেলোর শেষের শুরু?

একবিংশ শতাব্দীর সেরা ফুলব্যাকদের তালিকা করলে সেখানে বেশ উপরের দিকেই মার্সেলো ভিয়েরার নামটা আসবে। নিজের বর্তমান ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে তার অর্জনের ঝুলি রীতিমতো ঈর্ষনীয়। তবে এই জীবন্ত কিংবদন্তির বর্তমান সময়টা মোটেও ভালো যাচ্ছে না। অবস্থা এতটাই খারাপের দিকে চলে গেছে যে, রিয়াল মাদ্রিদের শুরুর একাদশে জায়গাটা পাওয়াটাই এখন তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি কানাঘুষা শোনা যাচ্ছে এ বছর অনুষ্ঠেয় কোপা আমেরিকায় ব্রাজিলের ২৩ সদস্যের দল থেকেও হয়তো বাদ পড়তে পারেন এই বর্ষীয়ান লেফটব্যাক। এসব দেখে অনেকেই মার্সেলোর ক্যারিয়ারের শেষ দেখতে পারছেন। সত্যিই কি তেমনটা ঘটতে যাচ্ছে? 

সেই ব্যাপারে জানার আগে মার্সেলোর পুরো ক্যারিয়ারের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক। ২০০৭ সালের শীতকালীন দলবদলে ক্লাবের আরেক কালজয়ী লেফটব্যাক রবার্তো কার্লোসের উত্তরসূরী হিসেবে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ফ্লুমিনেন্স থেকে মার্সেলোকে দলে ভেড়ায় রিয়াল মাদ্রিদ। স্প্যানিশ ক্লাবটিতে যোগদানের পর নিজেকে প্রমাণ করার জন্য খুব বেশি সময় তিনি নেননি। ২০০৮-০৯ মৌসুমে দলের মূল একাদশে জায়গা পাকা করে নেন মার্সেলো। দুরন্ত পারফর্মেন্সের মাধ্যমে অল্প কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্বের সেরা লেফটব্যাক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি। 

রিয়ালের চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন মার্সেলো; Image Source: Dream Team

বিশেষ করে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সাথে তার রসায়ন ছিল দারুণ। এই দুইজন মিলে মাদ্রিদের বাঁ প্রান্তটা প্রতিপক্ষের জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। শেষ পাঁচ বছরে মাদ্রিদ চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছে; সেখানেও মার্সেলোর অবদান ছিল অনেক বেশি। লস ব্লাঙ্কোদের সেই মহাকাঙ্ক্ষিত লা দেসিমার ফাইনালেও গোল করেছিলেন এই আক্রমণাত্মক লেফটব্যাক।

শুধু লা দেসিমা নয়, রিয়াল মাদ্রিদের পরের তিন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের পিছনেও মার্সেলো বড় অবদান রেখেছিলেন। বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় গত আসরে বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে শেষ লেগের ম্যাচটা। সেই ম্যাচের পুরো সময়জুড়ে বায়ার্নের রাইট উইঙ্গার অ্যারিয়েন রোবেনকে কড়া মার্কিংয়ে রাখার পাশাপাশি রিয়ালের আক্রমণভাগেও সেদিন উজ্জ্বলতম তারকা ছিলেন এই মার্সেলো। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে মার্সেলো ঠিক কতটা কার্যকর ছিলেন, একটা পরিসংখ্যান দেখলেই সেটা বুঝা যাবে। গত ছয় বছরের মধ্যে পাঁচবারই ফিফপ্রো বর্ষসেরা একাদশের লেফটব্যাক হিসেবে জায়গা পেয়েছেন এই ব্রাজিলিয়ান। অর্থাৎ গত ছয় মৌসুমে বিশ্বসেরা লেফটব্যাক হিসেবে নিজের একটা সুদৃঢ় অবস্থান বেশ ভালোভাবেই তৈরি হয়েছিলো। 

