Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অনেকটা জার্মান মডেলে গড়ে উঠতে থাকা ইংল্যান্ডের জন্য ২০১৮ বিশ্বকাপ কি একটু জলদিই এসে গেছে?

বিশ্বের সেরা ক্রীড়া মিডিয়া ইংলিশ মিডিয়া, সেরা লীগ তর্কযোগ্যভাবে ইংলিশ লীগ। কিন্তু সাম্প্রতিক অতীতে তাদের সাফল্য কী? মোটাদাগে শূন্য। ২০০২, ২০০৬ বা ২০১০ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ দল ছিল ঈর্ষা জাগানীয়া, কিন্তু সাফল্যের ভাঁড়ে ভবাণী। এরপর ইংল্যান্ডের প্রতিভা উঠে আসা একটু কমে গেল। আর প্রচন্ড শক্তিশালী দল আর দেশীয় গণমাধ্যমের আশার বাণী শুনে শুনে আশায় বুক বাঁধা ইংলিশরা এখন অনেক স্বল্প-আশায় বাঁচেন। দলে একগাদা তরুণ মুখ, কোচ নিজেও তরুণ। ইংল্যান্ডের পক্ষে কি কোনো চমক দেখানো সম্ভব?

সাউথগেট সালতামামি

ইংল্যান্ড দলের কথা আসলে প্রথমেই তাদের কোচের কথায় আসতে হবে। দেশি-বিদেশী পক্ককেশ, জাঁদরেল কোচ নিয়োগ দিয়ে অভ্যস্ত ইংলিশ ফেডারেশন আগের কোচের পদত্যাগের পর নিয়োগ দেয় অখ্যাত এক সাউথগেটকে, বয়সভিত্তিক দলে কোচিং করাতেন। অন্তর্বর্তী হিসেবে চার ম্যাচে তার খেলা বোর্ডকে নতুন কিছু করতে ভাবায়। নিয়োগ দেয়া হয় পাকাভাবে। চিরায়ত ৪-৪-২ তে নাভিশ্বাস উঠে আসা আর ম্যাচভিত্তিক কড়কড়ে ট্যাকটিক্সে খেলে আসা ইংল্যান্ড দলে সাউথগেট একটু নতুন কিছু নিয়ে এলেন। ৩-৫-২ তে বল পজেশন ভিত্তিক ফুটবল আর তরুণ খেলোয়াড়দের প্রতি অগাধ আস্থা ইংল্যান্ড দলে একটু ভিন্ন মাত্রা এনে দিলো অনেক দিন পর। ১৯ বছর বয়সী ট্রেন্ট আর্নল্ড, যার জাতীয় দলে অভিষেকই হয়নি, লিভারপুলে ভাল খেলায় তাকে নিয়ে নিলেন দলে। অথচ আগের ইংল্যান্ড কোচেরা এমন ঝুঁকি নিতেন না।

সাউথগেটের এই দলের হয়ে করা কাজ ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে; Image Source:Free Super Tips

সাউথগেটের দর্শন জোয়াকিম লো বা টিটের ‘বিল্ড ফ্রম ব্যাক’ এর মতোই। এই সিস্টেমের জন্য উপযুক্ত খেলোয়াড় লাগে। তাই সাউথগেট এমন সব খেলোয়াড় বেছে নিলেন যারা বল পায়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন বা চাপের মধ্যেও বিল্ড আপ স্টাইলে খেলতে পারেন। তার ফর্মেশনে পাঁচজন ডিফেন্ডার ও ২ জন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার খেলতে পারেন, যারা রক্ষণের কাজে সক্ষম এবং একইসাথে বল পায়ে দক্ষ। তাই পজেশন ভিত্তিক খেলার অভ্যাস দাঁড়িয়ে যাচ্ছে এই দলটার। ব্রাজিল ও জার্মানির সাথে দুই প্রীতি ম্যাচে ইংল্যান্ড কোনো গোল হজম করেনি, স্পেনের সাথেও ৮৬ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে ছিল ২-০ তে, পরে তা ২-২ গোলে ড্র হয়। ইংল্যান্ডের বাছাইপর্বে সাউথগেটের অধীনে ডিফেন্সিভ রেকর্ড ইউরোপে সবচেয়ে ভাল এবং পুরো বিশ্বে ২য়! একটি দল গুছিয়ে আনতে হয় ডিফেন্স থেকেই। সাউথগেট এই কাজে দলকে একটি ভিত্তি দিয়ে দিয়েছেন।