কিন্তু এই মৌসুমের শুরু থেকেই সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো লাগছিলো। নতুন কোচ হুলেন লোপেতেগির অধীনে এমনিতেই বেশ খারাপ সময় কাটাচ্ছিলো রিয়াল মাদ্রিদ। সেখানে মার্সেলোর পারফর্মেন্স ছিল আরো বিবর্ণ। গত নভেম্বরে লোপেতেগির বদলে কোচ হিসেবে আসেন সান্তিয়াগো সোলারি। তার অধীনে ক্লাব ফুটবল ইতিহাসের সফলতম দলটির পারফর্মেন্স গ্রাফে কিছুটা উন্নতি আসলেও মার্সেলোর ফর্ম আরো খারাপের দিকে যেতে থাকে।

অবস্থা এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছে যে, এখন রিয়াল মাদ্রিদের মূল একাদশেই মার্সেলো জায়গা পাচ্ছেন না। তার জায়গায় ২২ বছর বয়সী স্প্যানিশ লেফটব্যাক সার্জিও রেগুইলনই নিয়মিত দলে জায়গা পাচ্ছেন। অবশ্য সেটার কারণটাও দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। লা লিগায় সোলারির অধীনে মার্সেলো খেলেছেন, এমন ছয়টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র দুইটি ম্যাচে জয় পেয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ! পক্ষান্তরে লেফটব্যাক হিসেবে সার্জিও রেগুইলন খেলেছেন, লা লিগার এমন দশটি ম্যাচের মধ্যে আটটি ম্যাচেই জয় পেয়েছে ক্লাবটি! 

শুধু হার-জিতের পরিসংখ্যান নয়, যারা এই মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের খেলা নিয়মিত দেখছেন তারাও খুব সহজেই লক্ষ্য করে থাকবেন, যেসব ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে মার্সেলো শুরুর একাদশে জায়গা পেয়েছেন, সেসব ম্যাচে রিয়ালের রক্ষণভাগের ডান প্রান্ত ভীষণ অরক্ষিত মনে হয়েছে। বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় কোপা দেল রের প্রথম লেগের কথা, সেখানে বার্সেলোনার ম্যালকম পুরো ম্যাচজুড়ে মার্সেলোকে বারবার নাজেহাল করেছেন, আর ওই প্রান্ত দিয়ে একটা গোলও আদায় করে নিয়েছিলেন! 

ক্রিসের সাথে তার রসায়নটা ছিল দারুণ; Image Source: Marca

রক্ষণভাগের কাজে মার্সেলো তার সেরা সময়েও তেমন পটু ছিলেন না, মার্সেলোর মূল শক্তির জায়গা ছিল ওভারল্যাপ করে সামনে চলে গিয়ে আক্রমণে সহায়তা করা। কিন্তু তার দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মাদ্রিদ ত্যাগ তার এই শক্তির জায়গাটাই বড্ড বেশি দুর্বল করে দিয়েছে। এখন পর্যন্ত এই মৌসুমে লা লিগায় মার্সেলোর অ্যাসিস্টের সংখ্যা শূন্য! ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মতো একজন চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড়ের প্রস্থান রিয়াল মাদ্রিদকে যতটা ভোগাচ্ছে, তার চেয়ে অনেক বেশি ভুগছেন মার্সেলো নিজে।

রিয়াল মাদ্রিদে মার্সেলোর এই দুঃসময়ের কারণেই আসন্ন কোপা আমেরিকায় ব্রাজিলের ২৩ সদস্যের দলেও তার ডাক না পাওয়ার গুঞ্জন উঠেছে! অবশ্য মাদ্রিদে খারাপ সময় পার করলে ব্রাজিল দলে মার্সেলো জায়গা পাবেন না, এটা একদিক থেকে খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। কারণ এখন পর্যন্ত ক্যারিয়ারে তিনি যতটুকু সাফল্য পেয়েছেন, তার পনেরো আনাই লস ব্লাঙ্কোদের সাদা জার্সি গায়ে।সেলেসাওদের হলুদ জার্সিতে সেই অপ্রতিরোধ্য মার্সেলোকে খুব কমই পাওয়া গেছে। 