একনজরে দেখে নেয়া যাক প্রতিটি সেক্টরে ইংল্যান্ডের শক্তিমত্তার দিকগুলো।

রক্ষণ

ইংল্যান্ডের গোলবার আগলাবেন পিকফোর্ড। ক্লাবের হয়ে বেশ ভালো একটা মৌসুম পেরিয়ে আসা এই গোলরক্ষকের সাথে ডি গিয়া বা নয়্যরের তুলনা করলে তাকে বেশ সাদামাটাই দেখায়। একইভাবে ইংল্যান্ডের ব্যাক আপ গোলকিপাররাও আহামরি মানের নন। তাই ইংল্যান্ড রক্ষণকে তাদের গোলরক্ষককে আগলে রাখতে হবে ভালোভাবেই।

৩-৫-২ তে তিনজন খেলে থাকেন সেন্টারব্যাক পজিশনে। সাউথগেট এমন সব সেন্টারব্যাককে নিয়েছেন যাদের সবার বল প্লেয়িং বা পাসিং দক্ষতা আছে। ম্যানসিটির ওয়াকার ও স্টোনস, যারা পেপ গার্দিওলার একই দর্শনে খেলে অভ্যস্ত, তারা খেলবেন মোটামুটি নিশ্চিত বলা যায়। এরপর আছেন চেলসির গ্যারি ক্যাহিল ও লেস্টার সিটির ম্যাগুইরে, যার দলে স্মলিংয়ের বদলে ডাক পাওয়ার একমাত্র কারণ তার পাসিং কোয়ালিটি ভালো। কাহিল বা জোন্স কেউই ক্লাবের হয়ে তাদের সেরা সময়ে নেই, তাই তাদের নিয়ে হয়তো ইংল্যান্ডকে ভুগতে হবে, যদিও শোনা যাচ্ছে ম্যাগুইরেই হবেন ৩য় সেন্টার ব্যাক।

৩-৫-২ এর পাঁচজনের দুই পাশের দুজনকে বলা হয় উইংব্যাক। তাদের ভূমিকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আক্রমণের সময় পুরোদস্তুর উইংগার আর ডিফেন্সের সময় পুরোদস্তুর সাইডব্যাক। তাই তাদের খুব গতিশীল হতে হয়। রাইট উইংব্যাকে খেলবেন ট্রিপিয়ের আর লেফট উইংব্যাকে ড্যানি রোজ। ট্রিপিয়ের বদলি হিসেবে আছেন আর্নল্ড আর রোজের বদলি খেলতে পারেন ইয়ং ও ডেলফ। বাছাইপর্ব ও প্রীতি ম্যাচ মিলিয়ে ইংল্যান্ডকে কোচ খুব ভালো একটা শেপ এনে দিয়েছেন। এটার উপর ভিত্তি করেই অন্য কোনো চমক দেখাতে চাইবেন তিনি।

ম্যানসিটির দুই তারকা ওয়াকার ও স্টোনস ইংলিশ ডিফেন্সেরও ভরসা; Image Source:Sky Sports

মাঝমাঠ

মাঝমাঠে পাঁচজনের দুজনের ভূমিকা উইংব্যাক হিসেবে। বাকি তিনজন কারা কারা তা মোটামুটি নিশ্চিত। হেন্ডারসন-ডায়ের-লিনগার্ডের ত্রয়ীই মাঝমাঠে খেলবে। হেন্ডারসন লিভারপুলের মাঝমাঠের মূল খেলোয়াড় আর এরিক ডায়ের টটেনহ্যামের। তারা বল পায়ে ও রক্ষণের কাজেও খুবই ভাল। কিন্তু একটা কথা আছে, “অনেক রাধুনীর রান্না ভাল হয় না!” কাগজে-কলমে খুব ভাল জুটি মনে হলেও আসলে সেভাবে দুজন একে অপরকে কমপ্লিমেন্ট করতে পারছেন না। এটা মনে করিয়ে দেয় সেই জেরার্ড-ল্যাম্পার্ড জুটির কথা। দুই ক্লাবের দুই মূল চালিকাশক্তি রহস্যজনকভাবে ইংল্যান্ডের হয়ে নিষ্প্রভ থাকতেন। সেন্টার মিডে ব্যাকআপ একজনই, তরুণ লফটাস চিক। লিগের আরো অনেক ভালো খেলা মাঝমাঠের খেলোয়াড়কে রেখেও তাকে নেয়ার একটাই কারণ- তার পাসিং অ্যাবিলিটি বা নিচ থেকে খেলা বানানোর কোয়ালিটি দারুণ।

তবে মাঝমাঠে কম খেলোয়াড় নেয়াটা ভোগাতে পারে ইংল্যান্ডকে। মাঝমাঠের আক্রমণাত্মক অপশন হিসেবে থাকছেন লিনগার্ড ও দেলে আল্লি। এদের দুজনের কেউ একজন ডায়ের ও হেন্ডারসনের সাথে একটু নিচে খেলবেন। লিনগার্ডকে নিয়ে বিস্তর হাসি-ঠাট্টা হলেও নিজের সামর্থ্যের সবটা দিয়ে আর প্রচন্ড খেটে খেলা দিয়ে দর্শকদের আস্থা জিতে নিয়েছেন বলা যায়। লিনগার্ড সারা মাঠ খেটে খেলেন, পায়ে শ্যুট বেশ ভালো আর মিডফিল্ডার হয়েও গোলসংখ্যা দারুণ, তাই লিনগার্ডের খেলা বেশ নিশ্চিত।

এখনো তেমন জমে ওঠেনি ডায়ের ও হেন্ডারসন জুটি; Image Source:Squawka

আক্রমণভাগ

সাউথগেটের সিস্টেমে ফরোয়ার্ড খেলতে পারেন দুজন। নিশ্চিতভাবেই খেলবেন দলের অধিনায়ক ও সেরা ইংলিশ স্ট্রাইকার হ্যারি কেন। ইংলিশ লিগে গোলের বন্যা বইয়ে দেয়া এই তারকাকে বিশ্বের অন্যতম পরিপূর্ণ স্ট্রাইকার ধরা হয়। হেড, শ্যুট, বল-বিল্ড আপ, হোল্ড প্লে সবকিছুতেই দক্ষ। তাই তার উপরেই ইংল্যান্ডের গোলের মূল ভরসা। ক্লাবের হয়ে তাকে সবচেয়ে বেশি বলের যোগানদাতা দেলে আল্লিও সেকেন্ড স্ট্রাইকার রোলে খেলবেন জাতীয় দলে। কোচ কোনোভাবেই কেন-দেলে আল্লি জুটি ভাঙতে চাইবেন না। যে বয়সে তার অনুর্ধ্ব-২৩ এ খেলার কথা সেই বয়সে দলের ভরসার পাত্র তিনি। ক্লাবের হয়ে তার গোল ও অ্যাসিস্টের সংখ্যাও দারুণ। অনেকদিন একসাথে খেলে আসা এই জুটির উপরেই ইংল্যান্ডের আশা-ভরসা।

স্ট্রাইকিং পজিশনে কেনের বদলি থাকবেন জেমি ভার্দি। সেই লিস্টার রূপকথার জেমি ভার্দি, গোলের সামনে এখনো তার সেই ‘মিদাস-টাচ’ পুরো হারিয়ে যায়নি, যদিও আগের সেই ফর্মও নেই। আছেন ম্যানসিটিতে পুরো মৌসুম ভালো খেলা স্টার্লিং। সিটির হয়ে স্টার্লিং এর গোল-অ্যাসিস্ট তাকে মূল একাদশেই রাখার পক্ষে যুক্তি দেয়, কিন্তু কেনের ক্লাবমেট দেলে আল্লির জুটি বিবেচনায় হয়তো তাকে বদলিই নামতে হবে। প্রয়োজনের সময় কাউন্টার অ্যাটাকে তার গতি ও গোলের দিকে দৃষ্টি বেশ কাজে দেবে কোচকে। আছেন ম্যানইউর র‍্যাশফোর্ড। ক্লাবের হয়ে লেফট উইং, সেকেন্ড স্ট্রাইকার বা রাইট উইং তিন জায়গায়ই খেলে অভ্যস্ত তিনি। চকিতে গোল দেয়ার অভ্যাস আছে রাশফোর্ডের। এখনো রাশফোর্ডকে অনেকে ইংল্যান্ডের ভবিষ্যৎ ভাবেন। দলে আছেন ওয়েলব্যাক। সাদামাটা ফর্ম নিয়েও কিভাবে ওয়েলব্যাক দলে- তা নিয়ে বিস্তর সমালোচনা আছে সমর্থদের মাঝে। হয়তো কোচের কোনো পরিকল্পনা আছে তাকে নিয়ে!