জাতীয় দলে মার্সেলো বরাবরই কিছুটা বিবর্ণ; Image Source: AS

অথচ ব্রাজিলের হয়ে মার্সেলোর অভিষেকটা ছিল রাজকীয়। ২০০৬ সালে ওয়েলসের বিপক্ষে সেই ম্যাচে গোল করে শুরুটা দারুণভাবে করেছিলেন এই লেফটব্যাক। তবে তৎকালীন ব্রাজিল কোচ কার্লোস দুঙ্গা কিছুটা রক্ষণাত্মক ফর্মেশনে দলকে খেলাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন, তাই সেই সময়ে জাতীয় দলে জায়গা পাওয়াটা মার্সেলোর জন্য কিছুটা কঠিনই ছিল। এ কারণেই ২০১০ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের ২৩ সদস্যের দলে তার জায়গা হয়নি।

২০১০ বিশ্বকাপের পর দুঙ্গার বদলে ব্রাজিলের কোচ হিসেবে আসেন মানো মেনেজেস। নতুন কোচের অধীনে আবারো জাতীয় দলে জায়গা পেতে শুরু করেন তিনি। কিন্তু কোচের সাথে ভুল বোঝাবুঝির কারণে ২০১১ কোপা আমেরিকার দলে জায়গা হয়নি এই লেফটব্যাকের। যদিও এই টুর্নামেন্টের পরে সেই ঝামেলা মিটিয়ে আবারো হলুদ জার্সিতে ফিরে আসেন তিনি।

২০১৩ সালের শুরুতে মেনেজেসের বদলে ব্রাজিলের কোচ হিসেবে নিজের যাত্রা শুরু করেন লুই ফেলিপে স্কলারি। সেলেসাওদের হয়ে মার্সেলোর সেরাটা সম্ভবত ‘বিগ ফিল’-এর আমলেই দেখা গেছে। বিশেষ করে উল্লেখ করতে হয় ২০১৩ সালের কনফেডারেশন্স কাপের কথা। পুরো আসরজুড়ে বাঁ প্রান্তে নেইমারের সাথে তার অসাধারণ বোঝাপড়া লক্ষ্য করা গেছে। সেই আসরে ব্রাজিলের শিরোপা জয়ের পিছনে মার্সেলোর নজরকাড়া পারফর্মেন্স বেশ ভালো ভূমিকা রেখেছিলো। 

কনফেডারেশন্স কাপের ট্রফি হাতে সতীর্থ নেইমার ও নিজের ছেলের সাথে মার্সেলো; Image Source: Zimbio

এমন পারফর্মেন্স দেখে স্বাভাবিকভাবেই ২০১৪ বিশ্বকাপ নিয়ে ব্রাজিলিয়ানদের স্বপ্নের মাত্রাটা বেড়ে গিয়েছিলো, যে স্বপ্নযাত্রার অন্যতম গুরুত্বপূর্ন অংশ ছিলেন মার্সেলো। কিন্তু এই লেফটব্যাকের জন্য সেই আসরের শুরুটা ছিল দুঃস্বপ্নের মতো, উদ্বোধনী ম্যাচে তার করা আত্মঘাতী গোলেই ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে পিছিয়ে পড়ে ব্রাজিল! যদিও সেই ম্যাচ পরে ব্রাজিল ৩-১ এ জিতে নেয়, কিন্তু আসরের পরের ম্যাচগুলোতেও মার্সেলোর পারফর্মেন্স মোটেও আশাব্যঞ্জক ছিল না।