সন্দেহাতীতভাবে হ্যারি কেনই এই দলের মূল তারকা; Image Source:The Independent

দুর্বলতা

ইংল্যান্ডের খেলা পজিশনভিত্তিক হলেও তাদের মাঝমাঠের অপশন কম। হেন্ডারসন বা ডায়েরের কেউ চোট বা কার্ডজনিত কারণে না খেলতে পারলে ২২ বছর বয়সী আনকোড়া লফটাস চিককে নামাতে হবে; ক্রুস, পোগবাদের তুলনায় যে নিতান্তই অনভিজ্ঞ।

দুটো ফরোয়ার্ড পজিশনের জন্য অনেক ফরোয়ার্ড দলে। হয়তো প্রয়োজনের সময় যাতে দুই উইংব্যাকের জায়গায় পুরোদস্তুর উইঙ্গার নামানো যায় সেজন্যই হয়তো এত উইঙ্গার নেয়া, সেক্ষেত্রে আবার বলের ভারসাম্য হারিয়ে যাবে। লেফট উইংব্যাক পজিশনের ড্যানি রোজ প্রায় গোটা মৌসুম বেঞ্চে কাটিয়েছেন। তার বদলি ইয়ং বা ডেলফের কেউ দারুণ ফর্মে নেই, এটাও ইংল্যান্ডকে ভোগাবে।

পুরো মৌসুম বেঞ্চে কাটানো রোজ পেতে যাচ্ছেন লেফট উইং ব্যাকের দায়িত্ব; Image Source:Goal.com

ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যই হবে বল নিজেদের পায়ে রেখে রক্ষণে চাপ কমানো এবং দেলে আল্লি, কেন, লিনগার্ডের দ্বারা কাউন্টার অ্যাটাকে যাওয়া। ইংল্যান্ড কোনো ভুরিভুরি গোল করা দল নয়। কারণ এই ধাঁচে দলকে মানিয়ে নিতে বেশ সময় লাগে, ন্যাচারাল ট্যালেন্ট লাগে। কোচ আশাবাদী গোল আসবেই। কিন্তু এখনো কি ইংল্যান্ডের আক্রমণভাগ জার্মানি, ফ্রান্সের মতো সুসংগঠিত দলের রক্ষণ কেবল তিন ফরোয়ার্ডের নৈপুণ্যে ভাঙতে সক্ষম? কে ইংল্যান্ডের নেইমার-মেসি-গ্রিজম্যান-মুলারের মতো সেই ‘ফিয়ার ফ্যাক্টর’? আছেন কি কেউ?

সম্ভাব্য একাদশ

পিকফোর্ড
ওয়াকার-স্টোনস-ম্যাগুইরে/ক্যাহিল
ট্রিপিয়ের-ডায়ের-হেন্ডারসন-লিনগার্ড-রোজ
কেন-দেলে আল্লি

সম্ভাব্য নকআউট প্রতিপক্ষ

(ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, উরুগুয়েকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ধরে)
গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলে: কলম্বিয়া (শেষ ১৬), ব্রাজিল (কোয়ার্টার), ফ্রান্স (সেমি)
গ্রুপ রানার আপ হলে: পোল্যান্ড (শেষ ১৬), জার্মানি (কোয়ার্টার), স্পেন/আর্জেন্টিনা (সেমি)

ম্যাচের সময়সূচী

ইংল্যান্ড – তিউনিশিয়া (১৮ জুন, ১২.০০)
ইংল্যান্ড – পানামা (২৪ জুন, ০৬.০০)
ইংল্যান্ড – বেলজিয়াম ( ২৯ জুন, ১২.০০)

জোয়াকিম লো ২০১০ বিশ্বকাপে নিয়ে গিয়েছিলেন একঝাঁক তরুণকে, যারা সেবার বিশ্বকাপ এনে দিতে না পারলেও ২০১৪-তে তারাই ছিলেন স্তম্ভ। সাউথগেটের অধীনে ইংল্যান্ড একটি মোটামুটি স্থিরতা পেতে যাচ্ছে, তরুণদের নিয়ে ইতিবাচক খেলার ধাঁচ ইতিমধ্যে ইংলিশদের আস্থা পেতে সক্ষম হয়েছে। হয়তো ২০১৮ বিশ্বকাপ ইংল্যান্ডের জন্য একটু বেশিই তাড়াতাড়ি এসে গেছে। কিন্তু ফেডারেশন যদি সাউথগেটকে সমর্থন দিয়ে যায়, হয়তো ভালো কিছু পেতে পারে ইংল্যান্ড ভবিষ্যতে। তবে এবারের জন্য বিশ্বকাপ-বসন্ত একটু জলদিই হাজির ইংল্যান্ডের জন্য!    

ফিচার ছবিসত্ত্ব: Mirror

Related Articles