বিশেষ করে জার্মানির বিপক্ষের সেই লজ্জাজনক সেমিফাইনালে ব্রাজিলের সাত গোল খাওয়ার পিছনেও মার্সেলোর লাগামছাড়া আক্রমণে যাওয়াটা বড় ভূমিকা রেখেছিলো। সেই বিশ্বকাপের পরে আবারো দুঙ্গা কোচ হলে মার্সেলোর জন্য জাতীয় দলের দরজাটাও আবার বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৭ সালে টিটে দায়িত্ব নেওয়ার পর আবারো ফিরিয়ে আনেন মার্সেলোকে, ২০১৮ বিশ্বকাপেও জায়গা পান এই অভিজ্ঞ তারকা। 

বেলজিয়ামের বিপক্ষে হারার পর অশ্রুচোখে মার্সেলো; Image Source: Goal.com

কিন্তু এবারও হলুদ জার্সিতে নিজের সেরাটা দিতে ব্যর্থ তিনি। বেলজিয়ামের বিপক্ষে ব্রাজিলের দ্বিতীয় গোল হজমের পিছনে ফার্নান্দিনহোর পাশাপাশি মার্সেলো নিজেও দায় অস্বীকার করতে পারেন না। অনেকের মতে, সেদিনের ম্যাচে ফিলিপ লুইস যদি ব্রাজিলের রক্ষণভাগে থাকতেন, তাহলে খেলার সমীকরণটাই হয়তো পাল্টে যেতো। এই পারফর্মেন্স ও ইনজুরি – এই দুইটি কারণে বিশ্বকাপ পরবর্তী কোনো প্রীতি ম্যাচেই ব্রাজিল দলে ডাক পাননি মার্সেলো। কোপা আমেরিকার দলে তার থাকার সম্ভাবনা আসলেই বেশ ক্ষীণ; টুর্নামেন্ট শুরুর আগে শেষ দুইটি প্রীতি ম্যাচের দলে তার ডাক না পাওয়াটা সেই ইঙ্গিতই আরো জোরালোভাবে দিয়ে গেলো।

মার্সেলোর জায়গায় লেফটব্যাক হিসেবে ব্রাজিল দলে ডাক পেয়েছেন জুভেন্টাসের অ্যালেক্স সান্দ্রো ও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের ফিলিপ লুইস। চলতি মৌসুমে দুইজনের পারফর্মেন্সই বেশ ভালো, ইনজুরি সংক্রান্ত কোনো সমস্যা না হলে এই দুইজনই কোপা আমেরিকায় ব্রাজিলের লেফটব্যাক হিসেবে সুযোগ পাবেন। আর কোপা শেষ হলে বয়সের কারণে হয়তো লুইস বাদ পড়তে পারেন তবে সেক্ষেত্রেও মার্সেলোর সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা কম! পোর্তোর সম্ভাবনাময় লেফটব্যাক অ্যালেক্স টেলেসই হয়তো লুইসের জায়গাটা পেয়ে যাবেন।

তাই ক্লাব ফুটবল ও জাতীয় দল – সব মিলিয়ে যা অবস্থা, তাতে মার্সেলোর পুরো ক্যারিয়ার সত্যিই হুমকির সম্মুখীন হয়ে গেছে। জীবনে কঠিন সময় আসতেই পারে, তবে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে চাইলে কঠোর পরিশ্রমের সাথে নিজের ভুলগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো শুধরে নিজের মাঝে কিছুটা বদল আনাটাও জরুরী।

এখন যা অবস্থা, তাতে মার্সেলোর উচিত নিজের অতি আক্রমণাত্মক ভঙ্গি থেকে কিছুটা বের হয়ে রক্ষণের কাজে মন দেওয়া। দিনশেষে তিনি রক্ষণভাগেরই একজন খেলোয়াড়। তাই সেই কাজটাই যদি ঠিকভাবে না করা হয়, তবে কোচদের এমন বিরূপ আচরণ অস্বাভাবিক নয়। এমন কঠিন সময়ে এই বর্ষীয়ান খেলোয়াড় ঠিক কী সিদ্ধান্ত নেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

This article is in Bangla language. It's a story about the sudden downfall of Brazilian leftback Marcelo. For references, please check the hyperlinks inside the article.

Featured Image: The Independent

Related Articles